মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৯+১০
নওরিন কবির তিশা
-আমাকে দেখে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে তোমার ওয়েটার ভাইয়া লাগছে??
সামান্য তেজের আভাস পাওয়া গেল সৌজন্যের কণ্ঠ থেকে।
-ওওও তাহলে কি আপনাকে আংকেল বলা উচিত ছিল?? sorry আঙ্কেল ভুল হয়ে গেছে।
টিটকারি মেরে কথাটা বলল নিঝুম।
-এই মেয়ে এই, আমাকে দেখে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে তোমার ওয়েটার মনে হচ্ছে, হ্যাঁ??
-উমম… সব অ্যাঙ্গেল থেকেই মনে হচ্ছে। শুধু একটাই সমস্যা ড্রেসটা… আল্লাহই জানে বড় চাচ্চু আর কাকিআম্মু কোন ডেকোরেশন টিমকে হায়ার করেছে। এরা তো দেখছি রুলস ই মানে না। যাইহোক ব্যাপার না। আপনি যা বললাম তাই করেন আমার জন্য এই ফ্লেভারের একটা সফট ড্রিংকস নিয়ে আসেন।
-আমি তোমার চাকর না।
-হ্যাঁ,হ্যাঁ। জানি,জানি। আপনার কি মনে হয় আমি চাকর রাখলে আপনার মতন এরকম একটা বদমাইশ কে রাখতাম। এরকম হলে তো প্রথম দিনই তার চাকরি নট করে দিতাম।
-আমিও তোমার মতন মাথায় গোবর পোরার বাসায় চাকরি করতাম না।
-আমার মাথায় গোবর পোরা। আপনার মাথায় কি হ্যাঁ?? আপনার মাথায় তো পুরো গোবরের ফ্যাক্টরি।
তাদের এই ঝগড়ার মাঝেই হঠাৎ করে চলে আসে শিশির। এসে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-কি হয়েছে তোর ঝগড়া করছিস কেন হ্যাঁ?? আর সৌজন্য তোর হাতে এতগুলো সফট ড্রিংকস কেন??
-আরে নুয়া আপু। দেখো না আমি ওয়েটার ভাইয়াকে বলছিলাম আমার জন্য একটা স্ট্রবেরি ফ্লেভারের সফট ড্রিংকস নিয়ে আসতে। পারিনি আমার সাথে ঝগড়া করছে। বলছে আমার মাথায় নাকি গোবর পোরা।
শিশির কে সৌজন্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে একজন বলে,
-থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া। থ্যাংকস ফর ইউর হেল্প ।
-ইটস ওকে।
শিশির আর নিঝুম দুজনেই তাকায় থাকে। শিশির এবার শুনে,
-কি হয়েছে বল তো??
কিছুক্ষণ আগে….🌺🌺
সৌজন্য সবেমাত্র ড্রয়িং রুমে ঢুকেছে। সৌজন্য সাজিদের ছোট ভাই ।সাজিদ তখনও রিদিত আর নাহিয়ানের সাথে গল্পে ব্যস্ত। সৌজন্যের বয়সি এখানে সেরকম কেউই নেই। সে হঠাৎই দেখতে পায় একটা ওয়েটারের হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে। সৌজন্য দ্রুত সেখানে যায়। কর্ণাটা ফাঁকা ছিল। মূলত ওয়েটারটার হাত থেকে একটা কাঁচের গ্লাস পড়ে গিয়েছিল এবং সেটা তুলতে গিয়েই লোকটার হাত কেটে গিয়েছে। সৌজন্য দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বলে,,
-এনি প্রবলেম ভাইয়া?? আপনার হাত কি করে কাটলো?? প্রচুর শক্তি বেরোচ্ছে তো এক্ষুনি ফার্স্ট এইড করা প্রয়োজন। কিন্তু… আমি তো জানি না কোথায় ফাস্ট এইট বক্স।
