মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২
ইশরাত জাহান

বীর নেশালো দৃষ্টিতে জারার দিকে তাকিয়ে আছে।জারা ছোটাছুটি করছে।হাতটা ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে শুধু।বীর এটা দেখে হেসে দেয়।অনেক জোরে হাসে।বীরের মত শক্তিশালী পুরুষের সামনে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে থেকে কি না সে এভাবে পালাতে চায়।বীর জারার চোখের দিকে চেয়ে বলে,”কিছু বলতে চাও জানেমান?”

জারা নিরব।ভয়তে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না।বীরের দিকে তাকালেই মনে পড়ে কিছুদিন আগের কথা।তারই চোখের সামনে একটা ছুরি দিয়ে একজন বৃদ্ধের গলার রগ কেটে দিয়েছিলো।বীরের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে জীবনের ভিক্ষা চাইছিল কিন্তু বীর পাষাণ পুরুষের মত চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।কিছুক্ষণ পর দাঁত বের করে হেসে লোকটির বুকে পা দিয়ে মোচড় দেয়।যেটা দূর থেকে দেখে জারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।আর কোনোদিন বীরের সামনে আসবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে।যেভাবেই হোক পালিয়ে থাকবে সে।পালিয়েই তো এসেছিলো কানাডা থেকে।বীর ধরে ফেললো তাকে।কোনো জায়গায় যেয়েই তার শান্তি নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরিবার বলতে তার খালামণি সোনালী আছে।এখন তার কাছে যেতেও ঘৃণা লাগে।মহিলা তো সুযোগবাদী।যেটা জারার একদমই পছন্দ না।তাই তো নিজের খালামণির থেকেও পালাই পালাই করে কানাডায় যায়।আবার সেখানে যেয়ে কিছুদিন হাসিখুশি জীবন কাটিয়ে এখন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।খালামণি থেকে পালাতে পারলেও বীরের থেকে পালাতে আর পারলো না।কান্না পাচ্ছে তার।কেনো তার জীবনটা এমন?বাবা মা না থাকলে কি তার কোনো সুযোগ সুবিধা নেই?জারা কান্না করে দেয়।এই কান্না সহ্য হলো না বীরের।জারার দুইপাশের চোখের পানি বীর তার দুই হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে দেয়।জারা এই ছোয়াকেও ভয় পাচ্ছে।এই হাত যে মানুষের জীবন নেয়।পলকহীন তাকিয়ে আছে বীরের দিকে জারা।বীর বলে,”কান্না করছ কেনো?”

জারার উত্তর নেই।সেই প্রথম থেকেই জারা চুপ।সহ্য হচ্ছে না বীরের।এবার ধমক দিয়েই বলে,”কি হলো বলো?”
কেপে উঠল জারা।কিছু না বলে এখনও তাকিয়ে আছে।বীরের চোখ লাল।জারা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মিনমিন করে বলে,”আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন কেন?”
তুমি থেকে আপনি সম্বোধন যেনো সহ্য হলো না বীরের।রাগ মুখে ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,”এতদিন তুমি বলে এখন আপনি?বাহ জানেমান!এতটা পরিবর্তন।হঠাৎ কি হলো যে এমন পরিবর্তন আনলে?”
“আমি কি ভুল করেছি যে আমাকে এভাবে উঠিয়ে এনেছেন?”

আবার সেই আপনি করে বলা তাও কি না মিনমিন করে।সহ্য করতে না পেরে জারার বসে থাকা চেয়ারে জোরে এক আঘাত করে বীর।বেচারি এমনিতেই ভয় পায় আবার বীর তাকে এখন ভয় দেখাচ্ছে।মনে মনে ভাবছে,”এখন কি আমাকে খুন করে দিবে?তাহলে আমার বাবা মায়ের খুনিকে খুজবো কিভাবে আমি?আমি যে তাদের শাস্তি দিতে চাই।ওদেরকে শাস্তি না দিয়েই আমি এক মাফিয়ার হাতে শহীদ হয়ে যাবো!”
বীর কিছু বলতে যাবে ওমনি বীরের ফোন বেজে ওঠে।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে তারেক কল করেছে।বীর রিসিভ করতেই তারেক বলে,”মায়া ম্যাম আর মন্ত্রী শাহমীর রাজ আজ বিয়ে করতে চলেছে এখন।”
অবাক হয়ে জোরে চেঁচিয়ে বীর বলে,”হোয়াট?”

