মায়াকুমারী পর্ব ৬৩
মেহেরিন আনজারা
“মনখারাপ কেন?”
“কই না তো!”
চলে আসতে নিতেই হাত টেনে ধরল ধ্রুব,নিশু তাকায়।
“ছাড়ো,ঘুমাব।”
“আয় একসঙ্গে ঘুমাই।”
“না,দ্যুতি একা।”
“ওকে নিয়ে তোর এত ভাবতে হবে না,আমাকে নিয়ে ভাব।”
“ইশ! দরদ উথলে উঠেছে যে!”
ধ্রুবর ঠোঁটের কোণে তীর্যক হাসি ফুটে উঠল।
“আর কতদিন বউ ছাড়া একা থাকব?”
“ঢং না করে ছাড়ো আমাকে!”
নিশুর ঘাড়ে মুখ গুঁজল।
“আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?”
“যতদিন না তোমার সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে।”
“ধুর! আন্ডারস্ট্যান্ডিং দিয়ে কী করবি,তোকে আমি না দেখেই ভালোবেসেছি আরও সাড়ে তিন বছর আগে। প্রতিটি স্বপ্ন,কল্পনায় তোর সাথে আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গিয়েছে। না তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পেরেছিস আর না আমিও এতকিছুর পরে তোকে ছাড়তে পেরেছি।”
“আচ্ছা,ছাড়ো.. ঘুমাতে যাই।”
“একটু!”
ধ্রুবর আকার-ইঙ্গিত বুঝতে পারে নিশু,কী চাচ্ছে সে তাই সোজাসুজি বলল,”প্রতিটি মেয়েরই বিশেষভাবে পরিকল্পনা থাকে বিয়ের পর বাসর রাতটা জীবনের সেরা একটা রাত হিসেবে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। তদ্রুপ আমিও। খুব বেশি তাড়াহুড়ো করছো তুমি। আমার আরও সময়ের প্রয়োজন।”
হতাশ চোখে তাকায় ধ্রুব।
“আর কত সময় লাগবে নাকি ভয় পাচ্ছিস?”
“তুমি যতদিন না সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে আমাকে তোমার ঘরে তুলেছ ততদিন।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
মস্তিষ্ক ধপধপ করছে ধূসরের। রাগ নয়,যেন এক অদ্ভুত ধরণের পুঞ্জীভূত ক্ষরণ- মাথার ভিতরে ধূসর রঙে ধোঁয়ার মতো জমে উঠেছে সবকিছু। ইচ্ছে করছে সব গুঁড়িয়ে দিতে। সব যেন হঠাৎ তুচ্ছ মনে হচ্ছে। অথচ চোখের সামনে দাঁড়িয়ে বুশরা। কান্নায় তার মুখ ভেসে যাচ্ছে। শব্দহীন অঝোর ধারা বইছে চোখ বেয়ে। ধূসর চোখ বুজে তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে কয়েক কদম এগিয়ে বুশরার হাত ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল এরপর পায়ে কয়েক মগ ঠান্ডা পানি ঢালল। গরম কফির ঝলকে লাল হয়ে উঠেছে পাতলা ত্বক। তারপর রুমে ঢুকে বিছানায় বসাল। এরপর ওষুধের ক্যাবিনেট খুলে ছোট্ট একটি সিলভার সালফাডিয়াজিন এর টিউব বের করে নরমভাবে অয়েন্টমেন্টটা লাগিয়ে দিলো।
“আমার সাথে কখনো মিথ্যা বলবে না। বলবে না মানে,বলবে না। আজকের পর আর যদি একটি মিথ্যাও বলো.. আর যদি আমি সেটা প্রমাণ পাই.. সেদিন তুমি আমার সর্বোচ্চ চূড়ান্ত রূপ দেখবে। হয়তো.. সেদিন এই সম্পর্কটাই আর থাকবে না।”
অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল বুশরার।
“শুয়ে পড়ো।”
