মি মাফিয়া পর্ব ২৮

মি মাফিয়া পর্ব ২৮
সুমাইয়া সাবিহা

আফরান পেট বিছানায় এলিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। আরিয়া ডিম লাইটের আলোতে একবার দেখে নিল আফরান কে। তার পর হাতের ছুড়ি টা দিয়ে ঘারের ঠিক নিচে বরাবর পিঠে আঘাত করলো ।
আফরান আহ শব্দ করে আকস্মীক মানুষ টিকে না দেখেই হাতের ছুড়ি টা নিয়ে এক হাত ধরে ধব করে শুইয়ে গলা বরাবর ছুড়ি টা ধরে বললো,বাড়িতে ঢুকার সাহস পেয়েছিল কিভাবে? কথা টা বলেই থমকে যায় শত্রুর জায়গায় আরিয়া কে দেখে ।

-কি করছিলি এখানে সত্যি করে বল?? পাগল হয়ে গেছিস?নাকি মরার ইচ্ছা হয়েছে?
আরিয়ার ভীত হিন সাহসী কন্ঠ: একদম মেরে দিবো ,আপনাকে মেরে তবেই শান্তি পাবো,যতো ঝামেলা আমার জীবনে সব আপনার জন্য। অন্য মেয়েদের সাথে বাড়িতে এসেও নষ্টামি করেন ,এটা কোনো পতিতালয় নয় ।
আফরান:ওহ প্রতিশোধ নিতে এসেছিস?
আরিয়া: বলতে পারেন সেটাই।
আফরান : তা আফরান চৌধুরী কে ভালো করে চিনিস তো? নাকি না জেনেই মারতে এসেছিস?
আরিয়া: খুব ভালো করেই চিনি ।
আফরান বাঁকা হেসে বললো ,ওকে ট্রাই করে দেখতে পারিস ,বলে হাতের ছুড়ি টা আরিয়ার গলা থেকে সরিয়ে বললো , খুব পাখা গজিয়েছে না নিজে থেকে মরার ? ঠিক আছে ,আমি ইচ্ছে করে বাঁচিয়ে রেখে কি করবো তোর ইচ্ছা টা পূর্ণ হবার চান্স দিয়ে দেই কি বলিস ? বলে আরিয়ার দুহাত একসাথে করে চেপে ধরে উঠে বসিয়ে পরনের উড়না টা দিয়ে বেঁধে দিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিয়া ছটফট করছে ছুটার জন্য।আরে কি করছেন ছাড়ুন বলছি ,,আমি আপনাকে মারবো বলেছি কিন্তু আপনি কেনো মারছেন আমায় ,ছেড়ে দিন।
আফরান কোনো কথা না বলে আরেকটা রশি নিয়ে আরিয়ার পা বেঁধে ,মুখে রুমাল বেঁধে কোলে তুলে ওয়াশরুমে দিয়ে দরজা লক করে দিয় সাথে লাইট টাও বন্ধ করে দিয়ে বলে ,আমার অবাধ্য হওয়ার পর ফল স্বরূপ ছোট গিফট তোর জন্য এটা ,,
এইটুকুনি মেয়ে আবার প্রতিশোধ ও বুঝিস ,নে এখন প্রতিশোধ।বলে বাঁকা হেসে খাটে বসলো । মেয়েটা পাগল হয়ে গেছে ,আমার সাথে গুন্ডামী করতে আসে ,সাহস কতো বড় ওর ।
আফরানের পিঠ বেয়ে রক্ত পড়ছে,আরিয়া এমন ভাবে আঘাত করবে সেটা আফরান কল্পনাও করেনি ,সে তো দরজা খোলা রেখেছে আগে ইচ্ছে করে ,যেনো আরু আসতে পারে কিন্তু এই মেয়ে তো ফুল কিলার ,নিজের হাসবেন্ড কে কেউ এভাবে মারতে পারে নাকি আফরানের জানা ছিলো না।

