মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪৫+৪৬
ইশরাত জাহান
মায়া হাসপাতালে আসলো মাত্র।এসেই সবাইকে পেলো।সবাই বলতে মাহমুদ সরদার ও আদ্র।রুদ্র মায়ার সাথেই আছে।সিয়া আর হিয়া ক্যান্টিনে গেছে মাত্র।আসার সময় দেখা হয় মায়ার সাথে।মায়া লক্ষ্য করেছে দুই বোনের আজ মনটা খারাপ।আশেপাশে লোকজন আছে বলে প্রশ্ন করেনি মায়া।রুদ্র নিজেও লক্ষ্য করেছে তার হিয়াপাখির চশমা চোখের মাঝে পাতাগুলো কেমন ভেজা ভেজা।নাকটা লাল হয়ে আছে।ওদেরকে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি দেখিয়ে সিয়া বলে,”আমরা একটু ক্যান্টিন থেকে আসছি।”
সিয়ার সময় যাচ্ছে দৌড়াদৌড়িতে।ড্রিম লাইফ হাসপাতালে ক্লাস করে আবার স্কয়ারে আসে ভাইকে দেখতে।এই পরিবারে সবার মধ্যে একতা ভাব আছে।মেয়ে দুজনকে মাহমুদ সরদার নিজ শিক্ষা দিয়ে বড় করেছেন।মালিনীর সাথে বিয়ে হবার পর তাদের প্রথম সন্তান জন্মের দিনই হারিয়ে যায়।যেটা মানসিকভাবে মেনে নিতে পারেননি মাহমুদ সরদার নিজেও।পুরুষ মানুষ তাই মনোবল শক্ত রেখে সন্তানকে অনেক খুঁজেছিল।ভাগ্যের কাছে হেরে গিয়ে সেই সন্তানকে আজও পেলো না।দ্বিতীয়বার মালিনী মা হবার খবর পেতেই মাহমুদ সরদার দিনরাত এক করে মালিনীর যত্ন নেয়।মানুষটাকে আর কষ্ট দিবেনা তাই।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মালিনীর মনেও আক্ষেপ থাকে স্বামীর ভালোবাসা না পাওয়ার সন্তান হারানোর।সেই আক্ষেপ বা কষ্ট যেটাই হোক মাহমুদ সরদার উবে দিতে চায়।কিন্তু ততদিনে মনটা কেমন যেনো বিগড়ে গেলো মালিনীর।সিয়া আর হিয়াকে মা হিসেবে যত্ন নিলেও এটা পরিপূর্ণ যত্ন হয়না।ওই তো শুধু ফিডিং করিয়ে দিতো।বাকি যেসব কাজ মাহমুদ সরদার বেশি করতেন।ওই সময়টায় ডায়পার ছিলো না।প্যান্ট পরিবর্তন করতে হতো প্রচুর।এগুলো সব মাহমুদ সরদার নিজে করেন।মেয়েদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান।রাজের সাথে কথা বলিয়ে দেন।বাইরের জগৎ দুই মেয়েকেই বুঝিয়ে দেন।সর্বপ্রথম মেয়েদের যে শিক্ষাটা দেওয়া হয় ওটা হলো ব্যাড টাচ সম্পর্কে।তারপর বড়দের সম্মান করতে শেখান।তাই তো সিয়া আর হিয়া এত বড় পরিবারের মেয়ে হিসেবেও সমাজের কাছে আদর্শ সন্তান।সবার মুখে মুখে লেগে আছে মাহমুদ সরদার ভাগ্য করে সন্তান পেয়েছে।রাজ একজন মন্ত্রী হয়েও কোনো নারী নেশায় জড়িত নেই।যেটা প্রায় মন্ত্রীদের মাঝে দেখা যায়।সিয়া আর হিয়া ধনী পরিবার পেয়েও কোনো অহংকার দেখায়না।যেটা আজকাল প্রায়ই আমরা আশেপাশে মানুষের কথার মাঝে দেখি।ক্যান্টিনে বসে নিজেদের শৈশব কল্পনা করে দুই বোন।সেই সাথে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।হিয়া চশমাটা খুলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে বলে,”আমাদের সঙ্গেই কি না একটা বিষাক্ত কিট বসবাস করে।অথচ আমরা দেখে বুঝতেও পারিনি।”
সিয়া টেবিলে মাথা রেখে বিষন্ন মনে বলে,”ভাবী যেদিন প্রথম ছোটমা আর মাকে শাস্তি দেয় ওই সার্ভেন্টকে মারার জন্য তখন আমি একটু ভাবীর উপর অভিমান করেছিলাম।যতই হোক মা তো আমার।কিন্তু আজ বুঝতে পারছি ভাবী আসলে মানুষ চেনে।যেটা আমরা চিনি না।তাই তো আমরা বোকা হয়ে যাই বারবার।”
হিয়া মৃদু হেসে বলে,”আমি কিন্তু তোর মত বোকা হইনা।শুধু চুপ থাকি।অত ফেনফেনানি ভালো লাগেনা তাই।”
“মিলি আপুর কথা ভাবছি রে।মেয়েটা যখন নিজের মা সম্পর্কে জানতে পারবে তখন কেমন লাগবে?”
“কিছু করার নেই।ভাইয়া জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছে।সেই সাথে আদ্র ভাই রুদ্র ভাই এরাও।”
“আচ্ছা ভাবীর ব্যাপারটা বুঝলাম না।ভাবীর শৈশব যদি করুন হয় তাহলে বীর ভাই কি ওখান থেকেই ভাবীকে আগলে নেয়?”