বুশরা চুপচাপ শুয়ে পড়ল। চোখ থেকে এখনও অঝরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। লাইট বন্ধ করে ব্যালকনিতে দাঁড়াল ধূসর। শহরের রাত- নিঃশব্দ নয় কিন্তু এক ধরনের নির্জনতায় ভরা। আকাশে ম্লান চাঁদ,তেমন একটা তারা নেই তবে খুব কম। বাতাস ভারি হয়ে আছে বাড়ির পেছন থেকে ভেসে আসা মহুয়া ফুলের সুগন্ধে। সেই সুগন্ধ এতটাই ঘন,এতটাই তীব্র,যে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। তবুও ধূসর দাঁড়িয়ে থাকল। পকেট হাতড়ে সিগারেট বের করে দিয়াশলাইয়ের ঘষা আগুনে আলো ফেলে তার মুখটাকে মুহূর্তে মনে হলো,যেন হাজার বছরের পুরনো কোনো ক্লান্ত প্রতিকৃতি। সিগারেটে লম্বা এক টান দিলো। ধোঁয়ার পাক ঘুরে উঠল হাওয়ায়। রাতটা নিঃসঙ্গ কিন্তু একা নয়। গাড়ির হর্ন,রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একেকটা সম্পর্ক,একেকটা মানুষ। কিছু দূরে হয়তো কারো জানালায় আলো জ্বলছে,কেউ পড়ছে,কেউ ভাবছে,কেউ কাঁদছে,কেউ ভালোবাসছে। কিন্তু এই ব্যালকনিতে,এই এক টুকরো রাতের কোণে,ধূসর শুধু দাঁড়িয়ে আছে। ধূপছায়ার মতো জীবন,আগুনের মতো সম্পর্ক আর নিঃশ্বাসে জমা থাকা অপরাধবোধ- সবকিছু মিলে এই রাত যেন একটা অধরা কবিতা,যার অর্থ সে জানে কিন্তু উচ্চারণ করতে পারে না। বুক ভার হয়ে এলো। ঝাপসা হয়ে এলো মস্তিষ্ক।
“সবই তো বুঝিস,সবই তো খেয়াল রাখিস,কখন আমার কী লাগবে সবই জানিস- তাহলে আমার মনটা কেন বুঝতে পারিসনি?তোর মতো করেই তো তোকে ভালোবেসেছিলাম,তবুও কেন তোকে সৃষ্টিকর্তা আমার করল না?”
কুণ্ডলী পাকিয়ে ওড়ে যাওয়া ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
“কোথাও শুনেছিলাম,ভালোবাসার মানুষকে নিজে ছাড়া অন্য কারো সাথে ভালো থাকতে দেখলে যদি নিজের খারাপ না লাগে,কলিজা না জ্বলে,তাহলে নাকি তাকে কখনোই ভালোবাসেনি! কিন্তু আমি তো সত্যিই বাসি। আমার এত জেলাশ হয় কেন? কলিজাটা পুড়ে ছারখার হয় কেন?কেন তোর সুখ সহ্য হয় না আমার?কেন তোকে কারো সাথে ভালো থাকতে দেখতে কষ্ট হয়?”
ধীরে ধীরে ভোরে আলো ফুটছে। সূর্য এখনও উঠেনি। পাখিদেরও ঘুম ভাঙ্গেনি বোধহয়। তবে বাড়ির পেছনের নারিকেল গাছটায় বাসা বাঁধা কাক দম্পতি জোড়ার কা কা ডাক শোনা যাচ্ছে একটু পর পর। ঘুম ভেঙে গেল নিশুর। ধ্রুবর বুকের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করতেই অপ্রস্তুত হলো। একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে নামল। দরজা খুলে দ্রুত নিজেদের রুমে ফিরে এলো। দেখল,দ্যুতি তখনই শোয়া থেকে উঠে বসেছে। চোখে ঘুমের ছাপ,মুখে ক্লান্তি ও চিন্তার রেখা। কোনো কথা হলো না,শুধু চোখাচোখি। ওয়াশরুমে গিয়ে পরপর দু’জন অযু করে এরপর একসাথে নামাজ আদায় করল। তারপর কয়েক পৃষ্ঠা কোরআন তিলাওয়াত করে নিশু কিচেনে চলে গেল। ব্যালকনিতে পাতিয়ে রাখা একটি বেতের চেয়ারে বসল দ্যুতি। কেন জানি ভালো লাগছে না তার। মাথাটা প্রচণ্ড ভার হয়ে আছে। অনেকক্ষণ বসার পর উঠে রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির মুখোমুখি আসতেই দেখল কিচেনে রিনার সঙ্গে নাস্তা বানাচ্ছে নিশু। ধীরে ধীরে নিচে নামল দ্যুতি। হঠাৎ শুনতে পেল সুফিয়া বেগম বলছেন,”বড়টাকে কাজের মহিলার মতো সারাদিন খাটায়। আর মেজটা স্বামীর সঙ্গে চিপকে থাকে সারাদিন। কী দিন আসলো!”
