মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬২

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬২
ইশরাত জাহান

নতুন বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে আদ্র আর রুদ্র।চোখ তাদের বাড়িটির দিকে।পাঞ্জাবি পরে দাড়িয়ে আছে একসাথে দুই ভাই।রুদ্র বাড়িটির দিকে চোখ রেখেই বলে,”বাবা মা বেঁচে থাকলে আজ আমরাও একসাথে পুরো পরিবার তোমার বউ দেখতে যেতাম। আর সেটা এই বাড়ি থেকেই।তাই না ভাই?”
বাবা মায়ের চেহারা ভেসে আসতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো আদ্রর।এক আঙ্গুল উচু করে রুদ্রকে দেখিয়ে বলে,”ওই কোনাটায় একটা ঘর ছিল।ওখানে বাবা মা থাকতো।আমি যখন স্কুলে যেতাম মা ওই জানালা দিয়ে আমাকে দুই হাত নাড়িয়ে বিদায় দিতো।আমি আর বাবা ঠিক এই জায়গাটায় দাড়িয়ে হাসি মুখে মাকে টাটা বলে গাড়িতে উঠতাম।”

“তুমি তো তাও মা বাবার থেকে কিছু মুহূর্ত পেয়েছো।আমি আমার পুরো ছোটবেলাটা হারালাম।না পেলাম আপন বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা না পেলাম পালিত বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা।”
রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আদ্র বলে,”মা তোর জন্য অনেক ছোটাছুটি করেছে ভাই।শেষমেষ নিজের জীবনটাই দিয়ে দিতে হলো তার ছোট ছেলেকে পেতে।”
চোখ বেয়ে পানি পড়লো রুদ্রর।নিজের হাতে পানি মুছে বলে,”চলো ভাবীকে দেখতে যেতে হবে তো।তোমার প্রেয়সীকে পাওয়া তো এখনও বাকি।”
মৃদু হেসে আদ্র বলে,”হুম।দাদা দাদী আসুক আগে।”
বলতে না বলতেই আদ্র ও রুদ্রের দাদা দাদী এসেছেন।একসাথে দুই নাতিকে জড়িয়ে ধরেন তারা।তারপর গাড়িতে উঠে রওনা দেন সরদার বাড়ির দিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখে লজ্জাবতী হয়ে আছে সিয়া।পাশেই দাড়িয়ে আছে মিলি ও হিয়া।মৌ বিছানায় বসে ওর ছেলে প্রলয়কে নিয়ে।মায়া তার সাথে খেলছে।সিয়ার মাথায় টোকা দিয়ে মিলি বলে,”এত লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছিস কেনো?আমরা বোনেরাই তো আছি এখানে।”
হিয়া দুষ্টুমি করে বলে,”বুঝতে পারছিস না?এগুলো আসলে ঢং করছে।ওনার মনে তো প্রথম দিনেই মনে লাড্ডু ফুটেছিল।শুধু অবুঝের ভান ধরে ছিলো।”
সিয়া চোখ রাঙিয়ে বলে,”একটু বেশি বলছিস না তুই?”
হিয়া দ্বিগুণ তেজ দেখিয়ে বলে,”আমি বেশি বলছি তাই না!তোর তো গাইনোলজি হওয়ার ইচ্ছা ছিলো।তুই অর্থোপেডিক নিয়ে পড়ছিস কেনো বল?”
“আমার ভাগ্যে ছিলো তাই আমি এই সাবজেক্ট নিয়েছি।এটার মানে অন্য কিছু না।”

