মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৮

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৮
ইশরাত জাহান

পুরোনো অতীত,
রোহিনী আর মিনারের মৃত্যুর পর মালিনীর বিয়ে হয় মাহমুদ সরদারের সাথে।তার কিছুদিন পর সোনালী টার্গেট করে মোহন সরদারকে।কিন্তু এর ভিতর ব্যাবসার কাজে শাহানা পারভীনের সাথে মোহন সরদারের বিয়ে হয়ে যায়।সোনালী না পেরে মোহন সরদারকে তখনই সিডিউস করতে থাকে।একদিকে শাহানা পারভীন প্রেগনেন্ট হয়ে তার কিছু মাস পর সোনালী প্রেগনেন্ট হয়।মোহন সরদারের কথামত মেয়ে সন্তান না হওয়ায় সোনালী বাচ্চা বদল করে।রুদ্রের বাবা মা মিস্টার আহান আর মিসেস অবনি দিন রাত এক করে চেষ্টা করতেন রুদ্রকে নিজেদের কাছে আনতে।সোনালী তাদের ভয় দেখাতো।রুদ্রের ক্ষতি করে দিবে বলে।

যখনই মাহমুদ সরদার বা মোহন সরদারের কাছে এনারা আসার চেষ্টা করত সোনালী খোঁজ পেয়ে যেত।মাহমুদ সরদারের আর মোহন সরদারের পিছনেও লোক লাগিয়ে রাখে সোনালী।এভাবে চলতে চলতে রুদ্র বড় হতে থাকে।মায়া আর রুদ্র কয়েক মাসের ছোট বড়।মায়ার জন্মের কিছু মাস পরে রুদ্রের জন্ম হয়।সোনালী কিছুদিন রুদ্রকে নিয়ে আলাদা থাকতো।মোহন সরদার তার ব্যাবসার কথা বলে সোনালীকে বিয়ে করে অন্য বাসায় রেখে দেয়।অন্যদিকে মালিনী চেষ্টা করে বিভান আর সোনালীর মুখোশ উন্মোচন করতে।কিন্তু সোনালীর মুখোশ উন্মোচন না হয়ে মারা গেলো রাজের নানু আর দাদু।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মালিনী এই ঘটনার পর আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়।মানিকের কথা ভেবে চুপ হয়ে যায় সে।মানতে থাকে সোনালীর সকল আদেশ নিষেধ।এর পরে মায়া যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে তখন সোনালীর মনে হতে থাকে এরা কাজের কাজ কিছুই করতে পারবে না।অন্তত শাহানা পারভীন আর মায়াকে ওই বাড়ি থেকে বের করলে সে এই বাড়িতে আসতে পারবে।মোহন সরদার তার বাবার কথা ভেবে ভয়তে চুপ থাকতেন।কারণ তখনও ব্যাবসার অংশ তিনি ভাগে পাননি।মালিনী যখন তার বাবা আর শ্বশুরকে(রাজের নানু আর দাদু)সব বলে দেয় তখন বিভান ওদের খুন করে। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় সোনালী।রাজের দাদু মারা যাওয়ার পর পরই সোনালী রীতিমত রুদ্রকে নিয়ে মোহন সরদারের কাছে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে।

যার ফলে মোহন সরদার বাধ্য হয়ে পুরো পরিবারের সামনে সোনালীকে আনে।বাবা মারা যাওয়ায় এখন আর তার ভয়ের কিছু নেই।শাহানা পারভীন ওই বাসা থেকে চলে এসেছে এই খবর পেয়ে যায় মিস্টার আহান।তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে খবর দেন শাহানা পারভীনকে।শাহানা পারভীন সেই দিনই চলে আসেন ঢাকায়।মায়ার বয়সী মৌকে দেখে শাহানা পারভীনের অন্তর আত্তা কেপে ওঠে।বাকি সবার কথা বাদ কিন্তু নিজের পেটে যাকে নয় মাস রেখেছে যার দ্বারা মাতৃত্বের অনুভব সোনালী পেয়েছে সে কিভাবে এই বাচ্চাকে ফেলে দেয়।ভেবেই শাহানা পারভীন কান্না করে দেন।মৌকে জড়িয়ে ধরে শাহানা পারভীন বলেন,”আমি একে মানুষ করব।আমার মায়ার মত করে ওকে প্রতিষ্ঠিত করব।আজ থেকে আমার দুই মেয়ে।ওই মোহন সরদার আর সোনালীর কর্মের বদলা নিবে আমার দুই মেয়ে।”

