মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬৫+৬৬
ইশরাত জাহান
মালিনীকে নিজের সিক্রেট রুমে নিয়ে আসে মায়া।দেয়ালে হাত দিয়ে সুইচ অন করতেই পুরো রুমজুড়ে আলোকিত হয়।মালিনীর চোখেমুখে আলো লাগতেই চোখ পিটপিট করে।চোখ মেলে তাকাতেই মায়াকে দেখে থম মেরে থাকে।মায়া মৃদু হেসে পিছন ঘুরে মালিনীকে দেখে বলে,”ফাইনালি আপনার ঘুম ভাঙলো শাশু মা?”
মালিনী ভ্রুকুটি করে বলে,”কে তুমি?”
“এখনও চিনলেন না?তাহলে আর চিনতেও হবেনা।সোজা একশন দেখিয়ে দেই।”
বলেই দেয়াল থেকে চাবুক নিয়ে হাতে পেঁচিয়ে বলে,”এখানে থাকা সমস্ত অস্ত্র দেখুন তো ভালো করে।মনে পড়ে কিছু?এই অস্ত্রগুলো কোন কাজে ব্যবহার করতেন আপনারা?”
মালিনী সামনে তাকিয়ে দেখে চাবুক, তরকারি কাটা ছুরি,আয়রন আর এক কোনায় ইলেকট্রনিক শক দেওয়ার ব্যাবস্থা।যেগুলো দেখে ঢোক গিলে নিলো।মায়া অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে বলে,”ওটা আপনার জন্য না তবে এগুলো আপনার জন্য।ওহ, আরো একটা অস্ত্র আছে।যেটা আমার পায়ে।”
মালিনীর সামনের চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলে দেখিয়ে দেয় উচু জুতা।যেটা দেখিয়ে বলে,”জানেন তো শাশু মা আমি একটা সময় এগুলো ব্যবহার করতে জানতাম না।একদিন আমি দেখি আপনি খুব সুন্দরভাবে আমার মায়ের হাতে পিষে ফেলছেন তাও কিনা বাম পা দিয়ে।বিশ্বাস করুন তখন থেকেই আমার খুব করে ইচ্ছা হয় আপনার পা কেটে ফেলতে।কাটবো নাকি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তু তুমি শাহানার মেয়ে?”
মায়া মৃদু হাসলো।উত্তর না দিয়ে বলে,”অন্যের স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করার সুযোগ করে দেন আপনি।তো কেমন লেগেছিল যখন আমি আপনার স্বামীকে আরো একটা বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম?বুকের বাম পাশটায় ঝলসে যায় তাই না?”
মালিনী মাথা নিচু করে।মায়া বিদ্রুপের হাঁসি দিয়ে বলে,”আপনি কাউকে কোনো কিছু উপহার দিবেন তার বিনিময়ে কিছু পাবেন না এমন তো হয়না।আমার মা ছোটবেলায় আমাকে বলতো কেউ কিছু দিলে তাকে মনভরে দ্বিগুণ বিলিয়ে দিতে হয়।আমিও তো আজ আপনাকে ঠিক তাই দিতে চাই শাশু মা।আপনি আমার মাকে চাবুক দিয়ে আঘাত করেছিলেন।বিনিময়ে আপনার পরিবারের সামনে আমি আপনাকে চাবুকের মার খাইয়েছি।হিসাব করে দেখুন আমি দ্বিগুণ করেছি।আপনি আমার মায়ের সংসার ভাঙতে সহায়তা করেন,আমি আপনার সংসারের অশান্তির মূল কারণ হয়েছি।আপনার সন্তানেরা আজ আপনাকে ঘৃণা করে খুব বেশি ঘৃণা করে।নিজের সন্তানের দৃষ্টিতে ঘৃণিত মা হওয়াটা কেমন এটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবেনা।সো শাশু মা সব যখন করেছি আপনার হাতটা আমি সুরক্ষিত রাখি কি করে?ওই দিন যে আপনি আমার মায়ের হাতেও পা দিয়ে পিষে ধরেছিলেন।দেখুন আমি কিন্তু আপনার সেই ব্র্যান্ড পড়েছি।জেনারেশন বদলে গেলেও ব্র্যান্ড একই রেখেছি শুধু আপনাকে টিট ফর ট্যাট দেখিয়ে দিবো বলে।”
মালিনী ভয়ে দৌড় দিয়ে পালাতে চায়।কিন্তু মায়ার কারণে পারেনা।বাম পায়ের জন্য পারল না।পা দিয়ে আটকে মালিনীকে মেঝেতে ফেলে দেয়।এতে করে নিজের পেটেও কিঞ্চিৎ ব্যাথা পায় মায়া।মালিনীকে আনার সময়ও মায়ার পেটে ব্যাথা বাড়ে কিন্তু শাহানা পারভীনের অপারেশন আটকে যাবে বলেই মায়া ব্যাথা সহ্য করে নিয়ে আসে।মায়া উঠে দাড়িয়ে বিধ্বস্থ হয়ে পড়ে থাকা মালিনীর সামনে দাঁড়ায়,”আপনি আপনার সন্তানের জন্য এতকিছু করেছেন ভালো কথা কিন্তু আপনি জালিম না হয়ে আমাদের জীবনে সহায়ক হয়ে তো আসতে পারতেন।আমরা সকল দুঃখী মানুষেরা মিলে সব সমস্যার সমাধান করে নিতাম।”
মালিনী কিছু বলতে চায় কিন্তু পারছে না।গলা শুকিয়ে গেছে।মায়া দাঁতে দাঁত চেপে মালিনীর বাম হাতের উপর ঠিক একই আকারে নিজের পা দিয়ে পিষে দিল।মালিনী ঘেমে গেছে পুরো।গলা দিয়ে চিৎকার বের হয়না।মায়া চাবুকের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভয় নেই চাবুকের আঘাত করবো না আজ আমি।কিন্তু আপনার কৃতকর্ম আপনাকে বুঝিয়ে দিবো।আপনি বাধ্য হলেও আমার কাছে আপনি আসামি।হাজার হোক আপনি আমার মাকে খুন করতে চেয়েছিলেন।আপনাকে তো আমি ছেড়ে দিব না।”
মায়া আরও কিছু বলতে নিবে খট করে একটা শব্দ কানে ভেসে আসে।দরজার কাছে যেতে নিলে মাথা ঘুরে ওঠে আবারও।পেটে হাত দিয়ে দরজার কাছে এসে দেখলো রাজ আসছে।মায়া একবার পিছনে ফিরে আবারও দৌড়ে রাজের কাছে ফিরে আসে।রাজ মায়ার কাছে ছুটে এসে বলে,”ওনাকে ছেড়ে দেও মায়াবতী।”
“ভুল করেও এই অনুরোধ করবেন না মন্ত্রী মশাই।”
রাজ অনুরোধ করে বলে,”তোমার জন্য আমি আমার জীবন দিতেও রাজি।অন্তত আমার বাবার দিকটা চেয়ে হলেও ওনাকে ছেড়ে দেও।তুমি এতদিন যেভাবে শাস্তি দিয়েছো আমি না করিনি কিন্তু আজ করছি।এই শাস্তিটা আমাদের জন্য অন্যায়ের হয়ে যায়।”
“কিভাবে বলতে পারেন মন্ত্রী মশাই?উনি তো আপনার মায়ের খুনীর সাথে যুক্ত।”
“বাধ্য হয়ে,বোনের খুনিকে নিজের সাথে রেখেছে বাধ্য হয়ে।”
মায়া বিতৃষ্ণার হাসি দিয়ে বলে,”বাধ্য হয়ে?হ্যাঁ তাই তো।বাধ্য হয়েই আমার মাকে প্রেগনেন্ট অবস্থায় করুণা না করে সবার সাথে মিলে মেঝেতে ফেলে হাতের উপর পা দিয়ে পিষে রাখে।মা ছটফট করেছিলো আমি কান্না করেছিলাম।কোনো কাজ হয়নি।কেউ শোনেনি আমার অনুরোধ।আপনি ভেবে আমি এতদিন ভুল বুঝে আপনাকেই ক্ষতি করতে চেয়েছি।এটাও কিন্তু ওদেরই একটা চাল।ভাগ্যবশত ওরা আমাকে চেনেনি।কারণ প্রতি মোমেন্টে আমি টেক্কা দিয়ে এসেছি তাই।আপনি বলছেন খেলার শেষ মুহূর্তে এসে হেরে যেতে?”
রাজের বুকে ধাক্কা দিয়ে রাজকে সরিয়ে দিয়ে কথাটা বলে মায়া।রাজ কিছুক্ষণের জন্য অবাক হলো।এসবকিছু জানে না সে।জানে শুধু তাজ মায়াকে অত্যাচার করেছিল নিজের থেকে দূরে রাখতো এগুলো।এছাড়া নিজের চোখের সামনেই শাহানা পারভীনের এক্সিডেন্ট হতে দেখে।তাহলে কি ওইদিন আরো যন্ত্রণা সহ্য করেছে শাহানা পারভীন?রাজ প্রশ্ন করে,”কে কি করেছিল ওই সময়?”
