মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪
ইশরাত জাহান

মৌ কোনো উত্তর না পেয়ে আবারও বলে,”ভাইয়া ভিতরে আসব?”
“হ্যাঁ, আয়।”
মৌ ভিতরে এসে ফোনটা বীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”আপু কল করেছে।তোমার সাথে কথা বলবে।”
বীর ফোনটা নিয়ে কানে ধরেই বলে,”আমাকে না জানিয়ে এতবড় সিদ্ধান্ত নিলে কেন?”
মায়া আফসোস করে বলে,”আমি চাইনি এই বিয়েটা করতে।এই শাহমীর রাজ বড়ই ধূর্ত ব্যক্তি।ছলে বলে কৌশলে আমাকে ফাঁদে ফেলেছে।”

বীর হেসে দিল।মায়াকে বুঝতে না দিয়েই বলে,”মন্ত্রী হয়েছে কি এমনি এমনি? চালাক না হলে তো আর মন্ত্রী হতে পারত না।তুমি ফাঁদ পেতেছই এক মন্ত্রীর আস্তানায়।এখন বুঝো ঠেলা।”
“মজা নিচ্ছো তুমি আমার সাথে?ওই মন্ত্রী যে তোমার মামাতো ভাই হয় এটা আমাকে আগে বলনি কেন?”
বীর শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আগে বললে তুমি আমার কাছে থাকতে না।আর তুমি ওই সময়টাতে অন্য কোথাও সেফ ছিলে না।আজ তুমি আমার কাছে সেফ আছো এমনকি আমার দুটো বোনও হয়েছে।”
“আর আমাদের একটা বড় ভাই হলো।যেটাই হোক ভাগ্য কিছু কেড়ে নিলেও ভালো কিছু দিয়েই দেয়।”
“সো!নেক্সট প্ল্যান কি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কেনো বলব?জাতে আমার থেকে শুনে ওই মন্ত্রীকে এলার্ট করে দেও।আফটার অল সে তোমার মামাতো ভাই।আর আমি তোমার পাতানো বোন।”
বীর রেগে গেলো।এতগুলো বছর ধরে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়ে দুই বোনকে নিজের বোনের পরিচয় দিয়েছে।আপন বোন না হলেও আপন বোনের মত দেখে এসেছে।বিপদে ঠায় দিয়েছে। আরও গোপন উপকার করেছে যেগুলো কেউ জানে না।এখন সে কি না এভাবে কথা বলছে।রাগের সাথে বীর বলে,”তুমি যদি এখন আমার সামনে থাকতে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিতাম তোমার গালে।আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা স্নেহকে তুমি এই চোখে দেখো?যদি রাজের স্বার্থের জন্যই তোমাকে আমার কাছে রাখতাম তাহলে তোমাকে পড়াশোনা করিয়ে নিজ যোগ্যতায় তৈরি করতে সাহায্য করতাম না।এই আরহাম খান বীর চাইলে তোমাকে মিসইউজ করতে পারত বোন।”
বীরের রাগের সাথে বলা কথার শেষে বোন বলাটা শুনে মায়া ম্লান হাসলো।রাগের মাথায় কথাগুলো বলছে আবার বোনও বলছে।মায়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে গেছি ভাই।”

“কি প্রশ্ন?”
“উহু কিছুনা।”
“তুমি তো আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করোনি।”
“প্রশ্ন না করেও তো কিছু কথা আদায় করা যায় ভাই।আমিও ঠিক সেই দিকটা অবলম্বন করেছি।”
“বুঝলাম।তোমার কোনো অসুবিধা হলে আমাকে বলবে।”
“কাম অন ভাই।আমাকে তুমি বড় করেছো। আই অ্যাম এ ব্রেভ গার্ল।আমার কোনো অসুবিধা হতেই পারেনা।”
“যদি হয়ও তাহলে আমি তো আছি শালাবাবু।”
কথাটা বলে রাজ।মায়া পিছনে তাকিয়ে দেখে রাজ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।কমিউনিটি সেন্টারের রেস্টরুমে বসে কথা বলছিল মায়া।রাজকে দেখে বলে,”আড়ালে কথা শুনছিলেন?”
“আড়ালে কথা শুনতে যাবো কেন?বউয়ের কথা বলা শুনতে আড়াল হওয়ার দরকার হয় না।আর যদি হয় ওপর পাশের ব্যাক্তি আমার শালাবাবু।”