ছোট মৌ তখন শাহানা পারভীনের আদর পেয়ে খুশি হয়।ছোট হলেও মৌ তখন জেনে যায় তাকে তার মা ছেড়ে দিয়েছে।শাহানা পারভীন সবসময় সত্যি কথা বলেই মৌকে বড় করেছে।কিন্তু মৌ যে মোহন সরদারের আসল মেয়ে এটা গ্রামের কাউকে বলে না।সবাইকে বলতো মৌকে তিনি দত্তক নিয়েছেন।মৌ প্রথম দিকে কষ্ট পেলেও শাহানা পারভীন যখন মায়া ও মৌ দুইজনকে একসাথে আদর যত্ন করত তখন তফাৎ খুঁজে পেতো না।মৌ আস্তে আস্তে বুঝতে পারে শাহানা পারভীন যা করছে তার পরিচয় গোপন রাখতে করছে।অন্যদিকে শাহানা পারভীন তার বাবার পরিচিত ডাক্তার দিয়ে সাহায্য করে মিস্টার আহান আর মিসেস অবনীকে।

মাহমুদ সরদারের কাছেও মৌয়ের বিষয় বলে না শাহানা পারভীন।কারণ তার ভাষ্যমতে এখন সরদার বাড়িতে রুদ্র ও মৌয়ের বিষয় না জানানো মঙ্গল।এই সোনালী খুব ভয়ংকর।যে একটু আচ পেলে ক্ষতি করে দিবে সবার।তাই মাহমুদ সরদার এই বিষয় কিছু জানতে পারেন না।তিনিও জানতেন মৌ আশ্রম থেকে দত্তক নেওয়া।শাহানা পারভীনের ডাক্তার যখন প্রমাণ জোগাড় করে পুলিশ দিয়ে সোনালীর থেকে ঘুষ নেওয়া ডাক্তারকে ধরে নেয় ঠিক তখন সোনালীর নার্স সোনালীকে সবকিছু গোপনে বলে দেয়।

সব জানতে পেরে সোনালী তার বড় বোনকে খুন করে।কারণ সেই সবকিছু আড়ালে জানিয়ে দিতো।তারপর দ্রুত রুদ্রকে পাঠিয়ে দেয় লন্ডনে।এদিকে মিস্টার আহানের বাসায় মাঝরাতে নিজের দলবল নিয়ে আসে সোনালী।ঘুমন্ত আদ্র তখন কিছুই বুঝতে পারে না।গুলির শব্দ পেয়ে আদ্রর ঘুম ভেংগে যায়।ঘুম থেকে উঠে দৌড় দেয় আহান আর অবনীর ঘরে।ঘুমন্ত মিস্টার আহানের বুক বরাবর শুট করে সোনালী।গুলির শব্দে ঘুম ভেংগে যায় মিসেস অবনীর।মিস্টার আহান গুলির আঘাতে ধড়ফড়িয়ে ওঠে।বুকে ব্যাথা পেয়েও স্ত্রীর জন্য উঠে বসে।পাশে থাকা ফোন হাতে নিবে ঠিক তখনই সোনালী ওনার হাতে শুট করে দেয়।সোনালীর লোকজন মিলে ধরে রাখে মিস্টার আহান আর মিসেস অবনীকে।সোনালী বলে,”প্রমাণগুলো কোথায়?আমি যে মেয়ে আর ড্রাগ সাপ্লাই করি এগুলোর যে যে প্রমাণ তোরা পেয়েছিস সেগুলো দিয়ে দে।আর রুদ্রের কথা ভুলে যা।ও ভালো আছে।কিন্তু ততক্ষণে ভালো থাকবে যতক্ষণ ও আমার সন্তানের পরিচয়ে থাকবে।তাই ভালোয় ভালোয় বলছি প্রমাণ দিয়ে দে।”

