মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৮

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৮
ইশরাত জাহান

মৌয়ের সাথে কথা বলে মায়া বের হয়ে যায়।গাড়িতে উঠেই কল করে তারেককে।তারেক কল রিসিভ করতেই মায়া বলে,”ভালোবাসা মানুষ বুঝে হয় না।খারাপ মানুষের প্রতিও ভালোবাসার অনুভূতি চলে আসে।এটা স্বাভাবিক।যদি বলো আশেপাশের লোকগুলোর কথা তো আমি বলব ওদের নেচার এটা।তুমি কি পারবে না দ্বিতীয়বার কাউকে নিয়ে পথ চলার সপ্ন দেখতে?”

তারেক স্তব্ধ হয়ে আছে।মায়া আবার বলে,”আমি মিলিকে আজ তোমার ব্যাপারে বলব।যদি ও তোমাকে ভালোবাসে তোমার সবকিছু মেনে নেয় আমার মনে হয় না বীরের মতো বোকামি তোমার করা উচিত।বীরকে কিছু বলতে পারিনি কারণ বীরের জীবনে আমি না থাকলেও এই দুনিয়ায় আমি জীবিত।আমাকে বীর ভুলতে পারবে না।তার থেকেও বড় কথা জারা বীরকে নিজের করতে ব্যর্থ হয়েছিলো।বীরের রাগ জেদের কারণে আজ বীর ওর সেকেন্ড অপশন হারালো।আমি চাই না আর কেউ এমন করুক।পরী বেচে নেই।তোমার মনের মধ্যে পরীর বসবাস চললেও পরী ছাড়াও বাকি জীবন তোমাকে পার করতে হবে।মিলি তোমার জন্য পাল্টে গেছে।তাকে অন্তত জারার মতো হেরে যেতে দিও না।পরী বেচে থাকলে আমি বলতাম না এই কথাগুলো।কিন্তু তোমার জীবনেও কারো থাকাটা প্রয়োজন।মিলি তোমাকে আগলে রাখতে পারবে ভাই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তারেক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,”আমিও মিলির জন্য আলাদা কিছু অনুভব করি।কিন্তু পরীর চেহারা সামনে আসলে মিলিকে কাছে রাখতে ইচ্ছা করে না।”
আলতো হাসে মায়া।বলে,”তুমি দোটানায় আছো ভাই।পরী তোমার অতীত।মিলি তোমার বর্তমান।এটা মাথায় রাখলে আমার মনে হয় তুমি সুখে থাকবে।”
“আমার এই ছন্নছাড়া জীবনে আপনাদের মত বড়লোক বাড়ির মেয়ে সুখে থাকবে না ম্যাম।”
“তোমাকে যে ছন্নছাড়া জেনে ভালোবাসে তাকে পায়ে ঠেলে দিওনা।”

পিছন থেকে কথাটি বলে রাজ।রাজ জানে এখন মায়া মিলির পিছনে গেছে।তাই সে তারেকের কাছে এসেছে।রাজের কণ্ঠ পেয়ে মায়া বুঝে যায় তাকে আর কিছু বলতে হবে না।কল কেটে গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দেয়।রাজ তারেকের কাছে এসে বলে,”তোমাকে অপরিপূর্ণ অবস্থায় যে বেশি ভালোবাসবে যে তোমাকে চাইবে তার থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি তোমার জন্য আর কিছু নেই।রক্ত বা বংশ দেখে মানুষ বিচার করতে নেই।বিচার করতে হয় ব্যাক্তির আসল ব্যাক্তিত্ব দেখে।যেটা মিলি তোমাকে নিয়ে ভাবে।

