মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১২

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১২
ইশরাত জাহান

বিষন্ন মনে একা বসে আছে রাজ।কানে তার ব্লুটুথ।ওপর পাশে আছে পিয়াশ।তার কানে ব্লুটুথ যেটা গামছা দিয়ে কপাল বেধে ঢেকে রাখা।সামনে ঝুড়ি ভরা মাছ।একেক সময় একেকজন এসে মাছ কিনে যাচ্ছে। এরমাঝেই এক বৃদ্ধ লোক এসে মাছ দেখতে থাকেন।দুর্ভাগ্যবশত আজকে তার কাছে পিয়াশের সামনের মাছগুলোই টাটকা লাগছে।যেগুলো ফ্রেশ আর নদীর।দাম হয়তো চড়া হবে।তবুও লোকটা একেক মাছের দামদর করতে থাকে।একফাকে জিজ্ঞাসা করে,”ইলিশের কেজি কত করে?”

পিয়াশ জানে বর্তমান দাম।সে ফেইসবুকে দেখেছিল আবার আজকেও পাশের জনের থেকে শুনেছিল তাই বলে,”সতেরোশ টাকা।”
লোকটা শুধু বলল,”ওহ।”
মন খারাপ করে চলে যেতে নেয় আবারও একটু পিছু ফিরে তাকায়।পুরোনো দিনের মানুষ তিনি।মাছের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা তার অনেক বেশি।তিনি দেখেই বুঝতে পারছেন এই মাছের স্বাদ বেশী।সচরাচর পাওয়া যায়না এমন টাটকা মাছ।এগুলো তো এখন বাইরে চলে যায়।লোকটা আবারও এসে বলে,”একটু কমানো যায়না?”
“কত রাখতে চান?”
“একহাজার।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“বাঙালি দেখি একটুতেই চান্স পেলে লাফিয়ে পরে।আগে ইলিশের দাম কত ছিলো খেয়াল আছে?তাও আবার সাইজে ছোট।এগুলো ভালো করে দেখেন চাচা।ডিম আলা ইলিশ তাও আবার মন্ত্রী..”
বলেও থেমে যায় পিয়াশ।এগুলো যে রাজ নিজের মাধ্যমে জোগাড় করে পিয়াশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে এটা বলতে যাচ্ছিল।লোকটা মনটা খারাপ করে চলে যেতে নেয়।পাশে মাছ বিক্রেতার কাছে গেলো।রাজ এতক্ষণে এগুলো শুনছিল।তাই বলে,”ইলিশের দাম আজকের জন্য তোমার দোকানে পাঁচশত করে দেও।”
“একেবারে এক দেড়শ করে দেই?”

রাজ হালকা হাসলো।পিয়াশ রেগে আছে।এতগুলো মাছের সামনে বসে থাকতে তার কষ্ট হচ্ছে।তারউপর আবার একেকজন কিছুক্ষণ পরপর এসে মাছ নিয়ে যাচ্ছে দামে না মিললে গালি পর্যন্ত দিতে থাকে তাকে।অনেকে তো আছে মাছ দেখে দামাদামি করে চলে যায়।পিয়াশ স্থির হয়ে বসতেও পারছে না।রাজ হালকা হেসে বলে,”এবার বুঝলে তো যারা দিনরাত রোদে পুড়ে পরিশ্রম করে তাদের কত কষ্ট?”
“এই কষ্ট বুঝতে হলে একদিন আপনিও ছদ্মবেশে আসুন।সারাদিন তো আপনি ওই এসির মধ্যে বসে থাকেন।বুঝুন আমার কষ্ট।”

