মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৮

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৮
লেখিকাঃ দিশা মনি

ইভানা ও ফাহিম বেশ রাত করে বাড়ি ফিরল। আজকে রাতের জন্য ইভানাদের বাসাতেই অবস্থান করল তাঁরা। সেদিনের মতো ঘুমিয়ে নিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠল দুজনে। ফাহিমকে রুমে রেখে ইভানা নিচে নেমে এলো। ডাইনিং টেবিলে তোহাকে দেখে তার কাছে গেল। মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল,

‘কি খবর আপাই? কাল রাফিদ ভাইয়ার সাথে কেমন গেল সারাটা দিন?’
‘কি যে বলিস না তুই। উনি কি সারাদিন আমার সাথে বসে গল্প করেছেন নাকি?’
‘সেটা না। কিন্তু ওটাই।’
‘মানে?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘মানে পরে বুঝিস। আগে বল রাফিদ ভাইয়াকে তোর পছন্দ হইছে কিনা।’
‘পছন্দ না হওয়ার কি আছে? উনি তো সুদর্শন, শিক্ষিত। আর কি চাই?’
‘বুঝেছি। তোর খুব পছন্দ হয়েছে। তাহলে খুব শীঘ্রই তোর বিয়ের দাওয়াত খেতে চলেছি তাইতো?’
তোহার চোখেমুখে ইতিবাচকতার আভাস। এমন মুহুর্তে ইশরাত খাতুনের আগমন ঘটল। দু বোনকে তাড়া দিয়ে তিনি বললেন,

‘তোরা বসে না থেকে আয়, আমার রান্নায় একটু সাহায্য কর। সকালের ব্রেকফাস্ট করতে হবে তো নাকি?’
দু বোন সাথে সাথে উঠে চলে গেল মাকে সাহায্য করার জন্য। সকালের ব্রেকফাস্টে পরোটা তৈরি করা হয়েছে। সবাই গোস্ত দিয়ে পরোটা খাবে। রান্না হতেই ইশরাত খাতুন ইভানাকে তাড়া দিয়ে বলল,
‘ইভানা তুই যা গিয়ে তোর শ্বাশুড়ি আর বরকে ডেকে আন।’
ইভানা মাথা নাড়িয়ে চলে এলো কিচেন থেকে। ফাহিম ও ফারজানা বেগমকে ডেকে আনল। বাড়ির অন্যরাও ততক্ষণে এসে গেছেন। হাশেম আলী ইভানার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,

‘তুই তো আমাদের ভুলেই গেছিস তানজিলা। এতদিন পর এলি থাকবি তো কয়দিন?’
ইভানা ফাহিমের দিকে তাকালো উত্তরের আশায়। ফাহিম এমন ভাব করল যেন তার কিছু যায়ই আসে না। সবটা ইভানার উপরেই ছেড়ে দিলো। ইভানা ফারজানা বেগমের দিকে তাকালে তিনি বললেন,
‘তুমি চাইলে থাকতে পারো এখানে কয়দিন। আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু আমাদের আজই চলে যাইতে হইবো। ফারহানের তো আজ ফেরার কথা।’
ইভানা খুশি হলো। কিন্তু ফাহিমরা চলে যাবে জন্য একটু খা*রাপও লাগল তার। আহত মনে ব্রেকফাস্ট করতে লাগল।

ইভানা মন খারাপ করে বসে আছে বিছানার উপর। ফাহিম তৈরি হয়ে নিচ্ছে ফিরে যাওয়ার জন্য। ইভানার ফাহিমকে থেকে যেতে বলতে ইচ্ছা করল৷ কিন্তু কি মনে করে যেন বলল না। অগত্যা মন খারাপ করে বসে রইল। ইভানার মন খারাপের কারণটা আন্দাজ করতে পারে ফাহিম। ইভানার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,
‘মন খা’রাপ করো না। আমার পড়াশোনা আছে, এখানে থাকলে তো চলবে না। তুমিও দ্রুত চলে এসো। আমিও তোমাকে ছাড়া বেশিদিন থাকতে পারব না।’

‘দুদিন অপেক্ষা করুন। আমি অবশ্যই ফিরে যাব। আপনি ততদিন নিজের খেয়াল রাখবেন।’
‘আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারি। তুমি বরং একটু নিজের দিকে নজর দাও। এখানে আনন্দে মেতে পড়াশোনায় অবহেলা করিও না আবার। ঈদের পরই কিন্তু তোমার কলেজ খুলবে।’
‘আচ্ছা।’

অবশেষে ইভানাকে ব্যথিত করে চলে যায় ফাহিম। ইভানা তখন তোহার রুমে গিয়ে সাথে গল্পে মেতে ওঠে। এমন সময় তারিকুল ইসলাম আসেন তোহার রুমে। তাকে দেখে দুই বোনই বেশ অবাক হয়। তারিকুল ইসলাম এসেই বলেন,
‘আমার আজ রাফিদের বাবার সাথে কথা হলো। আগামী মাসেই তারা আবার ইউএসএতে ফিরে যাবে। তাই ফেরার আগেই বিয়েটা সম্পন্ন করে নিতে চায়। তো ২ দিন পর এনগেজমেন্ট করবে বলে বলব। তোমার কোন আপত্তি নেই তো তোহা?’
‘না আব্বু। আমার কোন প্রব্লেম নেই।’

তারিকুল ইসলাম প্রসন্ন মুখে ফিরে গেলেন। ইভানা তোহাকে ক্ষে*পানোর জন্য বলল,
‘বাহ, বিয়ের জন্য নাচছিস দেখছি।’
‘ইভানা আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।’
‘হু কেয়ারস?’
তোহা রেগে গিয়ে ইভানার পিছনে দৌড় দেয়। ইভানাও প্রাণপণে ছুট লাগায়। দুই বোনের এই ইদুঁর বিড়াল দৌড় চলতেই থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না দুই বোন ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে।

