মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩
ইশরাত জাহান
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।বিয়েতে নিয়ম অনুযায়ী কিছু কথা বলে রাজের উদ্দেশ্যে কাজী জিজ্ঞাসা করে,”দেনমোহর কত?”
রাজ আরামের সহিত রাজকীয় চেয়ারে পিঠ রেখে বলে,”সরদার মহলটাই আমি তার নামে লিখে দিতে চাই।টাকার পরিবর্তে এটা সম্ভব হবে কি?”
মায়া এটা শুনে রাজের দিকে চোখটা ঘোরালো।এমনটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এটা তো তার জন্য প্লাস পয়েন্ট।মাহমুদ সরদারের বুকে হাত।বিড়বিড় করে বলেন,”বিয়ে করতে এসেছো নাকি বাবা মাকে পথের ফকির করতে?”
কাজী অবাকের সাথে বলে,”সম্ভব।মিয়া বিবি রাজি থাকলেই সম্ভব।”
“তাহলে লিখে দিন পুরো সরদার মহল তাকে দিয়ে আমি তাকে কবুল করে নিচ্ছি।”
মোহন সরদার হুংকার দিয়ে বলেন,”মগের মুল্লুক নাকি।আমাদের বাড়িটি এই মেয়ের নামে কেন দিবে?”
“তোমাদের আবার বাড়ি কোনটা?আমি তো আমার রাজ্য আমার রাণীকে দিচ্ছি।বর বউয়ের দেনমোহরের ব্যাপারে তুমি কথা বলার কেউ না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মায়ার ঠোঁটে বিজয়ের হাসি।যে প্ল্যান করেছিলো তার ঊর্ধ্বে কাজ চললেও তার কপালটা আজ খোলা ছিল।তাই তো চাদিহার ঊর্ধ্বে কিছু পেতে চলেছে।মালিনী,সোনালী ও মোহন সরদার যেনো ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।রাজ ওদেরকে পাত্তা না দিয়ে বলে,”স্বামীর অর্থ সম্পদের উপর হক তো স্ত্রীর।আমি আমার মহল আমার স্ত্রীকে নির্দ্বিধায় দিয়ে দিবো।তাতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কেউ রাখে না।”
মোহন সরদারের জবান বন্ধ।কারণ তিনি এই মহলের তার অংশের বিনিময়ে রাজের থেকে প্রমাণস্বরূপ অঢেল টাকা নিয়েছেন।যার জন্য তাকে এখন মুখ খোলা মানায় না।তবে থেমে থাকেনি সোনালী।মোহন সরদারের বউ সোনালী শয়তানি বুদ্ধি নিয়ে বলে,”আহান ভাইয়ের তো কোনো মতামত থাকতে পারে।সেও এই পরিবারের সন্তান।তার তো কোনো দায় নেই।”
রাজ সরু চোখে তাকালো আহান সরদারের দিকে।আহান সরদার মৃদু হেসে বলেন,”আমি নিজে যতটুকু অর্জন করেছি এবং আমার দুই পুত্র আদ্র ও রুদ্র যা আছে এতেই আমার সব হয়ে যাবে।বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান হওয়ায় আমাকে আলাদা সম্পত্তি লিখে দিয়েছে বাবা।যেটা বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা ভাইয়েরা মিটিয়ে নিয়েছি।বর্তমানে রাজের কারণে জয়েন্ট পরিবার হয়ে ওই জমির উপর আলাদা বাড়ি করে আছি।এছাড়া আমার কিছু চাই না।
অবশেষে ঝামেলা মিটিয়ে মায়ারাজের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।সবকিছু সমাধান হয়ে যাওয়ায় কারো কোনো কথা থাকেনা।মিডিয়ার লোকেরা এসে প্রশ্ন করছে রাজকে।একজন সাংবাদিক বলে,”ভালোবাসার নারীকে নিজের করে পাওয়ার অনুভূতি কেমন?”