মিলি যখন তোমাকে ভালোবেসেছে তখন তোমার চারপাশটা দেখেনি।তোমার পারিবারিক অবস্থা বা তোমার চেহারা এগুলো মিলির কাছে ফ্যাক্ট না।এগুলো যাদের কাছে ফ্যাক্ট তাদের সাথেও মিলি তোমার জন্য লড়াই করেছে।কিন্তু তুমি পিছিয়ে ছিলে তাই তো বোন আমার দুঃখ পেলো।আমি আমার বোনের জন্য তোমার কাছে ভালোবাসার দাবি করতে আসিনি।আমি শুধু বুঝিয়ে দিলাম তোমাকে বিনা স্বার্থে কেউ ভালোবাসে।সেই মেয়েটাই বিনা স্বার্থে ভালোবাসে যে মেয়েটা এক সময় ছিলো অহংকারী।সেই মেয়েটা তোমার জন্য বদলে গেছে যেই মেয়েটার এক সময় ছিলো টাকা পয়সার দাপট।একা জীবন খুব ভয়ংকর।একজন সঙ্গী থাকলে জীবনটা গুটি গুটি করে এগিয়ে যেতে থাকে।কিন্তু সঙ্গীহীন জীবনে পথচলা অনেক কঠিন।”

অন্ধকার রাস্তায় লেহেঙ্গার দুইপাশ উচু করে ধরে দৌড়াতে থাকে মিলি।চোখ দিয়ে পড়ছে পানি।পা যেনো থামছেই না তার।মস্তিষ্কে বিচরণ করছে তারেকের বলা না শব্দটি।কান্না করতে করতে দৌড়াতে থাকে মেয়েটি।হাঁফিয়ে উঠেছে সে।কিন্তু সকল ক্লান্তি অনুভব করতে পারছে না।মন চাচ্ছে তারেকের কাছে ছুটে যেতে।একটুখানি সুখ তারেক তাকে দিলে সে তারেকের সাথে বিনাবাক্যে থাকবে।দৌড়ানোর মাঝেই মিলির সমানে আসে মায়ার গাড়ি।গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় মিলি।সাথে সাথে মায়া দরজা খুলে বেড় হয় আর চলে যায় মিলির কাছে।মিলির কাছে এসে মিলির হাত ধরে দাড় করায় মায়া।মিলি এখনও কান্না করছে।

ওর ছোটখাটো অ্যাকসিডেন্টটাও ওর মাথায় নেই।বাবা মায়ের অহংকারী মেয়েটার আজ ব্যাথাটাও অনুভব হচ্ছে না।ভালোবাসা কি কি ভুলিয়ে দিতে পারে এটাই দেখতে থাকে মায়া।অতঃপর মিলির মুখটা উচু করে ধরে মায়া বলে,”এভাবে পালিয়ে কেউ ভালোবাসার দাবি করে?”

মায়াকে জড়িয়ে ধরে মিলি।বলে,”প্রকাশ্যে তো অনেকবার বলেছি।বিরক্ত করতে করতে আজ সবার সামনে বলেও দিয়েছি।তাহলে কেনো আমাকে অস্বীকার করলো?যে ভালোবাসে না তার সমানে আর যেতে চাই না।”
বলেই হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় মায়া।চারপাশটা দেখে নেয়।নির্জন রাস্তা।যখন তখন শেয়াল কুকুরের হামলা পড়তে পারে।মিলিকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজে ড্রাইভ করে।বাসায় এসে মিলিকে তার ঘরে নিয়ে যায়।এক গ্লাস পানি এনে দেয় মিলির সামনে।পানি পান করে মিলি।মায়া এবার মিলির পাশে বসে বলে,”তারেকের অতীত জানো?”

মিলি মাথা নাড়ায়। যার অর্থ না।মায়া বলে ওঠে,”তারেক তোমাকে রিফিউজ করেছে কারণ তারেক গ্রামের একজন ছোটখাটো কৃষক ছিলো।গরীব ঘরের অশিক্ষিত ছেলে। যার হাতে খুন হয়েছে ওই গ্রামের প্রভাবশালী এক ছেলে।যার জন্য তারেকের হয়েছে জেল।এই সবকিছুর জন্য তারেক চায়নি তোমাকে ওর জীবনে জড়াতে।”
মিলি অবাক বলো মায়ার কথায়।তারেক খুন করে জেল খেটেছে।এটা শুনেই মিলির মধ্যে ভয় কাজ করলো।মায়া বুঝলো ব্যাপারটা।সামনে থাকা ব্যালকনিতে তাকালে অন্ধকার আকাশটা দেখা যাচ্ছে।সেদিকে তাকিয়ে থেকে মায়া বলে,”শুনবে তারেকের পুরনো অতীত?”
মিলির সোজা সাপটা উত্তর,”হ্যাঁ।”
বলতে শুরু করে মায়া,

আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে।তখন তারেকের বয়স ছিলো একুশ বছর।মাকে নিয়ে থাকতো এক ছোট টিন দিয়ে ঘেরা একটি বাড়িতে।কৃষি কাজ করে দিন চালাতো নিজের।তারেকের বাড়ির পাশেই বড় পাকা বাড়িতে থাকতো পরী নামের এক সুন্দরী।পড়তো ক্লাস টেনে।ভোলাভালা তারেক তখন প্রেমে পড়ে সেই পরীর।পরী নিজেও তারেকের প্রেমে পড়ে।মাঝে মাঝে তারেককে দুপুরের খাবার দেওয়া তো মাঝে মাঝে স্কুলে যাওয়া আসার সময় চোখে চোখে প্রেম নিবেদন করা।এসবের ভিতরে দিব্যি যেতে থাকে দিনগুলো।লুকিয়ে লুকিয়ে একে অপরের সাথে কথা বলত অনেক।একজন দুইজন লোক জানাজানি হয়।

সেখান থেকেই আস্তে আস্তে জানাজানি হয়ে যায় তারেকের গ্রামের এলাকাতে।পরীর বাবার এক বন্ধু থাকে।তার ছেলে রাজিব পরীকে পছন্দ করে।প্রায় পরীকে উত্যক্ত করতে থাকে।কিন্তু পরী পাত্তা দিতো না। রাজিবরা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে পরী ওর বাবাকে তারেকের কথা বলে।পরীর বাবা প্রথমে না মানলেও আস্তে আস্তে মেনে নেয়।মেয়ের সুখের কথা ভেবে বিয়ে দিতে চায় ওদের।বাঁধ সাধে বিয়ের দিন।বিয়ের দিন সকাল বেলা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে তারেক।তারেক যখন কাঠের দরজা খুলে গালে নিমের ডাল নিয়ে বেড় হয় তখন দেখতে পায় রাজিবকে।অনেকদিন ধরেই পরীকে জ্বালাতে থাকে।

আর এতদিন পর আজকে রাজিবকে দেখলো পরীদের ছোট গোয়ালঘর থেকে লুংগি ঠিক করতে করতে বেড় হচ্ছে।রাজিব যাওয়ার সময় তারেকের সামনে দিয়ে যায়।তখন তারেকের মুখে বিশ্রী হাসি দেখা যায়।তারেক বুঝতে পারেনা ঠিক কেনো এই কাজ করলো রাজিব।তারেকের মায়ের ডাকে তাড়াতাড়ি কুলি করে ঘরে ফিরে আসে তারেক।বিয়ের জন্য পাঞ্জাবি পড়ে নেয় সে।তারেকের বন্ধুরা হাজির হয়।ঠিক তখনই সেখানে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসে।পরীদের বাড়ি থেকে কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে দৌড় দেয় সবাই।তারেক পরীদের বেড়া দেওয়া দরজার সামনে দাড়াতেই একজন এসে বলে,”পরী আত্মহত্যা করছে ভাই।পরী আর বাইচা নাই।”

লোকটির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তারেকের মায়ের কান্নার শব্দ পেয়ে তারেক দৌড় দিয়ে গেলো গোয়াল ঘরে।দেখতে পেলো কালকের সেই হলুদের শাড়ি পরা এখনও পরী।রাতের বেলাতেই আয়োজন করে হলুদের অনুষ্ঠান হয় তারেক আর পরীর।ঝুলন্ত পরীর কাছে দৌড়ে গিয়ে পরীর পা দুটো জাপটে ধরে তারেক।চিৎকার করে সবাইকে বলে,”ওরে একটু নামায় দেও। হুরপুরীর কষ্ট হয় তো।নামায় দেও ওরে।”
পরীর কাকা গেছিলো মই আনতে।সে মই নিয়ে দৌড়ে এসে তারেককে বলে,”এই নেও তাড়াতাড়ি পরীকে নামাইতে হবে।”