বাগান থেকে আজ ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে ,সেই ফুলের ঘ্রাণ সামিরা চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে ,,এইতো শীত প্রায় আগত বললেই চলে ,কদম ফুলের ঘ্রাণ টা একটু বেশিই পছন্দ সামিরার । তাইতো দুটো কদম হাতে দোলনায় বসে আছে ,ফুল দুটি তেমন ভালো নয় ,কুরিয়ে পাওয়া,গাছ টা এতো উঁচু যে সে পারবেনা উঠতে ,তাইতো নিচে পড়ে থাকা দুটো ফুল হাতে তুলে নিল। কিন্তু আজ আরিয়া টা নেই সাথে তাহলে তো গল্প করতে পারতো সে ,আজ এতোক্ষণ ঘুমোচ্ছে কিভাবে ও ,, অন্য দিন তো সকালে উঠে এখানে আসে তারপর আবার ঘুমিয়ে যায় ।
হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন চারপাশ টায়।

-হাতের হলুদ সাদা ফুল দুটি চুলে গেথে দিলে বোধহয় আরো সুন্দর দেখাতো ।
সামিরা পেছনে ফেরে সাদেক কে দেখে বলে কখন উঠলেন?
সাদেক:কদম ফুলের সৌরভ কি আর মানুষ কে ঘুমোতে দেয়?
সামিরা দোলনা থেকে দাঁড়িয়ে স্মীত হেসে বললো ,তা অবশ্য ঠিক বলেছেন ,,তাই আজ একটু জলদি উঠে গিয়েছি। রাতে বৃষ্টি এসেছিলো , ঝড়ো হাওয়া প্রবল হওয়ার দরুন ফুল দুটি আমি পেলাম ।
সাদেক:কদম ফুল পছন্দ?
সামিরা: হুম,,
সাদেক হাসলো ।

সামিরা: সকালের এই স্নিগ্ধ বাতাস টা দেখুন না কেমন শান্তি বইয়ে দিয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা আমাদের জীবন টাও এমন স্নিগ্ধ বাতাসের ন্যায় শান্তি পূর্ণ হতে পারতো না?
সাদেক: যদি সময়টা সব সময় এমন যেতো তবে এটা উপভোগ করতে কিভাবে যে, কড়া রোদের পর রোদহীন আলোকিতো বিকেল টা কেমন অনুভব হয় ? বৃষ্টি না হলে বুঝতে কিভাবে যে, বৃষ্টির পরের আকাশ টা কতটা স্নিগ্ধতা বইয়ে আনে?
সামিরা হেসে বললো ,তা অবশ্য ঠিক বলেছেন ।
সাদেক : ভেতরে চলো আবার বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে আকাশ টা দেখো
সামিরা : হুম এক্ষুনি মনে হয় পৃথিবী টাকে অন্ধকারে তলিয়ে দেবে ।
সাদেক:পরে দেখা যাবে আগে চলো ,বলে দুকদম রাখতে বৃষ্টি শুরু হলো ,সাদেক পাশে সামিরা কে না দেখে পেছনে তাকিয়ে দেখলো সামিরা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে,সাদেক গিয়ে সামিরার মাথার উপর ছাতা হিসেবে নিজের হাত দুটো বিলিয়ে দিলো।

-আরে ভিজছো কেনো ভেতরে এসো।
সামিরা :আমি ভিজবো ।
সাদেক: আরে এই সময় ভিজলে জ্বর আসবে অন্য দিন ভিজো।
সামিরা: এখন ভিজবো।হাত টা নামিয়ে নিন ।
সাদেক: আরে বুঝার চেষ্টা করো ।
সামিরা সাদেকের সামনে থেকে সরে একটু দূরে গিয়ে দুহাত মেলে চেহারা আকাশের দিকে করে চোখ দুটো বন্ধ করে দাঁড়ালো ।
আজ ভিষন ইচ্ছে করছে ভিজতে ,,
সাদেক নিজেও ভিজছে অথচ সেটা তার খেয়াল নেই ,সে তাকিয়ে আছে ঐ নিষ্পাপ মুখ খানার দিকে ,কতো টা শিশু শুলভ তার ব্যাবহার ,কতো সুন্দর নিষ্পাপ মুখখানা তার ।