ফোনের ওপাশে তারেক ভয় না পেলেও সামনে বসে থাকা জারা কেপে উঠেছে।মনে মনে পালানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।এই লোকের আসল রূপ জানার পর থেকে যেনো এই লোকটা বেশি বেশি রাগ দেখাচ্ছে।তারেক ফোনটা কান থেকে আগে থেকেই দূরে সরিয়ে রেখেছিলো।কারণ সে জানত এই মাফিয়া একটা চিৎকার দিবেই।ভাই বোন দুটোই এক।অবাক হওয়ার জায়গায় যেনো রেগে তেড়ে আসে।তারেক ফোনটা আবার কানে নিয়ে বলে,”জি স্যার।মায়া ম্যামের পাতানো ফাঁদে তিনি নিজেই পা দিয়েছেন।যার জন্য এখন কিছু করার নেই।”
“সবকিছু ক্লিয়ার করে বলো।”

তারেক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হওয়া সবকিছু বলে।যেটা শুনে বীর কপালে হাত দিয়ে বলে,”যেমন দেবা তার তেমন দেবী।ওকে ফোন রাখো আমি কথা বলছি বোনের সাথে।”
তারেক কল কাটতেই বীর উঠে দাঁড়ায়।কিছু একটা ভেবে জারার হাতের দড়ি খুলে দেয়।জারা ভাবছে তাকে হয়তো ছেড়ে দিবে।কিন্তু নাহ।বীর জারার হাত ধরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।ঘর থেকে বাইরে এসে যেই বীরের গাড়ির দিকে নিয়ে যাবে জারা হাত ছাড়িয়ে নেয়।বীর সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।জারা কিছু না বলে অন্যদিকে চলে যেতে নেয়।পথ আটকে দাড়ালো বীর।প্রশ্ন করে,”কোথায় যাচ্ছো?”

“আমার হোস্টেলে।”
“আজ থেকে আমার বাসায় থাকবে তুমি।”
“না।”
“আমি বলেছি হ্যাঁ মানে হ্যাঁ।আর কোনো দ্বিতীয় কথা নেই।চলো আমার সাথে।”
বলেই জারার হাত ধরে বীর।জারা হাত ছাড়িয়ে বলে,”আমার ব্রেকআপ চাই বীর।”
কথাটা আস্তে করে বলে জারা।যেটা শুনতে পেলেও রাগে গজগজ করতে করতে বীর বলে,”কি বললে আবার বলো?”
জারা আবারও বলে,”আমি এই সম্পর্কে থাকতে চাই না।আমি ব্রেকআপ করতে চাই।”
বীর আলতো হাসে।তুড়ি বাজাতেই বডিগার্ড বেরিয়ে আসে।যাদের প্রত্যেকের পকেটে পিস্তল।যা দেখে জারার অবস্থা খারাপ।বীর হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে,”এখন বলো ব্রেকআপ চাই তোমার?”

জারা ভদ্র মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে বলে,”না না না।”
বীর এবার গাড়ির দরজা খুলে দেয়।বলে,”গাড়িতে ওঠো জানেমান।”
জারা গাড়িতে উঠতেই বীর তার পাশে বসে।জারা জানালা ঘেষে বসে আছে।এটা দেখে বীর রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে।জারা বীরের মুখের দিকে তাকিয়ে বীরের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে মনে মনে বলে,”কেনো যে এর আইডেন্টি না জেনে এর সাথে প্রেম করেছিলাম?এখন ভোগ করতে হচ্ছে।”