-ওকে ভাইয়া। সেরকম কিছুই হয়নি। আমি যদি এখন ফার্স্ট এইড করতে যাই তাহলে আমার এই ট্রে গুলো কে ধরবে।
-না,না আপনার এক্ষুনি ফার্স্ট এইড করা প্রয়োজন না হলে একটু পরে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। আচ্ছা দিন আপনার ট্রেগুলো আমি ধরতেছি। আপনি যে ফার্স্ট এইড করে আসেন।
-আচ্ছা। থ্যাংক ইউ সো মাচ।
-you are most welcome।
এরপর সৌজন্যে সফট ড্রিংসে ট্রেগুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই পিছন থেকে একটা মেয়ে,
-এইযে ভাইয়া, আমার জন্য একটা স্ট্রবেরি ফ্লেভারের সফট ড্রিংকস নিয়ে আসতে পারেন।
প্রথমে সৌজন্য খেয়াল করেনি এজন্য মেয়েটি একটু জোরে বলে উঠল,
-এই যে ভাইয়া ওয়েটার।
নাও সৌজন্যের মেজাজ এমনিতেই গরম হয়ে গেল। সে পিছন ফিরে মেয়েটাকে কিছু বলতে গিয়ে দেখতে পেল তার সামনে লিলিপুট সাইজের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপরেই এক কথায় দুই কথায় ঝগড়া লেগে গেল।
সৌজন্যে মুখ গম্ভীর করে এতক্ষণ কথাগুলো বলছিল। শিশির বহু কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে রেখেছিল কিন্তু এবার সজোরে হেসে উঠলো।
-আপু তুমি হাসছো। আমি কি কোন জোক বলছি? আমাকে দেখে কোন অ্যাঙ্গেলে দেখে মনে হচ্ছে ওয়েটার যার মাথায় গোবর সেও তো বুঝতে পারবে যে আমি ওয়েটার না।
শিশির এতক্ষণ কথা শুনে লজ্জা পেলেও এবার তার মেজাজ গরম হয়ে গেল। আবার তার মাথায় গোবর বলা। সে কিছু বলতে গেলেই শিশির তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-আচ্ছা চল অনেক হয়েছে। আর ঝগড়া করতে হবে না। আর সৌজন্য তুই এত মেয়ে মানুষের মতো ঝগড়া কোথা থেকে শিখলি রে?? দাঁড়া এবার বাসায় গিয়ে মামনি কে বলতে হবে।
এদিকে……
একটার পর একটা সিগারেট টানছে রাকিব। আজকে আবারো তাকে একটা খু*ন করতে হবে। সে ভেবে পায় না কিভাবে সে এই পেশায় যুক্ত হলো। সে তো এরকম ছিল না। অভাব তাকে এ পর্যন্ত আসতে বাধ্য করেছে। এ পর্যন্ত সব মিলে ২০ টার উপরে খু*ন করেছে সে। প্রথমদিকে তার ভয় করত, হাত কাঁপতো তবে এখন আর কাপে না। সে বুঝে গিয়েছে এখান থেকে বের হওয়ার আর কোনো পথ নেই একটাই পথ মৃত্যু। কিন্তু সে মরে গেলে তার অসহায় মা টার কি হবে? আর তার প্রতিবন্ধী বোন?তাই এখন আর তোকে মায়া দেখালে চলবে না।
সর্বশেষ সিগারেট টা ফেলে ধোঁয়া বাতাসে উড়িয়ে সে এগিয়ে যায় গুপ্ত ঘরটার দিকে। ঘরের দরজা খুলেই সে দেখতে পায়, একটা মেয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। বয়স কতই বা হবে ১৮- ১৯।এই বয়সে তার জীবনাবসান হবে!! কিন্তু রাকিবের কিছুই করার নেই। কেন যে মেয়েটা মরতে এদিকে এসেছিল?? আর পড়বে না পড়বে, মালিকের বিশ্বস্ত চামচাটার সামনেই পড়ল। এসব ভাবতে ভাবতেই রাকিবের কল বেজে উঠলো….