“তোমার তো সাহস কম না মন্ত্রীকে কষ্ট দিতে চাও।আমি কি কম কষ্টে আছি?আরে ওই মাছ বিক্রেতার অন্তত বউ তাকে সেবাযত্ন করে আমার কপালে তো তাও জুটে না।উল্টো বউ আমার নামে মামলা করে বসে আছে।”
“বিয়ে করেছেন হলোনা এক রাত এরমধ্যে কি এমন যত্ন চান?”
“সেটা বুঝতে হলে তোমার মত গবেটকে একটা বিয়ে করতে হবে।বাই দ্যা ওয়ে ওনাকে ডেকে আজ অল্প দামেই মাছগুলো দিয়ে দেও।শুধু ওনাকে না আজ সবাইকে কমে দিয়ে দেও।”
“যদি সন্দেহ করে?”
“বলবে তোমার মালিকের বিয়ে উপলক্ষে।সকাল থেকে যে মাছ বিক্রি অনেক ভালো হচ্ছে তাই দুপুরের দিকে দাম কমিয়ে নিচ্ছে।”

পিয়াশ গলা উঁচিয়ে লোকটিকে ডাকে,”ওওও চাচা।আসেন আসেন এদিকে আসেন।”
“আহ আমার পিয়ু বেবী আজ পারফেক্ট মাছ বিক্রেতা হয়েগেছে।”
“হ্যাঁ সেই!একদিন ভিখারী কণ্ঠে আপনার মন জুড়ে যায় আরেকদিন মাছ বিক্রেতার।”
“এমন করোনা।আমি তোমাকে সিনেমার নায়ক হওয়ার সুযোগটাও করে দিবো একদিন।”
“বলিকি এসব না করে একটা বউ এনে দেওয়ার সুযোগ করে দিলেই তো হয়।”
“মন্ত্রীর এখনও বৈবাহিক সুখ হলোনা তুমি মিয়া এখনই সুখ চাও? ছেঃ!”
বৃদ্ধ লোকটা এতক্ষণে এগিয়ে আসে।পিয়াশ তাকে দেখে বলে,”মাছের কেজি পাঁচশত।নিবেন নাকি?”
লোকটা ভ্রু কুঁচকে বলে,”এত কম দামে কেন?”

লোকটা যে এর ভিতর কোনো গড়মিল দেখেছে এটা বুঝলো পিয়াশ।তাই বলে,”আজকে আমাদের মালিকের বউ তারে বাশ দিছে।সেই দুঃখে সে সবাইকে কম দামে মাছ দিয়ে ভালোবাসা কুরাইতে চায়।এদিকে তার দুঃখে আমাগো সুখ লাগছে।কমে দিচ্ছি টাটকা মাছ।আজ সকালেই আনা।নিতে চাইলে নিতে পারেন।”
লোকটি কোনো কথা না বলে নিজে নিজে দুটো মাছ উঠিয়ে দিলো পিয়াশের হাতে। পিয়াশ মাছটা মাপতে থাকে ওদিকে কানে থাকা ব্লুটুথের মাধ্যমে রাজের থেকে শুনছে,”আমার বউয়ের থেকে এই বাশ আমি তোমার পিছন দিয়ে ঢুকিয়ে দিবো হালার পুত।”

পিয়াশ হেসে দিল।পাত্তা দিল না এমন কথার।মন্ত্রী ক্ষেপেছে এবার।লোকটা মাছ নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই এসেছে মাছ নিতে। একে একে করে লোক জানাজানি হওয়ার কারণে রকির কানে গেলো সবকিছু।শুনেই মাথা গরম করে দল নিয়ে আসে বাজারে।মাছের দাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে।এদিকে পিয়াশ কেন এত কম দামে দিবে?তাহলে তারা কি নিবে।কিছুক্ষণের মধ্যেই বাজারে বড়সড় ঝামেলার সৃষ্টি হলো।
রাজের কাছে কল এসেছে।তাকে এখন মিটিংয়ে জয়েন হতে হবে।বিরোধী দল ও মায়াও থাকবে সেখানে।সাথে থাকবে প্রধান বিচারক।দুপুরের খাবারটা খেলো না রাজ।মাহমুদ সরদার রাজের কাছে এসে বলেন,”আমিও যাবো তোমার সাথে।”