“হ্যাঁ,আম্মা। মেজটার বউ তো বড়লোকের মেয়ে,তাকে তো কোনো কাজই করতে দেয় না তোমার ছেলের বউ।”
“হুম,আমরা কিছু বললেই দোষ।”
“দেখোনি কালকের ঘটনা?’
“হুম,দেখেছি তো। এই মেয়ে আজ না হয় কাল দিলরুবার ভাত উঠাবে দেখিস।”
সিঁড়ির মাঝপথে থেমে গেল দ্যুতি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।
“কিছু মানুষের খেয়েদেয়ে কাজ নেই! কে সুখে আছে কে অসুখে আছে এসব ক্যালকুলেশন করে জীবন কাটায়!”
চমকে উঠে দ্যুতির দিকে তাকালেন দু’জন।
“আমাদেরকে বলেছিস?”
“হ্যাঁ,কিছু বলার প্রয়োজন হলে সামনে বলবেন পেছনে নয়।”
“আমরা আবার কী বললাম?”
“আর আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে- বিশেষ করে আমার ভাইদের বউয়ের ব্যাপারে নাক গলাবেন না। আমার ভাইয়েরা ছেড়ে দিবে না। সাবধান!”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে রুমের দিকে পা বাড়াল দ্যুতি। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন দু’জন।
“এই মেয়েটা কী বলে গেল রে,সাদিকা?”
“থ্রেট দিয়ে গেল।”
“ইঁচড়েপাকা মেয়ে। বিয়ে-শাদি না দিয়ে এটাকে ঘরের মধ্যে পিলার দিবে মনে হয়!”
“তা নয়তো আর কী! বয়স তো আর কম হয়নি!”
মা-মেয়ে এবার দ্যুতিকে নিয়ে কুমন্তব্য করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর দিলরুবা খাতুন এসেও হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করতে লাগলেন। দ্রুত হাতে নিশু টেবিল সাজিয়ে সবাইকে খেতে ডাকল। সবাই এলেও দ্যুতি এলো না। তবে ঠিক রাতের মতো ধূসরের পিছু পিছু এলো বুশরা। ওদের দিকে দৃষ্টি পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো নিশু। নিশুকে দেখেও ধূসর এমন ভান করল যেন কেউই নেই। পুরো টেবিলের দিকে তাকিয়ে ধূসর বুঝতে পারল নিশুর হাতের তৈরি রুটি,পরোটা,ভাজি,হালুয়া,চা-কফি,বেশ কয়েক আইটেমের ফলের টুকরো কাটা। ধূসর জানে নিশু করেছে এইসব আর তাকে হেল্প করেছে তার মা ও রিনা। ওরা বসল না।
“রিনা আপা,স্যুপ আছে?”
“না,ভাইজান।”
“আমাদের দু’জনের জন্য দু-বাটি স্যুপ বানিয়ে রুমে পাঠিয়ে দাও।”
“নাস্তা খাবি না?”
“না,আম্মা।”
নিরাশ চোখে তাকায় নিশু।
“চলো।”
বুশরার হাত ধরে রুমের দিকে পা বাড়াল ধূসর। সেদিকে তাকিয়ে রইল সবাই। চোখ কপালে তুললেন সুফিয়া খাতুন।
“এটা কেমন মেয়ে বিয়ে করল তোর ছেলে,আসাদ?”
নীরব রইলেন তিনি।
“বড়লোকের মেয়ে দেখে তোরা কি আর কিছুই খুঁজিইসনি?”
“কী খুঁজব,আম্মা?”
“আদব-কায়দা তো কিচ্ছু নাই। সবার সামনে স্বামীর হাত ধরে চলে গেল কীভাবে! বেশরম,বেলাজ মেয়ে।”
বিরক্ত হলো ধ্রুব।
“কী সমস্যা,দাদীমা?এমন করছো কেন?”
“খারাপ কী বললাম?”