পরীকে নামানোর পর দেখা যায় পরীর মুখের লিপস্টিক ঠিক জায়গায় নাই।পরীর শাড়িটাও ঠিকভাবে নেই।চোখের কাজল ঝাপসা হয়ে আছে চোখের আশেপাশে।একজন মহিলা পরীর শাড়ির অবস্থা দেখে বলে,”মাইয়াডার অবস্থা তো ভালা না।দেখলেই তো সন্দেহ হইতাছে।এই সময় কাইলকের শাড়িসহ আছে কেমনে?এখন দেখো ব্লাউজডাও ছেড়া।”
পরীর মা ওখানে বসে পড়ে।পরীর লাশের পাশে বসে কান্না করতে করতে বলে,”ও পরী ও মা দেখ তোর কালাচান আইছে। তোরে বিয়া করবার লাইগ্গা আইছে তোর কালাচান।করবি না বিয়া?ও পরী ওঠ মা তোর কালাচানরে বিয়া কর।ও মা তুই না কইছিলি আমাগো কাছে থাকবি বইলা তারেকরে তুই বিয়া করবি।তোর সপ্ন তো পুরন হইবো মা।ওঠ মা এমনে থাকিস না গেরামের লোক খারাপ কইবো।”

মায়ের হাজারো আহাজারীতে উঠে না পরী।তারেক ওখানেই বোবা হয়ে বসে আছে।পরীর কপালে এখনও সেই হলুদের ফুল দিয়ে সাজানো।হাতে আর কোমরের ফুলগুলো ছিঁড়ে বিশ্রী অবস্থা।শুধু চিকন সাদা সুতো আর কিছু থেতলে যাওয়া ফুল আছে।বাকি সব চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।যেই দেখছে সেই বলতে থাকে পরীকে ধ র্ষ ণ করা হয়েছে।রাতে পরীর সাথে ঘুমিয়ে ছিলো পরীর কাকাতো বোন।সে রাজিবকে পছন্দ করত।রাজিব তাকে যা করতে বলতো মেয়েটি তাই করতো।তারেক এবার মেয়েটির কাছে এসে বলে,”পরী রাতের বেলা তোর লগে ঘুমায় ছিলো তাইলে সকালে এইখানে আইলো কেমনে?”

মেয়েটি ঘাবড়ে যায়।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তারেক এবার গর্জে ওঠে বলে,”কি হইলো ক?”
ভয়তে মেয়েটি বলে দেয়,”আসলে কাইল রাতে পরী শাড়ি পাল্টায় নাই।কইছিলো সকালবেলা উইঠা গোছল কইরা একবারে বিয়ের বেনারসি পরবে।আইজ সকালে আমি আগে উঠি।বাইরে আসার পর রাজিবরে দেইখা খুশি হই।ও হঠাৎ এতদিন পর আমারে কইলো ওয় আমারে বিয়া করবে।কিন্তু আমি যদি পরীর লগে ওরে কথা কইতে দেই।মানে ওয় নাকি পরীর লগে কথা কইয়া তোমাগো মতো আমাগো বিয়া নিয়ে বাসায় মানাইতে পারবে তাই।আমিও তাই ওর কথামত পরীকে গোয়াল ঘরে পাঠাইয়া দি।তার পরে আমারে চাচিজান দেইখা ফালায়।বলে ঘাট থাইকা পানি আনতে।আমিও চইলা যাই সেখানে।বাকি কাহিনী আমি জানি না।আমি ভাবছিলাম পরী হয়তো এখন ঘরে।কিন্তু ওরে যখন খুইজা পাওয়া যায় না আমি দৌড়ায় এখানে আসি আর এই অবস্থায় দেখি।তারপর তো তোমরা আইছ।”