রাজ ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলে,”আআর অনুভূতি!মন্ত্রী হয়ে পড়েছি তো বিপদে।বিয়ে করেছি কোথায় এখন বউয়ের সাথে রোমান্টিক ছবি তুলব তা না।এখন আপনাদের একেকজনের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বিয়ের সময়টা পার করে দিতে হবে।”
সাংবাদিক লজ্জা পেলো যেনো।একটু ঝেড়ে কেশে বলে,”দুঃখিত স্যার।”
সাংবাদিকের পাশে থাকা মেয়েটি কানে ফিসফিস করে বলে,”হয়েছে শান্তি?বারবার বলেছিলাম উদ্ভট প্রশ্ন করবি না।তোর তো আমার কথা শুনতে ইচ্ছা করবেই না।”
সাংবাদিক ছেলেটি বলে,”আমি কি করব? হেডঅফিস থেকে উদ্ভট প্রশ্ন লিখে দেয় কেন?আমি তো অন্যের গোলামী করে খাই।আমাকে যে বিষয়ে সাংবাদিকতা করতে বলবে আমি তো তাই করব।”
রুদ্র ওদের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল।ওদের কথাগুলো শুনতে পেয়ে বলে,”বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতা করা আর নিজেকে ম্যানহোলের ময়লা পানিতে গোসল করানো এক।”
সাংবাদিকের পাশের মেয়েটি হেসে দেয়।রুদ্র তাকে চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়।এই দৃশ্য নজরে এড়ালো না হিয়ার।এখানেও একটা মেয়েকে চোখ টিপ মারল রুদ্র।রেগে নাক ফুলে উঠেছে তার।বিড়বিড় করে বলে,”নষ্ট পুরুষ।”
বিয়ের পর এখন সবাই খাওয়া দাওয়া করতে ব্যাস্ত।হিয়া আর সিয়া মিলে মায়াকে নিয়ে একটি টেবিলে বসেছে।মায়ার পাশে রাজকে বসানো হয়েছে।সামনে বড় একটি রাজকীয় থালি সাজানো।বিরিয়ানি রোস্ট সহ আরো খাবার দিয়ে সাজানো প্লেটের ছবি তুলছে আশেপাশের অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা।রাজ এটা দেখে চুপ করে বসে আছে।সবকিছুর একটা বয়স থাকে।যার যেটা ভালো লাগে সে তাই করুক।বাচ্চারা ছবি তোলা শেষ করতেই মিলি বলে,”ভাই আর ভাবি তোমরা এখন একে অপরকে খাইয়ে দিবে।আমি তোমাদের রোমান্টিক ছবি তুলে দিবো।”
রাজকে খাইয়ে দিতে হবে শুনেই রাগ মাথায় চেপে বসলো মায়ার।চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে ওমনি মায়ার হাত ধরে আটকে দিলো রাজ।মায়া আর উঠতে পারল না।রাজ মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,”এখান থেকে উঠবে না মায়াবতী।যদি ওঠো তাহলে কিন্তু আমি বলিউড স্টাইলে তোমাকে খাইয়ে দিবো।”
মায়া চোখ বড় বড় করে তাকালো।চোখের সাদা অংশে লাল রঙ ধারণ করেছে।বোঝা যাচ্ছে অতিরিক্ত রাগ চেপেছে মায়ার মাথায়।রাজ থালি থেকে একটি রোস্ট হাতে নিয়ে মায়ার মুখের সামনে তোলে।মায়া চুপ করে বসে আছে।জেদ ধরেছে খাবে না সে রাজের হাতে।মিলি কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।ছবিগুলো দেখতে দেখতে বলে,”ডান।এখন তোমরা তোমাদের ইচ্ছামত খেতে পারো।আমি যাই কিছু সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে নেই।”
মিলি চলে যায়।রাজ এখনও রোস্ট হাতে মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।মায়াও তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।একজন তাকিয়ে আছে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার জন্য তো আরেকজন তাকিয়ে আছে প্রেম নিবেদনের জন্য।দুজনের মাঝে নীরবতা বিরাজ করছে।মায়া এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রাজের দিকে।রাজ বলে,”খাবেনা?”