– ইশ ,আমি যদি বৃষ্টি হতাম
-তবে সারা অঙ্গ জড়িয়ে নিতাম
ভেবেই মৃদু হাসলো সাদেক।
প্রায় আধ ঘন্টার মতো বৃষ্টি নিজ তেজ অনুযায়ী ঝড়ে ।
বৃষ্টি শেষে সামিরা আর দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে যায় ,সাদেক এখনো এক পানে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার পথের দিকে।
সামিরা সোজা উপরে গিয়ে প্রথমে আরিয়ার রুমের সামনে দাঁড়ালো ,কোনো শব্দ নেই ,হয়তো এখানো ঘুমোচ্ছে,তাই সামিরা আজ আর না ডেকে নিজের রুমের দিকে গেলো ,নিচে লতা নাস্তা তৈরি করছে ।সামিরা রুমে গিয়ে একবার ঘড়ির দিকে তাকিলো ,আট টা বাজতে চলেছে প্রায় ,সামিরা অবাক হলো এতো সময় আজ বাগানেই কাটালো ? দেরী হয়ে যাচ্ছে তো ,৯ টায় তো কলেজ ,
দ্রুত কভার্ড থেকে এক সেট জামা নিলো , কিন্তু গোসল খানা খালি নেই ,হয়তো আয়শ গোসল করছে ,তাই অপেক্ষা করছে,শীতে সামিরা কাঁপছে ।ঠান্ডায় পুরো শরীর যেনো বরফ হয়ে যাচ্ছে।
আয়শ শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে চোখ আটকায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার প্রতি ,,পরনে সাদা গাউন ,পাতলা উতনা টা গলায় ঝুলিয়ে রাখা, শরীরের সাথে লেপ্টে আছে গাউন টা , কিন্তু ভাড়ী হওয়ার কারণে শরীর স্পষ্ট নয় ।
আয়শ কপাল কুঁচকে পাশ কেটে চলে যায় । সামিরাও কিছু না ভেবে শাওয়ার নিতে চটজলদি ভেতরে যায়।

আরিয়া এখনো ওয়াশ রুমেই আটকানো । আফরান রাতে একবারের জন্যও দরজা টা খুলে দেখার চেষ্টা করেনি ,আরিয়া চিৎকার করতে না পেরে গোঙায়, কিন্তু আফরান নিজের মতোই রাতেই তানভীর কে কল দিয়ে ডেকে পিঠের কাটা জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
সবাই খাবার টেবিলে আছে এই মুহূর্তে,,আরিয়া এখনো আসছেনা দেখে জাফর জিজ্ঞাসা করছে,আরু এখনো কেনো আসছেনা,সামিরা বলেছে ,সকালেও আজ আরু উঠেনি হয়নি হয়তো শরীর ক্লান্ত ভিষন,
জাফর সাহেব বললো :ওকে ডেকে আনো।
সামিরা জাফরের কথা মতো আরিয়া কে ডাকতে যায় , কিন্তু আরিয়া রুমে নেই ,তাই ওয়াশ রুমে আছে কিনা দেখে নেয় , ওয়াশ রুমে ও নেই ,,কোথায় গেলো আরু? তাই কয়েকবার দেখে নিয়ে রুমের বারান্দায় পা বাড়ায় ,আজব তো সেখানেও নেই ,বাগানেও নেই ,গেলো টা কোথায় এই মেয়ে? সামিরা দ্রুত পায়ে ছাদে যায় ,গিয়ে এক দফা হয়রান হয়েই নিচে এসে জানায় আরু বাড়ির কোথাও নেই ,ও সব জায়গায় ভালো করেই দেখেছে ।
কথা শুনে সবাই আশ্চর্য হয় , তাহলে কোথায় গেলো আরিয়া ? জাফর সাহেব টেবিল ছেড়ে নিজে গিয়ে একবার রুম টা দেখে নিলো নেই তো কোথাও ।

