মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬০
ইশরাত জাহান
মোহন সরদারকে দাফন করে এসেছে রাজ ও মাহমুদ সরদার।বাড়ির অবস্থা এখন নিরব।মাহমুদ সরদার ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন।মিলি কান্না করছে তার বাবা মা দুজনেই আজ মারা গেছে।তারেক সামলাতে থাকে মিলিকে।মৌ নিজেও এখন কান্না করছে।মোহন সরদারের মৃত্যুর সময় বাবা বলে সম্বোধন করা হয়।জীবনে এই প্রথম ও শেষ সে তার বাবাকে বাবা বলে ডেকেছে।মাকে তো কাছেই পেলো না।অবশ্য মা যখন পরিচয় জানতে পারে তখন তো তার মধ্যে অনুতপ্ত দেখা যায় না।
এই যুদ্ধে হেরে গিয়ে সোনালী নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।কারাগারে থাকার চেয়ে সে নিজেকে একেবারে শেষ করে দিলো।রাজ ব্যাগ প্যাক করছে।তাকে কাজের জন্য ঢাকার বাইরে যেতে হবে।মায়া সেগুলো দেখতে থাকে।রাজকে ব্যাগ গোছানোতে সাহায্য করতে থাকে মায়া।রাজ বাইরে যেতে চায়নি।মায়ার কথায় সে রাজি হয়।মায়ার ভাষ্যমতে,”তুমি এখন দেশের রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছো।তোমার মায়াবতী ছাড়াও আরো এক দুনিয়া আছে তোমার।আর ওটা তোমার দেশের অসহায় জনগণ। এদেরকেও তো রক্ষা করতে হবে।তুমি কাল খুলনায় যাও।আমি এদিকটা সামলাতে পারবো।তোমার মায়াবতী কিন্তু ভীতু না।সে একজন বাঘিনী।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মায়ার কোমর ধরে টেনে রাজ নিজের কাছে এনে বলে,”আমি আমার বাঘিনীকে খুব ভালো করেই জানি।বাঘিনীর এক একটা গর্জন যে এই সরদার বাড়িকে কাঁপিয়ে তোলে । এটাই তো তার আস্ত এক প্রমাণ।আমার কথা এটা না।কাকা মারা গেছে।আমাদের বংশীয় ব্যবসাটা আবার ওপেন করতে হবে।সাথে মায়ের ফর্মুলা সপরিবারে একসাথে পাবলিক করতে হবে।আদ্র আসবে সিয়ার জন্য প্রস্তাব নিয়ে।এখন এই সময়টাতে কিভাবে বের হই?”
মায়া আশ্বস্ত দিয়ে বলে,”চিন্তা করোনা তো।আমি তারপর তোমার আরো পার্টনার তো আছে।তুমি আসার পর ফর্মুলা পাবলিক করা হবে আর সিয়াকে দেখতে আসবে।এখন তুমি যাও।ওদিকটার লোকেদের সেবা করাটাও তো তোমার কর্তব্য।”
“অনলি ফর মায়াবতী।আমার মায়াবতীর ইচ্ছাটাই তাহলে পূরণ হোক।”
বলেই মায়াকে কোলে নেয় রাজ।ভুলে যায় সারা দিনের কথা।
সিয়ার থেকে মোহন সরদার ও সোনালীর কুকর্মের কথা শুনলো হিয়া।তবে পুরোটা না।সোনালী যে ড্রাগ সাপ্লাই ও নারী পাচার করতো এগুলো শুনলো।মানিকের বিষয়ে জেনে হিয়া কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে যায়।তারপর সবাই মিলে একসাথে মানিকের সাথে কথা বলে।মানিক একটি আশ্রমে বড় হয়।প্রাপ্ত বয়স হতেই তাকে নিজের দুই নাম্বার ব্যাবসায় ছোটখাটো কর্মচারী করে রাখে বিভান।জিনিসপত্র আনা নেওয়ার কাজ এক কথায় সার্ভেন্ট এর সমস্ত কাজ মানিক করত।মানিক একটু বুঝ হবার পর থেকে জানতো তার কোনো পরিবার নেই।
