মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪৮
নওরিন কবির তিশা
আজকের দিনটা একদম অন্যরকম। কিছুটা স্বপ্নীল কিছুজুড়ে আলোড়ন। হৃদয়ের প্রেম কাব্যে স্মরণীয় দিন। আনায়া রিদিতের প্রণয় পূর্ণতা পাবে আজ। ঘড়ির কাটায় প্রায় বিকাল ৪ টা ছুঁই ছুঁই। রিদিত আনায়ার বিয়ের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বিকাল পাঁচটায়। একটু অন্যরকম, সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো সকালের দিকে সম্পন্ন হয়ে যায়।
কিন্তু যেহেতু তাদের বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি আয়োজিত এই জন্যই এমন সময় নির্ধারণ করেছে বাড়ির বড়রা।আনায়ার রুমে তাকে সাজাচ্ছে দুইজন মেকআপ আর্টিস্ট।তার ব্রাইডাল মেকওভারের শেষ টার্ন চলছে। যাকে বলে লাস্ট ফিনিশিং। এরপর চুলগুলো ভালো করে খোঁপা করেই সম্পন্ন হবে তার বিয়ের সাজ। আনায়ার পরনে ডার্ক মেরুন কালার লেহেঙ্গা,পাথরের কাজ করা লেহেঙ্গাটা চুনির মতো ঝলমল করছে,যেন এক গোধূলির মাধুর্যে ভেজা রক্তকমল ফুল, যা ছড়াচ্ছে সূর্যাস্তের রক্তিম রঙা দীপ্তির ছটা।
শিশির বসে আছে আনায়ার ঠিক বিপরীত পাশের চেয়ারটিতে,তার সব রকম মেকওভার কমপ্লিট। সাজুগুজু বলতে সে শুধু ড্রেসটা একটু গর্জিয়াস নিয়েছে,একটা অফ হোয়াইট কালার পাকিস্তানি আনারকলি স্টাইলের লেহেঙ্গা।উপরের দিকটা ফিটেড তবে নিচেটা ঢেউ খেলানো। ওড়নাটায় ,সুক্ষ সোনালী এমব্রয়ডারি।
কানের লতায় ঝুলছে এক জোড়া অপূর্ব বাহুবলী ঝুমকা,যার মূল অংশটি ঘন রুবির পাথরে মোড়ানো। ঝুমকার নিচে লটকে আছে সোনালী ঘণ্টার মতো টুকরো গুলি,যার কম্পনে সৃষ্টি হয় শব্দের ঝংকার। নাকে নাহিয়ানের দেওয়া ডায়মন্ডের নথ, বাঁধনহারা সোনালী কেশরাজীর মাঝ সিঁথিতে শোভিতো হচ্ছে ললাটিকাটি,ঠোঁটে মেরুন কালার লিপস্টিক, চোখে আইলাইনার সব মিলিয়ে এক স্বর্গীয় অপ্সরা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বসে থাকতে থাকতে একপ্রকার বোর হচ্ছিল সে। ফারিন আর নিঝুমের মেকওভারও প্রায় শেষ,শুধু চুলগুলো সেট করবে তারা। শিশির তাদের দিকে ফিরে বলল,,
——“নিঝু, ফারু তোমরা তাহলে রেডি হও আমি একটু বাইরে থেকে আসি।দেখি কি অবস্থা বাইরের দিকে”
তারা শিশিরের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর শিশির উঠে বাইরের দিকে পা বাড়ালো।
মুহূর্ত কয়েক বাইরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ শেষে শিশির রোদেলা জামানের রুমে গেল। রুমটা ফাঁকা, অর্থাৎ রোদেলা জামান বাহিরে। শিশির এসিটা অন করে বিছানার উপর বসলো। অতঃপর সাইট থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে প্রথমবারের মতো নিজ থেকে নাহিয়ানকে ভিডিও কল দিলো। প্রথমবার রিং হতেই অপর পাশ থেকে ফোন রিসিভ করল নাহিয়ান।
নাহিয়ান কিছু বলার আগেই শিশির বলল,,
——“কেমন লাগছে আমাকে?”
নাহিয়ান সবে আই লাভ কথাটা বলতে গিয়েছিল কিন্তু শিশিরকে এমন সাজে দেখে সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল, তার চোখে যেন শিশির ধরা দিলো মেঘে ঢাকা পূর্ণিমার হঠাৎ আলোয় ভেসে ওঠা স্বপ্ন হয়ে। সে হতভম্ব, নির্বাক, স্তব্ধ। শিশির কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বলল,,
——“কি হলো বলুন?”
