মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫১+৫২
ইশরাত জাহান
রুদ্রকে দেখা মাত্রই দূরে ছিটকে সরে যায় রাজ।সাদা পাঞ্জাবির গলার দিকটা একটু উচু করে ফু দিয়ে বলে,”আস্তাগফিরুল্লাহ!নাউজুবিল্লাহ!তুই এখানে কেন?আমার বউ কোথায়?”
“রাতের ঘুম কি তোমার নেশায় কাটে যে সকালেই ভুলে যাও পাশে কে আছে?”
রাজের মনে পড়ে রাতে সে মায়ার সাথে না বরং রুদ্রের সাথে ঘুমিয়েছিল।এতগুলো বছর পর বউ নিয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এই তিন মাসে অভ্যস্ত হয়েছে রাজ।সকালবেলা কোলবালিশ থাকেনা বরং মায়া থাকে তার বক্ষে।একদিন হুট করে রুদ্র এসে জায়গা দখল করে নিলো।মনে থাকাটা কি আদৌ সম্ভব!তাও আবার ঘুমের ঘোরে।রুদ্র আশেপাশে তাকালো।কোথাও তার হিয়াপাখি আছে কি না দেখার জন্য।না নেই সে।মানসম্মান বাঁচলো একটু।বাইরে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,”মন্ত্রীর বাড়িতে সেফটির জন্য মাফিয়ার গার্ড হাজির।শান্তিতে ঘুমাতেও পারিনা এদের বউয়ের সেফটির জ্বালায়!”
রাজও এবার বীরকে গালি দিচ্ছে,”শালা বাসর করবি ভালো কথা তাই বলে দলবল নিয়ে আমার বাড়িয়ে হাজির হবি কেন?দুনিয়ায় তোর একার বউ আছে।আর কারো নেই নাকি?তাও আবার একটা নাগিন মার্কা বউকে জুটিয়ে এত সতর্ক।”
পিয়াশ পিছন থেকে মৌকে ডেকে বলে,”চলো আমরা নিচে যাই।”
মৌ চলে যায় পিয়াশের সাথে।যাওয়ার সময় বলতে থাকে,”জিজুর থেকে কিছু শেখো।”
“কি শিখবো?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“বউকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় কিভাবে মিস করতে হয়।আমার আপুর জন্য কতটা ডেসপারেট জিজু।আর তুমি কি না আমার জন্য কোনো কিছুই ফিল করো না।”
অভিমানে বলা মৌয়ের কথায় পিয়াশ মৌকে তার পেটের দিকে ইশারা করে বলে,”আমি যদি ফিল না করতাম তাহলে কি এই জায়গাটায় কেউ দখল করতে পারত?”
মৌ পেটের উপর হাত দিয়ে বলে,”এটাও আমার প্রচেষ্টায়।”
“আমি সায় না জানালে হতো না ম্যাম।”
মৌ মৃদু হাসলো।পিয়াশ মৌয়ের হাত ধরে নিচে নামছে।আসলে তো এটাই যে মৌয়ের ছোট ছোট যত্ন খুব সুন্দর করে নেয় পিয়াশ।নিজের সামর্থ্যের মধ্যে সেবা করে বউকে।মৌ তাতেই খুশি।
সবাই চলে যেতে মায়া ভিতরে এসে দরজা লাগিয়ে রাজের সামনে দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলে,”বাঁদরের লেজ নাহয় সোজা হয়না কিন্তু আপনার তো লেজটাই নেই।যাকে বলে লেজ ছাড়া বদর।তাই বলে কি আপনি সঠিক পথে আসবেন না মন্ত্রী মশাই?”
“আমি তো বেঠিক পথে যাইনি মায়াবতী।”
“মন্ত্রী মশাই!”
মায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে রাজ।রাজ তার প্রেমের বানী শুরু করতে নিবে মায়া রাগ দেখিয়ে বলে,”বউ পাগল নাম শুনতে ভালো লাগে?”
“বউকে ভালোবাসা যদি বউ পাগল হয়ে থাকে তাহলে আমি সেই পাগলই সঠিক।অন্তত বউ পাগল হয়েছি কোনো পরনারী তো না।”
মায়া রাজকে ছাড়িয়ে আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে বাথরুমের দিকে যেতে নিলে রাজ মায়ার সাথে হাটা শুরু করে।মায়া থেমে গেল।রাজের দিকে চোখ রেখে বলে,”বাথরুম বিলাস!”
“বুঝে গেছো?”
রাজ দুই ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে।মায়া হতাশ চাহনি দিয়ে বলে,”লুচ্চা মন্ত্রী মশাই।”
“আমার বউয়ের জন্যই তো।”
ফোনে কথা বলছে জারা। বীর শাওয়ার নিতে গেছে।এই সুযোগে স্পাই ম্যানের সাথে কথা বলছে সে।ওপাশ থেকে কিছু জানালে জারা বলে,”নেকলেস আমি যখন বলব ঠিক তখন নিয়ে আসবে।এর আগে তুমি আমার ননুবাড়িতে যাও।সোনালীর ঘরসহ বাকি ঘর সার্চ করবে।নাহলে আমাকে জানাবে।আমাকেই বীরের থেকে পালিয়ে ওখানে আসতে হবে তারপর….
কথাটুকু বলতেই পিছনে ঘুরে জারা থ।হাত থেমে ফোনটা নিচে পড়ে যায়।বীর একটা সাদা টাওয়াল কোমড়ে পেঁচিয়ে বাইরে এসেছে।বীরের চোখ লাল।রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।ছোট ছোট চুল থেকে টুপটুপ করে পানি ঝড়ছে।জারা ঘাবড়ে গেল।কাপা কাপা হাতে ফোনটা উঁচিয়ে দাঁড়ালো।মনে হয় বীর সব শুনতে পেয়েছে।বীর জারার দিকে এগিয়ে এলো।জারা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। ভয় করছে তার।না জানি রাতের দিতে না পারা শাস্তি এখন দেয় কি না।বীর জারার অতি নিকটে এসে জারার গলা চেপে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে বলে,”আমার থেকে পালাতে চাষ তাই না!একেবারে জানে মেরে দেই তোকে।তাহলে পালাতে হবেনা।সোজা কবর স্থানে চলে যাবি।”
জারা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।বীর ছাড়ালো না।জারার কষ্ট হচ্ছে প্রচণ্ড কিন্ত মাথা ঠিক নেই বীরের।জারা যে পালিয়ে যেতে চায় এটা শুনেই তার মগজে বাড়ি দিচ্ছে।জারার থেকে আবারও বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে পারবে না সে।বীর রক্তিম চাহনি দিয়ে বলে,”একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ।বীরের জীবনে জারার অস্তিত্ব না থাকলে এই ধরণী থেকে জারা নামক মেয়েটার বিলীন হয়ে যাবে।”
জারার গলা ছেড়ে রাগী দৃষ্টি দিলো বীর।জারা গলা ধরে কাশতে থাকে।কাশি থামিয়ে জারা বীরের হাত ধরে মুখটা নিজের দিকে ঘোরালো।বীর কিছু বুঝলো না।জারা আচমকা বীরকে অবাক করে দিয়ে বীরের ওষ্ঠ দখল করে নেয়।কিছুক্ষণ পর বীরকে ছেড়ে বলে,”আমি তোমার থেকে পালাবো না হ্যান্ডসাম।”
“তাহলে ফোনে যে বললি।”
“ওটা পার্মানেন্ট পালানো না ক্ষণিকের জন্য।”
জারার মাথার পিছনে হাত রেখে জারার মুখটা নিজের সামনে রেখে জারার কপালে কপাল ঠেকালো বীর।অতঃপর বলে,”তুমি যেখানেই যাও না কেন যাই করো না কেন মনে রাখবে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের সাথে আমাদের দেহের মিলন ঘটেছে।আমরা একে অপরের জানেমান।”
জারা মাথা উপর নিচ করে।বীর জারাকে ছেড়ে দিয়ে স্যুট বুট পরে নেয়।অতঃপর বাইরে এসে ব্রেকফাস্টের জন্য সবার সাথে এক টেবিলে বসে।রাজ প্লেটে খাবার নিতে নিতে বীর জারার দিকে তাকালো।বাকিরাও একবার করে তাকালো।কিছুক্ষণ পর রাজ মুখ খুললো,”তোর কোন দুঃখে মন্ত্রীর বাড়িতে গার্ড থাকতেও গার্ডের চৌদ্দ গুষ্টি বহণ করার প্রয়োজন বোধ হলো?”
