মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৭

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৭
ইশরাত জাহান

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকমাস।সবকিছু স্বাভাবিক হলেও মোহন সরদারের পা এখনও ঠিক হয়নি।মেডিকেলে যাওয়ার জন্য নিজেকে পারফেক্ট ভাবে সাজিয়ে তুলেছে সিয়া।সাইড ব্যাগ নিয়ে বেড় হতে নিবে ঠিক তখন সিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায় মায়া।মায়াকে দেখে হালকা হেসে সিয়া বলে,”গুড মর্নিং ভাবী।”
“ভেরি গুড মর্নিং অ্যান্ড বেস্ট অফ লাক।”
“থ্যাংক ইউ।”
“মেডিকেলে যাচ্ছো যাও।কিন্তু মাথায় একটা জিনিষ ভালোভাবে ঢুকিয়ে রেখো যে তোমার জীবনটাও হিয়ার মতো যেনো না হয়।তোমার উদ্দেশ্য সফল করতে তুমি চেষ্টা করছো ভালো কথা উদ্দেশ্যটার জন্য জীবনটাকে নষ্ট করে দিও না।বি স্ট্রং।”

মায়াকে জড়িয়ে ধরে সিয়া।বলে,”ওকে ভাবী।আমি এমন ভুল করব না।কিছু করার আগে তোমার থেকে সাজেস্ট নিবো।”
আলতো হাসে মায়া।সিয়া চলে যায় সেখান থেকে।সবার থেকে দোয়া নিয়ে বিদায় নিলো সে।হিয়া এখন কক্স বাজারে আছে।মায়া তাকে নিজস্ব গার্ডের সাথে ট্যুরে পাঠিয়েছে।আজকে মৌয়ের বেবী শাওয়ার হবে।মায়া এখন সেখানে যাবে।বাকিরা রাতে আসবে।
মেডিকেলের সামনে এসে সিয়ার গাড়ি থামলো।গাড়ি থেকে নেমে পুরো হসপিটালে চোখ বোলালো।এখানে তার কাঙ্খিত ব্যাক্তি আছে।তাকে দেখার ইচ্ছাটাও অনেক বেশি।সিয়া ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে।তারপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলেই কারো সাথে তার ধাক্কা লাগে।ধাক্কা লাগা ব্যক্তিটির দিকে তাকাতেই সিয়া খুশি হয়।আদ্র দাড়িয়ে আছে তার সামনে। আর ধাক্কাটা আদ্রর সাথেই লেগেছিলো।মিষ্টি হেসে সিয়া বলে,”সরি স্যার একচুয়ালি…”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“খেয়াল করোনি রাইট?”
সিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝিয়ে দিলো।আদ্র স্মিত হেসে বলে,”ব্যাপার না।প্রথম দিন এক্সাইটমেন্ট বেশি থাকে।”
বলেই চলে যায় আদ্র।সিয়া তাকিয়ে থাকে সেদিকে।
মৌকে সাজানো হচ্ছে। সাত মাসে মৌয়ের পেট অনেকটাই বেড়ে উঠেছে।মায়া সবকিছু দেখতে থাকে।হাসিও এসেছে সেখানে।মায়া মৌ ও হাসি মিলে গল্প করতে থাকে।হাসি এসে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”ওই বাড়িতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো তোমার?”
মৌয়ের হাত দেখছিলো মায়া।আগের থেকে মোটা হয়েছে মেয়েটা।এগুলোই নোটিশ করতে থাকে মায়া।হাসির কথাতে মায়া বলে,”আমি ওই বাড়িতে অসুবিধা তৈরি করতে গেছি হাসি।নিজেকে অসুবিধায় ফেলতে নয়। আর আমি সে কাজে সাকসেস।”

মৌ একটু পিছনে তাকালো। পিয়াশ বা কেউ আছে কি না দেখতে।না কেউ নেই।তাই এবার মৌ বলে,”কিন্তু আপু ওই আদ্র যে সে কি চায়? সিয়াকে কেনো টার্গেট করছে?”
“এখনও কথা বলিনি তার সাথে আমি।কিন্তু শীগ্রই বলব।”
“সে যদি তোমার ক্ষতি করে?”
মায়া এবার মৌয়ের হাত নাড়ানো বন্ধ করলো।মৌয়ের হাতের আঙ্গুল নিয়ে খেলতে মায়ার ভালো লাগে।ছোটবেলায় খুব খেলতো।আজ বোনের আঙ্গুলগুলো মোটা হয়েছে তাই আবারও খেলছিলো মায়া।মৌয়ের মুখে এমন কথা শুনে সে থেমে যায়।তারপর বলে,”এই মায়া ততক্ষণ চুপ থাকে যতক্ষণ তার ইচ্ছার ঘুড়ি চলতে থাকে।মায়ার ক্ষতি কখনোই সম্ভব না।না হতে দিবে মায়া নিজে আর না হতে দিবে মায়ার মন্ত্রী মশাই।”

