মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৪

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৪
ইশরাত জাহান

ক্ষিপ্ত হয়ে বসে আছে সোনালী।মায়াকে একটা শিক্ষা দিতে মন চাচ্ছে তার।এই মায়া অনেক বার বেড়েছে।আজকে তার হাত মুচড়ে দিলো।ওকে তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবে সে।কিছু একটা ভেবে কাউকে কল দিলো।
রাতে খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। মোহন সরদারকে ধরে ধরে সিড়ি দিয়ে নিচে আসছে আয়রা।ব্যালেন্স হারা হয়ে আয়রার গায়ের উপর ঝুঁকে যায় মোহন সরদার।রুদ্র এক টুকরো শসা গালে দিচ্ছিলো।বাবার এমন দৃশ্য দেখে হাত থেকে শসা পড়ে যায়।হা হয়ে তাকিয়ে দেখছে সবাই।রাজ নিজেও সেদিকে তাকিয়ে আছে।পাশে থাকা মাহমুদ সরদারকে দেখে রাজ হালকা হেসে নেয়।মাহমুদ সরদারের চোখের সামনে হাত রেখে বলে,”বুড়ো হয়েছো তো বাবা।এভাবে ভাইয়ের ইউনিক লাভ সীন দেখেতে হয় না।হিংসা হবে তো তোমার।”

রাজের হাত ঝাড়া দিয়ে মাহমুদ সরদার বলেন,”এই বয়সে এসে বাবার হাতে মার খেতে না চাইলে চুপ থাকবে।”
“ছিঃ বাবা পঁচা কথা।এই বয়সে আমি তোমার হাতে মার খাবো কেনো?এখন তো তোমার নাতি নাতনিকে মার দিবে।”
“বেশরম ছেলে আমার কপালেই জুটলো।”
সিয়া হিয়া আর মিলিও তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।হিয়ার পাশে রুদ্র ছিলো।হিয়ার কানে ফিসফিস করে রুদ্র বলে,”হা করে হবু শ্বশুরের প্রেম দেখছিস কেনো।পাশে তো আমি আছি।”
“শাট আপ রুদ্র ভাই।আপনি একজন নির্লজ্জ।বাবাকে নিয়ে এমন বলে?”
“বাবা করবে লীলাখেলা আমি বললে দোষ!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সোনালী এসে আয়রাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মোহন সরদারকে নিয়ে আসে।মালিনী এসব আর সহ্য করতে পারছে না।সংসার পুরো উচ্ছন্নে গেছে।নিরিবিলি পরিবেশ ছিলো তার।এখন কি শুরু হলো।এই মায়া আসাতে এত সমস্যা বাড়ছে।এমন ধারণা তার মস্তিষ্কে।এমনিতেও তিনি সোনালীকে পছন্দ করে না। কারো ঘর ভেঙ্গে তার জায়গা নেওয়াটা কোনো ভালো মেয়েদের পরিচয় না।তারপরও এখন সে এই পরিবারের বউ তাই সম্মানটা দেয়।
সবার খাওয়া দাওয়ার মাঝে হিয়া বলে,”বাবা আমি বাইরের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে চাই। ঢাকায় পড়ালেখা করতে চাই না।”

রুদ্র থেমে যায়।ফট করে সোনালী বলে,”ঢাকা তে তো উন্নত ভার্সিটি আছে।শুধু শুধু বাইরে কেনো যাবে?”
“আসলে কাকিয়া আমি ভাইয়ার মত বাইরের জগৎ সম্পর্কে আইডিয়া নিতে চাই।”
এবার মাহমুদ সরদার বলেন,”ঠিক আছে।বাইরে বলতে ঠিক কোন জায়গায় যেতে চাও?”
“আপাতত আমি চট্টগ্রামে যেতে চাই। ওখানের ভার্সিটিতে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে।”
“মানুষ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসে।তুমি ঢাকা থেকে উল্টো চট্টগ্রাম যেতে চাও কেনো?”
প্রশ্ন করেন মালিনী।
হিয়া উত্তর দেয়,”আসলে মা একটু বাইরের পরিবেশ জানতে ইচ্ছা করছে। আর সমস্যা নেই আমার যদি ভালো না লাগে আমিতো এখানে ট্রান্সফার হতে পারবো।”