বীর রাজের দিকে চোখ রেখে বলে,”কালনাগিন থেকে আমার বউকে রক্ষা করতে।”
“তোর বউকে বলিস আমার বউয়ের থেকে প্রশিক্ষণ নিতে।দেখবি তোর বউয়ের রক্ষা করতে লোক লাগবে না বরং অন্যদের তোর বউয়ের থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রয়োজন হবে।যেমনটা আমার বউকে দেখলে সবাই ভয়ে কেঁপে ওঠে।”
বীর মৃদু হেসে বলে,”সময় হলে বুঝবি আমার বউয়ের ক্ষমতা ঠিক কতদূর।”
রাজ নিজেও হাসলো।কারণ সেও জানে জারা আসলে কে?রুদ্র খাবার টেবিলে বসলেও এদিক ওদিক চোখ রাখছে।সিয়া বসতেই রুদ্র জিজ্ঞাসা করে,”হিয়াপাখি কোথায়?”
সিয়া হামি তুলে বলে,”রাতে তো মায়ের সাথে ঘুমাবে বলেছিলো।একবার দেখা দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দিলো না তো দেখা।”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকালো।মালিনী এসে চেয়ারে বসতেই সিয়াকে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিলো রুদ্র।সিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রুদ্র ইশারা করে মালিনীকে প্রশ্ন করার জন্য।সিয়া মালিনীর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করে,”তোমার মেয়ে কোথায়?”
মালিনী টেবিলে বসে সিয়ার দিকে বিরক্তির চাহনি দিয়ে বলে,”তুমি কে আমার?”
“তোমার আদরের মেয়ের কথা বলছি।”
“ও নানু বাসায় এখন।”
রাজ আর বীর দুজনেই একে অপরকে দেখলো।
“হিয়া নানু বাসায় তাও এত সকালে?”
মালিনী একটু ঘাবড়ে বলে,”রাতেই আবদার করেছিলো।আমি ভোর হবার আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি।”
বীর বলে ওঠে,”ওখানে তো কেউ নেই।”
“কিছু গার্ড আছে।হিয়ার হঠাৎ নানু বাসা দেখার ইচ্ছা হলো।আমিও বাধা দেইনি।কেন কি হয়েছে?”
“তাহলে আমরাও আজ দাদু বাসায় ঘুরতে যাই।এমনিতেও আমি আর ও ওখানেই শিফট করতে চাই।”
জারাকে ইঙ্গিত করে বলে বীর। জারা ইশারা করে মায়াকে।মায়া বলে ওঠে,”না ভাই তোমরা এখানে থাকবে।অন্তত একটা সপ্তাহ।”
“এটা তোর শশুর বাড়ি বোন।”
“বাট তোমারও তো ফুফুর বাড়ি।আর হিসাবের দিকে আমার শশুর কিপ্টা না যে তোমাকে এই বাড়িতে রাখতে পারবে না।তাই না বাবা?”
মাহমুদ সরদার একটু কেশে উঠলেন।তাকালেন রাজের দিকে।রাজ চোখ দিয়ে ইশারা করে রাজি হবার জন্য।তাই মাহমুদ সরদার বলেন,”তুমি যখন কিছু চাইছো আমি না করবো না।”
মালিনী সুযোগ বুঝে বলে,”তাহলে এখন তোকে আর ওই বাড়িতে যেতে হবেনা।”
“ওকে কিন্তু আমাকে বের হতে হবে।একটু কাজ আছে আমার।”
সবাই নাস্তা শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।যে যার কাজে যাচ্ছে।একেক করে বাড়ির পুরুষ মানুষ সবাই চলে গেলো।সেই সাথে রাজ।নিজস্ব কাজ আছে তাই।বাইরে এসে বীর ও আদ্র গাড়িতে উঠতেই রুদ্র বলে ওঠে,”আমি যদি না যাই প্রবলেম হবে?”
বীর বলে ওঠে,”আমার গার্ড আছে সো নো প্রবলেম।”
রুদ্র রিল্যাক্স হয়ে বাইকে উঠতে নিলে বীর বলে,”আমার মনে হয় হিয়া ওই বাড়িতে নেই।খান বাড়ির সকল ইনফরমেশন আমার কাছে আসে।বিশেষ করে লাস্ট দশ বছরের আপডেট রাখি।”
“তাও একবার ঘুরে আসি।”
কেউ আর বাধা দিলো না রুদ্রকে। বাইকে উঠে রুদ্র চলে যায় তার হিয়াপাখিকে খুঁজতে।বাকিরা চলে গেলো শাহানা পারভীনের কাছে।
মায়া মাত্র নিজের অফিস রুমে এসে বসলো।কিছু ফাইল দেখতেই মায়ার কাছে ফোন আসে।স্পাই ম্যান কল করেছে দেখে মায়া দ্রুত রিসিভ করে।ওপাশ থেকে স্পাই ম্যান জানায়,”রাজ স্যারকে হারাতে এবার তাজ সরদারকে টার্গেট করেছে মিস্টার আরশাদ।ভাগ্য ভালো আমি ইতিমধ্যেই পৌঁছে দেখতে পাই।আমি ওনাদের পিছু নিয়েছি।আপনি আপনার লোকেদের পাঠান দ্রুত।”
“লোকেশন অন করে রাখো।আমি আসছি।”
মায়া দ্রুত বের হতে হতে জারাকে কল করে বলে,”তোমার গ্যাংয়ের সবাইকে পাঠাও আমার দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী।”
“কি হয়েছে?”
“তাজকে কিডন্যাপ করেছে মিস্টার আরশাদ।মন্ত্রী মশাইকে হারাতে ব্যাস্ত সে।খুব ভালো করেই জানে তাজ মন্ত্রী মশাইয়ের দুর্বলতা।তাই এতকিছু করা।”
বলেই দৌড়ে গাড়িতে উঠলো।মায়ার দৌড়ের সাথে তারেক দ্রুত গতিতে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে।মায়া ওর ফোন সামনে রেখে তারেককে বলে,”এটাতে যে লোকেশন দেওয়া আছে ওইদিকেই যাবে।”
জারা ওর গ্যাংকে ম্যাসেজ দিলো।এদিকে জারাও ওর গাউনের নিচে রিভলবার সেট করে বাইরে বের হয়।জারা বের হতে নিলে সোনালী সামনে এসে বলে,”তোমার সাথে কথা আছে আমার।”
জারা হালকা হেসে সিসি ক্যামেরা দেখিয়ে বলে,”হ্যান্ডসাম কিন্তু বাড়িতে এসে ওটা চেক করবে।তাই কেয়ারফুল খালামণি।”
“খুব উড়তে শিখেছো তাই না!”
