মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৮
ইশরাত জাহান
“পিয়ু বেবী আমার বউয়ের এখন বর্তমান অবস্থা কি?”
“ভালো স্যার।”
“তুমি লাস্ট কখন চেক করেছো?”
“এই তো পাঁচ মিনিট আগেই গিয়েছিলাম।”
“এতক্ষণ হয়ে গেলো তুমি বলছ এই তো!এখনই যাও গিয়ে দেখো ওর কিছু লাগবে কি না।”
পিয়াশ কপালে ফোনটা নিয়ে একটা বাড়ি মারে।এই নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে উপর নিচ করে পা মনে হয় আসমানে উড়ায় দিছে। হাটার শক্তি পাচ্ছে না আর।না পেরে বলে,”একটা কাজ করি স্যার?”
“কি কাজ?”
“আমি ম্যামের ঘরে বসে থাকি।আপনি আসলেই আমি চলে আসব।”
“এই একদমই না।তুমি আমার ঘরে বসবে না।তোমার তো সাহস কম না আমার বউয়ের পাশে বসে থাকতে চাও!”
“এই যে আমাকে দিয়ে পায়চারি করাচ্ছেন এটাকে কি বলে?”
“এটাকে বলে মন্ত্রীর বউয়ের সেবা করা।”
“নিকুচি করি এমন সেবার।আমি রিজাইন দিবো শীঘ্রই।”
“আমার এখান থেকে বের হয়ে কোন কাজটা করবে তুমি ভেবে রেখেছো?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পিয়াশ ভাবছে এখন।কোনো কাজই তো সে পাবেনা।গরীব ঘরের বেড়ে ওঠা ছেলে।পড়াশোনা বলতে তো ওই এইচ এস সি।এরপর বাবা মারা যায়।রিক্সা চালিয়ে দিন পার করতো বাবা।এরপর যে মা তাকে হারালো।এদিক ওদিক পথে হাঁটাহাঁটি করে দিন পার করতে হয় তাকে।মাহমুদ সরদারের দয়ায় সে পড়াশোনা করেছিলো পরে।তাও ওই অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত।এরপর আর তার পড়তে ভালো লাগেনা।রাজের দলের লোকেদের সাথে আড্ডায় থাকতো বেশি।এর কারণেই রাজ ওকে ওর অ্যাসিসট্যান্ট বানিয়েছে।জোর করে কলেজেও ভর্তি করিয়ে রাখছে।ওই পরীক্ষার সময়টুকু চার ঘণ্টার জন্য কলেজেটার দর্শন দিয়ে আসে।এরপর বই খাতা কোথায় সে তো জানেই না।এই রেজাল্টে ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব না।আবার বিলাসিতা কাটানোর পর ছোটখাটো কোথাও যাওয়া মানেই তো বেক্কলের পরিচয় দেওয়া।তাই পিয়াশ বাধ্য হয়ে বলে,”যাচ্ছি আমি আপনার বউয়ের কাছে।খোঁজ নিয়ে এসে জানাচ্ছি।আগে জানলে জীবনেও আপনাকে সমাবেশে পাঠাতাম না।”
রাজ ওর কালো ঠোঁটের দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলে,”তোমার আগেই ভাবা উচিত ছিল।যখন তুমি আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছিলে।শুধু কি তাই?আমার অসুস্থ বউকে একা রেখে আমাকে এখানে আসতে হয়েছে তোমার জন্য।এটুকুর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।”
“আমার শিক্ষা হয়েছে বস।এরপর থেকে আপনার বউকে আপনার আঁচলের নিচেই রেখে দিবেন।আমি বাধা দিব না।”
“আমার বউয়ের আঁচলের নিচে তো আমি থাকি।তাতে তোমার বাবার তো আপত্তি থাকার কথা না।”
“আমি তো আপত্তি করছি না।”
“তোমার কথার টোন তো বলে তুমি আপত্তি করছো।আমি এটাই বুঝিনা আমি যদি আমার বউকে কোলে নিয়ে পুরো দুনিয়া দেখি তো আমার টাকায় আমার অধিকারে সবকিছু করি।এতে জনগণের আপত্তি কোথায়?”
