মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৫

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৫
ইশরাত জাহান

রাজ বাদে সবাই মিলে উপস্থিত হয় আশ্রমে।মায়া আসতেই বাচ্চাগুলো এসে জড়িয়ে ধরে।মায়া ও রাজ পরিবার নিয়ে প্রায়ই এখানে আসে।তাই তো বাচ্চাগুলোর সাথে এখন তারা অনেক মিশুক হয়েছে।সবাইকে চকলেট দিয়ে মায়া যায় গাড়ির দিকে।গাড়ি থেকে আস্তে আস্তে মৌকে নামিয়ে নিয়ে আসে।পিয়াশ নিজেই মৌকে সাহায্য করতে চায়।কিন্তু মায়া যতক্ষণ থাকে পিয়াশ যেনো মায়ার আশেপাশেই আসতে পারে না।বোনকে যত রকম সাহায্য লাগে মায়া নিজে থেকে করতে ভালোবাসে।নিজের ডান হাত মায়ার হাতের সাথে দিয়ে ধীরে ধীরে ফুলে ওঠা পেট নিয়ে হাঁটছে মৌ।বাচ্চারা অবাক নয়নে চেয়ে আছে সেদিকে।চট্টগ্রাম থেকে সেই ছোট্ট হাসিকে আনা হয়েছে।মায়া এনেছে তাকে।হাসির মধ্যে নিজের ছোটবেলা খুঁজে পায় তাই।হাসি এসে মৌয়ের দিকে হাত ইশারা করে বলে,”এই আন্টির পেটে কি হয়েছে?”

মায়া মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়,”এখানে একটি ছোট বাবু আছে।তাই এভাবে বড় হয়ে আছে।”
হাসি যেনো না বুঝেও অনেক কিছু বুঝে গেলো।খুশি হলো খুব।মৌয়ের একপাশে এসে মৌকে ধরে বলে,”আমিও তোমাকে ধরে নিয়ে যাবো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অগত্যা মায়া ও ছোট্ট হাসি মিলে ভিতরে নিয়ে যায় মৌকে।মৌকে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে চারপাশে দেখতে থাকে মায়া।দূরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রান্না চলছে।সেখানে লোকদের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে মায়া।বাবুর্চিরা সবাই মিলে তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।তাদের কোনো রিয়েকশন না দেখে মায়া বুঝে যায় এরা সোনালীর লোক।আশ্রম কর্মীর হাত পা কাপছে।মায়া ওনার দিকে তাকাতেই উনি ইশারা করে উপরের দিকে।সেকেন্ড ফ্লোরে একটি কিচেন আছে।ওখানে মায়ার বাবুর্চিরা রান্না করতে ব্যাস্ত।মায়া ভিলেনি হেসে দেখতে থাকে বাকি লোকদের।এর মধ্যেই আশ্রমে উপস্থিত হয় মিলি ও তারেক।মিলিকে এখানে মায়া আনতে বলেছে।মিলি এসে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।তারপর মৌয়ের পাশে বসে।আড্ডা দিতে থাকে মৌ ও মিলি।তারেক এসে মায়াকে বলে,”রাজ স্যার আসবে তাকে নিয়ে।শুধু একটু সময় নিবে বলেছে।”

মায়া বলে ওঠে,”এখানের আবহাওয়া ভালো নেই তারেক।যখন তখন হামলা পড়বে।বাচ্চাগুলোকে আগলে রাখার দায়িত্ত্ব তোমার আর পিয়াশের।অন্য দিকটা আমি দেখছি।শুধু একবার তাদের আসার অপেক্ষা।”
“ওকে ম্যাম।”
হাসির মৃত্যুর জন্য সবাই মিলে মোনাজাত করতে থাকে।মায়ার ইচ্ছা এটা।ছোট্ট বাচ্চাদের থেকে দোয়া পেলে হাসির রুহু একটু শান্তি পাবে।নিজের ছেলের থেকে তো সুখ পেলো না অন্তত মায়া আর বাকি বাচ্চাদের থেকে মৃত্যুর পর দোয়া পেয়ে রূহুর শান্তি পাক।মোনাজাত শেষ করতেই মায়ার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি।মনে পড়ে যায় পুরনো স্মৃতি।হাসি তাকে কত যত্ন করে আগলে রাখতো।আজ মিহির লোভে পড়ে এমনটা না করলে হাসি তাদের সাথে থাকতো।মায়ার জীবনে হাসি কোনো অংশে কম না।

