মি মাফিয়া পর্ব ২৯

মি মাফিয়া পর্ব ২৯
সুমাইয়া সাবিহা

সকাল থেকে থেকে সামিরা আয়শের পাশে বসে যত্ন নিচ্ছে ,খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে , ডাক্তার মাথায় বেন্ডেজ করে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গিয়েছিলো , দীর্ঘ ঘুম ভাঙ্গার পর ভারী ভারী লাগছিলো শরীর,সকালে কিছু খায়নি বিধায় খাবার এনেছিল ,আয়শ না খেতে চাইলেও জোড় করেই খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।
সামিরার চোখে মুখে হতাশার ছাপ ।
সাদেক সকাল বেলা ডাক্তার যাওয়ার পরে দরকারি কাজে বেরিয়েছিল,এখনো অব্দি আসেনি ।
এখন সময় টা সন্ধ্যা বিকেল বলা যায় ।
ওদিকে লতা আরিয়ার সেবা করে যাচ্ছে , শরীর তাপমাত্রা ভিষন রকম চেপে আছে আরিয়া কে , একটু পরপর শরীর মুছে দিচ্ছে ,আবারো শরীর গরম হচ্ছে।

আয়শের শরীর গরমে ঘামছে ভীষণ ,,সেই থেকে শুয়ে থাকতে তার একটু ও ভালো লাগছে না। সামিরা একটু পরপর গিয়ে আরিয়া কে দেখে আসছে । আসলে বাড়িতে অল্প মানুষ হলে এধরনের প্রবলেমে পরতেই হয়।
আয়শ কে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে দেখে সামিরা বললো, এখন ভালো লাগছে?
আয়শ: আগের থেকে বেটার ।
সামিরা : আমি একটু গোসলে যাই ,আপনি এখানেই থাকবেন ঠিক আছে ,,
আয়শ কপাল কুঁচকে বললো: এই সন্ধায় গোসল? সকালে তো দেখলাম,, সাদেকের সাথে ভিজছিলি ,ওটাতে হয়নি?
সামিরা: আরে সকাল থেকে বসে আছি আছি তো তাই কেমন যেনো অস্বস্থী হচ্ছে ,, শাওয়ার টা নিলে মনে হয় ভালো লাগবে ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আয়শ: জ্বর উঠলে এর দায় কে নিবে?
সামিরা এবার কপাল‌কুচকায়: আজব তো এখানে দায় এর কথা কোথা থেকে আসল?
আয়শ: হ্যাঁ আসলো তো ,তা যেখানে থেকেই আসুক।এখন গোসল দেওয়া লাগবে না।
সামিরা: আজব তো আমি গোসল দিলে আপনার সমস্যা কোথায় ?
আয়শ এবার চোখ খুলে তাকিয়ে বললো , কি বললাম শুনিসনি ?
তর্ক করছিস কেনো? চুপচাপ বসে থাক।
সামিরা উঠে দাঁড়িয়ে বললো ,পারবোনা ,,আপনি না অসুস্থ তাহলে এমন ঝগড়া কেনো করছেন? চুপ করে শুয়ে থাকুন না।

আয়শ: অসুস্থ বলে কি কথাও বলবো না আজব তো ,,তুই তো আগে আমার সাথে এমন ঝগড়া করতিস না এখন কেনো গ্রামের মহিলা দের মতো উঠে পরে লেগেছিস?
সামিরা: ভাইয়া ,এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে এমন অপমান দিচ্ছেন কেনো?
আয়শ:ওহ গড,ঠিক আছে যা ইচ্ছা কর ।যাহ তো ,মাথা টা ধরিয়ে দিলি মুহূর্তে।
সামিরা এবার ঠান্ডা হয়ে আবার খাটের সাইডে বসে আয়শের কপালে হাত রাখলো।
আয়শ সামিরা হাত ধরে কপাল কুঁচকে বললো: আমাকে বলে ছুয়েছিস?
সামিরা: আজব তো এখানে বলার কি আছে ,এইতো বললেন মাথা ব্যাথা ।
আয়শ: বললাম বলেই টিপে দিতে হবে? আমি কি এটা বলেছি?
সামিরা হতাশ কন্ঠে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো ,ঠিক আছে দেবো না ,হাত ছাড়ুন ,,আমার শরীর কেমন যেনো করছে ,গোসল দেবো।

