মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৬

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৬
ইশরাত জাহান

রাজিয়াকে উদ্দেশ্য করে মিস্টার বিভান বলেন,”মালিনীর নাহয় কারণ আছে তাই ও এমনটা করলো।তুমি কেনো আমাকে ধোঁকা দিলে রাজিয়া?”
রাজিয়ার চোখমুখে ঘৃণা স্পষ্ট বোঝা যায়।একদলা থু ছুড়ে মারে বিভানের মুখে।ঘৃণার দৃষ্টিতে বলে,”আমার ছেলেকে খুন করে তুমি কিভাবে ভাবো যে আমি তোমার হয়ে থাকব? আরে তুমি কি ভাবো আমি কিচ্ছু জানি না!আসলে আমি আগে থেকেই জানি যে তুমি আমার বীরকে খুন করেছো।এই দেশে তোমাকে এই জন্যই আনা হয়েছে।জাতে তোমাকে আমরা শেষ করে দিতে পারি।”

“পাগল হয়ে গেছো তুমি!আমি কেনো আমার ছেলেকে খুন করব?আমি তো শুধু ওকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম আর লোক দিয়ে ওর কাছে থাকা সকল প্রমাণ সরিয়ে রাখি।বরং আমাদের ছেলেকে এই মায়া আর রাজ খুন করে।”
“মায়া হয়তো আমার ছেলেকে খুন করতো।কিন্তু আমার আর্তনাদ দেখে মায়া বীরকে ছেড়ে দেয়।সেদিন মায়া যখন বীরের বুকে গুলি করে তার আগের কাহিনী কিছুই জানো না তুমি।রাজ আমাকে মায়ার নাম্বার দিয়ে বলে ওকে যেনো আমি রিকোয়েস্ট করি। তাজকে যখন এই মালিনী এসাইলাম থেকে পালাতে হেল্প করে তখন রাজ ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তাজকে নিয়ে।কাকে কিভাবে বাঁচাবে ভাবতেই ও আমাকে কল করে সব বলে।এক মায়ের আর্তনাদ মায়া কখনোই ফেলতে পারবে না মায়া।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমিও রাজের কথায় তখন মায়াকে কল দেই আর অনুরোধ করি।এক মা পাগল মায়া।এক্সেক্টলি তাই মায়া বীরের বুকের ঠিক দুই ইঞ্চি উপরে টার্গেট করে গুলি করে।বীরের আশেপাশে বীরের লোক থাকায় মায়া এটা শিওর ছিলো যে কাছের হসপিটালে বীরকে নিয়ে যাবে।আসলে গুলিটা একটু উচুতে করায় বীর মারা যাবে না কিন্তু আহত হবে।রাজের কথামত আমি বীরকে পরে আমার কাছে আনি।ওকে আড়ালে বুঝিয়ে বললে ও ঠিক হয়ে যায়।দূরত্ব বাড়িয়ে সুখে থাকতে দেয় মায়াকে।ওর মনে অনুতপ্ত হয়।মায়ার মুখে হাসি দেখতে আমার ছেলে মায়াকে রেখে আমাদের সাথেই থাকতে চায়।কিন্তু তুমি আর এই মহিলা(সোনালী)হতে দেওনি।তোমরা ওকে ওর ডাক্তার দিয়ে ড্রাগ দিতে।

আমার ছেলের মাথায় ধীরে ধীরে যন্ত্রণা বেড়ে যায়।সেখানে আগুন ঢেলে জ্বালা বাড়িয়ে দেও ওর বুকে।ছেলে আমার দিক বিদিক হারিয়ে মায়াকে চাইতে থাকে।ওর কাছে তখন একমাত্র ঔষধ মায়া।তাই বাধ্য হয়ে ও এখানে আসে।”
আর কিছু বলতে যাবে তার আগে বিভান বলে,”আমি ওটা করলেও খুন তো মায়া আর রাজের ইচ্ছাতেই হয়।”
হালকা হাসলো রাজিয়া।তারপর রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”রাজ আমার হীরের টুকরো ছেলে।ও ওর ভাইয়ের দায়িত্ব ঠিক ভাবেই পালন করেছে।নাহলে সেদিন আমাকে বলত না মায়াকে কল দিয়ে রিকোয়েস্ট করতে।সে যাই হোক।বীর যেদিন নিজেকে শেষ করে ওখানে তো বীরের কপালে দুটো গুলি না তিনটা গুলি পাওয়া যায়।দুইটা ও নিজে করে নিজের মাথায় আর একটা দুর থেকে তোমার লোক করে।এটা আমাকে তোমার লোকই বলেছে।কিভাবে জানলাম জানো?”