মুখে দুই হাত নিয়ে মোনাজাত শেষ করতেই শো শো করে আশ্রমের ভিতরে আসে তিনটি গাড়ি।মায়ার কানে এসে পৌঁছায় সেই গাড়ির শব্দ।গরমের উত্তাপে এখন মাটিগুলো শুকিয়ে থাকে।চারপাশে ধুলা বালি ভরে আছে।গাড়ি আসার সাথে সাথে ধুলাগুলো উড়তে থাকে।আশ্রমের দারোয়ানদের চোখে মুখে ধুলাবালিতে ভরে যায়।চোখমুখ ডলতে থাকে তারা।গাড়ির শব্দে মুখে রহস্যের হাসি ফুটিয়ে তোলে মায়া।কানে থাকা ব্লুটুথের মাধ্যমে বলে,”ওরা এসেছে তারেক।মৌ আর মিলিকে বাচ্চাদের মধ্যে রেখে তুমি ওদের আগলে রাখো।আমি দেখছি এই জায়গাটা।”
একটু ঘাবড়ে যায় তারেক।রাজ নেই এখানে।এখনও আসেনি।মায়া একা কিভাবে কি করবে?তাই তারেক বলে,”ম্যাম একটু বেশি রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না?”

“শত্রু দমনের আজ সেরা দিন।এখানে এদের দ্যা ইন্ড করে আমি আমার দাদুর সপ্ন পূরণ করতে চাই।তুমি চিন্তা করো না।কিছু হবে না আমার।আমার মন্ত্রী মশাই আছে আমার সাথে।”
তারেক এবার কোনো প্রতিউত্তর না করে মিলি ও মৌকে বাচ্চাদের মধ্যে রেখে গার্ডদের দিয়ে চারপাশ ঘেরাও করে রাখে একটি ঘরে।মিলি অবাক হয়ে দেখতে থাকে।কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না সে।তারেক সবকিছু তাড়াহুড়া করে করছে।সোনালী ও তার গ্যাং মিলে এগিয়ে আসে মায়ার দিকে।মায়া ঘুরে তাকালো ওদের দিকে।কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মায়ার চোখমুখে।মিলি অবাক হয়ে বলে,”মা এটা কেমন রূপে এসেছে?এতগুলো লোক আবার ব্ল্যাক জ্যাকেট পড়েছে মা।”

মৌ বিদ্রুপের সুরে বলে,”এটাই তো ওনার আসল পরিচয়।দেখতে থাকো কি হয়।”
সোনালীর পিছনের গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে মিস্টার বিভান ও মিসেস রাজিয়া।এদেরকে দেখেও ভড়কে যায় না মায়া।মায়া একাই দাড়িয়ে আছে।দূরে একটি বসে আছে বাচ্চাসহ বাকিরা।মায়ার মুখে দমে যাওয়ার ছাপ দেখতে না পেয়ে সোনালী এবার বিরক্ত।বাবুর্চি রুপি লোকগুলোকে ইশারা করে সোনালী।লোকগুলো দৌড়ে এসে যেই মায়াকে হামলা করবে ওমনি আশ্রমের পিছন থেকে মায়ার লোক এসে ওদের সাথে মারামারি করতে থাকে।এবার যেনো ভড়কে গেলো সোনালী ও বিভান।সোনালীর দলের একজন পিছন থেকে এসে যেই মায়াকে আঘাত করতে যাবে ওমনি মায়া লাফ দিয়ে ঘুরে উল্টো অ্যাটাক করে লোকটিকে।