আয়শ: না ছাড়লে কি করবি হ্যাঁ? বললাম না এই সন্ধায় আবার গোসলের প্রয়োজন নেই।
সামিরা: কখনো তো এমন নিষেধ করেননি ,এখন কেনো করছেন? আমি তো প্রায় এমন সময় করি কলেজ থেকে ফিরে প্রথমে ঘুমোই পরেই তো গোসল দি ,আপনি তো সন্ধায় ফিরে প্রায়ই দেখেন ,তবে আজ কেনো এতো নিষেধাজ্ঞা?
আয়শ: আজ আমার ইচ্ছে করছে তাই ,একদম চুপচাপ এখানে বসে থাক নয়তো মার একটাও মাটিতে পরবেনা।
সামিরা ক্লান্ত হয়ে বললো: ঠিক আছে করবো না , অন্তত ফ্রেস হতে দিন।
আয়শ: ঠিক আছে যা , দুপুরে খেয়ে ছিলি?
সামিরা : আপনার জেনে কাজ নেই ।
আয়শ: তা লাগবে কেনো? সাদেক কে বলে বলে খাস। আমাকে বলতে হবেনা ,বলে হাত টা ছেড়ে দেয়
সামিরা: আজব তো আমি সাদেক ভাইয়া কে বলে কেনো খাবো?

আয়শ: একসাথে বৃষ্টি যে ভিজতে পারবি ,তাই এটা বলতেও অসুবিধা হবেনা তাইনা?
সামিরা কপাল কুঁচকে বলে: আপনি কিভাবে দেখেছেন? আপনি তো ঘুমোচ্ছিলেন।
আয়শ: তা জেনে কি করবি । সামনে থেকে যা ।
সামিরা আর কিছু না বলে ওয়াশ রুমে ঢুকলো।
প্রায় সন্ধার পর সাদেক এসে সোজা আয়শের কাছে যায় ,এখন কেমন আছিস?
আয়শ:ভালো
সাদেক:মাথায় ব্যাথা হয়না?
আয়শ: একটু
সাদেক: দেখেই বুঝা যাচ্ছে একটু নাকি বেশি ।একটু বিধায় তো এতো গুলো রক্ত বের হয়েছে।
আয়শ কিছু বললো না
সাদেক:তা তোর ভাই এমন উগরো মেজাজের কেনো রে? এগুলো কোন ধরনের পাগলামি? কি থেকে কি হলো যে নিজের ভাইকেও আঘাত করতে বুক কাপলো না ।
আয়শ : তুই বুঝবি না আফরান এমনি একটু উন্মাদ।
আয়ের দুষ্টু কন্ঠ ।

সাদেক: এমন অবস্থায় ও তোর মজা শেষ হয় না? আর এখনো এ পাগলা ভাইয়ের পক্ষে কথা বলবি? কিন্তু আগে তো আফরান ব্রোর ব্যাপারে অন্য কিছু শুনতাম তোর কাছে হঠাৎ কি হলো যে ,মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পরেও ভাইয়ের পক্ষই নিচ্ছিস? তাও তোর নিজের বউ কে ঐ ব্যাটা এমন করেছে এটা দেখার পরেও?
আয়শ কপাল কুঁচকায়।,
__আমার বউয়ের সাথে আবার আফরান কি করলো রে?
__আজব তো ,দেখলিনা বাথরুমে কেমন আটকে রেখেছিল হাত পা বেঁধে যদি এমন ভাবে মরে যেতো বেচারি?
__ আমি বোধয় পাগলা গারদে আছি যেদিকে তাকাই সব গুলো পাগল।
___মানে কি বুঝালি?
___আরু আমার বউ হতে যাবে কেনো? আজব । তোর মাথা কি গেছে ?
__: আশ্চর্য তো সারাজিবন তো আরুকেই বউ সাজাবি কল্পনা করে এলি ,বিয়েও হলো এখন বলছিস আরিয়া কেনো বউ হতে যাবে ? ফাজলামো করিস আমার সাথে?
আয়শ: তোর বুজতে কোথাও ভুল হচ্ছে সাদেক আরিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়নি ।

__হুয়াট? তাহলে কার সাথে হয়েছে ?এই বাড়িতে তো আর কাউকে দেখলাম না আসার পর থেকে ।
__দেখিসনি মানে কি ? তুই ঠিক কি বুঝাতে চাইছিস বুঝিয়ে বলবি?
___সেম কোয়েশ্চন , কি বলতে চাচ্ছিস বুঝিয়ে বল ,আরু যদি বউ নাহয় তবে তোর বউ কোথায় ? আমি তো দেখিনি আসার পর থেকে আর সকালে তো আরুর জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলিস দেখেছিলাম তাছাড়া আরু কে কোলে তুলে নিয়েছিলিস এসব কি মিথ্যা আমি কি ভূল দেখলাম?
আয়শ: তোর দেখাটা ভূল নয় ভাবনা টা ভুল
সাদেক: কি বলতে চাচ্ছিস?
আয়শ: হুম ,শুন
আমার সামিরার সাথে ঘটনাক্রমে বিয়ে হয়েছে আরুর সাথে নয় ।
সাদেক কথাটা শুনে যেনো এক মুহুর্তের জন্য থমকে যায় , সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে বললো ,