মিস্টার আহানের একটাই কথা,”মরে গেলেও আমি প্রমাণ দিবো না।”
“কি মনে করিস তোরা?আমি মাত্র আমার বোনকেই খুন করে এসেছি। আর তোদের মারতে পারব না।প্রমাণ না পাই মেরে ফেলে আমি নিজেকে তো বাঁচাতে পারবো।”
কেউ কিছু বলার আগে মিসেস অবনীর নজরে আসে দরজার পাশে লুকিয়ে থাকা আদ্র।অদ্রকে দেখে মিসেস অবনী বলেন,”তাড়াতাড়ি পালা বাবা।এরা তোকে মেরে ফেলবে।তুই তোর বাবা মায়ের জন্য নিজের জীবন দিবি না।বরং তুই তোর ভাইকে এই নোংরা মহিলার থেকে আলাদা করবি।ওকে জানতে হবে ওর আসল পরিচয় কি।ও এই নরপশুদের সন্তান না এটা যেনো রুদ্র জানতে পারে।এই মহিলা নিজ স্বার্থে তার বোনকে খুন করেছে।এখন আমাদের মেরে ফেলবে।পালা বাবা পালা। তোর বাবা মায়ের দোহাই পালা।”

মায়ের কথামত পালাতে থাকে আদ্র।প্রথমে মাথা নাড়িয়ে না বলে।সে তার বাবা মাকে ছেড়ে যাবে না।কিন্তু রুদ্রের কথা মনে পরতেই আদ্র দৌড়ে পালায়।সোনালীর ইশারা পেয়ে ওর লোকেরা আদ্রর পিছনে ছুটে যায়।কিন্তু আদ্র অনেক দূরে রাস্তার মোরে এসে সাহায্যের জন্য লোকজন খুঁজতে থাকে।কাউকে না পেয়ে আদ্র যখন দেখে পিছনে সোনালীর লোকজন আসছে তখন আদ্র গাছের পিছনে লুকিয়ে যায়।এদিকে সোনালী যখন দেখে এরা কেউ প্রমাণগুলো দেবে না।তখন তার লোকদের বলে,”এই বাড়ির চারিদিকে কেরোসিন ঢেলে দে। বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিবি।”

বলেই বের হয় সোনালী।চারপাশে ভালোভাবে লক করে দেয়।জাতে করে মিস্টার আহান আর মিসেস অবনী পালাতে না পারে।যখন সবাই বের হয়ে যায় মিসেস অবনী কল করেন শাহানা পারভীনকে।ঘুমন্ত শাহানা পারভীন ফোনের শব্দ পেয়ে উঠে রিসিভ করে কল।ওপাশের কথাগুলো কাটা কাটা আসতে থাকে।কিন্তু সোনালীর ফোনে কিছু ছবি আসে মিস্টার আহানের ফোন থেকে।ঠিক তার পর পরই জোরে ব্লাস্ট হওয়ার শব্দ হয়।শাহানা পারভীন আতঙ্কে বলেন,”হেলো হেলো।কি হয়েছে?হেলো।”
কিন্তু কল কেটে যায়।মায়া আর মৌ উঠে পড়ে।মায়া জিজ্ঞাসা করে,”কি হয়েছে মা?”
শাহানা পারভীন মৌকে দেখে নেয় একবার।তারপর বলেন,”তোর আহান আংকেল আর অবনি আন্টির কিছু হয়েছে।কেমন বিকট শব্দ হলো।”

কান্না করে দেয় মৌ।ছোট থেকে ওনাদের বাবা মা বলে এসেছে।মায়া তখন মৌকে কোলে নিয়ে আদর করে বলে,”কান্না করে না বোন।ও মা চলো আমরা এখন ঢাকা যাই।”
কিছুটা চিন্তিত হয়ে শাহানা পারভীন বলেন,”কিন্তু এত রাতে কি উচিৎ হবে?”
“যদি কোনো বিপদ হয়।আমাদের সাহায্য লাগলে তখন? আর শিবচর থেকে ঢাকা তো বেশ দূরে।প্রায় ভোর হয়ে যাবে।”