“আপনার কাকা যে আমার জীবনে কলঙ্কিত বাবা উনি লিপ্ত হয় আরেক নারীর প্রতি।আমার মাকে তালাক দিতে চায়।তখন আমার মা আবারও প্রেগনেন্ট হওয়ার খবর দেয়।যেদিন আপনার বাবা বাড়ীতে ছিলো না সুযোগ বুঝে ওইদিন বাড়িতে আনে মিহির আর ওই মহিলাকে।জানানো হয় তাদের অবৈধ সন্তানের কথা।যদিও আপনার কাকা জানেই না যাকে তিনি নিজের সন্তান বলে স্বীকৃতি দেয় সে অন্যের সন্তান।ধোঁকা দেওয়া ব্যক্তিকে আরো একজন ধোঁকা দিলো।ওই সময় আমার মা বলেছিল প্রেগনেন্ট অবস্থায় একটু করুণা করতে।সন্তানের দিক চেয়ে সংসার করতে।কেউ শোনেনি।ঠাস করে একটা থাপ্পর দিয়ে আমার মাকে অত্যাচারের উদ্বোধন করে দিলো মোহন সরদার। একে একে সবাই মিলে শুরু করে অত্যাচার।সবাই খাবার খেতো টেবিলে আমার মা সংসার বাঁচাতে চেয়ে খেতে বসত নিচে।মায়ের সামনে হাসিখুশি মুহূর্ত কাটাতো মোহন সরদার ও সোনালী।ওদেরকে আশকারা দেয় এই মহিলা মালিনী খান। আরো আছে কাহিনী শুনুন।আমার মাকে প্রেগনেন্ট অবস্থায় চাবুকের আঘাত দেয় এই মহিলা।আমার মায়ের হাতে আয়রন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ওই মোহন সরদার। তাজ আমাকে আঘাত করেছিল আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু আমার মাকে আঘাত করলে আমি ওকেও ছাড়তাম না মন্ত্রী মশাই।আমি মায়া এতটাও মানবিকতার না যে যারা জুলুম করেছে তারা মাফ পাবে আমার থেকে।”
মায়া কথাগুলো বলে হাঁফিয়ে ওঠে।ফোলা পেটের উপর হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়ে কয়েকবার।সবে সাতমাস কয়েকদিন চলছে।অলরেডি প্রেগনেন্ট হবার সময় সে অনেক কিছু সাফার করে বলে জানতেও পারেনা।জেনেছে মাস তিন কি সাড়ে তিনমাস পর।এখন আবার রিস্ক মুহূর্ত চলছে।রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”কাম ডাউন মায়াবতী।আমরা বসে কথা বলব।”
“আমার তো কিছু বলার নেই।সিদ্ধান্ত যখন অটল রেখেছি তখন সেই সিদ্ধান্ত আমি পরিবর্তন করবো না।”
রাজ এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,”শান্ত হও মায়াবতী।ওনাকেও শাস্তি দেওয়া হবে কিন্তু এভাবে হাইপার হয়ে নিজের ক্ষতি করোনা।তোমাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তোমার কষ্ট হচ্ছে।আমাদের সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে যুদ্ধ জয় করবো?”
মায়া রাজের বুকেতে মাথা রেখে চোখটা একটু উঁচিয়ে দেখে।রাজ আশ্বস্ত করে বলে,”সবাই সবার নিজস্ব কর্মফল পাবেই।”
এদিকে মালিনী ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালো।মায়ার মুখে নিজের অভিযোগ শুনে কিঞ্চিৎ হেঁসে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে,”আসলেই আমার মত মানুষদের শাস্তি পাওয়া জরুরি।যে নিজের ভালোবাসাকে ধরে রাখতে পারেনা,নিজের বোনকে চিনতে পারেনা,সন্তানকে আগলে নিতে জানেনা এমন মানুষ বেঁচে থাকা মানেই একটা কিটের বেঁচে থাকা।আমি তোমাদের মুক্তি দিবো।আমার প্রথম সন্তান যদি জীবিত থাকে তাহলে তাকে জানতে হবেনা তার মা তার জন্য কতটা খারাপ হয়েছে।তাকে এক পলক দেখার জন্য নিজেকে কতটা নোংরা পথের দিকে ধাবিত করেছে এটা জানতে পারবে না সে।তোমাদের বাবাও জীবনে সুখ পেলো না আমার কারণে।রাজের জীবনে আমার জন্যই কালবৈশাখীর ঝড় আসে।আমি সবাইকে মুক্ত করতে চাই।”
বলেই তরকারি কাটা ছুরি নিয়ে নিজের পেটে মেরে দিলো।মায়া রাজ দুজনেই অবাক হয়ে দেখলো।মালিনী শীতল হাসি দিয়ে ছুরিটা পেট থেকে সরিয়ে আবারও পেটে চালিয়ে দেয়।গলগল করে পেট থেকে রক্ত পড়ছে মালিনীর।ধীরে ধীরে আবারো মেঝেতে শুয়ে পড়ে।ঘোলা চোখে দেখতে পায় দূর থেকে দৌড়ে আসছে কেউ।ব্যক্তিটিকে নিজের চোখে দেখার অবস্থায় নেই কিন্তু ব্যক্তির মধ্যে আছে আতঙ্ক।মালিনীর কাছে ছুটে আসছে মাহমুদ সরদার।দৌঁড়ে এসে মালিনীকে দেখে থ হয়ে যায়।মায়াও এবার ঢলে পড়ে রাজের বুকের সাথে।পেটের ব্যাথা বাড়ছে মায়ার বমি করে দিলো অতঃপর চোখ বুঝতে নেয়।মাহমুদ সরদার হাঁটুগেড়ে বসে মালিনীর মাথাটা ধরে বলেন,”নিজের ভুল বুঝলে কিন্তু শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতিটা সঠিক রাখতে পারলে না?নিজেকে নিজে মেরে ফেলে কি মৃত্যুর পরেও পাপী হয়ে থাকতে চাও?”
কাপা কাপা কণ্ঠে মালিনী বলে,”নিজেকে শাস্তি আমি অনেক আগে থেকেই দেই শুধু তোমাদের নজরের আড়ালে।জা জানো তো মাহমুদ?আমি ওইদিন শাহানাকে পালাতে সাহায্য কিন্তু বেচারীর দুর্ভোগ লেগেই ছিলো তাই তো ধরা পড়ে যাই।কিছু করার ছিল না আমার।হারানো সন্তানকে একবার দেখার জন্য মরিয়া হয়েছিলাম।আজও তাই হয়েছি আমি।”
পিয়াশ এসেছে দুজন ওয়ার্ড বয় নিয়ে।মালিনী আবার বলে,”ওরা আমাদের সেই ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে খারাপ পথে রাখতে চায়।হুমকি দেয় আমি যদি ওদের বিরুদ্ধে চলি তাহলে রোহিনীর মত আমারও জীবনকেও শেষ করে দিবে।ভয় পাইনি কারণ মিনারকে হারিয়ে আমি অনেকটাই শেষ হয়ে যাই কিন্তু আমার পেট কেটে যে সন্তান আমি জন্ম দেই তাকে তো মারতে পারিনা।আমি মা বলেই আমি নোংরা পথে যোগ দেই। আ আমার কষ্ট বুঝবে না তো তোমরা।একজন মাই বুঝতে পারবে।”
সবাই মালিনীর দিকে চেয়ে চোখের পানি ফেলে।মায়া নিভে আসা চোখে বলেই দেয়,”মাকে পালাতে সাহায্য করেছিল?আমি নিজ হাতে তাকেই শাস্তি দেই!এত বড় ভুল করেছি আমি?আমার নিজেরই এবার শাস্তির প্রয়োজন।”
রাজ মায়ার মুখে আলতো চাপড় মেরে বলে,”এখন নিজেকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছো কেন?তোমাদের কারোর কিছুই হবেনা।হাসপাতালে নিয়ে যাব এখনই।
মালিনী রাজের কথা শুনে বলে,”নিজেকে শাস্তি দিও না মায়া।আমি বুঝি তোমার কষ্ট।আমি এতে কষ্ট পাইনা কিন্তু আমি বুঝেছি আমি বেঁচে থাকা মানে আমার মাধ্যমে আরো অঘটন বাড়তে থাকা।
মায়াও এবার হাসফাঁস করছে।পাগলামি করছে মায়া।মালিনীর কথা শুনে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে মায়ার।না জেনে কত বড় ভুল করতে নিয়েছিল ভাবছে।রাজ চিৎকার করে বলে,”দ্রুত ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও আর এক বোতল পানি আনো।”
পিয়াশ পানির বোতল দিতেই মায়ার মাথায় পানি দেয় রাজ।কিন্তু মায়া শান্ত হয়না।এক সময় জ্ঞান হারালো মায়া।অনুশোচনা হচ্ছে তার আজ।হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো দুজনকে।মালিনীর দিকে তাকাতে আজ কষ্ট হচ্ছে মাহমুদ সরদারের।তারা দুজনেই ছিলেন পরিস্থিতির স্বীকার।যার কারণে দুজনের কেউই দুজনকে বুঝে উঠতে পারেননি।ভালোবাসা থাকতে থাকতে হয়েই যায় কিন্তু দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়না দুজনের মধ্যে।যেটা বোঝানোর জন্য মাঝে মাঝে উল্টোদিক দিয়ে বাবাকে খোঁচা দিয়ে বুঝিয়ে দিতো।অপারেশন চলছে মালিনী খানের।সবাই দাড়িয়ে আছে আর আফসোস করছে।সিয়া কান্না করে যাচ্ছে একাধারে।
মায়ার অবস্থা এতটাই খারাপ যে ডাক্তার জানালো প্রীম্যাচিউর বেবী হবে। মানে আজকেই সিজার করতে হবে।অলরেডি বাচ্চার নাড়াচাড়া তারা আন্দাজ করতে পারছে না।মায়ার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ।যে পরিস্থিতিতে তার গর্ভে সন্তান আসে তাতে করে অনেক সময় রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম।রাত বারোটার পর সিজারের জন্য তাগিদা দিতে থাকে সবাই।অন্যদিকে মালিনীর অপারেশন চলছে।মাহমুদ সরদার আর রাজ দুজনেই নিরুপায় হয়ে বসে আছে।ডাক্তারের কথামত চলতে হবে তাদেরকে।ডাক্তার বের হলেন অপারেশন থ্রিয়েটর থেকে।যেখানে মালিনীর অপারেশন চলছে।জানালেন,”ইমিডিয়েট ব্লাড লাগবে আমাদের,নাহলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়।সরি টু সে এই ব্লাড আমাদের হাসপাতালে এখন নেই।আজকেই শেষ হয়েছে আর আসতে সময় লাগবে।”
“মালিনীর রক্তের গ্রুপ তো বি নেগেটিভ।আমাদের কারো তো এমন নেই।”
রাজ একটু ভেবে বলে,”ব্লাড ব্যাংক খুঁজে দেখতে হবে।”
“এই রাতে পাওয়া সম্ভব হবেনা।”
“কেন?”
