মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৯

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৯
ইশরাত জাহান

মিলি রান্নাঘরে প্রবেশ করে মায়া ও রাজকে দেখে হেসে দিলো।কান থেকে হেডফোন খুলে গলায় ঝুলিয়ে বলে,তুমিও আছো ব্রো?”
“কেন আমার বউয়ের কাছে আমাকে থাকা বারণ নাকি?”
“এটা শিওর জানি না কিন্তু তোমার বউকে পাহারা দেওয়ার হুকুম আছে।”
“কে পাহারা দিতে বলেছে?”
“কাকী আর মম।”

মায়া কোনো রিয়েকশন না দেখিয়ে দুধে চিনি ঢালতে থাকে।অন্য পাত্রে পোলাও ফুটিয়ে নিলো।মিলি পায়েসের ঘ্রাণ পেলো।চোখ বন্ধ করে বলে,”আহ কি সুন্দর ঘ্রাণ।কিন্তু মম যে বলল তুমি হালিম রান্না করবে।”
“ভাবলাম আজকে একটু পায়েশ রান্না করি।প্রথম এন্ট্রি সরদার বাড়িতে তাই।”
রাজ চলে গেলো।মিলি ওর মত ফোন টিপছে।মায়া নিজের মত করে রান্না করছে।হালিম রান্না শেষ করে পাশেই রেখেছে।মিলি তার মত ব্যাস্ত ফোনের দিকে।মায়া একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার রান্নায় মনোযোগ দেয়।কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে ঝালের গুঁড়ার কৌটা হাতে নেয়।সমস্ত ঝাল হালিমের সাথে মিক্স করে দিলো মায়া।মনে মনে বলে,”আমার মাকে যেভাবে তিলেতিলে অত্যাচার করে বের করেছিলেন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে।আমিও ঠিক তাই করব।তবেই না আমার কলিজা ঠান্ডা হবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়ার মুখে ভয়ংকর হাসি।পায়েশ রান্না শেষ করে মিলির দিকে ফিরে বলে,”আমি সবাইকে ডেকে আসি।”
“এই না না আমি যাচ্ছি।তুমি টেবিলের কাছে যাও।”
“তাহলে তুমি বাসার সবাইকে ডাকো আমি মন্ত্রী মশাইকে ডেকে আনি।”
মিলি মৃদু হাসলো।মায়া উপরে চলে গেলো।ঘরে ঢুকে দেখল রাজ বিষন্ন মনে বসে আছে কিছু ফাইল নিয়ে।মনে হচ্ছে কোনো একটা কাজে সমস্যা তার।হয়তো বিষয়টা নিয়ে মায়া জানে।তাই তো রাজকে বিষন্ন দেখে মায়া হাসলো।একদিকে রাজের বদনাম আরেকদিকে সোনালী ও মোহন সরদারের অপমান এই দুটো দিয়েই তো সে এখন মজা নিবে।মায়া ঘরে প্রবেশ করে বলে,”খাবার তৈরি মন্ত্রী মশাই।”

রাজ ঘুরে তাকালো মায়ার দিকে।এখনও কোমড়ে শাড়ির আঁচলটা গুজে রাখা।রাজ ঠোঁট কামড়ে বলে,”এভাবে গিন্নি গিন্নি লুকস দিয়ে আছো কেন?বউকে হটি লাগে তো।”
মায়া কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে আছে।রাজ বলে ওঠে,”সুন্দরী বৌদের গিন্নি সাজলে মনে প্রেমের ঘণ্টা বাজতে থাকে।”
“যত্তসব ফালতু কথা বার্তা।”
“বরের থেকে প্রেমের বার্তাকে তোমার কাছে ফালতু বার্তা মনে হলো মায়াবতী?”
“নিচে চলুন।সবাই অপেক্ষা করছে।”
“তুমি এখন এখানে কেন সবাই অপেক্ষা করলে?”
“আপনাকে ডাকতে এসেছি।”
“হঠাৎ?”

