মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৮
ইশরাত জাহান
হিয়া সকাল সকাল উঠে বই হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে আছে।বই পড়ার জন্য না।পরিবেশ দেখছে।চশমা চোখটা চারিদিকে বোলাতে থাকে হিয়া।চোখটা যখন সুইমিং পুলের দিকে যায় দেখতে পায় রুদ্রকে। জিম করছে ছেলেটা।সেন্ড গেঞ্জি পরা আর জিন্স।সুইমিং পুলের গা ঘেষে উবুর হয়ে দুই হাত ফ্লোরে চেপে ধরে টানটান হয়ে ব্যায়াম করছে এখন।লম্বা চওড়া স্বাস্থ্যকর শরীর যেনো মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম।হিয়ার মনটা তো কবেই জয় করে নিয়েছে কিন্তু হিয়ার মনের দহনে মেটায়নি এই লোকটা।হিয়া কষ্ট পেলো খুব।সেদিন যখন সে রুদ্রকে দেখেছিল একটা মেয়ের হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকতে খুব কষ্ট হয় তার।
এরপর ভ্যালেন্টাইন ডে এর দিন হিয়া ভেবেছিলো রুদ্রকে প্রোপোজ করবে।কিন্তু পারলো না মেয়েটা।রুদ্র একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে জনসম্মুখে একটি মেয়েকে প্রপোজ করছে।মেয়েটিও তাকে একসেপ্ট করে নিলো।এটা দেখে আহত হয় হিয়া।এরপর আবার আরেকটি মেয়ের সাথে ডেট করতে দেখেছে রুদ্রকে।আবার একদিন মদের আড্ডায় কিছু ছেলেদের সাথে দেখে হিয়ার মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয় রুদ্রের প্রতি।হিয়ার চশমা পড়া চোখটা দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়তে থাকলো।সে আহত রুদ্রের এমন ব্যবহারে।এমন কেন তার ভালোবাসার মানুষটা?এখন আবার হিয়া দূরে দূরে থাকতে চায় তো এই লোকটা দূরে যায়না।বরং বেহায়াপনা করে তার সাথে।হিয়ার ভাবনার মাঝেই দূর থেকে রুদ্র বলে,”হিয়াপাখি।”
হিয়ার মনটা শীতল হয়ে আসে।চোখটা রুদ্রের দিকে যায়।রুদ্র হাসি হাসি মুখ করে বলে,”সকাল সকাল বই নিয়ে বসেছিস?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপনার মত একাধিক নারী নিয়ে ব্যস্ত থাকলে বুঝি খুশি হতেন?”
“তুই কেন নারী নিয়ে ব্যাস্ত থাকবি?”
“সেই তো!আমি তো পুরুষ নিয়ে ব্যাস্ত থাকব।”
“ব্যাস্ত থাকার আগে তার অ্যাড্রেসটা আমাকে দিয়ে দিস।”
“কেন?”
“তাকে হসপিটালে এডমিট করার ব্যবস্থা আমি করে দিবো।নো ট্যানশন ফ্রীতে চিকিৎসা হয়ে যাবে কারণ আমার ভাই আবার খুব দয়ালু।”
“আফসোস আপনিও যদি আদ্র ভাইয়ের মত শুদ্ধ পুরুষ হতেন!”