“ব্লাড ব্যাংক থেকে আমরাই রক্ত নিয়ে থাকি।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বি নেগেটিভ রক্তের কালেক্ট অনেক কঠিন হয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে।আমাদের তো আগে ব্লাড সংগ্রহ করতে হয় তারপর সেই ব্লাডের কিছু টেস্ট আছে।ভাইরাস জনিত সমস্যার কারণে আগে টেস্ট করে তারপর ওগুলো বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়।রোগীর জন্য আমরা ঝুঁকি নিতে পারিনা স্যার।”
“আপনাদের কতক্ষণের মধ্যে রক্ত লাগবে?”
“সেলাইন শেষ হতে সময় নিবে এক ঘন্টা।এরমধ্যেই আনতে পারলে আমরা নিজ দায়িত্বে বলতে পারবো রিস্ক কম।এছাড়া পেশেন্টের অবস্থা খুব খারাপ।ছুরির আঘাতে তার অনেক রক্ত ব্যয় হয়।এখন অনেক কষ্টে আমরা রক্ত পড়া বন্ধ করেছি।বাকিটা এক ঘণ্টার মধ্যেই করতে হবে।”
রাজ কল করে বীরকে জানায়,”এক ঘণ্টার মধ্যে বি নেগেটিভ ব্লাড জোগাড় করবি।সে যে করেই হোক।”
অন্যদিকে মায়ার জন্য আসা গাইনকলজিজ এসে বলে,”আপনাদের একটা সই লাগবে।”
“কিসের সই?”
“এই পেপারে লেখা আছে সিজারের পর পেশেন্টের কিছু হলে তার দায় হাসপাতালের নেই।সমস্ত দায়ভার পেশেন্টের বাড়ির মানে সোজা তার স্বামী বা মা বাবার।”
“পেশেন্টের কিছু হয়ে গেলে মানে কি?”
“দেখুন স্যার ওনার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রীম্যাচিউর বেবী সবার হয়না।যার হয় তার বাঁচা মরার ঝুঁকি থাকে।এছাড়া বেবী যে সুস্থ থাকবে এটারও গ্যারান্টি নেই।”
বাকিটা বুঝাতে নিবে তার আগেই রাজ রক্তিম চোখ তুলে ডাক্তারের দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়ায়।ডাক্তারের গলা টিপে ধরে দেওয়ালের সাথে নিয়ে বলে,”আমার বউ বাচ্চার যদি কিছু হয় তুই ডাক্তার এই পৃথিবীর আলো আর দেখতে পারবি না।”
“দেখুন স্যার এগুলো আমাদের হাতে না।পেশেন্টের অবস্থা খুব খারাপ।”
রাজের চোখ লাল হাতটা স্থির ডাক্তারের গলায় সেই সমেত কাঁপা গলায় বলে,”তোরা ডাক্তার না কসাই!আমার বউ মরবে না! আমার বাচ্চা মরবে না!যদি তুই আরেকবার বলিস বাঁচবে না তোর শ্বাস নিতে দিব না আমি।”
মাহমুদ সরদার এসে দ্রুত রাজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলেন,”পাগলামো করো না শান্ত হও।”
“আর কত শান্ত হবো আমি?ধৈর্য ধরতে ধরতে আজ আমি ক্লান্ত।যার জন্য জীবনের সবকিছু বিলীন করে দেই তার জীবনটাই নাকি আজ ঝুঁকিতে।আমি কাউকে ছাড়বো না আমার মায়াবতীর কিছু হলে।তোরা যেভাবেই হোক আমার মায়াবতীর রক্তিম চাহনি আমাকে আবার দেখার সুযোগ করে দিবি নাহলে তোদের শেষ নিশ্বাসের জন্য সময় গুনতে থাকবি।”
সিয়া কেঁপে উঠে বলে,”এটা কে?”
আদ্র ফিচেল হেঁসে জানায়,”এটা এক অফুরন্ত ভালোবাসা হারানোর ভয়ে নিজের মস্তিষ্কের কাজ বন্ধ করে দেওয়া ব্যক্তি।জীবনটা এমনই হয় প্রেয়সী।তুমি যদি কাউকে মন থেকে ভালোবেসে নিজের সুখ দুঃখের কথা ভুলে ভালোবাসাকে ভালো রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করো,তখন বুঝতে পারবে ওই ভালোবাসার ব্যক্তি চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যেতে নিলে কেমন লাগে।”
রাজের বক্ষে হাত রেখে নিচে বসে পড়ে।বক্ষে খুব ব্যাথা আজ তার।শূন্য হয়ে আছে বক্ষ।মায়াবতীকে প্রয়োজন তার।নেশা হয়েছে এই মায়াবতী তার জীবনে।একহাত মাহমুদের সরদারের পায়ের উপর।অবস হয়ে আছে যেনো।মাথা কাজ করছে না।তার বউয়ের মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখিয়ে একটা কাগজ নিয়ে তাতে সই দিয়ে রাখতে বলছে।এটা মানা তার জন্য কতটা যন্ত্রণার এটা এই মূর্খ সমাজ বুঝবে না।এরা মূর্খ,ভালোবাসার মূল্য বুঝতে না পারায় এরা মূর্খ।রাজের অবস্থা দেখে সিয়া কান্না বাড়িয়ে দেয়।পিয়াশ এসে রাজের পাশে দাঁড়ালো।মৌকে দেখে এসেছে মাত্র।কিছুক্ষণ পরপর মৌকে দেখতে যায়।মৌ কান্না জুড়ে দেয়।ওখানে এখন রুবি আছে। জারা আছে শাহানা পারভীনের কাছে।জারা যাওয়ার পরই আদ্র অপারেশন শেষ করে চলে আসে এখানে।বিভান খান ছুটে এসেছে মালিনীর খবর শুনে।এসেই প্রশ্ন করে,”কি হয়েছে ওর?”
মাহমুদ সরদার ব্যাপারটা গোপন রেখে জানান,”ট্রোমায় চলে যায় তাই নিজের পেটে নিজেই ছুরি চালিয়ে দেয়।আমি যতদূর বুঝলাম ওকে এই ট্রোমা কেউ না কেউ দিচ্ছে।তাকে খুঁজতে হবে।”
বিভান খান শুকনো ঢোক গিলে বলেন,”ডাক্তার কি জানালো?”
“এক ঘণ্টার মধ্যে বি নেগেটিভ ব্লাড জোগাড় করতে হবে।নাহলে মালিনীর রিস্ক হয়ে যাবে।ট্রোমার সাথে এই আত্মহত্যার চেষ্টা করাটা কোনো ভালো লক্ষণ না।এতে কোমায় চলে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।”
“বি নেগেটিভ তো আমাদের বাবার ছিলো।আমার আর বীরের এবি নেগেটিভ।বি নেগেটিভ পাওয়া তো অনেক কঠিন।ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে দেখতে হবে।”
“লাভ নেই ডাক্তার জানিয়েছে ওখানেও পাওয়া যাবেনা।”
“তাহলে উপায়?”