রাজের মুখে শালাবাবু ডাকটি শুনে বীর ক্ষেপে গেলো।যদিও বর্তমান সম্পর্ক শালা দুলাভাইয়ের কিন্তু এরা তো কাজিন।বীর মায়াকে বলে,”ওই শালার কাছে ফোন দেও তো।”
মায়া ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে,”আপনাকে চাইছে।”
রাজ ফোন কানে নিয়ে বলে,”বল শালাবাবু।”
“আব্বে শালা।”
“ওয় আমি তোর শালা না বরং তুই আমার শালা।”
“রাখ তোর শালা!আগে বল আমার বোনকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিস কেন?”
“তার আগে তোর বোনকে জিজ্ঞাসা কর আমার বিয়ের আসর থেকে আমার হবু বউকে কিডন্যাপ করলো কেন?”
“বেশ করেছে কিডন্যাপ করেছে।একটা কেন ও দশটা মেয়েকে কিডন্যাপ করবে তোর কি?”
“ওটা আমার হবু বউ ছিলো।”
“তো?তুই কেন আমার বোনকে বিয়ে করবি?”

“আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই বিয়ে করেছি।”
“তোর ইচ্ছার কাঁথায় আগুন।এখানে শুধু একজনের ইচ্ছাই চলবে মায়ার ইচ্ছে।”
“মায়াবতীর ইচ্ছা কি সেটা সে বলুক আমি পূরণ করে দিবো।”
“তাহলে শালা তুই ওপারে চলে যা।কারণ এটাই তোর বউয়ের ইচ্ছা।”
“আমি ওপারে গেলে তোর বোনকে নিয়েই যাব।একা একা ওপারে ভালো লাগবে না।বিয়ে করেছি মাত্র।ইনকমপ্লিট বাসরটাও তাহলে ওপারে সারতে হবে।”
“তুই ব্যাটা আসলেই একটা লাগামহীন।”
“আমার বাপও একই কথা বলে।”

মায়া দেখছে এই রাজ তার ভাইকে কথার জালে হারাতে ব্যাস্ত।রেগে রাজের কান থেকে ফোনটা নিয়ে বীরকে বলে,”এই পাগলা মন্ত্রীর সাথে তর্ক করো না তো ভাই।আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব।”
রাজ আফসোসের সাথে বলে,”চু চু চু দেখলি তো শালাবাবু।বলেছিলাম না আমার মায়াবতীর ইচ্ছা পূরণ করব।এই দেখ মায়াবতী এখন তার ইচ্ছাটাই পাল্টেছে।এখন সে আমাকে সময় দিবে।ভাইকে এখন তার দরকার নেই।”
বীর ফোনের ওপাশ থেকে হেসে দিয়ে কল কাটে।পিছনে ফিরে মৌকে ফোনটা দিয়ে বলে,”আমি একটা কাজে ব্যস্ত থাকবো।তাই ঢাকা যেতে পারব না কিন্তু কাজটা শেষ করেই ঢাকায় যাব।তুই চিন্তা করিস না বোন।”
মৌ হেসে দিল।জারার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি ফ্রেশ হওনি?তোমার জামা কাপড় কোথায়?”
জারা নিজেকে একবার দেখে আবার বীরকে দেখে নিয়ে চোখটা ঝাঁঝালো করে বলে,”এমন ভাবে বলছেন যেন আমি জানতাম আপনি এভাবে করবেন আমার সাথে।জামা আনার সময় পাইনি।”