“উড়তে আর পারলাম কই!সেই তো তোমার থেকে ছাড়া পেয়ে আরেকজনের খাঁচায় বন্দী হলাম।”
“বেশি ড্রামা করবে না আমার সাথে।আমার নেকলেস কোথায়?”
“হারিয়ে ফেলেছি আমি।”
“রিয়েলী!ওটা হারানোর মত ছিলো?ওটার দাম জানো তো?তোমাকে বিক্রি করলেও এত টাকা আসবে না।”
“তোমাকে বিক্রি করলে আসবে কি?”
“জারা!”
সোনালীর চিৎকারে জারা কানে হাত দিয়ে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলে,”আস্তে খালামণি আস্তে।আমার হ্যান্ডসাম সাথে থাকলে তো এভাবে চিৎকার করতে পারো না।এখন কেন চিৎকার করছো?কাছে নেই বলে।ভুলে যেও না আমার হ্যান্ডসাম যেদিকেই যাক না কেন আমার সুরক্ষার ব্যাবস্থা করেই যায়।”
“তুমি যে তোমার বাবার ক্ষমতা পেয়েছো এটাও কিন্তু আমার অজানা নেই।”
জারা অবাক হলো।যার জন্য যে ন্যাকা সাদাসিধা সাজে সে জেনেও গেলো।জারা একটু অবাক হলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে বলে,”জেনেই যখন গেলে তাহলে আর কি?টক্কর দিতে এসোনা আমার সাথে।কারণ এবার আমার বাবার পাওয়ারের সাথে আমার স্বামীর পাওয়ার আছে।দুজনের পাওয়ারে তুমি আর তোমার গ্যাং বরবাদ হয়ে যাবে।”
“এতটাও কনফিডেন্ট রেখোনা।এই আমি আর আমার গ্যাং পুরো সরদার মহলের লোকেদের নাকে মুখে চুবানি দিয়েছি।”
“চি চি চি!জেনারেশন আপডেট হয়েছে খালামণি।এখন আর কেউ সেই সতী সাবিত্রী নাদান টাইপের নেই।মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা তোমার স্বামীর মত কোনো হাবলা পুরুষ এই জেনারেশনে পাবে না,যে নারীদের একটু উষ্ণতা পেলে গলে যাবে।এবারের গুলো ঝলসে দিবে।তাই বি কেয়ারফুল।”
“তোমার সাথে আমাদের শত্রুতা নেই জারা।”
মিহিরের কথা শুনে জারা পিছনে ঘুরে বলে,”আমার বাবা মায়ের সাথেও ছিলো না।বাবা তো দেশের ভালো চেয়েছিলো।তোমার পরিবার হতে দিলো না।”
“তাকে সাবধান করা হয়েছিল।”
“তোমরাও তাই আমার শৈশব কেড়ে নিলে।এখন তোমাদের থেকে সবকিছু কেড়ে নিবো।”
“পারবে না তুমি।তার আগেই আমরা….
জারা হাত উঁচিয়ে বলে,”জাস্ট একটা চিৎকার।একটা চিৎকার দিবো সমস্ত গার্ড হাজির হবে।ডেমো দেখাবো নাকি?”
মিহির সরে গেলো।জারা হাতঘড়ি দেখে বলে,”ইউজলেস ব্যক্তিদের সাথে আমার হ্যান্ডসাম হাসবেন্ড কথা বলা পছন্দ করেনা।তাই আমার আশেপাশে আসার চেষ্টা করবে না।বলা যায়না আমার হ্যান্ডসাম হাসবেন্ডের রিভলবার তোমাদের জন্য ব্যয় হতে পারে।”
বলেই জারা চুলগুলো সামনে থেকে হাত দিয়ে সরিয়ে পিছনে রাখলো।দুজনের দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো বাইরে।মায়াকে হেল্প করতে হবে।বীর ইম্পর্ট্যান্ট কাজে এটা জারা বুঝেছে।অতিরিক্ত ইম্পর্ট্যান্ট কাজ না থাকলে জারাকে একা রেখে যেতো না বীর।ওদিকে হিয়ার কিছু একটা হয়েছে এই বিষয়ে মায়ার সাথে তারও সন্দেহ হয়।রুদ্রের ভরসায় মায়া এই বিষয়টা পাত্তা দিলো না।কিন্তু তাজের ব্যাপারটা ছেড়ে দিবার না।জারা বাইরে এসে কল করে পিয়াশকে।পিয়াশ একবার রাজের দিকে তাকালো।রাজের চোখ রক্তিম।সামনে বসে আছে একজন ভুঁড়ি মোটা সাথে বিশ্রী হাসি দেওয়া একজন লোক।লোকটির উদ্দেশ্য ভালো না।সে রাজকে অফার করছে,”আপনার কাজ জনগণের সেবা করা। আর কত সেবা করবেন মন্ত্রী মশাই।এবার একটু সেবা নিন।আপনি ওই জমির অংশ আমাদের করতে সহায়তা করুন আমরা আপনাকে সেবায় ভরিয়ে দিবো।”
মোটা অংকের টাকার অফার দিলো রাজকে।এজন্য রাজ ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।লোকটা আরও বলে,”কৃষিতে আর কতই বা উন্নতি হচ্ছে দেশের?এক একর জমিতে যদি মজ মস্তির জন্য ব্যাবস্থা করা হয় খারাপ তো কিছুনা।আজকালকার যুবকরা পার্টি করবে।এছাড়া আপনারা মন্ত্রীরাও তো একটু শান্তির জন্য সেখানে যেতে পারবেন।রাতের বেলা বউ রেখে অনেক সময় তো ওদিকে যেতে ইচ্ছে করে তাই না?”
লোকটির দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে আছে রাজ। পিয়াশ এটা দেখে বুঝতে পারছে লোকটার কপালে কি আছে এখন।এদিকে পিয়াশের ফোন বাজার কারণে পিয়াশ ভয় পাচ্ছে।মাথা গরম রাজের সামনে ফোন ধরলে রাজ আস্ত রাখবে না পিয়াশকে।ফোনটা না দেখেই পকেটে হাত রেখে পাশের থেকে টাচ করে কল কেটে দেয়।লোকটা আবারও বলে,”যদিও আপনার বউ সুন্দর।কিন্তু ঘরের বিরিয়ানি আর কতই খাওয়া যায়।একটু বাইরের বিরিয়ানি খাওয়ার সুযোগ পেতেও মন চায়।আমি মনে করেন ওই সুযোগটাই দিলাম আপনাকে।”
এবার আর রাজের মাথা ঠিক থাকলো না।শেষমেষ তার বউকে নিয়ে কথা উঠছে।নষ্টামির একটা সীমা থাকে।এরা এই সীমা লঙ্ঘন করেছে।টেবিলের নিচে থাকা ড্রয়ার খুলে রিভলবার বের করে দ্রুত শুট করে দেয় লোকটার বুক বরাবর। পিয়াশ শুকনো ঢোক গিলছে।বাইরের কয়েকজন ব্যাক্তি আচমকা বন্দুকের শব্দ পেয়ে কেঁপে ওঠে।এমন হঠাৎ কর হবে বুঝতেই পারেনি।লোকটা নিজেও আতকে ওঠে।বুকে হাত রেখে রাজের দিকে তাকালো।রাজ ক্ষিপ্ত হয়ে লোকটার কাছে এসে লোকটিকে মেঝেতে ফেলে আর গলায় পা দিয়ে পিষে বলে,”শুয়োরের বাচ্চা তুই নিজের মত আমাকেও কাপুরুষ ভেবে ভুল করেছিস।আমি এক নারীতেই আসক্ত আর সেই নারী আমার বউ আমার মায়াবতী।বাজে অফার দেওয়ার আগে তোর উচিত ছিল আমার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা।নাহলে এই সাত সকালে আমার হাতে তোর জান যেতো না।”
বলেই রাজ আরো কয়েকবার শুট করে দিলো।গলা উঁচিয়ে ডাক দিলো,”শান্ত।”
শান্ত রাজের দলেরই এক ছেলে।দৌড়ে আসে রাজের কাছে।রাজ লোকটির লাশ দেখিয়ে বলে,”এতদিন যতগুলো মেয়েদের জীবন নষ্ট করেছে এছাড়া জমি দখল নিতে চেয়েছিল সেই সকল বিষয়ের কাগজপত্র প্রমাণস্বরূপ হাজির করে এর দলের বিরুদ্ধে একটা এপ্লিকেশন করবে।এর লাশটা এমন জায়গায় নিয়ে যাও যেখান থেকে একে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।”
শান্ত রাজি হলো।নিয়ে গেলো লোকটার লাশ।শান্ত কিছু লোক আনলো যারা মেঝেতে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছে।
এদিকে মায়া চিন্তিত হয়ে গাড়ির বাইরের দিকে চোখ রাখছে।তারেক প্রশ্ন করে,”কি হয়েছে ম্যাম?”
“তাজকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।”
“হোয়াট!”
“প্লীজ দ্রুত গাড়ি চালাও তারেক।তাজকে খুঁজে বের করা জরুরী।”
“স্যারকে জানিয়েছেন?”
“জারা জানাবে পিয়াশকে।আমি জানিয়েছি জারাকে।এছাড়া মন্ত্রী মশাইকে দুবার কল করেছি ফোন বন্ধ।পিয়াশ রিসিভ করেনি।”
তারেক লোকেশন দেখছে।শুনশান এলাকায় যাচ্ছে তারা।এই জায়গাটা বিপদজনক।ভাঙাচোরা রাস্তা।উচু জায়গার নিচ দিয়ে বড় গর্ত।যেখান থেকে কেউ পড়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।তারেক নিজেও ভয় পেলো এবার।মায়াকে স্পাই ম্যান কল করতেই তারেক রিসিভ করে লাউডে দেয়।ওপাশ থেকে জানায়,”তাজ সরদারকে বেঁধে রাখা হয়েছে ম্যাম।শাহমীর রাজ না আসা অব্দি ওনাকে চাবুকের আঘাত করা হবে জানান দিলো ওদের লিডার।দ্রুত কিছু করুন।এখানে প্রত্যেকের হাতে ক্রস ফায়ার।”
তারেক পিছনে তাকালো।কিছু গ্যাং আসছে।তারেক জানালো,”আমরাও ব্যাবস্থা নিয়ে আসছি।”
মায়া তারেককে বলে,”তোমার ফোন দেও।”
তারেক দিলো।মায়া রাজকে কল করে যাচ্ছে।বন্ধ জানাচ্ছে বারবার।পিয়াশকে কল দিলেও পিয়াশ ধরলো না।মায়ার ফোনে জারা ম্যাসেজ দেয়,”আমি পিয়াশকে কল দিচ্ছি ও রিসিভ করছে না।ম্যাসেজ দিয়ে রেখেছি। আশা করি দেখবে।”
স্পাইম্যানের লোকেশন অনুযায়ী কাঙ্খিত স্থানে নামলো মায়া।এতক্ষণ ধরে ঢাকার লোকেশন অনুযায়ী চললেও পরে ওরা চলে যায় বান্দরবান।চলতি পথে অনেকবার কল করেছে রাজকে।পেলো না একবারও।অবশেষে জানানো হলো মাহমুদ সরদারকে।গাড়ি থেকে নেমেই মায়ার নজরে আসে দূরে একটি বটগাছে বেঁধে রাখা হয়েছে তাজকে।যাকে দেখতে হুবহু রাজের মত কিন্তু মুখটা ভিত।রাজ দেখতে সাহসী তাজ তার উল্টো।বাচ্চাদের মত মুখভঙ্গি কান্নায় চোখমুখ লাল আর চুলগুলো বাচ্চা ছেলেদের মত করে আঁচড়ানো।তাজকে চাবুকের আঘাত করা হচ্ছে।কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে তাজের।মুখটা বাচ্চা বাচ্চা করে কান্না করে যাচ্ছে আর সেই সাথে করছে আকুতি মিনতী।কেউ শুনছে না তাজের অনুরোধ।সবার মুখে শুধু পৈচাশিক আনন্দ।পুরো পঞ্চাশ ষাট জন আছে সেখানে।তারও বেশি হবে হয়তো।মায়া গাড়ি থেকে রিভলবার নিয়ে আরশাদের লোকেদের শুট করতে থাকে।কয়েকজন আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।মায়া নিশানা করে তাজকে যে আঘাত করে তার হাতে শুট করে।লোকটা বাহু চেপে মায়ার দিকে তাকালো।চিল্লিয়ে বাকিদের বলে,”ওরে ধর তোরা।”
বেশ কয়েকজন দৌড়ে আসে মায়ার কাছে।বাকি কয়েকজন গুলি ছুড়তে থাকে।তারেক ও গার্ড মিলে তাদেরকে পাল্টা আঘাত করতে থাকে।এদিকে তাজের কাছে অনেক গার্ড।যেগুলো তাজকে ক্ষতি করে দিবে।মায়া যতজনকে পারছে শুট করেই যাচ্ছে।কয়েকজনকে আঘাত করে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মাঝপথে হাজির হয় আরও গার্ড।তারা মায়াকে ঘিরে রেখেছে।মায়া অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে বলে,”রাস্তা ছাড়।”
গর্ডগুলো শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”ছাড়বো না রাস্তা।কি করবি বল?”
মাটিতে লুটিয়ে পড়া ব্যক্তিদের ইঙ্গিত করে মায়া বলে,”ওদের দেখেও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে তোদের?”
লোকগুলো হেঁসে দেয় উচ্চস্বরে।
“তোর ক্ষমতা এই রিভলবার।যেটা এখনই শেষ হয়ে যাবে।এতগুলো মানুষকে কি একটা রিভলবার কুপোকাত করে দিতে পারে?”