শাহানা পারভীন কিছুক্ষণ ভেবে হাসিকে ডেকে মৌকে রেখে যায়।মায়া জেদ করে তাই মায়াকে নিয়ে যেতে হয়।অন্যদিকে মিসেস অবনী যখন শাহানা পারভীনের সাথে কথা বলে মিস্টার আহান তখন তার বাবা মাকে কল করে জানান।তারা কিছু না বুঝলেও এটা শিওর হন যে তার সন্তান বিপদে।তারাও বের হয়ে যায় বাসা থেকে।
চোখের সামনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে কান্নারত চোখে তাকিয়ে আছে আদ্র।একটু আগেই সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়েছে।জানালা দিয়ে হাত নাড়ছেন মিস্টার আহান আর মিসেস অবনী।কিন্তু কোনো লাভ নেই।কেউ বাঁচাতে পারবে না।কোনদিকে কাউকে না পেয়ে আদ্র নিজেই দৌড়ে যায় বাড়ির দিকে।বাবা মাকে পুড়ে যেতে দেখতে পারবে না সে।কিন্তু বাড়ির কিছুটা কাছে আসতেই সোনালী আর তার লোকেরা হাজির।একজন গার্ড বলে,”একে কি করব ম্যাম?”
শয়তানি হাসি হেসে সোনালী বলে,”এটাকে জীবিত রাখলে ক্ষতি।সোজা মা বাবার সাথে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।”
বলেই বন্দুক বের করে অদ্রকে শুট করে দেয়।আদ্র ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

সবাই ঢাকায় পৌঁছায় সকাল বেলা।মায়া আর শাহানা পারভীন বাড়ির এই দৃশ্য দেখে আতকে ওঠেন।আদ্রর দাদা দাদী এসে ছেলে বউমার শোকে কি করবে বুঝতে পারে না।অদ্রকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।বাড়িতে আগুন লাগায় প্রতিবেশীরা ছুটে আসে।অদ্রকে বাড়ির সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে পুলিশ কল করে।তারপর হসপিটালে নিয়ে যায়।

পোড়া বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে শাহানা পারভীন মায়া আর আদ্রর দাদা দাদী।ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে তারা।মায়া প্রথমে চোখ মুখ খিচে শাহানা পারভীনের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর সাহস করে তাকায় বাড়িটির দিকে।পুলিশ আছে ভিতরে।মর্গে থেকে লোক এসেছে।তারা মিস্টার আহান আর মিসেস অবনীর লাশ নিয়ে বাইরে রেখেছে।শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পুড়ে ছারখার।যেগুলো দেখে ওখানেই ভয়তে বমি করে মায়া।যে কেউই এগুলো সহ্য করতে পারবে না।শাহানা পারভীন মুখে আচল গুঁজে কান্না করে দেন।মায়াকে সামলাতে থাকেন তিনি।মিডিয়াতে ছড়িয়ে যায় মিস্টার আহান আর তার স্ত্রী সন্তান মারা গেছে।ধারণা করা হয়েছে সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে।এটা শাহানা পারভীন পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা নিউজ দেন।কারণ তিনি চান না সোনালী জানুক আদ্র বেচে আছে।

আদ্রর জ্ঞান ফিরতেই সে ছোটাছুটি করে।মা বাবার কাছে যাবে বলে। আদ্রর এমন ব্যবহার দেখে ভয় পেয়ে যায় আদ্রর দাদা দাদী।শাহানা পারভীন তখন আদ্রকে সামলায়।আদ্রর কাছে এসে শাহানা পারভীন বলেন,”মা বাবাকে যারা মেরে ফেলেছে তাদের শাস্তি দিতে চাও না তুমি?তোমার ভাইয়ের জন্য তোমার মা বাবা জীবন দিয়েছে।ওই নোংরা লোকদের কর্মের শাস্তি কি তুমি দিবে না?যাদের জন্য তুমি তোমার ভাই বাবা মা হারালে ওদেরকে কষ্ট দিবে না?”