“সব পুরুষকে শুদ্ধ হতে নেই।নারীদের আঘাত করার জন্য হলেও একটা নষ্ট পুরুষ দরকার।”
“হৃদয়হীন নষ্ট পুরুষ।”
“হিয়াপাখির নষ্ট পুরুষ।”
হিয়া চলে গেলো ভিতরে। আর উত্তর দিলো না।নির্লজ্জ মন তার।এক পলক দেখার জন্য সকালবেলা টেনে নিয়ে আসে।দেখা শেষ এখন লাইব্রেরির দিকে যাবে।
বিয়ের পর সরদার বাড়ির বউদের জন্য নিয়ম আছে।এটা হলো নতুন বউ হয়ে যেকোন এক ধরনের রান্না করবে।রাজ এখন পিয়াশের সাথে মিটিং রুমে ব্যাস্ত আছে।বিরোধী দলের সাথে নাকি তার দলের একজন যোগ হয়েছে।সাথে করে রাজের নাম করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে।আরও কিছু কথাবার্তা নিয়ে বসেছে রাজ ও পিয়াশ।এদিকে মায়া শাড়িটা ঠিক করে নিজেকে পরিপাটি করে নিচে নেমেছে।মায়াকে দেখে মালিনী বলে,”বাড়ির নতুন বউদের কিছু নিয়ম আছে।”
মায়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তার দাদাজানের আলিশান আসন যেখানে বসার সাহস রাজ ব্যতীত এই বাড়ির কেউ অব্দি দেখায়না সেখানে গিয়ে বসলো।মালিনী যদিও অবাক হয়ে যায় কিন্তু ওখানে উপস্থিত সোনালী আর মোহন সরদার যেনো রেগে ফেটে যাচ্ছে।এই বাড়ির রাজকীয় আসন এটা।যেখানে বসার অধিকার রাখে এই বাড়ির প্রধান ব্যাক্তি।মায়া কাল আসতে পারল না আজকেই এখানে বসেছে দেখে রাগ মাথায় চেপেছে সবার।এমনটাও না যে তাকে কেউ আহবান করেছে বসার জন্য।মোহন সরদার কিছু বলতে যাবে তার আগে মায়া অগ্নি দৃষ্টি দিলো তার দিকে।তবুও মোহন সরদার থেমে থাকেনি।তেড়ে আসার সাথে বলতে থাকে,”আমার বাবার আসনে বসার সাহসিকতা আসে কিভাবে তোমার?”
মায়া ঠোঁটটা তিরস্কারের ভঙ্গিতে করে বলে,”বাবার কোন কথাটা রেখেছেন আজ অব্দি যে এভাবে বাবার সুপুত্রের পরিচয় দিচ্ছেন?”
“বড় হই আমি তোমার।এই বাড়িতে আরো গুরুজন আছে।এই আসনে বসার অধিকার তুমি রাখো না।এখানে বড় ভাই নাহলে রাজ বসবে কিন্তু তুমি না।”
“শাহমীর রাজের বউ আমি।স্বামীর স্থানে তো বউয়ের অধিকার সবার আগে।সেই অধিকার কাল আমাকে আমার স্বামী নিজে দিয়েছে।”
“আমাদের ছেলেটাকে ভালোই তো বস করেছো তুমি।”
সোনালীর থেকে এমন কথা শুনে মায়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”রিয়েলী কাকি শাশু মা!স্বামীকে বউয়েরা বস করে এটা তো আমি জানতাম না।হ্যাঁ এমনটা যদি হতো যে শাহমীর রাজের বউ না হয়ে রাস্তার মেয়ে হতাম আর সেই রাস্তার মেয়ে হয়ে অন্যের স্বামীর দিকে ডাইনির নজরে নিজের করে পেতাম তাহলে মানতাম এটাকে বস করা বলে।সরি বাট নো সরি আমি পরের বরের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি দেইনা।আর আমার কাছে এমন কথা ওই ধরনের মহিলা বলতে পারে যারা এমন নোংরা ধরনের।”
মায়ার কথার মাঝে যে তার অতীত প্রকাশ পায় এটা সোনালী স্পষ্ট।সোনালী ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ।মনে মনে ভাবছে,”কে এই মেয়ে?কি পরিচয় তার?কিভাবে জানলো এতকিছু নাকি কিছু আন্দাজে উপর অনুমান।”
মোহন সরদার এসেই মায়ার হাত ধরে এটা দেখে মায়াও কোনো একশন নিবে তখন তার চোখ যায় মিটিং রুমের দিকে।রাজ বেরিয়েছে মাত্র দরজা দিয়ে।এটা দেখেই মায়া ডেভিল হাসি দিয়ে নিজেকে নিজেই মোহন সরদারের হাতের মাধ্যমে ধাক্কা মারে।ফলস্বরূপ রাজকীয় আসনের উপর উল্টোভাবে পরে মায়ার কপালে চোট লাগে।মায়ার কপাল ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।মায়ার কাছে এই ব্যাথা কিছুই না যেটা ও ওর অল্প বয়সে পেয়েছে।সেই তিক্ততা সহ্য করতে পারলে এটা তো তার কাছে কিছুই না।মায়া নাটকীয় ভঙ্গিতে কান্না করে দেয়।চিল্লিয়ে বলে,”আঃ,একটু কিউরিসিটি নিয়ে নাহয় বসেছিলাম এই চেয়ারে।স্বামীর অধিকার নিজের অধিকার ভেবে।এর জন্য আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে..”