“আমার আরো ক্ষমতা আছে যেটা তোরা জানিস না।এই মায়া রিভলবার ব্যবহারের সাথে আরো অনেক টেকনিক জানে তোদের শেষ করে দিতে।নাম মায়া হতে পারে কিন্তু কাজে কোনো মায়া ভাব পাবি না।রাস্তা ছাড় নাহলে তোদের অবস্থা খুব খারাপ হবে।”
ছাড়ল না রাস্তা।উল্টো মায়ার দিকে এগিয়ে আসছে মুখে বিশ্রী হাঁসির সাথে।মায়া আর সুযোগ দিলো না।হাতে থাকা রিভলবার আবারও তাগ করে।পরপর শুট করতে থাকে।কয়েকজন লুটিয়ে পড়লেও বাকিরা সুরক্ষিত।মায়ার রিভলবার শেষ।অন্যদিকে মায়ার গার্ডগুলো আরশাদের লোকেদের সাথে লড়াই করছে।ফলস্বরূপ মায়া একা হয়ে গেলো।বিপক্ষের গার্ডদের মুখে বিদ্রুপের হাঁসি।ওরা এগিয়ে আসতেই মায়া আগে যাকে পেলো তার হাত ধরে মচকে দিলো।নীল শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে নিলো কোনো রকমে।পা উঁচিয়ে হিলসহ পা রাখলো গার্ডের হাঁটু বরাবর।হিলের দ্বারা পিষে আঘাত করছে একজনকে।গার্ড চিৎকার করে ওঠে।ওপর গার্ড বলে ওঠে,”এই মেয়েকে ফেলনা ভাবলে চলবে না।এই চল সবাই একসাথে ওকে অ্যাটাক করি।”
সবাই মিলে মায়াকে অ্যাটাক করতে নিলে তারেক দৌড়ে আসতে নেয়।মায়া হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয় তারেককে।তারেক তাজের দিকে তাকায়।মায়ার ইশারা পেয়েই।তাজকে গাড়িতে ওঠানো হচ্ছে।মায়া গলা উঁচিয়ে বলে,”তুমি ওদেরকে ধরো।”
তারেক দোটানায় পড়লো।কাকে রেখে কাকে বাঁচাবে!মায়াও তো বিপদে।মায়া সাধ্যমত চেষ্টা করেই যাচ্ছে ফাইট করার।বেশিদূর পারবে বলে মনে হয়না।তাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মায়া।তারেক বেশি না ভেবে তাজের পিছনে ছুটছে।পারল না বেশিদূর। তারেককেও ঘিরে ধরেছে অনেকে।এদিকে মায়া ফাইট করছে।মায়াকে পিছন থেকে মাথায় একজন গার্ড আঘাত করে।মায়া একটু সরে যায়।বাকি গার্ড যেই হামলা করতে নিবে ওমনি তাদের গায়ে বন্দুকের গুলি লাগলো।মায়া মাথায় হাত দিয়ে পিছন ফিরে দেখে জারা শুট করে দৌড়ে আসছে।পিছনে আছে জারার গার্ড।মায়া মৃদু হাসে।জারা কাছে এসে বলে,”তুমি তাজের কাছে যাও আমি এই হারামজাদাগুলোর অবস্থা খারাপ করে আসছি।”
মায়া মৃদু হেঁসে বলে,”ওকে ভাবী।”
মায়া গাড়িতে উঠে চলে যায় তাজের পিছে। তাজ যে গাড়িতে আছে ওই গাড়ির সামনে দ্রুত এসে ব্রেক করলো।তাজকে কিডন্যাপ করা ব্যক্তিরা ভয়তে জমে গেলো।মায়া এবার আরেকটা রিভলবার নিয়ে গাড়ির চাকাগুলোতে গুলি ছুড়লো।যেনো গাড়ি চালাতে না পারে আর।অবশেষে রিভলবার ফাঁকা হলে গাড়ি থেকে নামে মায়া।তাজকে নিয়েও সবাই নামলো।পাশে থেকে তাজকে নিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার অবস্থা নেই।মায়ার দিকে দুজন দৌড়ে গেলে মায়া ওদের সাথে ফাইট করে।অন্যদিকে জারা ও তার গার্ড মিলে ফাইট করছে।মায়ার দিকে চোখ যেতেই জারা নিশানা স্থির রেখে মায়াকে আক্রমণ করা ব্যক্তিদের শুট করে দেয়।বাকিরা বুঝতে পারে এখানে বড়সড় ঘটনা না ঘটলে এরা থামবে না।তাই প্ল্যান মোতাবেক জারা ও তারেকের দিকে আরো গার্ড পাঠিয়ে দিলো ব্লুটুথ দিয়ে কথা বলে।তাজকে ছুঁড়ে মারল নিচের দিকে।এই উচ্চতা থেকে নিচে কেউ পড়ে গেলে তাকে কেউ খুঁজে পাবে না।মায়া হতভম্ব হয়ে গেলো সেই সাথে তাজকে বাঁচানোর জন্য সেও লাফ দিলো।অনেক কষ্টে তাজের হাতটা ধরে রাখে মায়া। তাজ নিজেকে দেখে ভয় পায়।এত উচু স্থানে তাকে শুধু একটা হাত আশ্রয় দিয়েছে।মাথা উঁচিয়ে হাতের ব্যক্তিকে দেখে নিলো তাজ।নাহ্ চেনে না তাকে।করুণ কণ্ঠে বলে,”তুমি কে?”
মায়া ভাবছে তার অতীত।এই ছেলেটাই তার পেটে লাথি মেরে বাড়ি ছাড়া করেছিল।আজ তাকেই বাঁচাবে মায়া।মায়া তো এমন না।তাকে যে আঘাত করে সেও তাকে পাল্টা আঘাত করে।তাজের বেলায় পারছে না।বিবেকে বাধে মায়ার।তাজের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে পাল্টা আঘাত করা যায়না।বরং তার উপর দয়া দেখানো যায়।আর চার পাঁচটা মানুষের মত তো তাজ চলেনা।কতই না কষ্ট তার এই বদ্ধ দেয়ালের মাঝে।সেখান থেকে কুচক্রীদের বুদ্ধি পেলে তো এমন করবেই।মাহমুদ সরদারের আরেক কলিজার টুকরো।মানসিক অবস্থা যেমনই হোক এই সন্তানের বাবা হন তিনি।রাজের ভাই হয়।তার ক্ষতি মায়া করতে পারছে না।দুইহাত এগিয়ে তাজকে ধরলো মায়া।কষ্ট হলেও বলে,”আমি তোমার ভাইয়ের বউ মায়া।তোমার ভাইয়ের মায়াবতী।”
“ও ওই মন্ত্রী ভাই যার চেহারা আমার সাথে মেলে?”
