মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৪
ইশরাত জাহান
রুদ্র চোখ টিপ দিয়ে বলে,”আমার হিয়াপাখিকে উড়াল দিয়ে নিয়ে যাবি আর আমি চুপ থাকব।এতই সোজা?”
রুদ্রের কথা শেষ হতেই লোকগুলো বুঝে যায় রুদ্র হিয়ার জন্য এসেছে।হাতে থাকা ছুরি নিয়ে লোকগুলো এগোতে যাবে ওমনি রুদ্র তাদের ধরে মারতে থাকে।রুদ্রর ফাইট দেখে বোঝা যায় সে এসব খুব ভালোভাবে পারে।এক্সপেরিয়েন্স না থাকলে কেউ এত ভালো ফাইট করতে পারে না।হিয়া ওর ওড়না ধরে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।লোকগুলোকে আধমরা বানিয়ে রুদ্র আসে হিয়ার কাছে।হিয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,”চল আমার সাথে।”
হিয়া দূরে সরে যায়।রুদ্রের প্রতি এখনও তার রাগ আছে।হিয়া বলে ওঠে,”আমি যাবো না আপনার সাথে।আপনি একজন প্রতারক নষ্ট পুরুষ।আপনার ইন্টেনশন খুব খারাপ।”
“এখন তর্ক করার সময় না।চল আমার সাথে।”
বলেই রুদ্র হিয়ার হাত ধরতে যায়।ঝাড়া দিয়ে দূরে সরে দাড়ায় হিয়া।রুদ্র বুঝলো হিয়া কথা শুনবে না।হিয়াকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে হাঁটতে থাকে রুদ্র।হিয়া ছোটাছুটি করে।বলে,”আমাকে ছাড়ুন নষ্ট পুরুষ।আমি আপনার সাথে যাবো না।আপনি বাজে লোক।”
রুদ্রর কানে কথাগুলো পৌঁছালেও আগ্রহ দিলো না হিয়ার কথাতে।সোজা হিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে আসে নিজের ফ্ল্যাটে।ফ্ল্যাটে এসে হিয়া দেখতে পেলো জেসিকে।রুদ্র জেসিকে দেখে বলে,”তুমি বাইরে যাও।ওর সাথে আমার কথা আছে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হিয়া হা হয়ে আছে।জেসি আর রুদ্র একসাথে থাকে।এখন আবার এই রাতের বেলা জেসিকে বাইরে যেতে বলে তার সাথে একা ঘরে কথা বলতে চায়।জেসির পেটের দিকে তাকিয়ে হিয়া আরো অবাক।একদম স্লিম হয়ে আছে।জেসি মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।রুদ্রর মুখে ঘাম লেগে আছে।হাত মুঠ করে শার্টের হাতা দিয়ে মুখ মুছে নেয়।তারপর হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করবি না।যতদিন আমি না তোকে মুক্ত করি এই ঘরে থাকবি। বেড় হবি তো বিপদে পড়বি।”
“আপনার কথায় চলব আমি?আপনি আবার কোন উদ্দেশ্যে আছেন?”
“যেই উদ্দেশে থাকি না কেনো তোকে আমার করেই ছাড়বো।”
“সপ্ন দেখতে থাকুন।বাস্তব হবে না।আমি মন্ত্রীর বোন হই।আমাকে ফাঁদে ফেলা এত সহজ না।”
“আসছে আমার মন্ত্রীর বোন হতে।আমার পজিশন তোর ভাইয়ের থেকে কম কিছু না।”
“কোন জায়গার মিনিস্টার আপনি?এতদিন বাবার টাকায় খেয়েদেয়ে এখন হয়তো শ্বশুরের টাকায় চলে।আবার বেশি দাপট দেখাতে থাকে।”
“এই অপমান করবি না।একদম চুপ।”
“করব না চুপ।কি করবেন কি আপনি?”
