মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪১ (২)
নওরিন কবির তিশা
খুলনায় আজ নেমেছে ঝুম বৃষ্টি, বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটারা আছড়ে পড়ছে ধরণী জুড়ে, সিক্ত করছে প্রখর রোদ্র তাপে উত্তপ্ত হওয়া পথ প্রান্তরকে, বৃষ্টির তোপে যেন মনে হচ্ছে একদিনেই বন্যায় ভেসে যাবে পুরো শহর।
বিছানার উপর বসে সবে রসায়ন বইয়ের দশম পাতাটা উল্টে দেখছিল ফারিন, হঠাৎই দেওয়াল ঘড়ির দিকে নজর যেতে সে দেখতে পেল ঘড়ির কাটায় প্রায় রাত সাড়ে দশটা ছুঁই ছুঁই, একবার দরজা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। এখনো কোনো খোঁজ-খবর নেই নির্ঝরের।
এতক্ষণ অবশ্য হাসনা খান তার পাশেই বসে ছিলেন চুটিয়ে গল্প করছিলেন দুই শাশুড়ি বৌমা মিলে, কিন্তু হঠাৎই তার মনে পড়ল আজকে রাতে হুররাম বেগমের শোবার আগের ওষুধ টা এখনো দেওয়া হয়নি তাই তড়িঘড়ি করে তিনি বেরিয়ে গেলেন। এখন পুরো রুম জুড়ে সে একা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হঠাৎই রুমের বাতি নিভে গেল, হকচকিয়ে উঠলো ফারিন অন্ধকারে তার ভীষণ রকম ভয় করে, বিদ্যুৎ চলে গেছে এখান থেকেও প্রায় ঘন্টাখানেক আগে তবে জেনারেটরের সাহায্যে দিব্বি রুমের বাতিটা জ্বলছিল কিন্তু হঠাৎ কি হলো কি জানি? ফারিন চারপাশে হাত বুলালো কিন্তু কোথাও নেই কাঙ্খিত বস্তুটি, সে মনেই করতে পারছে না কোথায় রেখেছে মোবাইলটি, অতঃপর হঠাৎই তার মনে পড়ল শেষবার সে স্টাডি টেবিলের কাছেই মোবাইল হাতে গিয়েছিল।
ব্যাস অন্ধকারের মাঝেই বিছানা থেকে নামলো ফারিন।ধীর পায়ে অনুমান করে এগিয়ে গেল স্টাডি টেবিলের দিকে, স্টাডি টেবিলের কাছে পৌঁছাতেই তার মনে হলো কে যেন ঠিক তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে পিছন ঘুরতেই সে দেখতে পেল তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে এক সুঠাম দেহি কোনো যুবক উচ্চতা প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি, পিলে চমকে উঠল ফারিণের চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম।
হঠাৎই বিকট শব্দ তুলে বজ্রপাত হলো কাছাকাছি কোথাও ফারিন চিৎকার করে সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে শক্ত করে জাপটে ধরল। এতে মনে হয় সামনে থাকা ব্যক্তিটি সামান্য কেঁপে উঠল, দ্রুত হাতে থাকা মোবাইলের ফ্লাশ লাইট অন করলো। সাথে সাথে দৃশ্যমান হলো নির্ঝরের তামাটে মুখশ্রী, ফারিন আস্তে আস্তে মুখ তুলে নির্ঝরকে দেখেই লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করল,সে সরে যাচ্ছিল তৎক্ষণাৎ আবারো বজ্রপাতে সে ফের জাপটে ধরল নির্ঝরকে, নির্ঝরের মনোভাব বোঝা গেল না এদিকে লজ্জায় ভয়ে ফারিনের মরি মরি অবস্থা!