শাহানা পারভীনের কথাগুলো শুনে আদ্র চুপ করে থাকে।কিছুক্ষণ ফোঁসফোঁস করে তারপর বলে,”আমি আমার ভাইকে ফিরিয়ে আনব।বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবো।”
আদ্রকে একটু শান্ত হতে দেখে শাহানা পারভীন আদ্রকে বালিশে শুইয়ে দেন।তারপর বলেন,”কিন্তু তোমার বাবা মায়ের মত ভুল করা যাবে না।সোনালীকে ঘায়েল করতে হলে আড়ালে আবডালে ওকে হারাতে হবে।তার আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে শক্ত পোক্ত পরিচয় করে নিতে হবে।ওই সোনালীর সমস্ত খারাপ কাজ একসাথে ফাঁস করতে হবে। দেখলেই তো আগে সোনালীর লোকদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে গিয়ে কত বড় ভুল হয়ে গেলো।”
শুয়ে থাকা আদ্র শাহানা পারভীনের দিকে তাকিয়ে বলে,”এখন আমাকে কি করতে হবে?”
“তুমি এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করো।তোমার ভাইকে আড়ালে আবডালে খুঁজে বের করো।তাকে তোমার বাবা মায়ের প্রতি হওয়া সমস্ত অন্যায়ের কথাগুলো বলো।”

“বলব আমি সব বলে দিবো ওকে।ও একটা বাজে মানুষের কাছে আছে।এগুলো ভাইকে জানাবো।”
“এই তো লক্ষী ছেলে।তোমার বাবা মা তোমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতো ওটা তোমাকে পূরণ করতে হবে।”
মিস্টার আহান ও মিসেস অবনীর ইচ্ছা ছিলো আদ্র ডাক্তার হবে আর রুদ্র বড় কোনো পুলিশ বা আর্মি।আদ্র লোকদের সেবা করবে আর রুদ্র আসামিদের বের করে ভালো মানুষদের জীবন রক্ষা করবে।তাই শাহানা পারভীনের কথায় রাজি হয় আদ্র।পিছন থেকে সব কথা শুনে নেয় মায়া।মায়ার মনে হতে থাকে তাহলে ঐ সোনালী খুব খারাপ।সে নিজের কাজ পূরণ করতে ভালো মানুষদের খুন করে।আদ্র আজ অনাথ হয়েছে কয়েকদিন আগে মায়া নিজেও অনাথ হয়ে যায়।বাবা না থাকার কারণে তাকেও কতজনের কথা শুনতে হয়।তাই মায়া নিজেকে নিজে প্রমিস করে,”আজ থেকে আমিও ওই মোহন সরদার আর সোনালীর ক্ষতি করব।ওদেরকে আমি ভালো থাকতে দিবো না।তার আগে আমিও ভালোভাবে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হবো।ওদের খারাপ কাজ আমি এক এক করে বের করব।”

এরপর থেকে আদ্র ওর দাদা দাদীর কাছে থাকতো।ইন্টার কমপ্লিট করে জানতে পারে রুদ্র লন্ডনে আছে।শাহানা পারভীন খোঁজ নিয়ে বলেছে।রুদ্রর খোঁজ শাহানা পারভীন পেয়ে যান মাহমুদ সরদারের কাছ থেকে।সেই ইনফরমেশন অদ্রকে দিতেই আদ্র বলে,”আমিও যাবো লন্ডনে।আমি ওখানকার মেডিকেলে পড়ব। আর ভাইকে খুজবো।তুমি আমাকে বলে দিবে ভাই কোন কলেজে পড়ে আর ভাইয়ের ছবি দিবে আমাকে।”

শাহানা পারভীন সব কিছু জেনে জেনে আদ্রকে বলে দেয়।এদিকে মায়া নিজের মতো পড়াশোনায় মন দেয়। আর মৌকে সব সময় সোনালীর বিষয়ে বলতে থাকে।মৌয়ের মনে সোনালীর প্রতি ঘৃণা জন্ম নিতে থাকে।মা বলতে ঘৃণা লাগে মৌয়ের এখন।একদিকে মৌকে নিয়ে মায়া জীবন পার করে অন্যদিকে আদ্র খুঁজে বেড়ায় রুদ্রকে। আর রাজ তার রাজনীতিতে আসার জন্য চেষ্টায় থাকে।রুদ্রের খোঁজ করতে করতে একদিন আদ্র জানতে পারে রুদ্র বারে যাওয়া আসা করে।এটা জেনে আদ্রর রাগ উঠে কিন্তু রুদ্রর গার্জিয়ান হিসেবে সোনালী যা করেছে তাতে রুদ্র এমন হবে এটা স্বাভাবিক।রুদ্রকে ফলো করে আদ্র একদিন বারে আসে। রুদ্রর আশেপাশে যখন কেউ ছিল না ওই সুযোগ পেয়ে আদ্র আসে রুদ্রের কাছে।তারপর সবকিছু প্রমাণ স্বরুপ বলতে থাকে।রুদ্র প্রথমে বিশ্বাস না করলেও আদ্র যখন সোনালীর থেকে প্রমাণের ছবিগুলো নিয়ে দেখায় তখন রুদ্র বিশ্বাস করে।

