মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২০

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২০
ইশরাত জাহান

আনমনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে পিয়াশ।রাজের দলের একজনকে জানিয়ে দিয়েছে সে আর এই চাকরি করবে না।যেখানে সম্মান নেই সেখানে থাকার প্রয়োজন নেই।আজ অনেক বড় অপমান তাকে সোনালী করেছে।যেটা পিয়াশকে খুব বাজে ভাবে আঘাত করেছে।এমনিতেও নিজের ভাগ্য নিয়ে কষ্ট হয় মনের মধ্যে।এর ভিতর আবার তার মধ্যবিত্ত জীবন নিয়ে খোচা।মানুষ হয়ে একজন মানুষকেই তো আমাদের সহায়তা করতে হবে।এটা সব মানবের মস্তিষ্কে থাকলে আজ পৃথিবীতে এতকিছুর সম্মুখীন হতে হয় না।

পিয়াশ ওর বাবা মায়ের সাথে যেখানে থাকতো ওখানেই যাচ্ছে।এতদিন তো ফ্ল্যাটে ছিলো।ওই বাসাটায় যাওয়ার আগে একটা আবাসিক হোটেল বাদে।যেটা পার করে যেতে হয় বাসায়।আজকে যেই হোটেলটা ক্রস করতে নিবে ওমনি পিয়াশের পিছন থেকে জাপটে আঁকড়ে ধরে কেউ।পিয়াশ ব্যালেন্স হারা হয়ে মাটিতে পড়তে যায়।কিন্তু পাশের খাম্বাটার সহায়তায় আর পড়তে পারেনা।পিয়াশ নিজেকে ঠিক করে পিছনে ফিরে।দেখতে পায় সামনে দাঁড়িয়ে আছে গেঞ্জির উপরে জ্যাকেট ও নিচে ব্ল্যাক জিন্স পরা এক নারী।যার চোখেমুখে আতঙ্ক।কাধে ব্যাগ ও হাতে ছোট একটি কাগজ।পিয়াশ বলে ওঠে,”এভাবে জাপটে ধরলেন কেন?”
মৌ এতক্ষণ হাঁপাচ্ছিল।এবার পিয়াশের দিকে ফিরে বলে,”আসলে আমি ইচ্ছা করে জাপটে ধরিনি।ওই পালাতে গিয়ে আপনি বাধা হয়ে গেছিলেন।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মানে?”
“মানে এই যে,আমি খুব দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছিলাম।আপনি খুব আস্তে পিঁপড়ার গতিতে হাটছিলেন।এই জন্য এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
পিয়াশ বুঝলো।তাই কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে নেয়।মৌ বলে ওঠে,”একটা হেল্প করবেন আমাকে?”
“কি হেল্প?”
“আপনার ফোন হবে?আসলে আমার ফোনের চার্জ শেষ।বাসা থেকে বের হবার সময় খেয়াল করিনি ফোনের চার্জ আট পার্সেন্ট ছিলো।এখন এতদূর গান শুনতে শুনতে এসে দেখি ফোন বন্ধ।”
“কোথায় এসেছিলেন?”
“এই হোটেলে।”
পিয়াশ এবার নাক সিটকে পিছিয়ে দাড়ালো।মৌ বুঝতে না পেরে বলে,”কি হলো?এভাবে পিচাচ্ছেন কেন?”

“আপনি এসব করে বেড়ান?ছিঃ!”
“এই এই এসব মানে কিসব?”
“আপনি যে হোটেলে এসেছেন সেখানে যে কাজ হয় সেই কাজের কথা বলছি।”
“কেন এই হোটেলে কি?আর পুলিশ এসে মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে কেন?”
“আপনার হাতে ওটা কি?”
মৌ কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে,”এটা তো টিকিট।রুম বুক করেছি তাই।”
পিয়াশ নেড়ে চেড়ে দেখলো।অতঃপর বলে,”আপনি জানতেন না এখানে আজ কি হবে?”
“না,আমি তো ঢাকার বেস্ট হোটেল ওয়েবসাইটে দেখছিলাম।স্টাডি এর জন্য।”
“আপনি স্টাডি এর জন্য এসেছেন?”