তারেকের দিকে তাকাতেই তারেক একটি গুলি ছুড়ে মারে মায়ার দিকে।মায়া ওটা নিয়ে শুট করে দেয়।আশ্রমের বাচ্চারা ভয় পেয়ে যায়।কাপতে থাকে ভয়তে।মায়ার দিকে আরো একজন তেড়ে আসতে নিলে মায়া যেই তাকে হামলা করবে ওমনি মায়ার মাথায় কেউ এসে আঘাত করে।মাথায় হাত দিয়ে নিচে পরে যায় মায়া।কাঙ্ক্ষিত লোকটির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় মালিনীকে। হাতে তার হকিস্টিক।বিদ্রুপের সুরে বলে,”আমাকে এটা দিয়ে মেরেছিলে না?এবার বোঝো কতটা যন্ত্রণা এই যন্ত্র দিয়ে।”

বলেই আবার একটা আঘাত করে মায়ার বাহু বরাবর।দর্শক হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে দেখছে সোনালী ও বিভান।তারেক আর পিয়াশ এবার না পেরে এগিয়ে আসতে নেয়।মালিনীর কাছে এসে যেই মালিনীকে হামলা করবে তখনই মায়া হাত দেখিয়ে ইশারা করে।মালিনী এবার গুলি নিয়ে তাক করে মায়ার মাথায়।মায়াকে যেই শুট করতে যাবে ওমনি পিছন থেকে সিয়া চিল্লিয়ে বলে,”এটা তুমি কি করছ মা?তুমি এমনটা করো না।ভাবীর ক্ষতি কেনো করছো।তুমি যদি মারতে হয় তো মারো ওনাকে।”

হাতের ইশারায় দেখালো সোনালীকে।কিন্তু সোনালীর পাশে বিভান ও রাজিয়াকে দেখে অবাক হয় সিয়া। সিয়াকে উদ্দেশ্য করে বিভান বলে,”কি মামা!বুঝতে পারছো না তো?আসলে আমরা পুরোটাই তো একটি গ্যাং।তোমার মা এই কাজগুলো করতে বাধ্য।নাহলে আমি আমার কাজ সফল করতে পারব না তো।”
এবার সোনালী বলে ওঠে,”ওকে তো মরতেই হবে।কিন্তু একবার পাসওয়ার্ড বলে দিলেই হবে।তো মায়া অফ সরি মোহনা বলে দেও পাসওয়ার্ড কি?”

হো হো করে হেসে দেয় মায়া।রক্ত চক্ষু করে সোনালীকে দেখে বলে,”এই মায়াকে মারা এত সহজ না।এই মায়ার জীবন গেলে যে কোটি টাকার চান্স মিস হয়ে যাবে।যেটার জন্য পাগলা কুত্তার মতো আমাকে খুঁজছেন আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সেটা পাবার আগে যে আমার মৃত্যু অন্তত আপনাদের হাতে নেই এটা আমি জানি।তাই যত পারেন উল্টো আঘাত করতে থাকুন।আর সিয়া তুমি ওদিকটায় যাও।এখানে তোমার আসা উচিত হয়নি।”
সিয়া কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না।কিছু একটা ভেবে চুপ করে সরে যায় পিয়াশের পিছনে।ফোন নিয়ে আদ্রকে ম্যাসেজ করে দেয়।সোনালী আর বিভান একে অপরের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকায় মায়ার দিকে।বলে ওঠে,”তোমাকে খুন না করতে পারি কিন্তু তোমার জীবনের প্রিয় ব্যাক্তিদের তো শেষ করে দিতে পারি।”

বলেই সোনালী ইশারা করে রুমে থাকা একটি লোককে।মৌকে নিয়ে বাইরে বেড় হয়ে আসে সে।মৌয়ের মাথায় গুলি ধরে দাড়িয়ে আছে সোনালীর লোক।আতকে ওঠে পিয়াশ ও মায়া।এই লোককে সোনালী কখন কবজা করে নেয় এটা বুঝতে পারছে না মায়া।পিয়াশ দৌড়ে যাবে মৌকে বাঁচাতে কিন্তু পিয়াশের পায়ে একটি ছুরি ছুড়ে মারে বিভান।ওখানেই ক্ষত সহ বসে পড়ে পিয়শ।হো হো করে হেসে সোনালী বলে ওঠে,”বোনের জীবনটা কি শেষ করে দিতে চাও?বাচ্চা সহ বোনকে কি পরপারে পাঠিয়ে দিবে বলো?তুমি তো টাকা পয়সার পরোয়া করো না।তোমার লাগবে ভালোবাসা।তাহলে বাঁচাও তোমার ভালোবাসার মানুষকে।বলে দেও পাসওয়ার্ড।ওখান থেকে ফর্মুলা পেলে মুক্তি পাবে তোমার বোন।”