বিভান ওকে আশ্রম থেকে আনার পর কাজ দেয় তাই বিভানকে মহৎ ভাবতো মানিক।মালিনীর থেকে আসল সত্যি জানার পর রুদ্র ও জেসি গিয়ে বিভানের ব্যাবসা সম্পর্কে লন্ডনের পুলিশের কাছে প্রমাণ সহ সবকিছু জানিয়ে দেয়।বিভানের লন্ডনের অনৈতিক কাজ বন্ধ করা হয়।এরপর মানিককে সবকিছু খুলে বলে রুদ্র ও জেসি।রুদ্রর কার্ড দেখে ওকে বিশ্বাস করে মানিক।বাংলাদেশে আসার পর রুদ্র আবার মিথ্যে সেজে যোগ দেয় সোনালীর কাজে। আর মানিককে রাজ নিজের মতো আলাদা স্থানে রেখে দেয়।অন্যদিকে মালিনী ও মায়া মিলে অভিনয় করতে থাকে সোনালী ও বিভানের সামনে।জাতে করে মানিকের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ সোনালীর না হয়।
সকালে,
কাজের সুত্রে ঢাকার বাইরে যাবে বলে রেডি হচ্ছে রাজ।মায়া তাকিয়ে আছে রাজের মুখের দিকে।রাজ এটা দেখে ম্লান হেসে বলে,”এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো বউকে রেখে যেতে ইচ্ছা করবে না মায়াবতী।বউকে দুষ্টুভাবে পেতে চায় মন।”
চোখ ছোট ছোট করে মায়া বলে,”এভাবে তাকিয়ে থাকতেই তোমার মধ্যে বান্দর নাচ শুরু হয়ে গেছে।”
মায়ার হাত ধরে নিজের কাছে এনে রাজ বলে,”বউ ছাড়া একমাস একা থাকব।এই শাহমীর রাজের বক্ষ যে থাকবে শূন্য।এটা কি তুমি বুঝো?”
“তোমাকে ছাড়া এই মায়াও যে শূন্য মন্ত্রী মশাই।তবে সবার ভালোর কথা চিন্তা করতে হবে তো।”
“জনগণের সেবা করার পর আমি সুযোগ পাবো তো?”
“কিসের?”
“বাথরুম বিলাসের।”(দুষ্টু হেসে রাজ বলে)
মায়া অবাক হয়ে যায়।সিরিয়াস মোমেন্টে এসেও রাজকে এমন বলতে হবে।রাজের বুকে আলতোভাবে মার দিয়ে মায়া বলে,”লাগাম দিতে শিখুন মন্ত্রী মশাই।”
“লাগাম দিলে তো বউ পাওয়া যায় না।তাই আমি লাগাম দিবো না।এই মন্ত্রী মশাই লাগামহীনই থাকবে।তাহলে দিনে চারপাঁচ বার করে বাথরুম বিলাস করতে পারব।”
“আপনি কি আর কোনো জায়গা পান না?এই এক বাথরুম বিলাস।কি বিশ্রী লাগে!”(নাকমুখ কুঁচকে বলে)
“শোনো মায়াবতী আমার এই বাথরুমে ইয়া বড় একটা বাথটাব আছে।যেটার পিছনে লাখ টাকা খরচ করেছি আমি।বলি টাকা কি আমার গাছে ফলে যে বউ নিয়ে লাখ টাকার বাথটাব থুয়ে অন্য জায়গায় রোমান্স করবো!তাই আমি ওই বাথটাবে বসেই তোমার সাথে বাথরুম বিলাস করবো।যে যা বলে বলুক মন্ত্রী তার টাকা উশুল করেই ছাড়বে।দেখি কার বাপের কি?”
“হয়েছে এবার চলুন।”
“বাথরুম বিলাসে?”
“আরে ধুর না।আপনাকে তো এখন যেতে হবে।বাইরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।”
“কাজ শেষ করে এসে বাথরুম বিলাস করতে দিবে তো,মায়াবতী?”
মায়া কিছু বলতে যাবে ওমনি ওদের গেটে নক করে পিয়াশ।রাজ ঘুরে দাঁড়ায় দরজার দিকে। পিয়াশকে দেখে বলে,”বউকে কি রোমান্টিক বিদায়টাও দিতে দিবে না পিয়ু বেবী?এত জেলাস তুমি আমার মায়াবতীর প্রতি!”