“কিছু তো একটা কাহিনী আছেই।ওই মহিলা কিছু একটা করেছে।যেটা শেষ করে দিতে চায় আমাদের ভাইয়েরা।”
সিয়া জানালার বাইরের দিকে চোখ রেখে বলে,”আমার মনে হয় ভাবী এখানে কোনো একটা মতলবে এসেছে।ভালো করে দেখ তো কেমন যেনো গোলমেলে লাগেনা ভাই ভাবীর সম্পর্কের শুরুটা।”
“সন্দেহ আমিও করেছিলাম।তারপর ভাবলাম বড়রা যেখানে শান্ত আমরা কেন কথা বাড়াবো।”
সিয়া মাথা উপর নিচ করে বলে,”আমার কেন জানি রিসিবশনে ভাইয়ার বলা কথাগুলো সাজানো গুছানো লাগলো।যেনো সে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলছে।এর মধ্যে আংশিক সত্য তো বাকিটা মিথ্যা ঘেরা।”
“আচ্ছা সিয়া একটা কাজ করলে হয়না?আমরা দুইবোন মিলে একটু অতীত ঘেঁটে দেখি।”
“পাগল নাকি! বড়রা তো নিজেদের মত চেষ্টা করছে। শুনলি না কি কি বলছিল?”
“তুই না আসলেই মাথা মোটা।ডাক্তারি পড়ছিস শুধু চিকিৎসা করে সফল হতে পারবি।জীবনে একুল ওকুল বিষয়ে জানতে পারবি না।”
ভ্রু কুঁচকে সিয়া বলে,”সিরিয়াস সময়েও তুই আমাকে খোঁচা মারলি?”
“আরে বোন আমার খোঁচা না।একটু ভেবে দেখ।ভাইয়ার বায়োলজিক্যাল মা মারা যাওয়ার পিছনে কে দায়ী?ওই সোনালী।ওকে ছোটমা বলতেও ঘৃণা লাগছে।তুই শুধু একটু সময় মিলিয়ে দেখ।আমাদের যে খালামণি ছিলো সে যে সময় মারা যায় ওই সময় কিন্তু আমাদের প্রথম ছোটমা ছিলো না।সে তো এই বাড়িতে বউ হয়ে আসে আমাদের মা আমাদের বাবাকে বিয়ে করার পর।তারমানে তো এটাই স্পষ্ট যে এই সোনালীর উদ্দেশ্য হলো আমাদের পরিবারের ক্ষতি করা।যেটা সে তার মাস্টারের সাথে মিলে করছে।সেই মাস্টার কে আমরা কেউই জানি না।ভাইয়া বল কি বাবা বল কেউই কিন্তু মাস্টারের খোঁজ পায়নি।পেলে এই সোনালী এতদূর এগোতে পারতো না।আর এই ডেঞ্জারাস মহিলা কিন্তু ভাইয়াকে খুব ভালো করে চেনে। সেই সাথে চেনে আমাদের ভাবীকে।ভাবীকে দেখলেই তো ভয় কাজ করে।যেমন ভয়ংকর লুকস দেয়।তাহলে এটা শিওর যে এই সোনালী উপরে উপরে কোনো প্ল্যান করে রাখছে।যে মহিলা এই মুহূর্তে এই জট না সরিয়েই জারা আপুর বিয়ে নিয়ে পড়েছে সেই মহিলার মস্তিষ্ক তুই বুঝতে পারছিস?উনি কিন্তু আমাদের বাড়ির সবাইকে পয়েন্টে পয়েন্টে চেনে।শুধুমাত্র তোকে আমাকে কখনও সন্দেহ করবে না।কারণ কি বল তো?আমরা সবসময় শান্ত আর নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যস্ত থাকি।যদি আমরাই আমাদের এই বোকামি ভাব দিয়ে অন্তত মাস্টারকে খুঁজে বের করতে পারি তাহলে তো অনেকতা এগিয়েই যাবো।”
সিয়া কিছুক্ষণ ভাবলো।ভেবে বলল,”তোর কথাগুলো ঠিক আছে।কিন্তু আমরা জানবো কিভাবে!রাস্তা কি?উপায় কি?”
“প্ল্যান করতে হবে।তার আগে মাকে ওই মহিলার সাথে থাকতে দেওয়া যাবেনা।আমি একদিন আড়াল থেকে শুনেছিলাম।বাবা মাকে বলছে,তুমি ওই সোনালীর সাথে না মিশলে আমাদের সংসারে সুখ অনেকটাই বাড়তো।নর্দমায় পা দিয়ে মনটাকে নর্দমার সাথে মিশে রাখলে।আমি তখন না বুঝলেও এখন বুঝলাম বাবা কেন বলেছে।”
“মাকে আমি যেভাবেই হোক আলাদা রাখব।তবে সেটা কৌশলে।বুঝতে দিলে চলবে না।জানিসই তো ওই মহিলার সাথে মা অনেক ভালো বন্ধুত্ব করেছে।একটা নেশার মত কাজ করে যেনো দুজনের সাথে প্রতিদিন ভাবভঙ্গি বজায় রাখা।কৌশলে ছাড়া সম্ভব না।”
“হুম।”
বলতেই ওয়েটার আসে।দুটো লেমনেড নিয়ে আসলো।হিয়া গ্লাস হাতে নিয়ে স্ট্রো ঠোঁটে নিয়ে টান দিলো।কয়েক টান দেওয়ার পর পাশে রাখে। সিয়াও তাই করে।এরমাঝে আচমকাই হিয়ার লেমনেড কেউ নিয়ে স্ট্রোতে ঠোঁট রেখে টান দেয়।হিয়া পাশে চোখ রেখে দেখে রুদ্র।হিয়া নাক সিটকে বলে,”ওটাতে আমি মুখ রেখেছি রুদ্র ভাই।”
“তো আমি কি করবো?”