ঘৃণার দৃষ্টি দিয়ে সোনালীকে দেখছে মৌ ও মিলি।সিয়া নিজেও তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সব জানলেও তার মা আর মামা মামী নিয়ে কেউ তাকে কেনো বলেনি এটা বুঝতে পারছে না সে।তাহলে কি বিভানের কথা মায়া জানত না।মাথা কাজ করছে না সিয়ার।শুধু ম্যাসেজ দিয়ে রেখেছে আদ্রকে।কিন্তু আদ্রর কোনো রেসপন্স নেই।
মৌ তার পেটে হাত দিয়ে বলে,”আমি আমার সন্তান নিয়ে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে রাজি কিন্তু এই মহিলাকে জিততে দেখতে রাজি না আপু।তুমি কিছুতেই বলবে না পাসওয়ার্ড।”
মৌয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া দেখতে পেলো সোনালীর প্রতি অঢেল ঘৃণা।মায়ার মুখে ফুটে ওঠে বিজয়ের হাসি।মায়া যেনো দেখতে পাচ্ছে সোনালীর সবকিছু থেকেও নেই।সোনালীর দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”আমাকে দমন করতে আপনি আপনার কোন জিনিসটিকে হাতিয়ার বানালেন নিজেও জানেন না।যখন জানবেন নিজের পায়ের নিচ থেকে মাটি ভেদ হতে থাকবে।”

সোনালী একটু অবাক হয়।তবে বেশি একটা পাত্তা না দিয়ে বলে,”ওহ কাম অন।এসব ইমোশনাল সেন্টি মার্কা কথা বলে আমার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে পারবে না।আমি যেটার জন্য তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি ওটা আমার চাই।”
রহস্যের হাসি হেসে মায়া বলে,”আমি আপনাকে মাইন্ড ডাইভার্ট করছি কি না এটা একটু ভালো করে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে দেখুন তো।একটু ভালো করে দেখে বলুন তো চিনতে পারেন কি না কে এই মেয়ে।কার সাথে মিল আছে এই মেয়ের।”

ঘৃণা লাগছে মৌয়ের এসব শুনতে।চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”একদম না আপু।ওই মহিলাকে তুমি কিছু বলবে না।”
পিয়াশ তার পা থেকে ছুরি সরিয়ে নেয়।কিন্তু পা থেকে রক্ত পড়তেই থাকে।মৌয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে না।সোনালী এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,”আমি বুঝেছি এরা কথার জালে আমাদের ভুলাতে থাকবে। ড় আপা তুমি যাও ওই পিয়াশকে শেষ করে দেও।দেখবে এই মৌ আর বাধা দিবে না।আমাদের কাজ সহজ হয়ে যাবে।”
সোনালীর কথামত মালিনী এসে পিয়াশের মাথায় গুলি তাক করে।সিয়া চিল্লিয়ে বলে,”মাআআ এমন করো না।মৌ আপু প্রেগনেন্ট।মেয়েটার বাচ্চা বাবা হারা হয়ে যাবে।”

মালিনী এবার নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে সিয়াকে বলে ওঠে,”হুশ একদম কোনো কথা নয়।আমাদের বলে দিলেই তো হয় পাসওয়ার্ড কি।আমরা তো এতকিছু করতাম না।করতে তো হয় এই মেয়েটার জন্য।সব প্ল্যান করে রেখেছিলাম আমরা।ওই বীরকে আনতাম না।কিন্তু না এই মেয়েটা প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের হারিয়ে দিতে থাকে তাই তো বীরকে এনেছিলাম।আর বেচারা সাইকো বীর।ওকে মায়াকে পেতে যা যা পদক্ষেপ বলে দেওয়া হতো ও সব পালন করতো।এই মেয়েটার ভিতর কি আছে কে জানে?একদম সবাই পাগলের মতো লেগে থাকে।মেয়েটিকে পেতে বীর ছিলো মরিয়া।সেই সুযোগ কাজে লাগাই আমরা।কিন্তু না তোমার ভাই আর এই মেয়ে মিলে ওখানেও আমাদের হারিয়ে দিলো।