বীরের কাছে এসে বীরের বাম হাত ধরে বসে থাকে জারা।বীর হেসে দেয়।ফোন হাতে নিয়ে কল করে মায়ার কাছে।তাকে কোনোকিছু না জানিয়ে হুট করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানে কি বুঝতে পারছে না সে।মায়া তো রাজকে ঘৃণা করে।কেনো ঘৃণা করে এটা জানে না বীর।শুধু জানে মায়া সহ্য করতে পারে না।রাজকে নিয়ে ট্রমা থেকে মায়াকে বের করতে তাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়।রাজের কথা জিজ্ঞাসা করলেই মায়া চুপ করতো নয়তো ফোঁসফোঁস করতো।প্রথম দিকে তো কানে হাত দিয়ে কান্না করত।আজ আবার কি হলো তার?রিং হয় ওপাশ থেকে কিন্তু রিসিভ হয় না।বীর বুঝলো মায়া রিসিভ করবে না এখন।তাই আর চেষ্টা করলো না।মায়া তার সময়মত কল ব্যাক করবে।রাজের ফোনে কল দিতেই ওপাশ থেকে কেটে দিচ্ছে।শুধু রাজের ফোন থেকে একটি ম্যাসেজ আসে,”ভাইয়ের বিয়েতে তো আসতে পারলি না এখন ভাইয়ের শালা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হ।এত কল দিয়ে জ্বালাবি না।শালা আমার বিয়ে নিয়ে কেউ ভাবেনা।যা করার আমাকেই করতে হয়।”

ম্যাসেজ দেখে বীর হাসবে নাকি কান্না করবে বুঝতে পারছে না।যদিও সে জানে রাজ কেমন কিন্তু মায়ার কথা ভেবেই তো তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে।বীর চায় আগে সবকিছু সমাধান করে তারপর মায়ার সাথে রাজের বিয়ে দিতে।কারণ মায়ার যে একটা স্বপ্ন আছে।হঠাৎ করে আজই স্বপ্ন পূরণ না করে বিয়ে করবে এটা মানতে পারছে না বীর।মায়ার জীবনে নতুন কোনো ঝড় না আসলেই হয়।
বিয়ের আসরে মায়াকে বসানো হলো।এর ঠিক কিছুক্ষণ পর পিয়াশ সরদার বাড়ির সবাইকে নিয়ে আসে।বিয়ের আসরে অন্য মেয়েকে দেখে কপাল কুঁচকে এলো সবার।শুধু মাহমুদ সরদার বাদে।সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তার সুপুত্র কোনো অঘটন ঘটাতে চায়।মালিনী এসে মাহমুদ সরদারের কাছে বলে,”এই মেয়ের পরিচয় কি কিছুই তো জানি না।তুমি এভাবে ছেলেকে যার তার সাথে বিয়ে দিবে?”

মাহমুদ সরদার গলা খাকারি দিয়ে বলেন,”এই মেয়ের একটু পর থেকে একটাই পরিচয় হবে।একটা উন্মাদ লাগামহীন ছেলের বউ হবে সে।এটাই কি মেয়েটাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার মত বিষয় না?”
মালিনী বিরক্ত হয়ে বলে,”ধ্যাত।”
সোনালী আর মোহন সরদার এখনও দেখছে মায়াকে।মোহন সরদার মায়াকে দেখে রাগী কণ্ঠে বলে,”এই মেয়ে তো ফ্যাশন হাউজের মালিক।”
সোনালী অবাক হয়ে বলে,”তুমি চেনো একে?”
“চিনব না কেনো?এই মেয়ে বড়ই ধূর্ত।আমার অনেক বড় একটা ডিল এই মেয়ের জন্য ক্যান্সেল হয়েছে।যেখানে আমার বিশ লাখ টাকা ইনভেস্ট করতে হয়েছিল।এই মেয়ে এই বাড়িতে বিপদের আশঙ্কা নিয়ে আসছে এটা আমি বলে দিলাম।”