মাহমুদ সরদার মেয়ের কথায় রাজি হয়ে বলেন,”আচ্ছা তুমি যেটা ভালো মনে করো।”
খাবার শেষ করে রুমে এসে বসে মায়া।রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হিয়াকে একটু আপসেট দেখালো মনে হলো।”
“প্রিয় মানুষদের থেকে দূরে থাকাটা তো কষ্টের মায়াবতী।আমার বোন তো তাও চেষ্টা করছে।”
মায়া তাকালো রাজের দিকে।রাজ হাসছে।মায়া বলে,”তুমি জানো সবকিছু!তাহলে বাধা দিচ্ছ না কেনো?”
“কি বলোতো মায়াবতী!আমার বোনেরা অনেক স্ট্রং।ওরা ওদের ভালোটা এমনি বুঝতে পারে।মাথা ঠাণ্ডা রেখে দুঃখগুলো লুকিয়ে রাখতে পারে তারা।আমাকে কিছু করতে হয় না।”
বলতে না বলতেই রাজের ফোনে কল আসে।রিসিভ করতেই পিয়াশ বলে,”রিমু সহ আরো দুজন মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে ওরা বস।ওদেরকে ফলো করছি আমরা।”

“লোকেশন অন রাখো আমি আসছি।”
বলেই ড্রয়ার থেকে গুলি নিয়ে দাদা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে নিলো রাজ।মায়াকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেলো।
লাইব্রেরী থেকে উঠে রুমের দিকে যাচ্ছে হিয়া।বই পড়া শেষ।রুমের দরজা খুলতে যাবে ওমনি হেঁচকা টানে হিয়াকে ছাদে নিয়ে আসে রুদ্র।ছাদে এসেই ছাদের দরজা লাগিয়ে দেয়।হিয়া চিল্লিয়ে বলে,”এটা কেমন অসভ্যতা রুদ্র ভাই?আমাকে ছাড়ুন আমি…”
আর কিছু বলতে পারলো না হিয়া।রুদ্র পকেট থেকে গুলি বেড় করে হিয়ার মাথায় তাক করে বলে,”আর একটা কথা বলবি তো আমার থেকে পালানোর শখ মিটিয়ে দিবো।”
হিয়া ভয় পেয়ে যায়।চশমাটা একটু ঠিক করে বলে,”আ আমাকে যেতে দিন প্লিজ।”

“কেনো পালাই পালাই করিস?”
“পালানোর কি আছে?আমি আমার সপ্ন পূরণ করতে চাই।”
“তোর কোনো সপ্ন নেই হিয়াপাখি। মিথ্যা বলবি না একদম।”
হিয়া চুপ করে আছে।চোখ থেকে টুপটুপ করে পড়ছে পানি।চোখের পানিগুলো মুছে দিলো রুদ্র।হিয়ার হাত ধরে নিয়ে গেলো ছাদে থাকা দোলনার দিকে।দোলনায় হিয়াকে বসিয়ে দিয়ে হিয়ার কোলে মাথা গুঁজে দেয় রুদ্র।হিয়া বলে,”এখন অনেক রাত।আমাদের ঘরে যেয়ে ঘুমানো উচিত।”
গুলির ভয়তে ভালো ভালো কথা বলে ভুলিয়ে দিচ্ছে হিয়া।
“ঘুমাবো তো আমি।কিন্তু ঘরে না এখানে।”
“কিঃ!”