“স্বামী না খেয়ে থাকলে তো স্ত্রীর দায়িত্ব তার খোঁজ নেওয়া।সেই দায়িত্ব পালন করেছি।”
সোফা থেকে লাফিয়ে দাড়ালো রাজ।মায়া কিছু বুঝলো না।রাজ মায়ার কাছে এসে বলে,”স্বামীকে মানে আমাকে স্ত্রী মানে তুমি খোঁজ নিতে এসেছো।এটাই বলতে চাও তো তুমি?”
“এছাড়া আর কী বোঝানো যেতে পারে?”
“অন্যান্য স্বামীরা এই স্বামী ডাক শুনলে কি করে জানিনা কিন্তু বিশ্বাস করো মায়াবতী তোমার মুখে এই স্বামী ডাক আমার কাছে যেনো লাগলো এক বিপদের আভাস।”

রাজ কথাটা মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।মায়া এতক্ষণ নাটকীয় ভঙ্গিতে হাসি হাসি ভাব এনে কথা বললেও এখন সে রাজের মুখের দিকে সন্দিহান নজরে তাকালো।রাজ কি তবে জেনে গেলো সে আসল মোহনা সরদার।সেই মোহনা সরদার যাকে এক ঘন কালো অন্ধকার রাতে তার মায়ের সাথে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।রাজ যদি সব জেনে যায় তাহলে তো তার প্রতিশোধ নেওয়া সম্ভব হবেনা।এমনটা ভেবে মায়া আবারও ভাবলো,”এই লোক সব জানলেও সমস্যা কি?আগে এটাকে মেরে এর মৃত্যুর দায় বানিয়ে দিব সোনালী আর মোহন সরদারের ঘাড়ে।মামলা খতম।”

মায়ার হুশ ফিরল রাজের এক চুমুতে।তাও আর কোথাও না সোজা তার নাকের উপর।মায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো।রাজ তার এক আঙ্গুল দিয়ে মায়ার নাক ছুঁয়ে বলে,”আমার দুষ্টু মায়াবতী।”
বলেই বের হয়ে গেলো রাজ।রুদ্র আর আহান সরদার এসেছে সকাল সকাল।ওরাও এখানেই প্রায় প্রায় খাওয়া দাওয়া করে।মাহমুদ সরদার তাদেরকে আজ এখানে আসতে বলেছে।হিয়া নিচে নেমে রুদ্রকে দেখে।রুদ্র ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।হিয়া এটা দেখে মুখ ভেংচি দিয়ে মাহমুদ সরদারের পাশে বসতে নেয় কিন্তু পারলো না বসতে।তার আগেই সিয়া ওখানে বসে।হিয়া রাগ দেখিয়ে বলে,”এই চেয়ারে আগে আমি বসতে এসেছিলাম।”
“তুই বসতে আসলেও বসতে পারিসনি।কোন চিন্তায় মগ্ন ছিলি যে এক মিনিটের জায়গায় দশ মিনিট লাগিয়ে দিস।”
“আমি যে কয় মিনিট লাগিয়ে দেই না কেন তুই কেন বসবি এখানে?আমি বাবার পাশে বসব।”

“বাবা কি তোর একার যে তুই বাবার কাছে বসবি।বাবা আমারও।”
“তোর বাবা জেনে আমার কি রে ভুটকি?”
“এই এই শুটকি।একদম আমাকে ভুটকি বলবি না।নিজে শুটকি আবার আমাকে বলে ভুটকি।”
“তোর কোন দিক থেকে মনে হয় আমি শুটকি?তোর মত ভুটকি না বলে আমাকে শুটকি বলতে পারিস না।”
“আলবাত বলতে পারি।তুই যদি আমাকে ভুটকি বলিস তাহলে আমিও তোকে শুটকি বলতে পারি।”
“লিসেন ভুটকি আমি পারফেক্ট আছি। পাঠকাঠী না যে শুটকি বলবি।”
“লিসেন শুটকি আমিও পারফেক্ট আছি।কুমড়ার মত ফুলে নেই আমি যে ভুটকি বলবি।”
“কুমড়োর মত না হলেও খাদক।আর যারা খাদক তারা মোটু হয় তাড়াতাড়ি।এমনিতেও তুই আমাদের সবার থেকে একটু বেশিই স্বাস্থ্যবান।”