“আমার জামা তোমার ফিট হবেনা কারণ আমি তো পাঁচ ফিট দুই তুমি দেখতে পাঁচ ফিট পাঁচ।আপুর জামা তোমার গায়ে একটু ঢিলা হয়ে যাবে।তুমি যে চিকন।আপু একদম পারফেক্ট।চলবে কি?”
জারা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়।বীর বলে,”আজ রাতের মধ্যেই ওর জন্য দুই সেট আনার ব্যাবস্থা করব।কাল আমরা বোনের শোরুম থেকে নাহয় ড্রেস কিনে আসবো।”
মৌ উত্তেজিত হয়ে বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।”
মৌ চলে যায়।বীর জারার দিকে তাকিয়ে বলে,”এই বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করলে এর ফল কিন্তু ঠিক হবেনা।তোমার সাথে পড়ে হিসাব করছি।এখন আসি।”
বীর চলে যেতেই জারা হাফ ছাড়ল।এতক্ষণের ভিত মুখটা আপনাআপনি হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠল।কিছু প্ল্যান সেও করে রেখেছে।আফটার অল সে তো সোনালীর বোনের মেয়ে।সোনালীর থেকে শিখেছে কিভাবে চুপ থেকে লোক এড়িয়ে যাওয়া যায়।
মায়া চোখটা ছোট ছোট করে রাগ দেখিয়ে তাকালো রাজের দিকে।রাজ একটা কাগজ এগিয়ে দিলো যেটা দেখে মায়া বলে,”এটা কি?”

“নিজেই দেখে নেও।”
মায়া কাগজটা খুলে দেখে বাড়ির দলিল।যেটা এখন মায়ার নামে।মায়া মৃদু হেসে মনে মনে বলে,”এমনিতেও ওই বাড়ির অর্ধেক অধিকার আমারই।দাদু যে আমার নামেই লিখেছিল।যেটা আমি আবারও ফিরিয়ে নিতাম।লাকিলি মন্ত্রী মশাই আমাকে অগ্রিম দিয়ে দিলো।”
রাজ তুড়ি বাজিয়ে বলে,”শশুর বাড়িতে যাবে না?”
“আপনি আমার ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলবেন না।”
“আমি তোমার ভাইয়ের সাথে কখন কথা বললাম?আমি তো আমার মামাতো ভাইয়ের সাথে কথা বললাম।”
মায়া উত্তর না দিয়ে চলে গেলো।বাইরে আসতেই মাহমুদ সরদার বলেন,”চলো এখন বাসায় যেতে হবে।”
মায়া মাথা নাড়ালো।মাহমুদ সরদার মায়ার ডান হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন গাড়ির দিকে।গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে দিলেন।মায়া বলে,”এসব কিছুর দরকার ছিল না।আমি খুলে নিতাম।”
“বাবারা চায় সন্তানের একটু মিষ্টিমধুর স্মৃতিতে জড়াতে।আমিও আমার এই মেয়েটার সাথে নাহয় স্মৃতি করে নিলাম।”

মায়ার মুখটা মলিন হয়ে আসলো।চোখটা আপনাআপনি চলে গেলো মোহন সরদারের দিকে।মাহমুদ সরদারের থেকে মায়া যে কথাটি শুনলো এটা তো মায়া নিজ বাবার থেকে কখনও পায়নি।মোহন সরদারের দিকে চোখ রেখে মায়া বলে,”কিছু বাবা এমনও হয় যারা আসলে কাপুরুষ।সন্তান তো দূরের কথা নিজের স্ত্রীকেও তারা মূল্যায়ন করেনা।ওসব বাবা নামক পুরুষদের বিষাক্ত কিট বলা হয়।”

মোহন সরদার কথাগুলো শুনে মায়ার দিকে চোখ রাখল।মাহমুদ সরদার কি বলবেন বুঝে উঠতে পারল না।মায়ার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে।রাজ এসে তাড়া দিয়ে বলে,”আচ্ছা এখানে ইমোশন হয়ে দাড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করার কোনো মানে আছে?আমার ইয়ে মানে ঘুমানোর সময় পেরিয়ে যাবে তো।”
আশেপাশের সবাই হেসে দেয়।রুদ্র হাসতে হাসতে বলে,”ওটা ঘুমানোর সময় না ব্রো।বলো বাসরের সময়।”
“উচিত কথা সব জায়গায় বলতে নেই ভাই।তাছাড়া মন্ত্রী হিসেবে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে।”
রাজের শেষ কথাটা যেনো ছিলো বিশ্ব জয় করা হাসির।রাজের মত ছেলে যে কি না লাগাম ছাড়া কথা বলে সে আবার খুঁজছে প্রেন্টিজ!রাজের ভাইবোন সবাই এহেন কথা শুনে হেসে তো দিলই আজ মাহমুদ সরদার নিজেও হেসে দিলেন।ছেলে যে তার মন খারাপ থাকতেই দিতে চায় না।

