মি মাফিয়া পর্ব ১
সুমাইয়া সাবিহা
— বললাম তো, আমি বিয়ে করবো না! তাহলে বারবার আমাকে বিরক্ত করছেন কেন? আপনার কি আর কোনো কাজ নেই? আপনাকে কীভাবে বোঝাবো যে আপনার উপস্থিতি আমার একদম সহ্য হয় না? আমি আপনাকে ঘৃণা করি! I just hate you, Mr. Afran! আপনার মতো ছেলেদের দিকে তাকাতেও ঘেন্না লাগে! কেন বুঝতে পারছেন না আপনি?
কথাগুলো বলে আরিয়া দ্রুত সামনে এগিয়ে গেল। আফরান কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার মতো একজনের সঙ্গে কেউ এতটা স্পর্ধা দেখাতে পারে? এই মেয়ে এত সাহস পেল কোথায়? আমাকে এমনভাবে কথা শুনিয়ে চলে গেল? এর প্রতিশোধ কিভাবে নিতে হবে তা আমার ভালো করে জানা আছে। এর শেষ দেখে ছাড়বো!
ফ্ল্যাশব্যাক
প্রায় চার বছর আগে…
আমাদের গ্রামটার নাম কুসুমপুর—ছোট্ট একটা গ্রাম। এখানে আমার পরিবার থাকে। আমার বাবা, খলিল চৌধুরী, একজন কৃষক। তবে এটা ভাববেন না যে তিনি পড়ালেখা জানেন না। বাবা এবং আমার চাচা দুজনেই মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন। তবু চাচা ব্যবসায়ের কারণে শহরে চলে গিয়েছিলেন। ওখানেই তাদের বিশাল বাড়–একেবারে রাজপ্রাসাদ বলা যায়। দেশে আমাদের আরেকটা ইট-পাথরের বাড়ি আছে, তবে সেটা বহু বছর ধরে তালাবদ্ধ। চাচা যখন প্রথমবার ঢাকায় ট্রান্সফার হলেন, তখন থেকে প্রায় ৮-৯ বছর সেই বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে।
চাচা যখন দেশ ছেড়েছিলেন, তখন তার সঙ্গে গিয়েছিল তার স্ত্রী এবং দুই ছেলে। তবে আমার স্মৃতিতে ওসব ধোঁয়াশ–আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম, হয়তো ছয়-সাত বছর বয়স হবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এখন আমার পরিচয় দেওয়া দরকার। আমি আরিয়া নূর অর্পিতা চৌধুরী। যদিও আমার নামের শেষে ‘চৌধুরী’ পদবি আছে, আমি সেটার ব্যবহার কম করার চেষ্টা করি। কারণ এই নামটা শুনলেই সেই লোকটার মুখ মনে পড়ে।
হ্যাঁ, আমি বলছি আফরান চৌধুর–আমার বড় চাচার বড় ছেলে। সে একজন কুখ্যাত মাফিয়া। প্রতিদিন মানুষ খুন করে, আর সেটা খবরের শিরোনাম হয়। তার জন্য আমাদের ‘চৌধুরী বাড়ি’ বদনামে পরিণত হতো, যদি না বাবা নিজের সততা আর পরিশ্রম দিয়ে সেটা টিকিয়ে রাখতেন।
আমার বাবার সরলতার জন্য এখনো আমাদের পরিবারকে সম্মান করা হয়। নাহলে এতদিনে আমাদের ‘মাফিয়ার বংশধর’ বলা হতো!
আমি এখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। আমাদের গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করি। চাচা জান কয়েকবার বলেছিলেন শহরে গিয়ে পড়াশোনা করতে, কিন্তু আমি কি পাগল? আমি ওই বাড়িতে যাব, যেখানে ওই লোকটা থাকে?
আমার ছোট বোন ছায়া। ওর বয়স এখন সাতের কাছাকাছি। আমরা খুব ভালো বন্ধুর মতো থাকি, ঝগড়াও হয় না। ও এত মিষ্টি করে কথা বলে, এত আবদার করে যে, ওর সঙ্গে রাগ করা যায় না। যার ছোট বোন এত কিউট, তার কি আর ঝগড়া হতে পারে?