“না বস আপনি একদম ঠিক আছেন।আমিই যাচ্ছি আপনার বউয়ের খোঁজ নিতে।”
এর মাঝেই মায়ার চিৎকারের শব্দ পায় রাজ।এতক্ষণ চেয়ারে বসে ছিল।সমাবেশের ভাষণ শেষ করে একটু আরাম নিচ্ছিল সে।মায়ার চিৎকারে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো।পিয়াশ নিজেও পিছনে ঘুরে দেখলো মায়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়াতে গড়াতে পড়ছে।পিয়াশ নিজেও দিশেহারা হয়ে চিৎকার করে বলে,”ম্যাম।”
বলেই দৌড় দিয়ে মায়ার হাতদুটো ধরে বসিয়ে দেয়।মায়ার কপালে আগে থেকেই ঘায়ের চিহ্ন ছিল।চেয়ারের সাথে ধাক্কা লাগার জন্য।আজকে আবারও সেখানে ফেটে রক্ত ঝরছে।পিয়াশ মায়াকে বসিয়ে দেখলো ওখানে সাবান পানি রাখা।চিৎকারের শব্দে সার্ভেন্ট ও বাসায় থাকা কিছু সদস্য ছুটে আসে।যেই মহিলা এখানে সাবান পানি রেখেছিল সে ওখানেই ছিলো।সে তো পানি ছিটিয়ে একটু পাশে গিয়েছিল ফুলদানি সরাতে।সাবান পানি রাখার কারণ সিঁড়ি পরিষ্কার করা।ফুলদানি সরিয়েছে কারণ ওই জায়গাটাও পরিষ্কার করতে হবে।মায়া যে এখন আসবে এটা বুঝতে পারেনি।এই সময়টা বাসায় তেমন কেউ থাকেনা।তাই ঘর পরিষ্কারের কাজগুলো এই সময়টাতে সেরে নেয়।
মায়াকে এভাবে আহত হতে দেখে ভয়তে কাপছে মহিলাটি।হাতে তার ঘর মোছার মপ।যেটা ধরে কাপছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে।মনে মনে হয়তো দোয়া পাঠ করছে।মায়া নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে গেলো।মাথা ঘুরছে ওর।হিয়া বাসায় নেই।সিয়া আর মালিনী,সোনালী এরা আছে শুধু।সিয়া আর পিয়াশ মিলে দুইহাত ধরে মায়াকে উঠিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।সোনালী দেখলো সিঁড়িতে সাবান পানি।পাশে তাকাতেই মহিলাটিকে কাপতে দেখে বুঝল এই সে যার জন্য মায়া পড়েছে।মনে মনে শয়তানি হাসি দিলো।সোজা এসে মহিলাটিকে থাপ্পড় মেরে দিলো।মায়ার চোখ বন্ধ তাই সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।কিন্তু কান অব্দি সবই পৌঁছাচ্ছে।সিয়া বলে ওঠে,”আন্টিকে কেন মারলে?”