অবশেষে সরদার বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো গাড়ি।মায়ার পাশের জানালার কাচ নিচে নামানো ছিলো।সরদার বাড়ির সামনে গাড়িটি থামতেই দেখতে থাকে তার সেই পুরোনো স্মৃতি জড়িত বাড়ি।এই স্মৃতি শুধু স্মৃতি না তিক্ত জীবন।বহু বছর পর বাড়িটির সামনে এসেছে মায়া।এই তো সেই গেট যেই গেট দিয়ে তার মাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অন্ধকার রাতে বের করে দেওয়া হয়েছিল।এই সেই গেট যেই গেট থেকে রাজ তার তলপেটে লাথি মেরে বের করে দেয়।মায়ার এখনও মনে আছে শাহানা পারভীন অনুরোধ করে বলেছিলো,”শাহমীর বাবা এমন করোনা।আমার গর্ভে তোমার আরেক বোন আছে বাবা।আমি যে তোমার মমতাময়ী মায়ের সমতুল্য।আমি তোমার মায়ের গহনা চুরি করিনি।আমার নিজেরই যথেষ্ট গহনা আছে।আমার এগুলো লাগবে না।”

কিন্তু নাহ!কোনো কাজে দিলো না শাহানা পারভীনের সেই অনুরোধ।উল্টো মায়া কান্না করলে রাজ হুংকার ছেড়ে মায়াকে লাথি মেরে ভিতরে ঢুকে যায়।মায়া কান্না করতে করতে ওর মায়ের কাছে এসে বলেছিলো,”আমার পুতুল বর পঁচা আম্মু।পুতুল বর খুব পঁচা।আমাকে এতদিন খুব মেরেছে আজকে তোমাকেও বের করে দিলো।এই পুতুল বরকে আমি একদিন খুব মারব।”

শাহানা পারভীন সারারাত দরজায় দাড়িয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে।কেউ এসে খোলেনি দরজা।কারো মন সেদিন একটিবারের জন্যেও গলেনি।অতীত মনে পড়তেই মায়ার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়তে শুরু করে।ঠিক তখনই মায়ার সামনে হাত রাখে রাজ।মায়া দেখলো হাতের দিকে।কখন গাড়ির দরজাটা খুলেছে বুঝতে পারেনি মায়া।মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া অতীত মনে করে যে।রাজের হাতে হাত না মিলিয়েই মায়া বের হয় গাড়ি থেকে।রাজের চোখে এমনভাবে চোখ রাখলো যেনো এই চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে রাজকে।রাজ দেখছে মায়ার চোখে তার প্রতি জমে থাকা ঘৃণা।কিছু না বলে মায়ার সাথে হাটতে থাকে।কিছুদূর যেতেই মনে পড়ে সোনালী সেদিন রাতে বলেছিলো,”এই বাড়িতে যদি দ্বিতীয়বার আসো তাহলে আবারও লাথি মেরে তোমাকে বের করে দেওয়া হবে।আর এটা করবে তোমার এই পুতুল বর।”

মায়া এখন একটা ডেভিল হাসি দিয়ে নিচে বসে পড়ে।রাজ সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে যায়।মায়া নিচে বসেই নিজের বাম পা ধরে বলে,”আহ!আমার পা।মনে হয় মচকে গেছে।আমি হাটতে পারব না এখন।”
মাহমুদ সরদার মায়ার কাছে এসে বলেন,”দেখি মা তোমার পা।”
মায়া ডান হাত দেখিয়ে বাধা দিয়ে বলে,”আপনি আমার শশুর হন।আপনাকে কি করে আমার পায়ে হাত দেওয়াই?”
মায়া কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকালো।দেখলো মালিনী সোনালী মোহন সরদার ও আহান সরদার এর গাড়ি এসেছে।বাকি ছেলে মেয়েরা গান বাজাবে বলে অন্য গাড়িতে আছে।মালিনী সোনালী এরা নামতেই মায়া কান্নারত কণ্ঠে বলে,”আমার শাশু মা কি পারবে আমার কি হয়েছে দেখতে?”
মালিনী ভ্রুকুটি করে বলে,”কি হয়েছে?”

