মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৯

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৯
ইশরাত জাহান

রাজের কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয় রুদ্র।মাহমুদ সরদার রাজের পাশে এসে বলেন,”মুখে লাগাম দিতে শিখনী তুমি?”
রাজ তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”মুখে লাগাম দিলে সংসার করবো কিভাবে বাবা?”
“শাট আপ।”
“এই তুমি আর আমার বউ কি শুরু করেছো বলোতো!সব সময় সেই এক ইংলিশ।শাট আপ।এটা ছাড়া কি তোমরা শশুর বউমা কোনো ইংলিশ শিখতে পারো নি?”
মায়া আর মাহমুদ সরদার একসাথে বলে ওঠে,”শাট আপ।”
রাজ দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,”নেও শশুর বউমা এখন কম্পিটিশন শুরু।ভাই রুদ্র এখন তোমার লোক ডাকো।এদের নিয়ে যেতে হবে তো।”
রুদ্র মাথা নাড়িয়ে বলে,”ওরা এসে গেছে।”
বলেই ইশারা করে দরজার দিকে।সবাই দেখলো সেদিকে। জেসিকে উদ্দেশ্য করে রুদ্র বলে,”মিস জেসি।”
“ইয়েস স্যার?”

“নতুন কেস ফাইল কর।ওয়ান ডিউটি অফিসারের সামনে নিরপরাধ ব্যাক্তির গায়ে হাত তোলা।”
সোনালী এবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাবা রুদ্র। আর যাই হোক আমি তো তোকে মানুষ করেছি।আমার সন্তান হিসেবে তোকেই সম্পত্তি দিতাম আমি।পাগলের মত করিস না।আমি যা পাবো তার হাফ শেয়ার তুই পাবি।”
ফিচেল হেসে রুদ্র বলে,”ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি যে পজিশনে আছি এটা নিম্ন কোনো পদ না। আর আমার বাবা দাদারা কোনো ফকির না যে আপনার সম্পত্তির দিকে তাকাতে হবে।আমি এমনিতেই এনাফ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পুলিশ হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেয় বিভান আর সোনালীকে।মহিলা পুলিশ এসে সোনালীকে ধরে আর পুরুষ পুরুষ বিভানকে।সবাই তাকিয়ে দেখছে দুজন আসামিকে যেতে।রাজ্যের হাসি বিরাজ করছে সবার মুখে।ঠিক তখনই মহিলা পুলিশের পায়ে নিজের হিল পরা পা দিয়ে জোরে আঘাত করে সোনালী।মহিলাটি আঘাত পেয়ে ঝুঁকে বসে।এই সুযোগে কোমড়ে থাকা বন্দুক বের করে সোজা রাজের দিকে শুট করে দেয় সোনালী।সোনালীর এমন কাজে সবাই দিশেহারা হয়ে যায়।হঠাৎ এমন কাজ করবে কেউ বুঝতে পারেনি।ভাগ্য বশত গুলি রাজের বাম হাতের পাশ দিয়ে যায়।সবাই এগিয়ে আসে রাজের কাছে।মায়া দেখছে রাজের হাতের রক্ত।রাজের হাতের রক্ত যেনো মায়ার মাথায় চেপে বসেছে।হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রক্তচক্ষু নিয়ে রুদ্রকে বলে,”ওয়ান ডিউটি অফিসারের সামনে কি একজন নারী তার আসামির সাথে হিসাব মিটাতে পারে মিস্টার রুদ্র?”

রুদ্র কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দেয়।মায়া বড় বড় কদম ফেলে এগিয়ে গেলো সোনালীর দিকে।চোখ দিয়ে ইশারা করতেই পাশের কর্মীরা সরে দাঁড়ায়।মায়া তার উচু হিল সহ পা উচু করে সোজা লাথি মারে সোনালীর বুকের উপর।মুখ থুবড়ে সোনালী পড়ে যায় মাটিতে।সোনালীর কাছে এগিয়ে এসে মায়া হাঁটু গেঁড়ে নিচু হয়ে বসে।তারপর সোনালীর চুলের মুঠি ধরে দাড় করিয়ে বলে,”আমার স্বামীর গায়ে একটা আছর আমি কাউকে লাগতে দেই না। আর তুই তার হাতে ক্ষত বানিয়ে দিলি।তোকে তো এখন ভোগ করতেই হবে।”