তিলে তিলে আমরা অসুস্থ বীরের মস্তিষ্কে শুধু মায়া নামটাই ব্যাবহার করতাম।একজন সাইক্রেটিস দিয়ে বীরকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যে বীর শুধু তার মায়াকে মনে রাখবে।বাকি সব তার কাছে কিছু না।আমরা ওটাতে সাকসেস হই।অসুস্থ বীরের শরীরে ড্রাগ দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে ড্রাগের ডোজ বৃদ্ধির ফলে বীর আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে যায়।বীরের সামনে মায়ার বিয়ের ব্যাপারটা আমরাই তুলি জাতে সে বাংলাদেশে ব্যাক করে।মায়ার পিছনে মরিয়া হয়ে ঘুরবে বীর।এমনকি সেই কাজটাই হয়।কিন্তু এই মেয়েটার মন মস্তিষ্ক তো বীরের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে।অজান্তেই আমাদের হারিয়ে দিলো নিজের কথার বুলিতে।ইডিয়েট বীর ভালোবাসা না পেয়ে সুইসাইড করেই নেয়।অবশ্য এছাড়া কি আর উপায় ছিলো?

তার মন মস্তিষ্ক ধরেই তো আমরা এই মেয়েকে নিয়ে ভড়িয়ে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম বীর আসলে মায়া ও রাজের মধ্যে বিচ্ছেদ হবে।রাজ তো বীরকে খুন করতে মরিয়া হয়েছিলো।শুধু গাধাটা সুইসাইড না করলে প্ল্যান ফ্লপ হতো না।যখন ওই প্ল্যান ফ্লপ হয় আমরা হাতিয়ার হিসেবে দেখি মিহিরকে।অবশ্য মিহির নিজে থেকেই ধরা দেয় আমাদের কাছে।কারণ ও এই দেশে নাম করা কৃষি বৈজ্ঞানিক হতে চায়।মিহির এট লিস্ট মায়ার প্রেমে মগ্ন ছিলো না।সে তো আমাদের মতই আরেক লোভী।টাকার গন্ধ পেয়ে সুরসুর করে আমাদের দলে আসে।কিন্তু এখানেও এই মেয়ে আমাদের হারিয়ে দিলো।আমরা কোথায় ভাবলাম রাজকে খুন করে এই মেয়ে জেলে যাবে।আমরা সেইটাকে হাতিয়ার করে উশুল করে নিবো।কিন্তু না এই মেয়ে এতই চালাক যে চোখের নিমিষে সব বুঝে যায়।তাই তো আজ আমাদের এই রাস্তা দেখতে হয়।”

সিয়া একটু অবাক হয়ে বলে,”সাইক্রেটিস দিয়ে বীর ভাইয়ার ব্রেইন ওয়াশ করেছো।মা তুমি জানো এটা কত বড় অন্যায়?এখন অসুস্থ ব্যাক্তিকে এভাবে মাইন্ড ডাইভার্ট করে খারাপ পথে লেলিয়ে দেওয়াটা একদম উচিত হয়নি।”
মায়া নিজেও অবাক হয়ে যায় এটা শুনে।হ্যাঁ বীর তাকে পেতে মরিয়া এমনিতেও কিন্তু মায়াকে না পেলে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো মাথা নষ্ট বীরের ছিলো না।তারমানে ওভার ড্রাগ আর ট্রিটমেন্ট পেয়েই বীরের মাইন্ড শুধু মায়াকে খুঁজতে থাকে।বাবা হয়ে বিভান নিজেই এসব করেছে তার ছেলের সাথে।মায়া বিভানকে উদ্দেশ্য করে বলে,”নিজের ছেলের এমন অবস্থা করে দিতে লজ্জা লাগে না?আবার আমাকে এর জন্যই মারতে চান।”

