মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৩০
ইশরাত জাহান
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বরের জন্য রান্না করতে এসেছে মায়া।রান্নাঘরে অলরেডি মালিনী ও সোনালী আছে।মায়াকে দেখেও না দেখার ভান করে আছে সবাই।মায়াও ওদেরকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মত করে রান্না করতে শুরু করে।একজন সার্ভেন্ট এসে মায়াকে জিজ্ঞাসা করে,”কোনো হেল্প লাগবে ম্যাম?”
“না।আমি ম্যানেজ করতে পারবো।”
“ব্রেকফাস্ট বানানো তো কমপ্লিট ম্যাম।তাহলে এখন রান্না কেনো?”
“তোমাদের স্যারের জন্য। কাল রাতে বলেছিলো আমার হাতের মাংস রান্না খাবে।তাই রান্না করতে এসেছি।”
“ওকে ম্যাম।”
মায়ার শেষের কথাটি কর্ণপাত হয় জারার।সেও তখন রান্নাঘরে আসছিলো।সোনালীর কাছে থাকলে আপাতত তার মনটা একটু ভালো থাকে।ওই যে একটু কুবুদ্ধি পায়।কিভাবে রাজ ও মায়ার বিচ্ছেদ ঘটানো যায় তাই।মায়ার শেষ কথাটি শুনে জারার রাগ উঠেছে।তার রাজ বেইবী এখন তার নেই।যাকে পাওয়ার ইচ্ছা জেগেছিলো মনে সে এখন খেতে চায় রান্না তাও অন্যের হাতে।এটা ভেবে একটু আহত হয় জারা।সোনালীর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে।মায়া নিজের মতো মশলা ব্লেন্ড করে রান্না করতে শুরু করে।মায়া রান্নায় পারদর্শী।অনেক সময় সে নিজে রান্না করেছে।হাসি তাকে শিখিয়ে দিয়েছে।মালিনী তাকিয়ে মায়ার রান্না দেখছে।মেয়েটার প্রশংসা না করেও পারা যায় না।মেয়েটা রাজের জন্য পাগলামি করে এই যা।বাকি সব দিক তো পারফেক্ট।কিন্তু জারা আর তার পরিবারের কাছে ওয়াদা করেছিলো মালিনী।যেটা ভঙ্গ হয়েছে আবার মায়ার এই বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে এই বাড়িতে অনেক অশুভ কাজ ঘটেছে।যেটা সহ্য করতে পারছেন না তিনি।রান্না করতে থাকে মায়া।তখনই সার্ভেন্ট এসে সবাইকে বলে,”আপনাদের খাবার সার্ভ করা কমপ্লিট ম্যাম।আপনারা আসুন খেতে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সবাই আজ যার যার মতো ব্যাস্ত।মাহমুদ সরদার বাড়িতে নেই।কমিউনিটি সেন্টারে গেছেন ডেকোরেশন দেখতে।মোহন সরদার তার কোম্পানিতে।সিয়া হিয়া ও মিলি মিলে ড্রেস ও অর্নামেন্টস দেখছে।রুদ্র বাইরে গেছে।কেনো গেছে এটা কেউ জানে না।তাই আপাতত মালিনী ও সোনালী খেতে বসেছে।মায়ার রান্না করা শেষ।এখন সে গেছে রাজকে ডাকতে।এই সুযোগ পেয়েছে জারা।মায়ার রান্না করা মাংসে এক কৌটা ঝাল সম্পূর্ণ ঢেলে দিলো।শয়তানি হাসি দিয়ে জারা বলে,”এখন আমার বেইবী এই ঝাল খেয়ে তোমার বদনাম করবে। আর আমি বেইবীকে টেস্টি খাবার এনে দিবো।দেন বেইবী আমাকে ভালোবাসতে শুরু করবে।ওহ বেইবী!”