আয়শ:এবার উঠে সোজা আফরানের রুমের যায় ,আফরানের দরজা আটকানো ।
-দরজা খোল,আরু কি তোর কাছে?
আয়শের কথার আওয়াজে শুনে সবাই উপরে আফরানের রুমের সামনে ভির জমায়
,এখন মনে হচ্ছে হ্যাঁ এখানেই আছে ,কোথাও নেই মানে আফরানের কাছেই তো থাকবে তাইনা।ঐ ছেলে সুযোগ পেলেই চোখ মেয়েটাকে অত্যাচার করে।
সামিরা: আমার মাথায় তো একদম ছিলো না এটা ,যে আরু এখানে থাকতে পারে ।
সাদেক: আমি ঠিক বুঝছি না , ভাবি এখানে কি করবে? তাও আফরান ব্রোর রুমে ,,সাহসের প্রশ্ন নাহয় পরে আসবে আগে কথা হলো ,অন্য একজন পুরুষের রুমে এভাবে দরজা আটকে ভেতরে থাকার মানে আছে?
সাদেক কথা টা এই মুহূর্তে সামিরা ছাড়া কারো বুঝার বাহিরে ছিলো ,তাই পাত্তা দিলো না কেউ ।
জাফর সাহেব বেশ জোড়ে জোড়ে আফরানের রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে,
বেশ খানিক বাদে আফরান ঘুমের কারনে হেলেদুলে এসে দরজা খোলে চোখ দুটো একটু বড় করে বুঝার চেষ্টা করলো হয়েছে কি এখানে?
জাফর: ফাজলামি পেয়েছো সব কিছু? আরিয়া মামনি কোথায়? বলেই জাফর আফরানের রুমের ভেতরে ঢুকে গেলো ।

আফরান:আরে হচ্ছে টা কি আমার রুমে আসার পারমিশন আমি কাউকে দেইনি,সাহস কি করে হলো ভেতরে আসার?
জাফর: তোমার পারমিশন মাই ফুট ,আমার মামনি কোথায়? সেটা বলো।
আফরান: তোমার মামনি টা আবার কে?
জাফর: একদম বাজে কথা বলে কথা এড়াবে না ,,সত্যি করে বলো কি করেছো ওকে? কোথায় ও?
আয়শ: কিরে তুই কি ভালো হবিনা কখনো? কোথায় রেখেছিস ? কি করেছিস ওর সাথে কোথায় আরিয়া?
আফরান দরজা ছেড়ে খাটে গিয়ে বসে ডেভিল হেসে বললো ,আমি জানি কি ,তোদের বোন তোরা জানিস ।
আয়শ ভেতরে এসে বললো: আমি খুব ভালো করেই জানি তোর কাছেই আছে আরিয়া ,বল কোথায় ?
আফরান বসা থেকে দুহাত মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো , গিয়ে দেখ হয়তো গুন্ডামি করতে কোথাও গিয়েছে , মানুষ মারার জন্য হাত উশখুশ করছে ওর ।
সামিরা: ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন ,আরীয়া কেনো মানুষ মারতে যাবে ,তাছাড়া ও রাত্রে ঘুমিয়ে ছিলো ওর রুমে দেখেছি আমি।

আফরান: আমি তো সেটাই বলি , সুন্দর ভাবে ঘুমা ,ভালোভাবে চল , কিন্তু এই মেয়ে আমার কথা শুনে? অবাধ্য হয়েই চলবে ,বাধ্য মেয়ের মত যদি কথা শুনতো তাহলে আজ এতো কিছু হতোনা ।
জাফর আফরানের বিশাল ছাদের মতো বারান্দাটায় একদফা খোঁজে এসে আফরান কে বললো ,তুমি সব কিছু এমন ভাবে হালকা ভাবে নিতে পারো না আফরান। চোখে জল নিয়ে জাফর বললো ,সত্যি করে বলো তো মেরে দিয়েছো না তো আবার আমার মেয়েটাকে ,বলো ,,তোমার মতো কুলাঙ্গার,বদমাশ সন্ত্রাসী ছেলে সব কিছু পারে ।
আফরান আবারো হাসলো কিন্তু কোনো উত্তর করলো না।
সাদেক : ব্রো তুমি ওর সাথে কেনো কিছু করবে সেটা আমি এই মুহূর্তে বুজতেছি না তবে সবাই যেহেতু বলছে নিশ্চিত কোনো কারণ অবশ্যই আছে ,যদি তোমার কাছেই আরিয়া ভাবি থেকে থাকে তাহলে বলে দেও ,সবাইকে এমন চিন্তায় ফেলে লাভ কি তোমার ?
আফরান তখনো কিছু বললো না ।