বিভান এবার এগিয়ে আসে মায়ার দিকে।একটু ঝুঁকে বলে,”কে বলেছে তোমাকে বীরের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এসেছি?আরে বীর তো শুরু থেকেই আমার পথের কাটা ছিলো।ছেলে আমার হলে কি হবে।হয়েছে তার দাদুর মতো একদম ইনোসেন্ট।বাংলাদেশে এসে মাফিয়া গিরি করবে।একদম অনেস্ট মাফিয়া হয়ে যায়।দেশের ভালো করতে ব্যাস্ত সে।ওর জন্য আমার ব্যাবসায় লস হতে থাকে।যখন জানতে পারি তুমি ওকে গুলি করেছো।কারণ ও তোমার প্রেমে মত্ত তখন তোমার জন্য ওকে ডাক্তারকে আমি ঠিক করি।

কিন্তু আমার ব্যাপারে ছেলেটা জেনে যায়।আমার সাথে একদিন ঝামেলাও হয় ওর।ঝামেলার বসে আমাদের চ্যালেঞ্জ হয়।ও যদি তোমাকে বিয়ে করতে পারে তাহলে আমি এই ব্যাবসা থেকে সরে যাবো আর ও যদি তোমাকে বিয়ে করতে না পারে তাহলে ওকেই আমার কাজে সাহায্য করতে হবে।বেচারা বীর রাজি হয় আমার শর্ততে।ভালোবাসার প্রতি কি বিশ্বাসটাই না ছিলো।তাই তো ভালোবাসায় হেরে যাওয়ার সাথে আমার শর্তে হেরে সে জীবনটাই দিয়ে দিলো।অবশ্য আমি আমার লোক দিয়ে ওর কাছে থাকা প্রমাণ সরিয়ে নেই। যাতে করে ও তোমাকে না পেলেও আমার পর্দা ফাঁস করবে না।”
আরও কিছু বলতে যাবে তখন সোনালী বলে ওঠে,”এত কথা এই মেয়েকে বলার দরকার কি?আমাদের তো সময় নষ্ট হচ্ছে।”

পিয়াশ এবার ঘাবড়ে যায় সাথে মায়াও।কারণ এতক্ষণের সব কথা মায়া জানলেও কথার ছলে আটকে রাখে এদের।কিন্তু এখন এই সোনালীর সাথে পেরে ওঠে না।সোনালী বলে ওঠে,”বড় আপা শুট করে দেও পিয়াশকে।”
মালিনী এবার গুলিটা নিজের হাতে ভালোভাবে সেট করে নেয়।ঠিক তখনই একটি বাইক আশ্রমের ভিতর থেকে শো করে আসতে থাকে। মালিনীর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে ওঠে।মায়ার দিকে তাকাতেই মায়া চোখ টিপ দেয়।সাথে সাথে মৌয়ের মাথায় গুলি তাক করা ব্যাক্তিকে শুট করে দেয় মালিনী।লোকটি মৌকে ছেড়ে দিয়ে নিচে পড়ে যায়।অবাক হয়ে তাকালো সোনালী ও বিভান।বাইক থামিয়ে মাথা থেকে হেলমেট খুলে দুই দিকে মাথা ঝাড়ি দিয়ে শয়তানি হাসি দেয় রাজ।রাজের পিছনে আছে আরো এক যুবক।যাকে দেখে বিভান আর সোনালী তাকালো মালিনীর দিকে।সোনালী এবার আঙ্গুল উঁচিয়ে তেড়ে আসে আর মালিনীর উদ্দেশ্যে বলে,”প্রতারক তোকে তো আমি।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৪

আর কিছু বলতে যাবে মায়া এসে সোনালীর হাত ধরে মুচড়ে দূরে ধাক্কা মারে।রাজের সাথে থাকা ছেলেটিকে তারেকের পাশে রেখে রাজ এসে দাঁড়ায় মায়ার পাশে।ঠিক তখনই মায়া রাজের দুই পাশে এসে দাঁড়ায় মালিনী ও রাজিয়া।মায়ার কাছে এসে মালিনী বলে,”তো বউমা কেমন হলো তোমার শাশু মায়ের অভিনয়?”
রাজিয়া বলে ওঠে,”সাথে আমিও কিন্তু কম ছিলাম না।”
মায়া ও রাজ একে অপরকে দেখে হেসে দেয়।সোনালী আর বিভান পারলে এখনই কাচা গিলে খাবে মালিনী ও রাজিয়াকে।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৬