“আমার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ।আপনারা চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি।”
পিয়াশের কথা শুনে সবাই চোখ রাখলো পিয়াশের দিকে।শুধু রাজ ব্যতীত।তার মাথা ঠিক নেই।আদ্র ভ্রুকুটি করে এগিয়ে এসে বলে,”আমার সাথে চলো ব্লাড টেস্ট করতে হবে।”
পিয়াশ গেলো সাথে।আদ্র একটি সিরিঞ্জ করে ব্লাড নেয় সেই সাথে পিয়াশের মাথা থেকে না জানিয়ে গোপনে একটি চুল নিলো।অতঃপর পিয়াশকে অপেক্ষা করতে বলে নিজে গেলো মালিনীর দিকে।অপারেশন রুমে এসে আয়রাকে বলে,”একটা চুল নেও ওনার মাথা থেকে।”
আয়রা অবাকের সাথে বলে,”বাট স্যার চুল দিয়ে কি হবে?”
“আমি বলেছি নেও।”
আয়রা নিলো মালিনীর মাথা থেকে একটি চুল।আদ্র চুলটা আয়রার হাত থেকে নিয়ে দুটো চুল একটি ছোট্ট প্যাকেটে নিয়ে গেলো টেস্ট করতে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলে,”মিস্টার পিয়াশ আপনি পেশেন্টের ব্লাড দিতে পারবেন।আপনার ব্লাডে কোনো ভাইরাস বা সমস্যা নেই।”
পিয়াশ সাহস করে গেলো।মাহমুদ সরদার বসে বসে দোয়া পাঠ করছেন।রাজের দিকে চোখ রাখতেই কেমন যেনো গলার কাছে দলা পাকিয়ে এলো।ডাক্তার চলে গেছে মায়ার কাছে।তিনি নিজেই ভয়তে শেষ।মায়া মারা যাবে এটা তো বলেনি বলেছিলো মারা গেলে এর দায় হাসপাতালের না।এটা তো সমস্ত পেশেন্টের বাসায় বলে।এভাবে তো রিয়েক্ট করেনা।মন্ত্রী বলেই কি সম্ভব!মায়ার সিজারের ব্যাবস্থা করা হলো।একদিনে চারজনের অপারেশন।একদিন বললে ভুল।মায়া ও মালিনীর অপারেশন চলছে দেড়টার দিকে।বারোটার পর তারিখ পাল্টে যায়।তাহলে দিন এক হলো কিভাবে?রাজ সব জায়গায় টুকটুক করে দৌড়ে বেরিয়েছে।ধকল তো তার উপর দিয়েই গেলো।রোগী একজন যার জীবনের ঝুঁকি থাকে কিন্তু যে রোগী টানে তার জীবন যেন মরমর অবস্থা।এটা তারই বুঝবে যারা রোগী টেনে বেড়ায়।মাহমুদ সরদার ডানহাত রাজের কাঁধে দিয়ে বলেন,”আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।”
“সবসময় ভরসা আছে আমার।কিন্তু হারানোর ভয় আসলেই বুকের মধ্যে ব্যাথা জাগে।এই ব্যাথা যে কেউ কমাতে পারেনা বাবা।”
মাহমুদ সরদার হাতটা স্থির রাখলেন রাজের কাধের উপর।ঘণ্টা দেড় পর ডাক্তার এলো ফুটফুটে শিশু নিয়ে।খুবই ছোট ও নরম দেহ। পিয়াশের ছেলের থেকেও এর দেহটা ছোট আর ধরলেই লাল রক্ত জমাট হয়ে থাকে।এইমাত্র নার্স যখন পরিষ্কার করে তখন বাচ্চাটার কান্নায় ঘরভরে যায়।পরিষ্কারের পর বাচ্চাটার গায়ে মুছতে নিলে জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে ওঠে।ডাক্তার এসে কাপা কাপা গলায় জানায়,”ছেলে সন্তান হয়েছে আপনাদের।”
রাজ উষ্কখুষ্ক চাহনি নিয়ে এগিয়ে এলো।ডাক্তার ভয়তে একটু পিছিয়ে যায়।রাজ এসে শুকনো গলায় কাশি দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,”বাচ্চার মা কেমন আছে?”
“উনি সুস্থ আছেন।সেলাইন দিয়ে রেখেছি আমরা।তিনদিন সেলাইনের উপর দিয়ে চলতে হবে।আশা করি সুস্থ হবেন।বাচ্চাকে NICU তে রাখতে হবে কিছুদিন।আনুমানিক তিন চার সপ্তাহ।”
“কেন?”
“অবস্থা ভালো না তাই।NICU তে থাকলে বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো হবে এবং বাচ্চাও সুস্থ থাকবে।”
রাজ পাল্টা কথা না বলে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নিয়ে কপালে চুমু খায়।ডাক্তার ভয়তে বলতেও পারল না বাবুকে চুমু খেতে নেই।ওদের স্কিন সেনসিটিভ।ঠোঁটে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে এতে বাচ্চার স্কিনে ক্ষতি হবে। ভয়ে কথাগুলো গলায় আটকে আছে।রাজ আযান দিলো বাচ্চাটার কানে। বাচ্চাকে দেখে মাহমুদ সরদারের কাছে এসে বলে,”আমার জুনিয়রকে কোলে নিবে না বাবা?”
মাহমুদ সরদার ফিচেল হেঁসে চোখের পানি মুছে বলেন,”নিজের নাতিকে আবার নিবো না!”
সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটাকে নিজের কাছে নিয়ে দেখতে থাকেন।রাজ বাচ্চাটার মুখটা স্থির নয়নে দেখে বলে,”আমার আর মায়াবতীর নামের সাথে মিল রেখে ওর নাম দিব মেহরাজ।শাহমীর রাজের জুনিয়র মেহরাজ সরদার।”
“ও সুস্থ হলেই আকীকা দিবো ইন শা আল্লাহ।”
রাজ একটু হেঁসে পিছনে ঘুরে বলে,”মায়াবতীকে দেখা যাবে?”
“এখন ওনার সেন্স নেই।ছয় ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুমানোর প্রয়োজন।আপনি চাইলে এমনি দেখা করতে পারেন কিন্তু তার ঘুমের বিরক্ত করবেন না প্লীজ।”
রাজ চলে যায় মায়ার কাছে।মায়াকে দেখে রাজ পাশে বসে বলে,”আমাদের বাচ্চাটা কিন্তু এক কিক দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো।কাল কিক দিয়ে আজ পৃথিবীতে এসেছে।ভাবা যায় কত ফার্স্ট আমার ছেলেটা!বাবা তাকে আনতে প্রোসেসিং দেরি করলেও সে কিন্তু আগে আগেই চলে আসে।কি অধৈর্য ছেলে হলো আমাদের।”
বলেই এক চিলতে হাসি দেয় রাজ।মায়ার কপালে চুমু দিয়ে মায়ার নিভু চোখদুটো দেখে বলে,”আব্বে এই মায়াবতী!তোমাকে এভাবে নিশ্চুপ মানায় না।তুমি আমার সামনে হিংস্রবতী হয়ে ঘুরবে।আমি তোমাকে রাগিয়ে দিবো।তোমাকে রাগিয়ে দিতে কিন্তু আমার খুব ভালো লাগে।তোমার এই মায়াবি রূপে হিংস্র চাহনি আমি বড্ড ভালোবাসি।”
নাক টেনে কথা বলে বাইরে আসে রাজ।মায়া ঘুমে আচ্ছন্ন।বাইরে আসতেই শুনতে পায় মালিনীর অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। পিয়াশকে কিছু খেতে দেওয়া হয়েছে।রাজ সব শুনে শান্তির নিশ্বাস নেয়।আদ্র আসতেই রাজ ধীর কণ্ঠে বলে,”ছোট মায়ের কি অবস্থা?”
“অল ওকে,সোনালীর লাশ এখন মর্গে।”
খুব আস্তে বলে আদ্র একবার তাকালো বিভান খানের দিকে।তারপর বলে,”আমার সাথে একটু ক্যান্টিনে চলো ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।”
রাজ ভ্রু কুঁচকে গেলো আদ্রর সাথে।ক্যান্টিনে এসে বসে দুজনে।আদ্র নিজের হাতে থাকা কাগজ এগিয়ে দেয় রাজের নিকট।রাজ ভ্রু কুঁচকে বলে,”এটা কি?”
“ডিএনএ টেস্ট।”
রাজের সন্দেহ হয়।কিছু না বুঝে বলে,”এখন আবার কার টেস্ট করা হলো?”