মায়া উল্টো দিকে থেকেই কান্নার অভিনয় করে।রাজ যদিও বুঝতে পেরেছে কিন্তু সেও ইনজয় করছে।তার মায়াবতীর একেক সময় একেক রূপ দেখতে তার কাছে ভালোই লাগে।এই তো বাসরে তার গলায় ছুরি ধরেছিল এখন কি না নিজেকে আঘাত করার নাটক সাজিয়েছে।মায়া কান্না করে বলে,”আমার অপরাধ এটাই যে আমি একজন মৃত ব্যক্তির স্মৃতি জড়িত আসনে বসেছি?”
মাহমুদ সরদার মাত্র ঘর থেকে বের হলেন।এতক্ষণ তিনি গ্রামের বাড়ির লোকেদের খোঁজ খবর নিতে ব্যাস্ত ছিলেন।এসেই মায়াকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে তিনি গটগট পায়ে এগিয়ে এলেন।মায়ার হাত ধরেই উঠিয়ে দাঁড় করালেন।মায়া দাড়াতেই ওর কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত দেখা গেলো।এতক্ষণ উল্টো দিকে থাকার কারণে এই রক্ত দেখা যায়নি।রাজ অবাকের সাথে এগিয়ে আসে।মায়ার অভিনয়কে মাথায় না রেখে রাজ নিজে থেকেই মায়াকে আসনে বসিয়ে দেয়।গলা উঁচিয়ে সার্ভেন্টকে বলে,”ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসো।”
সার্ভেন্ট বক্স এনে রাজের হাতে দেয়।মাহমুদ সরদার গভীরের খবর জানেন না তবে শেষের কথা শুনে এটুকু আন্দাজ করেছেন যে এই চেয়ারে বসার কারণেই মায়ার এই অবস্থা।মাহমুদ সরদার চোখ বড় বড় করে মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে বলেন,”কোন সাহসে তুমি আমার বউমাকে অপমান করো?”
রাজ মায়ার কপালে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।এদিকে মায়ার চোখটা সোজা মোহন সরদারের দিকে।তাকে অপমানিত হতে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে মায়ার।তাই মনে মনে শয়তানি হাসি রেখে কান্নারত ঠোঁটে বলে,”আমি এই বাড়িতে থাকব না।”
মাহমুদ সরদার মায়ার দিকে ফিরে বলেন,”কেন মা?”
“সত্যি বলতে কাল আপনাদের বলিনি বাড়াবাড়ি কিছু হয়ে যাবে তাই।কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি।আমি যখন বাড়িতে প্রথম পা রাখি ওখানে আমি পড়ে যাওয়ার পর কেরোসিনের গন্ধ পাই।এখন ফ্লোরে কেউ নিশ্চয়ই কেরোসিন রাখবে না?আবার এই বাড়িতে আমাকে নিয়ে যদি কারো বেশি সমস্যা থাকে তো সে এই মোহন সরদার আর তার স্ত্রী।এমনিতেই অপমানের উপর অপমান করেই যাচ্ছে তার উপর আবার আজ আমাকে..”
মায়ার কান্নার পরিমাণ বেড়ে গেলো।মাহমুদ সরদার এবার মোহন সরদারের দিকে ফিরে চোখ রাঙ্গালেন।রাজ এবার মায়ার কানের কাছে মুখটা নিয়ে বলে,”মায়াবতীকে এভাবে নাটকবতী সাজে মানায় না।কেমন যেনো ওভার এক্টিং লাগছে।ভাগ্যিস বাবা আমার মাসুম বাচ্চা তাই তোমার নাটকে ফেঁসে গেল।তোমার বর হয়ে আমি এই ভুল একদম করিনি মায়াবতী।”
মায়া চোখটা লাল রক্তিম করে তাকালো রাজের দিকে।রাজ একটা উড়ন্ত চুমু দেখিয়ে মুখের উপর হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলো এখন সে মুখটা বন্ধ করে রাখবে।খেলা তো বউ দেখিয়ে দিলো খেলছে এখন বাবা।বর হয়ে এতে পার্টিসিপেট করার সুযোগটা পাচ্ছেই না।মাহমুদ সরদার ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলেন,”তুমি ওর থেকে বড় তাই তোমাকে দিয়ে আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইতে বলতে পারিনা।বড় ভাই হিসেবে একটা আদেশ দিতে চাই।আমার ছেলের সংসারে আগুন লাগাতে এসো না তুমি আর তোমার বউ।”
মোহন সরদার কিছু বলতে নিবে তার আগে সোনালী বলে ওঠে,”আপনার বউমাকে যে এত আশকারা দিচ্ছেন মেয়েটা কে কার সন্তান এগুলো খোঁজ জানেন নাকি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না?আজকাল কত টেরোরিস্ট ঘুরে বেড়ায় জানেন?এই মেয়ে যে নিজে কুচক্র চালাবে না এর কি গ্যারান্টি?”
“আমার ছেলেটা মন্ত্রী এমনি এমনি হয়নি।যথেষ্ট ভালো মন্দ বোঝার মত জ্ঞান বুদ্ধি নিয়েই সে জনগণের দায়িত্ব নিয়েছে।যেখানে বিষয়টা তার বউয়ের সে নিশ্চয়ই ভালো জানবে সবকিছু।”
সোনালী চুপ করে গেলো।মাহমুদ সরদার মুখ খোলার লোক না।এই মায়ার কারণে যেনো তার মুখে বুলি ফুটেছে।এই পর্যন্ত সে তার চোখে দেখেনি আবার কানেও শোনেনি যে মাহমুদ সরদার কড়া কথা বলতে পারেন।মোহন সরদার এবার মুখ খুলল।রাগ দেখিয়ে বলে,”ভুলে যেও না ভাই এই আসনে বসার অধিকার বাবা দুজনকে দিয়েছিলো।যার জন্য এখানে এই মেয়ের বসাটা আমি আপত্তি করতেই পারি।”
“বাবা কাদেরকে এখানে বসার অনুমতি দিয়েছিল?”
“একজন তার রাজ আরেকজন…”
বলতে চেয়েও মুখটা আটকে গেলো মোহন সরদারের।মাহমুদ সরদার ভাইয়ের চোখে চোখ রাখলেন।কথাটা যেনো মোহন সরদারের গলায় আটকে আছে।মায়া অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে শেষ নামটা শোনার জন্য।মোহন সরদারের চোখ দিয়ে যেনো পানি আসতে নেয়।যেটা দেখে মায়ার মনটা জ্বলতে শুরু হয়।নাটকের থেকে কম কিছু তার কাছে লাগছে না।মাহমুদ সরদার বলেন,”কি হলো বলো আরেকজন কে?”