“ঘৃণা লাগেনা?”
“কেন জানি ভালো লাগলো।”
“ছিঃ!আসলেই নষ্ট পুরুষ আপনি।”
সিয়া এদের ভাব দেখে বলে,”আমি গেলাম। তোরা আয় তোদের মত।”
হিয়া বাধা দিয়ে বলে,”কেন রে?আমি পরে যাবো কোন দুঃখে?”
“তুই বের হবি কিভাবে?রুদ্র ভাই তোর পাশে বসে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।”
রুদ্র বুড়ো আংগুল উঁচিয়ে ব্রাভো দিয়ে বলে,”গ্রেট।হবু ডাক্তারের বুদ্ধি আছে দেখছি।”
সিয়া মৃদু হেসে চলে যায়।হিয়া রক্তিম চাহনি দেয়।রুদ্র টেবিল থেকে চশমা নিয়ে হিয়ার চোখে রাখে।তারপর বলে,”এবার রাগ দেখা।আমি তোর চশমা চোখে রাগ দেখতে অভ্যস্ত।”
হিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো।এই লোকটাকে এতবার অপমান করেও কাজ হয়না।হিয়া চোখ মুখ হালকা কুঁচকে বলে,”আপনার কি লজ্জা হয়না রুদ্র ভাই?”
“পুরুষ মানুষ লজ্জা পায় নাকি?”
“আমি এতবার আপনাকে দুর দুর করে দেই।আপনি তাও কেন আমার কাছেই আসেন?”
“মনটা নির্লজ্জ হয়েগেছে তাই।”
হিয়া নিরব চাহনি দিলো।রুদ্র লেমনেড নিয়ে চুমুক দিয়ে হিয়ার দিকে ইশারা করে বলে,”চুমুক দিবি নাকি?”
হিয়া হাত দিয়ে সরিয়ে বলে,”ছিঃ!না।”
“একদিন ঠিকই দিবি।”
“আপনার স্বপ্নে।”
“ওটা তো প্রতিদিনই দিশ।”
“মানে কি?আমি আপনার স্বপ্নে প্রতিদিন এভাবে থাকি?”
“এভাবে বলতে কিভাবে বুঝালি আমি বুঝলাম না।কিন্তু এটুকু বুঝলাম তুই নেগেটিভ নিলি।তাই বলি আমি তোকে কোনো বাজে নজরে দেখি না।হতে পারে কিছু চাওয়া পাওয়া হঠাৎ আপনাআপনি নজর রাখতে রাখতে চলে আসে।কিন্তু তাও নিজেকে ঠিকই সামলে রাখি।কারণ আমি জানি আমাকে ঠিক কেমন রাখা উচিত।”
“আপনাকে আমি কখনও বুঝতে পারিনা রুদ্র ভাই।”
“একটু ভালোকরে আমাকে বোঝার চেষ্টা করে দেখ।সব বুঝবি।সেই সাথে নিজেকেও বুঝে যাবি।”
“আপনি আমাকে বোঝেন?”
“তোর থেকেও বেশি আমি তোকে চিনেছি।কারণ তুই …..
রুদ্র চুপ করে থাকে।হিয়া জানতে চায় বাকি কথা।না জানলে কেমন জানি মনটা খচখচ করছে।তাই প্রশ্ন করে,”কারণ আমি?”
“তুই….
“হ্যাঁ আমি?”