আয়শ: বলবি তো কিছু নাকি ? কোথায় আটকে রেখেছিস নাকি মেয়ে টাকে অজ্ঞান করে কোথাও ফেলে রেখেছিস , যতটুকু চিনি তোকে নিশ্চয়ই একেবারে তো মেরে ফেলবি না ।
আফরান: গুড, ইন্টেলিজেন্ট বয় ,দেখ গিয়ে কোথাও পরে আছে কিনা ,,আর আপাতত আমার রুম থেকে বের হ সবাই ,এমনিতে রাতে ঘুম কম হয়েছে।
জাফর: বাড়িতে একটা মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুমি ঘুমোবে?
আফরান: তা আমি কি‌ করবো? তোমাদের সাথে কি আমার মাথাটাও খাবো ওটার জন্য? যতো সব ! যাও তো রুম ছাড়ো ফটাফট।
আয়শ কি যেনো ভেবে যেনো স্থান ছেড়ে সোজা গিয়ে ওয়াশ রুমের দরজা টা খুলে দিলো ,এক দফা শক্ড খেলো,আরিয়া কাত হয়ে পড়ে আছে ,মুখে কাপর বাধা ,হাত পা বাঁধা, শরীর হালকা ভেজা ,মুখ লাল হয়ে পড়ে আছে । আয়শ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আফরান কে উদ্দেশ্য করে বললো ,তোর মতো পাষান্ড ছেলে আমি আর দুটো দেখিনি, বলে আয়শ দ্রুত পায়ে ওয়াশ রুমের ভেতরে ঢুকে। সবাই আয়শের দিকে তাকায় ,সবার বুঝার বাকি রইলো না ওখানে কি হয়েছে। সবাই দৌড়ে ওয়াশ রুমের সামনে যায় ।
আফরান দ্রুত পায়ে খাট থেকে উঠে বললো ,আয়শ ডোন্ট টাচ ,একদম হাত লাগাবিনা নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম ।

আফরান কথা টা বলার আগেই আয়শ আরিয়া কে দুহাতে কোলে তুলে নেয় ।
আফরান এসে দেখেই দুহাতের মুঠি শক্ত হয়ে আসলো। মুহূর্তে যেনো চোখ দুটি লাল হয়ে গেলো ।
আফরান ভেতরে ঢুকে আয়েশের কলার চেপে ধরে কিছু টা জোড়েই বললো,সাহস হয় কি করে আরু কে ছোঁয়ার ? কেরেক্টারলেস ? বউ থাকতে আরেক জন কে স্পর্শ করিস ,
আয়শ: নিজে এক তো উন্মাদ আবার মেয়েটাকে ও পাগল বানিয়ে দিবি এটাই ভেবে নিয়েছিস নাকি ? আমি ভেবেছিলাম রিয়েলিই ওর প্রতি তোর আলাদা ফিলিং আছে বাট আমি ভূলে গিয়েছিলাম তোর মতো ছেলের মধ্যে ফিলিং আসাটাই অসম্ভব । আপাতত টাচ করেছি তোর মতো আঘাত তো দেইনি তাইনা ? হাত সরা আর সামনে থেকে সর‌।

আফরান কি করবে এই মুহূর্তে জানা নেই ,তার আরুকে সে যা ইচ্ছা করবে অন্য কারো তাদের মাঝে আসাটা একদম পছন্দ হলো না ,তার উপর এমন ভাবে কোলে তুলে দাঁড়িয়ে আছে এই ছেলে , আফরান আয়শ কে ছেড়ে দিয়ে বাঁকা হেসে চারদিক টা একবার নিলো । দেখেই বুঝা যাচ্ছে উল্টা পাল্টা কিছু করবে ।
জাফর: আফরান একদম উল্টা পাল্টা কিছু করবেনা আয়শ কে বাহিরে আসতে দাও মেয়েটার অবস্থা দেখো পরে তোমরা ঝামেলা করো ।
সাদেক হা হয়ে তাকিয়ে আছে হচ্ছে টা কি এসব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব ।
আফরান আকস্মিক স্টিলের শাওয়ার টা শরীরের সব টা শক্তি দিয়ে এক হাতে ভেঙে আয়শের মাথায় আঘাত করে বসলো , সাদেক না চাইতেও স্টপ ব্রো ,বলে জোড়েই আওয়াজ করলো ,জাফর সাহেব বাকরুদ্ধ হয়ে যায়,সামিরা ঘাবড়ে যায় ।