আমার মা, রহিমা বেগম, পুরো পরিবারের মেরুদণ্ড। যেকোনো সমস্যা হওয়ার আগেই তিনি সেটাকে সামলে নেন।
আমাদের পরিবার গ্রামের সবাই চেনে। আশপাশের একচালা-দুচালা ঘরের মাঝে আমাদের বাড়িটা আলাদা, কারণ এটা ইট-পাথরের তৈরি।
বর্তমান সময়…
স্কুল থেকে ফিরতেই আম্মু আমাকে একটা অদ্ভুত সংবাদ দিলেন।
— কাল তোর চাচা আসবে তোকে শহরে নিয়ে যেতে!
আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি ওই বাড়িতে গিয়ে করবো টা কি? আমার মাথায় কি ছিট আছে? মুখের ওপর বলে দিলাম—
— পারবো না মা!
রহিমা বেগম ধমক দিয়ে বললেন—
— কেন পারবি না? আমি কি তোর খারাপ চাই? শহরে গিয়ে পড়াশোনা করলে ভালো হবে, তাই বলছি!
— মা, আমরা জানি চাচা খুব ভালো মানুষ। কিন্তু তার ছেলে? আমি ওই মাফিয়া মাস্তানের বাড়িতে থাকতে পারবো না!
— তোর কি বলেছি, আফরানের কাছে গিয়ে ঘুরতে? তুই জানিস ঐ বাড়িতে কোনো মেয়ে মানুষ নেই? তোর চাচী তো অনেক আগেই মারা গেছেন! ভাইজান একা থাকেন, তোকে নিজের মেয়ের মতোই দেখেন! তুই ভুলে গেছিস ছোটবেলায় ভাইজান তোর জন্য কত কিছু করেছেন?
আমি রেগে গিয়ে বললাম
— জানি বলেই তো বলছি, ঐ বাড়ি আমার জন্য সেইফ না মা! তুমি ভুলে যেতে পারো, কিন্তু আমি পারবো না!
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই বাবা ঘরে ঢুকলেন।
— তোর অনুমতি নিতে বলছি নাকি? তর্ক বন্ধ কর! আমার কথা যদি মানতে না পারিস, তাহলে নিজের ব্যবস্থা নিজে কর!
এ কথা বলেই বাবা নিজের ঘরে চলে গেলেন। আম্মু কিছু বলতে গেলেন, কিন্তু বাবার গম্ভীর চেহারা দেখে থেমে গেলেন।
ছোট বোন ছায়া মায়ের হাত ধরে বলল
— আম্মু, আপু যদি চলে যায়, আমি একা থাকবো কিভাবে?
রহিমা বেগম আদর করে বললেন—
— আমি তো আছি, আম্মুর সাথে খেলবি! কিন্তু তোর চাচা জান তো একা থাকে! ওনার তো মেয়ে নেই!
ছায়া কিছুক্ষণ ভেবে মাথা চুলকে বলল
— হুম, চাচা জানের তো অনেক কষ্ট! ঠিক আছে, আপু গেলে আমি তোমার সাথে থাকবো!”
রহিমা স্মীত হাসলেন ।
— এই তো আমার বুদ্ধিমতী মেয়ে!
আরিয়া রাগে ধ্যাত করে পা ঠুকে নিজের ঘরে চলে গেল। ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে চোখ মুছতে লাগল।
আমাকে কেউ বুঝতে চায় না! আমি জানি, ভাইয়া আমাকে দেখলেই মারবে!
কিন্তু এটা তো কেউ জানে না। সেদিন সবাইকে মিথ্যা বললেও আমি জানি, কেন আমি ভাইয়াকে ভয় পাই। সেদিন তো ভাইয়া আমাকে শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু আমি..
আর ভাবতে পারছে না আরিয়া। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।