মায়া রাজকে নিয়ে এসেছে খাবার টেবিলের সামনে।সার্ভেন্ট থেকে শুনলো বাকি মেয়েরা না খেয়ে আছে।তারা এখন সাজগোজ নিয়ে এক্সাইটেড। মায়া ওদেরকে টানতে টানতে নিয়ে এসেছে।এখন খাবার খেতে হবে। আর না খেয়ে থাকলে তো দুর্বল হয়ে যাবে।তাই মায়া তাদেরকে নিয়ে আসে।সবাই মিলে টেবিলে বসেছে খেতে।জারা সোফায় বসে আছে।টিভি অন করে রিমোট হাতে বসে আছে কিন্তু নজর তার খাবার টেবিলের দিকে।রুদ্র বাসায় এসেছে মাত্র।এসেই খাবার টেবিলে বসেছে।মায়া সবার জন্য রুটি আর মাংস এনে নিজের হাতে সার্ভ করে দিচ্ছে।সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।ভাবীর হাতে রান্না খাবে বলে সবাই খুশি। দূরে সোফায় বসে জারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।সেও খুশিতে আছে।একটু পর রাজ খাবার খেয়ে মাথা গরম করবে।রাজ ঝাল সহ্য করতে পারে না।একবার অতিরিক্ত ঝাল খেয়ে ঝামেলা করেছিলো বাসায়। সার্ভেন্টকে বকাঝকা করে ।মালিনী তো তাকে বাড়ি থেকেই বিদায় করে দিয়েছে।তাই জারা আজ এমন প্ল্যান করেছে।রুদ্র জারাকে দেখে বলে,”কি রে তুই ওখানে কেনো?আয় আমাদের সাথে খেতে বস।আমাদের ভাবী জি রান্না করেছে।খেতে আসবি না?”
“নট ইন্টারেস্টেড।তুমি খাও তোমার ভাবী জির রান্না।”
“আরে আয় আয়।খেয়ে দেখ তোর রাজ বেইবীর বউ মানে আমাদের ভাবী জি কেমন রান্না করে।”
জারা মুখ ভেংচি দেয়।মিলি জারাকে টেনে নিয়ে আসে টেবিলের দিকে। জারাকে রুদ্রের পাশে বসিয়ে নিজে একপাশে বসে মিলি।মায়া সবাইকে খাবার সার্ভ করে দেয়।জারার প্লেটে মাংস দিতে গেলে জারা বলে,”আমি ডায়েট করি।এসব ওয়েলি ফুড আমি খাই না।আমার জন্য কিছু সালাদ এনো প্লিজ।”
মায়া সার্ভেন্টদের বলে জারার জন্য সালাদ আনে।সবাই মিলে রুটি ছিঁড়ে মাংসের ঝোলের সাথে মিলিয়ে গালে দেয়।জারা সূক্ষ চোখে সবাইকে দেখতে থাকে।প্রথম গাল খাবার খেয়েই রুদ্র গাল থেকে খাবার ফেলে দিয়ে পানি খেতে শুরু করে।সিয়া হিয়া ও মিলিও একই কাজ করে।কেউ খেতে পারে না খাবার।ঝালের পরিমাণ অতিরিক্ত।প্রথমে গালে নিতেই গুঁড়া মরিচের কাচা স্মেল চলে আসে।রাজ কোনমতে খাবার গিলে পানি খেতে থাকে।তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”কাল রাতে তো মুখ অপবিত্র করেছিলাম বলে গোসল করিয়েছিলে এখন কেনো ঝাল খাইয়ে মারছো?”
রুদ্র ঝালের তেজ কমিয়ে বলে,”এই খাবার মনে হয় আমাদের জন্য না।তোমার না হওয়া সতিন মানে জারার জন্য।ভুলে আমাদের খাইয়ে দিয়েছো।আমরা এটা খেতে পারবো। সরি ভাবী জি।আমরা তোমার পথের কাঁটা না আমাদের রেহায় দেও।”
মায়া অবাক হয়ে যায়।তবে জারার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে জারা মিটিমিটি হাসছে।সন্দেহের বসে এক টুকরো মাংস নিয়ে টেস্ট করে মায়া।অত্যধিক ঝালের কারণে মায়ার নিজেরও গাল জ্বলে ওঠে।রাজ গ্লাসে পানি ঢেলে মায়াকে খেতে দেয়।জারা সিম্পাথী পাওয়ার জন্য বলে,”আমি একটি ডেজার্ট বানিয়েছি।তোমরা ওটা মজা করে খাও।”
বলেই জারা ডেজার্ট নিয়ে আসে।সবাই খুশি হয়ে নিতে থাকে ডেজার্ট।সবাইকে দিয়ে যখন রাজের প্লেটে ডেজার্ট দিতে যাবে ওমনি জারার হাত শক্ত করে আকড়ে ধরে মায়া।মায়ার এমন ভাবে হাত ধরা দেখে জারা তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।মায়া জারাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার বর আমার রান্না করা খাবারটিই খাবে।আমি ঝাল দিলে তাকে ঝাল খেতে হবে আমি বিষ মেশালে তাকে সেই বিষটাই খেতে হবে।কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি এসে আমার জীবনে বাধা দিতে পারবে না।এই অধিকার এই মেহেরুন জাহান মায়া কাউকে দেয় না।মাইন্ড ইট।”
বলেই জারার হাত ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে দেয়।রাজের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”কি মন্ত্রী মশাই।খাবেনা আপনার বউয়ের হাতের রান্না?”