“কোনো দরকার নেই বাবা।”
“তোমার নামে মিথ্যা মামলা চলছে।আমাকেই তো তোমার পাশে থাকা উচিত।বাবা হয়ে আমি একদম দূরে থাকতে পারবো না।”
মাহমুদ সরদার নিজেও চিন্তায় আছেন।রাজের বিরুদ্ধে কোনো স্ট্রং প্রমাণ নেই কিন্তু যতটুকু আছে ততটুকু এড়িয়ে যেতে পারবে না রাজ।রকির জবানবন্দি যদি হয়ে থাকে রাজের বিরুদ্ধে তাহলে তো আরও বেশি বিপদ হবে রাজের জন্য।অন্যদিকে তারই বিয়ে করা বউ তার নামে মামলা করে রেখেছে।মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে স্ট্রং প্রমাণ না থাকায় তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।এই প্রমাণ দেওয়ার এখন সময় এসেছে।চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণ দেওয়ার কথা উঠেছিল কিন্তু যে তিনজন মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা তাদেরকে নিয়ে চাপ দিচ্ছে সবাই।মিডিয়া তোলপাড় হয়ে আছে।সিয়া হিয়া মালিনী সবাই টিভির সামনে।কিছু দেখায় কি না দেখার জন্য বসে আছে।সবাই টিভির দিকে অনেকক্ষণ ধরে চেয়ে আছে।এখন জানালো মিটিং লাইভ দেখানো হবে না।হিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,”সংসদ শুরু হলে ডাক দিস।এখানে বসে থেকে টেনশন নিতে পারছি না।আমি সুইমিং পুলের দিকে যাচ্ছি।”

সিয়া কেনো কথা বলছে না।চুপ করে অপেক্ষা করছে।সুইমিং পুলের কাছে এসে বসে আছে হিয়া।পানিতে পা ভিজিয়ে বইতে তার চোখ।কিছুক্ষণ পর এদিকে ওদিক তাকিয়ে দেখলো কোনো গার্ড নেই এদিকে।ফোনে সময় দেখলো।কোনো পুরুষ মানুষ এখন আসবে না।তাই সে সুইমিং পুলে নামলো।ঠিক তখনই সরদার মহলের দরজা দিয়ে ঢুকলো রুদ্রের বাইক।বাইকটা গ্যারেজে রেখে নিজেদের বাড়ির দিকে যাবে ওমনি দেখলো সুইমিং পুলের পানিতে হাত দিয়ে পানি নিয়ে খেলেছে তার হিয়াপাখি।রুদ্র বাইকের চাবিটা আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে হিয়ার দিকে এগিয়ে আসে।সুইমিং পুলের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,”তোকে তো এভাবে কখনো সুইমিং পুলের কাছে আসতে দেখিনি।”
হিয়া রুদ্রের দিকে ফিরে রুদ্রকে দেখে গায়ের কাপড় ঠিক আছে কি না দেখে নেয়।বিরক্ত হয়েই বলে,”এভাবে হুটহাট মেয়ে মানুষ দেখলে চলে আসেন কেন?মেয়েদের প্রাইভেসি বলতেও কিছু থাকে।”

বিড়বিড় করে রুদ্র বলে,”লেংটিকাল থেকে তোর প্রাইভেসি দেখেই বড় হয়েছি আজ আবার নতুন কথা।যাই হোক বড় হয়েছিস পরিবর্তন তো হতেই হবে।সমস্যা নেই বিয়ের পর তোর প্রাইভেসি আমি ওনলি মি করে দিবো।”
হিয়া রুদ্রের দিকে ফিরে বলে,”কি বিড়বিড় করছেন আপনি?”
“ভাবছি।”
“কি?”
“তোর গোসল করতেও চশমা লাগে।চোখের এতটা অধঃপতন হয়েছে।”
“আমার চোখের অধঃপতন হয়নি রুদ্র ভাই।ওটা আপনার চোখের হয়েছে।তাই তো রাস্তার যেকোনো মেয়েকেই পেলে আপনি ঘেষাঘেষি করেন।”