বলেই মাটি থেকে বন্দুক উঠিয়ে নেয় মায়া।সোনালীর হাত থেকে অনেক আগেই পড়ে যায় বন্দুক।সেটা উঠিয়ে মায়া শুট করে দেয় সোনালীর হাতে।সোনালী ছিটকে যায়।মায়া একবার শুট করে সোনালীর চোখের দিকে ভয়ানক দৃষ্টি রেখে আবারও শুট করতে থাকে।পরপর তিন চারটা শুট করে মায়া থেমে যায়।রুদ্রের ইশারা পেয়ে জেসি এই বিষয়টা কেস থেকে স্কিপ করে দেয়।সোনালীর বিষয়ে রুদ্র উপর মহল থেকে শুট করার পারমিশন পেয়েছিলো।শুধু সোনালী না বিভান ও যে যে আসামী এই কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে ওয়ান ডিউটি থাকা কালীন শুট করা যাবে।মায়াকে থেমে যেতে দেখে রুদ্র ইশারা করে পুলিশদের।

ওরা সোনালী আর বিভানকে নিয়ে যাবে ঠিক তখন বিভান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় পাশের পুলিশকে।তারপর তার কাছে থাকা বন্দুক মায়ার দিকে তাক করে বলে,”এই মায়া না থাকলে আজ আমার দিন খুব ভালো মতো যেতো। মায়ার জন্য আমি আমার সব হারিয়েছি।তোকে তো আমি ছাড়বো না।”

কথাগুলো বলে যেই শুট করে মায়ার দিকে সবাই দৌড়ে আসতে নেয়।বিশেষ করে রাজ।কিন্তু সবাই যেনো ওখানেই স্তব্ধ হয়ে যায়।সবাইকে অবাক করে দিয়ে হুইল চেয়ার টেনে মায়ার সামনে এতগুলো বছর পর ঢাল হয়ে আসে মোহন সরদার।মায়া এখনও হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকার কারণে মোহন সরদার মায়ার সামনে আসায় গুলি সোজা এসে লাগে মোহন সরদারের কপাল বরাবর।কপাল ছিদ্র হয়ে রক্ত পড়ছে।মায়া মূর্তির মত বসে দেখছে।সব যেনো চোখের পলকে হয়ে গেল।রুদ্র এবার বিভানের কাছে আসে আর জেসি আসে সোনালীর কাছে।বিভাবের হাতে লাথি মেরে বন্দুক ফেলে দেয় রুদ্র।ওদেরকে ভালো করে দেখে নেয় আর কোনো অস্ত্র আছে কি না।ফলস্বরূপ কোনো অস্ত্র পায় না ওরা।

পুলিশ সোনালীকে ওঠানোর চেষ্টায় থাকে সবার চোখ তখন মোহন সরদারের দিকে।মোহন সরদার মায়া আর মৌয়ের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।আফসোস হলেও এটা সত্যি যে মায়া আর মৌয়ের চোখে এক ফোঁটা ভালোবাসা দেখা গেলো না।মিলি কান্না করছে।ও দৌড়ে আসে মোহন সরদারের কাছে।ঠিক তখনই আরো একটা বন্দুকের শব্দ আসে সবার কানে।সবাই পাশে তাকিয়ে দেখে সোনালী নিজেকে নিজের মাথায় শুট করেছে।যে মহিলা পুলিশ সোনালীকে উঠাতে চেয়েছিলো তার সাথে থাকা বন্দুক চোখের আড়ালে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ সহ সোনালী নিজেকে শুট করে।হালকা হেসে সোনালী বলে,”হেরে যখন গেছি সোজা মৃত্যুকে গ্রহণ করে নেই।তিলে তিলে মরার চেয়ে একেবারে মৃত্যু ভালো।”

মিলি মুখে ওড়না চেপে মাটিতে বসে পড়ে।একদিনে বাবা আরেকদিকে মাকে একই অবস্থায় দেখে তার সহ্য হয় না।ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরে আছে রাজ।আশ্রম কর্মী একটি মেডিসিন দেয় রাজের হাতে।হাতের কোনা দিয়ে গুলি চলে যায় তাই তেমন কোনো সমস্যা নেই।মোহন সরদার দুর্বল হয়ে পড়েছে। শ্বাস টানছে জোরে জোরে।মায়া তার দিকে তাকিয়ে বলে,”এই মায়া নিজেকে রক্ষা করতে জানে মোহন সরদার।তার বাবার দরকার হয় না।যে সময়টায় দরকার ছিল তখন যখন বাবার দায়িত্ব পালন করেননি আজ না করলেও পারতেন।”