পিয়াশ বিষম খেলো।এই রক্তবতী আকারে মায়াবতীর প্রতি জেলাস ফিল।তাও আবার বেচারা পিয়াশ!আদৌ সম্ভব? পিয়াশ বলে ওঠে,”আসলে আপনার গাড়ি চলে এসেছে।সময় হয়ে গেছে তো তাই।”
পিয়াশের দিকে কিলার লুক দিয়ে রাজ বলে,”বেচে গেছো তোমার বউ এখন তোমাকে বাবা ডাক শোনাবে।তানাহলে আমার শ্যালিকা থেকে তোমাকে আলাদা করে ওর জীবনে বেটার কোনো ছেলে এনে দিতাম।”
বিড়ালের মত মুখ করে পিয়াশ।রাজ এটা দেখে বলে,”অন্তত এই শিক্ষা তুমি পেতে যে একজন বরের কাছ থেকে তার বউকে আলাদা করলে কেমন ফিলিংস হয়।তুমি যখন আমার আর মায়াবতীর রোমান্সের সময় হাজির হও তখন মনে হয় এক ভিলেন এসে আমাদের জীবনে ধীন তানা বলে বর্জ্যপাত শুরু করেছে।”
নাদান এক অসহায় ছেলেকে রাজ ভিলেন বানিয়ে দিলো।পিয়াশ বেচারা পারছে না মুখের উপর মুক্ষম জবাব দিতে।কিন্তু সে মনে মনে ঠিকই কয়েকটা গালি দিয়েই দেয়।মনে মনে আওড়ায়,”ব্যাটা লুচ্চা মন্ত্রী।তুই তোর বউকে নিয়ে যা খুশি কর আমি কোথায় বাধা দেই?আমি তো কাজের সিডিউল অনুসারে তোর কাছে আসি।বলি তোর কাজে হেল্প করলেও বলবি বউ থেকে দূরে থাকতে আবার না করলেও বলবি বউ থেকে দূরে থাকতে।আমরা বর বউ তো তোদের জ্বালায় প্রেম করতে পারি না।এর বেলায় কি চোখ গাছে থাকে?”
কিন্তু না কথাগুলো পিয়াশ জোরে জোরে বলতে পারেনি।বেচারার চাকরি যে আর থাকবে না।মায়া তার হাতের কোনা দিয়ে রাজকে আলতো খোঁচা দিয়ে বলে,”মুখে একটু তো লাগাম দিন।আপনার ভাইরা ভাই হয়।এখন চলুন সময় হয়েছে।”
বলেই মায়া চলে যায় বাইরে।রাজ ড্রেসিং টেবিল থেকে সানগ্লাস নিয়ে চোখে দিয়ে পিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”ঘরের মধ্যে সানগ্লাস পরেছি কেনো জানো?”
পিয়াশ প্রশ্নবোধক হয়ে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।রাজ যেতে যেতে বলে,”তোমাদের মত নির্বোধ যারা রোমান্স করতে পারে না উল্টো রোমান্সের বারোটা বাজায় তাদেরকে ইগনোর করতে।আই ইগনোর ইউ পিয়ু বেবী।”
ভেবাচেকা খেয়ে গেলো পিয়াশ।রাজ ওটা দেখে দুষ্টু হেসে বলে,”সারাদিক ভেবাচেকা খেয়েই পেট ভড়াবে।তোমার জীবনে কোনো উন্নতি হবে না।চলো এবার।”
বলেই চলে যায় রাজ। পিয়াশ ওখানে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এই জন্যই তো বিয়ের তিন মাসের মাথায় আমি বউকে প্রেগনেন্ট বানিয়েছি।ব্যাটা মন্ত্রী লু চু কথা বলেও বাবা হতে পারলি না।দম থাকলে আগে বাবা হয়ে আমার সামনে আয়।তারপর নাহয় দেখা যাবে কে রোমান্সে পটু।”
সিড়ির কাছে যেয়ে রাজ তার পা চালানো থেমে দাড়ায়।পিছনে ঘুরে নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে পিয়াশ দাড়িয়ে আছে।রাজের এভাবে থেকে যাওয়া দেখে পিয়াশ ঘাবড়ে যায়।রাজ এক চোখ টিপ দিয়ে বলে,”আমি দুনিয়ায় আর কারো মনের কথা বুঝি বা না বুঝি তোমার মনের কথা খুব ভালোভাবে বুঝি পিয়ু বেবী। টেনশন নট কাজ শেষ করে ফিরে আসি একবার।তোমাকে আমি আংকেল বানিয়ে ছাড়বো।তখন হবে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি।এই শাহমীর রাজের পুরুষত্বে আঘাত করেছো তুমি।তোমাকে ফেইল করে দিবো আমি।”
চলে যায় রাজ।হাফ ছেড়ে বাঁচে পিয়াশ।তারপর রাজের ল্যাগেজ নিয়ে বের হয়।নিচে এসে রাজ সবার সামনে দাঁড়ায়।মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরে রাজ বলে,”আসি বাবা।”
রাজের মাথায় হাত রেখে মাহমুদ সরদার বলেন,”সাবধানে যেও।তোমার জন্য অপেক্ষা করবে তোমার মায়াবতী।”
রাজ মাথা নাড়িয়ে একটু ভাবুক হয়ে থেমে গেলো।মাহমুদ সরদার ও বাড়ির বাকিরা এটা দেখে বলে ওঠে,”কি হয়েছে?”
