মায়াবতী গল্পের লিংক || ইসরাত জাহান ইকরা

মায়াবতী পর্ব ১
ইসরাত জাহান ইকরা

মেঘা শুনছিস আলিফ ভাইয়া বিয়ে করে নতুন ব‌উ ঘরে তুলে এনেছে। পেছন থেকে আয়েশার কথাটি কর্ণপাত হতেই হাত থেকে কাঁচের গ্লাস টা ফ্লোড়ে পড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে র‌ইলো পাথরের ন্যায়। আয়েশার ধাক্কাতে হুঁশ ফিরলো মেঘার। হুঁশ ফিরতেই এক দৌড়…….পিছন থেকে আয়েশা ডেকে বললো,মেঘা এভাবে কোথায় যাচ্ছিস ভাত চুলায় বসিয়ে চাচী জানলে তোকে আজ আস্ত রাখবে না। মেঘা কোন কথা না শুনেই হন্ন হয়ে দৌড়াতে লাগলো। সিরি ডিঙিয়ে,গেট পেরিয়ে মাঝ রাস্তায় আসতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগলো। মেঘা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো সেটা আর কেউ না আলিফ।

আলিফ মেঘা কে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। তারপর ভারী কন্ঠে বলে উঠলো, এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস মেঘা।
মেঘা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো, আমি এসব কি শুনছি আলিফ ভাই।
আলিফ _ কি শুনেছিস?
মেঘা _ তুমি নাকি বিয়ে করেছো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আলিফ বিরক্ত কন্ঠে বললো, হ্যা ঠিকই শুনেছিস। আর কোন প্রশ্ন আছে এবার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়া।
আলিফের এমন স্বাভাবিক সংকুচহীন ভাবে কথা বলা দেখে,মেঘা ভিশন অবাক হলো সাথে রাস্তায় স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে র‌ইলো। আলিফ মেঘার পাশ কেটে চলে যেতে নিলে, মেঘা কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো _আমার সাথে তাহলে এমন করলে কেন আলিফ ভাই। কেন স্বপ্ন দেখালে। আমার কি অপরাধ ছিল বলতে পারবে।

আলিফ বিরক্ত সুরে বললো_ oh common মেঘা। এখনকার জেনারেশনে এটা অহরহ ঘটে, ঘটছে। জাস্ট ফান,সেটা তুই সিরিয়াসলি নিয়েছিস। আর দেখ,তোকে আমি কখনো ভালোবাসি নি। এসব ভুলে যা,আর তিশার সাথে তোর যায় না। বুঝছিস, এটুকু বলতেই মেঘা রেগে বলে উঠলো _ ব্যাস বুঝেছি। তাহলে শুনেন মিস্টার আলিফ, আপনার কাছে যেটা জাস্ট ফান সেটা আমার কাছে অনেক কিছু। আপনি মানুষের আবেগ নিয়ে খেলেন, এবং খেলতে পছন্দ করেন।মানুষ কে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করেন। এতটা selfish কি করে হতে পারলেন আপনি। ভালো থাকবেন।। এই বলে মেঘা দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল।
আলিফ মেঘার কথা শুনে তৈচ্ছিল্য হেসে জায়গা প্রস্তান করলো।

মেঘা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাছে আসতেই মনের ভিতর ভয় ঢুকে গেল। কেননা, চুলায় ভাত বসিয়ে দিয়ে এসেছে। চাচীর মুখে শুনলো আজ নাকি বাসায় মেহমান আসবে। তাই আজকে রান্নার দায়িত্ব মেঘার কাঁধেই পড়েছে,যে জন্য আজ কলেজে যাওয়া হয়নি। মেঘার বাবা,মা, কেউ বেঁচে নেই,এক সরক দুর্ঘটনায় তারা মারা যায়। মেঘারা দুই বোন, বোনদের মধ্যে মেঘা বড়, মেঘার ছোট বোন মাটি, স্কুলে পড়ে,ক্লাস টেনে। মা বাবা মারা যাওয়ার পর,মেঘা আর মেঘার ছোট বোনের দায়িত্ব নেন,মেঘার মেঝো চাচা। সেই থেকে চাচা চাচীর সঙ্গে থাকে মেঘা, অবহেলায় অযত্নে।

এসব ভাবতে ভাবতে গেট পেরিয়ে উঠানে আসতেই মেঘার চাচী রাহিমা বেগমের ককর্শ গলার কন্ঠস্বর শুনতে পায়।
রাহিমা বেগম _ কোথায় গিয়েছিলি?
মেঘা ভয়ে ভয়ে বললো, আসলে মাটি এখনো আসছে না তাই একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম আসছে কি না।
রাহিমা বেগম ঝাড়ি মেরে বলে উঠলো _ চুলায় ভাত বসিয়ে নাটক করতে গেছিলি। এই বলে চুলে মুঠি ধরে টানতে টানতে রান্না ঘরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আর বলতে লাগলো, আজকে এই পোড়া ভাত তোকে খাওয়াবো।
মেঘার চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে আর ঠোঁট কামড়ে সব ব্যাথা হজম করছে। উপর থেকে মেঘার চাচা ছোটে এলো। ছোটে এসে রাহিমা বেগমের হাত থেকে মেঘা কে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো। ওকে মারছো কেন রাহিমা, কি করছো এসব তুমি।

রাহিমা বেগম _ মারবো না তো আদর করবো। তোমার আদরের ভাগনি ভাত পুরিয়ে ফেলেছে, বলেছিলাম ওদের লেখাপড়া করতে দিও না। খাচ্ছে দাচ্ছে কাপড় চোপড় সবকিছু আমাদের দিতে হচ্ছে, তবে কাজের বেলায় এতো ঠনঠন কেন।