মেয়েটির কথা শেষ হতে না হতেই ঠাস করে একটি চড় এসে পড়ে তার গালে।চড়টি পরীর বাবা দিয়েছে।বেশ খানিক কথা শুনিয়ে দিলো মেয়েটিকে।তারেক তখন এক নাগাড়ে তাকিয়ে আছে পরীর লাশের দিকে।গ্রামের লোকজনের কাছে স্পষ্ট কাজটি রাজিব করেছে।সবাই ছি ছি করতে থাকে।বিয়ে বাড়ীতে এসেছিলো কসাই।পরীর বাবার নিজস্ব গরু জবাই দেওয়ার জন্য।কসাইদের কাছে থাকা দা পাশে রেখে তারাও এসেছে পরীকে দেখতে।তারেকের নজরে এলো দাটি।সাথে সাথে দা হাতে নিয়ে দৌড়ে চলে যায় তারেক।

তারেকের মা পিছন থেকে অনেক ডাকে কিন্তু কোনো সাড়া নেই তারেকের।সোজা চলে যায় রাজিবের ঘরে।তারেককে দেখে হেসে দেয় রাজিব।বলে ওঠে,”কি রে কালাচান করবি না তোর হুরপুরীরে বিয়া?তোর হুরপুরীরে আমি খাইয়া দিছি।এখন বিয়া করতে কষ্ট হইতাছে তাই না?”

কালো রূপের লাল চোখা তারেককে দেখতে ভয়ংকর দেখা যায়।সিংহের গর্জনের আভাস আসে তারেকের মুখে। রাজিবের দিকে এগিয়ে বলে,”আমার হুরপুরীরে অশুদ্ধ করবার চাইলেও হুরপরী অশুদ্ধ হয়নাই।কেন জানিস?কারণ আমার হুরপুরী খাটি মানুষ। তোর মত জা নো য়া র আমার হুরপুরীরে ছুইলেই ও অপবিত্র হয়না।কিন্তু তোর মতো মাইনষের জন্যে এখন ওরে সকলে অপবিত্র কইবো।এইডা আমি সহ্য করতে পারুম না।তাই আর কারো জীবন নষ্ট করার আগে তোরেই দুনিয়া থেকে সরায় দিমু।”

কথাগুলো বলেই দা দিয়ে গলার উপর দেয় এক টান।রাজিবের চোখদুটি বড় বড় হয়ে গাল হা হয়ে যায়।তারেক থেমে থাকেনি।শরীরের রক্ত টকবক করছে তার। ভালোবাসার মানুষের এমন অবস্থা দেখে মাথার ঠিক নেই তার।রাজিবকে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে কোপাতে।আশেপাশে লোকজন হাজির হয় সেখানে।তারেকের মা এসে তারেকের হাত ধরে আটকায়।তারেককে বেধে রাখা হয় একটি গাছের সাথে।তারেকের মা সবার সামনে হাত জোড় করে বলে,”ওরে ছাইড়া দেন।আমার পোলাডার হইয়া আমারে শাস্তি দেন।”

কেউ শুনলো না তারেকের মায়ের কথা।পুলিশ এসে গ্রেফতার করলো তারেককে।দুইহাতে হ্যান্ডকাপ নিয়ে তারেক তাকালো দূরে থাকা পরীর লাশের দিকে।আত্যহত্যা করার জন্য জানাজা পড়াতে চায়নি কেউ।বাধ্য হয়ে পরীর বাবা তার নিজের আলাদা জমিতে পরীর কবর দিতে নিয়ে যায়।পরীর লাশ নিয়ে তারেকের সামনে দিয়েই গেলো কয়েকজন মুরুব্বী।তারেক অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে।একজন পুলিশ এসে তারেকের ঘাড় ধরে উঠিয়ে নেয় গাড়িতে।একদিক দিয়ে পুলিশের গাড়িতে করে যাচ্ছে তারেক তো অন্য দিকে খাটিয়াতে করে যাচ্ছে পরীর লাশ।অসহায় হয়ে মুখে কাপড় গুঁজে দেখছে তারেকের মা।