রাজ মৃদু হেসে বলে,”মায়াবতীর হাতের বিষ আমার জন্য অমৃত।এটাতো সামান্য ঝাল।আমি মিষ্টি মনে করে খেয়ে নিবো।”
বলেই রাজ তার প্লেটের মাংস দিয়ে রুটি খেতে থাকে।রাজ দেখতে শ্যাম বর্ণের।অতিরিক্ত ঝাল খাওয়ার ফলে রাজের গাল লাল হয়ে গেছে।এক টুকরো মাংস শেষ করতেই রাজের অবস্থা নাজেহাল।কিন্তু তারপরও সে ঝাল দেওয়া মাংস তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে।ঝালের তেজে রাজের মুখ ঘেমে উঠেছে।কপালের শিরা উপশিরা ফুলে উঠেছে।কালো ঠোঁট ফোফাতে থাকে।তারপরও রাজ মুখে হাসি ফুটিয়ে খাবারগুলো খেতে থাকে।জারা অবাক হয়ে দেখছে।তার ভাবনায় এভাবে পানি ঢেলে দেওয়া হলো।ভেবেছিলো মায়াকে আজ ইনসাল্ট করবে।কিন্তু রাজ তো মায়ার প্রেমে মত্ত।তানাহলে কি এই ঝাল দেওয়া মাংস খায়?খাবারগুলো শেষ করে রাজ এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।তারপরও সে ফোফাতে থাকে।চেয়ার থেকে উঠে রাজ দাড়িয়ে পড়ে মায়ার সামনে।মায়া রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ঝালের কড়া তেজ ফুটে উঠেছে রাজের মুখে।মায়ার দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,”বরকে ঝাল খাইয়েছো।এই ঝালের তেজ গ্রহণ করবে না,মায়াবতী?”
মায়া বুঝে উঠতে পারে না।সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।রাজ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”বাচ্চারা চোখ বন্ধ করো।তোমাদের মন্ত্রী মশাই এখন প্রেম করবে।”
সিয়া হিয়া ও মিলি অবাক হলেও রাজের আদেশ পেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।রুদ্র প্লে বয়।সে তো আগে থেকেই বুঝতে পারে সব।তাই সে নিজেই চোখ বন্ধ করে।রাজ সাথে সাথে মায়াকে নিজের কাছে এনে তার গালের ঝালগুলো মায়ার গালে মিলিয়ে দেয়।মায়া নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে নেয় রাজের থেকে এই ঝালের স্বাদ।জারা চোখ বন্ধ করেনি।সে ছলছল নয়নে দেখছে তার বেইবীর ঝালের আদান প্রদান।মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখেছে জারা।এখনই কান্না করে দিবে সে।রুদ্র তার এক হাত দিয়ে জারার চোখের উপর রেখে বলে,”না হওয়া বর আর সতীনের প্রেমে নজর দিতে নেই।ওটা তোর পাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু হলোনা।”
রাজ তার কাজ কমপ্লিট করে দূরে সরে দাড়িয়ে সবাইকে বলে,”চোখ খুলতে পারো সবাই।”
সবাই চোখ খুলে।রাজের ঝাল অনেকটাই কমেছে।সে এখন মুখে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।রুদ্র দুষ্টুমি করে বলে,”এমন ঝাল খাওয়ার অধিকার প্রত্যেক পুরুষের কপালে লেখা হোক। ঝালে ঝালে প্রেম নিবেদন করে দেওয়া প্রেমিক যুগলের আইনত অধিকার করা হোক।”
সবার কথার মাঝেই হাতে মিষ্টি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে পিয়াশ।খুশিতে খুশিতে রাজের কাছে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরে।রাজ অবাক হয়ে যায় তবে দুষ্টুমি করে বলে,”আরে আরে সাবধানে পিয়ু বেবী।আমার আশেপাশে কেউ আসলে আমার মিষ্টি মায়াবতী ট্রান্সফার করে রূপ নেয় হিংস্র মায়াবতীর। যার একটা ডেমো পেয়েছি।”
মৌ নিজেও এসেছে সেখানে।মৌ তার শাড়ির আচল হাতে গোটাতে থাকে।লজ্জা পাচ্ছে খুব সে। পিয়াশ মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটি মিষ্টি নিয়ে রাজের গালে দিয়ে বলে,”গুড নিউজ আছে বস।আমি আমার প্রিয়তমার থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার পাচ্ছি।আমার সংসার পরিপূর্ণ হতে চলেছে।”
রাজ মুখের মিষ্টি শেষ করে বলে,”মানে আমি কাকু হতে যাচ্ছি?”