রুদ্র তখন ভেঙ্গে পরে।আদ্র সামলাতে থাকে রুদ্রকে।রুদ্র যখন জানতে পারল ওর বাবা মায়ের স্বপ্ন ওকে ভালো কোনো অফিসার বানানো তখন রুদ্র মন দিতে থাকে তার পড়াশোনায়। আর অভিনয় করে সোনালীর আদর্শ ছেলে হওয়ার।রুদ্র মনে মনে নিজের লক্ষ্যকে পূরণ করতে থাকে।অন্যদিকে সরদার বাড়িকে দেখায় সে হুবহু মোহন সরদারের মত হয়েছে।রুদ্র সবাইকে জানায় সে রাজের মত ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি।টেনেটুনে পাশ। আশাহত হতে থাকে মোহন সরদার।সোনালী যে কারণে রুদ্রকে নিয়ে সরদার বাড়িতে আসে রুদ্র তার উল্টো কাজটাই করে।সারাদিন পার্টি করা মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করা যেনো রুদ্রের নেশা।এমনটাই রুদ্র দেখাতো সোনালীকে।কিন্তু বারে রুদ্র যেতো কিছু আসামিকে ধরতে।যেটা হিয়ার চোখে অন্যভাবে প্রকাশ পায়।

রুদ্রের যেমন উদ্দেশ্য থাকে তার বাবা মায়ের খুনিকে নিজের হাতে শেষ করে দেওয়া ঠিক তেমন রুদ্র ভালোবাসে হিয়াকে।অন্যদিকে আদ্র লন্ডনেই থাকে আর ভালবাসতে থাকে তার প্রেয়সী সিয়াকে।আদ্র বাংলাদেশে আসেনা কারণ ততদিনে শাহানা পারভীনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।আদ্র চেয়েছিলো বাংলদেশে এসেই শাহানা পারভীনের কাছে আসবে। মায়ার ব্যাপারে বেশি একটা অবগত থাকে না আদ্র।কিন্তু রুদ্র মায়ার শোরুম উদ্বোধনের দিন মায়ার চোখ মুখে রহস্য দেখে মায়ার পিছনে স্পাই লাগায়।

অন্যদিকে মোহন সরদারের পিছনে স্পাই রুদ্রের লোক লাগাতে থাকে।এই সব ইনফরমেশন আদ্রকে দিতে থাকে রুদ্র।আদ্র যখন জানতে পারে মায়া মোহন সরদারের কোম্পানির সমস্ত খাবারে পয়জন মিশিয়ে দেয় তখন আদ্রর সন্দেহ হয়।মায়ার সম্পর্কে খোজ নিয়ে আদ্র কনফার্ম হয় এই সেই মায়া।শাহানা পারভীনের মেয়ে।চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর রুদ্র যখন মায়ার সাথে কথা বলতে যাবে তখন রাজ বিয়ে করে বাড়িতে আনে মায়াকে।রুদ্র তখন সুযোগ বুঝে মায়াকে সবকিছু বলে দেয়।মায়া আর রুদ্র প্ল্যান করতে থাকে কিভাবে মোহন সরদারকে ডাউন করা যায়। আর সোনালীর সমস্ত গ্যাং এক করা যায়।রুদ্র সব সময় তার লোক দিয়ে খোঁজ রাখতো সোনালী কোথায় যায় কার সাথে কথা বলে অন্যদিকে মোহন সরদারের এক্সিডেন্ট করায় আদ্র।আয়রাকে দিয়ে মোহন সরদারকে আরো ডেমেজ করে দেয়।