– হ্যাঁ,বলেন।
মোবাইলের ঐপাশ থেকে একটা গম্ভীর গলা শোনা গেল,,
-মাইয়াডারে মারছোস নি??
-না এখনো মারিনি।একটু পরেই মেরে ফেলবো জ্ঞান ফিরুক।
-রাকিইবা, তুই কি কোন রকম চালাকি করার চেষ্টা করছিস নি? শুনলাম তোর নাকি মাইয়াডার লেইগা মায়া হইতাছিল। তুই নাকি ওকে পালাইয়া যাইতে সাহায্য করতে চাইতাসিলি। আমার লগে চালাকি করার ফল ভালো হবে না এটা জানোস নিশ্চয়ই। তুই মনে হয় আমার ইতিহাস সম্পর্কে জানোস না।
-না,না সাহেব। কি যে বলেন? এইসব ব্যাপারে আবার আমি চালাকি করব? আর এই পেশায় মায়া!! হয় মারতে হবে, না হলে নিজেকে মরতে হবে!!
এবার ও পাশে থাকা লোকটি গম্ভীর তবে একটু মজার স্বরে বলল,,
-এইতো কাজের পোলা। এতদিন আমার লগে থাইক্কা থাইকা বুদ্ধিডা খুলছে। তবে এমন ভাবে মারবি যেন কাক পক্ষীতেও টের না পায়।
মালিক আসলে এমনই কিছুটা ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় আর কিছুটা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে। রাকিব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,,
-আচ্ছা,,সাহেব।
তখনই মোবাইলের ওইপাশ থেকে গাম্ভীর্যপূর্ণ শব্দ শোনা গেল,,
-মনে রাখবি,, কাকপক্ষীতেও যেন টের ….
-না পায়……..
-হ্যাঁ,বল। এইতো আমি চলে এসেছি এখন শুধু গেট পেরবো। রাখ।
শিশিরের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে নাহিয়ান মঞ্জিলের গেট পেরিয়ে ভেতরে যাচ্ছিল আনায়া। হঠাৎই কারো একজনের সাথে ধাক্কা লেগে হাতে থাকা মোবাইল ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো। সেও পড়ে যেতে গেলে এক জোড়া শক্ত হাত তাকে আঁকড়ে ধরে।
-সরি, সরি আমি আসলে আপনাকে খেয়াল করিনি। রিয়েলি সরি।
-ইটস ওকে এন্ড থ্যাংক ইউ । আপনি না থাকলে হয়তো আমি নিজেও পড়ে যেতাম।
একটা মেয়েলি গলা শুনে হৃদিত তার সামনে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালো। যাকে সে শক্ত হাতে আঁকড়ে রেখেছে। মেয়েটার হালকা মেকআপ, ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক ও হিজাবে আবৃত মুখটা দেখে রিদিতের মনে হলো যেন কোন স্নিগ্ধ সকালের সদ্য ফোঁটা একটি ফুল তার দিকে ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে আছে। সে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকল তার দিকে। অন্যদিকে রিদিতের এমন দৃষ্টিতে অস্বস্তি হচ্ছিল আনায়ার তাই সে একটু নড়ে উঠলো। এতে ধ্যান ভাঙলো রিদিতের। সে আলতো হাতে বাঁধন শিথিল করে আনায়াকে ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে আনায়া নিজের ফোন খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলে তার ফোনটা অনেকটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়েছে। সে নিজের ফোন আনতে এগোতে গেলেই,পিছন থেকে রিদিত তার পথ আটকে বলল,,