এরপর গ্রামের সবার বয়ানে তারেককে নির্দোষ প্রমাণ করা হলেও খুনের জন্য হাজতে পাঠানো হয়।তারেকের মা অনেক চেষ্টা করে তারেককে ছাড়ানোর।কিন্তু উপায় পায় না।
এভাবে চলতে থাকে দুই বছর।একদিন আমি আমার কোম্পানির তরফ থেকে ওদের গ্রামে গরিবদের জন্য কিছু দান করতে যাই।তখন তারেকের মাকে দেখে আমি তার সাথে কথা বলি।জানতে পারি তারেকের কথা। আর তখন তারেকের মায়ের অবস্থা খারাপ।ওনার ক্যান্সার ধরা পড়ে। হাতে বেশি সময় নেই।আমি আমার পার্সোনাল উকিল নিয়ে কথা বলি উপর মহলে।খোঁজ নিয়ে জানা যায় জেলের মধ্যে তারেকের কোনো খারাপ কর্মকাণ্ড দেখা যায় না।শান্তশিষ্ট তারেক সবার আদেশ নিষেধ মেনে চলে।সততার জোরে সবার মন জয় করে নেয় তারেক।যেহেতু খুনের জন্য স্ট্রং প্রমাণ ছিলো না আর তারেকের সবাই সুনাম করছে তাই আমার কোনো সমস্যা হয় না ওকে জেল থেকে ছাড়াতে।তারেককে ছাড়িয়ে আমি আমার এসিস্ট্যান্ট বানাই।আমার কাছে তারেককে আমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে পারফেক্ট লেগেছে।ঠিক যেমনটা আমি খুঁজছিলাম।ধীরে ধীরে তারেকের ব্যাবহার চলাফেরা পরিবর্তন করা হয়।সেই থেকে তারেক আমার হয়ে কাজ করে।

কথাগুলো বলেই ফোঁস করে শ্বাস নেয় মায়া।ঘুরে তাকালো মিলির দিকে।বলে,”এবার বলো মেনে নিবে তুমি তারেককে?তারেক কোনো শিক্ষিত ছেলে না।গ্রামের সরল সহজ ছেলে যে এখন খুনি।ওকে আমার এসিস্ট্যান্ট হয়েই থাকতে হবে।আমার এই অশিক্ষিত কর্মচারীকে নিয়ে তুমি সুখে থাকতে পারবে তো?তোমার বাবা মায়ের মতো বিলাসিতা খুঁজবে না তো?”
মায়ার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো মিলি।তারপর মায়ার দিকে ফিরে বলে,”তারেক কোথায় এখন?”
আলতো হাসলো মায়া।মিলির কথাতে প্রকাশ পেলো সে তারেককে বিয়ে করতে রাজি।মিলি মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”যে ছেলে কোনো নারীর প্রতি হওয়া অন্যায়ের জন্য কারো জীবন নেয় সে কোনো আসামি না সে শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার অধিকারী।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৭

মাথা দোলালো মায়া।এর অর্থ মিলির কথায় মায়ার সম্মতি আছে।মায়া এবার বলে,”তারেক যদি এবারও তোমাকে বিয়ে করতে না চায় তাহলে?”
কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো মিলি।কিছু একটা ভেবে বলে,”তোমার গুলিটা আমাকে দিতে পারবে।শুধু আজকের রাতের জন্য।কালকে কাজী অফিস থেকে এসে গুলি ফেরত দিয়ে দিবো।”
মায়া চোখ ছোট ছোট করে দেখছে মিলিকে।মিলি ঠোঁট চওড়া করে হেসে বলে,”সত্যি বলছি বিয়ের পর দিয়ে দিবো গুলি।”
বলেই হেসে দেয় দুজনে।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৪৯