শিশিরের কথায় ধ্যান ভাঙলো নাহিয়ানের। কিছুটা ভেবেচিন্তে হঠাৎ সে গিয়ে উঠল,,
“Tu bemisaal hai..
Tera kya misaal doon …
Aasmaan se aayi hai…
Yahi keh ke taal doon…”
নাহিয়ানের গভীর কন্ঠের এমন গান আর এমন অভূতপূর্ব প্রশংসায় মুগ্ধ হয় শিশির নিজেও। তার ওষ্ঠাদ্বয়ে দৃশ্যমান হয় এক মুচকি হাসির রেখা যা ক্রমাগত প্রসারিতই হতে থাকে।
রুমের দরজার বাইরে থেকে রুমে ওকে দিচ্ছে ফারিন। পরনে বেবি পিংক কালার আনারকলি স্টাইল লেহেঙ্গা, সাজগোজ পুরোটাই শিশিরের মত, আজকে সে শিশির আর নিঝুম হুবহু একরকম সেজেছে। শুধু লেহেঙ্গার কালার গুলো ভিন্ন।
ফারিন উঁকি দিতে দিতে একেবারে রুমের ভেতরে ঢুকে যাওয়ার মত অবস্থা। আসলে সে দেখছে নির্ঝর রুমে আছে নাকি? কিন্তু কোথাও দেখা যাচ্ছে না নির্ঝরকে। হঠাৎই পিছনে কারো উপস্থিতিতে দ্রুত ঘুরে তাকায় ফারিন। সঙ্গে সঙ্গে চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম তার।পিছনে দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝর!
নির্ঝরকে দেখে সে কিছু বলতে যাবে ঠিক তক্ষুনি,নির্ঝর আর একটু এগিয়ে এসে তার সিঁথি থেকে ললাটিকাটি খসে পড়ার আগেই সেটা ঠিক করে দেয়। নির্ঝরের এমন কাছাকাছি উপস্থিতিতে শ্বাস আটকে আসে ফারিনের। মেরুন রঞ্জকে আবৃত ঠোঁটটি তীর তীর করে কাঁপতে থাকে। তা দেখে সামান্য বাঁকা হাসে নির্ঝর। ফারিন তখনো চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখায় নির্ঝরের এমন হাসি দেখতে পায় না।
ফারিন চোখ খুলতেই নির্ঝর দ্রুত মুখের অভিব্যক্তি বদলে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে,,
——“রুমে উঁকি দিচ্ছিলে কেন?”
ফারিন আমতা আমতা করে বলে,,
——“না মানে ওই আর কি,স্যার!”
নির্ঝর বেশ জোরে বলে,,
——“কি এত আমতা আমতা করছো? ঠিকঠাক বলো কি জন্য এমন চোরের মত উঁকি দিচ্ছিলে?”
ফারিন:“আসলে…”
ঠিক তখনই ফারিনকে বাঁচাতে যেনো আল্লাহর পাঠানো ফেরেস্তার মত আগমন হল শিশিরের।সে দ্রুত এগিয়ে এসে ফারিন আর নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
——“তোমরা আবার এখানে দাঁড়িয়ে প্রেম করছো? ভাইরে ভাই,বিয়ের সময় হয়ে গেছে বরযাত্রীরা অলরেডি চলে এসেছে! আপাতত এখনকার মত একটু কন্ট্রোল করো নিজেদের!”
নির্ঝর: “নুয়া ইদানিং একটু বেশিই পেকেছিস না?”
শিশির: “যা বাবা সত্যি কথা বললেই দেখি এখন দোষ হয়ে যায়! মূল্য নাইরে মূল্য নাই!সত্যি কথার এই জামানায় কোনো মূল্য নাই!”