“মেয়েটার পা মচকে গেছে।উঠতে পারছে না।”
রাজ দেখছে চুপ করে।পাশে বর থাকতে কোন দুঃখে শাশুড়ির পিছনে লাগলো এটাই রাজ বুঝতে পারল না।মায়া চোখে পানি না আনলেও মুখটা কান্না কান্না ভাব প্রকাশ করে বলে,”শ্বাশু মা তো মায়ের সমতুল্য।যদি তিনি অসুস্থ বোধ করেন তো কাকি শাশু মা আছেন।তিনি কি একটু আমার পা দেখে বলতে পারবেন কি হয়েছে আমার পায়ে?”
সোনালী চিৎকার করে বলে,”আমি কেনো তোমার পায়ে হাত দিতে যাবো?”
রাজ এদেরকে থামিয়ে বলে,”আমার বউয়ের পায়ে কি হয়েছে এটা আমিই দেখব।তোমাদের এত ভাবতে হবে না।”
রাজ এগিয়ে আসতে নিলে মায়া লক্ষী বউয়ের মত করে বলে,”ছিঃ ছিঃ!বউয়ের পায়ে স্বামী কেন হাত দিবে?এটা তো অমঙ্গলের কাজ।এটা মানায় না।”

রাজ খুক খুক করে কেশে দিলো।মায়ার এই পতি ভক্ত কথা যেনো রাজের হজম হতে কষ্টকর।মাহমুদ সরদার এবার সোনালীকে বলেন,”মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।যখন এতই অনুরোধ করছে তাহলে শোনো তার কথা।পা তো দেখতে বলেছে।পা ধরে ঝুলে তো থাকতে বলেনি।মালিনীর কোমরে ব্যাথা না হলে ওকেই বলতাম মেয়েটার পা দেখতে।তুমিই নাহয় মায়ের স্থানে একটু মেয়েটার সেবা করলে।”
“এই নোংরা কিটকে মায়ের স্থানে মায়া কখনই রাখবে না।”
মনে মনে কথাটি বলে মায়া।সোনালী সবার দিকে তাকালো।সবাই নিশ্চুপ।নিজ দায়িত্বে কথা বাড়ালে এখন বিপদে পড়বে।তাই সে মায়ার পায়ের কাছে গিয়ে মায়ার পায়ে হাত দিলো।মায়া এটা দেখে ঠোঁটে ডেভিল হাসি ফোটাল।মায়া মনে মনে বলে,”আমাকে লাথি মেরে বের করার কথা বলেছিলেন না আপনি?আজ দেখুন কার পায়ে কার হাত।অবশ্য শেষ খেলার আগে কিছুই জানতে পারবেন না।”

সোনালী পা নাড়িয়ে চারিয়ে বলে,”কই কোথাও কিছু দেখছি না তো।”
মায়া চিৎকার করে বলে,”আউচ।আমার পাআআআআআআ।এই মহিলা আমার পা ভেঙ্গে দিলো।”
মায়ার এই ঢঙের আহাজারি ধরে ফেলেছে রাজ।তবে রাজ নিজেও কম কিসে?মায়ার পাশে বসে বলে,”চিন্তা করোনা মায়াবতী।আমি পতি বলে পা না ধরতে পারি আস্ত তুমিটাকে ধরতে পারব।”
মাহমুদ সরদার এবার গাম্ভীর্যের সাথে বলে,”বেয়াদপ ছেলে।কোথায় কি বলতে হয় জানোনা?”
রাজ যেনো বেক্কল বনে গেলো।মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আবার কি বললাম!”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৩

কিছুক্ষণ ভেবে রাজ নিজের জিহ্বায় নিজে কামড় দিয়ে বলে,”দুষ্টু বাবা।ছেলে বলে একদিক ভেবে বাবা কথাটা নিয়ে যায় আরেকদিক ভেবে।আমি বুঝিয়েছি যে এখন আমি আমার বউকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকবো।এছাড়া কি উপায় আছে?বউ আমার গৃহ প্রবেশেই পা মচকেছে।তাই বলেছি কথাটা।বুঝেছো বাবা?”
মাহমুদ সরদার এবার নিজেই বোকা হয়ে গেলো।অবশ্য এই যে ছেলে কখন কোন মস্তিষ্কে কোন কথা বলে কিছুই বুঝতে পারে না।

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here