বিভান এবার অবাক হলো।বলে ওঠে,”তুমি কিভাবে জানলে?”
“কারণ রাজ একটি গাছের আড়ালে মিথ্যে মিথ্যে সিরিয়াল কিলার রেখে দেয়।যে আসলে বীরকে মারতে না ওইদিন বীরকে খুন করার নাটক করে।জাতে তুমি আর সোনালী মনে করো রাজ ওর ভাইকে খুন করতে চায় আর মায়াকে ভুল বুঝবে।কিন্তু রাজ ওটা না করে তোমাদের দেখিয়ে বীরকে আঘাত করতে চেয়েছিলো।মায়া নিজেও তো তখন বীরকে গুলি করেনি বরং বীরকে বোঝাতে থাকে।যে মায়া তার মন্ত্রী মশাইকে পেতে ব্যাকুল সে মায়া কেনো বীরকে ওই সময় খুন করেনি এটা তো তুমি তোমার মাথায় আনো নি।

আসলে ছেলেকে খুন করে ভাগ্নের থেকে বউকে আলাদা করার কাজে ব্যস্ত ছিল যে।ওইদিন মায়া বীরকে ইচ্ছা করে আঘাত দেওয়া কথা বলে।কারণ বীরের মন মস্তিষ্ক ঠিক করতে হলে ওকে ওর মতো করে আবার রোগী বানিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।যেটা সুস্থ বীরকে আমরা হাজার চাইলেও নিয়ে যেতে পারতাম না।আর মায়া সে তো কখনোই মিথা অভিনয় করবে না।কারণ ওর মন মস্তিষ্ক শুধু রাজ।আমাদের কাছে অপশন না থাকায় আমি আর রাজ এই প্ল্যান করি।কিন্তু বীর নিজেকে শুট করার আগেই তোমার লোক বীরকে শুট করে দেয় এটা রাজের ওই হিডেন কিলার দেখে নেয়।সে ছবি তুলে রাখে এই সবকিছুর।”
বিভান এবার জোরে মাটিতে লাথি মেরে বলে,”যদি তাই হতো তাহলে ঐ লোকের হাতে টাকা দিয়ে রাজ গাড়িতে উঠে ওগুলো কেনো বলে ওর অ্যাসিসট্যান্টকে?”

এবার রাজ এগিয়ে আসে বিভানের সামনে।কপালে স্লাইট করতে করতে বলে,”আমার গাড়িতে আমার অফিসে ইনফ্যাক্ট আমার বেডরুমে যে হিডেন ক্যামেরা রেখেছো এটা কি ভুলে গেছো?অপস তুমি তো ভুলবে না।ওটা আসলে তোমরা ভেবেছো আমরা জানিই না।কিন্তু কি বলোতো তোমাদের একটু সন্দেহ করা উচিত ছিলো।যে রাজ তার বউকে কাছে না পেলে জোর করে বউয়ের ভালোবাসা আদায় করে সে কিন্তু এই কয়েকদিন বউ ছাড়া নিজেকে সংযত রেখেছে।বারবার বলতাম বেচারা আমি বউ ছাড়া শূন্যতায় ভুগছি।কিন্তু বোকা মামা আমার বুঝলোই না স্বামী স্ত্রী দূরে মানে কিছু তো একটা চলছে।তোমাকে আর এই সোনালীকে দেখানোর জন্যই তো আমরা বর বউ এভাবে চুপ করে থাকি।”