“হুম।বিরক্ত করবি না আমাকে।তাহলে তোকে মেরে তোর ভাইয়ের হাতে খুন হবো আমি।”
চুপ হয়ে যায় হিয়া।কথা বাড়ায় না আর।এই রুদ্র আসলেই পাগল।এখন তো আবার গুলি দেখালো।চুপ করে রুদ্রের কথা শুনতে হবে তাকে।নাহলে বাড়াবাড়ি করে দিবে রুদ্র।হিয়ার হাত নিজের মাথায় নিয়ে রুদ্র বলে,”আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।আমি ঘুমাবো একদম চালাকি করবি না।”
মুখ ভেংচি দিয়ে রুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে হিয়া।
শুনশান নীরব রাস্তা।রাস্তার দুইপাশে জঙ্গল।পুরো অন্ধকার রাস্তাটা। প্রায় গ্রাম্য এলাকা।গাড়িতে বেধে রাখা হয়েছে পাঁচজন পুরুষকে।একপাশে দাড়িয়ে একে অপরকে জড়িয়ে আছে রিমু ও বাকি মেয়েরা।রাজ এসেছে মাত্র।এখন বেধে রাখা লোকগুলোকে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হলো।ওদের মুখ ও হাত পা বাঁধা।ওদের একেকজনকে দেখে রাজ বলে,”কে তোদের লিডার?”

সবাই তাকিয়ে আছে।রাজ আবার বলে,”কার আদেশে এগুলো করিস নাম বল।”
বলেই পিয়াশকে ইশারা করে রাজ। পিয়াশ একজনের মুখ খুলে দেয়।সে বলে,”আমরা জানি না সে কে।সে আমাদের সামনে মুখ বেঁধে আসে।তার চেহারা আমরা দেখতে পারি না।তবে যে আমাদের ইনস্ট্রাকশন দেয় সে আসল না।সেও কারো ইনস্ট্রাকশন মেনে চলে।”
“তারমানে তোরা ছোটখাটো চামচা তাই তো।তাহলে তোদের বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।”
বলেই একেক করে শুট করতে থাকে রাজ।তিনজনকে শুট করার পর বাকি দুজনকে পিছন থেকে কেউ শুট করে দেয়।এবারও রাজ আর পিছনে তাকালো না।জানে কে আছে পিছনে।

মায়া আলতো হেসে বলে,”মায়া এতটাও কাচা খিলাড়ি না মন্ত্রী মশাই।মায়া তার উদ্দেশ্য সঠিকভাবে পালন করে।কেনো বারবার মায়াবতীকে রক্তবতী হওয়া থেকে দূরে রাখো তুমি?”
পিছনে তাকিয়ে মায়ার কাছে এসে রাজ বলে,”বউকে রক্ষা করা বরের আইনত অধিকার মায়াবতী।ভেবেছিলাম রাতে বাড়ি ফিরে জমিয়ে প্রেম করবো তাই তোমাকে রক্তবতী হতে দেইনি।রক্ত নিয়ে কি বউয়ের সাথে প্রেম করা যায়?কিন্তু আমার ভাগ্যটাই খারাপ।বউয়ের সাথে সুইট মোমেন্ট আসেই না।ভাবছি শালাগুলোকে একবারে শেষ করে তোমাকে নিয়ে দূরে হারিয়ে যাবো।একবারে বান্ডিল ভরা বাচ্চা নিয়ে হাজির হব।কি বলো আইডিয়া কেমন, পিয়ু বেবী?”

বেচারা পিয়াশ মনে মনে বলে,”ব্যাটা নিজে ফাসবি ভালো কথা।আমাকে কেনো ফাসাবি?”
পিয়াশের উত্তর না পেয়ে রাজ বলে,”কি হলো পিয়ু বেবী!কথা বলো না কেনো?”
“জি বস আপনি ঠিক।”
“দেখেছো মায়াবতী তুমি আর বাবা ছাড়া সবাই আমাকে বুঝে। যাই হোক চলো এবার প্রেমের রাজ্যে পারি দেই।”
বলেই মায়াকে নিয়ে চলে যেতে নেয় রাজ। পিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”মেয়েগুলোকে ওদের বাসায় সেফলি পাঠিয়ে দেও।”
বলেই গাড়িতে ওঠে মায়া ও রাজ।