প্রলয়ের ছোট ছোট আঙুল খুটছিলো মায়া। মাত্র চারদিন আগেই প্রলয় এই পৃথিবীর মুখ দেখেছে।পিয়াশের ছেলের নাম প্রলয় দিয়েছে।এটা পিয়াশের ইচ্ছাতেই হয়েছে।এই ছোট প্রলয়ের নরম তুলতুলে লাল বর্ণের হাত ধরে মায়া ম্লান হেসে বলে,”তোমার ভাগ্যটা তো তুমি নিজে গড়ে নিয়েছো সিয়া।ঠিক যেমন আমি আমার মন্ত্রী মশাইকে পেয়েছি।উদ্দেশ্য না থাকলে তো সফলতা আসে না।”
ভাবীর কথাতে মুখ থেকে কিছু বের হচ্ছে না সিয়ার।হিয়া চশমা চোখ দিয়ে ইশারা করে বলে,”এখন কি বলবি?গুরুজন কিছু বলেছে বলে চুপ থাকবি তাই না!”
চোখ ছোট ছোট করে লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে সিয়া বলে,”এমন ভাবে বলছিস যেনো তোর সময় আসবে না।আমার পরে তোর টার্ন।মনে রাখিস এটা।”

ভ্রু কুচকে হিয়া বলে,”আমার এমন কেউ নেই যে আমার টার্ন আসবে।বাবা বলেছিলো তো অনেক আগেই যে আমাকে পড়াশোনা করাবে।যেদিন কাউকে ভালো লাগবে সেদিনের কথা ভিন্ন।”
মায়া তাকালো হিয়ার দিকে।হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”কিন্তু তুমিও তো ভালোবাসো..”
মায়া কিছু বলতে যাবে তার আগে হিয়া বলে ওঠে,”না ভাবী।ওটা মোহ ছিলো।ভালোবাসা মনে করে আমি আমার ক্যারিয়ার হারাতে চাই না।”
“তুই এভাবে কেনো বলছিস হিয়া?সব তো পাল্টে গেছে।রুদ্র ভাই..”
সিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হিয়া বলে,”ওনার নামটাও শুনতে চাই না।নষ্ট পুরুষ একটা।আমাকে তো ঠকিয়েছে পুরো পরিবারকে ঠকিয়েছে।প্রতারক নষ্ট পুরুষ।”

কথাগুলো বলতেই হিয়ার চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে।উল্টোদিকে ঘুরে হিয়া চোখের পানি মুছে নেয়।মায়া এসে সিয়ার কানে কানে বলে,”রুদ্রর পরিচয় বলোনি তুমি?”
মাথায় হাত দিয়ে সিয়া বলে,”কিভাবে কি করবো বলো?সেই মেডিকেল যাওয়া আসা আবার মৌ আপুকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হয়। আর ম্যাডাম নিজেও তো কলেজ ভর্তি হয়ে ব্যাস্ত হয়।উপন্যাস ছাড়া আমাকে কখনও সময় দেয় ও।ওর জন্য মার্কেটটাও আমাকেই করতে হয়।ওর তো খালি নিজের জন্য পছন্দ করে ওই উপন্যাসের বই কিনবে।আমি তো ভেবেছি তোমরা বলেছো।”
“আমি আর মিলি তো নতুন করে ব্যাবসার কাজে হাত লাগিয়েছিলাম।অন্যদিকে আমার ফ্যাশন হাউজের ব্যাবসা তো আছেই।অবশ্য আমাদের ব্যাস্ততায় যখন কিছু জানেনি তাহলে আজকে হিয়ার জন্য সারপ্রাইজ থাকবে।”(মায়া বলে ওঠে)
উত্তেজিত হয়ে হাসি দিয়ে সিয়া বলে,”একদম ঠিক বলেছো।আজ হিয়া ওর নষ্ট পুরুষের আসল পরিচয় পেয়ে অনেক বড় সারপ্রাইজ পাবে।”

সবার আড্ডার মাঝেই পিয়াশ এসে বলে,”বস এসেছে ম্যাম।মাত্র গাড়ি ঢুকলো বাড়ির ভিতর।”
রাজ এসেছে শুনে শাড়ি পরা অবস্থায় দৌড় দেয় মায়া।সিড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেলো ঘামে ভিজে আছে রাজ।সাদা পাঞ্জাবি ঘামে একাকার।সিড়ির দিকে চোখ যেতেই রাজ তার হাত দুই দিকে মেলিয়ে বলে,”আমার বক্ষে তোমাকে স্বাগতম মায়াবতী।”