বর্তমান,
অতীতের কথাগুলো শুনে ভেংগে পড়ে মিলি।সোনালীকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ছিঃ মা ছিঃ।তুমি একজন নিকৃষ্ট মহিলা।এরা যা করেছে একদম ঠিক করেছে।আজ এদের জায়গায় আমি হলে আমিও এমন করতাম।”
সোনালীর মধ্যে কোনো অনুতপ্ত দেখা যায় না।সে এখনও সেই একই রূপে আছে।বিভান সবার পিছনে যেয়ে কাউকে কল করতে যায়।ফোন নিয়ে কানে ধরতেই বিভানের হাত ছিদ্র করে গুলি চলে যায়।সবাই পাশে তাকিয়ে দেখে রাজ শুট করেছে বিভানকে।মৃদু হেসে রাজ বলে,”আজ তোমার খেলা চলছে না মামা।আমার বউ মাঠে নেমেছে আজ।তাকে হারতে দেই কিভাবে বলো!আমি আবার বউ ছাড়া থাকতে পারি না।তাই তো বউয়ের শত্রুদের আমি জিততে দেই না।তোমাকে আমার বউয়ের হাতেই শেষ হতে হবে মামা।”
বিভান তার হাত ধরে ওখানে বসে পড়ে।হাত থেকে রক্ত পড়ছে।মৌ এসে পিয়াশের পা বেঁধে দেয়।মায়া একটি আংটি নিয়ে সোনালীর সামনে দাঁড়ায়।সোনালীকে উদ্দেশ্য করে বলে,”এই আংটি আপনার খুব পছন্দের তাই না মিসেস সোনালী?”

সোনালী চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।মায়া রহস্যের হাসি দিয়ে বলে,”এটা আসলে আমার শাশু মায়ের আংটি না আমি খুব ভালো করেই জানতাম।কেনো জানেন?কারণ এই আংটির সাইজ দেখে।আমি যখন মামীকে এই আংটির সাথে দেখি তখন খুব ভালো করে দেখি আংটির সাথে সুতো বাধা।আংটিতে সুতো বাধা থাকে কারণ আঙুলের সাথে ফিট হওয়ার জন্য। আর আংটি যে উনি আগে পড়তেন না এটা আমি আরো শিওর হই তো সেই রাতে যে রাতে আপনি গহনার লকার থেকে এই আংটি নিয়ে নিজের আঙ্গুলে দেন। আর পরে ফোন করে কাউকে বলেন যে আংটি নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে আপনার লোক যাবে।এরপর যখন মামী আপনাদের কথামত আমাকে বলে এটা আমার শাশু মায়ের আংটি আপনি ভেবে নেন আমি ক্ষিপ্ত হয়েছি।একচুয়ালি আপনি যে চান আমি আমার সন্দেহের লিস্টে আমার শাশু মা আর মামীকে রাখি। আর তারপর আমিও কোনো ব্ল্যান্ডার করে দিবো।এই যেমন আমার শাশু মাকে মেরে ফেলা তারপর মন্ত্রী মশাই।একেক করে সমস্ত নিরপরাধ ব্যাক্তিকে আমি মারবো এটাই তো আপনি চেয়েছেন।কিন্তু পারলেন না।সো সেড!”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৭

সোনালী এবার নিজের হাত দুটো মায়ার গলায় চেপে ধরে।শরীরের সমস্ত শক্তি এখন মায়ার গলায় প্রয়োগ করছে সোনালী।মায়া মুখে ভিলেনি হাসি দিয়ে বলে,”এভাবে খুন করতে পারবেন না আমাকে।বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছেন।”
বলতে না বলতেই মায়া সোনালীর গলায় আঘাত করে।হাতের কনুই দিয়ে গলা বরাবর আঘাত করায় মাথা ঘুরে গেল সোনালীর।কিছুটা পিছিয়ে যায় সে।ঠিক তখনই সোনালীর পায়ে শুট করে দেয় রাজ।মায়াকে ফ্লাইং কিস দেখিয়ে বলে,”আমার বউয়ের গলা আমি এখনও ঠিকভাবে স্পর্শ করতে পারলাম না তুই দুদিনের ফকিন্নি সোজা টিপে ধরলি!তোকে তো রিমান্ডে পাঠানো উচিত।ফকিন্নির ঘরে ফকিন্নি এমনিতেই কাজ না পেয়ে নারী পাচার করে পেট চালাস আবার আমার বউকে মারতে আসিস।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৯