ভ্রু কুচকে সোনালী বলে,”মানে তোমার আর এই মেয়েটার মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়নি?”
দুষ্টু হেসে রাজ বলে,”আরে আমরা বর বউ তো এই কয়দিন প্রেম প্রেম না খেলে শত্রু শত্রু খেলছিলাম।তবে তোমাদের শেষ করে আমি আবার আমার বউকে নিয়ে প্রেমের সাগরে ডুব দিবো।”
রক্তচক্ষু করে মায়া বলে,”শাট আপ মন্ত্রী মশাই।লাগামহীন হয়ে গেছেন আপনি।”
বাচ্চাদের মতো কাদো কাদো মুখ করে রাজ বলে,”এমনি আছি ঝামেলায় তার উপর পাইনি বউকে কাছে।লাগামহীন আমি হবো না তো কি ইমরান হাশমি হবে?ব্যাটা সিনেমার মধ্যে নায়িকাদের কতকিছু করে বাস্তবে তো আলাদা বউও আছে।সেখানে আমি আমার বৈধ বউকে কাছে না পেয়ে ভিটামিন-বউ এর অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছি।শোনো মায়াবতী এদের কাজ শেষ করে আমাকে আবার তোমার ভালবাসায় নাদুস নুদুস করে দিবে।”
রাজের লাগামহীন কথার মাঝে চিল্লিয়ে ওঠে বিভান।বলেন,”হচ্ছেটা কি?তোদের প্রেমলীলা চলছে না এখানে।”
ব্যাঙ্গ করে রাজ বলে,”আরে মামা মরার আগে ভাগ্নের প্রেম দেখে যাও।”

“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”(মায়া বলে)
রাজ মায়াকে ফ্লাইং কিস দেখিয়ে দেয়।তারপর মালিনীর কাছে এসে বলে,”নিজের কলিজার টুকরোকে কাছে নিবে না মা?যার জন্য তুমি এতগুলো বছর অপেক্ষা করেছো ”
মালিনী এবার পিছনে ঘুরে তাকালো তারেকের সাথে থাকা যুবকটির দিকে।দুই হাত মেলে বলে,”মায়ের কোলে আসবি না বাবা?এই অসহায় মা যে তোর জন্য অনেক ধৈর্য ধরে ছিলো।”
সাথে সাথে যুবকটি এসে জড়িয়ে ধরে মালিনীকে।মালিনীর যেনো আজ মুক্ত লাগতে থাকে।সে তার ছেলেকে পেয়েছে।চোখ বন্ধ করে বলে,”মানিক আমার বাবাটা।”
তারপর চোখ মেলে দেখতে থাকে মানিককে।আশ্রমের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে মাহমুদ সরদার।মাহমুদ সরদারের সাথে হুইল চেয়ারে করে আছে মোহন সরদার।মোহন সরদারের চোখেমুখে ক্ষিপ্ততা।সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর মতো নষ্টা মেয়েকে আমি আমার বাড়ির বউ করে পাপ করেছি।যার ফল এখন আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে।”

তাচ্ছিল্যের সাথে মায়া বলে,”এখনও আরো এক ঝটকা বাকি আছে মিস্টার মোহন সরদার।কর্মের ফল তো এখনও পাওয়া বাকি।আমার আসল উদ্দেশ্য তো আপনার জীবনকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া।”
নিজের মেয়ের মুখে বাবা ডাক না শুনে নাম ধরে শুনে যেনো বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো মোহন সরদারের।আহত দৃষ্টিতে মায়াকে দেখে বলে,”একবার বাবা বলে ডাকা যায় না, মোহ মা?”
মোহন সরদারের চোখে চোখ রেখে আছে মায়া।যেনো আজ সবকিছুর হিসাব মিটবে। হ্যাঁ ভিতর থেকে এই সবকিছু দেখেছে আর শুনেছে মোহন সরদার।তাই তার কাছে মায়ার আসল পরিচয় ক্লিয়ার।কিন্তু এতে মায়ার যায় আসে না।মায়া তো এটাই চেয়েছে।তার সন্তান দ্বারা অবহেলিত হয়ে সে মায়ার শূন্যতা অনুভব করবে।আজ মায়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।মায়া বলে ওঠে,”আপনার মতো নোংরা মন মানসিকতার লোভী ব্যাক্তিকে কখনও বাবা বলে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।অন্তত সেই সন্তান তো পারবেই না যে তার মাকে নিয়ে অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়েছে।মায়ার অস্তিত্ব মায়ার মা।মায়ার বাবার কোনো দরকার হয় না।”