“আমি মেয়েদের সাথে ঘেষাঘেষি করি এটাই শুধু তোর চোখে পড়ে?আর কারোটা তো পড়েনা।”
হিয়া অভিমান করলো।এই কথার উত্তর তার কাছে থাকলেও সে দিবেনা।ধীরপায়ে হেঁটে যেই সুইমিং পুল থেকে উঠতে নিবে রুদ্র ওর হাত ধরে সুইমিং পুলে নামে।হিয়া কঠমঠ চাহনি দিয়ে বলে,”কি শুরু করলেন আপনি?”
“সত্যিটা বললেই তো হয়।”
“কোন সত্যি?”
“ভালোবাসার মানুষটির পাশে অন্য কাউকে দেখলে যতটা মনে আঘাত হয় ততটা বাকি মানুষের বেলায় হয়না।ভালোবাসার মানুষটির ভালো খারাপ সবদিক যেমন আমাদের নজরে থাকে অন্যদের বেলায় সেই বিষয়টা নজরে আসেনা।”

“রুদ্র ভাই।”
হিয়ার নরম চাহনি।রুদ্র তার মন পড়তে শুরু করেছে।এটা তো হিয়া চায় না।কোনো মতেই চায়না।কখনও তো এমন কোনো কথা হিয়া প্রকাশ করেনি।তাহলে বুঝলো কি করে রুদ্র?রুদ্র হিয়ার মুখে ভাই শুনে বিরক্তির সাথে বলে,”তোর বাপের সৎ ভাইয়ের ছেলে লাগি।ভাই ভাই করে কান খাবি না।”
“বাপের সৎ ভাই মানে তো আমার কাকা।তার ছেলে তো আমার ভাইই হয়।তানাহলে কি কাকু বলে ডাকবো?”
“ভাইয়া বাদে কি অন্যকিছু বলা যায়না।”
“হ্যাঁ যায় তো।”

রুদ্র খুশি হলো।ভাবলো তাকে ভালোবেসে অন্তত রুদ্র বলে ডাকবে।কিন্তু হিয়া তাকে বলে,”নষ্ট পুরুষ।”
রুদ্রের মুখটা চুপসে গেল।গা ঝাড়া দিয়ে বলে,”এই নষ্ট পুরুষের বাপের নাতির মা হবি তুই।”
“কিঃ?”
“বুঝিসনি?”
“না।”
“কাছে আয় বুঝিয়ে দিচ্ছি।”

হিয়া কোনো কথা না বলে আবারও উঠতে নেয়।রুদ্র ওর হাত ধরে নিজের কাছে আনে।ঘোরলাগা দৃষ্টিতে দেখছে হিয়াকে।হিয়ার ভিজে যাওয়া চুলগুলো তাকে অন্য জগতে নিয়ে গেলো।রুদ্রের চাহনি দেখে হিয়া বুঝে যায় কোনো অঘটন ঘটবে।তাই নিজের মুখের উপর ওড়না দিয়ে ধরে বলে,”আপনার ছোঁয়াও আমার সহ্য না।”
“একদিন ঠিকই আমার ছোঁয়া পেতে আমার কাছে নিজে আসবি তুই।”
“এতটা দায় আমার পড়েনি।”
“যেদিন ভালোবাসার ক্ষতটা বৃদ্ধি পাবে সেদিন তোর দায় পড়বে।”
রুদ্রের কাছেই ছিলো হিয়া।রুদ্র তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে।এর মাঝেই রুদ্রের মাথায় আঘাত অনুভব করে।পিছনে ঘুরতে নিয়ে বলে,”কে রে?”
পিছনে তাকিয়ে দেখলো আহান সরদার।তিনি মাত্রই এসেছিলেন বাড়িতে।শুনেছেন রুদ্র বাড়িতে ফিরেছে।অন্যদিন এত তাড়াতাড়ি ছেলে তার বাড়িতে আসেনা।ক্রিমিনাল কেস নিয়েই ব্যস্ত থাকে।আজ যেহেতু এসেছে তাই সেও এসেছে।এসেই ছেলের এই আকাম দেখে রাগে তার মাথায় ঢিল ছুঁড়ে মারে।রুদ্র ভ্রুকুটি করে বলে,”এভাবে মারলে কেন?”