“তুই কানা যার কারণেই তো চশমা পরে ঘুরে বেড়াস।”
রাগ বাড়ল হিয়ার মনে।এটাই তাহলে রুদ্রের কারণ!চশমা পরে থাকার মানে কানা নাকি?এটা অভ্যাস হিয়ার।উপন্যাস পড়তে পড়তে চশমা যে কখন তার চোখের সঙ্গী হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি।এখন এই চশমা চোখে রাখাটাও একটা নেশা হিয়ার কাছে।এটা নিয়ে রুদ্র তাকে অপমান করতে পারে না।কোনমতেই না।ফিমেল ইগো জেগে উঠল হিয়ার মনে।রুদ্রকে কিল ঘুষি দিয়ে বলে,”দূরে সরুন নষ্ট পুরুষ।আমি আপনার সাথে একটা মুহূর্ত বসে থাকবো না।”
“আচ্ছা আচ্ছা চল।এই দাড়া উঠছি আমি।বাকিটুকু শেষ করে নেই।রোদে বসে মাথা গরম হয়ে গেছে।লেমনেড পেয়ে শান্তি লাগছে।”
হিয়া বাধা দিল না।রুদ্র স্ট্রতে একটান দিয়ে বাকি লেমনেড শেষ করে নেয়।তারপর উঠে দাড়ায়।হিয়াকে যেতে দেওয়ার সুযোগ করে নিজে যায় বিল পেয় করতে।হিয়া অপেক্ষা করেনি।চলে গেলো নিজের মত।রুদ্র টাকা দিয়ে পিছন ঘুরে হিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।লম্বা চুলগুলো ঝুটি বাধা।হিয়া কখনও ওড়না গলায় চিকন করে রাখেনি।ওড়না মেলে দুইপাশে ছেড়ে দেয়।তাই দুইপাশে ওড়না দুলছে।হিয়ার হাতগুলোও ওড়নার কারণে ঢেকে আছে।রুদ্র যেনো হিয়ার এসব বিষয়গুলো পরখ করে আনন্দ পায়।এই সরদার মহলে রুদ্রর একমাত্র শান্তির স্থান হলো হিয়ার পায়ের বিচরণ যেদিকে থাকে।আর এই হিয়া তাকে সবসময় ভুল বুঝে পায়ে ঠেলে দেয়।রুদ্র নিজেও কম না।তারও দোষ আছে।সে কেন হিয়াকে ভুলগুলো শুধরে দেয়না?একটাবার বলতে পারেনা,”হিয়াপাখি আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি।আমার ইনভেস্টিগেশনের জন্য এই এক্সিডেন্ট হয়।আমি নিজ ইচ্ছায় অন্য নারীর দিকে চোখ রাখিনা।”
সেই সুযোগ মনে হয় রুদ্রের এখনও আসেনি।রুদ্রের একটা প্রেমিকা আছে। যাকে প্রায়ই রুদ্রের সাথে ঘুরতে দেখা যায়। হিয়ারও সেই ধারণা।কিন্তু সেই প্রেমিকাকে যে রুদ্র হাজত বাশ করানোর জন্য ঘুরাচ্ছে এটা বুঝতে পারছে না হিয়া।রুদ্র বলবেও না।রুদ্রের এই প্রেমিকা যে সোনালীর অ্যাসিস্ট্যান্ট।বলা তো যায়না কখন কোনটা ধরা পড়ে।রুদ্র মিশনে আছে।একবারে এই ছাইপাশ পরিষ্কার করেই হিয়ার মনে নিজেকে শুদ্ধ করে তুলবে।হিয়ার মনে জায়গা তো আগেই করেছে।অজান্তেই করেছে।এবার হিয়ার সাথে সংসার বাধার সময় শুধু।
কেবিনে এসে হিয়া দেখলো রাজকে উঠিয়ে সাদা পাঞ্জাবি পরানো হচ্ছে।কিছু না বুঝে বলে,”ভাইয়াকে তো ক্ষত স্থানে ঢাকতে বারণ করা হয়েছিল।”
মায়া পিছন ফিরে হিয়াকে একবার দেখে রাজের হাতটা আস্তে ধরে পাঞ্জাবির হাতাতে হাত ঢুকিয়ে দেয়।তারপর বলে,”তোমার ভাইয়া তার শালা আর শালার বউকে দেখার জন্য অধৈর্য হয়ে আছে।”
“ভাইয়ার শালা কে?”
নিজে বলে নিজেই মনে করে বলে,”বীর ভাই?”
“হ্যাঁ।”
“তার তো আজকে দেবদাস দিবস পালন করার দিন।চন্দ্রমল্লিকা পেলো নাকি?”
রুদ্র ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,”নাগিন ড্যান্স দেওয়া ডিজিটাল পার্বতী থাকতে দেবদাস কি পুরোনো ভার্সন ধরে রাখবে?সেও ডিজিটাল রাস্তায় পার্বতীকে নিজের করে নিয়েছে।ওসব চন্দ্রমল্লিকাকে জীবনে আনার সময় আজকালকার দেবদাসদের নেই।”
হিয়া ঠোঁট এমন করলো যেনো সে রুদ্রের এই কথার ভঙ্গি পছন্দ করেনি।তবে সে বুঝেছে বীর যে আজকে জারাকে বিয়ে করেছে এটা।খুশিও হলো সে।সেই সাথে খুশি হলো মায়ার মা আসতে চলেছে।কিন্তু মায়াকে কেন জানাচ্ছে নে কেউ এটাই ভাবাচ্ছে বারবার।রাজ উঠে দাঁড়াবে মাহমুদ সরদার এসে রাজের হাত ধরেন।সেই ছোট্ট বেলায় বাবা যেমন সন্তানের কাঁধে হাত রেখে আস্থা দিতেন ঠিক তেমন রাজের এই সময়েও বাবা সন্তানের কাছে আছে।রাজ চোখ স্থির রেখে মাহমুদ সরদারকে দেখছে।মাহমুদ সরদার মলিন হেসে বলেন,”তোমার বক্ষ নাহয় তোমার বউয়ের জন্যই থাক।তোমার বাবার কাঁধ নাহয় তোমার জন্যই থাকলো।”
রাজসহ সবাই হেসে দিল কেবিন জুড়ে।মাহমুদ সরদারের কাঁধে হাত রেখে রাজ হাঁটছে।একটা সময় এসে এই ইমোশন ভোলাতে রাজ বিড়বিড় করে মাহমুদ সরদারকে শুনিয়ে বলে,”আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি বাবা।”
“কি বিষয়?”
“তুমি আমার বউকে হিংসা করো।”
“তোমার মাথা গেছে নাকি?আমি শশুর হয়ে বউমার জন্য হিংসা করবো কেন?”