মায়া মাথা দোলালো।কষ্ট হচ্ছে খুব।সূর্যের তাপে চোখ মেলে রাখাও দুষ্কর।তাজ ভিত চাহনি দিয়ে বলে,”আমাকে বাঁচাও মায়াবতী।আমার ভয় করছে খুব।মন্ত্রী ভাই আমাকে সবসময় বাঁচায়।আমি বিপদে পড়লেই বাঁচায় আমাকে।”
মায়া অনেক কষ্টে হাত ধরে আছে।সূর্যের তাপ আজকে মায়াকে লড়াই করতে আপত্তি জানাচ্ছে।রোদের তেজ মায়ার কপালজুড়ে।মায়া ঘেমে গেলেও ছাড়ছে না তাজকে।
মাহমুদ সরদার দৌড়ে আসলেন রাজের কাছে।রাজ যেই তাকালো মাহমুদ সরদারের মুখের দিকে আতকে ওঠে সেই সাথে।রাজ প্রশ্ন করার আগেই মাহমুদ সরদার বলেন,”তাজকে কিডন্যাপ করেছে আরশাদের লোক।সেই সাথে মায়া আর জারা রিস্কে আছে।”
রাজ বসা থেকে উঠে দাড়ালো।এমনিতেও ক্ষিপ্ত ছিলো রাজ তারউপর নিজের ভাই ও বউয়ের অবস্থা শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। পিয়াশ ফোন বের করে দেখে মায়া ও জারার একাধিক কল।ম্যাসেজ এসেছে সেই সাথে। পিয়াশ দৌড়ে গেলো গাড়ির কাছে।সেই সাথে রাজ ওর রিভলবার নিয়ে দ্রুত কদম ফেলতে থাকে।রাজের চোখেমুখে হিংস্রতা।তার মায়াবতী ও কলিজার টুকরো ভাই বিপদে।গাড়িতে উঠতেই পিয়াশ ড্রাইভ করছে।রাজ বাইরের দিকে চোখ রেখে মাহমুদ সরদারকে আশ্বস্ত করে বলে,”চিন্তা করবে না বাবা তোমার রক্তের গায়ে আঘাত আসতে দিবো না।ওকে যেমন সুরক্ষিত রেখেছি ঠিক তেমনই রাখবো।কেউ পারবে না আমার ভাইয়ের ক্ষতি করতে।যদি করে তো শুয়োরের বাচ্চাদের আমি পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিবো।”
মাহমুদ সরদার রাজের বাহু ধরলেন।হাত কাপছে তার।প্রতিবন্ধী হলেও ছেলে তো তার।বাবা হয়ে ছেলের ক্ষতি মানতে নারাজ সে।রাজের চোখ লাল।একহাত দিয়ে মাহমুদ সরদারের হাত ধরে শান্তনা দিলো কিন্ত্ত মনে মনে নিজেই ভয় পাচ্ছে।এর মাঝেই মাহমুদ সরদারের ফোন বেজে উঠলো। পকেট থেকে ফোন বের করে হাতে নিতেই আরশাদের নাম্বার ভেসে উঠলো।রাজ সেদিকেই চেয়ে আছে।চোয়াল শক্ত করে বাবার হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরতেই শুনতে পায় ওপাশ থেকে বিশ্রী হাঁসির সাথে বলা,”কি ব্যাপার মাহমুদ সরদার কেমন লাগছে এক ছেলেকে উপরে উঠাতে গিয়ে আরেক ছেলেকে হারাতে?অবশ্য ছেলের সাথে বউমাকেও হারাতে চলেছিস।ভালয় ভালয় তোর ছেলেকে পদত্যাগ করতে বল।ও পদত্যাগ করলেই আমি আবারও জনগণের নয়নের মণি হয়ে উঠবো।আমার স্বার্থ সিদ্ধি হলে তোর ছেলেরা সুখে থাকবে।শুনলাম তোর সুস্থ ছেলে নাকি বউ পাগল।একটা ছেলে তো পুরোপুরি পাগল আরেকটা সুস্থ হয়েও যদি বউ পাগল হয় তাহলে তোর জীবনটা তো পাগল মানুষ করতে করতেই শেষ হয়ে যাবে।”
ওপাশ থেকে ওপেন থ্রেট আসলো।রাজ কঠিন কণ্ঠে বলে,”আমার ভাই আর মায়াবতীর গায়ে একটা দাগ লাগলে আমি তোর কলিজা টেনে নিবো বলে দিলাম।”
“ওহ!তুই আছিস কলে।আরে মন্ত্রী তোর পাগল ভাই নাহয় কোনো কাজের না ওপারে গেলেও কষ্ট পাবি না কিন্তু বউয়ের কিছু হলে বেঁচে থাকতে পারবি তো?আমি তো জেনে গেছি তোর দুর্বলতা।তোর জীবনের বড় দুইটি দুর্বলতা আমার জানা।শত্রু হয়ে এগুলোই তো কাজে লাগাবো।তানাহলে কেমন শত্রু আমি তোর?”
“শত্রু শত্রু খেলা আমি এখনও খেলিনি তোর সাথে।তবে আজ যখন আমার দুর্বলতা হিসেবে আমার বউকে হাতিয়ার করতে চাচ্ছিস তাহলে আমিও বা কেন থেমে থাকি।আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি,আমার বউয়ের গায়ে একটা আচরের চিহ্ন দেখি আমি তোকে পুরো কবরস্থানের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিবো।”
আরশাদ হাসলো।বিশ্রী হাসি দিলো,”ওসব কথা নাটক সিনেমায় অনেক বলেছে নায়কেরা।তুইও নায়ক সাজতে বলতেই পারিস।কাজের কাজ কিচ্ছু করতে পারবি না।কারণ এবার আমি তোকে হারানোর জন্য একেবারে মোক্ষম খেলাটাই খেলেছি।”
“খুব ভুল করেছিস।পস্তাবি তুই বলে দিলাম।চিৎকার করে পা ধরে হাহাকার করলেও উপায় পাবি না এই শাহমীর রাজের কাছে।এই শাহমীর রাজ ঠিক ততক্ষণ শান্ত থাকে যতক্ষণ যুদ্ধ তার সাথে চলতে থাকে,কিন্তু যুদ্ধে পরিবারকে টেনে আনলে শাহমীর রাজ চুপ থাকবে না।”
“চল দেখি তুই আমার কোন বাল ছিঁড়তে পারিস!”
খট করে কল কাটলো আরশাদ।রাজের হুমকিতে সেও রেগে গেছে।ওদিকে কল করে জানালো,”ওই মায়াকেও মেরে খাদে ফেলে দে।নিচে থাকা জলহস্তিগুলো ওর দেহ আস্ত রাখবে না।”
“ওকে বস।”
আরশাদ এবার দাঁত কটমট করে হেসে দেয়।গভীর খাদের নিচে ঘন জঙ্গল।যেখানে জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে আছে কুমির।এই খাদ থেকে পড়লে কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব না।কল কেটে এসব ভেবে হাসতে হাসতে বলে,”তুই এবার পুরোপুরি পাগল হবিরে শাহমীর!”
কাঙ্খিত স্থানে এসে রাজের গাড়ি থামলো।সবার আগে মাহমুদ সরদার কাপতে কাপতে বের হলেন তারপর রাজ ওপর পাশ থেকে দৌড়ে আসে।দুজনে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় জারা ফাইট করছে।কিন্তু জারার বামহাত থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে।জারার বামহাতে গুলি লেগেছে।তবুও মেয়েটা কষ্ট করেও লড়াই করছে।তারেকের অবস্থা করুণ।ওকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে লাথি মারা হচ্ছে।আরশাদ পরে আরো গ্যাং পাঠিয়েছিল।তারাই এখন নিস্তেজ করে দিলো মায়া ও জারার গ্যাংকে।রাজ সবার দিকে তাকিয়ে পিয়াশের উদ্দেশ্যে বলে,”বীরকে কল করো।পুরো গ্যাং হাজির করো।ওই আরশাদকে তুলে ফ্যাক্টরীর সিক্রেট রুমে নিয়ে যাবে।”
পিয়াশ ফোন বের করে কল করে বীরকে।জানালো আরো গ্যাং লাগবে।
এদিকে রাজ ও মাহমুদ সরদারের চোখ এদিক ওদিক আওড়াচ্ছে।মায়া ও তাজ কোথায়?এদিক ওদিক তাকিয়েও কাউকে পেলো না।চোখ কান খোলা রেখে সবার আড়ালে লুকিয়ে দুইদিকে চলে গেলো রাজ ও মাহমুদ সরদার।কিছুদূর যেতেই রাজের কানে চিৎকার ভেসে আসে।তার ভাইয়ের চিৎকার। তাজ চিৎকার করে বলছে,”ও আমার মন্ত্রী ভাইয়ের মায়াবতী।ওকে মারতে হয়না।ওকে মেরো না।ব্যাথা পাবে খুব।আমাকেও ছেড়ে দেও।বাঁচাও আমাকে তোমরা।আমার ভয় করছে খুব।”