নির্ঝরের পিঠের দিকে শার্টের অংশটাকে খামচে ধরে আছে সে, তার সবচেয়ে ভয়ের জিনিস এই একটাই বজ্রপাত! কিন্তু এখন তার কাছে বজ্রপাত টাকে নেহাতি ঠুনকো মনে হচ্ছে এতক্ষণকার ভয় যেন পরিণত হয়েছে এক ভীষণ লজ্জায়।কিভাবে মুখ তুলে সে তাকাবে বুঝতে পারল না।
সকাল প্রায় সাড়ে নয়টার কিছু বেশি নাহিয়ান মঞ্জিলের ডাইনিং এ উপস্থিত সবাই। শিশিরকে কালকে রাতে নাহিয়ান এখানেই নিয়ে এসেছে। শিশির প্রথমে অবাক হলেও পরে যখন দেখতে পায় তার বাবা মা এখানে তখন সে বুঝতে পারলে হয়ত কোন বিশেষ কারণেই নাহিয়ান তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
খেতে খেতে হঠাৎ এই সিকদার শাহ বলল,,
—”তা নাহিয়ান বাবা তোমার ফ্লাইট কয়টায়?”
নাহিয়ান:”এইতো আঙ্কেল আজকে সন্ধ্যা ছয়টায়”
সিকদার শাহ:”তাহলে আজকেই যাবে?”
নাহিয়ান:”আর তো কিছু করার নেই আঙ্কেল, এটা অনেক ইমার্জেন্সি একটা মিশন আর হেডকোয়ার্টার পার্সোনালি আমাকে নক করেছে! আর অ্যাজ আ হিউম্যান আই থিঙ্ক কেসটা সলভ করা মোস্ট ইম্পরট্যান্ট!”
সিকদার শাহ:”ওকে এজ ইউর উইস মাই সন! অল দ্যা ভেরি বেস্ট অ্যান্ড গড ব্লেস ইউ তুমি তোমার কাজের সফল হও ফি আমানিল্লাহ!”
নাহিয়ান:” ফি আমানিল্লাহ!”
তাদের এত কথোপকথনের কিছুই বুঝলানা শিশির। নাহিয়ান কোথায় যাবে? কিসের ফ্লাইট?কিসের আবার মিশন? সে তো সব ছেড়ে চলে এসেছিল তাহলে আজ এত মাস পর আবার কিসের জন্য হেডকোয়ার্টার থেকে নক করলো? কিছুই মাথায় ঢুকলো না তার, বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে নেত্রপল্লব ঝাপটালো সে, হঠাৎই রোদেলা জামান বলল,,
—”এই মিশন শেষ হবে কবে? আর তুমি কবেই বা বাসায় ফিরবে?”
নাহিয়ান:”আম নট শিওর আন্টি বাট হয়তো ৬ মাস কিংবা তার বেশি বা কম!”
শিশির আর খেতে পারল না, গলার কাছে যেন একদলা কান্নারা জট পাকিয়ে আসছিল, ছয়টা মাস ১৮০ টা দিন, যেখানে প্রতিদিন একঝলক নাহিয়ানকে চোখের সামনে না দেখলে তার ঘুম আসে না,তার উষ্ণ ছোঁয়া না পেলে হৃদয় তৃপ্তি আসে না, যার ভরাট কণ্ঠস্বর না শুনলে সকালের ঘুম ভাঙ্গে না সেখানে এতদিন তাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে? সে খাবার টেবিল থেকে উঠে যেতে বলল,,
—”আম্মু আমি আর খাব না!”
রোদেলা জামান সহ সবাই অবাক হলো হঠাৎ কি হলো শিশিরের। সবাই অবাক হলেও নাহিয়ান ঠিকই বুঝতে পারল তার চিত্তহারিনীর এরূপ আচরণের কারণ। সে মলিন হাসলো। কিছুই করার নেই তার।হাত-পা বাঁধা এক অতীত রহস্যের শিকলে, আবদ্ধ সে, নইলে যার জন্য সে পুরো দুনিয়ার সাথে লড়তে পারে যার মুখে এক চিলতে হাসি দেখার জন্য জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে পারে তাকে কখনোই এরুপ কষ্ট পেতে দিত না সে।
এদিকে চৌধুরী আবাসনে……
—”তুমি কি ওয়াশরুমের দরজা দিতে পারো না ইডিয়েট?”
বিরক্তি মিশ্রিত কণ্ঠে কথাটা বলল নির্ঝর। তা দেখে ফারিন মুখ ঝামটে বলল,,
—”আমি তো আর আপনার মতো তাল গাছ না যে ঐ ১০ ফুট উঁচু সিটকিনি লাগাতে পারবো”
নির্ঝর:”স্টুপিড কোথাকার?”