উপস্থিত সবাই তাকিয়ে দেখছে এক মেয়ের দৃষ্টিতে তার বাবার জন্য ভরা ঘৃণা।মিলি যেনো অবাক হয়ে যায় যে মায়া তার বাবার প্রথম সন্তান।মায়ার পাশে এসে রাজ বলে ওঠে,”আমার মায়াবতীর ইচ্ছা তাহলে পূরণ হলো।”
মাহমুদ সরদার এসে মালিনী ও মানিকের পাশে দাঁড়ায়।মানিকের মাথায় হাত রেখে বলেন,”আমাকে কেনো বলোনি তোমার একটি ছেলে আছে।তাকে আটকে রাখা হয়েছিলো।অন্তত আমি তোমাকে সাহায্য করতাম।”
চোখের পানি মুছে বিভান আর সোনালীর দিকে তাকায় মালিনী।বিভান আর সোনালী ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।তারা এখন সুযোগ খুজতে থাকে কিভাবে এদের সব কয়টাকে একসাথে শেষ করা যায়।মালিনী ওদেরকে দেখে বলেন,”মানিকের বাবা(মিনার)তো কৃষি বৈজ্ঞানিক ছিলো সাথে রোহিনী।রোহিনী মারা যাওয়ার পর ভুল বললাম ওকে খুন করে বিভান আর সোনালী।কিন্তু তখন আমি জানতাম না।তো তখন আমার কাছে বিভান আসে।

আমাকে কিছু মিথ্যা ছবি দেখিয়ে বলে,রোহিনী আর মিনার একজন আরেকজনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িত ছিলো।আমিও বোকার মতো মিনার আর রোহিনীর একত্রে কাজ করে যাওয়াটাকে নোংরা সম্পর্ক ভাবি।কারণ মিনার আর রোহিনী তো তখন ব্যাস্ত থাকতো ভালো একটা ফর্মুলা তৈরি করতে।ওদের ওই ব্যস্ততা আমাকে সময় না দেওয়া সাথে এই ছবি দেখে আমি উস্কে যাই।রাগে দুঃখে ডিভোর্স দেই মিনারকে।ডিভোর্সের কিছুদিন পর মানিক আসে আমার গর্ভে।আমার মনে হয় আমাদের তো তাহলে ডিভোর্স কার্যকর না।আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।ঠিক সেদিন আমি ওর কাছে যেতেই দেখতে পাই আমার মিনারকে নির্মমভাবে খুন করছে বিভান।আমি ওখানে চিৎকার করে ওদের আটকাতে যাই।কিন্তু পারি না।

আমাকে আটকে রাখে এই সোনালী।তারপর কয়েকমাস আমাকে ধরে রাখে গোপন এক বাড়িতে।আমার মানিকের জন্মের পর ওরা মানিককে নিয়ে যায়।আর বারবার আমাকে থ্রেট করতে থাকে।আমার মানিকের ক্ষতি হলে আমি যে শেষ হয়ে যেতাম।সেই ভয়তে আমিও ওদের কথা মতো কাজ করি।কিন্তু আমি কারো কোনো ক্ষতি করিনা।একদিন আমি এটাও জানতে পারি যে রোহিনীকে এরা খুন করেছে। আর পাসওয়ার্ড কি এটা এরা জানার চেষ্টায় আছে।তখন ওরা টার্গেট করে সরদার পরিবার।বিভান আমাদের বাবাকে বুঝিয়ে এই পরিবারে বিয়ে দেয়।আমি আড়ালে অনেক চেষ্টা করি সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দিতে।কিন্তু মনিকের ভয়তে চুপ থাকতাম।তুমিও আমার সাথে তেমন কথা বলতে না।আমাকে এড়িয়ে চলতে।রাজকে অবহেলা করতে চাইতাম না কিন্তু আমার মন যে ছোট্ট মানিককে খুঁজতো।তারপর রাজ চলে যায় লন্ডন বিভানের কাছে।