“শোনো,তুমি আর কয়দিন বাঁচবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এইসব কুট কাঁচাল আর না চেলে ধর্মে কর্মে মন দাও। আখিরাতের জন্য উপকার হবে।”
“তুই আমাকে এমন কথা বলতে পারলি!”
“অসম্ভবের কী আছে!”
খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ধ্রুব। মলিন মুখে সার্ভ করছে নিশু।
“নিশু,খাবি না?”
“খাব,ফুপি.. তোমরা খাও আগে।”
“একসাথে খেয়ে নে পরে কী!”
“দ্যুতিও খায়নি।”
“ওর আবার কী হয়েছে?”
“কিছু হয়নি।”
রিনা স্যুপ তৈরি করে বাটিতে ঢেলে ধূসরের রুমের দিকে পা বাড়াল। সেদিকে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো নিশু। সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ। নিশু রুমে ঢুকে দ্যুতির দিকে এগিয়ে গেল।
“নাস্তা করবি না,দ্যুতি?”
প্রতিত্তোর করল না।
“কী হয়েছে তোর,মনখারাপ?”
“কিছু না।”
“মুখটা এত মলিন কেন?”
“কিছু না।”
বিরক্তবোধ করল দ্যুতি। আশাহত হয় নিশু।
“নাস্তা করবি চল।”
“খিদে নেই।”
“রাগ করিস না চল।”
“বললাম তো খাব না।”
“তোর ভাইয়ের সাথে ঘুমানোয় রাগ করেছিস বুঝি?”
“কখন বললাম?”
“তুই একা একা ঘুমিয়েছিস,আমি তোর ভাইকে বললেও শুনেনি। তোর জন্য চিন্তা হয়েছিল ঘুম আসছিল না। রাগ করিস না চল খাবি।”
“আমি এটার জন্য রাগ করিনি।”
“ভার্সিটিতে যেতে হবে চল না খেয়ে নিই।”
“তুই ও অন্যদের মতো খেয়ে নিতি!”
“কার উপর রেগে আছিস?
নীরব রইল দ্যুতি।
“বাঁচব কয়দিন বলতো,কী কারণে মনের মধ্যে এত রাগ জিদ অভিমান পুষে রাখিস! থাকতে দে না সবাইকে সবার মতো।”
“এই মেয়ের কারণে দাদীমা আর ফুপি তোকে কত খারাপ কথা বলেছে।”
“ওর দোষ কেন দিচ্ছিস। আগেও কি উনারা এমন করতেন না?”
“স্বামীকে ভালো লাগে অথচ স্বামীর বাবা-মাকে ভালো লাগে না। কী চমৎকার ব্যাপার তাই না!”
“তুই দেখছি দিনকে দিন কুটনী ননদ হয়ে যাচ্ছিস!”
“যা সত্য তা বলেছি,গায়ে লাগছে তোর?”
“উষ্টা খাবি এখন! যা,নাস্তা খেয়ে রেডি হ। ভার্সিটিতে যেতে হবে।”
“যারা সৎ তাদের জন্য এই দুনিয়া কঠিন!”
“খেতে আয়।”
বেরিয়ে গেল নিশু। যন্ত্রণায় মাথা-মস্তিষ্ক সব ফেটে যাচ্ছে। নিরালা কোথাও বসে কয়েক ঘন্টা কান্না করলে হয়তো তার দুঃখ লাঘব হত। একটা রুটি ছিঁড়ে আনমনে চিবুতে লাগল। দ্যুতি নাস্তা করতে এলো না। আরও মনখারাপ হয় নিশুর। মনে হচ্ছে যে সবকিছু কেবল তারজন্যই হচ্ছে। আসলেই কেন সে সেদিন ধৈর্য ধরতে পারছিল না। সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করেই হামলে পড়েছিল বুশরার উপর। সেওবা কী করতো! কাছের মানুষগুলোই তো সর্বপ্রথমে বিশ্বাসঘাতকতা করে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক ঢোক পানি গিলে রুমে ঢুকতেই দেখল ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিয়েছে দ্যুতি। অভিমান হয় নিশুর।
সেও নীরবে তৈরি হয়ে নিলো এরপর দু’জন বাসা থেকে বেরোতেই দেখল বুশরাকে নিয়ে বাইকে করে বেরিয়ে গেল ধূসর। সেদিকে তাকিয়ে রইল ওরা। কিছুক্ষণ পর ধ্রুব এলো এবং বাইক বের করে ওদের বসতে বলল। ভার্সিটির সামনে ওদের নামিয়ে দিয়ে চলে এলো। গেটের ভেতর পা রাখতেই হঠাৎ দেখল শুভ্র প্যান্টের পকেটে একহাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দৃষ্টি সরিয়ে লম্বা লম্বা কদম ফেলল ওরা। বুশরাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল ধূসর। হাত-পায়ের অবস্থা খারাপ। ডাক্তার অয়েন্টমেন্ট এবং ঔষধ লিখে দিলো। বাসায় ফিরে এলো ধ্রুব। ব্রেক কষতেই দেখল,আসাদ সাহেব তৈরি হয়ে বাসা থেকে বেরোচ্ছেন। ভ্রু কুঁচকাল সে।
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“কাজে।”
“কীসের কাজ?”