আরো আরো কথা বলছে তাজ।সবকিছু এক নাগারে বলেই যাচ্ছে।তাজের চিৎকারের সাথে মায়ার আর্তনাদ ভেসে আসলো।রাজ শব্দের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী এগোলো।কিছুদূর এগুতেই দেখতে পায় খাদে ঠেলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে তাজকে।তাজকে ধরে আছে মায়া।মায়ার হাত দুটি তাজকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা।হাঁপিয়ে উঠেছে মায়া।রাজ দৌড়ে আসতে নেয় ওদের দিকে ওমনি আরশাদের লোক মায়ার হাতের উপর পা দিয়ে মচকে দিলো।লোকটার মুখে হাঁসি।মায়া ঠোঁট কামড়ে ব্যাথা সহ্য করে নিলো।অনেক কষ্টে একটা হাত ছাড়িয়ে কোমরের রিকের সেফটিপিন খুলে নিলো।পরপর দুটো নিশ্বাস নিয়ে লোকটার পায়ের চামড়ার ভেতর দিয়ে জোরে ফুটিয়ে দিলো টান।এমন জোরে টান দিলো যাতে করে এই চিকন সেফটিপিন দিয়ে লোকটার পায়ে জখম হয়।ব্যথায় দূরে সরে যায়। হলোও তাই।লোকটা ব্যথায় সরে গেলো।রাজ দৌড়ে আসতে নিলে ওর সামনেও নয়জন এসে হামলা করে।গায়ের শক্তি দিয়ে রাজ দুজনকে ছড়ানোর চেষ্টা করছে।এদিকে আরেকটা লোক এসে মায়ার পিঠে ছুরি চালালো।মায়ার হাত ঢিলা হতে থাকে।তাজ পড়ে যেতে নেয়।মায়া চিৎকার করে ওঠে।রাজ সেদিকে করুণ দৃষ্টিতে দেখছে। তাজ মিনতি করে বলছে,”মন্ত্রী ভাই রাগ করবে।ওর মায়াবতীর গায়ে হাত তোলা নিষেধ।তুমি এমন করো না।তোমাদের মেরে ফেলবে মন্ত্রী ভাই।আমাকে ফেলে দিও না।”
রাজ অনেক কষ্টে পা দিয়ে একজনকে লাথি মারে কিন্তু হাত দুটো দুজন ধরে রাখার কারণে ছাড়াতে পারল না নিজেকে।মায়ার পিঠে আবারো ছুরি চালানো হয়।রাজ চোখ বন্ধ করে নেয়।এই দৃশ্য সে বেঁচে থাকতে দেখতে পারবে না।এত নাম এত সম্মান ও ক্ষমতা থাকতে তার বউ অসহায়ের মত মার খাচ্ছে।এটাই কি তার দেখার ছিলো?কেই বা ভাবে ভাগ্য কিভাবে আমাদের বদলে দেয়!ক্ষমতা,টাকা থাকলেই তো আর জীবন হাসিখুশি হয়না।যার যত ক্ষমতা তার তত শত্রু।মায়ারাজের জীবনটাও ঠিক তাই। এদের ক্ষমতার কারণেই এদের পিছনে শত্রু লেগেই থাকে।
মায়া আর পারছে না।ওর হাতের উপর এবার ছুরি চালানো হলো।মাথায় জোরে আঘাত করতে থাকে লোকগুলো।তাজ বুঝতে পারছে মায়ার হাত ঢিলা হয়ে আসছে।মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে বলে,”না না না ছেড়ে দিও না আমার হাত।আমি ছোটবেলায় তোমাকে ইচ্ছা করে মারিনি।আমাকে মারতে বলেছিলো।তোমাকে না মারলে আমাকে চাবুকের আঘাত করতো।তাই মেরেছিলাম।মন্ত্রী ভাই সাজতে বলতো আমাকে তাই মেরেছিলাম।আমি জানি তুমি রেগে আছো ঐদিনের জন্য।মন্ত্রী ভাই আমাকে বলেছে তুমি আমাদের ঘৃণা করো।কিন্তু আমাদের মেরো না।”
তাজ মাঝের ঘটনা জানলেও বর্তমান ঘটনা জানেনা।বেশিরভাগ সময় ভুলে গেলেও যখন মায়ার ছোটবেলার ছবি দেখানো হয় তখন একটু একটু ঝাপসা মনে করতে পারে।কিন্তু মায়ার নাম মনে নেই।ও জানে এটা তার মন্ত্রী ভাইয়ের মায়াবতী।মায়াবতী যে এখন বউ হয়েছে এটাও তাজের অজানা।বর্তমানে মায়ার মনে রাজ বা তাজের জন্য অভিযোগ নেই এটাও তাজের অজানা।এদিকে মায়া কোনমতে বলে,”আমি তোমার উপর রেগে নেই।আমি তোমাকে বাঁচাতে এসেছি।তুমি ভয় পেও না…
বলতে না বলতেই আবারও মায়ার মাথায় মোটা বাশ দিয়ে আঘাত দেয়।মায়া চিৎকার করে ছেড়ে দিলো তাজের হাত।মায়ার মাথা কাজ করা বন্ধ করেছে। রোদের তাপ ও শরীরের জখম নিয়ে পুরোই দিশেহারা।কি হলো মাথায় খেলছে না।হাত ফসকে একজন বেরিয়ে গেলো এটা মায়ার মস্তিষ্কে কাজ করা বন্ধ করেছে।তাজ চিৎকার করে নিচে পড়ে যেতে নিলেই মায়া হাত বাড়িয়ে তাজকে আবারও ধরতে নিচের দিকে ঝুঁকতে নেয়।কাজ হয়না এতে।উল্টো তাজের গলার লকেট মায়ার বৃদ্ধাঙ্গুলে লেগে ছিঁড়ে যায়। লকেটটা মায়ার আঙুলে বেঁধে থাকে।তাজকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।হারিয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই।খাদে পড়ে গেলো নিমিষেই।মায়া চিৎকার করে ওঠে।রাজ এর মাঝে শক্তি প্রয়োগ করে কয়েকজনকে সরিয়ে রিভলবার বের করে শুট করে যাকে সামনে পায় তাকে।দৌড়ে আসতে নেয় আবারও মায়ার মাথায় আঘাত করতে দেখে থমকে যায়।
কিন্তু এবার হাতের রিভলবার থমকে থাকেনি।শুট করে দিলো লোকটার মগজ বরাবর।মায়া অজ্ঞান হয়ে আছে। পিঠ ও হাত এমনকি মাথা দিয়েও দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।মেয়েটা জানতেও পারল না আজ তার মা দেশে এসেছে।তার মাকে হারানোর যে কষ্ট সেই কষ্ট আজ তার মন্ত্রী মশাই অবসান ঘটাতে চলেছিল।শাহানা পারভীন এখন কথা বলতে পারেন।তিনি বর্তমানে প্যারালাইজড।রাজ ও বীর দেশে আসার পর দুজনে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সরদার বাড়িতে আসতে নিলে রাস্তায় এক্সিডেন্ট হতে দেখে।
গাড়ি থেকে নেমেই শাহানা পারভীনকে দেখে রাজ এগিয়ে যায় সেদিকে আর বীর যায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া মায়াকে ধরতে।রাজ ওই রাতেই শাহানা পারভীনকে বাঁচানোর জন্য মাহমুদ সরদারকে কল করতে নিলে শাহানা পারভীন বারণ করেন,”আমি বেঁচে আছি জানলে বিপদ বাড়বে।মোহ মাকে দেখে রেখো।ও তোমাকে ঘৃণা করে।খুব ঘৃণা করে কারণ আসল সত্যিটা জানেনা ও।আমি নিজেই মাত্র জেনেছি।দেরি হয়ে গেলো আমার।তুমি ওর সামনে যেও না।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো।আমার মোহ মাকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিও।তোমাদের দাদু তোমাদের এক করে গেছেন।যেটা করলে মোহ মায়ের ভালো হবে তুমি তাই করো।ওর সামনে এখন যেও না।বিপদ আরো বাড়বে।ওই সরদার মহল মোহর জন্য বিপদ।তোমার মায়ের খুনি আছে।তাকে শাস্তি দেওয়ার আগে ফর্মুলা উদ্ধার করতে হবে।যেটা আমি মাত্রই…..