এটাও ওর প্ল্যান ছিলো।এর ভিতর একদিন সুযোগ বুঝে আমাদের বাবাকে(রাজের নানু আর দাদু)আমি সত্যিটা জানিয়ে দেই।খুবই সতর্কতার সাথে।বাবা যদি বিভানকে সঠিক পথে আনে তাহলে অন্তত বিভান ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু না ওর তো শুধু টাকা পয়সা নাম যশ এগুলোই লাগবে।বাংলাদেশ তো দখল করতেই চায় নিজ খেতির জন্য লন্ডনকে নিজের টার্গেট করে রাখে।লন্ডনে এই ফর্মুলা বিক্রি করলে ও পাবে কোটি টাকা। আর লন্ডন সরকার থেকে ওকে আলাদা সুনাম দেওয়া হবে।জাতে ওর পাওয়ার দ্বিগুণ হতে থাকে।তাই বাবাদের খুন করে দেয় ও।কিন্তু বাবাদের খুন করলেও ও ফর্মুলা পায় না কারণ ওটা বাবা লকারে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখে।তাই সোনালী প্ল্যান করে পিএ হয়ে আসে ছোট ভাইয়ের(মোহন সরদার)কাছে।সোনালী বুঝে যায় এই বাড়িতে আসার একমাত্র চাবিকাঠি ছোট ভাই।ছোট ভাইকে নিয়ে পার্টি ও বিভিন্ন জায়গায় যেয়ে নেশা করতো ওরা।তারপর সোনালী প্রেগনেন্ট হয়।ছোট ভাইয়ের তখন ওর প্রতি আর ইন্টারেস্ট থাকে না।

আমিও এবার একটু শান্তি পাই।যে ও এই বাড়িতে আসতে পারবে না।কিন্তু ছোট ভাই ওকে শর্ত দেয় ছেলে সন্তান হলে ওকে বউয়ের মর্যাদা দিবে।তাই করা হলো।যখন রুদ্রের মুখ দেখলো ছোট ভাই কোনো কিছু না ভেবে খুশিতে আগে সোনালীকে সরদার বাড়িতে আনে।তারপর শাহানা আপাকে তাড়িয়ে নিজে জায়গা করে নেয়। আর আমি কিছু বলতে যাবো তার উপায় থাকে না।আমাকে প্রতি পদে মানিকের জন্য ভয় দেখিয়ে দেয়।আমার মানিক যে ওদের দখলে ছিলো।ভিডিও কলে মানিককে দেখালেও ওর আশেপাশে গুলি ধরে রাখা থাকতো।অনেক কষ্ট করে হলেও আমি মুখ বুঝে থাকতাম।সোনালী এখানে এসেও তেমন উন্নতি করতে পারে না।কারণ পাসওয়ার্ড কেউ বলতে পারে না।কিন্তু একদিন শাহানা আসে ওই সিক্রেট রুমে।

আমিই ওকে আগে দেখি।জানতে পারি বাবা মারা যাওয়ার আগে রাজকে কল দেয়।ওই সময় কানেক্ট পায় না তাই শাহানা আপাকে কল দিয়ে জানায়। আপার সাথে মায়া ছিলো তাই মায়াও জানে পাসওয়ার্ড।এগুলো আপা যখন আমাকে বলে তখন আড়াল থেকে সোনালী শুনে নেয়।তাই তো সেদিন আপাকে ওই সোনালী আঘাত করে।বাকি কিছু আমি জানি না।শুধু সোনালীর থেকে শুনেছিলাম আপা মারা যায়।এদের এই অত্যাচার সাথে মায়ার রক্তিম ব্যাবহার সহ্য করতে না পেরে যখন আমি নিজেকে শেষ করতে যাবো মায়া আমাকে বাঁচিয়ে দেয়।হাত থেকে বিষের বোতল ফেলে দিয়ে আমাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে অন্যায়ের প্রতি লড়ব। আর মায়ারাজের বিষয়ে গোপন তথ্য কে দেয় এটা জানার জন্যই আমরা এই নাটক চালাতে থাকি।একদিকে আড়ালে থাকা শত্রুর খোঁজ আরেকদিকে আমার মানিকের উদ্ধার চলতে থাকে।তাই তো এদেরকে দমন না করে বাঁচিয়ে রেখেছে মায়া।আমার আর্তনাদ মেয়েটা শুনেছে।আমার মানিককে আমার কোলে ফিরিয়ে এনেছে।নিজের মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবে এখন সে।”