“তোমার কথাতে বোঝা যায় আমি বউকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে তোমার কষ্ট হয়। আফটার অল তোমার বউ তো তোমাকে মানসিকভাবে অশান্তি দেয়।”
“আমার বউ আমাকে মানসিকভাবে অশান্তি দিলেও আমাকে ব্রেন স্ট্রোক করাতে তোমার লাগামহীন কথা যথেষ্ঠ।”
“আফটার অল আমি তো তোমারই পয়দা করা প্রোডাক্ট।”
রাজকে হাসপাতাল থেকে বাসায় এনে হলরুমে রাখা হলো।বীর আসবে তাই। ওরা আসতে না আসতেই কলিং বেল বেজে ওঠে।মাহমুদ সরদার ভ্রুকুটি করে বলেন,”এত তাড়াতাড়ি আসলো কিভাবে?”
হিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়।হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে মিহির।হিয়া অবাক হয়ে বলে,”মিহির ভাই!”
সবাই একটু উঁকিঝুঁকি দিলো।মিহির ভিতরে এসে মোহন সরদারকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কেমন আছো বাবা?”
“আমি ভালো,তুমি?”
“আমিও ভালো আছি।মা কোথায়?”
“জারার বিয়ে হচ্ছে আজকে।সেখানেই আছে সে।”
মাহমুদ সরদারের কথা শুনে মিহির মৃদু হাসে।মিহির জানে আজকে জারার বিয়ে।মোহন সরদার ছেলেকে প্রানভরে জড়িয়ে ধরে।মায়া তাকিয়ে আছে।মায়ার চাহনিতে নেই হাহাকার আছে শুধু হিংসা।হিংসা তো হবেই মায়ার।এইটা তো তারই প্রাপ্য।রাজ মায়ার দিকে দেখলো।বুঝতেও পারল বউয়ের মন।মাহমুদ সরদারকে ইশারা করতে মাহমুদ সরদার এগিয়ে আসে মায়ার কাছে।মায়ার মাথায় হাত রেখে পিতৃত্বের স্নেহ দেয়।সিয়া আর হিয়া এই দৃশ্য দেখে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে হেসে দিলো।
মোহন সরদার খুশিতে আত্মহারা ছেলেকে পেয়ে।তাই জড়িয়ে ধরেই বলে,”আসবে আগে জানাবে না?”
“জানালে সারপ্রাইজ হতো না বাবা।”
“আমি অনেক খুশি হয়েছি তুমি এসেছো তাই।”
মিহির মুখে হাসি ফুটিয়ে এদিক ওদিক তাকালো।প্রথমেই তার নজর মাহমুদ সরদারের দিকে যায়।সেই সাথে গেলো মায়ার দিকে।মিহির যেই মায়ার দিকে চোখ রাখে মায়ার মুখের দিকে চেয়েই থাকে।মায়ার চোখজোড়াতে চোখ রেখে বলে,”উনি কে?”
মোহন সরদার বলে ওঠে,”রাজের বউ মায়া।”
“লুক লাইক বেবী ডল।”
মিহিরের বিড়বিড় করে বলা কথা কেউ না শুনলেও মায়ার দিকে মিহিরের চাহনি সবাইকে স্পষ্ট করে দিলো মিহির ঠিক মায়াকে কোন দৃষ্টিতে দেখছে।মিহিরের চোখের ইশারা বুঝে রুদ্র বলে ওঠে,”লাগা লাগা লাগারে আগুন!”
হিয়া পিছন ঘুরে ভ্রু কুঁচকে বলে,”মনে?”
“বাঘের খাঁচায় চোখ দিয়েছে।এই চোখ যে উপড়ে যাবে।আফসোস একটাই।”
“কি?”
“এখানে বাঘ একা চোখ উপড়ে দিবেনা বরং বাঘিনীও একই কাজ করবে।”
হিয়া মিহিরের দিকে চোখ রেখে বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,”এমনটাই তো উচিত।”
মিহির অনেকক্ষণ ধরে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মায়া হাত মুঠ করে মিহিরের চোখে চোখ রাখে।মায়ার চোখ লাল হয়ে আসছে।এখনই যেনো সে খুন করে দিবে মিহিরকে।মিহির ধীর পায়ে মায়ার দিকে এগিয়ে আসতে নেয়।চোখ স্থির মায়ার দিকে।সোফায় বসে থেকেই রাজ এক দৃশ্য দেখে।রাজের সহ্যসীমার বাইরে মিহিরের চাহনি।তার বউয়ের দিকে কেউ তাকাবে সে তো সহ্য করবে না।সোফার পাশেই ছোট টেবিল তার উপর ছোট ছোট তিনটি ফুলদানি।হিয়ার পছন্দে কেনা মাটির তৈরী ফুলদানি।তার মধ্যে একটা ফুলদানি হাতে নিয়ে মিহিরের দিকে ছুঁড়ে মারলো রাজ।মিহির চোখের সাথে কপালের উপর হাত দিয়ে দূরে সরে যায়।আচমকা এমন হামলা হবে বুঝতে পারেনি মিহির।মাহমুদ সরদার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন শুধু।মোহন সরদার এসে মিহিরকে আগলে নিয়ে বলে,”মেরে ফেলবে নাকি আমার ছেলেকে?”