“কারণ ওর জন্যই আমাদের বউমা পড়ে আঘাত পেয়েছে।ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে।”
বলেই আরো একটা থাপ্পড় দিলো।মহিলাটি নিচে পড়ে গেলো।কান্না করছে সে।ইচ্ছা করে তো দোষ করেনি।কাজ করতে গেলে এমন অ্যাক্সিডেন্ট হয়েই থাকে।তাই বলে বড়লোক হয়ে এরা অমানুষের পরিচয় দিবে?গরীব তো তার ভাগ্যের দোষে।তাই তো এই বড়লোক বাড়ির কাজের লোক হয়েছে।অথচ সবাই তো আল্লাহর সৃষ্টি।শুধু পরিচয়ের জন্য তফাৎ দেখা দিচ্ছে।মহিলাটি কান্না করছে শুধু।সিয়া আবারও বাধা দিতে চায় কিন্তু ওকে আটকালো মালিনী।না পেরে একটু দূরে গিয়ে কল দিলো মাহমুদ সরদারের কাছে।ও তো থামতে বলছে কিন্তু শুনছে না কেউ।এখন আবার সোনালীর অনুমতিতে মহিলাটিকে বেধে রাখা হলো।সোনালী বলে,”ওকে চাবুকের আঘাত করো।এমন কাজ যেনো ও দ্বিতীয়বার না করে এটা ওকে বুঝতে হবে।”
মায়া এবার চেষ্টা করছে ওর চোখ খোলার।কষ্ট হচ্ছে খুব।কপালে ব্যাথা বেড়েছে।সিয়া মেডিসিন বক্স আনতে যেতো কিন্তু সোনালীর এই কান্ড দেখে অবাক পরে ওকে আটকাতে গিয়েই আনা হয়না।এখন গেলো মেডিসিন বক্স আনতে।পিয়াশ সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলে,”এভাবে অসহায় নারীকে আঘাত করার কোনো মানে নেই।উনি একজন মানুষ।না বুঝে এমন করেছে।”
“এতটাও অবুঝ না যে এভাবে সিঁড়িতে সাবান পানি ফেলে অন্যদিকে ব্যাস্ত থাকবে।ওর কাজ ও শেষ না করে অন্য কাজে যায় কিভাবে?ওকে তো শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতেই হবে ওর যোগ্যতা কোথায়।মায়ার অবস্থার জন্য দায়ী।”
“আপনি এটা ঠিক করছেন না ম্যাম।”
“তুমি দুই টাকার বডিগার্ড তো এগুলো বলবেই।লেভেল বুঝে কথা বলতে হয়।এটা জানো তো?আমাদের পরিবারের বিষয়ে নাকটা গলাতে এসো না তাহলে তোমাকেও ভুগতে হবে।”
পিয়াশের ইগোতে আঘাত করলো সোনালী।অন্যদিকে দাড়িয়ে আছে মালিনী।সে কাউকেই কিছু বলছে না।এর মানে তো স্পষ্ট যে সে সোনালীকে সাপোর্ট করছে।মায়া এগুলো সহ্য করতে না পারায় একটু একটু করে চোখ খুলে হাতটা বাড়িয়ে দিতে যায়।কিন্তু সে তাও পারছে না।একটু দাড়িয়ে যেই সোনালীকে কিছু বলতে যাবে ওমনি মাথাটা ঘুরে ওঠে আবার।নিচে বসে পড়ে।পিয়াশ আরেকজন সার্ভেন্টকে বলে,”ম্যামকে উপরে নিয়ে যেতে হবে।আমাকে হেল্প কর।”
সার্ভেন্ট মহিলাটি এসে মায়ার মাথাটা নিজের কাধে নেয়।মায়া বিড়বিড় করে বলে,”উ উনি অসহায়।মারবেন না।”
সার্ভেন্ট মহিলাটি শুনতে পেলো।কান্না করে দিলো সেও।মনে মনে বলছে,”তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন ম্যাম।অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।আপনি আপনার ক্ষমতা দিয়ে ওদেরকে আটকাতে পারবেন।সিয়া ম্যামের কথাও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।আপনি একটু সাহসী আছেন।তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন ম্যাম।”