“দেখো তুমি নিজের চোখে।”
রাজ টেস্ট দেখে।পজেটিভ লেখা আছে।সেই সাথে নাম দেখে অবাক।আশ্চর্য হয়ে আদ্রের দিকে তাকাতেই আদ্র বলে,”পিয়াশ আমাদের সরদার মহলের একটা অংশ।মাহমুদ সরদার ও মালিনী খানের বায়োলজিক্যাল সন্তান।”
দরজার কাছে দাঁড়াতেই কথাটা শুনতে পায় পিয়াশ।পা থমকে গেলো।ক্যান্টিনে বসেই খাচ্ছিলো সে।কেবিনে বসে খেতে কষ্ট হয়।কেমন যেনো মেডিসিনের গন্ধ নাকে আসে তাই খাওয়ার রুচি পায়না।খাবার শেষ করে উঠে দরজার কাছে দাঁড়াতেই নিজের নামে কিছু শুনে চমকে গেলো।রাজ বলে ওঠে,”তাহলে উনি যে বলল বিভান খান তার সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় আর পিয়াশ নিজেও তো বস্তিতে থাকতো।”
“এটা জানা যাবে গভীরে তদন্ত করলে।”
পিয়াশের মনে পড়ে ওর বস্তিতে থাকা বাবা মা মারা যাওয়ার সময় জানায় সে তাদের আপন সন্তান না।রাস্তায় কুড়িয়ে পায় পিয়াশকে।পাঁচ কি ছয় বছরের বাচ্চাকে ফুটপাতে পেয়ে নিজেদের কাছে নিয়ে যায় তারা।তাহলে কি পিয়াশ মালিনীর সন্তান?তারমানে বিভান খান পিয়াশকে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো এক ভাবে বস্তিতে চলে যায়?হ্যাঁ তাইই হয়। পিয়াশের জন্মের পর সোনালী কিডন্যাপ করে পিয়াশকে।বিভান খানের কথাতেই সব করে।কারণ মালিনী ওই সময় সোনালীর মুখোশ উন্মোচন করতে চাইতো।প্রথমেই মালিনী খারাপ থাকেনা।
যখন গর্ভ অবস্থায় বিভান খনের ব্যাপারে জানতে পারে তখনই ওদের নিয়ে একশন নিতে চায় মালিনী।কিন্তু সোনালী রোড এক্সিডেন্ট করিয়ে দেয়।ভাগ্য ভালো থাকার কারণে মালিনী ও সন্তান দুজনেই বেঁচে যায় কিন্তু আচমকা ঘটনার কারণে কোনো গার্ড ছাড়া মাহমুদ সরদার হাসপাতালে এসেছিল মালিনীকে নিয়ে।এই সুযোগ বুঝে সোনালী সব করে।পরে ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হয় মালিনী।শাহানা পারভীনের সাথে বিয়ে হয় মোহন সরদারের।এটাতে সোনালী রেগে যায়।প্ল্যান করে মিহিরকে মোহন সরদারের ছেলে বলে চলে আসে এই বাড়িতে।তবে তার আগে রাজকে সরাতে হবে তাই বিভান খানের ভালো ভালো কথাতে রাজকে লন্ডনে নিয়ে পড়াশোনা করানো হয়।
সবকিছুই তাদের প্ল্যানে ছিলো আর স্বীকার হয়ে ছিল মালিনী।গোপনে শাহানা পারভীনকে পালাতে কতবার চেষ্টা করে।কিন্তু সোনালীর শকুনি চাহনির কাছে প্রায়ই ধরা পড়ত।বাইরে এসে পিয়াশ ভাবছে ওই সময় মালিনী বলেছিল,”ওরা আমাদের সেই ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে খারাপ পথে রাখতে চায়।হুমকি দেয় আমি যদি ওদের বিরুদ্ধে চলি তাহলে রোহিনীর মত আমারও জীবনকেও শেষ করে দিবে।ভয় পাইনি কারণ মিনারকে হারিয়ে আমি অনেকটাই শেষ হয়ে যাই কিন্তু আমার পেট কেটে যে সন্তান আমি জন্ম দেই তাকে তো মারতে পারিনা।আমি মা বলেই আমি নোংরা পথে যোগ দেই। আ আমার কষ্ট বুঝবে না তো তোমরা।একজন মাই বুঝতে পারবে।”
মাটিতে হাটু গেড়ে বসে খোলা আকাশের দিকে চোখ রেখে চিৎকার দিয়ে কান্না করে পিয়াশ।
সকালবেলা জারা ঘুমের মধ্যে কিছু শব্দ পায়।চোখটা মেলে দেখে বীর তার পাশে বসে আছে।জারার মাথার কাছে গ্লাস।ওটাই নিয়েছিল বীর।জারা সোফায় ঘুমিয়েছে রাতে।শাহানা পারভীনের বিছানার পাশে সোফা।বীর জারার পায়ের কাছে বসেছে।বীরকে দেখে উঠে বসে হামি তুলে বলে,”তুমি কখন এসেছো?”
“মাত্রই আসলাম।”
“ব্লাড জোগাড় করেছিলে?”
“করতে পারিনি কিন্তু তার আগেই ব্লাড জোগাড় হয়।”
“কিভাবে?”
“পিয়াশ ব্লাড দেয় এবং আদ্র সন্দেহ করে ডিএনএ টেস্ট করে দেখে পিয়াশ সেই সন্তান যাকে ফুফু এতগুলো বছর ধরে খুঁজেছিল।”
“তারমানে আন্টির অপেক্ষার প্রহর শেষ।”
“হুম,কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে ফুফুর উপর।”
“ব্যাপার না শেষমেষ সব ঠিক তো হলো।তুমি কিছু খাবে?”
“তুমি রাতে কিছু খেয়েছো?”
“হ্যাঁ,এখন বসো আমি খাবার আনছি।”
বীর মাথা উপর নিচ করে।জারা উঠে যেতে নিলে বীর হাতটা ধরে নেয়।জারা পিছনে ঘুরতেই বীর বলে,”না খেয়েও কেন মিথ্যা বললে?”
“বীর আমি….
“আমাকে ছাড়া খেতে ইচ্ছা করেনা বললেই তো হয়।একবারও কি বলা যায়না ভালোবাসি বীর তোমাকে?”
জারা চুপ করে গেলো।বীরের মুখে হাহাকার জনিত হাসি,”তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে হয়তো আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে যেতে হবে।”
“এমনটা না বীর।”
“যাও খাবার আনো একসাথে খাবো।”
জারা চলে গেলো।বীর সামনে তাকালো।শাহানা পারভীনের দিকে চোখ রেখে বলে,”আপনার দুই মেয়ের একদিনেই বাবু হয়ে গেলো আন্টি।আমি তো একসাথে দুইজনের মামা হলাম।আমার সেই দুটো বোন যাদেরকে নিজের বোনের স্থানে জায়গা দিয়েছিলাম।গুটি গুটি পায়ে হাঁটা মৌ অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে নিজেকে বেড়ে ওঠানো সেই ছোট্ট মায়া আজ দুজনেই মা হয়ে গেলো।আপনি একদিনে দুই মেয়ের থেকে নানি হবার সুখবর পেলেন।এখন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।একসাথে সবাই আনন্দ করব।”
শাহানা পারভীন একটু নড়ে উঠলো।আজ তার ঠোঁট হুট করেই প্রসারিত হলো।হাতটা নড়ে উপরে উঠেছে।চোখের কোণা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আজ বেশ ভালই নড়ছেন তিনি।বীর এগিয়ে এসে বলে,”কিছু বলবেন আন্টি?”
শাহানা পারভীন গাল হা করে নিশ্বাস নিলেন।কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারছেন না।হয়তো শুরুতেই এত উন্নত হবেনা।ধীরে ধীরে কথা বলতে পারবে।বীর কল করে জানালো আদ্রকে।জারা খাবার নিয়ে এসে বলে,”কি হলো?”
“আন্টি মুভ করছেন।”
“ওহ,কাল রাত থেকেই এমন করছেন।একটু একটু করে সুস্থ হবেন।নার্স আছে পাশের রুমে।চিন্তা করতে হবেনা এখন।”
প্লেটে খাবার বেড়ে বীরের সামনে রেখে বলে,”তেমন কিছু নেই এখানে। যা আছে সব রোগীর হেলথের জন্য।এগুলোই খাও আপাতত।”
বীর খাবারের দিকে চোখ রেখে দেখে প্লেটে ডিম পোজ আর পাউরুটি দিয়ে জেলি।হাতে একটা পাউরুটি নিয়ে জারার দিকে এগিয়ে দিলো বীর।জারা কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে গালে নিলো খাবারটা।
সকালবেলা মৌয়ের কাছে এসেছে রাজ।ওদের বাবুকে একবার দেখে আবারও মায়ার কাছে যাবে।মাহমুদ সরদার হাসপাতালে নেই। বিভান খানের সাথে বেরিয়েছে।তাই পিয়াশের ব্যাপারে কাউকে জানানো হয়নি।মায়া একবার উঠেছিল ঘুম থেকে কিন্তু পাগলামি করার কারণে আবারো ঘুমের ইনজেক্ট দেওয়া হয়।মৌ চেয়ে আছে নিজের বাচ্চার দিকে।মায়ার ব্যাপারে জানতে পেড়ে খুব খুশি।বলতে গেলে একই দিনে দুই বোনের বাবু হলো।বাচ্চার নাম ঠিক করেনি মৌ। পিয়াশ আসলেই ঠিক করা হবে।রাজ ভিতরে এসে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলে,”পিয়া উহ উহ পিয়ু বেবী কোথায়?”
মৌ হাস্যজ্বল মুখে বলে,”ও তো কালকেই মালিনী আন্টিকে ব্লাড দিতে গেলো আর আসেনি।”
“কি বলো?ওকে কিছু খাবার খাইয়েই তো পাঠানোর কথা।”
“না তো জিজু ও আসেনি রাতে আর।কেন কিছু হয়েছে?”