মায়া এখনও দেখছে রাজের মুখ।এক সময় তাকেই তো পুতুল বর ভেবে ভালোবাসতো।কিন্তু এই ভালোবাসা সে নিজেই নষ্ট করে দিলো।যখন সবাই মিলে তার মাকে অপমান করেছিল তখন এই রাজ তাকে অত্যাচার করেছিল।সেই বিষাক্ত মুহূর্তের কথা মনে পরতেই রাজের হাত সরিয়ে দিলো মায়া।বর্তমান সময়টা সবার চোখকে এড়াতে মায়া বলে,”আমি রোস্ট খাই না।”
সিয়া মায়ার উদ্দেশ্যে বলে,”তাহলে অন্য খাবার খাও ভাবি।যদি ঝাল প্রিয় হয়ে থাকো তো টিকিয়া খেতে পারো।অনেক মজা হয়েছে।”
হিয়া মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,”তুই ডাক্তারি পড়িস নাকি অন্যকিছু আমার সন্দেহ হয়।”
ভ্রু কুঁচকে সিয়া বলে,”এই কেন বল তো?”
“এতগুলো আনহেলদি খাবার খাচ্ছিস কিভাবে?”
“ডাক্তার হলেই কি এসব খাবার খাওয়া যাবে না?কোন বইতে এমন কথা লেখা আছে?উল্টো খাবার মেইনটেইন করা উচিত রোগের বা শরীরের উপর নির্ভর করে।আমার শরীরে এমন কোনো সমস্যা নেই যে আমি মেইনটেইন করে খাবো।”
“মোটা হয়ে যাবি তো।”
“মোটা হলে আমার শরীর হবে।তোর শরীর তো শুকনো থাকবে।তাতে তোর সমস্যা কি?”
“আমার বোন তুই।তোর কিছু হলে বাবা মা চিন্তা করে অস্থির হয়ে যাবে।তাই তো আমাকে ভাবতে হবে।”
“উঃ!আসছে আমার বড় ভাবনাওয়ালি।”
“চাল ফট।”
“তুই ফট।আমাকে খেতে দে।”
“গেল তুই।কলিজা ভরে গেল।তোর হবু জামাই যখন দেখবে তুই একটা ভুটকি তখন সে পালাবে দেখিস।”
“এই একটুও না।আমার হবু জামাই মোটেই আমার মোটা হওয়ার জন্য পালাবে না।বরং সে আমাকে ভালোবাসবে দেখিস তুই।”
“ভুটকির প্রেম দেখার ইচ্ছা নেই।সর তো।”
“এটুকু খেলে যদি ভুটকি হয় তাহলে তুই কি শাকচুন্নি?”
“আমি তোর মত খাওয়া নিয়ে পড়ে নেই।”
“হ্যাঁ তাই তো দুইবার বিরিয়ানি নিয়েছিস।”
“এক চামচের অর্ধেক বিরিয়ানি নিয়েছিলাম তাই দুইবার নিয়েছি।তোর মত আস্ত আস্ত এতগুলো টিকিয়া খাচ্ছি না।”
“আমার সামনে থেকে সরে যা।তুই আমার খাওয়ায় নজর দিবি না।”(চেঁচিয়ে),
“একশবার দিবো।তোর কিছু হলে আমার বাবা দুশ্চিন্তা করবে।এটা আমি হতে দিবনা।”(আরও জোরে চেঁচিয়ে)
“আসছে আমার বাবার মেয়ে!ওটা আমারও বাবা।তোর দুই সেকেন্ড আগে আমি এসেছি বাবার মেয়ে হয়ে।”
“বাবার মেয়ে না মেয়ে না মেয়ের নামে বিপদ হয়ে এসেছিস।”
“উষ্টা খাবি কিন্তু হিয়া।”
“আয় না আমার সামনে।আমারও পা আছে।তুই একটা দিলে আমি দুইটা দিতে পারব।”
এদের ঝগড়া যেনো বেড়েই যাচ্ছে।ঝগড়া দেখতে দেখতে রাজ মাথায় হাত দিয়ে বলে,”আমার বিয়েটা পার হলো মিডিয়ার উত্তর দিতে দিতে আর এদের ঝগড়া দেখতে দেখতে।”
কাজি দূরে বসে খাবার খাচ্ছিলো।এদের দুই বোনের ঝগড়া দেখে গালের খাবার চিবোতে চিবোতে বিড়বিড় করে বলে,”এটা বিয়ে বাড়ি নাকি নাট্যমঞ্চ!এমন বিয়ে বাপের জন্মেও দেখিনি।একবার বউ পালায় তারপর বউ আরেকটা আসে।সেও আবার অগ্নিরূপী।এখন আবার বর বউয়ের খাওয়ার মাঝে দুই বোনের ঝগড়া।”
সিয়া আর হিয়ার ঝগড়া এতটাই বেড়ে গেছে যে সেখানে মাহমুদ সরদার ও পুরো পরিবারের লোক জড়ো হয়।মাহমুদ সরদার এসে প্রশ্ন করেন,”এখানে কি হচ্ছে এগুলো?”