শাড়ির কুচীগুলো একটু উচু করে এক এক সিড়ি পার করে রাজের কাছে পৌঁছায় মায়া।এক লাফে জাপটে ধরে রাজকে। রাজও মায়াকে আঁকড়ে নেয় নিজের বাহুডোরে।রাজের কপাল বরাবর মায়ার ওষ্ঠ।মায়া চারপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।এই সুযোগে নিজের মনের ইচ্ছামত ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে রাজের ললাটে।শুধু তাই না বেখেয়ালে রাজের নাকের কোনা এমনকি গালেও ভালোবাসার পরশ একে দেয় মায়া।কিছুক্ষণ এমন করে থেমে যায়।রাজ এবার মায়াকে নামিয়ে মায়ার মুখে দুই হাত রেখে বলে,”আমি একমাত্র মন্ত্রী যে তার বউ দ্বারা অপহরণ হতে থাকে।অবশ্য আমি এটাতে নিজেকে গর্ববোধ করি।”

হেসে দেয় মায়া।জোরে চিল্লিয়ে ডাকে সবাইকে।রান্নাঘরে কাজ করছে মেইড।তাদেরকে তদারকী করে শাহানা পারভীন ও মালিনী।মায়া জোরে জোরে বলছে,”মন্ত্রী মশাই এসেছে।তোমরা সবাই কোথায়?”
মায়ার কণ্ঠ পেয়ে একে একে সবাই বের হয়।একজন সার্ভেন্ট আসতেই মায়া বলে,”মন্ত্রী মশাইয়ের জন্য আমি যে শরবত করেছি ওটা নিয়ে আসো।”
সার্ভেন্ট মাথা নাড়িয়ে নিয়ে আসে শরবত।মালিনী এসে জড়িয়ে ধরে রাজকে।সবার সাথে আলাপ করে রাজ আসে মাহমুদ সরদারের কাছে।মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে রাজ বলে,”তোমাদের প্রত্যেকটা রোমান্টিক পিক আমি দেখেছি বাবা।”
অবাক হয়ে যায় মাহমুদ সরদার।তিনি তো কোনো ছবি বা ভিডিও করেননি। এ ছেলেকে কে দিলো ছবি?রাজকে প্রশ্ন করেন,”কিভাবে?”

দুষ্টু হেসে রাজ বলে,”কি মনে করো তুমি আমাকে?আমি তোমার কেয়ারলেস ছেলে?না বাবা না।আমি দায়িত্বশীল একজন ছেলে।তাই তো তোমাদের পিছনে আলাদা লোক লাগিয়ে রেখেছিলাম।”
চোখ বড় বড় হয়ে যায় মাহমুদ সরদারের।মালিনী এসে কান ধরে টান দেয় রাজের।মাহমুদ সরদার মালিনীকে সাপোর্ট করে বলেন,”আরো জোরে টান দেও কান।বাবা মায়ের হানিমুনে কেউ লোক লাগায়?”
মালিনী কান ছাড়তেই রাজ কানে হাত দিয়ে ডলতে থাকে।তারপর বলে,”এমনভাবে বলছো যেনো আমি তোমাদের পার্সোনাল মোমেন্ট দেখেছি।লাগামহীন হতে পারি কিন্তু বিবেকহীন না।”
“চুপ করো বেয়াদপ ছেলে।যে ছেলে লাগামহীন হয় সে বিবেকহীনের উপরে ছাড়া কম কিছু না।”
“ধুর বাবা।তোমাদের সেফটির জন্য এতকিছু করলাম।আমাকেই করো দোষারোপ!এমনিতে তো বউ নিয়ে কখনও মধুচন্দ্রিমা করবে না।ছেলে হয়ে আমি যেটা করেছি তাতে তোমার গর্ববোধ করা উচিত।এমন ছেলে লাখে একটা।”
“এই লাখ ছেলের একটা ছেলে আমাকে কেনো দিলো খোদা!”
“তোমার বংশের বাতি জ্বালাতে আমাকেই প্রয়োজন বাবা।”