“হ্যা,আসলে আমার আর্ট কম্পিটিশন আছে।কিন্তু থাকার কোনো জায়গা নেই।এখন একটা হোটেলে থাকতে চাই তিনদিনের জন্য।এই কম্পিটিশনে জিতলে আমি আমাদের কোম্পানিতেই জব পাব।আমার আপু বলেছে।আমাকে কিছু ডিজাইনের জন্য তার কোম্পানিতে জব দিবে।কিন্তু আমি দক্ষ না হলে দিবেনা।এখন আমার আপুটাই তো হারিয়ে গেছে।”

শেষের কথাটা মন খারাপ করে বলে মৌ।যার কারণে পিয়াশ মনে করে মৌয়ের বোন হয়তো নিখোঁজ।মৌয়ের কষ্টটা দেখে পিয়াশ নিজেও একটু দুঃখ প্রকাশ করলো,”আসলে এটা আবাসিক হোটেল।এখানে ভালো ছেলে মেয়েরা আসেনা।প্রায় সময় এদিকটায় সার্চ করা হয়।কোনো আসামি বা বেআইনি কিছুর খবর পেলেই সার্চ হয়।আপনি হয়তো জানেন না এই বিষয়ে।”
“আমি কিভাবে এত জঘন্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানবো?আমি তো এসব পরিবেশের আশেপাশেও থাকি না।”
“এগুলো জানতে পরিবেশের সাথে থাকা লাগেনা।এমনিতেও জানা যায়।দুনিয়ার বিপদাপদ তো আজকাল খবরেই বেশি দেখায়।”

“খবর দেখি কিন্তু খুবই অল্প।”
“আচ্ছা আপনাকে এখন একটা ভালো হোটেল সাজেস্ট করব?”
“হুম করুন।”
পিয়াশ কিছু বলার আগেই ওখানে পুলিশ আসে।পুলিশের লোক এসে পিয়াশ আর মৌকে ধরতে যায়।তখনই মৌ বলে,”আরে আরে আমাদেরকে ধরছেন কেন?”
“নষ্টামি করার সময় মনে ছিলো না?এসব হোটেলে ধরা খেলে তো থানায় আপ্যায়ন পেতেই হয়।”

“আমরা এমন লোক না যেমনটা আপনারা ভাবছেন।আমরা ভালো মানুষ।”
“মুখে ভালো সবাই বলে।কাজে তো দেখিয়ে দিল কেমন।”
“আপনারা আসলেই আমাদের ভুল বুঝছেন স্যার।”
আর কিছু বলার আগেই পিয়াশের হাত থেকে কাগজটি নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে বলে,”এই তোদের ভালো মানুষের নমুনা।একে তো দুইজন তার উপর এক বেডের রুম।”
মৌ এবার বলে ওঠে,”আরে উনি তো ছিলো না।”
“আমরা তো দেখছি উনি ছিলো।এই ধর দুজনকে।থানায় নিয়ে কথা হবে।”

মৌ এবার বিপাকে পড়লো।নিজের জন্য আরেকজনকে বিপদে পড়তে হলো।মৌ পিয়াশের আপাদমস্তক দেখলো।বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে আছে তার।পুলিশের এসব বাড়াবাড়িতে মাঝেমাঝে বিরক্ত তো লাগেই।আবার পুলিশ এমন সচেতন না হলে দেশে অনৈতিক কাজ যেনো আরো বৃদ্ধি পেতো।কিছু একটা করতে চায় মৌ।এমন কিছু যেটা করলে সে এবং পিয়াশ দুজনেই বিপদের থেকে রক্ষা পায়।কিছু বুঝতে না পারলেও পাশে এক নর নারীকে দেখে মাথায় হিন্দি সিনেমার অনেক কিছু মাথায় আসলো।তাই বলে ওঠে,”আসলে হয়েছে কি?আমরা দুজন আজ বিয়ে করব।আমাদের কোনো গার্জিয়ান নেই।সেই চট্টগ্রাম থেকে এসেছি আমি আর ও বিয়ে করতে।থাকার জন্যই হোটেল খুঁজছিলাম।এই তো একটু পরেই বিয়ে করব।”