“আমি রাতে ওর খোঁজ করি।একটু কথা ছিল তাই।শুনি কিছু ফল আর জুস খেয়েই চলে আসে।বাবুকে নিয়ে খেলা করার তাড়াহুড়ো নাকি বেশি।কাল তো আমাদের জন্য পারেনি নিজের সন্তানকে সময় দিতে।তাই নাকি ছটফট করেছে।তাহলে গেলো কোথায়?”
“বাড়িতে তো যাওয়ার কথা না জিজু।”
“ঠিক আছে চিন্তা করো না আমি দেখছি ব্যাপারটা।”
রাজ বেরিয়ে কল দেয় পিয়াশের কাছে।রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না।রাজ আরেকটু এগিয়ে গিয়ে মায়ার কাছে যাবে তখন দূর থেকে একজন আয়া বলে,”ক্যান্টিন পরিষ্কার করার সময় এই ফল আর জুসের বোতল দেখলাম।এতগুলো ফল কেউ রেখে যায়?টাকার কি কোনো মূল্য করেনা এরা?”
আরেকজন বলে,”বড়লোক বাড়ির লোকজন ওরা।মন্ত্রীর বাড়ির তিনজন হাসপাতালে ভর্তি।এগুলো যার খাবার সে তো কেবিনে বসে খাবেনা বলে ক্যান্টিনে গেলো এগুলো নিয়ে।আসার সময় নিয়ে যায়নি হয়তো।”
“আমরাই খাই চলো।”
দুজনে চলে গেলো। পিয়াশ খাবারগুলো রেখে চলে যেতে নেয় কিন্তু যখন মনে পড়ে ওগুলো নিতে হবে পিছন ফিরতেই শুনতে পায় রাজ আর আদ্রর কথা।এগুলো শোনার পর মনটা বিষিয়ে গেলো।একমনে হেঁটে বাইরে চলে আসে।নিজেও জানে না ঠিক করেছে কিনা বউ বাচ্চাকে দেখে আসাটা।তার কাছে তখন ওটাই ভালো লাগছিল।একটু একা থাকা একটু নীরবে কান্না করা।সবার সামনে সম্ভব হয়না এভাবে থাকাটা।রাজ ওদের কথা শুনেও তেমন মাথা না ঘামিয়ে চলে যায় মায়ার কাছে।মায়া মাত্র উঠেছে। নার্স ওকে ফ্রেশ করে দিলো।রাজকে দেখে বলে,”শাশু মার অবস্থা কি?”
“তুমি ঠিক আছো এখন?”
“হ্যাঁ,আমি জানতে চাই মা তারপর আমার শাশু মা কেমন আছে?”
“ওনারা ভালোই আছে।কিন্তু ওনার সুস্থ হতে সময় লাগবে।”
“আমাদের বাচ্চাকে NICU তে নিয়েছে শুনলাম।আপনি কি ওকে কোলে নিয়েছিলেন মন্ত্রী মশাই?”
“আদর করছি এমনকি কানে আযান দিয়ে বলেছি আমাদের মেহরাজ সরদার।”
“মৌয়ের কি অবস্থা?”
“ভালোই আছে।”
“আপনার মনটা খুব খারাপ?”
“কই না এমনি টায়ার্ড লাগছে শুধু।”
“আমাকে বলুন মন্ত্রী মশাই।”
“মায়াবতী আমি আমার হারিয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজে পেয়েছি।”
“হারিয়ে যাওয়া ভাই মানে শাশু মা যে সন্তান হারিয়েছে তার কথা বলছেন?”
“হুম।”
“কোথায়?”
“এতগুলো বছর ধরে আমাদের সাথেই ছিলো এখনও আছে।মজার ব্যাপার হলো আমি তাকে আমার সবথেকে কাছের বলে সম্মান করি।কি ভাগ্য তার।এক পরিবারের হয়েও আমরা অচেনা ছিলাম।সম্পর্কটা ছিলো ভিন্ন কিন্তু দেখা হতো কথা হতো প্রতিনিয়ত।”
“কার কথা বলছেন?”
রাজ একটু হেঁসে বলে,”আজ থেকে মৌ শুধু তোমার বোন না তোমার জা হয়।”
মায়া চোখটা আওড়ালো রাজের মুখের দিকে।কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”তারমানে আপনার পিয়ু বেবী আপনার ভাই?”
“আমার ভাই যাকে কিনা আমি বেবী বলে নিজের মনের সব কথা শেয়ার করি।আমার বিপদে যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি।”
মায়া একগাল হেঁসে বলে,”কোথায় সে?এটা নিয়ে তো আমাদের সেলিব্রেশন করা উচিত।”
“রাতেই সবাইকে জানাতাম কিন্তু উনি অজ্ঞান হয়ে আছেন বাবা আছে মামার সাথে আর আমি ভেবেছিলাম রাতে পিয়ু বেবী তার বেবীর সাথে খেলা করছে এখন বিরক্ত না করি।সকালে জানাবো সবাইকে।তারপর হাসপাতালে ধুমধাম অনুষ্ঠান হবে।”
মায়া রাজের কথা সাথে তাল মিলিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,”এখনও আপনার পিয়ু বেবী?”
“সম্পর্ক বদলেছে শুধু ভালোবাসার জায়গাটা না।”
“আচ্ছা তারপর কোথায় গেলো আপনার পিয়ু বেবী হারিয়ে যাওয়া ভাই?”
“কোথায় যে গেল জানালো না।আমি তো আদ্রর সাথে ক্যান্টিনে ছিলাম।মূলত পিয়ু বেবী ব্লাড দেয় ওনাকে তাই আদ্র এই সুযোগে একটা ডিএনএ টেস্ট করে।ওহ আরো একটা সন্দেহ আছে।পিয়ু বেবীর বাবুর সাথে বাবার হাতের একটা জন্মদাগ মিলেছে।যেটা আদ্র দেখে ফেলে।তাই ডিএনএ টেস্ট করে দেখে ম্যাচ করেছে।আমিও কিছুক্ষণ ভাবতে ভাবতে ওখানে কিছু সময় কাটাই।এখানে এসে শুনি ও চলে গেছে তারপর তুমি পাগলামো করছিলে একটু।তোমাকে সময় দিলাম।সকালবেলা মৌয়ের কাছে গেলাম শুনি সারারাত পিয়ু বেবী ছিল না নাকি।ওদিকে আয়ারা বলাবলি করছিল ক্যান্টিনে গেছিল খাবার খেতে ওখানে খাবার রেখে চলে যায় কোথাও।”
মায়া প্রত্যেকটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলে,”আপনি বলতে চাইছেন কাল রাতেই ক্যান্টিনে খাবার খেয়েই বেরিয়ে যায় পিয়াশ।এক মিনিট ক্যান্টিনে তো আপনি আর ডক্টর আদ্র ছিলেন।তাহলে কি কোনোভাবে ও আপনাদের কনভারসেশন শুনেছে?”
রাজ সন্দিহান হয়ে বলে,”এটা তো ভেবে দেখিনি।”
“এখন ভাবুন না না আর ভাবতেও হবেনা এমনটাই কিছু হবে মন্ত্রী মশাই।আপনি একটা কাজ করুন। জিপিএস আছে না পিয়াশের?ওটাই লোকেশন দেখে ওর কাছে যান।আপনি খুব ভালো করে ওকে আগলে নিতে পারবেন।ওর এই সময়টা ভালো যাবেনা।ওর মধ্যেও কষ্ট বাড়বে।আপনি ওর মন ভালো করে দিন।”
“তুমি তাহলে বিশ্রাম নেও।আমি আসছি এখনই।”
“আচ্ছা যান।”
রাজ দৌঁড়ে চলে গেলো নিচে।নিজের গাড়িতে উঠে লোকেশন অনুযায়ী খুঁজতে থাকে পিয়াশকে।গাড়ি নিয়ে মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,”আব্বে পিয়ু বেবী অভিমান করে কোথায় যাবি?তোর ভাই আসছে তোর মান ভাঙাতে।”
গাড়ি চালাতে চালাতে একটা বড় ফাঁকা মাঠের পাশে এসে লোকেশন মিলল।গাড়ি থামালো রাজ।সামনে থেকে দূরবীন নিয়ে মাঠের দিকে চোখ স্থির রাখলো।দূরে মাটিতে শুয়ে থাকা এক যুবককে দেখা গেলো।চোখ খোলা নাকি মেলে রাখা বোঝা গেলো না।রাজ জানে এটা তার সেই ভাই।মৃদু হেঁসে দৌঁড়ে চলে গেলো সেদিকে।মনের মধ্যে একবারও দ্বিধা কাজ করলো না যে একজন মন্ত্রী দৌঁড়ে সাধারণ একটা পরিবেশে আসছে।সাদা পাঞ্জাবি ঘামতে থাকে।গাড়িতে এসি ছিল।গাড়ি থেকে বের হতেই গায়ে গরম বাতাস আসে আর কিছুক্ষণ পরেই ঘেমে যায়।শুয়ে থাকা পিয়াশের পাশে এসে বসে।খোলা নীল আকাশটার দিকে চোখ স্থির আছে পিয়াশের।পাশে রাজ বসতেই চোখ রাখে সেদিকে।কিছু বলতে নিবে রাজ বলে,”অল্পতেই ভেঙে পড়ে যদি পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে চাও,তবে একদিন নিজেকেই হারিয়ে ফেলবে এই ধরণীর বুকে।”
“স্যার আমি আসলে…
“বউ বাচ্চা রেখে বাইরে আসার সাহস হয় কিভাবে তোমার?বাচ্চাকে সময় দিবে বলেই তো ওই রাতে ছয় ঘণ্টার সেলাইন না নিয়ে অল্প কিছু খেয়ে বেড়িয়েছো।তাহলে আমাকে মিথ্যা বলে তুমি এখানে একা একা কেন প্রকৃতি বিলাস করবে?এত বড় ধোঁকা আমাকে দিতে পারো না তুমি পিয়ু বেবী।”
পিয়াশ কথা বলতে পারলো না।রাজ জানালো,”আমার একমাত্র শালী তোমার জন্য দুশ্চিন্তা করে পাগল প্রায়।বাচ্চাটাও তো বাবার জন্য অপেক্ষা করছে।নিজের জন্ম পরিচয় পেয়ে দুজনের দায়িত্ব ভুলে গেলে?”