রাজ কিছু একটা ভেবে পিয়াশের দিকে তাকালে পিয়াশ পকেট থেকে বের করে বলে,”আমার কাছে ছিলো।কিন্তু আপনি আজকে দিবেন এটা ভাবিনি।”
রাজ বাম ভ্রু উচু করে বলে,”কেনো এটা আজকে দিবো না তো কবে দিবো?”
মায়া সন্দেহ দৃষ্টি দিয়ে বলে,”এটা কি?”
“হানিমুন প্যাকেজ।”
সবাই এদিক ওদিক তাকিয়ে একজন আরেকজনকে দেখতে থাকে।মাহমুদ সরদার বলেন,”এখন তুমি জনগণের সেবা করতে যাচ্ছ।এর ভিতরে বউকে নিয়ে হানিমুনে যেতে চাও!ফিরে এসেও তো যেতে পারতে হানিমুনে।”
অবাক হয়ে রাজ বলে,”তোমাকে কে বলল আমি আমার বউকে নিয়ে হানিমুনে যাবো?”
“তাহলে কার বউকে নিয়ে হানিমুনে যাবে?”(মায়া ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বলে)
রাজ মায়াকে দেখে ভয় পাওয়া চেহারা করে বলে,”আরে এটাতে আমার বউ নেই আমিও নেই।মানে এটা আমাদের হানিমুন টিকিট না।”
“তাহলে কার?”
“বাবা মায়ের হানিমুন টিকিট।”
মাহমুদ সরদার বিষম খেলেন।সাথে মালিনী নিজেও।সিয়া হিয়া মুখ টিপে হেসে দেয়।শাহানা পারভীন সোফায় বসে আছেন।এখনও কিছুটা দুর্বল তিনি।রাজের এমন কথা শুনে তিনি নিজেও লজ্জা পান।মালিনী কিছু না বলে শাহানা পারভীনের পাশে এসে বসে।মাহমুদ সরদার তেজ দেখিয়ে বলেন,”লজ্জা করে না এই বয়সে বাবাকে হানিমুনে পাঠাতে?”
“তোমার লজ্জা করে না বউকে ঘরে আটকে রাখতে।মা আমার তোমাকে বিয়ে করে এখনও নিজেকে শাস্তি দিচ্ছে।মাকে নিয়ে সামান্য হানিমুন করতে পারোনি আবার আসো ছেলেকে লাজলজ্জা শেখাতে?এমন লজ্জা নিয়ে কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকতে পারবো না আমি।”
“তুমি আমাকে ইনডাইরেক্টলি কাপুরুষ বললে?”
“ডাইরেক্ট বললে কি বাবা ছেলের সম্পর্ক চিরজীবন থাকবে?তাই তো ভয়ে ভয়ে ইনডাইরেক্টলি বলেছি।”
“শাট আপ।”
“ইংলিশ বলতেই তো এটা শিখেছো।বউকে কিভাবে হাসিখুশি রাখা যায় এটা কি আদৌ শিখেছো?শোনো বাবা!লক্ষী বরের মত এখন বউকে নিয়ে হানিমুন করে আসবে।কোনো দ্বিমত শুনতে চাই না।মাকে হ্যাপি রাখাটাও একজন সন্তানের দায়িত্ব।”(শেষের কথাটি রাজ একটু নরম কণ্ঠে বলে)
মাহমুদ সরদার যেনো স্তব্ধ হয়ে গেল।রাজের শেষ কথাটি একদম ঠিক।সে কখনও মালিনীর সাথে বাইরে ঘুরতে যায়নি।এখন যখন সব ঠিক হয়েছে রাজ চায় তার মায়ের জীবনে থেকে যাওয়া কমতিগুলো পূরণ হোক তাহলে তিনি কেনো বাধা দিবেন।স্ত্রী হিসেবে এই অধিকারগুলো মালিনী পায়।মালিনী মলিন দৃষ্টি দিয়ে দেখছে রাজকে।ছোট বেলায় রাজকে আদর করতে পারেনি।মানিককে নিয়ে চিন্তায় থাকে সে।একদিকে বরের মৃত্যুর শোক আরেকদিকে ছেলে।মাথা কাজ করেনি তার।কিন্তু রাজকে তিনি ভালোবাসেন।রাজের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকেন।ঠোঁট কামড়ে কান্না করতে করতে রাজের কাছে এসে রাজের মাথায় হাত রেখে বলে,”আমি তোর ভালো মা হতে পারিনি।কিভাবে হবো বল?আমি যে শুধু আমার ছেলেটাকে নিয়ে ভেবেছিলাম।ওকে নিয়েই আতঙ্কে থাকতাম।তোকে আমার বোনের শূন্যতা পূরণ করে দেইনি।আমার প্রতি অনেক অভিযোগ তোর তাই না?”