“বিয়ে না করে হোটেলে কি?বিয়ে যে করবি এর প্রমাণ কি?”
“এর প্রমাণ হলো একটু পর আমাদের বিয়ে।আমরা বিএফ জিএফ।বিশ্বাস না হলে আমাদেরকে দেখুন।”
বলেই পিয়াশের হাতের কনুই জড়িয়ে ধরে মৌ।পিয়াশ রাগে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে মৌ কানে কানে বলে,”জীবন বাঁচাতে আমার বিএফ হয়ে যান নাহলে জেলের ভাত খান।অপশন আপনার।জীবন আমাদের দুজনার।”
পিয়াশ শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আসলে আমরা বিয়ে করব।আমরা তো জানিই না এই হোটেলে কি হয়?”
“বিয়ে করবি সাক্ষী কোথায়?”

পিয়াশ আর মৌ একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটা বেকিয়ে ভিত কণ্ঠে বলে,”সাক্ষী তো নেই।আমরা কাজিকে সাক্ষী আনতে বলব।তারপর বিয়ে করব।”
“আরেব্বাস!সাক্ষী নেই প্রেমের আভাস নেই কিন্তু বিয়ে করবি?চল তাহলে বিয়ে দেই তোদের।”
“আপনিই?”
ওদের দুজনের একসাথে চিল্লানো শুনে পুলিশ দাড়িয়ে থেকে বলল,”কেন করবি না বিয়ে?”
দুজনে মাথা নাড়ালো।পুলিশ হেসে বলে,”তাহলে চল থানায়।ওখানেই জামাই বউয়ের আদর চলবে।”
মৌ এবার কান্না করে বলে ওঠে,”না,আমরা থানায় যাওয়ার মত মানুষ না।আমার ক্যারিয়ার!”
বলেই কান্না করে দিলো।পিয়াশ সেই কান্না দেখলো।হঠাৎ তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো এই কান্না দেখে।মিষ্টি মুখের মেয়েটার এখন কান্না দেখতে ভালো লাগছে না তার।পিয়াশ মৌয়ের হাত শক্ত করে ধরে বলে,”চলুন কাজী অফিসে।বিয়ে করব আমরা।”

মৌ কান্না থামিয়ে পিয়াশের কানের কাছে মুখ রেখে বলে,”আরে আমি তো অভিনয় করছিলাম।”
পিয়াশ এখন কি বলবে নিজেও বুঝতে পারল না।যার জন্য করলো দয়া সে করল কি না ছলনা!পুলিশ ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি হলো চল।”
বাধ্য হয়ে ওরা গেলো।পাশেই কাজী অফিস।দেখে মৌ বলে,”এই ধরনের হোটেলের থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট দূরেই কাজী অফিস?”
“আসলে কাজী তো জানতো না যে এখানে আবাসিক হোটেল হবে আর অদ্ভুতভাবে আমাদের বিয়ে দিতে হবে।তাই এখানে তার অফিস।”
রেগে বলল পিয়াশ।পুলিশ কাজীর সাথে কথা বলছে।এর মাঝেই মৌ বলে ওঠে,”আমরা একটু একে অপরের সাথে কথা বলতে চাই।বিয়ের আগে এক মিনিট কী দেওয়া যায়না?”

সবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল।এক কোনায় দাড়িয়ে মৌ ও পিয়াশ কথা বলছে।অন্যপাশে পুলিশ দাড়িয়ে দাড়িয়ে চা খাচ্ছে।জোড়ায় জোড়ায় দেখে দুজনকে কাজী অফিসে এনেছে।বাকি দুজনের কাছে প্রমাণ আছে তারা বিয়ে করতে চায়।মেয়েটির মা অসুস্থ আর ছেলেটির বাবা মা নেই।তাই ওরা ওদের মত বিয়ে করে নিতো।এখন মৌ আর পিয়াশের সময় বোঝা যাবে ওরা মিথ্যা বলেছিলো নাকি সত্যি।মুখ দেখে তো ওদেরকেও ইনোসেন্ট লাগছে।মিথ্যা না বললে ওরা বিয়ে করবে।আর মিথ্যা বললে পালাতে চাইবে।মৌ পিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”বিয়েটা করতেই হবে?”

“পরিস্থিতি এমন।”
“আচ্ছা,বিয়ের আগে অন্তত আমাদের পরিচয় জানা উচিত।”
“হুম।”
“আমি মৌ।”
“আমি পিয়াশ।”
“আমি এখন অনার্স কমপ্লিট করেছি।ইচ্ছা আছে নিজেদের কোম্পানিতে জব করার।তাই আর্ট নিয়ে বেশি সময় কাটাই।”
“আমি অনার্স কমপ্লিট করে মাস্টার্সে উঠেছি।এতদিন মন্ত্রীর অ্যাসিসট্যান্ট ছিলাম।”
“এখন?”
“এখন টোটো কোম্পানিতে জব করি।”
মৌ মুখটা শুকনো করে বলে,”এভাবে অপমান করবেন না।এখন আসি পারিবারিক পরিচয়ে।”

“এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই।আমি একা।”
“আমার বাবা মা নেই কিন্তু আমার ভাই বোন আছে।”
আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশ এসে বলে,”তোদের পরিচয় পত্র দে।কাজীকে দিতে হবে।”
মৌ আর পিয়াশ চাওয়া চাওয়ি করে নেয়।পুলিশ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে,”তাহলে তোরা মিথ্যা বলেছিস।ওদেরকে দেখে মিথ্যে গল্প বানিয়েছিস।”
আসলে তো এটাই সত্যি।সিনেমা আর পাশে থাকা যুগলদের দেখে মৌ এটা বানিয়ে বলে।মৌ ওর ব্যাগ থেকে আইডি কার্ড দেয়। ফোনটা দেখে নিয়ে বলে,”আচ্ছা আমার ফোনটা কি চার্জ দেওয়া যাবে?”

“কেন?”
“আসলে আপনাদের প্রমাণ করে দিতাম আমি নিরপরাধ।”
“ইয়ার্কি হচ্ছে আমাদের সাথে?ওই দুজন নিরপরাধ তাই আমি ওদেরকে বিয়ে দিয়ে দিলাম।তোরা যদি আসামি হস তাহলে তোরা জেলে যাবি।অবৈধ কাজ করা ঘুচিয়ে দিবো।”
পিয়াশ ওর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিলো।যেটা ওর মানিব্যাগে সবসময় থাকে।পুলিশ ওগুলো কাজীর কাছে দিলো।মৌ বিড়বিড় করে বলে,”ফোনে আমার কম্পিটিশনের সব ইনফর্মেশন ছিলো। অনলাইনে যে আমি ফরম পূরণ করেছি তার প্রমাণ ছিলো।টাকলা পুলিশ দেখতেই দিলো না।”

পিয়াশ এটা শুনে বলে,”হ্যাঁ,তাই তো।পুলিশের তো বসে বসে আপনাকে নিয়ে পড়ে থাকার জন্য অঢেল সময়।”
“আরে ভাই!”
কথাটা একটু জোরেই বলে মৌ।যেটা শুনে কাজী বলে ওঠে,”হবু স্বামীকে ভাই বলতে হয়না মা।উনি তোমার হবু স্বামী।”
মৌ মুখ ভেংচি দেয়।কাজী শুরু করে ওদের বিয়ে পড়ানো।