“তোমার জন্য খুব চিন্তা হয় আপু।আমাদের সুখে আবার না কোনো অশান্তি আসে।মোহন সরদারকে পথে আনার বাইরে আমাদের যে উদ্দেশ্য ওটা পূরণ করা কি এতই সহজ?”
মৌয়ের মুখে হাত রেখে মায়া বলে,”আমাদেরকে কেউ নিজে থেকে সুখ দিতে আসেনি।বরং আমাদের দুঃখ দিতেই হাজারও লোকের ভিড় এসে জমেছে।আশেপাশে এমনও অনেক মানুষ আছে যারা আমাদের দিকে ভালোবাসার গোলাপ ছিটিয়ে রেখে গোলাপের কাটাগুলোকে বিছিয়ে দিয়েছে।কিন্তু কাটাগুলো তো আমরাই উপড়ে ফেলেছি।এবারও পারবো।”

মায়ার হাতটা নিজের পেটে এনে রাখলো মৌ।বলে,”নেও খালামণি হওয়ার অনুভূতি উপভোগ করো।আমাকে তো খালামণি বানাবে না।”
মৌয়ের কথা শেষ হতে না হতেই রাজ এসে বলে,”আমি তো চাই তোমাকে খালামণি বানাতে।কিন্তু তোমার বোন মানতে নারাজ।এত তাড়াতাড়ি নাকি বেবী নিবে না।আমার মনে হয় বাবার বয়সে বাবা না হয়ে দাদুর বয়সে বাবা হতে হবে।”
হেসে দেয় মৌ। পিয়াশ ও রাজ মাত্র এসেছে মিটিং শেষ করে।মায়া এক গ্লাস পানি এনে দিলো রাজের সামনে।রাজ হালকা ঘেমে আছে।সাদা পাঞ্জাবিতে হালকা হালকা ঘাম ভেসে আছে।মায়া এগুলো দেখে বলে,”আপনি অফিসে মিটিং করেননি?”

“না আপাতত বাইরে মিটিং করতে হবে।সিক্রেট মিটিং আমি জনসম্মুখে রাখতে চাই না।এমনিতেই আমার বাসার রেপুটেশন নষ্ট হয়েছে।তাই ফ্যামিলি সেফ রেখে চলতে হবে।”
বলেই মায়ার থেকে গ্লাস নিয়ে পানি পান করলো রাজ।মায়া তার শাড়ির আঁচল দিয়ে রাজের কপাল মুছে দিলো। পিয়াশ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।মৌ এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়েছে।রাজ এবার পিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”বউয়ের সাথে প্রেম করতে পারছো না বলে তুমি আমার রোমান্সে নজর দিবে পিয়ু বেবী!ভাগ্য ভালো জুনিয়র আসবে নাহলে এক সপ্তাহ বউ থেকে দূরে রাখার আদেশ পেতে তুমি।”
হো হো করে হেসে দেয় মায়া ও মৌ।বেচারা পিয়াশ মুখ ফুলে দাড়িয়ে আছে।মনে মনে বলে,”ব্যাটা আমার আর আমার বউয়ের ঘরে এসে তার বউয়ের সাথে রোমান্স করবে আমি দেখলেই দোষ!জন্মের সময় দুটো চোখ কি বন্ধ রাখার জন্য দেওয়া হয়?”