পিয়াশ হা হয়ে আছে।রাজ জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,”এই পৃথিবীতে মানুষ কিছু না কিছু একটা তো হারাবেই।এটা কেমন যেনো একটা রহস্যময় ব্যাপার।আমরা যাকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিবো এই বলে যে,তুমি কি হারিয়েছো?সেই কিন্তু এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় করবে না নিজের হারিয়ে যাওয়া কোনো মুহূর্ত বা জিনিস প্রকাশ করতে।”
রাজের কপাল বেয়ে ঘাম।বুড়ো আংগুল দিয়ে ঘামগুলো একপাশে এনে হাতটা ঝাড়া দিলো।রুমাল আনেনি সে।রাজ আবারও বলে,”আমি আমার নামের পাশে সরদার উল্লেখ করে কাউকে বলিনা এর কারণ তো তুমি জানোই।তোমার কি মনে হয় আমার বংশের এই একটা নামই যথেষ্ঠ আমাকে সফল করতে?আদ্র,রুদ্র,আমার মায়াবতী এরা কেউ কিন্তু নামের পাশে সরদার নিয়ে ঘোরেনি।আমাকে দাদুর বানানো জন্মনিবন্ধনের জন্য সার্টিফিকেটে ওটাই নিয়ে চলতে হয়েছে কিন্তু আমার নাম কেউ জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি আমার শাহমীর রাজ।সরদার বললেই যে আমি সরদারের মত চলতে পারব এমন না।নিজেকে সফল করতে মনোবল শক্তি প্রয়োজন আরেকটা আশার হাত।যেটা আমি অনেক আগেই তোমাকে দিয়েছি।তোমার বাবাই তো দিয়েছে এই সুযোগ।মনে আছে তো সেইদিনের কথাটা?
যেদিন বাবা আমার কাছে তোমাকে এনে বলে,এই ছেলেটার মধ্যে অনেক মেধা।এই ছেলেটা পড়াশোনা করতে চায়।তুমি ওকে তোমার রাজনীতির সাথে রেখে ওকে পড়াশোনা করার সুযোগ দেও।আমি বাবার কথাতেই তোমার অভিজ্ঞতা দেখে রাজি হই।ভালো করে দেখো না চিনেও কিন্তু একজন বাবা তার সন্তানকে অন্যভাবে বিশ্বাস করে।তুমি এই সবকিছু ভুলে জাস্ট একটা ব্যাপার, যেটা তোমার জীবন থেকে অনেক আগে হারিয়েছে সেটা নিয়েই আহাজারি করছো।এতগুলো বছর ধরে গড়ে তোলা সফলতা নিয়ে কি তাহলে তোমার মধ্যে ভালো লাগা কাজ করেনা?নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যাওয়াটাতে কি তোমার সম্মানবোধ যোগায় না?
ভেবে দেখো একবার এগুলো।পরিবারের সহায়তায় বেড়ে ওঠাতে বেশি আনন্দ নাকি নিজ যোগ্যতায় নিজের জন্য সততার সাথে বেড়ে ওঠা বেশি আনন্দের?তুমি জগৎ চিনেছো।এটা একটা আলাদা অনুভূতি তোমার জীবনের।তুমি মিহিরের মত হওনি বরং তুমি আমার মত হয়েছো।শাহমীর রাজ খুব বেশি খুশি তার ভাই তার মত হয়েছে।যেমনটা আদ্র,রুদ্র ঠিক তেমন আমার আরেক ভাই। বংশ পরিচয় বড় কথা নয় বড় কথা নিজের যোগ্যতায় কিছু অর্জন করা।আমি চাই তুমি সেই যোগ্যতায় সবার সামনে মাথা উচু করে বাঁচো।আমি খুব খুব আনন্দিত তোমাকে আমার ভাইয়ের জায়গায় পেয়ে।”
পিয়াশ কান্না করে দিলো আবারও।এবার রাজের কাঁধে আপনাপানি মাথা গেলো তার।রাজ ঠোঁট প্রসারিত করে,”আজকে তোমার জন্ম হয়নি পিয়ু বেবী,আজকে তোমার মাধ্যমে তোমার বাচ্চার জন্ম হয়েছে।তাই এই নাকে কান্না তোমার বাচ্চার মুখে মানাবে তোমার মুখে না।”
পিয়াশ মাথা উচু করে রাজের দিকে তাকালো।রাজ হো হো করে হেসে দেয়।নিজে আগে উঠে পিছনে ঝাড়া দিয়ে পাঞ্জাবি ঠিক করে পিয়াশকে নিয়ে গেলো গাড়ির দিকে।
তিনদিন পর মৌয়ের রিলিজ করা হলো।সেলাইয়ের ব্যাথা কমেছে অনেকটা কিন্তু নড়াচড়া করা যাবেনা।একটু নড়লেই নাকি সমস্যা।পিয়াশ সবকিছু গুছিয়ে নেয়।মাহমুদ সরদারের কাছে এখনো জানায়নি রাজ।রাজের পরিকল্পনা ভিন্ন।মালিনী খানকে বাসায় নিয়ে একেবারে বাচ্চার নামের সাথে সরদার রেখে অনুষ্ঠান করবে।বলতে গেলে সারপ্রাইজ।পিয়াশ মৌকে আর বাচ্চাকে নিয়ে বের হতে নিলেই সিয়া দৌঁড়ে আসে রাজের কাছে।মায়াকে স্যুপ খাইয়ে দেয় রাজ।সিয়া দৌঁড়ে এসে বলে,”ভাইয়া তো ভাবীকে নিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছে।আমার কথা শুনছে না।বলল সরদার মহলে যাবেনা।নিজের যোগ্যতায় নিজের বাড়িতে থাকবে।তুমি এবার থামাও ভাইয়াকে।”
স্যুপের বাটি পাশে রেখে রাজ বলে,”এই ব্যাটা কি শুরু করলো?বউ সামলাবো নাকি ভাই!”
“মন্ত্রী মশাই!”
মায়ার ডাকে রাজ বলে,”একটা কাজ করো তোমরা আমার জন্য পাগলা গারদে জায়গা খালি রাখতে বলো।মন্ত্রী শাহমীর রাজ নিজের কাজ শেষ করে এসে পরিবারের চিপায় পড়ে কবে জানি পাগল হয়ে যায়।”
“উফ!শুধু উল্টো পাল্টা কথা।যান গিয়ে আটকান।আমার দ্বারা সম্ভব হলে আগেই যেতাম।এই কেনোলা আমাকে আটকিয়ে দিচ্ছে।”
রাজ উঠে এলো।মাহমুদ সরদার আছেন এখানে। পিয়াশের উদ্দেশে বলেন,”রাজ বলেছিলো তোমাদের সুরক্ষার জন্য আমাদের বাড়িতে থাকতে।তুমি কয়েকদিন আমাদের বাড়িতেই থাকো।”
“দরকার নেই।আমরা কিছু গার্ড রাখবো বাড়ির সামনে।তেমন কোনো সমস্যা হবেনা।”
“তুমি যেখানে মন চায় যাও কিন্তু আমাদের বংশের নেক্সট জেনারেশনের বড় পুত্রকে নিয়ে যেতে পারবে না।এটা মন্ত্রী শাহমীর রাজ ও সরদার বাড়ির বড় পুত্রের অর্ডার।”
মৌ ও মাহমুদ সরদার ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। পিয়াশ আমতা আমতা করে।কিছু বলার আগেই বরাবরের মতো রাজ আগেই বলে,”ওর নাম কি রাখবে ভেবেছিলে মৌ?”
“ঐতো পিয়াশের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে প্রলয়।”
“ওহ,প্রলয় সরদার।”
“প্রলয় সরদার!”
মাহমুদ সরদার বলে অবাক হলেন।বীর এসে দাঁড়ালো সাথে আদ্র ও রুদ্র।আদ্র বলে,”তুমি না সারপ্রাইজ রাখতে চেয়েছিলে?আজকেই জানিয়ে দিচ্ছো।”
সিয়া এগিয়ে এসে বলে,”ভাইয়া তো চলে যাচ্ছে।কিসব নিজের যোগ্যতায় থাকার ভূত চেপেছে মাথায় তার জন্য।”
“ওই ভূত আমি ওঝা ছাড়াই ছাড়িয়ে দিব।”
রাজ কথাটা বলতেই মাহমুদ সরদার অতিষ্ঠ হয়ে বলেন,”আরে হচ্ছেটা কি?”