রুদ্র এবার এগিয়ে আসে হিয়ার কাছে।হিয়ার মুখের সামনে নিজের মুখ নিয়ে স্লো ভয়েসে বলে,”বেশি কথা বলিস আজকাল।চুপ না করলে কিন্তু টুকুশ করে চুমু দিয়ে চুপ করিয়ে দিব।”
হিয়া নাকে কাপড় দিলো।নাক মুখ শিটকে বলে,”আপনার মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ,রুদ্র ভাই।”
রুদ্র দুষ্টু হেসে বলে,”মুখ ধুয়ে আসলে চুমু খেতে দিবি?”
“ছিঃ!কি বাজে লোক আপনি।বউকে বাইরে রেখে অন্য মেয়ের সাথে এসব বলতে লজ্জা করছে না?”
রুদ্র গলা ঘুরিয়ে দেখলো বাইরের দিকে।তারপর হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আসলেই তো।আমার এত সুন্দর বউকে আমি বাইরে রেখে তোর সাথে কি করছি।ধুর আমাকে এখন যেতে হবে।থাক তুই।কোনো দুষ্টুমি করবি না।ফলাফল খারাপ হবে।”
বলেই বেড় হয় রুদ্র।দরজা পিছন থেকে লাগিয়ে দিয়ে যায়।বেড় হতে হতে রুদ্র কল করে সোনালীকে।সোনালী রিসিভ করতেই রুদ্র বলে,”হিয়াপাখি এখন আমার খাঁচায় বন্দী।তুমি এখন তোমার কাজ সফল করতে পারো।”
সোনালী শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”এই তো সাব্বাস।মায়া খুঁজতে থাকবে হিয়াকে।ও মনে করবে আমি কিডন্যাপ করেছি।কিন্তু হিয়া তো থাকবে তোর কাছে।এবার এই হিয়াকে নিয়ে ব্লাকমেইল করেই আমি মায়া আর রাজের থেকে সবকিছু আদায় করব।”
শাহানা পারভীনের কাছে এসে দাড়ালো মায়া ও রাজ।মায়া এসে শাহানা পারভীনের হাত ধরে বলে,”তোমার শাহমীর বাবাকে দেখো মা।আমার মন্ত্রী মশাই এসেছে।আমরা একসাথে আজ তোমার সামনে এসেছি।কিছু বলবে না?”
বলেই মায়া দেখতে থাকে শাহানা পারভীনকে।রাজ এসে শাহানা পারভীনের হাত ধরে বলে,”আড়ালে আবডালে তোমাকে অনেক দেখেছি ছোট মা।মায়াবতীর ইচ্ছাতে আমি আসিনি সামনে।এছাড়া আমি আর মায়াবতী একসাথে থাকলে ওরা বুঝে যেতো যে আমি আর মায়াবতী একই উদ্দেশ্যে শামিল আছি।এবার খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।একসাথে মিলে আমরা সুখে জীবন কাটাব।”
“আণ্টি দুই একের ভিতরে রিকোভার করবে।ইনফ্যাক্ট আন্টির পা কাজ করতে শুরু করেছে।আজ সকালে থেরাপি দেওয়ার সময় আণ্টি পায়ে ব্যাথা অনুভব করে একটু নড়ে উঠেছেন।কোমায় থাকা ব্যাক্তি কখনও ব্যাথা অনুভব করে না।যেহেতু আণ্টি অনুভব করেছে এর মানে উনি সেভেন্টি পার্সেন্ট ওকে।আশা করা যায় আমার করা এবারের অপারেশন সাকসেস হয়েছে।”
কথাগুলো পিছন থেকে বলে ওঠে আদ্র।মায়া ও রাজ একসাথে পিছনে ঘুরে দেখতে পায় আদ্র ও সিয়াকে।সিয়া এসে জড়িয়ে ধরে রাজকে।বলে,”তোমরা আমাকে আগে কেনো বলোনি যে তোমরা এক হয়ে আছো?”
সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে রাজ বলে,”তার কারণ আমাদের পিছনে স্পাই লাগানো আছে।আমরা খুব সাবধানে একেক করে শত্রুদের দমন করছি বোন।বিশেষ করে কাকিয়া।তার আশেপাশে তো আমাদের বুঝেশুনে চলতে হবে। আর আমি জানি আমার বোন তার ভালোবাসার মানুষের কাছে সুরক্ষিত আছে।”
সিয়া অবাক হয়ে যায়।সাথে একটু লজ্জা পায়।মাথা নিচু করতেই মায়া এসে জড়িয়ে ধরে সিয়াকে।রাজ বলে ওঠে,”বুঝলে ভাই লজ্জাই নারীর ভূষণ।আমাদের এই লজ্জা পাওয়া নারী দেখেই জীবন পার করতে হবে।বউ ভালোবাসলেও লজ্জাতে দশ হাত দূরে থাকবে।বর হয়ে আমাদেরকেই বউয়ের আচল ধরে বউ বউ করা লাগবে।”
আদ্র হেসে দেয়।মায়া চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে,”মুখে লাগাম দিন মন্ত্রী মশাই।”
“আচ্ছা আজ থেকে সিয়া এখানে থাকুক।আন্টির কাছে সিয়া থাকলে ভালো হবে। আয়রাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।ও এখন এখানে থাকা মানে শত্রুপক্ষ এলার্ট হয়ে যাবে।”(আদ্র বলে)
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় রাজ।মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তাহলে আমাদের এখন যাওয়া যাক।সকালে তো নতুন নাটক শুরু করতে হবে।”
বলেই মায়াকে নিয়ে চলে যায় রাজ।সিয়া আর আদ্র শাহানা পারভীনের কাছে থাকে।বাইরে বেড় হওয়ার সময় হুডি পরে নেয় মায়া।মুখ ঢেকে রাখা তার।মায়া এসে ড্রাইভিং সিটে বসতেই রাজ তার পাশে বসে।গ্লাস দিয়ে পিছনে থাকা লোকদের দেখে রাজ বলে,”শালার শত্রুরা পিছনে থেকে লাভ কি?সেই তো বউ নিয়ে ইনজয় করছি।বলদগুলো বুঝতেও পারছে না যে মন্ত্রী তার বউ নিয়ে ভালোবাসার সাগরে পারি জমাচ্ছে।আচ্ছা বউ চলো একটু ভালোবাসায় ডুব দেই এই গাড়িতে।পিছনে স্পাই দেওয়া লোকগুলো ভাববে আমি ড্রাইভারের সাথে ব্যাস্ত আছি।”
“যেখানে সেখানে রোমান্স চলে আসে আপনার?”
কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলে মায়া।রাজ এবার টুকুশ করে চুমু দেয় মায়ার গালে।তারপর বলে,”যেখানে সেখানে বউ নিয়ে রোমান্টিক হওয়ার মাঝে যে আলাদা ভালোবাসা মায়াবতী।ও তুমি বুঝবে না।”
মায়া ড্রাইভ করতে থাকে।রাজ একবার পিছনে দেখছে তো আবার মায়ার গালে কিছুক্ষণ পরপর চুমু দিচ্ছে।মায়া এবার রাগী চোখে তাকায় রাজের দিকে।রাজ বলে ওঠে,”এভাবে চোখ বড় করে তাকাবে না তো।বউ ছাড়া দুইদিন পার করেছি।বউকে এবার আমার কাছে চাই।নাহলে কিন্তু আমি সন্ন্যাসী হয়ে যাবো।”
“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”
“রক্তবতী আমার মায়াবতী।”
মায়া হেসে দেয়।গাড়ি এসে থামে রাজের বাংলোর সামনে।লোকগুলো সেখানে এসে গাড়ি থামিয়ে কল করে সবকিছু জানিয়ে দেয় সোনালীকে।মূলত তারা মায়াকে রাজের ড্রাইভার ভেবেছে।বাংলোর ভিতরে আসতেই পিয়াশ ও মৌ এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে।মৌ এসে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।মৌকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে মায়া বলে,”এভাবে চিন্তা করবি না আমাকে নিয়ে।বাবুর আর তোর জন্য রিস্ক আছে তো বোন।”