টানা এক ঘন্টা ধরে চাবুকের আঘাত সহ্য করেছে সোনালী ও মালিনী।এখন ওরা হলরুমের সোফায় বসে আছে।ডাক্তার এসেছে মাত্র।সোনালী আর মালিনী কাতরাচ্ছে ব্যথায়।বয়স হয়েছে দুজনের।এই মার কি শরীরে সহ্য হয়?হিয়া মাত্র বাসায় আসলো।সেই সাথে দরজা দিয়ে ঢোকে ডাক্তার।ডাক্তার এসেই মহিলাটির কাছে আগে যায়।যে প্রথমে মার খায়।হিয়া দেখলো তার মা আর কাকি কাতরাচ্ছে।তাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”তোমাদের কি হয়েছে? এত মারের দাগ কেন?”
“শাস্তি দিয়েছে ওরা।”
সিয়া বলে ওঠে।হিয়া আবারও প্রশ্ন করে,”কিসের শাস্তি।”
রুদ্র বেশ কাছেই ছিলো হিয়ার।হিয়ার কানের কাছে মুখ রেখে বলে,”পংটামি করতে গেছিলো দুজনে।তাই এই শাস্তি।”

“ছিঃ মুখে কি ভাষা।”
“ওরা করবে পংটামি আমি বললেই দোষ?”
“শাট আপ রুদ্র ভাই।”
রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে থাকলো।সিয়া সবকিছু খুলে বলল।ডাক্তার মহিলাটিকে দেখে উঠে দাড়ালো।রাজ বলে ওঠে,”আমার বৌয়ের কাল থেকে জ্বর।ফাটা কপাল আবার ফাটিয়েছে।তাকেও একটু দেখে নিন।”
ডাক্তার মায়াকে দেখছে।মোহন সরদার বলে ওঠে,”আরেকটা সোফায় যে দুজন বৃদ্ধ মানুষ কাতরাচ্ছে এটা দেখতে পাচ্ছো না?”
“তাদের তো দেখতে পাচ্ছি সাথে তাদের বরদেরও দেখছি।তাদের বর কোনো স্টেপ নিচ্ছে না এটাও খুব ভালো করেই দেখতে পাচ্ছি।”
“কিসের স্টেপ নিবো?”

“ডাক্তার ডাকো সেবা করো।বউ ব্যথায় ছটফট করছে স্বামী হয়ে কিনা আমার কাছে এসে সাফাই দিয়েই যাচ্ছো শুধু।বউ তোমার আঘাত তার এখানে আমি কি করব?”
“তুমি ডাক্তার ডেকেছো বলেই তো আমি আর ডাকিনি।”
“আমাকে কি পাগলা কুত্তায় কামরাইছে যে আমি তোমার বউয়ের জন্য ডাক্তার এনে নিজের বউয়ের থেকে পার্মানেন্ট দূরে থাকি!যাদের শাস্তি দিলো আমারই বউ তাদের জন্য ডাক্তার এনে আমার দুইদিনের সংসার দীর্ঘায়ু না করে ক্ষণিকের করতে পারব না।দুঃখিত বাবা কাকা তোমাদের এই দুই নাম্বার বউগুলোর জন্য আমি আমার বউকে হারাতে চাই না।”

মাহমুদ সরদার কিছুই বললেন না।তার কোনো যায় আসেনা এসব কিছুতে।নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছে মালিনী।সে আজ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলো?এটা নিয়ে ক্ষিপ্ত মাহমুদ সরদার নিজেও।মোহন সরদারের মাঝে অহংকারবোধ বেশি।তাই সে বউয়ের হয়ে বলেই যাচ্ছে।যা বলছে তাও যুক্তির বাইরে।এতে করে রাজের কাছ থেকে উল্টো পাল্টা লাগামহীন কথা তিনি অন্তত শুনতে চান না।ভাইয়ের মত যে তাকেও বউ পাগলা নামটা শুনতে হবে শুধু বউ না দুই নাম্বার বউ নিয়ে তাও আবার নিজের ছেলের কাছেই।এর থেকে লজ্জাজনক আর কি আছে?রাজ নিজের মত চুপ থেকে ভ্রুকুটি করে বলে,”আমার পিয়ু বেবী কোথায়?”
বলতে না বলতেই ওখানে একজন যুবক এসে বলে,”স্যার পিয়াশ বলেছে ও আর এখানে থাকবে না।ওর ফ্ল্যাটের চাবি আর কিছু কাগজপত্র আমাদেরকে দিয়ে গেছে।”