“তোমার ছেলের শকুনি দৃষ্টি ঠিক রাখতে বলো কাকা।সে যেনো আমার বউয়ের দিকে কোনো প্রকার নজর না দেয়।আমি এমন স্বামী না যে শুধু মুখে ওয়ারনিং দেই।বরং আমি ওই দৃষ্টি উপড়ে ফেলার ব্যবহস্থাও করতে জানি।”
“তোমার বউকে ঘরে সাজিয়ে রেখে দেও।বাইরের কেউ তাহলে দেখতে পারবে না তাকে।”
“আমি আমার বউকে যেভাবেই রাখি না কেন সে তার সম্মান ধরে রাখতে জানে।বরং সে আমার থেকেও বেশি হিংস্র রূপ ধারণ করতে জানে।কিন্তু স্বামী হয়ে তো আমি সেই শকুনকে মেনে নিতে পারবো না যে আমার বউকে নিয়ে উড়াল দিতে চাইবে।শকুনের দৃষ্টি সেই সাথে জানটাও আমি নিয়ে নিবো।”
“তোমরা স্বামী স্ত্রী মিলে বাড়িটাকে খুনের বাড়ি বানাবে নাকি?”
“তোমরা নোংরা খেলায় মজে থাকা বন্ধ করলেই আমাদের স্বামী স্ত্রীর খুন খুন খেলা বন্ধ হবে।”
মায়ার কাছে কল আসে।মায়া রিসিভ করে।কিছু শুনে ফোন কেটে বলে,”ভাইয়া চলে এসেছে।”
রাজ উঠতে নিবে মায়া এসে রাজকে ধরে।রাজ বলে ওঠে,”বুকেই তো লেগেছে।পা আমার এখনও ঠিক আছে।”
“কাপল হয়ে রিসিভ করে নেই আমাদের নিউ কাপলকে।”
রাজ হেসে দিলো।মিহির বুঝলো না বীরকে আনার জন্য এভাবে কেন অধৈর্য সবার।জারার জন্য কি বীর বিরহে পড়ল নাকি?কারণ মিহির কিছুই জানেনা।সবার সাথে সাথে মিহির নিজেও বাইরে আসে।হেলিকপ্টার এসে সরদার মহলের ভিতরেই থামে।হেলিকপ্টার থেকে বীর লাফ দিয়ে বের হয়ে কোর্ট ঠিক করে।বীর বের হবার পর জারা নামে অপর পাশ থেকে।জারাকে দেখে চমকে ওঠে মিহির।সেই সাথে মোহন সরদারের ও মিলির কপাল কুঁচকে আসে।জারা হেলিকপ্টার থেকে নেমেই সবাইকে হাত উঁচিয়ে জানায়,”হাই সরদারস গাইস।আই অ্যাম ব্যাক।”
সেই সাথে মিডিয়ার লোকজন আসতে ভুললো না।এতকিছু ঘটে যাবে আর মিডিয়ার কানে কোনো না কোনোভাবে পৌঁছাবে না এটা কি হয়?গোপনে রাজের লোক বা বীরের লোক সব জানিয়েই দেয় মিডিয়ার কাছে।সবাই যে মিডিয়ার সাথেই যুক্ত।এতে হয়রান হয়নি কেউ।বরং টাস্কি খেলো মিডিয়ার লোক।এতক্ষণ দরজায় অপেক্ষা করে ছিলো নতুন জুটিদের জন্য।তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে হেলিকপ্টার নিয়ে সোজা ভিতরে এসেছে বর বউ।ওরাও এবার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতে লাগে।দারোয়ান আটকে রেখেছে শুধু।রাজ ইঙ্গিত দিতেই ওরা ভিতরে আসে।সাংবাদিক এসে বীর জারার ছবি তোলাতে ব্যাস্ত।অনেকে লাইভ করছে।বীর বিরক্ত হলেও জারা একেকটা পোজ দিচ্ছে।হাত উঁচিয়ে দুই আঙুল মুখের কাছে নিয়ে পাউট করে।কোমরে হাত রেখে একটু ঝুঁকে এক চোখ টিপ দিয়ে ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়।জারার কাণ্ডে সাংবাদিক নিজেই হতভম্ব।একজন তো না পেরে বলেই দেয়,”বউ কি পাগলা গারত থেকে আনা?”
কেউই শুনতে পায়নি এমন কথা।মাহমুদ সরদার নিজেও বিরক্ত হয়ে বলেন,”এই মেয়ে বাড়িতে এসেই নাগিন ড্যান্স দিবেই।কখনও সভ্য হয়ে চলতে জানেনা।”
“তাও তো তোমার শালার ছেলে মানে আমার শালা তাকেই বিয়ে করেছে।”
“কি দেখে এমন উশৃঙ্খল মেয়েকে ভালোবাসলো এমন এক বুদ্ধিমান ছেলে এটাই মাথায় ঢোকেনা আমার।”
“তুমি যাকে বুদ্ধিমান ভাবো সে আসলে বোকা।তার থেকেও বড় বোকা তুমি।তাই তো বোকাকে বুদ্ধিমান ভাবো।”
“তোমার থেকে জানতে হবে আমি বোকা না চালাক?”
“আহা রেগে যাচ্ছো কেন?আমি যদি না বুঝিয়ে দেই তাহলে তো তুমি লোকের সামনে বোকা হয়ে যাবে।”
“তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো।”
“ভুল ধরে দেওয়াটাকে বুঝি ইনসাল্ট বলে?তাহলে তোমরা কেন ছোট থেকে আমাদের ভুল ধরে দিতে।আমাদের ছোট থেকেই ইনসাল্ট করতে তোমার বুক কাপেনি বাবা।”
“কপাল আসলে খারাপ আমার।না বউ বুঝতে পারলো আমাকে না আমার ছেলে আমাকে শান্তি দেয়।সবাই শুধু কথাই শুনিয়ে যায়।”
“তোমার ছেলে হয়ে জন্মালেও আমি খুব ভাগ্যবান বাবা।”
“কিভাবে?”