রাজ আফসোসের সাথে বলে,”তোমার দুই মেয়ে আমার বিয়েতে এসে ডিসকাস করছে তারা কে কখন পৃথিবীতে ডাউনলোড হয়েছিলো।একেকজনের কি চিন্তা বাবাকে নিয়ে যে ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে এটা মনেই নেই।অথচ এই ঝগড়ার সূত্রপাত আমার বউকে খাওয়ানো নিয়ে।”
এই ছেলের বেফাঁস কথার জন্যই মাহমুদ সরদার এদিকটায় আসেনি।তিনি অন্য টেবিলে বসে খাচ্ছিলেন।ছোটদের বর বউয়ের পাশে রেখেছিলেন।কিন্তু কথায় আছে না সুখ সবার কপালে সয় না।মাহমুদ সরদারের হয়েছে সেই দশা।ছেলের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা ব্যার্থ করলো তারই আরেক রক্ত সিয়া আর হিয়া।এরা দুই বোন ঝগড়া না করলে মাহমুদ সরদার এখানে আসতেন না।রাজের এমন কথা শুনতেনও না।মাহমুদ সরদার দাত চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন,”তোমার বউ খাচ্ছেনা বলে খুব আফসোস হচ্ছে তাই না?”
“আমার দশটা পাঁচটা না আবার আমার পূর্বপুরুষদের মত দুইটা করেও না।আমার তো একটা মাত্র বউ।এই বউকে তো তিনবেলা খাইয়ে লকারে তালা মেরে রাখতে হবে।”
মাহমুদ সরদার মাঝেমধ্যে চিন্তা করেন এই দ্বিতীয় বিয়ে না করলে তিনি হয়তো মহৎ কাজ করতেন।কোন দুঃখে বাবার অনুরোধে রাজি হয়?এখন কপাল চাপরাচ্ছেন।বাবার কথা শুনতে যেয়ে ছেলের কাছে তিনবেলা খোটা শুনছেন।এই মাহমুদ সরদারের বাবারও তো দুই বিয়ে।মাহমুদ সরদারের বাবা মহসিন সরদারের প্রথম স্ত্রীর থেকে দুই সন্তান হয়।বড় সন্তান মাহমুদ সরদার ও ছোট সন্তান মোহন সরদার।মহসিন সরদারের দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে হয় আহান সরদার।মাহমুদ সরদারের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার কারণে তারই শালী মালিনীকে বিবাহ করেন।এর কয়েক বছর পর মোহন সরদার তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানকে ত্যাগ করে ঘরে আনেন সোনালীকে।তবে বর্তমানে এক বিয়েতেই সন্তুষ্ট হয়ে আছেন আহান সরদার।স্ত্রী অবনীর মৃত্যুর পরও এখনও বিবাহ করেননি তিনি।তাই রুদ্র গর্বের সাথে বলে,”একটু মিসটেক করলে ব্রো।তোমার বংশে তো আমার বাবাও আছে।সে কিন্তু আমার মা মারা যাওয়ার পরও স্টিল দেবদাস।”
রাজ ঠোঁটটা বাঁকিয়ে বলে,”ওরে ব্যাটা রুদ্র।তোর তো কপালটা তাও ভালো।আমার তো দাদা বাবা কাকা সবাই গোল মেরে দিল।এদিক থেকে আহান কাকু পিছিয়ে।আফসোস হয় আমার তারও জন্যে।”