একটানা নিশ্বাস না নিয়ে বলে হাঁপাতে থাকেন।শাহানা পারভীনের হাঁপানি বেড়ে গেলো।রাজ ওদের গাড়িতে উঠিয়ে নেয়।শাহানা পারভীন যখন পেটে ব্যথা অনুভব করেন অনেক কষ্টে অর্ধ কথা স্থগিত রেখে দ্রুত করে জানান,”আমার পেটের সন্তানকে বাঁচাও।আমার নিশ্বাস ত্যাগ হবার আগেই ওকে আনার ব্যবস্থা করো।”
বলতে না বলতেই অজ্ঞান হলেন।অতিরিক্ত আঘাত লাগায় শাহানা পারভীন নিস্তেজ হয়েছেন।ওখান থেকে হাসপাতাল দূরে।তাই রাজ আশেপাশে একটা বাড়িতে এসে সাহায্য চায়।কয়েকজন মুখ ফেরালেও অবশেষে এক বৃদ্ধা সহায়তা করেন।সেখানেই জন্ম নেয় মৌ।শাহানা পারভীন তলপেটে ব্যাথা পান।মৌকে আনার পর বৃদ্ধা দেখলো শাহানা পারভীন ঘেমে ভিজে গেছে।অজ্ঞান হয়ে আছেন।হাত ঝাঁকা দিয়ে ডাক দিলেও সাড়া পেলনা।রাজকে চিৎকার করে ডাকে,”তোমার মায়ের অবস্থা ভালো না।ডাক্তার দেখাও নাহলে মারা যাবে।”
রাজ মৌকে কোলে নিয়ে রক্ত অবস্থায় চলে যায় গাড়িতে করে।দুদিন পর ডাক্তার জানায় তাদের দ্বারা চিকিৎসা করা সম্ভব না।কারণ তারা রোগ ধরতে পারছেন না।কয়েকটা হাসপাতাল এভাবে ফিরিয়ে দিতেই শাহানা পারভীনকে বিদেশে নিয়ে যায় রাজ।তবে গোপন নামে।তাই কেউ জানতে পারেনি রাজ ওই সময় দেশে এসেছিল।সাথে বীর ছিলো এটাও কেউ জানত না।বীরের বাবা মা ও পুরো পরিবার জানতো রাজ ও বীর ছুটিতে অন্য দেশে ট্যুরে গেছে।কারণ সারপ্রাইজ দেওয়ার ছিলো।বীরকে মায়াবতীর সাথে সাক্ষাত করাতে চেয়েছিল রাজ।লন্ডনে গিয়েও বীরের কাছে মায়ার প্রতি সকল ভালোবাসা অনুভূতি শেয়ার করতো।
এদিকে মায়া জ্ঞান ফেরার পর মাকে খুঁজতে থাকে।বীর বাইরে যায় মৌকে আনতে।রাজ মৌকে রেখেই চলে যাবে শাহানা পারভীনকে নিয়ে তাই।বাড়িতে সবাইকে বিরক্ত করে দেয় মায়া।মা মা করে চিৎকার করে।সকাল থেকে রাত অব্দি মুখে শুধু মা শব্দটাই লেগে থাকে।ভাংচুর করে সেই সাথে।একজন মহিলা সার্ভেন্ট বিরক্ত হয়ে বলে,”তোর মা মারা গেছে।এক্সিডেন্ট হইছিলো তার।এখন কান খাবি না আমাদের।”
মায়া চিৎকার করে মহিলাটির মাথার চুল খিঁচে ধরে মারে।বীর আসার আগেই মায়া হাইপার হয়ে ধীরে ধীরে অজ্ঞান হয়ে যায়।এসে আরেক সার্ভেন্ট থেকে এগুলো শুনে ওই সার্ভেন্টকে গার্ড দিয়ে চাবুকের আঘাত করিয়ে বের করে দেয়।রাজের থেকে শুনতে পায় শাহানা পারভীন কোমায় চলে গেছেন।যার ফলে রোগ সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব না।আপাতত নরমাল ট্রিটমেন্ট চলবে।কিছুদিন পরপর টেস্ট ও নার্সের কেয়ার দিতে হবে।তাই শাহানা পারভীনের বেঁচে থাকার ব্যাপারটা ধামাচাপা রাখতে হবে।ওই সময় রাজ ও বীর যথেষ্ঠ স্বাবলম্বী ও মেচিউর্ড।তাই নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।এদিকে আদ্র ও রুদ্র হারায় তাদের মাকে।বড় হয়ে রুদ্রের মস্তিষ্কে মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার নেশা জাগলেও আদ্র সার্জেন্ট হয়ে ব্যাস্ত থাকতো শাহানা পারভীনকে গোপনে ট্রিটমেন্ট করাতে।এখন সফল হয়েই দেশে আনা হচ্ছে শাহানা পারভীনকে।সেই সাথে শাহানা পারভীনের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে।যেটা ম্যাচ করেছে অনেক কষ্টে।
আজ রাজ মায়াকে সবকিছু জানাতে চেয়েছিল।কিন্তু আজকেও তাদের ভাগ্য নতুনরূপে বদলে গেলো।কি হবে পরবর্তীতে তাদের সাথে?মায়া কি পারবে ওর মাকে নিয়ে বাকিটা জীবন পার করতে? আর তাজ!সেও তো পড়ে গেলো খাদে।তাকে তো হারিয়েই ফেললো।ওই খাদে একবার পড়ে গেলে তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা এক পার্সেন্ট।ভয়ানক জলহস্তীর কারণে আজ অব্দি কেউ বেঁচে ফিরতে পারেনি।রাজ নিচের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে,”ভাই….
মাহমুদ সরদার পিছনে এসে দাঁড়ালেন।ওনার মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না।বীরের গ্যাং এসে বাকিদের কুপোকাত করে দিলো।কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেললো।জারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে সেই সাথে তারেক।বীর এসে জারাকে কোলে করে গাড়িতে উঠিয়ে এগিয়ে এলো রাজের দিকে।রাজ হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করে দিলো।এখন তার মায়াবতীর জখমের থেকেও ভাইকে এক নিমিষে হারিয়ে ফেলার বিরহ বেশি।এটাই তো স্বাভাবিক।ভাই তার চোখের পলকে চোখ থেকে পালিয়ে গেলো।নিজেকে বাঁচানোর জন্য সবার কাছে অনুরোধ করলো।কত কান্নাকাটি করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা।কোনকিছুতেই কাজ হলো না।তাকে শয়তানগুলো ফেলেই দিল।
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৪৯+৫০
মাহমুদ সরদার পাথর হয়ে দেখছেন।একটু ঢলে পড়তে নিলেই বীর হাত দিয়ে আগলে নেন।লোকটা আজ কান্না করছেন না।ছেলেকে পড়ে যেতে দেখে তিনিও পাথর হয়ে গেছেন।কিছু মহিলা গার্ড এসে মায়াকে ও জারাকে নিয়ে গেলো হাসপাতালে।এদিকে নিচের দিকে চোখ স্থির করে চেয়ে আছে রাজ ও মাহমুদ সরদার।রাজের আহাজারি বেড়ে গেলো।তাজকে বাঁচাতে পারলো না।ছটফট করে কান্না করছে।বীর চেয়ে দেখছে।হাঁটুতে আর বুকে ধুলাবালি এসে মিশে গেলো সেই সাথে মাটিতে থাকা মায়ার শরীরের রক্তগুলো লেগেছে রাজের সাদা পাঞ্জাবিতে।
