মি মাফিয়া পর্ব ১১
সুমাইয়া সাবিহা
আরিয়া সামিরার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো মনে হয় ,বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।কলেজ আসা মাত্র শুনতে হলো ,কাল যে ছেলেটার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে বিয়ে করে চলে যাবে ভেবেছিল সেই ছেলেটা আর বেচে নেই ,কিভাবে মরা গিয়েছে কেউ জানেনা।
অরিয়া:কি বলছিস কি ,,
প্রেমা :হুম সত্যি রে ক্লাসে তার বন্ধুরা বলাবলি করছিলো।
আরিয়া রাগে ফুসছে আরিয়া আর এক মিনিট ও এখানে দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা ব্যাগ টা কাধে তুলে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো।
সামিরা:কি হলো রে প্রেমা হঠাৎ কোথায় গেলো এভাবে?
প্রেমা আমার কেমন যেনো সন্দেহ হচ্ছে ।দেখ ফারহান ভাই ও কিন্তু আরু কে প্রপোজাল দিয়েছিল সেও মারা গেছে
আজ আবার সিনিয়র ফাহাদ ভাই ,তাও কাল যার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করেছিল।
দুজনেই কিন্তু আরিয়া কেই প্রোপোজ করেছিল।আর দুজনেরই মৃত্যু।কিছু বুজতে পারছিস?
সামিরা :তাইতো।আচ্ছা এর পেছনে কে আছে রে ?
প্রেমা: মার্ডার করা আমার মতে এ এলাকায় নির্দয় মানুষ টি হলো আফরান ব্রাদার।
সামিরা ঢুক গিলে বললো,
__সেটা তো ভেবে দেখিনি কিন্তু ভাইয়া কেনো এদের কে মারতে যাবে?
প্রেমা :সেটাই তো রে ভেবে পাচ্ছিনা
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিয়া সোজা বাড়ি চলে এসে জাফর সাহেব কে কল দেয়।
আরিয়া:চাচা তোমার বড় ছেলে কোথায় কাজ করে?
জাফর:কেন কি হয়েছে হঠাৎ আফরানের খোজ নিচ্ছিস?
আরিয়া :যেটা বললাম তার উত্তর দাও
জাফর:সেটা আমি ঠিক ভাবে জানিনা কারন কখনো ওর কাজ নিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস অবদি করিনি ,,ও যে ভালো কাজ করেনা সেটা আমার জানা আছে
__ফোন নাম্বার আছে?
___আছে অনেক আগের ,এখনো সেটা ইউজ করে কিনা জানিনা
আরিয়া:যেটা আছে সেটাই দেও।
তানভীর :স্যার কখন থেকে আননাউন নাম্বার থেকে কল আসছে
আফরান গরম চোখে তাকায় তানভীরের দিকে।মিটিং চলাকালিন কারো ফোন বা বাড়তি কথা একদম পছন্দ নয়।
বারবার কল আসছে দেখে তানভীর কানের কাছে গিয়ে বললো,
___স্যার জরুরীও তো হতে পারে একটু দেখেন না।
আফরান তানভীরের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে মিটিং রুম থেকে সোজা গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
হঠাৎ এমন হওয়ায় কারো বোধগম্য হলো না। তানভীর তাদের কে সামলে নিয়ে বলে,
__স্যার জরুরীতে গিয়েছে আজকের জন্য মিটিং এখানেই সমাপ্ত , কালকে এটা নিয়ে আবারও মিটিং থাকবে । বলে তানভীর ও রুম ছাড়ে , পেছনের গাড়ী করে তানভীর আফরান কে ফলো করে।
আফরান সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে আরিয়ার রুমে গিয়ে দাতে দাত চেপে বলতে লাগলো
__ এই মেয়ে তোমার প্রব্লেম কি ? কমন সেন্স টুকু নেই ? জরুরী কাজে থাকতে পারিনা? বলে হাতের কাছের ল্যাম্প টা এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে চুরমার করে দিলো।
আরিয়া আফরান দেখে দ্রুত হাতে কলার চেপে ধরে বললো,
___আপনার জরুরী কাজ বলতে তো মানুষ খুন আর কালো টাকা তাইনা মি,আফরান।
আফরান:বাড়াবাড়ি করো না বলে দিলাম।যেটা জানোনা সেটা নিয়ে কথা বলা আমার পছন্দ না।
আরিয়া:বাহ একদম নিস্পাপ আপনি,শুনুন আমার সামনে একদম নিস্পাপ সাজার অভিনয় করবেননা ওকে ? কেন করলেন এটা ? আবারো আরেক টা খুন এতো পাষন্ড কেনো আপনি নিজের মতো চলেন ভালো কথা কেউ তো কিছু বলেনি , কিন্তু কোনো মায়ের কোল খালি করতে বুক টা কাপলোনা আপনার । এতো পাষন্ড কেন? জবাব দিন ।
আফরান আরিয়া কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দুই গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে বলতে লাগলো ,
___কি বললাম বুঝিসনা? যেটা জানিস না সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবিনা।
আরিয়া:আর কি জানতে হবে আমায়? দিনে কয়টা খুন করেন সেগুলো? বলেন ,এতো এতো মানুষ খুন করেন কিভাবে মায়া বলতে কিছু নাই ভেতরে?