অন্ধকার ঘরে পিটপিট পায়ে হাঁটছে আয়রা।উদ্দেশ্য তার মোহন সরদারের রুমে যাওয়া।মোহন সরদারের ঘরে ঢুকে দেখতে পায় সোনালী ও মোহন সরদার দুজনে ঘুমে বিভোর। আয়রা একটা ইনজেকশন নিয়ে পুশ করে মোহন সরদারের হাতে।তারপর বেড়িয়ে এসে কল করে বলে,”আমার কাজ কমপ্লিট স্যার।মোহন সরদার এত তাড়াতাড়ি রিকোভার করবে না।”
ওপাশ থেকে স্মিত হাসে আদ্র।বলে,”গুড এটাই তো চাই।তোমার অ্যাকাউন্ট চেক করো।”
বলেই কল কেটে দেয় আদ্র।

সকালে মোহন সরদারের পায়ের ব্যাথা যেনো বেড়েই চলেছে।সবাই জড়ো হয়েছে সেখানে। আয়রাকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে,”হয়তো রাতে ওনার ওয়াইফের ধাক্কা লেগে বা ভারে এমন হয়েছে।এই সময় সামান্য ভার ওনার উপর দেওয়া যাবে না।সেখানে তো রাতে ওনার সাথে ওনার বউ থাকে।”
সোনালী তেড়ে এসে বলে,”আমার বরের সাথে আমি থাকবো না তো কি তুমি থাকবে মেয়ে?”
রাজ লাজুক ভঙ্গিতে বলে,”এভাবে ছেলে মেয়েদের সামনে সতীন সতীন খেলতে নেই কাকিয়া।আমার বউ সহ বোনেরা এগুলো শিখতে থাকবে তো।”
মুখ টিপে হাসতে থাকে সিয়া আর হিয়া।মোহন সরদারের চিল্লানিতে ঘুম ভেংগে যায় রুদ্রের।ছাদ থেকে সোজা এই রুমেই চলে আসে তারা।রুদ্র বলে,”লিসেন মম ড্যাডকে এখন নার্স ভালো ট্রিটমেন্ট করবে।শুধু শুধু নিজেকে কেনো থার্ড পারসন বানিয়ে ঝামেলা করছো?”

“হোয়াট!আমি তোমার ড্যাড আর এই নার্সের ভিতরে থার্ড পারসন?”
“বলি কোনদিকে যাও কোনদিকে?আমি বলেছি ট্রিটমেন্টের নজরে।তুমি তো যাচ্ছো অন্য দিকে।”
এবার রাজ বলে ওঠে,”আচ্ছা কাকিয়া তোমার সমস্যাটা ঠিক কোথায়?তুমি কি চাও না তোমার স্বামী সুস্থ হোক?”
“অবশ্যই চাই।”
“তাহলে নার্সকেই বুঝতে দেও ব্যাপারটা।”
“এই মেয়ে নার্স কম জ্বালা বেশি।”
“সতীনের নজরে দেখা বন্ধ করো।দেখবে জ্বালা মনে হবে না।”
মাহমুদ সরদার চোখ রাঙিয়ে বলেন,”বাচ্চারা তোমাদের কাজে যাও। আর আয়রা যেহেতু নার্স ও এখানে যা বলবে ওটা মানতে হবে।না করবেনা সোনালী।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৩

বলেই চলে যান মাহমুদ সরদার।সবাই যে যার কাজে যায়।মায়া বেড় হতে নিলে তার চোখ গেলো মালিনীর দিকে।মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে মায়ার প্রতি বিরক্ত।কিন্তু কিছু না বলে মায়া বেড় হয়ে আসে।মালিনী মায়াকে পছন্দ না করলেও খারাপ কিছু এখনও বলেনি বা করেনি।
ল্যাপটপে বিভিন্ন কলেজ সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করছে হিয়া।উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া।হঠাৎ কেউ ল্যাপটপটা ঠুষ করে বন্ধ করে দেয়।হিয়ার ধারণা ছিলো এটা রুদ্র।কিছুটা রাগের সাথে পিছনে তাকালো হিয়া।না এখানে রুদ্র না এখানে আছে মায়া।মায়াকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো হিয়া।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৫