মোহন সরদার হাঁফাতে হাঁফাতে মায়ার দিকে মলিন দৃষ্টি দিয়ে বলে,”পৃথিবীতে নিকৃষ্ঠ বাবা হয়ে যদি কেউ থাকে তাদের মধ্যে আমি একজন।হাজার শাস্তি ফিকে পড়ে যাবে এই অন্যায়কারী বাবার অতীতের কর্মের জন্য।তাই ভাবলাম মৃত্যুকে গ্রহণ করে মুক্তি দেই আমার মোহ মাকে।”
দুই ঠোঁট একসাথে করে অন্যদিকে ঘুরে দাড়ালো মায়া।চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।কিন্তু চোখ বেয়ে পানি আসছে না।এই চোখের পানি অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে।বৃষ্টি যেমন আকাশে দীর্ঘ সময় পর থেমে যায়।চোখের পানিও তেমন আস্তে আস্তে করে থেমে যায়।মোহন সরদার এখনও মায়ার দিকে তাকিয়ে।মায়াকে উদ্দেশ্য করে মোহন সরদার বলে,”একবার বাবা বলে ডাকবি মোহ মা?”

মায়া কোনো কথা বলে না।কিছুক্ষণ চুপ থাকে।শাহানা পারভীন এসে দাঁড়ায় মায়ার কাছে।মায়ার মাথায় হাত রাখে শাহানা পারভীন।মাকে দেখে মায়া বলে,”আপনার প্রতি বাবার অনুভূতি আমি পাই না।জোর করে আমাকে দিয়ে কোনো কিছু করানো সম্ভব না।আমি যার প্রতি টান অনুভব করি না তাকে হাজার চাইলেও আপন করতে পারব না।হোক সে আমার রক্তের কেউ।”
মোহন সরদারের বুক ফেটে যাচ্ছে।তিনি মৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”অন্তত তুই আমাকে বাবা বল।যাত্রা পথে আপন সন্তানের থেকে বাবা ডাক শুনতে চাই।”

মৌ কিছু বলতে পারছে না।অনেক কষ্টে ও ওর পেটের দিকে তাকালো।ওখানে একজন বেড়ে উঠছে।শাহানা পারভীনের দিকে তাকাতেই শাহানা পারভীন মাথা নাড়িয়ে কিছু বুঝিয়ে দিলেন।মৌ চোখের পানি মুছে বলে,”বাবা।”
মায়া চোখ বন্ধ করে নেয়।শাহানা পারভীন এবার মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”তুই কেনো বলছিস না?”
চোখ বন্ধ রেখেই মায়া বলে,”আমার দ্বারা সম্ভব না মা।”
“একজন মৃত্যু পথযাত্রী ব্যাক্তির ইচ্ছা পূরণ করবি না মোহ মা?”(মোহন সরদার বলে)

মায়া বলে ওঠে,”আপনাকে হাসপাতালে নেওয়া হবে। ডক্টর আদ্র কল করেছেন তো।এম্বুলেন্স আসবে এখন।”
মায়ার কথাতে প্রকাশ পায় সেও মোহন সরদারকে মারতে চায় না।কিন্তু বাঁচিয়ে রেখে তার পাপের শাস্তি দিতে চায়।মৃদু হাসলো মোহন সরদার।ভাইয়ের পাশে বসে আছেন মাহমুদ সরদার।যতই হোক ভাই তো তার আপন।অপেক্ষায় আছে এম্বুলেন্স আসার।কিন্তু আজকে যেনো এম্বুলেন্স আসতেও দেরি করছে।করারই কথা।আশ্রম থেকে হাসপাতাল তো দূরে।এদিকে রাজ রুদ্র আদ্র বাইকে করে আসে আর মায়ার গাড়ি চলে গেছে।মায়া কল করলে তারপর আসবে।আশেপাশে মায়ার ড্রাইভার থাকা মানে তাদের জীবন ঝুঁকিতে তাই।সিয়া আর শাহানা পারভীন এনারা নিজেরাও ভাড়া করা অটোতে এসেছিলো।আজকেই যেনো যত বিপদ বেড়ে গেলো।কোনো উপায় না পেয়ে মাহমুদ সরদার বলেন,”ভাইকে নিয়ে বাইকে উঠো রুদ্র।কোনো রকমে এগোতে থাকি।”