সোনালী কথাটা পাত্তা না দিয়ে বলে,”ওসব বাদ দেও তো।ব্যবসার ক্ষেত্রে লাভ লস করতে গেলে তো এমনই হতে হয়।আমি শুধু ভাবছি এই মেয়েটাও তো আস্ত একটা ব্যাংক।ফ্যাশন হাউজের মালিক মানে তো কোটিপতি।”
মায়া তাকিয়ে আছে মোহন সরদারের দিকে। গাঢ় নীল রঙের লেহেঙ্গা সাথে ডায়মন্ডের সেট।ঠোঁটে গাঢ় গোলাপি রঙের লিপস্টিক।চোখে স্মোকি আইশ্যাডো।দেখতে পুরো বার্বি ডল লাগছে মায়াকে।আশেপাশের লাইটগুলো তো আছেই মায়াকে আরো বেশি সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার জন্য।মায়ার চোখ মোহন সরদারের দিকে থাকলেও মায়ার পাশের জনের চোখ একমাত্র তার দিকে।মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,”আয়হায় মায়াবতী।এই লিপস্টিক এখন না দিলেও পারতে।মন্ত্রীর হার্টবিট এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।”

মায়া রাগী চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে দাতগুলো কটমট করে তেজ দেখিয়ে বলে,”এখনই শেষ করে ফেলুন আপনার হার্টবিট।অন্তত আমাকে বিধবা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।”
মায়ার তেজি কথা গায়ে মাখলো না রাজ।বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলে,”আমার হার্ট এতটাও দুর্বল না।এটা শুধু রোমান্সের জন্য বিট করে মরার জন্য না।”
মায়া চোখ সরিয়ে নিলো।মিলি এসে দাড়ালো সিয়ার পাশে।বলে,”শুনলাম বউ নাকি পালিয়েছে।এখন কাকে বিয়ে করবে?”

সিয়া সামনের দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলে,”যাই বলনা কেনো এই ভাবী কিন্তু আগের মেয়েটার থেকেও সুন্দরী।অবশ্য এটাই নাকি আমাদের আসল ভাবী হবার কথা।আয়রার সাথে নাকি বিয়ের অভিনয় করেছিলো ভাই।আমাদের এই ভাবীকে বিয়েতে আনার জন্য।”
“কি বলিস!এত সিনেমার কাহিনী।”
“জীবনটা সিনেমা থেকে কম কিছু নাকি?”
“তাও ঠিক।আচ্ছা আমি মকটেল কাউন্টার থেকে ঘুরে আসি।”
“হুম।”

মিলি মকটেল কাউন্টারে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগে।ধাক্কা লাগার কারণে মুখের সামনে কিছু ছোট ছোট চুল চলে আসে মিলির।চুলগুলো কপাল থেকে ঝরিয়ে সরিয়ে দিয়ে যেই ধাক্কা লাগা ব্যাক্তির দিকে তাকায় ওমনি মিলি মুখে হাসি ফোঁটায়।মিলির সামনে দাড়িয়ে আছে তারেক।তারেকের কানে ব্লুটুথ। মিলির দিকে তাকিয়ে বলে,”সরি ম্যাম।”
বলেই চলে যায় তারেক।মিলি এখনও তারেকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”হায়!কালোর মধ্যেও কি কিউট লুকস।পুরাই ব্ল্যাক ডায়মন্ড।”

মায়ারাজের বিয়ে শুরু হবে।সবাই মিলে কাজিকে খুঁজতে শুরু করেছে।কাজি এসেছে ঘণ্টা দুই হবে।কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।অবশেষে সবাই পানির শব্দ পেয়ে খাবারের দিকে একটি টেবিলে তাকালো।রুদ্রের হাতে জগ।কাজি মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।আসলে সে অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেই জানে না।হঠাৎ ঘুমের মাঝে এভাবে মাথা ও মুখে পানি পড়ার কারণে লাফিয়ে উঠেছে সে।কাপতে কাপতে বলে,”আরে বউ আমি বাজারে যাচ্ছি।”
কাছে থাকা সবাই এমন দৃশ্য দেখে হেসে দেয়।মাহমুদ সরদার সেদিকে এসে বলে,”কি হয়েছে?”
রুদ্র চেয়ারে হাত রেখে বলে,”আরে বড়বাবা এই কাজি তো ব্রোর বিয়ে দিতে এসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিজের বউকে মিস করে।”