ফারিন লজ্জায় মাথা নোয়াতে গেলেই শিশির তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,
——“মাফ করো বইন! এখন আর লজ্জা পেতে হবে না অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে! খুব সম্ভবত বাইরে বিয়ের গাড়িও চলে এসেছে। চলো চলো।”
বিয়ের গাড়ি এসে গেছে শুনেই ফারিনের আর লজ্জা ভীতি, কিছু কাজ করলো না। একপ্রকার ছুটে বের হয়ে গেল সে শিশিরের সাথে।
গার্ডেন এর বিশাল এরিয়া জুড়ে বিয়ের আয়োজন। গার্ডেনের ঢোকার সরু রাস্তাটার দুপাশের গাছগুলোতে স্ট্রিং লাইট এর মৃদু আলোকঝলকানি সন্ধ্যার পরিবেশকে যেন স্বপ্নীল করে তুলেছে।
সরু পথের ঠিক শেষ প্রান্তে অর্থাৎ গার্ডেনে তৈরি করা হয়েছে বিয়ের আসন।কিছুটা পাকিস্তানি ওয়েডিং স্টেজ স্টাইলে করা আসনটিতে একা বসে আছে আনায়া।ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা ছয়টার। বরযাত্রী,অনায়াদের আত্মীয়-স্বজন, তার বন্ধু মহল, ইনায়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ পুরো বাড়ি ভর্তি লোকজন।
উপস্থিত সকলের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। কেননা ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ছয়টা হলেও এখনো কোনো খবর মিলছে না রিদিতের। বরযাত্রীর লোকজনের ভাষ্যমতে রিদিত একাই বর-কনের জন্য তৈরিকৃত গাড়ি নিয়ে সবার আগে বের হয়েছে। কিন্তু বের হওয়ার পর থেকে ফোন সুইচ অফ করে রেখেছে সে।
ওয়েডিং স্টেজে বসা আনায়ার দুশ্চিন্তা এবার তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করল। তার মনে একটাই শঙ্কা তাহলে কি রিদিতও তুহিনের মত করবে তার সাথে?না না আনায়া এসব কি ভাবছে? এগুলো যে ভাবাও অন্যায়! সে তো রিদিত কে ভালোবাসে রিদিতও তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তাহলে মনের কোণে এসব চিন্তাভাবনা শয়তানের ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। তখন থেকেই আনায়া নিজেকে এভাবেই সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে।
কিন্তু আর কতক্ষণ? কতক্ষণই বা নিজের মনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যায়? অবশেষে তার সকল বিদ্রোহ শক্তি যেন নুয়ে আসছে, নিস্তেজ হয়ে পড়ছে তার সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা,বিদ্রোহের শক্তি! শিশির এসে তার কাঁধে হাত রাখতেই আনায়ার ভেতরে জমাট বাঁধা কান্নারা যেন বের হয়ে আসতে চায় ঠোঁট উল্টে সে শিশিরের দিকে তাকাতেই শিশির এক ধমক দিয়ে বলে,,
——“একদম কাঁদবি না,মার খাবি কিন্তু আমার কাছে এখন কাদলে!১ লাখ টাকা দিয়ে মেকওভার করানো হয়েছে তোকে! এক ফোঁটাও যদি নষ্ট হয়েছে না!তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে! আর তুই কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিস?রিদিত ভাইকে নিয়ে! একদম উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় আনবি না। যা হবে সবকিছু ভালোই হবে ইনশাআল্লাহ!”
আনায়া কিছুটা ফুুঁফানো স্বরে বলল,,
——“কিন্তু সে কই?এখনো তো তার কোনো খবর নেই!”
পিছন থেকে লিজা আর আশা আনায়ার দুই কাঁধে হাত রেখে বলল,,
——“শিশির কি বলল শুনলি না? ইনশাল্লাহ সব কিছু ভালোই হবে!”
আনায়কে যখন তারা সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত তখনই পুরো ওয়েডিং এরিয়ার সব আলো নিভে যায়। সবাই বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। আবার কি হলো?সবাই যখন আলো নিভে যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক তখনই গার্ডেনে ঢোকার সরু পথটার উপর একটা বড় স্পটলাইট পরে।
আর তার নিচেই দাঁড়িয়ে আছে ডার্ক মেরুন কালার শেরওয়ানিতে আবৃত প্রায় ছয় ফিট উচ্চতার সুঠামদেহী যুবকটি,রিদিত! তাকে দেখে স্তম্বিত হয়ে যায় উপস্থিত সকলে, ঠিক তখনই আরেকটা স্পটলাইট পরে আনায়ার উপর! রিদিতকে দেখে আনায়ার মুখে উদীয়মান আলোর রেখারা স্পটলাইটের আলোয় আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
তখনই মাইক্রোফোন হাতে রিদিত আনায়ার দিকে ইশারা করে গেয়ে ওঠে,,
“ooo…ooo….