ফারিন:”আপনি যখন এতটাই বুদ্ধিমান তাহলে কেন এসেছিলেন ওয়াশরুমে?জানেন যখন যে এই টাইমে আমি গোসল করি”
নির্ঝর:”তুমি যে সিটকিনি লাগাতে পারো না এটা তো আর আমার জানা ছিল না! আর তাছাড়াও তুমি প্রতিদিন এই টাইমে গোসল করো কেন হ্যাঁ?”
ফারিন:”আমার ইচ্ছা!”
নির্ঝর:”হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আমার ইচ্ছা? তুমি কোথায় ভুলে যাচ্ছ এটা আমার রুম ওয়াশরুমটাও আমার আর….”
তাকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে ফারিন বলল,,,
—”ছিল!”
নির্ঝর:”মানে?”
ফারিন:”আই থিংক আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে নাউ উই আর ম্যারিড সো এই রুমের প্রত্যেকটা জিনিসে আপনার যতটা অধিকার ঠিক ততটাই অধিকার আমার!”
নির্ঝর আর কোনো কথা না বলে বের হয়ে গেল ওয়াশরুম থেকে। তাদেরকে ফারিন মুচকি হাসলো। এ যেন এক বিজয়ের হাসি নির্ঝরের মতো গম্ভীর কাঠখোট্টা আর একগুয়ে মানুষকেও নিজের তর্কের জোরে হারানোর হাসি। ফারিনের মনে হলো এভারেস্ট জয় করলেও সে মনে হয় এতটা তৃপ্তি পেত না যতটা তৃপ্তি সে পেয়েছে নির্ঝরকে নিজের কথার জোরে হারিয়ে!
যদিও এখানে দোষের বেশিরভাগই ফারিন এর কিন্তু সে কি হারার পাত্রী নাকি, আর এমনিতেই ভোর বেলায় গোসল করা ফারিন এর বহু পুরাতন অভ্যাস সেই স্কুল লাইফ থেকেই, আর নির্ঝরের ওয়াশরুমের সিটকানি টা অনেক উপরে থাকায় কখনোই হাতে পায় না সে এইজন্যই তো নির্ঝর ওঠার আগেই গোসল সারতে এসেছিল সে। কিন্তু গোসল শেষে সে যখন সে ফ্রকের চেইন লাগাবে তখনই হুট করেই ওয়াশরুমে প্রবেশ করে নির্ঝর।ফারিন দ্রুত চেইন টেনে ঘুরে দাঁড়ায়।
সূর্যের প্রখর রৌদ্র কিরনে আবৃত এক তপ্ত দুপুর। বেলকনির লতানো নীল অপরাজিতা গাছের কাছে দাঁড়িয়েছিল শিশির। নীল অপরাজিতা শিশিরের পছন্দের ফুলগুলোর তালিকায় অন্যতম, আর পছন্দ হওয়ার একটাই কারণ ছোটবেলা থেকেই সে দেখে আসছে নিজেদের বাড়ির মেইন গেট ও প্রত্যেকটা ব্যালকনিতে এই একটাই ফুলের গাছ, এমন কি নওরিফাদের বাসায়ও সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে এই ফুলের গাছ প্রথম প্রথম তার ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগতো।
পৃথিবীতে এত সুন্দর সুন্দর ফুল থাকতেও যে ফুলের কোনো ঘ্রাণ নেই দেখতে অতিসাধারণ সেই ফুলকে নিজের বাড়ির প্রত্যেকটা কোনায় জায়গা দেওয়ার কি মানে? কিন্তু পরবর্তীতে সে জানতে পারে নীল অপরাজিতা তার মা আর নওরিফা খানম দুইজনেরই খুব পছন্দের। আর বড় হওয়ার সাথে সাথে শিশিরের নিজের ও খুব ভালো লাগতে শুরু করে এই ফুলকে কোনো কারণ ছাড়াই অদ্ভুত এক মুগ্ধতা কাজ করে ফুলটির প্রতি। যখনই মন খারাপ হয় তখনই সে ছুটে যায় ফুলটির কাছে।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সদ্য ফোঁটা একটা নীল অপরাজিতার পানে চেয়ে এইসবই ভাবছিল সে। আর নিজের মনের সকল বেদনা নিজের ডাগর ডাগর লোচন দিয়ে প্রকাশ করছিল। হঠাৎই দরজা খোলার শব্দে পিছন ঘুরলো সে। নিঃশব্দে রুমে প্রবেশই করে দরজার সিটকেনি লাগিয়ে দিল নাহিয়ান। ধীর পায়ে এগিয়ে আসল শিশিরের দিকে। মোলায়েম কন্ঠে ডেকে বলল,,
—”ম্যাম..”