কান্না করতে করতেই দেখেশুনে উপরে উঠলো।মায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ব্যালকনির দিকে গেলো।ওখানে গিয়ে দেখতে পেলো ওই মহিলাটিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বাগানের একটি গাছে বেধে রাখা হয়েছে।সার্ভেন্ট মহিলাটি বৃদ্ধ।এই বাড়িতে কাজ করে বহু বছর ধরে।মনে পড়ে গেলো তার সেই পুরোনো কথা।শাহানা পারভিন ও মোহনা।এরা দুজন বাড়ির প্রত্যেকের সাথে কত ভালোবাসা দেখিয়ে কথা বলতো।যেদিন মাহমুদ সরদার চলে গেলো গ্রামে।কোনো এক কাজে তাকে ব্যাস্ত থাকতে হয়।কয়েক সপ্তাহের জন্য।ঠিক তখনই পাল্টে গেলো সবকিছু।বাড়িতে হাজির হয় মোহন সরদারের দ্বিতীয় বউ সোনালী।যার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল এক ছেলে।নাম তার মিহির।যাদের পরিচয় জেনে ভেঙ্গে পড়ল শাহানা পারভিন।এর ঠিক কিছুদিন পরে বাড়িতে আসে রাজ এর পরিচয়ে তাজ।
এসেই জালিমের মত আচরণ করে।ঠিক এভাবেই এক সার্ভেন্টকে শাস্তি দেওয়া হয়।শাহানা পারভিন বাধা দেওয়ায় ওইদিন মোহন সরদার তাকে খুব মেরেছিল।ভেবেই কান্না করে দেয়।ঘরে এসে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।হঠাৎ করে তার চোখ গেলো গলার কাছে।মোহনার জন্মের সময় একজোড়া লাল তিল হয়।যেটা বড় হওয়ার সাথে সাথে একটু বড় হয়ে।সেই জোড়া লাল তিল দেখে সার্ভেন্ট মহিলা মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।কান্নামাখা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”মোহ মা ফিরে এসেছে।এই জন্যই বলি মোহ মায়ের মত করে সবাইকে এত ভালোবাসে আর ওদেরকে প্রতি পদে হেনস্তা করে কেন?আমি তোমাকে কিছু সত্যি কথা বলব মোহ মা।তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হও।”
সিয়া দৌড়ে এসে মায়ার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেয়।মায়াকে চেক করে।জ্বর বাড়ছে।ওদিকে মহিলাটিকে দেখে নিলো একবার।বারবার মাহমুদ সরদারের কাছে কল দিচ্ছে আর মায়ার সেবা করছে।মালিনী বাধা না দিলে সিয়াই পারতো সোনালীকে বাধা দিতে।কাজ হচ্ছে না কোনো।মায়ার জ্ঞান আছে তবুও আজ অকেজো।সে খুব ভালো করেই জানে এগুলো মায়াকে দেখানোর জন্যই করছে সোনালী।নাহলে মায়ার আঘাতে তার কি এসে যায়?মায়া মনে মনে বলে,”একবার আমি উঠি বিছানা থেকে।আমি এই মহিলার হয়ে হিসাব নিব সোনালীর কাছ থেকে।একেক করে কতগুলো মহিলার জীবনে আঘাত করবে সে?এবার তার পাল্টা আঘাত পাওয়ার সময় হয়েছে।”
জারা দৌড়াচ্ছে নিজ গতিতে।পিছনে তাকে ধরার চেষ্টায় আছে বীরের শত্রুদল।জারাকে ধরে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।বীরের পিছনে লোক লাগানোর জন্য সবকিছু জানতে পারে।আজকেও জারা সুযোগ পেয়ে পালাতে চেয়েছিল।মূলত আজকেও তার উদ্দেশ্য ছিল বীরকে নতুনভাবে জ্বালানোর।যেটা তার কয়েকদিন কাজে দিবে।কিন্তু বীরকে জ্বালাতে গিয়ে যে নিজে ফাঁদে পড়বে এটা বুঝতে পারেনি।জারা কাউকে কল দিলো।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই জারা বলে,”ইডিয়ট!আমি বলেছিলাম আমাকে তারা করতে লোক পাঠাতে।এত লেট করলে কেন?এখন আমার পিছনে বীরের সত্যিকারের শত্রুদল লেগেছে।আমাকে মেরে ফেলতে চায় ওরা।আমার বন্দুকটাও কাছে নেই।তাড়াতাড়ি আসো তুমি।”