আনোয়ার হোসেন _ বাদ দাও তো আজকে এসব। প্রতিদিন আর তোমার চেঁচামেচি ভালো লাগে না। আজকে বড় ভাইজান আসবে শহর থেকে। তাদের জন্য ঘর দুয়ার পরিষ্কার করে রাখো।
রাহিমার বেগম বলে উঠলো _ ভাই ভাবীর সাথে কে কে আসছে গো।
আনোয়ার হোসেন _ ভাইজান , ভাবী, তাদের বড় ছেলে মেহমিদ আর ছোট ছেলে মাহিদ।
রাহিমা বেগম _ আচ্ছা,,, এতো দিনে নিশ্চয়ই ওরা অনেক বড় হয়ে গেছে । মেহমিদ এর ছবি দেখেছিলাম আয়েশার ফোনে,কি সুন্দর হয়েছে, একদম ভাবীর মতো।

এদিকে মেঘা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু‌ই শুনছিলো। তারমানে আজকে তাদের বড় জেঠা আসছে। কখনো দেখিনি মেঘা,শুনেছি চাকরির সুবাদে ট্রান্সফার হয়ে সেখানে থাকতে হয়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলো মেঘা। চাচীর ঝাড়ি তে আবারো ধ্যান। কাটলো মেঘার।

রাহিমা বেগম_ এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন,যা গিয়ে ভাত বসা। আর চারটে রুম পরিস্কার করে রাখবি। আর শুনো মেহমান আসতে আসতে সন্ধ্যা নামবে, ভুলে ও ঘর থেকে বাইরে আসবি না।
মেঘা মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেল। তারপর মেঘা সবগুলো কাজ শেষ করে, ঘরে গেল। গিয়ে দেখলো মাটি সবে মাত্র স্কুল থেকে এসে গোসল শেষ করে পড়তে বসলো। মেঘা কে দেখে মাটি গিয়ে জরিয়ে ধরলো।
মাটি _ জানিস আপু আজ কি হয়েছে স্কুলে।

মেঘা _ পরে শুনবো,এখন গোসল করবো ছাড়‌। আর শুন একটু পর সন্ধ্যা নামবে। ঘর থেকে বের হবি না আমার অনুমতি ছাড়া।
মাটি _ ওমা কেন, আজকে ঘরে বসে কি অনশন করবো।
মেঘা _ ফাইজলামি ছাড় , আর আমার কথা শোন মাইর না খেতে চাইলে। আজকে বড় জেঠু আসবে বুঝছিস। সেই জন্য বাইরে যেতে মানা।

মাটি _ আচ্ছা এই কাহিনী, এই জন্যই তো আয়েশা এতো সাজুগুজু করছে। কিন্তু চাচীর কথা কে মানে, তুমি ভয় পাও বলে। দেখো আমি কি করি।
মেঘা রেগে বলে উঠলো _ দেখ মাটি বিচ্ছুমি করবি না। ওদের সামনে যাবি না ব্যাস। কথা দে আমায়।
মাটি _ আচ্ছা যাবো না। ( কিন্তু আমি দেখে নিব)
মেঘা মুচকি হেসে গোসল করতে চলে গেল।

সন্ধ্যা নামতেই, একটা কালো রঙের গাড়ি এসে পুরনো জমিদার আমলের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে একজন ভদ্রলোক আর ভদ্র মহিলা নামলেন। একটু পর শার্টের হাতা গুটিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ নামলো। রাহিমা বেগম তাদের সাদরে গ্রহন করলেন।

রাহিমা বেগম বললেন তোমাদের জন্য‌ই অপেক্ষা করছিলাম এতোক্ষণ, এসো ভিতরে এসো। আনোয়ার হোসেন বললেন, এটাই আমাদের মেহমিদ, বাহ ভিশন লম্বা আর হ্যান্ডসাম হয়েছে তো। মেহমিদ বাড়ির চারপাশ টা ভালো মতো দেখে বললো,জানো চাচ্চু এই বাড়িটা আর তোমাদের কতো মিস করেছি।
তখনি আয়েশা দৌড়ে এসে মেহমিদ কে জরিয়ে ধরতে নিলে মেহমিদ সরে যায়।
মেহমিদ বললো _ আয়েশা আমার লাকেজ টা নিয়ে উপরে আয়। এই বলে হন হন করে উপরে চলে গেল।
এদিকে আয়েশা মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।

রাহিমা বেগম বললেন _মাহিদ আসলো না ভাবী।
মিসেস শায়লা বেগম বললেন_ মাহিদের তো খালি বাদরামি, বন্ধুদের নিয়ে ট্যুরে গেছে। কাল সকালে চলে আসবে।
রাহিমা বেগম _ওহ আচ্ছা।
সন্ধ্যা কেটে আস্তে আস্তে পুরো গ্ৰাম আঁধার ঘনিয়ে এলো। রাতে সবাই উঠানে বসে গল্প গুজব করছে। তখনি উপরের ঘর থেকে জোরে জোরে পড়ার আওয়াজ শোনা গেল।

মেহমিদ কপাল কুঁচকে উপরে তাকালো। শায়লা বেগম বললো কে পড়ছে ওভাবে বাসায় আর কেউ আছে নাকি। রাহিমা বেগম বেশ বিরক্ত হলো,,, কোন রকম ঠোঁট হাসি এনে বলে উঠলো _ আয়েশা পড়ছে হয়তো। দাঁড়ান দেখে আসছি। এই বলে উপরে চলে গেলো।

মায়াবতী পর্ব ২