আয়শের মাথা থেকে রক্ত বেড় হচ্ছে , কিন্তু সেটা বুঝার উপায় নেই কারন শাওয়ার টা ভেঙে যাওয়ার কারনে পানির স্রোতের সাথে ভেসে যাচ্ছে রক্ত গুলো , সাদা টাইলস গুলো লাল দেখা যাচ্ছে ।
আয়শ ঠাঁই এখনো দাঁড়িয়ে আছে ঢলে পড়বে পড়বে অবস্থা,,কাতর কন্ঠে বলতে লাগলো ,পাগল হয়ে গেছিস আফরান,মাথা টা কি সত্যি গেছে তোর?
আফরান‌ কিছু না বলে আরিয়া কে আয়শের হাত থেকে নিয়ে নিলো ।
পানিতে ভিজে যাচ্ছে তিন জনই ।
জাফর আর সহ্য করতে পারলেন না , স্তম্ভিত ফিরলে ভেতরে আসে আফরানের গালে ঠাস ঠাস করে দুগালে ২ টা করে ৪ টা চর বসালো,আমি উন্মাদ দেখেছি কিন্তু তোমার মতো সজ্ঞানে থাকা এমন উন্মাদ আর দুটো দেখিনি ।
আফরান আবারো হাসি রেখে ,বললো , আমার বউ কে অন্য কেউ কোলে তুলবে আর আমি দাঁড়িয়ে দেখবো?
জাফর আফরান কে আর কিছু না বলে আয়শ কে গিয়ে ধরলো ,কারন তিনি জানেন আফরান কে কিছু বলাই বৃথা ।
আয়শ কে ওয়াশ রুম থেকে বের করে নিয়ে এসে সামিরা কে বললো ,বউমা ডা: ডাকো জলদি ।
সাদেক আয়শ কে ধরে বললো , খুব ব্যাথা পেয়েছিস তাইনা , এতো জঘন্য ব্যাবহার তোর ভাই করতে পারে জানা ছিলো না ।

সামিরার চোখ ভেজা ।
সাদেক বললো ,আমি ডা: কে কল দিচ্ছি , ওয়েট আমার কাছে তো নাম্বার নেই এখান কার কোনো ডা: দের ।
সামিরা চটজলদি বললো,আ…আমি দিচ্ছি কল । বলে সামিরা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ।
আয়শ এখনো স্ট্রং দাঁড়িয়ে কিন্তু চোখ দুটো বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ,,জাফর কে কাপা গলায় বললো ,বাবা আমি ঠিক আছি ,,আরিয়াকে দেখো তুমি,,
জাফর আরিয়ার কথা মাথায় আসতেই পেছনে ঘুরে তাকালো ,,
আরেক দফা শর্ট খেলো,কি করছে এই ছেলে কি সত্যি উন্মাদ?
আফরান নিজের শরীরে থাকা ব্লাক কোট টা আরিয়াকে পরিয়ে দিয়েছে , এতোক্ষণ পানির নিচে থাকার কারনে আরিয়ার চোখ দুটো হালকা বারি খাচ্ছে,, কিন্তু খোলতে পারছে না ,,পানির কারনে ।
হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়েছে ,
জাফর: করছো কি তুমি এতো কিছুর পরেও মেয়েটাকে পানির নিচ থেকে নিয়ে আসছো না ,আর এটা পরানোর কি দরকার ছিলো এমনিতেই তো শরীর ঠান্ডায় বরফ হয়ে আছে বোধয় । নিয়ে এসো । মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায় তোমাকে আমি ত্যাজ্য পুত্র করবো আফরান শুনে রাখো ।