“তাতে তোর কি?আমি কি তোর বাবার টাকায় খাই।আমি আমার বাবার টাকায় খাই।”
রাজ নিচে নামছিল।সিয়ার মুখে এহেন কথা শুনে মাহমুদ সরদারের উদ্দেশ্যে বলে,”এক বাবার দুই মেয়ে হয়েও কি না বড় মেয়ে বলে তোর বাবার টাকায় খাইনা আমি নিজের বাবার টাকায় খাই।এটা তো সন্দেহজনক ব্যাপার!”
“তুমি নিজের ব্যাপারে ভাবো।আমার মেয়েদের নিয়ে আমি ভাবতে পারব।”
রাজ চেয়ার টেনে বসে।সামনের প্রিচ থেকে এক পিচ আপেল নিয়ে খেতে থাকে।হিয়া উপায় না পেয়ে বসে পড়ল রুদ্রের পাশে।ওখানেই বর্তমানে চেয়ার ফাঁকা।মায়া নিচে নামছে।মায়ার মাথায় নীল শাড়ির লম্বা আচল দিয়ে মুখে মিষ্টি ঝুলানো হাসি আছে।রাজ সেদিকে তাকাতেই ওর গাল থেকে আপেলের টুকরো আপনাআপনি পড়ে যায়।রাজ অবাকের সাথে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার বউয়ের আবার নতুন করে কোন রূপ দেখানো ইচ্ছা জাগলো!”
মায়া হাসি হাসি মুখ করে বলে,”আমি খাবার দিয়ে দেই সবাইকে?”

মাহমুদ সরদার বলেন,”হ্যাঁ মা তুমিই দেও।”
রাজ বিড়বিড় করে বলে,”আমার বউ পেতেছে ফাদ আমার বাবা তাতে দেয় পা।”
রুদ্র বিড়বিড় করে বলে,”ডালমে কুছ তো কালা হে।”
হিয়া রুদ্রের দিকে রাগী সৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই হিয়ার চশমাটা একটু নিচে নেমে নাকের দিকে ঝুঁকে যায়।রুদ্র তার বামহাতের এক আঙ্গুল দিয়ে চশমাটা ঠিক করে দিয়ে বলে,”এভাবে তাকাচ্ছিস যেনো আজকের ব্রেকফাস্টে খাবার না আস্ত আমাকে গিলে খাবি।”
“আমাকে কি আপনার রাক্ষসী মনে হয়?”
“একদমই না।”

“তবে রাক্ষসী হলে ভালোই হতো।আপনাকে গিলে না খেয়ে সোজা পৃথিবী থেকে ভস্ম করে দিতাম।”
“এই জন্যই তো তুই আমার সুইট হিয়াপাখি।”
আহান সরদার চামচে হালিম নিয়ে গালে ঢোকানোর আগে বলে,”ওহ তোমাদের বলা হয়নি।পরশুদিন আদ্র আসবে।”
থেমে গেল সিয়ার হাত।মুখটা লজ্জায় ভরে গেলো।আহান সরদার কথাটা বলেই মুখে হালিম ঢুকালেন।কিছুক্ষন আরামের সাথে খাওয়ার পরই তার মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।মাহমুদ সরদার নিজেও চামচটা মুখে ঢুকানোর আগে বলেন,”ওহ তাহলে তো আরও ভালো হলো।আদ্র আসার পর রিসিভশন পার্টি হবে।”

বাকিটা আর বলতে পারলেন না তারও মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।মালিনী সোনালী ও মোহন সরদার এরা ঢকঢক করে পানি পান করছে।টেবিলের উপর থাকা দুটো জগ যেনো কাড়াকাড়ি বাদা শুরু।হিয়া আর সিয়া হা হয়ে দেখছে।কারণ ওরা গালে দেয়নি খাবার।রুদ্রের ঠোঁট লাল।হিয়া দেখেই বুঝে যায় খুব ঝাল লেগেছে তার।এদিকে বাবা কাকাদের অবস্থাও তাই।হিয়া দৌড়ে গিয়ে রান্নাঘর থেকে লেবু আনে।লেবুর পিস সবার হাতে দিয়ে বলে,”একটু করে লেবুর রস জিহ্বায় দেও ঝাল কমে যাবে।”