-সরি,সরি আপনি দাঁড়ান আমিই এনে দিচ্ছি।
-আপনাকে তো বললাম ইটস ওকে। আমি আনছি আপনার কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না।
-বললাম তো আমি এনে দিচ্ছি।
আনায়া আর কিছু বলে না। তাকে একপ্রকার জোর করে ওখানে দাঁড়িয়ে রেখেই রিদিত গিয়ে তার ফোনটা এনে তার হাতে দেয়। আনায়া এবার রিদিত কে ধন্যবাদ দিয়ে নাহিয়ান মঞ্জিলের এর উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। কিন্তু রিদিত তখনো একদৃষ্টে চেয়ে আছে আনায়ার যাওয়ার পানে……
ইয়ালিনার রুম থেকে ইয়ালিনাকে ডাকতে যাচ্ছে নিঝুম। সে বুঝতে পারল না ইয়ালিনা কেন হুট করে এসে নিজের রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে। সে তো একটু আগেই নিচে গিয়েছিল। সবার সাথে কথাও বলছিল। কিন্তু হঠাৎ কি যে হলো.. এসব ভাবতে ভাবতে নিঝুম টের পায় সে ইয়ালিনার রুমের সামনেই চলে এসেছে। দরজায় ঢোকা দিতে গিয়ে সে টের পায় দরজাটা ভিতর থেকে দেওয়া। তাই সে ডাক দিলে বলল,,
-লিনা আপু , তোমাকে সবাই নিচে ডাকছে। দরজাটা খোলো তো।
তবে ভিতর থেকে কোন সাড়া শব্দ আসে না। তাই এবার নিঝুম কিছুটা জোরেই ডেকে বলে,,
-ও লিনা আপু, দরজাটা খোলো না।
এবার রুমের ভেতর থেকে একটা শক্ত কন্ঠ ভেসে আসে,,
-কি দরকার?
-তোমাকে সবাই নিজের ডেকে নিয়ে যেতে বলেছে। সবাই ব্যস্ত তো এই জন্য কেউ আসতে পারেনি।
-গিয়ে বলে দে আমি এখন আসতে পারবো না আমি ব্যস্ত আছি।
-কিন্তু?? আচ্ছা।
নিঝুম আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। অন্যদিকে ইয়ালিনা নিজের রুমের মধ্যে সব কিছু উল্টোপাল্টা করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখেছে। সে যতবারই শান্ত হওয়ার চেষ্টা করেছে ততবারই তার কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া কত গুলো ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগে 🌺🌺
ইয়ালিনা সেটা দিয়ে নিচে নামছিল। সে কিছুটা অবাক হয়ে দেখতে পায় আজ নাহিয়ান ব্লাক কালারের কিছুই পড়েনি। আজকে সে পুরো আউটফিটটা নিয়েছে পার্পেল কালারের। যাই হোক সে নিচে গিয়ে সকলের সাথে কথা বলছিল। তখন হুট করে দেখতে পায় শিশিরও আজকে পার্পেল কালারের একটা গাউন পরেছে। আর সবাই তাকে নিয়ে মাতামাতি করছে।
কেউ বলছে,
“গাউনটা অনেক সুন্দর কোথা থেকে পেলি? কবে কিনলি?”