বলেই দৌড়ে নিজের ঘরে গেলো রাজ।মাহমুদ সরদারের ঠিক নেই।এখনই হয়তো ঠাস করে বুড়ো ছেলের গাল লাল করে দিতে পারে।মাহমুদ সরদার কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলেন,”বিয়ের দুদিন আগেও ছেলে আমার ছিলো অবুঝ খোকা।বউ পেয়ে ছেলে আমার হয়ে গেলো পাকা।”
ফ্রেশ হয়ে রাজ এসে বসলো হলরুমে।এই তো আর পাঁচ মিনিট।তারপর আদ্র ও তার পরিবার আসবে।কল করে খোঁজ নিয়েছে রাজ।শাহানা পারভীন এসে খোচা দিচ্ছে মায়াকে।মায়া মাথা নাড়িয়ে না করতে থাকে।রাজ এটা লক্ষ্য করে বলে,”আমার বউটা হঠাৎ লজ্জা পাচ্ছে কেনো!কিছু কি হয়েছে?”
মায়া এবার শাহানা পারভীনের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার এই লাগামহীন জামাইকে কিছু বলতে সাহস পাই না মা।জনসম্মুখে উল্টা পাল্টা বলে দেয়।”

চোখ ছোট ছোট করে রাজ বলে,”উচিত কথার মূল্য নেই।যাই হোক বলো কি হয়েছে?”
মায়া তার দুইহাত এক করে আঙুল গোটাতে গোটাতে বলে,”এই বাড়িতে নতুন সদস্য আসতে চলেছে মন্ত্রী মশাই।”
রাজ একবার করে সবার মুখের দিকে তাকালো।সব শেষে মাহমুদ সরদারকে আসতে দেখলো।পাশে হাসিখুশি মালিনীকেও।সোফা থেকে এক লাফে উঠে দাড়ায় রাজ।হকচকিয়ে তাকালো বাড়ির সবাই।সিয়া হিয়া মিলি মৌ ওরা এখনও ঘরে।হলরুমে মায়া রাজ সহ বাকি বড়রা আছে।রাজ আতঙ্কের সাথে বলে,”ছিঃ বাবা!তোমাকে আমি দাদু বানাতে চেয়েছিলাম।তুমি আমাকে ভাই বানিয়ে দিলে।এই সমাজে আমি এখন মুখ দেখাবো কিভাবে!লোকে বলবে,বাবা হওয়ার সময় যার সে হতে পারে নাই বাবা।বাবা যার হবার কথা না সে হতে চলেছে আবারও বাবা।”
রাজের কথার কিছু বুঝতে পারল না মাহমুদ সরদার।মায়া বুঝতে পারল ব্যাপারটা।শাহানা পারভীনকে ইশারা করে বলে,”দেখেছো মা?এই কারণেই আমি তোমাদের সামনে ওকে কিছু বলতে চাইনি।ব্যাটা লাগামহীন।”
শাহানা পারভীন এবার রাজকে বলে,”ওরে বাপ তোর বাপ হতে যাচ্ছে না বাপ।তুই হবি বাপ।”

এতবার বাপ বাপ শুনে একটু কনফিউজড রাজ।কিছুক্ষণ মনোব্রত পালন করে আবারও লাফিয়ে বলে,”মানে আপনা টাইম আয়েগা?আমিও এবার বাবা হব?”
লজ্জায় মাথা নিচু করলো মায়া।রাজ খুশিতে মাহমুদ সরদারকে জড়িয়ে ধরে।তারপর সার্ভেন্টকে বলে বাসায় আরো মিষ্টি আনতে।কিছু একটা ভাবতেই রাজের মনে পরে তার তো এখনও এক মাসের দূরত্ব মোচন করতে পারেনি।মনের আবেগে বলে ফেলে,”তাহলে বাথরুম বিলাস এর কি হবে?”
রাজের কথার মাথা মুন্ডু বুঝতে পারল না কেউ।কিন্তু মায়া বুঝতে পারল।ক্ষিপ্ত হয়ে তাকালো রাজের দিকে।রাজ ঠোটটা বাচ্চাদের মত করে তাকালো মায়ার দিকে।মায়া হাতে থাকা ফোন দিয়ে ম্যাসেজ করে রাজকে,”বাচ্চা আসতে চলেছে আমাদের।এখন তো একটু সংযত রাখো নিজেকে।”