মায়া এদের কথার কিছুই বুঝতে পারছে না।এই দ্বিতীয় বিয়ের কাহিনী কি?মায়া তো শুধু জানে মোহন সরদারের কথা।মাহমুদ সরদারের দ্বিতীয় বিয়ে আবার তাদের দাদারও দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো এতকিছু মায়া জানে না।সবথেকে বড় কথা এটুকু সময়ের মধ্যে এদের কথা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়।এগুলো দেখে মাথা ভনভন করছে মায়ার।শুধু মায়ার না তারেক নিজেও এদের কাণ্ড দেখে অবাক।সাথে আবার আছে মিলির ঝামেলা।মিলি তার সাথে নিজে এসে একটু আগে পরিচিত হয়ে গেলো।একটু পর পর এসে একেকটা আবদার করে যাচ্ছে।কখনও ছবি তুলে দেওয়ার জন্য তো আবার কখনও ড্যান্স করার জন্য।কাজী তার মত বিন্দাস খাবার মুখে ঢুকাচ্ছে আর এদের কথার মারপ্যাঁচ দেখছে।পাশে তাকিয়ে দেখলো উকিলও বসে এই ঝগড়া দেখছে।কাজি তার মুখটা এগিয়ে উকিলের কাছে এনে বলে,”বুঝলেন উকিল সাহেব।নসিবে থাকিলে মন্ত্রীর বাড়ির ঝগড়াও দেখা যায়।যদি থাকে কোনো কিছু করার যোগ্যতা।”
“এতগুলো বিয়ে দেখেছি এরকম অদ্ভুত বিয়ে প্রথম দেখলাম!”
উকিলের কথা শুনে কাজি মাথা উপর নিচ করলেন।
জারার হাতটা ধরে টানতে টানতে নিজের বাড়ির ভিতর ঢুকছে বীর।জারা মুখ ফুটে কিছুই বলছে না।মনে মনে সুযোগ খুঁজছে।একটা চান্স পেলেই সে পালাবে এখান থেকে।বীর জারাকে উপরে নিয়ে যাবে তখনই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে মৌ।বীরকে প্রশ্ন করে,”এই মেয়েটা কে ভাই?”
বীর থেমে যায় সেখানে।মৌকে দেখে বলে,”তোর ভাবি।”
মৌ খুশি হয়।কিন্তু জারাকে এভাবে টানতে দেখে বলে,”ভাবিকে এভাবে টানছ কেন?”
“কারণ ও তোর ভাবি হতে চায়না তাই।”
“কেনো?আমি কি দোষ করেছি?”
জারা এদের কথা শুনে অবাক।বীর বলল কোন দিক দিয়ে মৌ নিয়ে গেলো কোন দিকে।বীর বলে,”এটা তোকে ভাবতে হবেনা।বোন যে বিয়ে করেছে এটা শুনেছিস?”
“কোন বোন?”
“তোর আর বোন আমার বোন মায়া।”
মৌয়ের চোখ যেনো কোটর থেকে বের হলো।অবাকের সাথে বলে,”কি বলছ তুমি এসব?আপু কেন বিয়ে করবে?তাও আবার আমাদের না জানিয়ে।”
“করেছে বিয়ে।তাও আবার মন্ত্রীকে।”
“কিন্তু আমাদের না বলে কেন?”
“কাহিনী আছে তাই।পরে বলছি আগে ওকে ঘরে রেখে আসি।”
মৌ বাধা দিয়ে বলে,”ভাবিকে আমার ঘরে রেখে আসো।তোমাদের ঘরটা আগে সাজাই তারপর যাও।”
বীর আর জারা অবাক হলো।বীর মৌয়ের দিকে ফিরে বলে,”আমার ঘর সাজাবী কেন?”