তো কেউ বলছে,
“গাউনটাতে তোকে পুরাই রূপকথার রাজকন্যাদের মতো লাগছে।”
হ্যান ত্যান আরো কত কি? কিন্তু ইয়ালিনার মেজাজ তখনই বিগড়ে গেল যখন সে শুনলো শিশির নওরিফাকে বলছে,
-আর কোথায় পাবো? এটা তোমার ছেলেই দিয়েছে।
ইয়ালিনা ভাবতে পারছে না যেখানে নাহিয়ান শুধু তাকে একটা চকলেটের কম্বো আর কয়েকটা ব্রেসলেট,দুল ব্যতীত আর কিছুই দেয় নি সেখানে শিশিরকে কিনা এত সুন্দর একটা গাউন?? ইয়ালিনা রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে উঠে আসে।
বর্তমান🌼🌼
ইয়ালিনা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একটার পর একটা জিনিস তুলছে আর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে। তার মনে চলছে তুমুল ঝড়। মনে জেকে বসেছে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা।যে করেই হোক এই ঘটনার প্রতিশোধ সে নিয়েই ছাড়বে।
শিশির আর আনায়া গল্প করছিল। তখন শিশির আনায়াকে বলে,
-দোস্ত তুই একটু দাঁড়া আমি তোর জন্যে একটা সফট ড্রিংকস নিয়ে আসি। এদিকে তো কেউ নেই। আমিই নিয়ে আসি। ২ মিনিট লাগবে।
শিশির চলে যাওয়ার পর,আনায়া সামনে থাকা সোফাটির দিকে এগিয়ে যেতে যাচ্ছিল। উদ্দেশ্য সেটাতে বসা কিন্তু তখনই কেউ একজন তার পিছন থেকে বলে উঠে,
-এই যে মিস।
আনায়া প্রথমে ভেবেছিল হয়তো অন্য কাউকে বলছে।তাই সে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করতে যাচ্ছিল,তখনই তার পিছন থাকা লোকটি বলে উঠে,
-এই যে মিস, আপনাকেই বলছি।
আনায়া পিছন ঘুরতেই দেখতে পায় একটা পরিচিত মুখ।
-সরি, আসলে এই ব্রেসলেটা, মেবি এটা আপনার।
আনায়া নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে তার হাত ফাঁকা।
-এই নিন।
-থ্যাংকস আপনাকে।
-ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম । বাট.. সকাল থেকে এতো ঘটনা ঘটল। আপনার ব্রেসলেটা আমার কাছে থেকে গেল।সেটার মডেলের নামও জানতে পারলাম কিন্তু এখনো সেটার মালকিনের নামটাই জানা হলো না…
আনায়া বুঝতে পারে যে সকাল থেকে যতবারই এই লোকটার সাথে দেখা হয়েছে ততবারই সে নিজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বাইরে বাড়তি কোনো কথা বলেননি। এমন কি নিজের নামটাও না..??সে সামান্য লজ্জা পায়।তারপর ইতস্ততিত কন্ঠে বলে,
-ওহ ,সরি, আমি আসলে ব্যাপারটা খেয়াল করিনি। যাই হোক আমি আয়নিন আনায়া। আপনি??
-আমি রিদিত, রিদিত খান।
তাদের কথোপকথনের মাঝেই হঠাৎ কেউ একজন এসে পিছন থেকে আনায়ার চোখ দুই হাত দিয়ে আটকে ধরে।রিদিত কিছুটা অবাক হলেও আনায়া শান্ত স্বরে বলে,
-নিঝু।
নিঝুম চোখ ছেড়ে দিয়ে হতাশ কন্ঠে বলল,
-আনায়া আপু তুমি সবসময় কি করে আমায় চিনতে পার??ধুর,তোমায় কখনো আমি চমকে দিতে পারি না।
আনায়া তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-তোমার তো খুশি হওয়ার কথা। আমি তোমায় ভালোবাসি বলেই না অনুভব করতে পারি।
-হুম সেটা ঠিক। কিন্তু তুমি এখানে কি করছ?নুয়া আপু তো তোমাকে ডাকছে।
– কোথায়??
-ঐতো ঐখানে।
আনায়া নিঝুমের সাথে চলে যায়। রিদিত সেদিকে তাকিয়ে,নিজের বাম হাত মাথার পেছনে আলতোভাবে রাখে মুচকি হেসে বলল,
-ওহ, আয়নিন…..
-হ্যালো,হ্যালো জানেমান,জানেমান আমার একটা কথা শোনো….
সাজিদের কথা শেষ হওয়ার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে টুং টুং শব্দ করে কল কেটে গেল। নাহিয়ান এতক্ষণ সাজিদের পাশে বসে মোবাইল ঘাটছিল আর আড়চোখে সবটা দেখছিল। কিন্তু তার চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই। তখনই তাদের সামনে চলে আসে শিশির। নাহিয়ানকে চিরাচরিত গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে সে মনে মনে বলল,
– গোমড়া মুখো।
এরপর সাজিদকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে সে বললো,
-কি হয়েছে ভাইয়া?? মন খারাপ??