__না নেই ,আমার কারো জন্য কোনো পিছুটান নেই।হাজার টা খুন করবো তোর সমস্যা? বল কি সমস্যা তোর?তোকে মারতেও আমার কলিজা কাপবেনা বুঝেছিস? এবার ভাব আমি কেমন হতে পারি। বারবার এক কথা আমার একদম পছন্দ না ।
আরিয়া:বাহ গুড,ভেরি গুড । মেরে দিন আমায় একদম মেরে দিন,এমন জাহান্নামী জীবন থেকে মরে যাওয়াই ভালো। বলে আফরানের শার্টের নিচ থেকে আকস্মীক রিভালবার টা হাতে নিয়ে আফরানের মাথায় ধরলো।
আফরান অবাক হলো ,
__পাগল হয়ে গেছো তুমি? সেন্স আছে নাকি নেই ?
আরিয়া আজ হয়তো আপনাকে মারবো নয়তো নিজে মরবো ।
কিন্তু আপনাকে মেরে কি করবো বলুন তো? কোনো লাভ নেই
আমার জন্য এতো ঝামেলা তাইতো ? ওকে নিজেকেই শেষ করে দিবো। বলে বন্দুক টা নিজের মাথায় ঘুরালো। আমি এমনিতেও বাচতে চাইনা। আমি নিজের সতীত্ব হারিয়েছি ,আমাকে আপনি স্পর্শ্ব করেছেন আপনার ঐ পাপীষ্ঠ হাতে আমায় ছুয়েছেন তাইনা। নিজেকেই শেষ করছ দেবো। আমার ভবিষ্যত এমনিতেও নষ্ট ।
আফরান :দেখো আরু তুমি এবার বাড়াবাড়ি করছো ।এটা আমার কাছে দাও বলছি। একটু এদিক ওদিক হলেই ..
আরিয়া:কি হবে? মারা যাবো তাইতো? আমার তো মরতেই ইচ্ছা।এটার জন্যই অপেক্ষা করে আছি এতোদিন।বেচে থেকেও মরে গেছি।
আফরান:দেখো তোমার যা ইচ্ছা আমাকে বলো আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করি তাইতো?? ঠিক আছে আর জালাবো না,তোমার সামনেও আসবো না প্রমিস কিন্তু এটা দিয়ে দাও ।আর আমি ঐ ছেলেকে শুধুমাত্র থ্রেট দিয়েছিলাম তোমার থেকে দূরে থাকতে কিন্তু আমি খুন করিনি।
আরিয়া:সুন্দর জোকস বলেছেন। আপনি থ্রেট দিয়েছেন কিন্তু মারেননি এটার চেয়ে বেষ্ট জুকস আমি আর দুটো শুনিনি। আচ্ছা যা ইচ্ছা করুন হাজার টা মারুন কিন্তু আমি আর আপনার কাছে অত্যাচারিত হতে চাইনা । আপনার ঐ নোংরা হাতে আমার শরীর ছোয়া আমার একদম পছন্দ না ।
আফরান:কি শুরু করলে তুমি? বললাম তো আর আসবো না তোমার কাছে এটা দিয়ে দাও এখন ।দেখো বাড়াবাড়ি করলে পরে কি হতে পারে তোমার জানা আছে।
আরিয়া :পরের বার কিছু হওয়ার সুযোগ টাই দেবোনা । বলে আরিয়া ট্রিগারে হাত রাখলো ।
আফরান: আরু,স্টপ আমি মিথ্যে বলছিনা।প্রমিস আর তোমায় আর ডিস্টার্ব করবো না ।
আরিয়ার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ট্রিগার চাপ দেওয়ার ঠিক সে মুহুর্তে আফরান চিৎকার করে উঠে।
আরিয়া হতভম্ব হয় । আফরান যে এমন করতে পারে তার বোধগম্য হয়নি।
আফরান পাশের টি টেবিলের উপর থেকে গ্লাস টা ভেঙে ঠিক নিজ বুক বরাবর বসিয়ে দেয়।
সঙ্গে সঙ্গে আরিয়ার হাতের বন্ধুক টা পরে যায় নিচে।
আফরান দাড়িয়ে থাকতে না পেরে নিচে হাটু গেড়ে বসে যায় ।
আফরান ক্ষত জায়গায় হাত রেখে বলে ,,