ব্যাস এইটুকুতেই চোখের কোনে আটকে থাকা অশ্রুরা বাঁধ ভাঙলো শিশিরের, ঝুম বৃষ্টির মতো গড়িয়ে পড়ল দুধে-আলতা আনন বেয়ে, এদিকে শিশিরকে এমন অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখে নাহিয়ানের বুকের ভেতর হাহাকার করে ওঠে, হৃদপিণ্ডটাকে যেন কেউ দুমড়ে মুছরে পিষে দিচ্ছে, সঙ্গাহীন যন্ত্রনায় খেয়ে যাচ্ছে হৃদযন্ত্রটা,অসীম এক শূন্যতা জেগে উঠছে সে এগিয়ে গিয়ে শিশিরকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল,,
—”এই পাগলি এই এভাবে কাঁদছো কেন? এভাবে কেঁদো না প্লিজ আমার আর সহ্য হচ্ছে না হৃদপিণ্ড টা ছিঁ”ড়ে যাচ্ছে! ঝাঁঝড়া করে দিচ্ছে কেউ! প্লিজ শিশির প্লিজ!”
এদিকে কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেল শিশিরের। নাহিয়ান কে কিছু বলতে গেল সে কিন্তু গলাটা কেউ যেন শক্ত হাতে চেপে রেখেছে, শব্দগুলো যেন দলা পাকিয়ে আসছে, অস্পষ্ট স্বরে সে একবার শুধু বলল,,
—”যাবেন না প্লিজ! আপনার উষ্ণ স্পর্শ ছাড়া আমার হৃদয়ে কি করে তিপ্ততা আসবে বলুন, আপনার ওই ভরাট কণ্ঠস্বরের শুভ সকাল ছাড়া আমার দিন কিভাবে শুভ হবে বলুন?”
আর কিছু বলতে পারল না সে ডুকরে কেঁদে উঠলো। নাহিয়ানের নিজেরও মনে হচ্ছে সে যাবেনা, কোথাও যাবে না চিত্তহারিণীকে ছেড়ে কিন্তু পরক্ষণেই এক প্রতিশোধের শিকল দৃঢ়ভাবে টানছে তাকে, সে শিশিরের মুখটা দুই হাতে আলতো করে তুলে তার কপালে দীর্ঘ এক চুমু একে দিয়ে বললো,,
—”ভালোবাসেন তো আমায়? বাসেন না?”
শিশির ভেজা নেত্রপল্লব ঝাঁপটিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তা দেখে নাহিয়ান মলিন মুখে মুচকি হেসে বলল,,
আর কিছু বলতে পারল না সে ডুকরে কেঁদে উঠলো। নাহিয়ানের নিজেরও মনে হচ্ছে সে যাবেনা, কোথাও যাবে না চিত্তহারিণীকে ছেড়ে কিন্তু পরক্ষণেই এক প্রতিশোধের শিকল দৃঢ়ভাবে টানছে তাকে, সে শিশিরের মুখটা দুই হাতে আলতো করে তুলে তার কপালে দীর্ঘ এক চুমু একে দিয়ে বললো,,
—”ভালোবাসেন তো আমায়? বাসেন না?”
শিশির ভেজা নেত্রপল্লব ঝাঁপটিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তা দেখে নাহিয়ান মলিন মুখে মুচকি হেসে বলল,,
—”তাহলে পারবেন না অপেক্ষা করতে? বেশি না মাত্র ১৮০ টা দিন! দেখতে দেখতে কেটে যাবে! তারপর আমি আবার ফিরব হয়তো গোধূলি লগ্নের মতো, নয়তো রাঙা প্রভাতের মতো, দুইজন আবারো হাঁটবো সেই চিরচেনা নির্জন প্রকৃতির মাঝে, একসাথে ভিজবো প্রনয়ের বৃষ্টিতে, ভেসে যাব উষ্ণ প্রনয় পরশে,পারবেন না অপেক্ষা করতে?”