“তুমি যে কখন কি করো এতে চিন্তা হবে না?”(মৌ বলে)
“আরে চিন্তা নেই।আমি তো আছি আমার মায়াবতীর কাছে।”(রাজ বলে)
“এই জন্যই তো একটু শান্তিতে আছি।”
মায়া এবার মৌকে এক গ্লাস পানি দিয়ে মৌয়ের পাশে বসে।মৌ পানি নিলে মায়া বলে,”মা খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।ডক্টর আদ্র বলেছে মা এখন সেভেন্টি পার্সেন্ট ওকে।”
মৌ খুশি হয়ে বলে,”তারমানে আমার পুচকু আর মা একসাথে আনন্দ করবে।আমার অনেক ভালো লাগছে আপু।”
“হ্যাঁ মা সুস্থ হলেই আমি পুরো পরিবার মিলে ওই লকার থেকে ফর্মুলা নিয়ে পাবলিক করে দিবো।কৃষিকাজে এখন উন্নতমানের ফসল উৎপন্ন হবে।আর আমাদের বংশীয় ব্যাবসা নতুন রূপে দাদুর সপ্নের মতো করে গড়ে উঠবে।”(মায়া বলে)
“আচ্ছা তাহলে চলো এবার ঘুমাবে।সারারাত তো ম্যামকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেছো।”(পিয়াশ বলে)
মায়া এবার মৌকে তাড়াহুড়া দিয়ে বলে,”তাড়াতাড়ি যা বোন।ঘুম না হলে তো পুচকুর সমস্যা হবে।”
মায়ার কথায় আলতো হেসে ঘুমোতে যায় মৌ।ওরা ঘরের দরজা লাগাতেই রাজ এসে মায়াকে কোলে করে নেয়।মায়া অবাক হয়ে বলে,”কি করছো তুমি?”
“বউকে মন ভরে ভালোবাসবো আজ।বাইরে শত্রু ভিতরে স্বামী স্ত্রী।আহ ডেঞ্জার মোমেন্টে মন্ত্রীর ভালোবাসা।”
“তোমার মাথায় শুধু প্রেম ভালোবাসা!”
“বউ ছাড়া যে পুরুষ দূরে থাকে সেই বোঝে ভিটামিন-বউ শরীর ও মনের জন্য কতটা উপকার।”
বলেই মায়াকে নিয়ে ঘরে আসে রাজ।মায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাজ বলে,”তো বউ রেডি তো বাথরুম বিলাসের জন্য?”
মায়ার মুখে কোনো কথা নেই।রাজ বলার সুযোগ দিলো না।সে তার মতো ব্যাস্ত তার মায়াবতীকে ভালোবাসতে।
সকাল বেলা,
মায়া ও রাজ ঘুমে বিভোর।ঠিক তখনই মায়ার ফোনে কল আসে।তারেক করেছে ফোন।ফোনের রিংটোন বাজতেই মায়া ও রাজ একসাথে চোখ মেলে।রাজ কিছুটা বিরক্তির সাথে বলে,”ব্যাটা বউ নিয়ে কি সুখে থাকতে পারে না।আমার বউকে রাত বিরাতে কল দেয়।”
রাজের মাথায় আলতো মেরে মায়া উঠে বসে।তারেকের কল রিসিভ করতেই তারেক বলে,”আশ্রমে আজ নজর পড়েছে আমার শাশুড়ির গ্যাংদের।ইনফরমেশন মোতাবেক আজ বিকালে ওরা আশ্রমে বাবুর্চি সেজে আসবে।”
আজকে আশ্রমে অনুষ্ঠান হবে।আশ্রমের পঁয়ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান।মায়ার নানু আর মা মিলে আশ্রম করেছিলো।মায়া প্রতি বছর এই আশ্রমে অনুষ্ঠান করে।তারেকের কথা শুনে মায়া বলে,”আমাদের আসল বাবুর্চিদের একটি করে চিহ্ন জানিয়ে দেও।যেটা আমি প্রশ্ন করলে জানতে পারব। আর হ্যাঁ ডেকরেটর হিসেবে আমাদের গার্ড রেখে দিও।বাকিটা আমি আর মন্ত্রী মশাই দেখে নিবো।”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৩
“ওকে ম্যাম,বাই।”
বলেই কল কাটে তারেক।রাজ মায়ার এক বাহু ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে বলে,”আরেকবার ঘুম দিয়ে বাথরুম বিলাস করে তারপর যাই।এখনও অনেক দেরি আছে অনুষ্ঠানের।”