“তোমার লজ্জা হওয়া উচিত ইডিয়ট।তাড়াতাড়ি উপরে আসো।”
বলেই চলে গেলেন তিনি।রুদ্রও চলে গেলো তার পিছু।হিয়া হেসে দিল।বিড়বিড় করে রুদ্রকে শুনিয়ে বলেছিলো,”ঠিক হয়েছে।”
হিয়ার মুখটার দিকে ওড়না রাখা ছিল।রুদ্র যদিও এখন কিছু করত না।কিন্তু আহান সরদারের নজরে এতকিছু আসবে না।তিনি গুরুজন হিসেবে ছেলেদের অধঃপতন চাননা।এত তাড়াতাড়ি লোক সমাজে জানাজানি হলে এরা দুজনে কলঙ্কিত হবে।এমনিতেও এই বাড়ির ছোট বউয়ের ছেলে হিসেবে তাকে অনেকের থেকে অনেক কিছুই শুনতে হয়েছে।যেটা বাড়ির লোক বলতো না বলতো পিছনে পড়া লোকেরা।এই ভাইয়ে ভাইয়ে বাদিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অনেকবার করা হয়েছে।আহান সরদার ঘরে এসে সোফায় বসলেন। রুদ্র ড্রেস পাল্টিয়ে এসে বলে,”তোমার ঘরে একা লাগেনা বাবা?”

আহান সরদার পাশে থাকা ছোট ফুলদানি ছুঁড়ে মারে।সাথে সাথেই ধরে নেয় রুদ্র।চোখ ছোট ছোট করে বলে,”তোমার বউমা আনার ব্যবস্থা করছিলাম।তুমি কি না আমাকেই কবরে পাঠিয়ে দিচ্ছ?”
“আমি যেনো এই দৃশ্য আর না দেখি।”
“তুমি এই দৃশ্য দেখবে এটা কি আমি জানতাম?আমি তো জানতাম তুমিও বাসায় নেই।”
“এরমানে আমার পিছে পিছে তুমি মেয়েটাকে এভাবে জ্বালাও?”
“তোমাকে কেন বলব?”
“রুদ্র!”

চোখ গরম করে বলেন।রুদ্র কলার ঠিক করে বলে,”আজ এত তাডাতাড়ি এলে যে?”
“শুনেছি তুমি এসেছো তাই।সময় দিতে চেয়েছি ছেলেকে।”
“কাজ ছিল না আজকে।আজকের কাজটা জেসি করে নিতে পারবে।”
“তোমার ভাইটা আসবে।ওর তো বিয়ের সানাই বাজাবো।একসাথে কি তোমারটাও বাজাবো?”
“আগে ভাই আসুক।এবার সানাই বাজে নাকি অন্যকিছু দেখতে পাবে।”
“কি করতে চলেছো তোমরা?”
“আমি তো কিছুই করব না।যা করার তোমার ছেলে করবে এবার।আমি আমার মত ইনভেস্টিগেশন চালাচ্ছি।”
“এটাতে যেনো কারো বিপদ নাহয়।”
“যারা বিপদে আছে তাদেরকে বাঁচাতে চাই বাবা।হয়তো এতে অনেকের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটবে আবার অনেকের মৃত্যু।”
আহান সরদার চলে গেলেন রান্নাঘরে।আজ বাবা ছেলে একসাথে খাবেন।কাজের ব্যাস্ততায় এই সুযোগ খুব কম পায় তারা।