সবাই তাই করল।রাজ মুখের ঝাল কমিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”যেই সন্দেহ করেছিলাম ঠিক তাই হলো।ওটা স্বামী ডাক ছিলো না আসলে আসামি হয়ে স্বামী ডাকতে এসেছে।”
রুদ্র চেয়ার থেকে উঠে রাজের পাশে থাকা জগ থেকে পানি নিয়ে গিলে বলে,”তোমার বউ রাগ মেটাবে ভালো কথা কিন্তু আমার অন্যায়টা কোথায় ব্রো?যারা রাগের যোগ্য তাদের উপরেই ঝাল দিয়ে রাগ মেটালে হতো।আমরা তো কিছু বলতাম না।”

“যেখানে স্বামী নিজেই বউয়ের কাছে সুরক্ষিত না সেখানে তুই দেবর হয়ে কিভাবে বাঁচতে চাস!”
সোনালী পানি গিলে বলে,”এতগুলো ঝাল কেউ দেয়?মারতে চাও নাকি আমাদের?””
মায়া অবাক হওয়ার অভিনয় করে বলে,”কি বলছেন কাকি শাশু মা?”
“এখন না বোঝার ভান করছ তুমি?এত ঝাল!খেয়েই গাল লাল হয়ে গেছে।”
মায়া মুখে হাত দিয়ে বলে,”আমি তো সব ঠিকমত দিয়েছিলাম।ইনফ্যাক্ট আমি তো খাবারটা মুখে নিয়েছিলাম।পারফেক্ট ছিলো সবকিছু।”

“তাহলে ঝাল লাগলো কিভাবে?”
“খুব বেশিই ঝাল ছিলো?”
“তানাহলে কি আমরা জগ নিয়ে কাড়াকাড়ি করি?”
“কিন্তু আমি তো গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি যে আমি ঝাল বেশি দেইনি।মন্ত্রী মশাই ছিলো তো রান্নার সময়।”
রাজ ঢেকর দিলো।এভাবে তাকে মেয়েলি কথাবার্তায় না টানলেও হতো বলে মনে হচ্ছে তার।মাহমুদ সরদার ভ্রুকুটি করে রাজের কাছে প্রশ্ন ছুড়লো,”তুমি ছিলে নাকি রান্নার সময়।”
রাজ মাথাটা উপর নিচ করে।মাহমুদ সরদার আবারও প্রশ্ন করেন,”মায়া মা কি খাবারটা মুখে নিয়ে টেস্ট করেছিলো?”
“হ্যাঁ।”

এটা সত্যি মায়া হালিম রান্না করার সময় মাংস সিদ্ধ হয়েছে কি না দেখেছিল।এক পিস মাংস খেয়ে মনে মনে এমন ভাবে কথা বলেছিল যেনো রান্নাটা ঠিক ঠিক হয়েছে।তাই রাজ হ্যাঁ বলে দিলো।মাহমুদ সরদার চিন্তিত হয়ে বলেন,”তাহলে এতগুলো ঝাল দিলো কে খাবারে?”
মায়া মাথাটা নত করে বলে,”কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি।”
“হ্যাঁ বলো।”
“আমার বদনাম তো অবশ্যই আমার স্বামী শাশুড়ী বা শশুর চাইবে না।আমার মনে হয় এই কাজ সেই করেছে যে আমাকে সহ্য করতে পারেনা।”
“কার কথা বলছো তুমি?”

মাহমুদ সরদারের প্রশ্নে মায়া কাঠিন্য দৃষ্টিতে আঙুল তাগ করল সোনালীর দিকে।সোনালী চিল্লিয়ে উঠবে তার আগেই মায়া বলে ওঠে,”আমি শিওর না।আমি তো শুধু দুইয়ে দুইয়ে চার করে বলতে চাচ্ছিলাম।”
মোহন সরদার রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে ওঠে,”কিসের দুইয়ে দুইয়ে চার?”
মায়া মনে মনে ফুঁসে ওঠে।সামনেই ফল কাটা ছুরি।ইচ্ছে তো করছে নিজের বাবাকেই এখানে খুন করতে।মাকে ঠকিয়ে পরকীয়া করেছে এই লোক।আবার বাড়ি থেকে বের করে এক ট্রাক এক্সিডেন্ট করিয়ে খুন করার প্ল্যান করেছিলো।এই লোককে বাবা বলতেও ঘৃণা লাগে।আজ সে আবার সেই নষ্টা মহিলার হয়ে কথা বলছে।মায়া মাহমুদ সরদারের দিকে তাকিয়ে মমতার দৃষ্টিতে বলে,”আসলে রান্নার সময় আমাকে পাহারা দিতে মিলি আসে।তার আগে তো খাবার সব ঠিকই ছিলো।আমিও মাংস সিদ্ধ হয়েছে কি না দেখছিলাম।তখন তো আমার ঝাল লাগেনি। আর মিলিকে নাকি কাকি শাশু মা পাঠিয়েছিল।রান্না শেষে আমি তো আমার স্বামীকে ডাকতে গিয়েছিলাম।এর ভিতরে কি হয়েছে আমি জানি না।”