কথাগুলো বলেই মায়াকে জড়িয়ে ধরে মালিনী।রাজ নিজে এসে ওদের সাথে যুক্ত হয়।এতক্ষণ মায়ের অসহায়ত্বের কথাগুলো শুনে কান্না করে দেয় সিয়া।দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে মালিনীকে।বলে,”আই এম সরি মা।আমি তোমাকে ওই সময় ভুল বুঝেছি।আমি তো জানিনা এতকিছু।কি করব বলো মৌয়ের ছোট বাবুর কথা ভেবে আমি ভয় পাই।”
মালিনী এবার সিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”বোকা মেয়ে আমার। তোর মন যে নরম।একদম ভীত হয়ে পড়িস।”
“একদম তোমার মতো হয়েছে আমার বোনগুলো।ভাইটাও কম না।”(রাজ বলে)
কিছু একটা ভেবে বিভান বলে,”তাহলে তোকে ওইদিন খুন করতে চায় কেনো?”

মালিনী এবার বিভানকে দেখে নেয়।তারপর বলে,”জাতে করে তুমি আমাকে দিয়ে আর কোনো অন্যায় কাজ না করাও। আর মায়া আমাকে ওই দিন আঘাত করেনি।বরং ও নাটক করেছিলো।ভুলে গেলে ও কিন্তু আমাকে আঘাত করার আগে লাইট অফ করে দেয়।হিডেন ক্যামেরাতে আবছা আলোয় তুমি আমাকে করা আঘাত দেখবে আর আমার আর্তনাদ শুনবে।তারপর আয়রাকে দিয়ে ইচ্ছা করে রাস্তায় নামায়।তুমি আমাকে ওর সাথে রাস্তায় ধরবে আর মনে করবে ও আমাকে কবর দিতে যাচ্ছে।এটাই তো প্ল্যান করে রাখে আমাদের অফিসার।আই মিন ক্রিমিনাল অফিসার।আমরাও তাই মেনে নেই।কারণ সেই তো তোমাদের শাস্তি দিবে।”
“ক্রিমিনাল অফিসার!”(বিভান বলে ওঠে)
মায়া এবার মালিনীকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আহ শাশু মা।সব বলে দিলে টুইস্ট থাকবে কি করে।একটু অপেক্ষা করো সে আসবে।”

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো মালিনী।এদের কথার মাঝেই হাত তালির শব্দ হয়।সবাই মিলে পিছনে ঘুরে দেখে সোনালী রহস্যের হাসি দিয়ে হাত তালি দিচ্ছে।বিভান নিজেও বুঝে ওঠে না কেনো সোনালী এমন করছে।সোনালীর কাছে এসে রাগ দেখিয়ে বলে,”মাথা কি গেছে তোমার?এদের শেষ করার উপায় না পেয়ে কি এখন পাগল হয়ে গেছো?”
শয়তানি হাসি দিয়ে সোনালী বলে,”ভালো করে দেখো বিভান।এখানে ফুল ফ্যামিলি থাকেলও একজন মিসিং।”
সবাই তাকালো এদিক ওদিক।মিলি এসে বলে,”হ্যাঁ হিয়া কোথায়?ওর তো কাল আসার কথা ছিলো।”
ভয় পেয়ে যায় সিয়া।বলে ওঠে,”কি বলছো আপু?হিয়া তো বেড়াতে গেছে।ও আসার আগে তো আমাদের জানাবে।”
“আমাকে জানিয়েছিলো।কারণ আমি রাগ করেছিলাম আমার বিয়েতে আসেনি তাই।আমি তো আর এত কাহিনী জানতাম না।তাই ওকেও আসতে বলি।”