“আমার বউ অন্তত আমাকে বোঝে।কখনও তোমার বউয়ের মত আমার বউ আমাকে ঘরের বাইরে বের করে দেয়না।”
মাহমুদ সরদার শুকনো ঢোক গিলে বলেন,”রাতের বেলা কি আমার ঘরের দিকে উকি দেও তুমি?”
“দেওয়া লাগেনা আমার।বাইরে থেকে বাসায় ফিরে নিজের বাবাকে গেস্ট রুমে দেখেই বোঝা যায়।”
“আমি নিজেই থাকি প্রায় প্রায় ওখানে।”
“দোষ একপাক্ষিক না বাবা।দোষ হলো দ্বিপাক্ষিক।স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে সবথেকে বড় শত্রু হলো ইগো।একবার ইগো জন্মালে তাকে বাড়তে দেওয়াকে বলে বিচ্ছেদের সূচনা।এই সূচনা একসময় একেক রূপে বর্ণনা দিয়ে রচনার মত দেখা দিয়ে লম্বা একটা সময় নষ্ট করে দিবে।শেষে সমাপ্তি কি হবে এটা কেউ জানেনা।তাই বলতে চাই এবার একটু নিজের মাঝে গড়ে ওঠা ইগোকে কমিয়ে নেও।দেখবে তোমার সাথে থাকা ব্যাক্তিটাও তোমার করা মূল্যায়ন বুঝতে পারবে।সেও ধীরে ধীরে অনুতপ্ত হবে।”
“এতকিছু ভাবছো আর মুখফুটে তাকে মা বলতে পারছো না।”
রাজ কেমন যেন হয়ে গেলো।শক্ত চোয়াল হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,”যেটা আমি পারিনা সেটা আমাকে দিয়ে বলাতে বাধ্য করো না।এই মুখে তার জন্য মা সমর্থন আসা সম্ভব না।”
মাহমুদ সরদার আর কিছু বললেন না।রাজের কষ্ট তিনিও বোঝেন।চোখ রাখলেন জারার দিকে।জারা এখনও ছবি তোলার মত করে পোজ দিয়ে চলেছে।মাঝে মাঝে তো ক্যামেরাম্যানকে বলেও দিচ্ছে কিভাবে ছবি তুলে দিতে হবে। বীর এবার বিরক্ত হয়ে জারার কাছে এসে জারাকে নিজের কাছে নেয়।জারার কোমরে হাত রেখে বাড়ির দিকে আসতে নেয়।রাজ সূক্ষ্ম চোখে বলে,”এতদিন আমার যে শালার হাতে থাকতো লম্বা একটা বন্দুক,আজ সেই শালার হাতে আছে লম্বা চওড়া একটা হট কোমর।সময় যে কখন জীবন পাল্টে দেয় বলাই দায়।”
রুদ্র কানেকানে বলে,”তোমার ভাগ্য ভালো ভাবীজী ঐদিকে দাড়িয়ে।নাহলে আজকে তোমার জবান টেনে ছিঁড়ে ফেলতো।”
“আব্বে ব্যাটা!ভুলেও যেনো আমার বউয়ের কান ভাঙ্গাবি না।”
মায়া এগিয়ে গিয়ে জারাকে জড়িয়ে ধরে।সিয়া আর হিয়া রূপার থালা নিয়ে আসে।এটা এই পরিবারের একটা সংস্কৃতি বলা চলে।রূপার থালায় করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে মিষ্টি আর শরবত নিয়ে আসা।বর বউকে দরজার গোড়ায় দার করিয়ে খাইয়ে দিয়ে ভিতরে আনা।আজকাল এগুলো কেউ মানেনা।রাজের বেলাতেই রাজ মানেনি।মায়া যে ড্রামা করেছিলো তাতে করাও সম্ভব ছিল না।থালাটা মায়ার হাতে দিতেই অন্যদিকে দারোয়ান আর রুদ্র মিলে সাংবাদিকদের সরিয়ে দেয়।ওরা চলে যেতেই হেলিকপ্টার থেকে সোনালীকে নামানো হয়।দুইদিকে দুজন ধরে আছে সোনালীকে।সোনালীকে দেখে মিহির আর মোহন সরদার এগিয়ে এসে বলে,”এগুলো কি ধরণের অত্যাচার?”
বীর একবার পিছন ঘুরে মোহন সরদারকে দেখে মিহিরের দিকে চোখ রাখে।কিছু না বলেই মায়ার দিকে ঘোরে।যেনো পাত্তা দেওয়ার সময় তাদের নেই।তারা হলো ফেলনা।মায়া চামচে করে মিষ্টি নিয়ে দুজনকে খাইয়ে দিতে নেয়।জারা বলে ওঠে,”ওয়েট!”
সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো।জারা ওর ফোন নিয়ে মিলিকে ডেকে বলে,”আমাদের ছবি তুলে দে।”
মিলি কি করবে বুঝতে পারল না।এদিকে মিহির ওর মাকে দেখতে ব্যাস্ত থাকলেও রুবি ওর মতো চলে যায় হিয়াদের দিকে।তাই মিহির ও রুবি কেউ কাউকে খেয়াল করেনি।মিলিকে চুপ থাকতে দেখে জারা বলে,”তুলবি না ছবি?”