“বিয়ের পর বউকে নিয়ে না করতে পারলাম মধুচন্দ্রিমা না ঠিকভাবে হলো বাথরুম বিলাস।এটা তো বিনা বাক্যে বজ্রপাতের মত করে বাচ্চা হাজির হলো।”
“এই তুমি না এতদিন বাচ্চা বাচ্চা করেছো?এখন বাচ্চার বাপ হতে যেয়ে খুশি হচ্ছো না কেনো?”
“বাচ্চা নিবো বলেছি।কিন্তু প্রোসেসিং এত ফাস্ট হয়ে যাবে বুঝে উঠতে পারিনি।আমি ছক্কা মারতে না মারতেই আমার বাচ্চা আমাকে আরেক ম্যাচ দেখিয়ে দিলো।”
“লাগামহীন মন্ত্রী মশাই।”

চারপাশে ঢাক ঢোল বাজতে শুরু হলো।সবাই বুঝে গেলো আদ্র ও রুদ্র এসেছে।যেহেতু সরদার বাড়ির বিয়ের দেখাশোনার আয়োজন চলছে।তাই তাদেরকে জমজমাট ভাবেই প্রস্তুতি নিতে হয়।গেটের সামনে কিছু লোক রেখে দেওয়া ছিলো।যারা বরযাত্রী দেখলেই ঢাক ঢোল বাজাতে থাকবে।রাজ হাতদুটো উচু করে নাচতে নাচতে জোরে জোরে পিয়াশ ও তারেককে ডেকে বলে,”পিয়ু বেবী চলো তাহলে।তারেক ভাই আসো।আমাদের ভাইরা ভাইকে ওয়েলকাম করতে হবে তো।”
পিয়াশ ও তারেক চলে যায় রাজের সাথে।ঘরে বসে ঢোল বাজার শব্দ পেলো মেয়েরা।হিয়া বলে ওঠে,”ওই দেখ বোন।তোর বর চল এসেছে।”
সিয়া মনে মনে বলে,”শুধু আমার বর না।তোর বরও এসেছে বোন।শুধু তোর সারপ্রাইজের অপেক্ষা।”

গেট থেকে আদ্রদের ওয়েলকাম করে সরদার বাড়ির সদস্য।রাজ পিয়াশ তারেক এখনও নাচতে থাকে।গাড়ি থেকে বের হয়ে রুদ্রও সামিল হয় রাজের সাথে।সবাইকে এভাবে খুশিতে নাচতে দেখে মাহমুদ সরদার খুশি হন।শুধু কল্পনায় ভেসে আসে মোহন সরদারের চেহারা।মোহন সরদার কোনো ভুল না করলে আজ এই মহা খুশিতে তিনিও থাকতেন।বাবা হারানোর পর এক চাপা কষ্ট থাকে মাহমুদ সরদারের মনে।আজ ভাই মারা যাওয়াতে একই কষ্ট হচ্ছে তার।হিয়া আর মিলি চলে এসেছে হলরুমে।সিয়ার কাছে মৌ আছে।সিয়াকে ডাকলেই মৌ তাকে নিচে নিয়ে আসবে।খুশিতে খুশিতে নিচে নামে হিয়া ও মিলি।হলরুমে এসে বসেছে আদ্র রুদ্র ও তাদের দাদা দাদী।হিয়া ও মিলি এসে সালাম দিলো তাদের।তারপর আদ্রর পাশে তাকাতেই হিয়ার চোখমুখ মোলিন হয়ে আসে।ঠোঁট দুটো ফাঁকা হয়ে যায় হিয়ার।হুশ ফিরে আসে রুদ্রের চোখ টিপ দেওয়াতে।ক্ষিপ্ত হয়ে হিয়া বলে,”এই নষ্ট পুরুষ এখানে কি করছে?”
একটু জোরেই বলে হিয়া।খোপ করে হাত চেপে ধরে মিলি।দাদা দাদী কিছু মনে করতে পারে তাই।হিয়া হাত ছাড়িয়ে বলে,”আটকাচ্ছো কেনো আমাকে?তোমার ভাই নষ্ট পুরুষ বলে আমি তাকে কিছু বলতে পারবো না?ওনাকে তো ভাইয়া বের করেও দিয়েছে।আবার কেনো এসেছে?”