মানিক দেখলো এই দৃশ্য।তার নিজের কাছেও খারাপ লাগছে।সে তো এসবের কিছুই জানে না।মায়ের কষ্টটা দেখে তার নিজেরও খারাপ লাগছে এখন।রাজ মলিন হেসে মালিনীর হাত ধরে বলে,”মায়ের প্রতি কোনোদিন অভিযোগ রাখা যায়? মা তার সন্তানকে ইচ্ছা করে দূরে ঠেলে রাখেনা।কোনো কারণ না হলে কি কেউ এমন করে?আমি কোনো অভিযোগ রাখিনি তোমার প্রতি।আমার মনে হয় মানিক নিজেও কোনো অভিযোগ করবে না।”
মানিক এগিয়ে এসে বলে,”আমি যদি জানতাম আমার মা আমার জন্য অপেক্ষায় আছে।আমার একটা পরিবার আছে।বিশ্বাস করো অনেক আগেই ছুটে আসতাম।ছেলে হিসেবে আমিও আমার মাকে হ্যাপি রাখতে পারিনি।”
“আমরা সবাই যে পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম।তবে শেষ ভালো যার সব ভালো তার।”(কথাটি বলেন মাহমুদ সরদার।)
রাজ এবার হাতঘড়ি দেখে নেয়।তারপর পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে বলে,”তাহলে আমি আসি এবার।আচ্ছা বাবা হানিমুনে যেয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে আমাদের দেখাবে।এই বয়সে এসে নিজে বাবা না হই বাবার হানিমুনটা তো দেখবো।”
“তোমাকে কে বলেছিলো আমাদের জন্য হানিমুনের ব্যাবস্থা করতে?”
“ছেলে হয়ে আমার একটা দায়িত্ব থাকে।বাবা মা নিরামিষ জীবন কাটিয়ে এখন একটুতেই ঝগড়া করে মাথা ফাটাবে।এই বয়সে এসে ছেলে হয়ে এসব দেখতে তো আমার বুকটা ফেটে যায়।”
“তোমার বুকটা একটু বেশি ফেটে যাচ্ছে।”
রাজ কথা না বাড়িয়ে মাহমুদ সরদারের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,”শোনো বাবা,হানিমুনে যেতে দিচ্ছি মানে এই না যে নিজের বয়সের সীমা লঙ্ঘন করে দিবে। খবরদার বাবা হওয়ার বয়সে আমাকে ভাই বানাবে না।ছেলে নির্যাতন কেসে ফাঁসিয়ে দিবো কিন্তু তাহলে।হানিমুন থেকে এসে একদম প্রস্তুতি নিবে তোমার নাতি নাতনির সেবা করার জন্য।
মাহমুদ সরদারের মন চাচ্ছে এবার দেওয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে মারা যেতে।রাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”থ্রেট দিচ্ছ তুমি আমাকে?বাবা হই আমি তোমার।”
“আমি তো জানি তুমি আমার বাবা।এতবার পাবলিক করতে হবে না।বেশি পাবলিক করলে লোকে আবার সন্দেহ করে বসবে।তখন আমার ছেলে মেয়েরাও তোমাকে দাদা বলতে নাকোজ করবে।”
দুই হাত এক করে মাহমুদ সরদার বলেন,”পুত্র আমার তাড়াতাড়ি বিদায় হও।তুমিই হবে বাবা।আমি হবো দাদা।তাও তোমার মুখে লাগামহীন কোনো কথা শুনতে আমি রাজি না।”
মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৫৯
রাজ দুষ্টু হেসে চলে যায় বাইরে।গাড়িতে উঠে বসে।জানালা দিয়ে মায়াকে দেখে হাসি দিয়ে বাড়ির সবার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায়।মায়া মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে বলে,”বাই মন্ত্রী মশাই।”
গাড়ি চলতে শুরু করেছে।রাজ এখনও দেখছে মায়াকে।মায়া নিজেও দেখছে রাজকে।রাজের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় মায়ার।