মায়ার মুখে স্বামী ডাক শুনে বিষম উঠলো রাজের।বাসরে যে নারী ছুরি দিয়ে আঘাত করতে চায় এখন আবার সেই নারী স্বামী বলে কত ভালোবাসা দেখায়।মাহমুদ সরদার চুপ করে সব শুনলেন।সে কিছু বুঝেছে কি না কেউ জানেনা কিন্তু সে রাগী দৃষ্টিতে মোহন সরদারের দিকে তাকিয়ে বলেন,”তোমরা কি চাও আমরা ভাইয়েরা হাঁড়ি আলাদা করি?”
মোহন সরদার স্তব্ধ।অবাকের সাথে বলে,”দুদিনের মেয়ের জন্য আজ হাঁড়ি আলাদা করতে চাও তুমি?”
“তুমি যাকে দুদিনের মেয়ে বলছো সে আমার ঘরের লক্ষী।তাকে তোমার বউ এভাবে হেনস্থা করতে পারেনা।খুব ভালো করেই জানা আছে এসব টেকনিক।প্রথমে মিষ্টি মুখে বাধা দেওয়া তারপর আবার মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।এটাই তো করে এসেছে তোমার বউ শুরু থেকে।প্রথমে যার সাথে করেছিলো সে আমার কেউ ছিল না।তোমাকে বাধা দিতে যেয়ে অধিকারের কথা বলে পিছিয়ে দিয়েছিলে আজ কিন্তু এটা পারবে না।আজ এটা আমার ছেলের বউ।মাথায় রাখবে কথাটা।”

স্বরযন্ত্র না করেও আজ ফেঁসে গেলো সোনালী।রাগ উঠলো মায়ার উপর।মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো এই মেয়ে কোনো সাধারণ মেয়ে না।এই মেয়ের মাঝে কিছু তো একটা আছে।মোহন সরদার কিছু বলতে চাইলে সোনালী আটকে দিলো।সে নিজেও কম না।বরং মায়ার থেকে কুচক্রে বুদ্ধিতে সেই বেশি এগিয়ে।রাজের পাশে এখনও দাড়িয়ে আছে রুদ্র।রাজ হাতের ইশারা করে রুদ্রকে ঝুঁকতে বলে।রুদ্র ঝুঁকে ওর কান রাজের দিকে এগিয়ে দিতেই রাজ বলে,”কোনোদিন দেখেছিস খাল কেটে কুমিরকে সোজা মাথায় নিয়ে নাচতে?”

“না তো।”
“তাহলে দেখে নে আমার বাবা আর আমার বউকে।”
“মানে?”
“মানে এই যে একজন ফাঁদ পেতেছে আরেকজন খাল কেটে কুমির এনে সোজা মাথায় নিয়ে নাচছে।”
রুদ্র হেসে দেয়।রাজ বলে,”আব্বে ব্যাটা রুদ্র হাসিস না।আমার বাবাটা এখনও অবুঝ।নাহলে বউমার ট্র্যাপ তার মগজে ঢুকলো না এটা হতে পারেনা।”
রুদ্র এবার জোরে জোরে হেসে দিলো।সবাই সেদিকে তাকালো।কিন্তু কেউ কিছু বলল না।মায়া এবার সবাইকে শান্ত দেখে বলে,”মানছি আমার রান্নাটা খারাপ হয়েছে কিন্তু আমি আরো একটা খাবার রান্না করেছি।”