রাজ এগিয়ে এসে শুনতে পেলো রুদ্রের কথা। কাজির উদ্দেশ্যে রাজ বলে,”আরে কাজি তুমি তো দেখছি আসলে একটা পাজি।আমার বিয়েতে এসে আমার গলায় এখনও বউ ঝুলিয়ে না দিয়ে নিজেই বউয়ের স্বপ্ন দেখো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে।কেনো ভাই তুমি কি আমার বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে বউয়ের কাছে যেতে পারোনা?”
কাজি মিনমিন করে বলে,”বউ ছাড়া বিয়ে দিবো কিভাবে?”
রুদ্র ঠোটটা বেকা করে বলে,”নেও ব্যাটা কাজি তো ঘণ্টা দুই ধরে বিয়ে বাড়িতে ঘুমিয়েছিল।নাহলে বউ যে বদল হয়েছে জানতেই পারলো না।”

রাজ কাজির দিকে তাকিয়ে বলে,”শোনো ভাই পাজি মার্কা কাজি।এই সরদার বাড়ির পুরুষদের একটা রেকর্ড আছে।এরা দুইটা করে বিয়ে করে।সেখানে আমি এখনো একটাও বিয়ে করিনি।তুমি ভাবলে কি করে যে আজ এই সেন্টারে শাহমীর রাজ বিয়ে না করে চলে যাবে?”
কাজি শুকনো ঢোক গিলে বলে,”বউ না পালিয়েছে?”
“আরে মিয়া আপনার প্রথম বউ মারা যাওয়ার পরও কি আপনি বউ ছাড়া আছেন? যে আমার বিয়ে থেকে বউ পালালে সন্ন্যাসী হয়ে বসে থাকবো?একটা গেছে আরেকটা এসেছে।”
“এত তাড়াতাড়ি আরেকটা মেয়ে পেয়েও গেলে?”

রুদ্র পিছন থেকে বলে,”আপনি আরেক ঘুম থেকে উঠলে আরেকটা মেয়ে এনে দিব।সে আর কেউ না আপনার ঘরের বউ।ব্যাটা বেশি কথা না বলে যে মেয়েই হোক আপনি বিয়ে দিয়ে দেন ওদের।”
তারপর রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি তোমার আসরে যেয়ে বসতে লাগো আমি কাজিকে নিয়ে আসতে লাগি।”
রাজ চলে গেলো মায়ার কাছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলে,”পাজি ব্যাটা কাজি আসছে আমাদের বিয়ে দিতে আজই।”

“তো আমি কি করব?”
“বিয়ের পর বাসরের জন্য অপেক্ষা করবে।”
মায়া চোখ সরিয়ে তাকালো কাজির দিকে।কাজি এসে মায়াকে দেখে বলে,”বউ মনে হয় রেগে আছে?”
“আপনি আরো দেরি করলে আপনাকে আস্ত গিলে খাবে।এখন শুরু করুন বিয়ে।এভাবে বসে থাকা সম্ভব না।বাসায় যাব তো।”

রুদ্র রসিকতা করে বলে,”বিয়ের পর বাসায় যেয়ে তো সেই ঘরে ঢুকবে।তার জন্য এত ব্যস্ততা কেনো ব্রো?”
রাজ রুদ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগে আহান সরদার এসে মাথায় চাপড় মেরে বলে,”ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলে?আশেপাশে ছোট বড়রা আছে দেখোনা?”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১

রুদ্র মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে পিছনে ফিরে।দেখলো হিয়া হেসে বিড়বিড় করে বলে,”একদম ঠিক আছে।”
রুদ্র চোখ টিপ দেয় সাথে সবার আড়ালে একটা উড়ন্ত চুমু দেয়।যেটা দেখে হিয়া রাগ দেখিয়ে বলে,”নষ্ট পুরুষ একটা।বাইরের মেয়েদের সাথে নষ্টামি করে আবার আমাকে ইঙ্গিত করছে।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here