ক্লাসে এসে বসেছে সিয়া।সিয়া বসতেই তার পাশে আরও একটি মেয়ে বসে।পাশে তাকাতেই নিজের ফ্রেন্ডকে দেখে গল্প করতে থাকে।ক্লাস টাইম শুরু হয়েছে।আদ্র এসেছে সিয়াদের ক্লাস নিতে।পুরো ক্লাস আদ্রর দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছে সিয়া।এখন বাড়ির দিকে রওনা দিবে সে।সিয়া গাড়িতে উঠতে নিবে কিন্তু ড্রাইভার জানিয়ে দেয় তাদের গাড়ি নষ্ট হয়েছে।আদ্র ওদেরকে ক্রস করে যেতে থাকে। সিয়াকে দেখে আদ্র বলে,”তুমি চাইলে আমি তোমাকে লিফট দিতে পারি।”
“কিন্তু আপনার তো কাজ আছে।”
“এখন কোনো কাজ নেই আমার।আমিও বাসায় যাচ্ছি।”
“ওহ ওকে।”

বলেই গাড়িতে ওঠে দুজনে।গাড়িতে বসে আদ্র বলে,”কেমন লাগলো আজকের ক্লাস?”
“অনেক ভালো।”
“সবকিছু ঠিকভাবে বুঝতে পেরেছো?”
আদ্রের দিকে ঘুরে তাকালো সিয়া।বলে,”হ্যাঁ বুঝেছি।আপনি অনেক ভালো বুঝিয়ে বলতে পারেন।”
আদ্র হালকা হাসলো। সিয়াকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে,”আজ তাহলে আসি।”
গাড়ির গ্লাসের দিকে একটু উকি দিয়ে সিয়া বলে,”আপনি ভিতরে আসবেন না?”
“আজকে আর না।অন্যদিন আসবো।”
“আচ্ছা।”
চলে যায় আদ্র।প্রিয় ব্যাক্তির সাথে কিছু সময় কাটাতে পেরে ভালো লাগলো সিয়ার।বাসায় এসে একটু সেজে মিলির সাথে চলে গেলো অনুষ্ঠানে।অনুষ্ঠানে তারেক এসেছে। মিলির আসল উদ্দেশ্য তারেককে পাওয়া।তাই সে আগ্রহ নিয়ে গেলো সেখানে।

পুরো পরিবার এক হয়ে এসেছে মৌয়ের বেবী শাওয়ারে।বড়রা এসে বেবী শাওয়ারের থালাটা দিয়ে দোয়া করে দেয় মৌকে।রাজ আর মাহমুদ সরদার পাশাপাশি বসেছে।মাহমুদ সরদারকে খোঁচা দিয়ে রাজ বলে,”আফসোস হচ্ছে না আব্বু?”
ছেলের ফালতু কথা শুরু বুঝতে পারলো মাহমুদ সরদার। আস্তে করে ধমক দিয়ে বলে,”চুপ করো বেয়াদব ছেলে।আমার কোনো আফসোস নেই।”
“কেমন বাবা তুমি?ছেলে এখনও তোমাকে নাতি নাতনীর মুখ দেখাচ্ছে না আর তুমি সুখে দিন কাটাচ্ছো।আমার যতটা বাবা হওয়ার শখ তার থেকেও বেশি তোমার দাদু হওয়ার শখ থাকার কথা।অন্তত তোমার বয়সে এসে আমিও দাদু হতে পারবো।”

চোখ বন্ধ করে ছেলের লাগামহীন কথা হজম করছে মাহমুদ সরদার।ফোঁস করে শাস নিয়ে বলেন,”তোমার মতো ছেলে থাকলে দাদু হওয়ার সপ্ন মাটি চাপা পড়ে যায়।বাবার সামনে এসব বলতে লজ্জা করছে না?”
রাজ এবার ঠোঁট চওড়া করে হাসে।মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে বলে,”সত্যি বলতে তোমাকে দাদু না বানাতে পেরে আমি লজ্জিত বাবা।”

কথা বাড়ালেন না মাহমুদ সরদার।ছেলে তার বিদেশ থাকতে ভদ্র ছিলো।বউ আসার আগেও ভদ্র ছিলো।বউ আসতে না আসতেই দাদু বানানোর জন্য দিনে রাতে তাকে কথা শুনাচ্ছে।মনে মনে মাহমুদ সরদার বলেন,”আমাকে দাদু বানাবি তোরা।তাহলে তোরা স্বামী স্ত্রী বোঝ।আমাকে কেনো জ্বালাস?আমি কি দাদু হওয়ার প্রসেস জানি!”
তারেককে দেখে মিলি একটু দুষ্টু হাসি দিলো।তারেক দেখেও না দেখার ভান করলো।ঠিক সেই সময় তারেকের পাশে এসে দাড়ালো আয়রা।মিলি দেখছে ওদের।আয়রা এসে তারেকের সাথে কথা বলছে।কিছুক্ষণ নিরব ভূমিকা পালন করেও মিলি এখন আর থেমে থাকতে পারলো না।সোজা গিয়ে তারেকের হাত ধরে বলে,”তুমি ওর সাথে এত হেসে হেসে কথা বলছো কেনো?”