জারা এক নিশ্বাস নিয়ে পিছনে ফিরে বীরের চোখে চোখ রেখে বলে,”সমস্যা কি আপনার?”
“আমার সমস্যা তুমি জানো না?”
“না জানি না।প্রথম থেকে তো এমন পিছু নিতেন না।এখন এত টান কেন?”
“প্রথমে তুমি আমার মনে ভালোবাসা জাগিয়েছো এখন যখন একবার ভালোবেসেছি তখন দূরে যেতে দিবো না তোমাকে।”
“আমার সাথে ব্রেকআপ করবেন না?”
“না।”
“শিওর তো?”
“হুমম।”
“আবারও বলছি শিওর তো?”
“আরে বাবা হ্যাঁ।”
“তাহলে চলুন।”
“কোথায়?”
“শপিং করতে।আপনার এই বিরক্ত করাটা আমিও এবার বাড়িয়ে দিবো।”

বলেই জারা ভিতরে চলে গেলো।মৌকে নিয়ে ড্রেস সিলেক্ট করছে।একটার পর একটা জামা নিতে নিতে মত ত্রিশের মত সেট নিয়েছে সে।মৌ হা হয়ে দেখছে। বীর তার মত কুল হয়ে দাড়িয়ে আছে।বুকে হাত গুজে জারার এই কান্ড দেখতে ব্যাস্ত সে।জারা কিছু কসমেটিকস নিলো।লিপস্টিক এর একেকটা কালার ঠোঁটে দিয়ে পাউট করে তো একবার ইইইই করে দেখছে।জারার পিছনে একজন যুবক ছিলো।তাকে দেখিয়ে জারা বলে,”মানিয়েছে আমাকে?”
যুবকটি হাতের ইশারায় বুঝালো অনেক সুন্দর লাগছে।বীর এসে লিপস্টিক কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলো ডাস্টবিনে।জারাকে কাধে করে নিয়ে বলে,”পাগলের পাগলামি বাড়তে থাকবে।বোন তুই বিল পেয় কর আমি এই পাগলিটাকে নিয়ে যাই।”

মিটিং শুরু হলো একটি চ্যানেলের মাধ্যমে।সামনাসামনি বসে আছে তিনজন ব্যাক্তি।মায়া রাজ ও বিরোধী দলের হয়ে আরশাদ।বড় আসনে বসে আছে বিচারক।দূরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু ব্যক্তি ও মাহমুদ সরদার।বিচারকের বয়ানে মায়া কিছু কাগজপত্র দেখালো।ওগুলো দেখিয়ে বলে,”আমার কাছে যেসব ইনফরমেশন আছে এগুলো আমি আপনার সামনে প্রবেশ করলাম।”
“আপনি কি বলতে চান?মন্ত্রী শাহমীর রাজ অপরাধী?”

মায়া রাজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”এই পৃথিবীতে একেবারে সাধু বলে কোনো ব্যক্তি হয়না।তাই আমি শিওর বলতে পারব না উনি কেমন?আমার তথ্য অনুসারে আমার আইডিয়া এগুলো উনি করেছেন।আমার শুধু একটাই চাওয়া।আইনের সঠিক বিচার ও মেয়েগুলোর জীবন রক্ষা পাওয়া।”
পিছনে বসে থাকা লোকগুলো হাততালি দিলো।মায়ার কথাগুলো তাদের মনে ধরেছে।বিচারক কাগজগুলো দেখলো।উনি সবকিছু দেখে বলেন,”এখানে কোনো শক্তপোক্ত প্রমাণ নেই যেটা শাহমীর রাজকে আসামি বলে দাবি করা যায়।”