“মানুষের উপর নির্ভরশীল হলে তো আমার ব্যবসা-বানিজ্য সব লাটে উঠবে।”
“উত্তেজিত হওয়ার কী আছে?”
মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি।
“বাসায় যান।”
“কেউ বললেই হয়ে গেল!”
“দশ লাইন না বুঝলে মনে হচ্ছে আপনার ভালো লাগে না.. নাকি ঝামেলা করতে খুব পছন্দ আপনার?”
ভার্সিটি শেষ হতেই গেটের সামনে এসে দাঁড়াল ওরা দু’জন। আকস্মিক এগিয়ে এলো শুভ্র। তাকে দেখতেই অপ্রস্তুত হলো ওরা দু’জন।
“হ্যালো!”
নীরব রইল দ্যুতি।
“আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল।”
“জি,বলুন।”
“আমরা একটু ওদিকে যাই।”
“না,আমার ভাইয়া এসে পড়বে এখন।”
“জাস্ট পাঁচ মিনিট.. প্লিজ।”
অনিচ্ছা সত্ত্বেও পা বাড়াল দ্যুতি। নিশু একা দাঁড়িয়ে রইল। দ্যুতি তার সাথে আর একটি কথাও বলেনি সে-ও বলেনি। দু’জনের মনের মধ্যে অভিমান। তবে বুকের ভিতর ধুকপুক করছে,ধ্রুব এসে যদি দেখে ফেলে তাহলে কী উত্তর দিবে ভেবেই আতঙ্কিত হয়ে রইল। কাঁপা কাঁপা পা-জোড়া বাড়াল সামনের দিকে। ওদিকটায় কিছু ফুলের দোকান রয়েছে। নিশুর ফুল দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। ঘুরে-ঘুরে ফুল দেখতে লাগল। লক্ষ্য করল,ধূসর বুশরাকে ফুল কিনে দিচ্ছে। বুশরা অনেক খুশি। কেন জানি নিশুর ভালো লাগল। সে দ্রুত আড়ালে সরে গেল,বিব্রত করতে চায় না ওদের। ফুল কিনে ওরা বেরিয়ে গেল। সেদিকে তাকিয়ে রইল নিশু।
“কীরে তুই এখানে করছিস?”
চমকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় নিশু। ধ্রুবকে দেখতেই গলা শুকিয়ে গেল।
“ফুল দেখছি।”
ভ্রু কুঁচকাল ধ্রুব।
“মানে,ফুলের দোকানে ঘুরঘুর করতে আলাদা রকম আনন্দ লাগে আমার। সব ফুলের মিশ্রণে যে সুন্দর ঘ্রাণটা নাকে লাগে তাতে মুগ্ধ হতে বাধ্য। সুযোগ পেলেই ফুলের দোকানে ঘুরে আমি। মনখারাপ থাকলে চট করে মন ভালো হয়ে যায়।”
মায়াকুমারী পর্ব ৬১+৬২
“তোর কৈফিয়ত দেওয়া শেষ হয়েছে?”
নিরাশ চোখে তাকায় নিশু।
“ধুর! আনরোমান্টিক একটা।”
“তোর ননদ কই?”
আতঙ্কে তাকায় নিশু।
“ওই তো ওদিকে হয়তো আমার মতো ঘুরে-ঘুরে ফুল দেখছে। মানে,আমরা দু’জন এমনই।”