মোহন সরদার বাধা দিতে থাকে।হাত দিয়ে থামিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,”কোনো কিছুতে লাভ নেই।আমার মাথার গভীরে যন্ত্রণা বেড়ে গেছে।আমি বুঝতে পারছি আমি বাঁচব না।দুই এক মিনিটের জন্য কেনো দৌড়া দৌড়ি করে সময় নষ্ট করবে?অন্তত তোমাদের কাছে থেকে সময়টা পার করি।”
শাহানা পারভীন এবার মায়াকে বলে ওঠে,”এভাবে মুখ ফিরিয়ে রাখিস না মা। হ্যাঁ আমিই চেয়েছিলাম তুই এই লোককে শাস্তি দে।কিন্তু একজন মৃত যাত্রী ব্যাক্তির ইচ্ছা পূরণ কর।আজ সে অন্তত যেতে যেতে পথে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। আর এমন ব্যক্তিকে এতটাও অবজ্ঞা করতে নেই।খোদা মেনে নিবে না যে।”

এবার চোখ খোলে মায়া।চোখ খুলে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা তাকালো শাহানা পারভীনের দিকে।শাহানা পারভীনকে দেখতে থাকে মায়া।সেই কালো চামড়ার নারীটি।যাকে শুধু সে একাই ভালোবাসে।মা বলেই হয়তো নারীর টান অনুভব করে ভালোবাসার জন্ম।কালো ব্যক্তিতে রক্তের মানুষ ছাড়া কেউ ভালোবাসে না।লোক দেখানো কিছু মানুষ থাকে।দুদিন পর তাদেরকেও পাওয়া যায় না।শাহানা পারভীনের দিকে তাকিয়ে মায়া বলে,”বাবা ডাকটা কি এতই সহজ মা?হয়তো সহজ কিন্তু আমার জন্য তো কঠিন।আমি তো বাবা ডাকতে পারছি না।বাবা ডাকটা আমাকে বোবা করে দিয়েছে।আসে না তার জন্য এই ডাক।আমার কি দোষ?আমার ইমোশন তো উনিই খুন করে দিয়েছে আমার ছোটবেলায়।”

বলেই শাহানা পারভীনকে জড়িয়ে ধরে মায়া।শাহানা পারভীনের বুকে মুখ গুঁজে কান্নাগুলো লুকাতে থাকে।মায়া তার কান্না কাউকে দেখাতে চায় না।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে শাহানা পারভীন বলে,”এখন তো দুঃখের দিন শেষ মা।সুখ তো তুই নিজে আদায় করেছিস।সে নিকৃষ্ট থাকলে আমি তোকে বলতে বলতাম না।আমার জন্য তার মধ্যে যাই থাকুক তোদের জন্য এখন সে অনুতপ্ত।মায়ের কথা শোন মায়া।মনের বাইরে যেয়ে একবার বলে দে বাবা।অন্তত সে এটা বুঝুক আমরা এতটাও নিকৃষ্ঠ না।”
মায়া শাহানা পারভীনের চোখের দিকে দেখে মোহন সরদারকে দেখে।মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে কোনো অনুভূতি হলো না মায়ার।শুধু তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভেবে নিবেন না আমি আপনাকে মন থেকে বলছি।আমার মা আদেশ করেছে তাই বলছি শুধু।বাবা।”

মায়ার মুখে বাবা ডাক শুনে আলতো হাসলো মোহন সরদার।কান্না করে দেন মাহমুদ সরদার।ভাইকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ভাই কতটা কষ্ট পাচ্ছে।তবে বেচে থাকতে মায়া আর শাহানা পারভীন যা পেয়েছে তার কাছে এগুলো কিছুই না।মানুষ জন্মানোর সাথে সাথে মৃত্যুকে ভাগ্যের সাথে লিখে নিয়ে আসে।তার মৃত্যুটাও তো তার ভাগ্যে রাখা আছে।মানুষ মরণশীল।মোহন সরদারের শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।সোনালী নিজেও এখন বিদায় নিয়েছে।তার রুহু ঘুরছে শুধু চারদিকে।কিন্তু তার শরীর পড়ে আছে মাটিতে।মিলি তার বাবা মায়ের দুই লাশের মাঝে মাটিতে বসে কান্না করছে।এম্বুলেন্স এসেছে।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন।মায়া সেদিকে তাকিয়ে বলে,”এটাকেই বলে ভাগ্য।কিছু প্রতিশোধ মানুষ নিজ কর্মেও পেয়ে থাকে।আমরা হাজার প্ল্যান করলেও খোদার ইচ্ছার বাইরে যেতে পারি না।”