“একদম ঠিক ধরেছেন।এই খুশির সংবাদ আমি পেয়েই আপনার কাছে ছুটে চলে এসেছি।আমার দুঃখের সময় আপনি আমার পাশে ছিলেন।আজ আমার সুখের দিনেও আমার পাশে আপনি থাকবেন।”
“তোমার সুখে দুঃখে সবসময় আমি আছি।কংগ্রাচুলেশন তোমাদের দুজনকে।বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাবু নিয়ে নিলে।এদিকে আমি থাক বাদ দিলাম।কিছু বললেই তো আমি লু চু লিস্টের কর্মকর্তা হয়ে যাবো।”
মৌয়ের কাছে এসে মৌকে জড়িয়ে ধরে মায়া।মৌকে জড়িয়ে বলে,”কংগ্রাচুলেশন বোন।আমি খালামণি হব।এটা আমার জীবনে আরেক সুখ।”
মৌ খুশি হয়ে বলে,”তুমিও তাড়াতাড়ি বাবু নিয়ে নেও।দেখবে মা হওয়ার মিষ্টি অনুভূতি তুমিও পেয়ে যাবে।”
“আগে আমার উদ্দেশ্য সফল হোক। এই মোহন সরদার ও হিডেন শত্রুদের খুঁজে বের করে বরবাদ করে নেই।তারপর আমিও এই বিষয়ে দেখবো।আমার সুখের পথে কাটা বিছানো।এই কাঁটাগুলো একেক করে উপ্রে ফেলতে হবে আমাকে।”
বিকালে রুদ্র খুশি হয়ে কেক অর্ডার করে।মৌ ও পিয়াশ মিলে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়।কেক খাওয়ার পর সবাই মিলে আনন্দ করতে থাকে।রুদ্রের একটা ইমারজেন্সি কল আসে।তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে যায় সে।কল রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে বলে,”আমি আসছি ভাই।”
“কবে?”
“আজকে।”
“কিন্তু তোমার তো কয়েকদিন পর আসার কথা ছিলো।”
“এখানকার কাজ শেষ। নাও আই কান্ট ওয়েট টু সী মাই প্রেয়সী।”
“ওকে ব্রো।তাহলে দেখা হবে শীঘ্রই।”
“ওদিকটায় কাজ কতদূর করেছিস?”
“অলমোস্ট ডান।তুমি আসো দুজনে মিলে খেলা শুরু করবো।”
“ওকে,বাই।”
“বাই।”
রুদ্র একটা রহস্যের হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে মায়া ও রাজের দিকে।সেখানে সিয়া হিয়া ও মিলি আছে। পিয়াশ ও মৌকে নিয়ে আনন্দ করছে সবাই।উপরে দাড়িয়ে ওদেরকে দেখছে সোনালী ও মালিনী।সবাইকে ভালোভাবে পরখ করে রুদ্র বলে ওঠে,”খেলার মোড় পাল্টে যাবে এবার। সরি ভাবী জি আপনি যেটা ভেবে রেখেছেন এবার সেটা হবে না।হবে অন্য কিছু।”
সবাই মিলে এখন রেডি হচ্ছে রিসিভশনের জন্য। মায়া এমনিতেও সাজতে পছন্দ করে না।মায়ার নেচারাল চেহারা বেশি পছন্দ করে রাজ।তাই সবাইকে রাজ বলে দিয়েছে,”মায়াবতীকে একদম হালকাভাবে সাজাবি।ছবিতে কোনরকম ওঠার জন্য সাজাবি।কিন্তু হাই মেকআপ দিয়ে আমার মায়াবতীর মুখের সৌন্দর্য মুছে দিবি না।”
কথাগুলো রাজ তার বোনেদের বলে দেয়।মায়া নিজে পার্লার থেকে সাজতে চায় না।তাই বাড়ির মেয়েরা মিলেই সাজাতে থাকে মায়াকে।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে নামতে থাকে অগনিত যাত্রী।সেখান থেকে বের হয় এক যুবক।প্লেন থেকে নেমেই চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে পরখ করে দেখে নিলো চারপাশ।বিদেশের পরিবেশ আর বাংলাদেশের পরিবেশ আকাশ পাতাল তফাৎ।বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে একটি ফ্রেশ নিঃশ্বাস নিলো সে।তারপর ডেভিল হাসি মুখে ফুটিয়ে বলে ওঠে,”মায়া মাই জানেমান।তোমার সাইকো লাভার ইজ ব্যাক।এবার তোমাকে আমার করেই ছাড়বো আমার জানেমান।তোমার মন্ত্রীর রাজত্ব থেকে কেড়ে নিয়ে আসবো তোমাকে।দেখি কে কি করে?”