__হুয়াট?কি বলছিস মাথা ঠিক আছে তোর? এই বাড়ির প্রত্যেক টা পাবলিকের কি মাথা এমনি নষ্ট ?
আয়শ আশ্চর্য হয়
__ হঠাৎ কি হলো তোর এমন ভাবে চটে গেলি কেনো?
___আমাকেও কি পাগল মনে হয় তোদের কাছে? তোর সাথে সামিরার বিয়ে হয়েছে মানে কি? হ্যাঁ? মজা পেয়েছিস সব কিছু?
আয়শ: আরে এমন ভাবে রিয়েক্ট করছিস কেনো?
সাদেক: কিসের রিয়েক্টের কথা বলছিস? সামিরা কে তো জান প্রান দিয়ে বোন দাবী করতিস তবে এখন কিভাবে বউ বানালী? আমাকে তোদের কাছে কি মনে হয় ? পাগল? যেটা ইচ্ছে সেটা বুঝাবি
আয়শ আশ্চর্য হয় সাদেকের এমন রিয়েক্ট দেখে আগে তো কখনো এমন রাগ দেখেনি সাদেকের ? আর এই বিয়েতে নাহয় আমার প্রবলেম কিন্তু ও এটা শুনে এমন ভাবে রিয়েক্ট করছে কেনো?
সামিরা এতোক্ষণ আরিয়ার রুমে ছিলো , হঠাৎ চেঁচামেচি আওয়াজ শুনে দৌড়ে এখানে এসে দেখে সাদেক কোনো বিষয়ে রেগে আছে।

সামিরা রুমে ঢুকে বললো : কি হয়েছে ভাইয়া ? হঠাৎ এভাবে রিয়েক্ট করেছো কেনো? আয়শ ভাইয়া কিছু বলেছে?
সাদেক : তোমরা কি শুরু করেছো ? আমাকে কি ফেলনা মনে হয় ?
সামিরা:এভাবে কেনো বলছেন ভাইয়া ? কি হয়েছে সেটা বলুন না।
সাদেক : তোমার আর আয়শের বিয়ে হয়েছে এটার মানে কি সামিরা? বলো আমায় । এসবের মানে টা কি?
সামিরা:হুম কারন বশত হয়ে গেছে । কিন্তু কি হয়েছে সেটা বলুন না।
সামিরা মুখে কথা টা শুনে সাদেক যেনো স্তব্ধ হয়ে যায় মুহূর্তে।
সামিরা আয়শ কে বললো:সত্যি করে বলুন তো ভাইয়াকে কি এমন বলেছেন?
আয়শ: আমিও সেটাই ভাবছি কি এমন বললাম তোকে এমন করছিস কেনো?
সাদেকের মুখে কথা নেই বরং চুপচাপ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে কোনো উত্তর না দিয়ে ।
সামিরা কপাল কুঁচকে আয়শ কে বললো ,এবার বলুন কি হয়েছে?
আয়শের মাথায় এতোক্ষণে আসলো ব্যাপার টা কি হতে পারে । একটু খেয়াল করতেই উত্তর আয়শের জানা হয়ে গেছে।

আয়শ দুচোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে আফসোসের মতো কিছু টা।
সামিরা:কি হলো হঠাৎ? বলেছেন না কেনো?মাথায় ব্যাথা হচ্ছে?
আয়শ:এখান থেকে যাও।
সামিরা উল্টো আয়েশের পাশে গিয়ে বসে বললো ,
__একটু গার্ডেনে গিয়ে হাঁটা দিন ভালো লাগবে।
আয়শ ধমক দিয়ে বললো :
__কি বলি বুঝিস না ? যেতে বললাম না? বউদের মতো আচরন বন্ধ কর নয়তো চলে যা এ বাড়ি থেকে । একদম বিরক্তিকর সব । যতো সব ন্যাকামির জায়গা পাস না ।
সামিরা আয়শের কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে এখনো ।এটা উনি বলতে পারলেন ?
আয়শ একটু ক্ষনিক পর নিজেকে শান্ত করে বললো
__দেখ সামি….এটুকু বলতে সামিরা বলে উঠলো :
___ঠিক আছে আমি দেখছি । বলে রুম ছাড়লো।