তারেক কিছু না বলে তাকালো মায়ার দিকে।মায়া কি বলে না বলে দেখার জন্য।মায়ার ইশারা পেয়ে তারেক চুপ করে আছে।মিলি চেঁচিয়ে বলে,”অনেকক্ষণ ধরে দেখছি তুমি এই মেয়েটার সাথে চিপকে আছো।না তুমি চিপকে নেই এই মেয়ে তোমার সাথে চিপকে আছে।কেনো থাকবে এমনভাবে?”
অনুষ্ঠানের সবার চোখ গেলো মিলি ও তারেকের দিকে।সোনালী এসে মিলিকে প্রশ্ন করে,”এই ছেলে যার সাথে খুশি মিশবে তোমার কি সমস্যা?”

মিলি আজ দ্বিধাদ্বন্দ্ব না করে বলে দেয়,”আমি তারেককে ভালোবাসি।ওকে বিয়ে করতে চাই।”
অবাক হয়ে গেলো বাড়ির সবাই।শুধু অবাক হয়নি মায়া রাজ ও মাহমুদ সরদার।এরা সবকিছু আগে থেকেই জানতো।মোহন সরদার বসা অবস্থায় ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,”মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার?ও একজন এসিস্ট্যান্ট।কোনো ভালো পজিশনে জব করে না ও।আমার মেয়ে হয়ে সাধারণ কর্মচারীকে ভালোবাসো কিভাবে?”

মিলি মাথা নিচু করে নেয়।তারপর মোহন সরদারকে বলে,”আমি যখন ওকে ভালোবাসি তখন আমার মধ্যে এটা কাজ করেনি আমি কার মেয়ে।আমি শুধু মাথায় রেখেছি আমি কার জন্য ভালোবাসা অনুভব করি।এই কার মেয়ে হয়ে কাকে ভালোবেসেছি এগুলো কি ব্যালেন্স করে চলা যায়?আমরা কাল্পনিক ভাবে ভেবে রাখি যে এমন লোককে আমরা আমাদের লাইফে চাই।কিন্তু ভালোবাসা এগুলো মানে না।ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই কর্মচারী নাকি শিল্পপতি এতকিছু মাথায় থাকে না।আমি ওর এই কর্মকে সম্মানের সাথেই মেনে নিয়েছি।”
সোনালী এবার মিলিকে দূরে সরিয়ে এনে বলে,”এই ছেলের চেহারা দেখেছো তুমি।কুচকুচে কালো দেখতে ছেলে।না আছে সৌন্দর্য আর না আছে কোনো ভালো পজিশন।কিভাবে থাকবে তুমি তার সাথে?”

মিলির কাছে মনে হলো তারেককে অপমান করা হয়েছে।আসলেই তো তাই।একটা ছেলেকে জনসম্মুখে এভাবে বললে তো অপমান করাই হয়।কিন্তু তার বাবা মা এটা মানবে না।তাদের কাছে তো চাকচিক্য জীবন বেশি প্রিয়।মিলি ঘুরে তাকালো তারেকের দিকে।দেখলো তারেকের মুখের অবস্থা।তারপর সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার আসল ভুলটা কোথায় জানো মা?আমার ভুল হয়েছে তোমাদের মতো মা বাবার সন্তান হয়ে জন্ম নেওয়া।বিশ্বাস করো যেদিন থেকে শুনেছি তোমাদের নোংরা অতীত সেদিন থেকে নিজের উপরেই ঘৃণা হয়।কিন্তু এই যে কালো ছেলেকে নিয়ে কথা বলছো।