বলেই তুরি বাজিয়ে ইশারা করে পিছনে দাড়িয়ে থাকা গার্ডদের।যুবকটির ইশারা পেয়ে গার্ডগুলো তার পিছনে হাঁটতে শুরু করে।
ঢাকার বিখ্যাত কমিউনিটি সেন্টারে এক এক করে প্রবেশ করছে নামি দামি লোকজন।সাথে আছে মিডিয়ার লোক।সবাই সেন্টারে ঢোকার আগে নিজেদের ইনভিটিশন কার্ড দেখিয়ে নেয়।এটা রুলস করে দিয়েছে মাহমুদ সরদার।সবাইকে কার্ড দেওয়া হয়েছে।দারোয়ানকে বলে দিয়েছে,”সবাইকে ভালো মত চেক করে তারপর কার্ড দেখে ভিতরে ঢুকতে দিবে।”
নিজেকে আয়নায় ভালোভাবে দেখতে থাকে মায়া।গাঢ় নীল রঙের ভারী কাজের লেহেঙ্গা পরেছে মায়া মাথায় গোল্ডের রংয়ের নেটের ঘোমটা চুল ছেড়ে দিয়ে ঘোমটা দিয়ে সেজেছে।ঠোঁটে গোলাপী লিপস্টিক মুখে সাজ কম। লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে পরেছে অর্নামেন্ট।রাজ ব্ল্যাক শেরওয়ানি পরেছে।মায়ার পাশে এসে দাড়িয়ে আয়নায় দুজনকে একসাথে দেখতে থাকে রাজ।মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”মায়াবতীর মায়ায় পড়ে গেছি আবারও।একেক সময় নীলের একেক আবির্ভাব দেখিয়ে পাগল করে দিচ্ছে আমাকে আমার মায়াবতী।”
মায়া রাজের দিকে ফিরে বলে,”আমার পারফেক্ট মন্ত্রী মশাই।”
বলেই দুজনে একসাথে বেরিয়ে পড়ে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে।গাড়িতে উঠতেই মায়ার ফোনে একটি ম্যাসেজ আসে।ফোন ওপেন করে মায়া দেখে,”মোহন সরদারের কোম্পানিতে আগুন লেগেছে।বেচারা মোহন সরদার এখন জানতে পারবে না তার কোম্পানি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।”
মায়া খুশি হয়ে যায় এমন ম্যাসেজ পেয়ে।আজকের দিনটি সত্যি তার জন্য খুশির দিন।রাজের এক বাহু ধরে মায়া রাজের কাধে মাথা রেখে বলে,”আজকের দিনটা আমার জন্য সুখকর মন্ত্রী মশাই।আমি এমন ভাবেই সুখে দিন কাটাতে চাই।”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ২৯
মায়া আজ খুব খুশি।তার মন্ত্রী মশাইয়ের সাথে তার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে।মৌ আজকে মা হওয়ার খবর পেলো।ওদিকে মোহন সরদারের কোম্পানিকে আগুন লাগানো হয়েছে।কিন্তু বেচারি নিজেও জানে না তার সুখের পথে কাটা হয়ে একজন আসতে চলেছে।তাকে ভালোবেসে উজার করতে এসে তার জীবন ধ্বংস করতে চায় সেই ব্যাক্তি।