“কি?”
“আনছি।”
মায়া রান্নাঘর থেকে পায়েশ আনলো।সবাইকে পরিবেশন করে বলে,”আমি একটা কাজ করতে চাই।”
“বলো?”
“আশ্রমের বাচ্চাদের এই পায়েশ খাওয়াতে চাই।ঢাকায় আসার পর ওরাই আমার কাছের লোক ছিল।আজ আমার বিবাহিত জীবনের প্রথম দিন।ওদেরকে জানানো দরকার।”
মাহমুদ সরদার খুশি হয়ে বলেন,”আচ্ছা তাহলে পায়েশ পাঠানোর ব্যবস্থা করো আর সাথে করে কিছু ফল দেওয়া হোক।”
মায়া রাজি হলো।সবাই পায়েশ খেয়ে খুশি হলো।সিয়া প্রশংসা করল সবথেকে বেশি।বলে,”তোমার হাতে অমৃত আছে ভাবী।”

মায়া মনটা খারাপ হওয়ার ভান করে বলে,”হালিমটা তোমাদের তৃপ্তি করে খাওয়ানো গেলো না।আসলে আমারই ব্যাড লাক।তবে পায়েসের কথাটা আগে কাউকে না জানিয়ে ভালোই করেছি।তাই তো এখন তোমরা তৃপ্তি করে খেতে পারলে।”
মায়ার মুখে এমন কথা শুনে সোনালী রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।মাহমুদ সরদার খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”অনেক ভালো রান্না করেছো তুমি।”
বলেই মালিনির দিকে ইশারা করতেই মালিনী এক গোছা চাবী দিলো।সেই চাবি মায়ার হাতে দিয়ে বলেন,”আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ব এই বাড়ির নতুন জেনারেশনের বড় বউয়ের।”

কেউ কিছু বলতে পারবে না।কারণ এটাই নিয়ম।মায়া চাবিটা নিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকালো সোনালীর দিকে।একদিন এই চাবির জন্য শাহানা পারভিনের হাত পুড়িয়ে দেয় সোনালী।মায়া এটা জানে না চাবি মালিনীর কাছে না থেকে শাহানা পারভিনের কাছে কেন ছিলো।শুধু জানে এই চাবির জন্য তার মাকেও অনেক অত্যাচার সইতে হয়।মনে মনে মায়া বলে,”আভি তো রিটার্ন গিফট দেনা বাকি হে।”
সকালের ব্রেকফাস্টের ট্রে নিয়ে জারার ঘরে ঢুকলো বীর।ভিতরে ঢুকে দেখল জারা এখনও ঘুমে বিভোর।বীর জারার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে ট্রেটা টেবিলের উপর রাখলো।অতঃপর জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দিলো।জারার চোখেমুখে সূর্যের আলো লাগতে থেকে।চোখটা কুঁচকে আসে তার।নড়েচড়ে উঠে চোখটা মেলে।বীরকে রুমে দেখে উঠে বসলো।বীর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,”সুইট মর্নিং জানেমান।”

“ইটস বিটার মর্নিং ফর ইউর মাফিয়া ফেস।”
বীর বিছানার কাছে এসে জারার সামনে মুখটা রেখে বলে,”দেখো সকালটা মিষ্টি হোক বা তিতা তোমার জন্য খাবার নিয়ে উপরে এসেছি।কারণ তোমার পায়ে ব্যাথা।চলো একসাথে খাবো।”
“আমার পায়ের ব্যাথার জন্য আপনি দায়ী।আপনি গুলি করেছিলেন।এখন আবার দরদ দেখাচ্ছেন?”
“তোমাকে আঘাত যেমন আমি করবো তোমার আঘাতে মলমটাও আমিই দিয়ে দিবো।”
“দরকার নেই আমার এই মলমের।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৮

বীর জারার থুতনিতে হাত রেখে বলে,”একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো।”
জারা বীরের হাতটা ছড়িয়ে দেয়।বীর ইচ্ছা করেই ছেড়ে দিলো।তারপর বলে ওঠে,”তুমি চাও বা না চাও তুমি আমারই থাকবে।আমার থেকে দূরে যাওয়ার শাস্তি হবে ভয়ানক আর আমার কাছে থাকার শান্তিটা হবে সুখের।আমার কথামত চললে এই হৃদয়ে আগলে রাখলো তোমাকে চিরতরে জানেমান।”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here