ওপাশ থেকে বলে,”ওকে ম্যাম।”
জারা নিজের গায়ের শক্তি দিয়ে অতিদ্রুত দৌড়াতে থাকে।অনেকক্ষণ ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সামনে এসে আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে যায়।জারার সামনে কিছু চুল এসে পড়ে।যেগুলো সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো গাড়ির মধ্যে বীর।যাকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো জারা।কিন্তু বীর তো একা।একা বীর তো পারবে না এদের সাথে।নিজের পাতানো লোকজন হলে তো তাও ওরা টাকার বিনিময়ে মার খেয়ে বীরকে জিতিয়ে দিতো।এখন কি হবে?জারা পিছনে তাকিয়ে দেখলো লোকগুলো এগিয়ে এসেছে।বীর পা দিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে চোখে সানগ্লাস দিয়ে বাইরে আসে।বীরকে দেখেই লোকগুলো ওখানে পা থামিয়ে।বীর ওর পরণের কোট ঠিক করে জারার দিকে তাকিয়ে বলে,”আজকেও পালাতে চেয়েছিলে জানেমান?”
জারা পিছনে তাকিয়ে বলে,”ওরা আমার পিছনে লেগেছে।আপনাকেও মেরে ফেলবে।আপনি পালান।”
বলেই বীরের হাত ধরে গাড়িতে উঠতে চায়।তখনই পিছন থেকে একজন বলে,”মালটাকে ধর তাড়াতাড়ি।নাহলে পালাবে তো।”
বীরের পা থেমে গেলো।জারা বীরকে নিয়ে এগোতে চায়।কিন্তু বীর দাড়িয়েই আছে।জারা বলে,”আপনার বডিগার্ড নেই এখানে।তাড়াতাড়ি গড়িয়ে উঠুন।”
বীর রক্তিম চোখে তাকালো লোকগুলোর দিকে।রাগ মিশ্রিত চোখেই বলে,”ওকে মাল বলেছিস কে?”
ওরা কিছু বলার আগে জারা বলে,”আপনি পরেও ব্যাবস্থা নিতে পারবেন তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠুন।”
বীর জারাকে গাড়িতে উঠিয়ে দরজাটা পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে লাগিয়ে দিলো।এরপর লোকগুলোর দিকে এগিয়ে এসে বলে,”এবার বল কে আমার জানেমানকে মাল বলেছিস?”
একজন লোক এগিয়ে এসে বলে,”আমি বলেছি রে।কেন,কি করবি?
বীর কোনো কথা না বলেই হাতটা পেট বরাবর এগিয়ে দেয়।বীরের মুখে হাসি।চোখটা রাগে লাল।লোকটা ঢলে পড়ছে নিচের দিকে।নিচে পড়ে গেলেই পাশের লোকগুলো দেখতে পেলো পেট দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে।বাকি লোকগুলো অবাক হয়ে বীরের হাতের দিকে তাকালো।হাতে একটি ছুরি নিয়ে দাড়িয়ে আছে বীর।কখন কিভাবে কোথা থেকে বের করলো এই ছুরি কেউ জানেনা।বুঝতেই তো পারল না কিছু।ওরা অবাক হয়ে আছে।বীর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়েই দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”মাফিয়ার আলাদা একটা ক্যাপাসিটি থাকে।যেটা তোরা ছোটখাটো চামচা বুঝবি না।”