“আমার দুই ভাইবোন আজ আমাকে না বলে একজন ভাবি আরেকজন দুলাভাই গিফট করছে।যদিও আমাকে ভাবি পছন্দ করেনা কিন্তু আমার তো তোমাদের প্রথম রাতটা সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া উচিত।আফটার অল বাসর তো বারবার আসবে না।”
“বাসর!”
অবাক হয়ে বলে জারা।মৌ বলে ওঠে,”হ্যাঁ বাসর।বিয়ের প্রথম রাতটাই তো বাসররাত।তোমাকে তো বউ সাজিয়ে দিতে হবে।আমি পার্লারের লোককে কল করে ডাকব।আর তোমাদের ঘরটা সাজিয়ে দিব।তুমি আমার ঘরে থাকো।”
জারা বিড়বিড় করে বলে,”বিয়ের আগে বাসর!”
বীর হেসে দেয়।হো হো করে হাসতে হাসতে বলে,”ওরে গাধি আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি।তবে বোনের আজ বিয়ে হয়েছে।আমি জারাকে বিয়ে করব ধুমধাম করে।তুইও আনন্দ করবি বিয়েতে।”
খুশি হলো মৌ।বলে,”তাহলে ভাবি না মানে হবু ভাবি কোথায় থাকবে?”
“তোর রুমের পাশের রুমটায়।”
বলেই জারার হাত ধরে নিয়ে গেলো বীর।রুমে এসে জারার হাত ছেড়ে দিলো।দরজাটা পা দিয়ে চাপিয়ে দিয়ে বলে,”তো জানেমান।পছন্দ হয়েছে তো বাড়িটি?”
জারা কোনো কথা বলেনা।এতক্ষণ অনেক জোরে ধরেছিল হাত।অবস হয়ে আছে।মাংস ডুবে লাল হয়ে আছে জায়গাটা।একটু আগেই গাড়ি থামতে বীরের আড়ালে জারা আবারও পালানোর জন্য দৌড়ে চলে গিয়েছিল।পালাতে পেরেছিল কিন্তু তার দৌড় আর বীরের গাড়ির স্প্রিড তো এক না।জারা দৌড়ে বহুদূর চলে গেলেও বীর তার গাড়ি নিয়ে সামনে চলে আসে।এখন জারা ভয়তে চুপ আছে।কিছু বলতেও ভয় লাগছে।মনে পড়ে যাচ্ছে বীরের সেই ভয়ানক রূপ।নিজ হাতে খুন করতে দেখেছিল বীরকে।জারা কিছু বলছে না দেখে বীর জারার হাত আবার চেপে নিজের কাছে আনে।জারার কোমরে আরেক হাত রেখে চোখ লাল করে হুংকার ছেড়ে বলে,”আমি কি জিজ্ঞাসা করেছি উত্তর দিচ্ছো না কেনো?”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ২
জারা এখনও চুপ।চোখ নিচের দিকে।জারার কপাল এসে ঠেকলো বীরের ঠোঁটের কাছে।হিল পরার কারণে জারা লম্বা হয়েছে।জারার চোখ ভেজা ঠোঁট কাপছে।বীর এটা দেখে নিজেকে সংযত রাখতে ব্যার্থ।জারার মুখটা নিজের দুই হাতে আবদ্ধ করে নিলো।জারার কাপা কাপা ওষ্ঠের দিকে চোখটা স্থির রাখলো বীর।ধীরে ধীরে বীর তার ওষ্ঠ এগিয়ে নিয়ে যায়।জারার ওষ্ঠের নিচে আস্তে করে কামড় দিলো।এরপর যখনই দুটো ওষ্ঠ এক হবে তখনই দরজায় কড়া নাড়ে মৌ।বীরের হুশ ফিরে আসলো।দূরে সরে গেলো জারার থেকে।একটু দূরে সরে পকেটে এক হাত রেখে আরেক হাত পিছনে গলার কাছে উল্টিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে,”কাবাবমে হাড্ডি।”