__আরু … আমি তোকে বিশ্বাস করাতে পারবো না ,আর আটকাতেও … পারবোনা ।
কিন্তু…আহ .. কিন্তু নিজেকে তো আটকাতে পারবো ।
আফরান থেমে থেমে কথা গুলো শেষ করে। মুখে বেপোরোয়া হাসি।
আরিয়া দ্রুত এসে আফরানের সামনে বসে বলতে লাগলো,,
__আপনি এটা কেনো করলেন হা? পাগল হয়েছেন আপনি ? কেউ নিজেকে নিজে ইচ্ছে করে আঘাত করে ? বলেছিলাম না আপনি সাইকো ।দেখলেন আবার প্রমান হয়ে গেলো আপনি সত্যিই সাইকো । বলে চোখের জল ফেলতে লাগলো।
আফরান রক্ত মাখা হাত দুটো দিয়ে আরিয়ার চোখের জল মুছতে গিয়েও আটকে যায় ,,__
চোখের জল মুছো । দেখো একদম কাদবেনা ।আমি তোমাকে আর ছোবো না আমার এই অপবিত্র হাতে।
আরিয়া কেদে কেদে বলতে লাগলো,,
__আচ্ছা এখন আমি কি করবো ? আমার কি করা উচিৎ? হ্যা ! চাচা কে কল দেই।
আফরান মুখে বেপোরোয়া হাসি টেনে বললো,,
__লাগবেনা ,আমারো এভাবে বাচতে ইচ্ছে করছেনা আর কিন্তু তোমাকে দেখে দেখে জীবন টা কাটাতে চেয়েছিলাম…এটুকু বলেই.আহ..শব্দ করে আবারও হয়তো তীব্র ব্যাথায় নয়তো কারো অবাধ্যতার কারনে নিজকে এভাবে আঘাত করেছে ।
আমি চেয়েছিলাম আমার প্রতিটা সকাল যেনো তোমাকে দেখে পার হয় জানো —-
আজ বিষাধ ছুয়েছে এই বুক
তোমাকে নিয়ে কাটাতে চেয়েছিলাম কিছু কাল
তোমাতেই নিজেকে বিলীন করতে চেয়েছিলাম ,,
সেসব কিছুই হলোনা,,
আমার ভেতরে আজ শুধু আফসোসের বসবাস ,
শুধুই তুমি তে আমার শুন্যতা , আবার তুমিতেই ভরা ।
আফরান কথা গুলো থেমে থেমে বলছিলো।
আফরান নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছেনা
ঢলে পরলো ফ্লোরে
আরিয়া :কথা বলুন দেখুন ,আমি শুনছি আজ আপনাকে আমার কোনো তারা নেই ।আজ আপনাকে শুনবো ,আপনাকে বুজবো।
বলুন না আরো কিছু ।
হঠাৎ কেউ একজন এসে আফরানের সামনে বসে বললো,,স্যার কি হয়েছে আপনার ।
ভাবি বসের কি হয়েছে কথা বলছে না কেনো?
আরিয়া বিস্মীত হলো। কে উনি?
-আমি উনার এসিসট্যান্ট ।তানভীর
আরিয়া :আমি জানিনা কিছু।উনি একটু আগেই তো কথা বলছিলেন প্লীজ হসপিটাল নিয়ে চলুন না ,উনার কিছু হবে না।
তানভীর দেরী না করে আফরান কে উঠিয়ে গাড়ীতে বসালো ।
আরিয়া :আমিও যাবো
তানভীর:সরি ,আমি ছাড়া হসপিটাল কেউ যেতে পারবেনা।বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আরিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে ,,
কাজের মহিলা লতা বললো,
মি মাফিয়া পর্ব ১০
__আফামনি কাইন্দেন না স্যারের কিছু হইবো না।কিন্তু স্যার রে কেডায় কি করলো খানিক আগেই তো উফরে গেছিলো দেখছিলাম। আরিয়া লতা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
__খালা সব দোষ আমার ,আমি মেরেছি উনাকে।
লতা অবাক হয়ে বললো ,
__কন কি আফামনি আমি আমনেরে সিনি,আমনে দো স্যাররে উল্ডা ভয় ফান আমনে কেমনে মারবেন।
আরিয়া কিছু না বলে ডুকরে কাদতে লাগলো। তারপর…….