মোহন সরদার করুন চোখে তাকালো।মাহমুদ সরদার হেঁয়ালি করে বলেন,”যার জন্য এত দয়া মায়া মনে পুষে রেখেছো তাকেই তুমি হারালে।না তুমি তাকে হারানোর সুযোগ দিতে আর না তোমার অস্তিত্ব তোমার থেকে হারিয়ে যেতো।”
মোহন সরদার নিজেকে শান্ত করে বলে,”মানলাম মোহনা মারা গেছে তাই ওকে এখানে আনা সম্ভব না কিন্তু রাজ তো আছে।এখানে রাজের বউ বসার অধিকার রাখে কিভাবে যেখানে মোহনা হারিয়ে যাওয়ার পর রাজ এই আসনে বসতে নারাজ।”
মাহমুদ সরদার একবার মায়ার দিকে তাকালেন।সেই সাথে মায়াকে দেখছে রাজ।মায়ার মনের মধ্যে কি বইছে এটা এরা দুজন খুব ভালো করেই জানে।রাজ চাইলেও এখন মায়াকে নিজের বক্ষে স্থান দিয়ে শান্তনা করতে পারবে না।কারণ মায়া খুবই চালাক। সে বুঝে যাবে রাজ কেন তাকে আগলে রাখতে চায়।রাজ জোরে গলায় ডাক দিলো হিয়াকে।হিয়া উপন্যাসের বইতে ডুবে ছিলো।কোনোদিকে তার নজর নেই।রাজের এমন জোরে ডাক শুনে সে চলে আসে।মায়ার কপালে ব্যান্ডেজ দেখে বলে,”কি হয়েছে ভাবীর?”
“ওকে নিয়ে ভিতরে যা।”
হিয়া এসে মায়াকে নিয়ে যেতে নেয়।মাহমুদ সরদার তখন মোহন সরদারের উদ্দেশ্যে বলেন,”নিজের মেয়েকে তুমি নিজের কুকর্মের কারণে হারিয়েছ।কর্মের ফল বাতাসে নড়ে।তোমার কর্ম তোমাকে আজ ব্যার্থ করে দিলো।তোমার নিজেরও একটা ছেলে সন্তান আছে তবুও তোমার তাতে কোনো সুযোগ সুবিধা নেই।মোহনা সরদার যদি জীবিত থাকতো তাহলে বুঝতে তোমার জীবন কতটা আলোকিত থাকতো।আজ সুন্দরী ফর্সা বউ আর ছেলে সন্তান থেকেও সেই আলোকিত জীবন তুমি পেলে না।ভাই হয়ে তোমার প্রতি আমার করুণা জাগে।সব কথার ঊর্ধ্বে একটাই কথা এই আসনে বসার অধিকার শাহমীর রাজের বউ মেহেরুন জাহান মায়া রাখে।এই নিয়ে দ্বিতীয় অভিযোগ আমি শুনব না।”
মায়ার পা যেনো আটকে যায় যখন সে শোনে মোহনা সরদার মারা গেছে।নিজেকে জীবিত রেখেও মৃত বানাতে হয়েছে তাকে।হিয়া বলে ওঠে,”কি হলো ভাবী?”
মালিনী এবার ওদিকে তাকিয়ে বলে,”আচ্ছা কথা তো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সরে যাচ্ছে।আমি বলতে চেয়েছি এক কথা এখানে আসলো অন্য কথা।”
মাহমুদ সরদার মালিনির দিকে ফিরতেই মালিনী বলে,”মায়া এই বাড়ির নতুন বউ।ওকে কিছু রান্না করে খাওয়াতে হবে।”
মাহমুদ সরদার বলেন,”ওর কপালের যে অবস্থা ও এখন কিভাবে রান্নাঘরে যাবে?”
“দেখো আমি তো ওকে ভারী খাবার রান্না করতে বলছিনা।আমি বলেছি ওর পছন্দ মত।ও যেটা পারে ওটাই রান্না করে দিবে।”
সবাই মায়ার দিকে তাকালো।মায়া বলে,”কি রান্না করতে হবে আমাকে?”