পরপর তিনবার ফোন বেজে ওঠায় বিরক্ত হলো রাফিদ। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল জ্বলজ্বল করে ‘মারিয়া’ নামটা ভাবছে। এই নামটা থেকে পিছু ছড়ানো বোধহয় এ জন্মে সম্ভব নয়!
রাফিদ ফোনটা রিসিভ করে ইংরেজিতে বলল,
‘তোমার সমস্যাটা কি? আমায় বারবার ফোন করছ কেন?’
প্রতিত্তোর আসল ইংরেজিতেই। একটি মেয়ে বলল,

‘তুমি আমাকে কিছু না বলে দেশে কেন ফিরে গেলে? আমি প্রেগন্যান্ট এটা জানার পর থেকে কেন দূরত্ব তৈরি করছ আমার থেকে? আমি তো বললাম তুমি চাইলে আমি এভোশন করিয়ে নেব।’
‘মারিয়া, আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি। আমি এটাও চাই আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসুক। তবে মাঝখানে একটা ঝামেলা তৈরি হয়ে গেছে।’
‘কি ঝামেলা?’
‘আমার মম ড্যাড আমায় বিয়ে দিতে চায়। আমি অনেক বার বলার পরেও তারা শুনল না। আমাকে দেশে নিয়ে এলো মেয়ে দেখাতে।’

‘তুমি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করবে?’
‘হুম। কিন্তু ভালো শুধু তোমায় বাসব।’
‘এটা আমি মানবো না। আমি যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে যাচ্ছি। তোমার এই বিয়ে আমি হতে দেবো না।’
রাফিদ রাগের সহিত ফোনটা দেয়ালের দিকে ছু’ড়ল। মারিয়া নামের শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান মেয়েটির সাথে তার পরিচয় হয় ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বারে। সেদিন তারা ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড করে। তখন থেকে তারা লিভ ইনে রয়েছে। রাফিদ এর আগেও আমেরিকায় অনেক মেয়ের সাথে লিন ইন করেছে। তবে মারিয়াকে সে হা’তছাড়া করতে চায় না। কারণ সে অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে। এখন রাফিদ ভাবছে কিভাবে এক ঢিলে দুই পাখি মা’রা যাবে।

একদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। ফারহানের গতকাল ফেরার কথা থাকলেও কিছু সমস্যার কারণে আজ তাকে কক্সবাজার থেকে ফিরতে হলো।সে মূলত প্লেনে করেই কক্সবাজার থেকে ফিরেছে। ঢাকা বিমানবন্দরে নামতেই দেখতে পেল একজন শ্বেতাঙ্গ বিদেশি রমণী একটি ছেলেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। মেয়েটি বলছে,
‘চলো আমরা আমেরিকায় ফিরে যাই। তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করো না প্লিজ।’
ছেলেটি বলল,

‘আরে, এই বিয়ে কোন বিয়েই না। আমেরিকায় গিয়েই আমি ঐ মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দেব। এখন তো শুধু মা-বাবার কথায় বিয়েটা করা।’
ফারহান ছেলে মেয়ে দুটোর মুখ স্পষ্ট দেখতে পেলো। তবে তার এসব শোনার আগ্রহ ছিল না। তাই নিজের লাগেজ নিয়ে চলে এলো। আসার সময় বিড়বিড় করে বলল,

‘এখন চারিদিকে এত ঠ’কবাজি শুরু হয়েছে যা বলার বাহিরে। নিজের গার্লফ্রেন্ড থাকার পরেও আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করছে। আবার বলছে বিয়ের পর ডিভোর্সও দেবে। মাঝখান থেকে শুধু শুধু একটা মেয়ের জীবন ন’ষ্ট হবে।’
ফারহানের খারাপ লাগা কাজ করতে লাগল মেয়েটির জন্য। এদিকে ছেলে ও মেয়েটি ছিল রাফিদ ও মারিয়া। রাফিদ মারিয়াকে জিজ্ঞেস করল,

‘তুমি এত দ্রুত বাংলাদেশে কিভাবে এলে?’
‘তোমার মনে নেই আমি তোমার সাথে বাংলাদেশে ঘুরতে আসব জন্য কিছুদিন আগেই পাসপোর্ট, ভিসা তৈরি করে নিয়েছিলাম? কাল তোমার কথা শুনেই দ্রুত ফ্লাইটের টিকেট কে’টে চলে এলাম। আমার আসাতে তুমি খুশি হওনি?’
‘কেন খুশি হবো না৷ অনেক খুশি হয়েছি।’
মুখে খুশি হওয়ার কথা বললেও মনে মনে সে বেজায় চ’টে আছে। মারিয়া এরপর বলল,

‘চলো এখন যাই।’
‘কোথায় যাবে এখন?’
‘তোমাদের বাড়িতে তো যেতে পারব না। কোন হোটেলে গিয়ে থাকি আজ?’
‘আচ্ছা চলো।’
অতঃপর দুজনে একটি নামকরা হোটেলে গিয়ে উঠল।

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৭

[বিঃদ্রঃ-মারিয়া ও রাফিদের মধ্যে কথোপকথন ইংরেজিতে হয়েছে। কিন্তু গল্পটা যেহেতু বাংলায় লিখেছি তাই ইংরেজিতে লিখতে ভালো দেখাত না। সেইজন্য বাংলাতেই তাদের কথোপকথন উল্লেখ করেছি।]

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৯