যখন ওকে দেখি মনে হয় ওর সাথে দুটো কথা বললে হয়তো আমি সুখে থাকব।ওর নিরবতা আমার সমস্ত অত্যাচার ও নির্দ্বিধায় মেনে নেয়।আমার করা বাচ্চামো যখন ও মুখ বুজে মেনে নেয় আমাকে কিছু না বলে উল্টো মুচকি হাসে আমার মনে হয় এটাই আমার তৃপ্তি।তোমরা কাছে থেকেও আমাকে ভালো কিছু শেখাতে পারোনি।কিন্তু এই ছেলেটা দূরে থেকেও ওর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।সব থেকে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি জারা আপুকে দেখে।সে ভালোবাসার মূল্য দিতো না।তোমার হাতের লাটাই ছিলো।কিন্তু দিন শেষে সেও কাউকে ভালোবেসে অসহায় হয়ে পড়েছে।আমি এমন ভুল করতে পারবো না।আমি আমার ব্ল্যাক ডায়মন্ডকে আমার করে পেতে চাই।”

মেয়ের কতগুলো শুনে মন নরম হলো মোহন সরদারের।আজাকল তিনি তেমন কিছুই সহ্য করতে পারছেন না।তার পাপের ফল অনেক পেয়েছে আবার তার ছেলেটাও তার অনুকরণ করে চলে তার নাম ডুবিয়েছে।বৃদ্ধ বয়সে এসে এসব সহ্য করতে পারছে না সে।মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”তবে তাই হবে। তোর যদি ভালোলাগে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
“কিন্তু তারেকের তো আপত্তি থাকতে পারে।”

বলে ওঠে মায়া।তারেককে চোখের ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বলে মায়া।মোহন সরদারের কাছে এগিয়ে এসে বলে,”আপনার মেয়ের ভালোবাসা একপাক্ষিক।আমাদের উচিত দ্বিপাক্ষিক কথা শোনা।”
বলেই মায়া তারেকের দিকে ফিরে বলে,”তুমি কি মিলিকে ভালোবাসো?”
তারেক চোখ বন্ধ করে।তার সামনে একটা মেয়েই ঘুরছে ‘পরী’ যার মুখে সব সময় শুনতে পেতো ‘ওয় কালাচান’।চোখ মেলে তারেক বলে,”আমি ভালোবাসি না মিলিকে।আমি চুপ থাকতাম কারণ মিলি ম্যামের ননদ।সম্মানের কথা ভেবে চুপ থাকতাম।তার থেকেও বড় কথা মিলি আমার সামনে বেশি একটা আসতো না।খুব বেশি বিরক্ত না করার কারণে আমিও এটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।”

ভেঙ্গে পড়লো মিলি।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার।মেয়ে হয়ে নিজে থেকে অধিকার দেখাতে গেলে বুঝি এভাবেই ভুগতে হয়?ছেলেরাই খালি ভালোবাসা প্রকাশ করবে আর মেয়েদের করা যাবে না।এমনটাই মাথায় ঘুরছে মিলির।বাবা মা ভাইয়ের এমন কর্মে সেও সমাজে অনেক কিছু ফেস করে।আজকাল মিলির কাছে মনে হয় তার জন্মটাই ব্যার্থ।এমন মা বাবার সন্তান হয়ে খালি লোক সমাজে কলঙ্কিত হতে হচ্ছে তাকে।আজ তারেক তাকে রিফিউজ করে আরো দুর্বল করে দিলো।নিজে থেকে অধিকার বাড়িয়ে অনেক ভুল করেছে মিলি।আশেপাশে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো মিলি।বারবার মনে হতে থাকে এগুলো মোহন সরদার আর সোনালীর কর্মের ফল।তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে বেড় হলো সে।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৬

মৌ এসে মায়ার হাত খামচে ধরে।মায়া শান্তনা দিয়ে বলে,”চিন্তা করিস না আমি ঠিক করব মিলিকে।এটা মোহন সরদারকে অপদস্থ করার জন্য ছিলো।মিলি বুঝুক যে তার বাবা মা কেমন?এই পরিবারের ধংসের আগে সবাইকে শক্ত মনের হতে হবে।আজকে মিলির সাথে যেটা হয়েছে মিলি তাতে নিজেকে সামলাতে না পারলেও একটু একটু করে ঠিক হবে। আর পরবর্তী আঘাতে মিলি নিজেকে সামলে নিতে পারবে।নাকি তোর খারাপ লাগছে এই ভেবে যে তোর বো…”
মায়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মৌ বলে,”বাকিটুকু আর শুনতে চাই না আপু।আমি কোনো কিছুর জন্য কষ্ট পাচ্ছি না।”
কথাগুলো মৌ মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে বলে।মৌয়ের মনেও আছে অনেক আক্ষেপ।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৮