বলেই বীর একেকজনকে আঘাত করতে থাকে।বীর সবাইকে আঘাত করছে এদিকে গাড়ির ভিতর থেকে রহস্যময় হাসি দিলো জারা।কল করে নিজের লোককে জানালো,”তোমাদেরকে আসতে হবে না।আমার হ্যান্ডসাম নিজেই সবটা ম্যানেজ করে নিয়েছে।”
ওপাশ থেকে বলে,”ওকে ম্যাম।”
বীর মারামারি শেষ করে গাড়ির দিকে ফিরতে নেয়।কোটটা আবারও ঝাড়া দিয়ে ঠিক করে।জারা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”মাফিয়া হ্যান্ডু আমার।জানেই না সে যাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখেছে সে একজন লেডি মাফিয়া রানী।”
অতঃপর আবার একটু মন খারাপ করলো জারা।কিছু একটা ভেবে বলে,”আমাদের কি মিলন হবে?সবকিছু জেনেও যদি বীর আমাকে মেনে নিতে রাজি হয় তাহলে আমরা দুই মাফিয়া এক হতে পারব।নাহলে আমরা দুজন দুদিকে।কিন্তু বীরের জন্য আমি আমার প্রতিশোধের কথা ভুলতে পারব না।এই জগতে আসার কারণটাই তো আমার প্রতিশোধ সম্পূর্ণ করা।”
জারা ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে বলে,”মাফিয়ার রানীর একটাই উদ্দেশ্য আর সেটা হলো মাফিয়ার রাজার দ্বারা নিজের স্বার্থ হাসিল করা।”
ক্লাস শেষ করে বাইরে আসে হিয়া।এদিক ওদিক তাকিয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তিকে পেলো না।সকালে যার সাথে করে কলেজে এসেছিলো তাকেই খুঁজছে সে।না পেয়ে কল দিলো তাকে।ওপাশ থেকে রিসিভ করতেই কানে ভেসে আসলো নারী কন্ঠ।মহিলাটি বলে,”হ্যালো,কাকে চাই?”
“তনয় আছে?”
“তনয় তো হাসপাতালে ভর্তি।”
মহিলার কণ্ঠে কান্নার প্রকাশ পেলো।হিয়া প্রশ্ন করে,”আপনি কে?”
“আমি ওর মা।”
“তনয়ের কি হয়েছে আন্টি?”
“আমি তো জানিনা মা।শুধু শুনলাম এক্সিডেন্ট করেছে।এখনও অজ্ঞান হয়ে আছে আমার ছেলেটা।”
“ওর জ্ঞান ফিরলে আমাকে জানাবেন আন্টি।”
“আচ্ছা মা।”
হিয়া কল কাটতেই তনয়ের মা তাকালো রুদ্রের দিকে।রুদ্র মৃদু হেসে বলে,”তনয়ের মায়ের অভিনয়ে তুমি বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পাবে জেসি।”
জেসি হালকা হেসে ফোনটা তনয়ের কাছে রাখলো।ছেলেটার নাকে মুখে ব্যান্ডেজ করা।এগুলো হতো না যদি রুদ্রের এক কথা শুনে রাজি হয়ে যেতো।বেশি বাড়াবাড়ি করেছিলো সে রুদ্রের সাথে।এক প্রকার তর্কে জুড়েছিল।রাগে ধৈর্য হারিয়ে ছেলেটার নাক মুখ ফাটিয়ে হসপিটালের রুগী বানিয়ে দিলো।রুদ্র এবার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার হিয়াপাখির থেকে দশহাত দূরে থাকবি।না থাকলে আবারও নার্সের সুন্দর মুখগুলি দেখার সুযোগ পাবি।শুধু তাই না তাদের কিউট কিউট নরম হাতের ইনজেকশন ফ্রীতে ভোগ করবি।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৭
তনয় ভয়তে বলে ওঠে,”ঠিক আছে স্যার।”
“আর একটা কথা।সিনিয়রদের সম্মান করে চলবি।বেয়াদপি করতে যেনো না দেখি।”
তনয় মাথা কাত করে।ব্যাথা পায় তবুও কিছু বলে না।রুদ্র হালকা হেসে বিদায় নেয়।