“কেন?”
“কারণটা জানায়নি কিন্তু ওর মনটা বিষন্ন ছিলো।”
তারা এসে রাজের কাছে বলে দিলো সবকিছু।সব শুনে রাজ সোনালীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এই বিটিকে চাবুকের মারের সাথে যদি নর্দমার পানি খাওয়ানো যেতো তাহলে বমির সাথে সব নোংরামি বের হয়ে আসতো।”

বলেই সামনে থাকা যুবকের দিকে তাকিয়ে বলে,”এক ঘণ্টার মধ্যে আমার পিয়ু বেবীকে আমার সামনে নিয়ে আসো।আসতে না চাইলে পাঁজাকোলা করে নিয়ে আসবে।তারপর দেখাচ্ছি তার ইগো থাকে কোন গুহায়।”
যুবকটি চাপা হাসি দিয়ে চলে গেলো।ডাক্তার মায়াকে চেক করে ঔষধ লিখে দেয়।চলে যেতে নিলে মাহমুদ সরদার বলেন,”ব্যথার ঔষধ বাদে কিছু ঔষধ দিয়ে যান ওদেরকে।বিশেষ করে জ্বরের ঔষধ।”
মোহন সরদার বলে ওঠে,”ব্যথার ঔষধ দিবেনা কেন?”
“কারণ ওদের ব্যথা যত দীর্ঘ হবে বিবেক তত বৃদ্ধি পাবে।আর জ্বর আসলে কপালপোড়া আমাকেই ডাক্তার ডাকতে হবে।সাথে ছেলের মতো বউয়ের সেবা করা লাগবে।বুড়ো বয়সে এসব আদিখ্যেতা ভাল্লাগছে না।”
“চু চু চু,বউকে ভালোবাসা সেবা করা আদিখ্যেতা না বাবা।এটা যোগ্য স্বামীর এক আশ্চর্য রূপ।যেটা তোমার মত বুড়ো ব্যাটা দেখাতে অক্ষম।”

“বাবাকে বুড়ো ব্যাটা তাও অক্ষম বলতে লজ্জা করে না?”
“বউকে ভালোবেসে সঠিক পথে আনতে না পারার লজ্জা তোমার না করলে আমারও এসব বলতে লজ্জা করে না।”
মোহন সরদার ঠোঁটটা চওড়া করে মাহমুদ সরদারকে খোচা মেরে বলেন,”ছেলেকে কি বানিয়েছো দেখো।এখনই সম্মান দেয়না।পরে তো আছে বাকি জীবন।”
“তোমার ছেলেটা তো পড়ে আছে বিদেশের মাটিতে।তোমার কতটা উজ্জ্বল জীবন দিলো এটা আগে দেখো।”
“আমার মিহির সেরা কৃষি বিজ্ঞানী হয়ে ফিরবে।এটা আমি তোমাকে বলে দিলাম।”
“ওমন সেরা মন্ত্রী তো আমার ছেলেও হয়ে বসে আছে।কিন্তু কপাল যখন ফাটা থাকে তো বাশ সব জায়গা থেকেই মেলে।হোক সে ছেলে আর হোক সে বউ।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১৯

রাজ হেসে দিলো দুই ভাইয়ের কান্ডে।তার একটা ছোট্ট কথায় কই এখন বাবা ছেলের কথা বাড়বে তা না উল্টো কি না দুই ভাইয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি।ওদের কথার মাঝেই গাড়ির হর্ন বেজে ওঠে।কেউ ঢুকেছে সরদার মহলে।রুদ্র বলে ওঠে,”ভাই চলে এসেছে।”
বলেই যেতে নেয়।সিয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে সেও চলে গেলো বাইরে।একেক করে সবাই উঠে গেলো আদ্রকে দেখতে।

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here