সোনালী এবার বিজয়ের হাসি দিয়ে বলে,”বেচারি মায়া!কি সুন্দর প্ল্যান করে হিয়াকে নিজের কাছে রেখেছিলো।ভেবেছিলো হিয়ার ব্যাপারটা আমরা বিশ্বাস করবো।কিন্তু মায়ার কিছু ইচ্ছা যে আমিও জানি।মায়া তো কখনও নিরপরাধ ব্যক্তির ক্ষতি করে না।তাই তো আমি হিয়াকে আমার কব্জায় রেখেছি।ভাগ্যিস ওটাও আমার প্ল্যানের এক অংশ ছিলো।হিয়া এখন আমার ছেলের কব্জায়।”
হুইল চেয়ার সহ এগিয়ে আসতে নেয় মোহন সরদার।কিন্তু পেরে ওঠে না।রাগ দেখিয়ে বলে,”ছেলেকে নিজের মতো নষ্ট বানিয়ে রেখেছো।একটা নিরপরাধ মেয়ের জীবনটা নষ্ট করো না সোনালী।”
“চু চু চু!আসলে বেবী সরি।আমি তো আমার বোনকেও শেষ করেছি শুধুমাত্র এই রাজত্ব পেতে।তাহলে কেনো অন্যের মেয়েকে আমি ছেড়ে দিবো?আমার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমি সবাইকে শেষ করে দিতে পারি।আমার অকেজো ছেলেটা কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে না পারলেও শুধু ওই হিয়াকে নিজের কব্জায় রেখেছে।”

খুশিতে খুশিতে সোনালীর কাছে এসে বিভান বলেন,”আরে বাহ সোনালী।আমার পার্টনার দেখছি খুব চালাক।”
নিজের প্রশংসা শুনে খুশি হয়ে সোনালী বলে,”আসলে রুদ্রটা কোনো কাজের না।আমি কত ভাবে জারা আর রুদ্রকে এটা ওটা শিখিয়ে দেই কিন্তু কেউ কিছু করতেই পারে না।তাই তো ওকে দিয়ে সোজা কিডন্যাপ করে রেখেছি।আগে ফর্মুলা হাতে পাবো তারপর এদের শেষ করে দিবো।রুদ্র অবশ্য ভাবছে আমি ফর্মুলা পেয়ে গেলে হিয়ার সাথে ওর বিয়ে দিবো।বোকা ছেলে কোথাকার।মোহন সরদারের মত হয়েছে।মেয়েবাজী করে আর কর্মে ঢেঁড়স।”
ভয়তে কান্না করে দেয় সিয়া আর মিলি।কিন্তু আশেপাশের আবহাওয়া পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে যায়।একসাথে হেসে ওঠে মায়া রাজ মাহমুদ সরদার মালিনী আর রাজিয়া।এদের হাসি দেখে যেনো সোনালী আর বিভানের মনে হতে থাকে কোনো সার্কাস চলছে।মায়া এবার পিছনে ইশারা করে বলে,”একবার পিছনে তাকিয়ে দেখুন।কাহানি তো আব শুরু।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৫

বলেই চোখ টিপ দেয় মায়া।জোরে বাইকের শব্দ কানে আসতেই পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় সোনালী আর বিভান।একসাথে দুইটা বাইক আসছে।দুইজন ব্যক্তির মাথায় হেলমেট আর একজনের পিছনে একটি মেয়ের পিঠের অংশ দেখা যায়।ব্যাক্তি দুজন বাইক নিয়ে সোনালীর সামনে এসেই হেলমেট খোলে।একটা বাইকে আদ্র যার পরনে অ্যাপ্রন আর পাশের বাইকে আছে রুদ্র যার গেটাপ পুরোই ভিন্ন।পিছনে আছে জেসি।বাইক থেকে নামতেই রুদ্রের পোশাক দেখে অবাক হয়ে গেলো সোনালী ও মোহন সরদার।সোনালীর সামনে একটি আইডি করে ধরে রাখে রুদ্র।যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে Criminal Investigation Department তার নিচে পরিচয় পত্র লেখা।যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় নামের জায়গায় লেখা রুদ্রদ্বীপ রুদ্র।
কার্ডটি নিজের পকেটে রেখে রুদ্র বলে,”CID অফিসার রুদ্রদ্বীপ রুদ্র ইজ হেয়ার।নাও ইওর গেম ইজ ওভার।মিসেস সোনালী।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৭