Tere Ghar Aaya…
Main Aaya tujhko Lene…
Dil ki badle mein…
Dil Ka nazrana dene….
Meri har dhadkan kya bole hai….
Sun sun sun….”
গানটা গাইতে গাইতে আর মৃদু ডান্স করতে করতে রিদিত এগিয়ে আসে আনায়ার দিকে। আসনে বসে থাকা স্তব্ধ আনায়ার দিকে হাত বাড়াতেই,আনায়া রিদিতের হাত না ধরে সোজা উঠে এসে রিদিতের বাঁ চোয়ালে আলতো হাতে থাপ্পড় মারে। যা দেখে হতবাক হয়ে যায় সকলে। কিন্তু তাতেও প্রতিক্রিয়া হিসাবে রিদিত এক মুচকি হাসি ছোঁড়ে আনায়ার উদ্দেশ্যে। কারন সে খুব ভালো করেই জানে তার প্রিয়তমা তার প্রতি অভিমান থেকেই কাজটি করেছে। তবে সে কিছু বলার আগেই তৎক্ষণাৎ তার হাত থেকে মাইক্রোফোনটা নিয়ে আনায়া গেয়ে ওঠে,,
“Aaa…aaa…
Ay dil chalega…
Ab Na koi bahaana…
Gori ko Hoga ab sajan ke ghar jana….
Mathe ki bindiya kya bole hai…..
Sun sun sun….”
দুশ্চিন্তারেখা মুহূর্তেই উড়ে গিয়ে সকলের মুখে দৃশ্যমান হলো এক উদীয়মান সূর্যের আলোক রশ্মি, যা দীপ্তি ছড়ালো চারিদিকে। সবাই রিদিত আর আনয়ার এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ,বিমোহিত। শুরু হলো বিয়ের ধর্মীয় আর আইনি কার্যক্রমের।
তিন কবুলের মাধ্যমে একে অপরকে নিজেদের জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রিদিত আর আনায়া। তাদের হালাল সম্পর্কের সূচনা হয়েছে মুহূর্ত দশেক আগে। মোনাজাত আর নবদম্পতির জন্য দোয়া কালাম শেষে,ওয়েডিং এরিয়ার আসনগুলোতে সবাই বসে আছে। রিদিত আর আনায়ার আয়নায় মুখ দেখা শেষে তাদের সামনে হঠাৎই মাইক্রোফোন হাতে হাজির হয় শিশির। সবাইকে উদ্দেশ্য করে সে বলে,,
——“লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান! এটেনশন প্লিজ! একটু আগেই আপনারা নব দম্পতির; অসাধারণ একটা পারফরম্যান্সের মাধ্যমে বিয়ের সূচনা প্লাস সমাপ্তি ঘটেছে। তো এবার আমাদের অর্থাৎ নববধূর বন্ধু মহলের তরফ থেকে সরি, বান্ধবী মহলের তরফ থেকে আপনাদের সামনে পরিবেশন করা হবে একটি….”
শিশির বুঝতে পারল না ডান্স টা কে সে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবে।তাই ফারিন এর দিকে চোখের ইশারা করতে ফারিন বলল,,
——“চমোলক্ক ডান্স!”
শিশির: “সো এভরিওয়ান আর ইউ রেডি ফর দিস?”
উপস্থিত জনতার মাঝ থেকে সবাই বলতে গেলে একযোগেই বলল,,
——“অবশ্যই!”
রোদেলা জামান সিকদার শাহর দিকে ইশারা করে বলল,,
——“দেখো দেখো, মেয়ে পুরাই তোমার কার্বন কপি হয়েছে!”
সিকদার শাহ:“মেয়েটা আমার তা কপি কি তোমার হবে?”
রোদেলা জামান হেসে বলতে গেলেন,,
——“গর্ভে ধরলাম আ…”
কথাটার ইতি টানতে পারলেন না তিনি। ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠলো এক মলিন হাসির রেখা।তা দেখে সিকদার শাহ তার হাতের উপর হাত রেখে দৃঢ় কন্ঠে বলল,,
——“নুয়া আমাদেরই মেয়ে!”
রোদেলা জামান কিছু বলতে পারলেন না শুধু এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়ে আসলো তার বুক চিরে।
মুহূর্ত খানিক পর…
আনায়া আর রিদিতের আসনের সামনে উপস্থিত হলো শিশির, লিস, আশা সহ আনায়ার ভার্সিটির কতিপয় বান্ধবীরা। সাথে ফারিন আর নিঝুম। হঠাৎই সাউন্ড বক্সে বেজে উঠলো,,,
“Dholak mein taal hai,
Payal mein chan-chan…
Ghunghat mein gori hai,
Chehre pe sajjan…
Jahan bhi yeh jaaye,
Bahaar hi chha jaaye…
Yeh khushiyan hi laaye,
Mere dil se duaa aati hai…
Mere yaar ki shaadi hai…
Haan mere yaar ki shaadi hai…!”
পায়ে পায়ে তাল মিলিয়ে ডান্স পারফর্ম করলো সহচরীরা।উপস্থিত সকলের মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইল তাদের এমন অভূতপূর্ব পারফর্মেন্সের দিকে। সকলে সবার ডান্সের প্রশংসা করলেও নির্ঝরের দৃষ্টি আটকে গেল এক ফারিনের উপর। আশেপাশের কোনো নারী তার দৃষ্টিতে লক্ষ্যগত হলো না, শুধুমাত্র তার দুষ্টু মিষ্টি সহধর্মিনীটি ব্যতীত!
রাত প্রায় সাড়ে বারোটার কিছু বেশি। রিদিতের রুমের কিং সাইজ বিছানাটার ওপর সাজানো হার্ট আকৃতির গোলাপের পাঁপড়ি গুলোর মাঝে বসে আছে আনায়া।রুমটা সাজানো হয়েছে মাধবীলতা দিয়ে, পুরো রুম মাধবীলতার মিষ্টি ঘ্রানে ম,ম করছে।
কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলো রিদিত। আলতো হাতে দরজার সিটকিনি লাগিয়ে সে পা বাড়ালো আনায়ার দিকে। এদিকে রিদিতের প্রতিটি পদক্ষেপে, হৃদযন্ত্রটা যেন বেগতিক হারে নৃত্য করছে আনায়ার। ছন্দ হারাচ্ছে হৃদস্পন্দন।
কিছুক্ষণ পর রিদিত এসে আনায়ার সামনে বসলো। সঙ্গে সঙ্গে আনায়ার হৃদস্পন্দন এতটা বেড়ে গেল যেন তা বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিল। রিদিত মুচকি হেসে আনায়ার ঘোমটাটা সরিয়ে লাজুক মুখোশ্রীর পানে এক ঝলক তাকালো। অতঃপর তার ললাটে এঁকে দিল এক দীর্ঘ প্রেম পরশ।
এদিকে রিদিতের এমন কাছাকাছি উপস্থিতি আর তার প্রথম এমন গভীর স্পর্শে লজ্জায় এক প্রকার কুঁকড়ে গেলো আনায়া, বাঁ হাত দিয়ে খামচে ধরল বিছানার চাদর। রিদিত সে পানে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,,
——“এখনো আমাকে এত লজ্জা মাধবীলতা?”
আনায়া কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,,
——“না.. আসলে..”
রিদিত আর কিছু না বলে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আলমারি থেকে একটা অফ হোয়াইট কালার শাড়ি এনে আনায়ার হাতে দেয়। অতঃপর আনায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
——“যাও গিয়ে চেঞ্জ করে আসো! আই থিঙ্ক এই হেবি ড্রেসে তোমার অনেক বেশি আনকম্ফোর্টেবল ফিল হচ্ছে!”
আনায়া সম্মতি সূচক মাথা নাঁড়ায়। আসলেও এই ড্রেস অনেক বেশি আনকম্ফোর্টেবল ফিল হচ্ছিল তার। সে রিদিতের সাহায্যে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।
মুহূর্ত খানিক পর…..🌺🌺🌺
আনায়া ওয়াশরুমে ঢুকেছে প্রায় অর্ধ ঘণ্টার বেশি। এখনো ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বেশ চিন্তা হলো রিদিতের। আর অপেক্ষা করতে না পেরে ধৈর্য হারা হয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে সে ওয়াশরুমের বাইরে থেকে দরজা ধাক্কিয়ে বলল,,
——“এনি প্রবলেম আয়নিন?”
ভিতর থেকে ভেসে আসলো এক মেয়েলি মৃদু কণ্ঠস্বর,,,
——“হ্যাঁ!”
রিদিত:“ কি সমস্যা?”
ভেতর থেকে আর কোনো আওয়াজ না আসায় চিন্তা তীব্র হলো রিদিতের।সে দ্রুত দরজা ধাক্কিয়ে বলল,,
——“দরজা খোলো আয়নিন!”
কিছু মুহূর্ত পর ভেতর থেকে দরজা খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো আনায়া। সঙ্গে সঙ্গে ওয়াশরুমের ভেতর প্রবেশ করল রিদিত। আনায়ার পরনের লেহেঙ্গা টার দশা অত্যন্ত শোচনীয়। পিনগুলো এমন ভাবে আটকে আছে যে সেগুলো ছাড়ানোই যাচ্ছে না। সব থেকে ঝামেলা করছে মাথার উপরের দোপাট্টাটার সাথে লাগানো পিনগুলো।
আনায়া কোনক্রমেই হাত দিয়ে ছাড়াতে পারছে না সেগুলো। রিদিত মুচকি হেসে এগিয়ে এসে আনায়ার পিনগুলো আলতো হাতে খুলে দিলো। সমস্ত পিন খোলা শেষে রিদিত বাইরে যেতে গেলেই আনায়া পিছন থেকে ডেকে বলল,,
——“এই যে শুনছেন?”
রিদিত পিছন ঘুরে চোখ সরু করে বললো,,
——” কিছু বলবে?”
আনায়া:“হ্যাঁ!”
রিদিত:“কি?”
আনায়া:“ আসলে আমি আগে কোনোদিন একা একা শাড়ি পরিনি তো। তাই শাড়ি কিভাবে পরে…”
রিদিত:“তো পরোনা!”
আনায়া অবাক কন্ঠে বলল,,
——“শাড়ি না পড়লে কি পড়বো আর তো কিছু আনি নাই!”
রিদিত বাঁকা হেসে বলল,,
——“একটু পরেই তোমার সর্বাঙ্গ জুড়ে আমার বিচরণ হবে ম্যাডাম! তাই এখন কি পড়লে না পড়লে সেটা আমার কাছে ম্যাটার করে না!”
রিদিতের এমন কথা এ লজ্জায় লাল হয়ে গেল আনায়া। সে দিকে তাকিয়ে রিদিত বললো,,
——“উহু মিসেস খান!এতটা সম্মোহনীয় হবেন না যাতে আমি এখানেই নিজের অস্তিত্বকে আপনার মাঝে হারিয়ে ফেলি!”
আনায়া:“মানে?”
রিদিত তার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,,
——“মানে হচ্ছে… আমি চাচ্ছি না… এখানেই….”
রিদিতের এরূপ এগিয়ে আসায় আনায়া এক পা এক পা করে পিছতে পিছতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,
——“এ-এ-এখানেই ক..কি?”
রিদিত দ্রুত আনায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে টান মারে। আরেকটু হলেই আনায়া বাথটাবে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই রিদিত দ্রুত বাঁচিয়ে নেয় তাকে। এত দ্রুত নিজের বাম হাতে টান খেয়ে ভারসাম্য হারিয়ে আনায়া এসে পড়ে রিদিতের বক্ষদেশের মাঝ বরাবর।
রিদিত আনায়ার পানে চেয়ে বলে,,
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৪৭ (৩)
——“বিশ্বাস করো আমি একদমই চাচ্ছিলাম না এখানে কন্ট্রোললেস হতে। কিন্তু তোমার শরীর থেকে ভেসে আসা তীব্র মা’দ’কী’য় ঘ্রাণ আমাকে মাতাল করে তুলেছে! আম সরি!”
কথাটা বলেই রিদিত নিজের পরনের শেরওয়ানি ছুড়ে মারে ওয়াশরুমের ফ্লোরে। অতঃপর আনায়ার দিকে তাকাতেই আনায়া ভীত চোখের ইশারায় যেন তাকে বোঝাতে চায়,‘এখানে নয় প্লিজ!’
কিন্তু কে শোনে কার কথা রিদিত এক টানে আনায়ার শরীরে জড়ানো ওড়না খানা টান মেরে ফেলে দেয় ফ্লোরে অতঃপর ডুব দেয় আনায়ার মাঝে। দুজনে মিলে ভেসে যায় এক অন্যরকম প্রেমময় জগতে……..!!