দাদা দাদী অবাক হয়ে তাকালো এদিক ওদিক।আদ্র ফিসফিসিয়ে বলে,”এটা হিয়া।রুদ্রর হিয়াপাখি।ব্যাটা রুদ্র অভিনয় করতে করতে ওর সামনে হয়েছে নষ্ট পুরুষ।মানে হিয়ার মন ভেঙ্গে দেওয়ার অভিনয় করেছিলো তাই।”
বাকিটা বুঝে গেলো দাদা দাদী।দাদী তখন দুষ্টুমি করে চোখ রাঙিয়ে বলে,”তোমার তো দেখছি অনেক সাহস মেয়ে।আমার নাতিকে তুমি অপমান করো।”
“হ্যাঁ আপনার নাতি তো নষ্ট পুরুষ তাই..”
আর কিছু না বলে অবাক হয়ে হিয়া বলে,”আপনার নাতি মানে?আমি তো আদ্র ভাইকে কিছু বলিনি।রুদ্র ভাইকে বলেছি।”
“ওটাও আমার নাতি।আমার ছোট নাতি।”

গাল হা করে চশমাটা ঠিক করে হিয়া।তারপর সবার দিকে তাকালো।সবাই হাসতে থাকে।মায়া এসে সবকিছু খুলে বলে হিয়াকে।রুদ্রর আসল পরিচয়।রুদ্রর বর্তমান চাকরি সহ সাহায্যের কথাটাও বলে মায়া।রুদ্র তাকায় না হিয়ার দিকে।ওর চোখ ফ্লোরের দিকে।রাজ এসে হিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে,”তোর কষ্টটা আমরা সেদিন উপলব্ধি করেও চুপ ছিলাম বোন।তোকে সত্যিটা বলিনি কারণ তোর মন এতই নরম যে যার প্রতি তোর ঘৃণা আসে তাকে সরাসরি দেখিয়ে দিতি।আসল সত্যটা জানলে আমাদের মত শক্ত থেকে অভিনয় করে যেতে পারতি না।এতে ওরা এলার্ট হয়ে যেত তাই।”
হিয়ার চোখ ভিজে এসেছে।রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে সে।চশমা চোখেই চোখের পানি ফেলছে।অস্পষ্ট সুরে বলে,”রু রুদ্র ভাই।”

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬১

রুদ্র এখনও তাকায়নি।হিয়ার এই আস্তে করে ডাক তার কান অব্দি পৌঁছায়নি।হিয়া ধরে নিলো রুদ্র অভিমান করেছে।কষ্ট হলো হিয়ার।এতদিন করা বাজে ব্যবহারের সাথে হয়তো আজকের ব্যাবহার রুদ্রের মনে দাগ কেটে নিয়েছে।বড় লম্বা গাউন পরেছিলো হিয়া।পায়ের নিচে অব্দি চলে যায় গাউনের ঘের।দুই হাত দিয়ে উচু করে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিলো।হিয়ার একেক পদক্ষেপ কর্ণপাত হলো রুদ্রের।মাথা উচু করে দেখলো হিয়াকে যেতে।কিছু না বলে চুপ আছে সে।রাজ এসে রুদ্রের পিঠে চাপড় মেরে বলে,”ভাই আমার তাড়াতাড়ি যাও হিসাব মেটাতে।যদি থাকো রাজি তবেই তোমার জন্যও ডাকবো আমি কাজী।”
রুদ্র সবার দিকে তাকালো।সবার সম্মতি পেয়ে হিয়ার ঘরের দিকে দৌড় দিলো রুদ্র।

মায়াবতীর ইচ্ছা পর্ব ৬৩