আফরান কারো কথায় কান না দিয়ে আরিয়ার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ,,আরিয়াকে দেখে বুজতে পারছে জ্ঞান ফিরেছে তাই আরিয়া কে কোলে থেকে নামিয়ে দিলো । আরিয়ার শরীর দুর্বল হয়ে আছে , ঠান্ডায় কাঁপছে শরীর । দাঁড় করানোর পর এক হাতে চোখ মুছে তাকালো,,,সামনে তাকিয়ে জাফর কে দেখলো । কিছু বলতে‌ যাবে তার আগে পাশে থাকা আফরান কে দেখে ভয় পেলো । হঠাৎ মাথাটা কেমন যেনো করছে ,আরিয়ার স্তম্ভিত ফিরে ,, রাতের সব টা মনে পরে ,,
উপর থেকে সবেগে পানি পরছে আফরান আরিয়ার গায়ে । আরিয়া ভয়ে ,ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে জোড়ে জোড়ে কেদে দিলো‌।
জাফর : মামনি ভয় পেয়েও না আমরা আছি তো ।
আরিয়া কেঁদেই যাচ্ছে।

সাদেক: ভাবি আপনি কাঁদবেন না আপনার কিছু হয়নি ,আপনি একদম ঠিক আছেন।
আয়শ আরিয়া কে দেখে স্মীত হাসলো নিজের কথা ভুলে গেলো ,নিচ থেকে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে জাফর বললেন , ডাক্টরর এসেছেন বোধহয়,আয়শ তুমি যাও নিজেকে ঠিক করো আগে ,আমি দেখছি এদিকটা ।
সামিরা এসে কাঁদো কাদো গলায় বললো,আপনি জলদি আসুন না ডক্টর এসেছেন ,,বলে আরিয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে সামনে এগিয়ে এসে বললো, আরিয়ার জ্ঞান ফিরেছে?
আয়শ কিছু না বলে দুকদম হেঁটে ঢলে পরে যেতে নেয় ,সামিরা দেখা মাত্রই ধরে নেয় ,আপনার শরীর অনেক দুর্বল পারবেন না একা যেতে আমি আসছি । বলে আয়শের ডান হাতের নিচ দিয়ে পিঠের উপর থেকে জড়িয়ে আয়শের এক হাত নিজের কাঁধের উপর রেখে ধীর পায়ে হাঁটা ধরে ।
আরিয়া ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেই চলেছে ।

জাফর আফরান কে ধমকিয়ে বললো,করছো টা কি দাঁড়িয়ে? নাটক দেখছো? আরিয়া কে নিয়ে এসো ।
আফরান কোনো কথা না বলে , বালতি ভর্তি পানিতে পাশে থাকা সেভলন নিয়ে সেটাতে ঢেলে আরিয়ার শরীরে ঢেলে দিলো।
সাদেক:bro What are you doing? কি করছো উন্মাদের মতো ?
আফরান কিছু বললো না ।

আরিয়া :আমি তো ভিজেই আছি আর কতো শাস্তি দিবেন? রাত থেকে আটকিয়ে রেখেছেন। অমানুষের মতো ।
আফরান কপাল কুঁচকে তাকায় , আরিয়া চুপ হয়ে ভয়ে জড়সড় হয়ে ভাবে,এখন যদি উনি বলে দেন আমি উনাকে মারতে এসেছিলাম রাতে তখন কি হবে ,ভেবেই ভয়ে দুকদম পিছিয়ে ঢুক গিলে।
আফরান এই মুহূর্তে খালি গায়ে আছে ,শরীরের সব গুলো ক্ষতো জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।
আফরান আর কিছু না বলে বের হয়ে যায় ।

মি মাফিয়া পর্ব ২৭

সাদেক : ভাবি ভয় পাবেন‌না আপনি আসুন ,
জাফর আরিয়া কে ধরে বের করে নিয়ে আসে ,আরিয়ার শরীর ঠান্ডায় বরফ হয়ে আছে ।
আরিয়া আফরান কে পেছন ঘুরে একবার দেখে নেয় ,ইশ কতটা আঘাত করে ফেলেছে সে , আচ্ছা উনি কি ব্যাথা পান না? তাহলে এতো স্ট্রং কেনো শরীর? অথচ সব টা শরীরে যখম। তারপর…..

মি মাফিয়া পর্ব ২৯