শিশির কোন কথা বলল না। শুধু নিজেকে লুকিয়ে নিল নাহিয়ানের প্রশস্ত বক্ষদেশে, যেন বন্দী হতে চাইলো তার হৃদগহিনে, নাহিয়ান মুচকি হেসে শক্ত করে জাপটে ধরল তাকে
ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে পাঁচটার বেশি।আলো-আধারিতে মোড়ানো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটা এক অদ্ভুত ব্যস্ততা আর নিস্তব্ধতার মিশেল।বড় বড় কাঁচের দেয়ালের গায়ে বিকেলের শেষ আলো পড়ে একরকম অদ্ভুত দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে।
ভেতরে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ে মানুষের হেঁটে যাওয়া, লাগেজ টানা, চেক-ইন কাউন্টারের লাল-সবুজ আলো।বিমানবন্দরের ভেতরে কাচের দেয়ালের এপাশ-ওপাশে অনেক গল্প লেখা হচ্ছে নীরবে।কারো চোখে অশ্রু জমে আছে, কারো মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা।
নাহিয়ান পরিবারের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। নওরিফা খানমের বেহাল দশা চোখ দুইটা ফুলে রক্ত লাল রক্ত জবা হয়ে আছে, ফর্সা ত্বকের উপর যেন কেউ লাল আবির ছড়িয়ে দিয়েছে, এখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও নেই শিশির, সে আসতে পারেনি, হয়তো এখানে এলে সবার সামনে নিজেকে সামলানো সম্ভব হতো না তার পক্ষে এজন্যই আসেনি।
কিছুক্ষণ পরেই নাহিয়ানের ফ্লাইট।নওরিফা খানমকে নিজের বুক থেকে তুলে নাহিয়ান বলল,,
—”আম্মু তুমি যদি এরকম করো আমি কি করে এত বড় একটা মিশন হ্যান্ডেল করবো বলোতো? আর আই প্রমিস এটাই আমার লাস্ট মিশন আর তুমি তো জানো এটা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ!”
নওরিফা খানম নাক টেনে নিজেকে ধাতস্থ করলেন। তার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে, কিন্তু এটাও ঠিক এই মিশনে যেভাবেই হোক নাহিয়ান কে সফল হতেই হবে!তাই তিনি আর বাধা দিলেন না,নাহিয়ান সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইমিগ্রেশন ফর্মালিটি শেষে বোর্ডিং গেটের দিকে এগিয়ে গেল নাহিয়ান।ফ্লাইটের সিঁড়ি ধরে উঠে যাচ্ছিল ধীরে। হৃদয়ের পাতায় শিশিরের মুখটা ভেসে উঠছিল বারংবার। চোখ বুজে একবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো সে।
মিনিট দশেক পর…..
বরাদ্দকৃত সিটটায় বসে সিটবেল্ট বাঁধছে সে। হঠাৎ একজন এয়ার হোস্টেস বলল
—“Sir, please switch off your phone.”
নাহিয়ান ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাল।ঠিক তখনই ভেসে উঠল এক নোটিফিকেশন,শিশিরের মেসেজ।নাহিয়ান দ্রুত মেসেঞ্জার ওপেন করে দেখল,,
🎶Ap ki jane payaar Mera…
Mein karu intejar apka….🎶
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪১
নাহিয়ানের ঠোঁটে হালকা মুচকি হাসি ফুটল।সে ফোনের স্ক্রিনে হাত বুলিয়ে ফোনটা বন্ধ করল। মূলত গানটা হবে,,
🎶Tu ki jane payaar Mera…
Mein karu intejar tera….🎶
কিন্তু শিশির গানটাকে নিজের মতো করে লিখেছে।আরেকবার মুচকি হাসির ঝলক ফুটে উঠল নাহিয়ানের ঠোঁটের কোনে।