সাজিদ শিশিরের দিকে তাকিয়ে মন খারাপের সুর নিয়ে বলল,
-আরে, তোর ইলমা আপু..
-ইলমা আপু,কি হয়েছে আপুর।
-আরে তেমন কিছু না।ঐ আমার উপর রাগ করেছে।
-ওহ, তাহলে তো ঠিকই আছে।
– ঠিকই আছে মানে??
-মানে আপুর রাগ করাটা যথাযথ।
– মানে কি, শিশির?? আমি মানছি যে তুই প্রথম থেকেই আমার আর ইলমার রিলেশনের তুমুল বিরোধী। তাই বলে আমাদের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেলে তুই খুশি হবি?
– ওমা, আমি কখন বললাম যে আমি খুশি হব??আর তুমি একটা জিনিস ভুল বললে,আমি শুধু তোমার আর ইলমার আপুর রিলেশনের তুমুল বিরোধী না। আমি পৃথিবীর সকল লোক দেখানো ভালোবাসার তুমুল বিরোধী।
-মানে?
-মানে তোমরা যেটাকে ভালোবাসার বলো। সেটা কি আসলেও ভালোবাসার? সত্যিকারের ভালবাসা কি এরকম হয়?
সাজিদ কিছুটা ভাবুক হয়ে বলল,
-তো কেমন হয়?
-সত্যিকারের ভালবাসার একটা পরিচয় থাকে, স্বীকৃতি থাকে। তোমাদের সম্পর্কের পরিচয়টা কি? গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড, প্রেমিক-প্রেমিকা?হাহ
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি গেল শিশিরের ঠোঁটে। সে আবার বলতে শুরু করল
-সমাজে এই সম্পর্কের স্বীকৃতি কি? তুমি যদি আপুকে সত্যি ভালবাসতে তাহলে তাকে এমন একটা পরিচয়হীন সম্পর্কে রাখতে না।তাকে সমাজের সর্বোচ্চ মর্যাদার সম্পর্কে আবদ্ধ করতে।
সাজিদ শিশিরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
-বাআবা…,,আমার ইমম্যাচিউর বোনটা কবে থেকে এরকম ম্যাচিউর কথাবার্তা বলা শিখলো??
– তুমি হয়তো ভুলে গেছ আমি ছোটবেলা থেকেই এই ব্যাপারে অনেক বেশি ম্যাচিউর।
-ওওও তাহলে তো তোর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তো বল তোর কেমন ছেলে পছন্দ?? তাহলে আমি ফুপি-ফুপার সাথে কথা বলে ছেলে খুঁজে তোর বিয়ের ব্যাবস্থা করি।
-আমার যেমন ছেলে পছন্দ তাকে খুঁজে পাওয়া শুধু কঠিনই না অসম্ভব জিনিস।
-ওও তাই নাকি??তা বল তো একটু শুনি।
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৭+৮
-তো শোনো তাহলে আমি তাকেই নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নেব যার কাছে ভালোবাসা কোন লোক দেখানো জিনিস না বরং অন্তরের অন্তঃস্থলে থেকে বের হয়ে আসা এক অনুভূতি। যে আমাকে ভালবাসি বলেই থেমে থাকবে না, বরং সেটাকে প্রমাণ করে সমাজের সর্বোচ্চ মর্যাদার সম্পর্কে আমায় আবদ্ধ করবে।যে আমাকে শুধু গোলাপ দিয়ে বলবে না ভালোবাসি বরং গোলাপের মতো যত্ন করে রেখে বলবে ভালোবাসি।
নাহিয়ান এতক্ষণ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে শিশিরের কথাগুলো শুনছিল। হঠাৎই তার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বের হয়ে আসল,
-That’s my girl……