মিলির চাহনি দেখে জারা বুঝে যায় মিলির মনের অবস্থা।তাই বলে,”আরেহ ব্যাপার না।খালামণি তার লিমিট ক্রস করেছিলো বলেই আমার হ্যান্ডসাম তাকে একটু পানিশ দিয়েছে।”
মিলি খুব ভালো করেই জানে আজকে সোনালী ঠিক কাজ করেনি।তাই মিলি মেয়ে হয়েও মাকে সাপোর্ট করতে পারেনা।কারণ সেও তো প্রেমে পড়েছে।শুধু ভয় পাচ্ছে সোনালী কি মেনে নিবে তারেককে!মিলি হাসফাস করতে থাকে।জারা মিলির হাত ধরে শান্তনা দিয়ে বলে,”একটু কয়েকটা ছবি তুলে দে না বোন আমার।তুই ভালো এঙ্গেল দিয়ে ছবি তুলতে পারিস।প্লীজ প্লীজ মুডটা স্পোয়েল না করে ছবি তুলে দে।”
মিলি রাজি হলো।ফোন হাতে নিয়ে ছবি তুলতে থাকে।জারা এবার মায়ার হাত থেকে মিষ্টি মুখে নেয়।মায়াকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ক্যামেরার দিকে মুখ রেখে বলে,”ভাবী আর ননদের একটা লাভলি মোমেন্ট ক্লিক হয়ে যাক।”
মায়াও হেসে দিয়ে ছবি তুলল জারার সাথে।বীর হতাশ হয়ে রাজের পাশে এসে দাঁড়ালে রাজ আফসোস ভঙ্গিতে বলে,”সবে তো বিবাহিত জীবন শুরু।জাহান্নামে না গিয়েও কিভাবে জীবন জাহান্নাম বানানো যায় এটা এখন বুঝবি।”
“তোর জীবন কি আমার বোন জাহান্নাম করেছে?”
“আমার বউ হলো মায়াবতী।সে অন্যদের জীবন জাহান্নাম করলেও আমার জীবনকে জান্নাতের মত করে দেয়।তোর বউ তো আস্ত একটা নাগিন।”
বীর আড়চোখে তাকালেই রাজ চোখ টিপ দিয়ে বলে,”আব্বে শালা,জেনেবুঝে নাগিনকে আলিঙ্গন করেছিস।এবার নাগিনের ছোবল খাওয়ার অপেক্ষা কর।সর্বাঙ্গে বিষে জর্জরিত হলে আমরা তো আছিই তোর পাশে।সাপুড়ে নিয়ে আসবো নাহয় কোনো এক জায়গা থেকে।”
“এই নাগিন তোদেরকে যাই দেখাক আমাকে ছোবল দেওয়ার ক্ষমতা রাখেনা ভাই।দেখতে থাক।”
রাজ বীর দুজন দুজনকে দেখছে আর মৃদু হাসছে।একই উচ্চতার এমনকি দেখতেও প্রায় একই।রাজ সাদা পাঞ্জাবি আর বীর কালো ব্লেজার।দুজনের কেউই কম না।দুজনের চোখেই আছে এক পক্ষকে হারানোর নেশা।দুজনেই একসাথে চোখ রাখলো সোনালীর দিকে।একসাথে হেসে দিলো।সোনালী রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।বিড়বিড় করে বলে,”খেলা এখনও শেষ হয়নি।একবার শুধু ওই কাগজগুলো উদ্ধার করি।তোদের সবাইকে আমি এই বাড়িতেই কবর দিয়ে দিবো।”
মিহির পাশ থেকে কানের কাছে এসে বলে,”রিল্যাক্স মম আমি এসেছি।”
“তোর কাজ হলো ওই মেয়েটার দিকে নজর রাখা।”
বলেই মিহিরের কপালে চোখ রাখে।কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে।বাম চোখটাও ফুলে উঠেছে।সোনালী চমকে উঠে বলে,”তোর কি হয়েছে?”
“রাজ ফুলদানি ছুঁড়েছে।”
“এই ছেলেটা আর ওর বউ আমাদের মা ছেলের পেয়েছে কি?ওদেরকে তো আমি শান্তিতে থাকতেই দিবো না।কিন্তু আমার প্ল্যান তো ফেইল হলো।”
“প্ল্যান একটাই নষ্ট হলো মাত্র।দরকার পড়লে আমরা অপশনাল প্ল্যান রাখবো।প্ল্যানের শেষ রাখবো না কিন্তু ওদের বিচ্ছেদ আমি করেই দিবো।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪৩+৪৪
“একেবারে দুটোকে মাটিচাপা দিয়ে রাখ।”
“না মম।মেয়েটাকে আমি মাটিচাপা দিবো না।বরং আমার করে নিবো।”
সোনালী তাজ্জব বনে গেলো।মায়ার দিকে নজর দিলো মিহির!এই মেয়েকে এমনিতেই সহ্য হয়না এখন কি না নিজের ছেলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে তার বউমা বানানোর।সোনালী কিছু বলতে নিলেও বলেনি।এখানে থেকে কিছু বলা যাবেনা।যা বলার ভিতরে গিয়ে বলবে।