“আরে বাবা তোমার বড় নাতিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে তোমার ছোট ছেলে।”
“আরে কে আমার বড় নাতি আর কে আমার ছোট ছেলে?”
“ওই যে ওই হতচ্ছাড়া আমার পিয়ু বেবী।ওটাই তোমার হারিয়ে যাওয়া ছেলে।যে কিনা সারপ্রাইজ পার্টি করতে দিলো না আমাকে।”
“আসলে মৌয়ের রিলিজ হয়েছে।আমাদের তো বাসায় যেতে হবে।আপনাদের বিরক্ত করতে চাইনি।”
রাজের কথা শুনে মাহমুদ সরদার ঝটকা খেলেও পিয়াশের দিকে তাকিয়ে ছিল।কিন্তু পিয়াশ যখনই কথাটা বলে ওমনি এগিয়ে এসে পিয়াশের কান মোলা দিয়ে বলেন,”এই যে হতচ্ছাড়া!আমার কাছ থেকে আমার নাতিকে নিয়ে যাওয়ার সাহস আছে কিভাবে?আমি কিন্তু উকিল।সোজা নাতিকে দূরে রাখার জন্য মামলা দিয়ে দিবো।”
পিয়াশ অবাক নয়নে চেয়ে আছে।মাহমুদ সরদার জড়িয়ে ধরে বলেন,”আমার আরেক রত্ন যাকে আমার দুই নয়ন কতগুলো বছর ধরে খুঁজে বেড়াতো।আজ আমি তোকে আমার সাথে মিশে রাখবো।”
রাজ মৃদু হেসে বলে,”এতে কি কমতি মোচন হবে বাবা?”
“না হলেও প্রশান্তি মিলবে।”
সবাই হাসলো একসাথে।রুদ্র আফসোসের সাথে বলে,”সবার সব হিসাব মিলছে আমারটাই কেন মিলছে না এখনও?হিয়াপাখি আসবে কবে?”
সরদার মহলে বসে সমস্ত ফুটেজ পরখ করছে বিভান খান।তার কাছে খটকা লাগছে অনেক বিষয়েই।সোনালীর বিষয়ে কোথাও কোনো খোঁজ পাচ্ছে না এটাই দুশ্চিন্তার।ব্লুপ্রিন্ট খুঁজতে গিয়ে সোনালী নিজেই উধাও।ব্যাপারটা সন্দেহজনক।অনেক ভেবে পৌরসভায় কল দিলো বিভান খান।ওপাশ থেকে ধরতেই তিনি তার পরিচয় দেন।সরকারি কর্মকর্তা হলেও বিভান খানের ক্ষমতার জোরে তারা সবকিছুতে সহযোগিতা করবে। বিভান খান জানায়,”সরদার মহল তৈরির সময় যে ব্লুপ্রিন্ট থাকে ওটার অরজিনাল কপি উঠিয়ে দিতে পারবেন?”
কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটির পর জানায়,”দুঃখিত স্যার অরজিনাল কপি আর্কিটেক নিজের কাছে রাখেন কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার কারণে ব্লুপ্রিন্ট আমরা দিতে পারছি না।”
হাত মুষ্ঠী করে বিভান খান রাগে গজগজ করতে করতে বলেন,”আমি জানি বলেই তো সোজা তোর কাছে কল করেছি।আমার কাছে এই বাড়ির ব্লুপ্রিন্ট প্রয়োজন।”
“আপনি ঐ বাড়ির মালিকের কাছ থেকে কপি প্রিন্ট নিলেই তো পারবেন।”
“এই বাড়ির মালিক ইজি ইজি আমাকে ব্লুপ্রিন্ট দেখাবে না এমনকি মালিকের নিজের কাছেও ব্লুপ্রিন্ট নেই।আমাকে নতুন একটা প্রিন্ট বের করে দে।”
“সময় লাগবে স্যার।উপকারে আসে যদি আপনি ঐ বাড়ির একটি বিদ্যুৎ বিল বা ব্যাংকের লেনদেন করা কোনো কাগজ দেন।”
“আমি ব্যাংকের করা কাগজ দিচ্ছি।”
বলেই কল কেটে সোনালীর ঘরে যায়।মোহন সরদার নেই সেখানে।ব্যাংকের লেনদেন করা কাগজ নিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলো।ঘণ্টা দুই পর কল আসলো বিভান খানের কাছে।ধরতেই জানায়,”আমি কয়েকবার চেষ্টা করলাম প্রিন্ট উঠানোর কিন্তু ওটা ইরোর দেখাচ্ছে।এখানে কিছু গড়বড় আছে।”
ভ্রু কুঁচকে বিভান খান বলেন,”ভালো করে দেখে জানা।”
কিছুক্ষণ পর আবারও বলে,”একচুয়ালি স্যার অরজিনাল ব্লুপ্রিন্ট আপনাদের ওখানেই কেউ নিয়েছে।নাম মালিনী খান নামে।আজ থেকে ঠিক সতেরো বছর আগে।”
কপাল কুঁচকে বিভান খান বলেন,”কি নাম?”
“মালিনী খান,সই আছে ওনার।সরদার মহলের পুরোনো কাগজে পাওয়া গেছে।”
“বাড়ির মালিক শাহমীর রাজ আর মোহনা সরদার দুজন ব্যাক্তি।তাহলে মালিনী খান কিভাবে ব্লুপ্রিন্ট নিজে নিবে?”
“বাড়ির মালিক শাহমীর রাজ হলেও তিনি তখন প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন না।তার অনুপস্থিতিতে তার বাবা মা এসবের দায়িত্বে থাকবেন।এজন্যই শাহমীর রাজের মা হিসেবে মালিনী খান ব্লুপ্রিন্ট নিয়েছেন।”
“শাহমীর রাজের মায়ের নাম রোহিনী খান।”
“বাট স্যার মাহমুদ সরদারের সেকেন্ড ওয়াইফ হিসেবে তিনিই তো শাহমীর রাজের লিগ্যাল গার্জিয়ান।”
ফোন কেটে দেয় বিভান খান।মাথা ছিঁড়ে আসছে রাগে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।মালিনী খান যদি ব্লুপ্রিন্ট উঠিয়ে নিজের কাছে রাখে তাহলে সেই ব্লুপ্রিন্ট কোথায়?এতদিন নিজের কাছে রাখলো কেন?সন্তান হারানোর ভয় কি ছিলো না?ভাবতে ভাবতে মালিনীর ঘরে যায়।সুযোগ বুঝে লকার খুলে কিছু কাগজ ঘাটছে।নাহ এখানেও তো ব্লুপ্রিন্ট নেই।সন্দেহের পরিমাণ বাড়লে তিনি চলে যান ফ্ল্যাশব্যাকে।সতেরো বছর আগে মালিনী খানকে একবার ধরেছিল সোনালী।শাহানা পারভীনকে পালাতে সহায়তা করে তাই।তাহলে কি ওই সময় শাহানা পারভীনের কাছে চলে যায় ব্লুপ্রিন্ট?এই মালিনী খান তাহলে ডাবল গেমিং করছিল!রাগে হিসহিস করতে করতে আবারও ফুটেজ চেক করেন।এবার আইটি টেকনিশিয়ান দিয়ে চেক করান।কিছুক্ষণ দেখার পর লোকটি বলে,”এখানে কিছু ফুটেজ ডিলিট করে দেওয়া আছে।”
“হোয়াট?”
“জি স্যার,আমরা সময়ের সাথে মেলালে দেখতে পারি অধিকাংশ ফুটেজ ডিলিট করা ইনফ্যাক্ট এটা সময়ের কাজ সময়ে করা হয়।”
“কে করতে পারে?মালিনী একা এতটা!আজ ওর দিন শেষ।”
এরমাঝে খট করে একটি শব্দ আসে।বিভান খান শব্দ পেয়ে পিছনে ফিরে কাউকে দেখতে পায়না।কেউ তো ছিল?কোথায় গেলো সে?কিছুক্ষন পর সেখানে উপস্থিত হয় তাজ।মিহিরের মত করে বলার চেষ্টা করে,”কি হয়েছে বাবা?”
রুবি আড়ালে আছে। বিভান খান বলেন,”মালিনী আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছে।ব্লুপ্রিন্ট অনেক আগেই উঠিয়ে ও সরিয়ে রেখেছে।ওই আসলে সোনালীকে গুম করে রেখেছে।মিহির খুব সাবধানে খেলতে হবে এবার।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬৩+৬৪
“কি করতে হবে?”
“এবার মালিনীকে আক্রমণ করতে হবে।”
রুবি ভিডিও করে পাঠালো মায়ার কাছে।মায়া ভাবছে মালিনীর সাথে কথা বলবে।ব্লুপ্রিন্ট কোথায় এটা মালিনী এখন তাকে বলবে।কারণ মায়া যে আসল মোহনা।