আরশাদ আরচোখে তাকালো রাজের দিকে।বিচারক আবারও বলে,”তবে শাহমীর রাজ যদি তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে না পারেন তাহলে এগুলো দিয়েই তাকে আসামি বলে দাবি করা হবে।”
আরশাদ ওর অ্যাসিসট্যান্ট এর দিকে হাত বাড়ালো।অ্যাসিস্টেন্ট কিছু ফাইল দিলো।যেগুলো বিচারকের হাতে দিয়ে বলে,”আমার ইনফর্মেশন অনুযায়ী শাহমীর রাজের চেলাপেলা ইদানিং খুব বেড়েছে।তারা একটুতেই মন্ত্রীর নাম করে লুটপাট করে।গরিবের হক মেরে খান তিনি।এমন মন্ত্রী কি দেশকে রক্ষা করতে পারবে?”
প্রমাণ অনুযায়ী এগুলো সত্য প্রমাণ হলো।বিচারক এগুলো দেখে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি কি কিছু বলবেন আপনার হয়ে?”

রাজ এতক্ষণ মায়ার চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিল।কিছু একটা ভেবে বলে,”মিস্টার আরশাদ আমার নামে যেগুলো প্রমাণ দিলো তার বিরুদ্ধে আমার একটাই কথা আমার লোক আমার নাম করে লুটপাট করলেও আমি কি করেছি বা আমাকেই তাদের সাজেস্ট করতে দেখা গিয়েছে?”
আরশাদ আলতো হেসে বলে,”নাটের গুরু তো আপনি।এছাড়া মিস মায়া তো আপনার উপরেই মামলা করেছে।”
রাজ ম্লান হেসে বলে,”সে নাহয় আমার বউয়ের ভুল বুঝাবুঝি দ্বারা একটু ছোটখাট পাগলামি।মিয়া বিবির ভুল বুঝাবুঝি মিটে যাবে তখনই, যখন আমরা হবো চার দেয়ালে বন্দী।”
মাহমুদ সরদার বিরক্ত হতে মনে মনে বলেন,”ছেলেটা আমার এখনও বাসরে বিভোর।জন্মের সময় বউটা আমার কি এমন খেয়েছিল যে ছেলে আমার বউ ছাড়া কিছুই বুঝেনা?”
আরশাদ ভ্রু কুঁচকে বলে,”বউ?”

“এই যাহ!আপনার তদন্তে একটু মিস হয়ে গেলো?আপনি যার সাথে মিলে আমার নামে মামলা করছেন সে তো আমারই বউ।”
আরশাদ মায়ার দিকে তাকালো।মায়া উঠে দাড়িয়ে বলে,”এখানে আপনার উপর যে দায় চাপানো হয়েছে তার সলিউশন করুন।”
রাজ নিজেও দাড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে,”মিস জেসি।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১১

জেসি এলো রকিকে নিয়ে।রকির কপাল ফেটে রক্ত।মুখের অবস্থা বেশ খারাপ।আরশাদ অবাক হয়ে আছে।এই ছেলেকে তো সে আজকেও বাজারে পাঠিয়েছিল চাঁদাবাজি করতে।ধরা পড়ল কিভাবে?মায়া অবাক হয়ে আছে কারণ সে জানতো পিয়াশ মাছ বিক্রেতা সেজেছিল।আর এই রকি ওখানে ঝামেলা তৈরি করেছে।কিন্তু জেসি মেয়েটার ব্যাপারে জানতো না মায়া।মায়া এবার রাজের দিকে তাকালো।রাজ মায়ার দিকে চোখ টিপ দিয়ে মায়ার কাছে এসে বলে,”বাসরটা তো আজ রাতে হবেই বউ।ওটা কি মিস করা যায়?তাই তো হাটে হাড়ি ভাঙার প্ল্যান করেই এসেছি।এখন শুধু বাড়ি যাবো আর শুরু করে দিবো তোমার আমার সুখের বাথরুম বিলাস।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here