সবাই নীরব দর্শক হয়ে বসে আছে।চোখ ভিজে এসেছে মাহমুদ সরদারের।রুদ্র নিজেও কান্নারত চোখে দেখতে থাকে মোহন সরদারকে।গালাগালি করলেও তার উন্নতির জন্য করতো।লোকটা যেমনই হোক রুদ্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে চাইতো।মিলি বলে ওঠে,”আমার বাবা মা একদিনে সবাই চলে গেলো।আমি অনাথ হয়ে গেলাম।আজকেই তাদের সব সত্যি জানতে পারলাম আর আজকেই তারা এভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো।”
হাউমাউ কান্না করছে মিলি।তারেক এসে মিলির পাশে বসে পড়ল।রাজ এসে দাড়ালো মায়ার পাশে।মায়ার হাতের সাথে নিজের ডান হাত রাখলো রাজ।মায়া তাকালো রাজের দিকে।মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তোলে মায়া।রাজ চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো,”আমি আছি তোমার কাছে।সবসময়ের জন্য আমার মায়াবতী।”

শাহানা পারভীন একটু পিছনে চলে যান।কষ্ট তার নিজের মধ্যেও হচ্ছে।সে যে কারণেই হোক।আজ সুখের মাঝে কিছু দুঃখের ছোয়া দেখা দিলো।বিভানকে নিয়ে চলে গেছে পুলিশ।রুদ্র সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,”লাশগুলোকে নিয়ে যেতে হবে।এভাবে বসে থেকে সময় নষ্ট না করাই ভালো।আশ্রমের বাচ্চারা ঘাবড়ে যাচ্ছে।”
মায়া দেখলো বাচ্চাগুলোকে। ছোট হাসির দিকেও মায়ার চোখ গেলো।রুদ্রের কথাকে সম্মতি দিয়ে মায়া বলে,”বাচ্চারা আসলেই ভয় পেয়েছে খুব।যেটা হবার তাতো হয়েছে।এখন লাশ দুটো এম্বুলেন্স করে নিয়ে যেতে হবে।”

সবাই আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।মায়া এসে মিলিকে সামলাচ্ছে।সিয়া সামলাতে থাকে মৌকে।মৌকে এখন অতিরিক্ত চাপে রাখা যাবে না।রুদ্র তার লোককে কল দিয়ে বলে,”হিয়াপাখিকে ছেড়ে দেও। আর সেফলি সরদার বাড়িতে নিয়ে আসো।”
ওপাশ থেকে বলে,”ওকে বস।”

মাত্র বাসায় এসে পৌঁছালো হিয়া।এসেই দুটো লাশ দেখে অবাক হয়।আশেপাশে সবাই নিরব হয়ে আছে।হিয়া দৌড়ে যায় তার বাবার কাছে।বলে,”কি হয়েছিলো বাবা।ভাবী কিছু করেছে?”
মালিনী এসে হিয়াকে বলে,”না রে মা তোর ভাবী কিছু করেনি।”
মালিনীকে দেখে অবাক হয়ে হিয়া বলে,”তুমি সুস্থ আছো মা।আমি একটু শান্তি পেলাম।কিন্তু তোমাকে যে ভাবী মেরেছিলো।”
“ওগুলো নাটক ছিলো।সে অনেক ব্যাপার। তোর কাকা কাকি মারা গেছে।তাদের জন্য দোয়া কর।ওসব কথা পরে হবে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৮

হিয়া আশেপাশে তাকালো।বাবা মায়ের মৃত্যুতে রুদ্রকে দেখতে পাচ্ছে না।রুদ্রকে কি তাহলে কেউ জানায়নি।আসলে হিয়া জানে না রুদ্র কি করে।এখন রুদ্র তার অফিসে।বিভানকে নিয়ে ব্যস্ত আছে সে।এই অবস্থায় কেউ এখন রুদ্র সম্পর্কে হিয়াকে কিছু বলতে পারবে না।তাই হিয়া চুপ করে আছে।মনে মনে রুদ্রর প্রতি রাগ বাড়ছে হিয়ার।বাকি সব কিছু বাদ বাবা মায়ের মৃত্যুতে তার নষ্ট পুরুষ নেই।এটা যেনো রুদ্রর প্রতি ঘৃণা আরো বাড়িয়ে দিলো।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬০