মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৫৯

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৫৯
নওরিন কবির তিশা

আজ অন্তরীক্ষে জোৎস্নাপতিটি সমস্ত আলো উজাড় করে পূর্ণোদ্যমে ছড়াচ্ছে রুপালি কিরণ।ধরণী আজ আলোকিত সেই রুপালি আলোয়। খানমকুঞ্জের তিনতলার উত্তর দিকের একটি বিশাল কক্ষ;খানম কুঞ্জের সবচেয়ে বড় কক্ষ এটি!
সেটি আজ আলোকিত মোমবাতির মৃদু হলদে আলো, আর চাঁদের রুপালি কিরণে। পুরো রুমটা সজ্জিত হয়েছে মোমবাতির নিয়ন আলোক সজ্জায়। রুমজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানান বাহারি ফুলের মিষ্টি সুবাস ।এরই মাঝে বিশাল পুষ্পসজ্জিত বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে শিশির। লাজে রাঙ্গা তার মুখশ্রী, উত্তরে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হালকা শিহরণ জাগছে তার দেহ জুড়ে।

মুহূর্ত কয়েকের মাঝেই রুমে প্রবেশ করল নাহিয়ান, কিছুটা শব্দ তুলে রুমের দরজা বন্ধ করে এক এক ধাপে এগোতে থাকলেও শিশিরের দিকে। নাহিয়ানের প্রতিটি পদচারণার সঙ্গে সঙ্গে শিশিরের শরীরের সৃষ্টি হলো এক অজ্ঞাত কম্পন। মেরুদন্ড বেয়ে নেমে আসা নামহীন সেই শিহরণ ক্রমেই বাড়ছে তার।
নাহিয়ান মুচকি হেসে এগিয়ে এসে পুষ্প পর্দাটিকে আলতো হাতে সরিয়ে বিছানায় বসলো। গভীর কন্ঠে শিশিরের উদ্দেশ্যে বলল,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

——“Can I lift your veil?”
গভীর পুরুষালী সে কন্ঠে ঘোর লেগে আসলো শিশিরের। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো সে। নাহিয়ান আলতো হাতে তার মুখের উপর পড়ে থাকা দোপাট্টাটা সরালো। সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হলো শিশিরের লাবণ্যময়ী মুখশ্রী, মোমবাতির নিয়ন হলদেটে আলোয় আর ফর্সা মুখশ্রী হতে যেন সৌন্দর্যেরা উপচে পড়ছে। নাহিয়ান নিজের বুকের বাঁ পাশটায় হাত রেখে বলল,,
——“Hey main mar Java….. Mashallah mashallah mashallah….!!!”
নাহিয়ান এর এমন প্রশংসায় লাজুক হাসলো শিশির। যার দরুন তার বাঁ চোয়ালের টোলখানা গর্তের মতো হয়ে ভেতরের দিকে গভীর হলো।নাহিয়ান তার দিকে সামান্য এগিয়ে গিয়ে কপালে দীর্ঘ এক প্রেম পরশ একে দিল তার। শিশিরও চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করলো তা পরম আবেশে।
দীর্ঘ এক প্রেম পরশ শেষে নাহিয়ান,আলমারি থেকে একটা ব্ল্যাক কালার স্টোন বসানো শাড়ি এনে শিশিরের উদ্দেশ্যে বলল,,

——“চেঞ্জ করে নাও! এত হেভি ড্রেসে আর থাকতে হবে না!”
শিশির:“কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না, আর তাছাড়া এত হেভি অর্নামেন্টস আর এই দোপাট্টার ভারে; বিছানা থেকে নামাই তো দুষ্কার হয়ে পড়েছে আমার পক্ষে!”
নাহিয়ান:“আম আলোওয়েজ হেয়ার ফর ইউ মাই কুইন!”
শিশির:“মানে?”
নাহিয়ান:“হাতটা ধরো!”

নাহিয়ান শিশিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই শিশির শক্ত করে ধরল তার হাতখানা। নাহিয়ান অতি সাবধানে পরমযত্নে তাকে বিছানা থেকে নামালো। অতঃপর তাকে ড্রেসিং টেবিলের বিশাল আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে একে একে দোপাট্টায় থাকা পিনগুলো খুলতে লাগলো। পিনগুলো দোপাট্টা থেকে ছাড়ানো শেষে দোপাট্টাটা মাথা থেকে নামিয়ে বিছানার উপর রাখল সে।
এরপর শিশিরের কানেরদুল,গলার নেকলেস খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে, নাসাপুটের ঝুমকা নোলকটা খুলে নিজের আনা ডায়মন্ডের ছোট্ট নোলকটা শিশিরকে অতি যত্নে পরিয়ে দিল সে। তবে হাতের বালা জোড়া আর খুলল না। এদিকে নাহিয়ানের শরীর থেকে ভেসে আসার তীব্র মা’দ’কী’য় পারফিউমের সুবাসে নিজেকে মা’তা’ল মা’তা’ল লাগতে শুরু করেছে শিশিরের।
শেষমেষ লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে সে নাহিয়ানের কাছে প্রশ্নটা করেই বসলো,,

——“আচ্ছা আপনি কি পারফিউম ইউজ করেন?”
নাহিয়ান তাকিয়ে দেখলো উচ্চতায় প্রায় তার বক্ষদেশ বরাবর মেয়েটি এক গভীর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার থেকে। মোমবাতির হলুদ আভায় একটু বেশি লাবণ্যময়ী লাগছে তাকে। নাহিয়ান বাঁকা হেসে বলল,,
——“Do you like this smell darling?”
শিশির:“উফ!! বলুন না!”
নাহিয়ান:“Oud Wood!”
শিশির:“ওহ!Nice smell I like it!”
নাহিয়ান:“And I loveeee the fragrance of your body….!!”

আকাশে বিদ্যমান পূর্ণ চন্দ্র খানা। শিশির কোনোমতে নিজের লেহেঙ্গা টা বদলে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে সবে বের হয়েছে ওয়াশরুম থেকে‌।তার শাড়িটা অবশ্য নাহিয়ানই পরিয়ে দিতে চেয়েছিল তবে শিশিরই লজ্জায় সেটা নিয়ে ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলো।
কক্ষের সৌন্দর্যে আরও একবার মুগ্ধ হলো শিশির। রুমটা গতানুগতিক বাসর কক্ষের থেকে একটু অন্যরকম করে সাজানো। বিশাল কক্ষ জুড়ে প্রজ্জ্বলিত মোমবাতির হলদেটে অগ্নিশিখা। নেই কোনো কৃত্রিম আলোকরশ্মির ঝলকানি,যা আছে তার সবটাই মোমবাতির আর পূর্ণিমার চঁন্দ্রের উজ্জ্বল আলো।

শিশির ওয়াশরুম থেকে বের হলো। বিশাল কক্ষের কোথাও নেই নাহিয়ানের অস্তিত্ব। কোথায় গেল নাহিয়ান? হঠাৎই তার চোখ গেল ব্যালকনিতে, নাহিয়ান ব্যালকনিতে নেই তো?এমন চিন্তা ধারা থেকেই শিশির পা বাড়ালো বিশাল ঝুল বারান্দার উদ্দেশ্যে।
বৃহৎ পর্দা সরিয়ে ব্যালকনিতে পা দিতেই আরেক দফায় আশ্চর্যান্বিত হলো সে।আরো একটি সৌন্দর্যমন্ডিত জগত স্বাগত জানালো তাকে।বেলকানিটাও আজ সজ্জিত হয়েছে ছোট ছোট লণ্ঠনে, কাচের স্বচ্ছ চিমনীর মধ্যিখানে জ্বলছে হলুদ রঙা অগ্নিশিখা।বিশাল ব্যালকনি টা সাজানো হয়েছে ছোট ছোট এমনই অসংখ্য লন্ঠনে। এরই মাঝে দাঁড়িয়ে আছে তার সুদর্শন পুরুষটা।
নাহিয়ানের দৃষ্টি বাইরের এক স্বচ্ছ পানির লেকে নিবদ্ধ। যেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে চন্দ্রের রুপালী কিরণ। শিশির এগিয়ে গিয়ে নাহিয়ানের পিছনে দাঁড়ালো, অতঃপর মিষ্টি কন্ঠে বলল,,

——“আজকের প্রকৃতিটা একটু বেশিই সুন্দর তাই না?”
নাহিয়ান:“হুম! তবে আর কারো জন্য কতোটা সুন্দর তা জানিনা? কিন্তু আমার জন্য শ্রেষ্ঠ সুন্দর পূর্ণিমা এটি!কারণ আজ এই পূর্ণিমায় তুমি আমার সাথে আছো!”
শিশির হালকা হাসলো।নাহিয়ান প্রাকৃতিক এমন অপার সৌন্দর্যের মাঝেই তার প্রাণনাশিনীর দিকে চেয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,,

——“লুকিং সো গর্জিয়াস,গিন্নিসাহেবা!”
নাহিয়ানের এমন সম্বোধনে চোখ কুঁচকে সামান্য লাজুক হাসলো শিশির,নাহিয়ান এক এক কদম এগোতে লাগল তার দিকে। শিশির নিজের অজান্তেই পিছিয়ে গেল কিছুটা। তাকে পিছুতে দেখে নাহিয়ান বলল,,
——“পিছাচ্ছো কেন?”
শিশির শংকিত কন্ঠে বলল,,
——“আপনি এগোচ্ছেন কেন?”

নাহিয়ান——“বিকজ ইটস মাই নাইট সুইটহার্ট, অ্যান্ড আই নিড ইউ টোনাইট,আই নিড ইউ সো ব্যাডলি!”
শিশিরের হৃদযন্ত্রটা বেগতিক হারে কাঁপতে শুরু করল। শিশির বাইরে থেকে অনুমান করতে পারছে তার হৃদযন্ত্রের অমন অস্থির নৃত্য। নাহিয়ান বেশ কাছাকাছি চলে এসেছে তার। শিশির এক সময় নরম কিছু একটাই ধাক্কা খেয়ে সেটির উপর পড়ে গেল।অত্যধিক কোমল সেই জিনিসটার স্পর্শে সে বেশ ভালো করে বুঝতে পারল এটা নাহিয়ানের রুমের সেই বড় কাউচটা। কিন্তু এটা এখানে কি করে আসলো?
যাইহোক এত কিছু ভাবার সময় এটা নয়,নাহিয়ান ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে তার উপর ঝুঁকে পড়ল। তার ডান হাতটা এখন শিশিরের মাথার ঠিক বাম পাশে অবস্থান করছে। শিশির ভয়ার্ত কন্ঠে কিছু বলার আগেই, নাহিয়ান নিজের কর্নিশটা আঙুল তার গোলাপি অধরে ছুঁইয়ে ঘোরে লাগানো কন্ঠে গেয়ে উঠল,,

🎶 Kya Jaane tu…?mere irade…
Le jaunga saanse churake….!
Dil keh raha hai gunehgaar ban jaa…!!
Bada chain hai gunehgaaro se aage…🎶

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৫৮ (৪)

নাহিয়ান নিজের ওষ্টদ্বয় দিয়ে তীব্রভাবে দখল করল শিশিরের অধর দুটি,নিজের শরীরের উষ্ণতায় দিয়ে গভীরভাবে আরষ্ট করলো শিশিরকে। লাজুক শিশির লজ্জায় লাজুক লতার ন্যায় নুইয়ে পড়ল নাহিয়ানের শৈল্পিক দেহের মাঝে। তাদের দুজনকে ছুঁয়ে গেল এক উন্মাদ উত্তরে হিমেল হাওয়া। শীতের এক নির্জন পূর্নিমার স্থির রুপালি চন্দ্রটা সাক্ষী হলো একজোড়া কপতো-কপতির মধুচন্দ্রিমার।

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৬০