মালিনী ভেবেচিন্তে বলে,”যেহেতু তুমি এখন রান্না করার মানসিকতায় নেই তাই সহজেই রান্না যায় এমন রান্না করো।হালিম রান্না করতে পারো।ওটা তো প্যাকেটেই সব আছে শুধু মাটন কষিয়ে গরম পানিতে মিশিয়ে হাকিম মিক্স করতে হবে।”
মায়া রাজি হয় রান্না করতে।হিয়া যেতে নেয় মায়ার সাথে কিন্তু বাধা দিল মালিনী।বলে,”ওকে কেউ সাহায্য করবি না।”
মায়া মৃদু হাসলো।সে এই বাঙালি রান্না পারবে না এটা কোনো কথা?সে তো আশ্রমের লোকের জন্য একেক সময় একেক রান্না করে।হালিম রান্না বেশ কয়েকবার করেছে।এখন মডার্ন হয়ে থাকা মানেই সবাই মনে করে রান্নাবান্নায় মেয়েরা পিছিয়ে।রাজ বিড়বিড় করে মাহমুদ সরদারের কানে কানে বলে,”তোমার এই সেকেন্ড বউ আমার ফার্স্ট বউকে এত খাটিয়ে মারতে চায় কেন বাবা?”
মাহমুদ সরদার যে এতক্ষণ তার বউয়ের হয়ে প্রতিবাদ করলো এগুলোর জন্য একটা থ্যাংকস সে তো পেলো না অথচ এখন যেই মালিনী মায়াকে কথা শুনিয়ে দিলো ওমনি ছেলে তাকে কানে কানে খোচা মারছে।মাহমুদ সরদার আফসোসের সাথে বলেন,”ওটা তোমার সেকেন্ড মাকেই জিজ্ঞাসা করো।আমি তো তার মনের কাছে কান পেতে নেই যে সব জেনে যাবো।”
“এই তোমাদের অত্যাচারে আমার বউ আমাকে ভালবাসবে না।তখন তোমাদের একেকজনের নামে আমি মামলা করব বলে দিলাম।”
“তুমি তোমার বউয়ের জন্য বাবা মাকে জেলে ঢুকিয়ে দিবে?”
“মন্ত্রী হিসেবে বউয়ের প্রতি এটা একটা কর্তব্য।নারী নির্যাতন সোজা মন্ত্রীর বউয়ের উপর এটা জনগণ জানলে আমার মান সম্মান থাকবে বলে তোমার মনে হয়?এর থেকে ভালো যে তোমাদের নামে মামলা দিয়ে নিজেকে লয়াল প্রমাণ করা।”
“তোমার মত ছেলেকে লয়াল ভাবতেই আমার বিবেকে বাধে।”
“ওই বিবেকের দরজাটা একটু বড় করো।তাহলে দেখবে বিবেকে কিছুই বাঁধবে না।”
মাহমুদ সরদার কিছু না বলে চলে গেলেন নিজের ঘরে।এখন আবার মায়ার রান্নার জন্য অপেক্ষা।মায়া চলে গেছে রান্নাঘরে।কোমড়ে শাড়ি গুজে রেখেছে মায়া।কেবিনেট থেকে রান্নার জিনিসগুলো নিয়ে রান্না চাপালো।কিছু একটা ভেবে একটা বড় হাঁড়িতে দুধ ঢালতে লাগলো।পোলাও চাল ধুয়ে পাশে রাখলো।ইচ্ছা করছে পায়েশ রান্না করবে।খুব খুশি সে একটার পর একটা বাজিমাত করে।রান্নার মাঝেই মায়া অনুভব করলো তার কোমড় দিয়ে একটা বলিষ্ঠ হাত চলে যাচ্ছে।মায়া জানে এটা কার হাত।মায়া পিছন ঘুরে বলে,”রান্না করছি আমি।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৭
“হালিম রান্না করতে বলেছিল পায়েশ কেন?”
“ইচ্ছা হলো।কেন আপনার আপত্তি আছে?”
“অফ কোর্স নট।”
বলেই রাজ মায়ার কপালের ব্যান্ডেজের দিকে তাকালো।মায়া রাজের দিকেই চোখ আবদ্ধ রেখেছে।রাজ মায়ার কপালে ব্যান্ডেজের উপর ঠোঁটটা ছুঁয়ে গুণে গুণে সাতটা চুমু দিল।আরও কয়েকটা দিতে যাবে তখনই সেখানে আসলো মিলি।মিলি ফোনে কথা বলতে বলতে ঢুকছে তাই রাজ বুঝে যায় আর দূরে সরে বিড়বিড় করে বলে,”আমার সংসারের দুশমন।”