সামিরা:কি বলছিস ,বাবা জানলে বকা দেবে অনেক একা একা কখনো যাইনি তো । তার উপর তুই অসুস্থ।
আরিয়া:আরে কিছু হবে না ,,যাবো আর আসবো ,তাছাড়া প্রেমাও তো যাবে তাইনা ,,
সামিরা :স্কুল পালিয়ে যাওয়া একরকম আর বাড়ি থেকে যাওয়া আরেক রকম বুঝার চেস্টা করে আরু।আর আমি এখন এই বাড়ির বউ।
আরিয়া:রাখ তো তার বউ বউ ভাব ,যাবি কিনা বল ,
সামিরা না পারতেই বললো ,ঠিক আছে । আমারো দুদিন ধরে বোড় লাগছে ,কলেজ ও যাওয়া হয়না ।
আরিয়া:সেটার জন্যই তো বললাম ,তাছাড়া প্রেমা কেও তো একটু হেল্প করার দরকার তাইনা ।যতই হোক কপালে একটা প্রেম জুটালো এটা কি আর ডিলেট দেবে?
সামিরা হুহু করে হেসে বললো ,সেটাই তো ,ফ্রেন্ড হয়ে হেল্প না করলে কি করে হবে চল,যাবো ।
আরিয়া:আরে এখন না ,বিকেলে।
সামিরা:বিকেলে তো আয়শ ভাইয়া বাসায় থাকবে 😫 অসুস্থতা দিয়েও গিয়েছে বাবার সাথে ,বাবা নিশ্চিত জলদি পাঠিয়ে দেবে তাইনা।

আরিয়া:আরে ভাইয়া কিছু বলবেনা,,
সামিরা কি যেনো ভেবে বললো ,ঠিক আছে ।
আরিয়া :এখন গিয়ে একটু আমার জন্য সুপ বানিয়ে আস যাহ😴
আরিয়া:এহ, আসছে আমার নবাব জাদী,শুন তোকে ভাইয়া শাস্তি দিয়েছে এর পিছনেও কারন আছে নিশ্চয়ই কারন ছাড়া ভাইয়া তোকে এমন করবেনা এটা আমার ভালো করেই জানা আছে ,সত্যি করে বল কি করেছিস।
আরিয়ার চোখে ভয়ের ছাপ,
সামিরা:দেখ কিরকম ভয় পাচ্ছিস আমার প্রশ্নে ,এখন তো আমি নিশ্চিত বড় কোনো কারন অবশ্যই আছে।
আরিয়া : আরে আশ্চর্য আমি কি করবো উনাকে? উনি তো আমাকে এমনি এমনি শাস্তি দেয় দেখিস না,চার বছর আগের কথা ভূলে গেছিস?
সামিরা:কোনটা?
আরিয়া:আরে ভাইয়া আমাকে শুধু শুধু যে মেরেছিলো।
সামিরা:তোর কথা অনুযায়ী ভাইয়া সব সময় শুধু শুধুই মারে বাট কারন ছাড়া কেউ ভালোবাসার মানুষের গায়ে হাত তুলতে চায়না।

আরিয়া:তা চার বছর আগেও কি ভাইয়া আমায় ভালোবাসতো? যদি তাই হয় তাহলে আমার পুরো শরীরে ব্লেড দিয়ে আঁকতে পারতো কি?
সামিরা আশ্চর্য হয়ে বললো:হুয়াট? কি বলছিস ,ভাইয়া ব্লেড দিয়ে কেনো আঁকতে যাবে তোকে ।
আরিয়া:সেটাই হয়েছে ,যাগগে বাদ দেই,,আমার উঠতে ভালো লাগছে না ,এনে দে না বনু প্লীজ,সরি ভাবি এনে দেও না প্লিজ লক্ষী ভাবি ,,
সামিরা কপাল কুঁচকে বললো,আমি তোর কোন ভাইয়ের বউরে ? ওমনি ভাবি ভাবি করছিস কেনো ?
আরিয়া হুঁ হুঁ করে হেসে বললো,সিঙেল সাজা বাদ দে ,আগের ডায়লগ গুলো এখন চেন্জ কর বুঝলি ,
সামিরা এখন বুঝলো আরিয়া কি বুঝাইলো । দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো ,কবুল বলে একটা সাইন করলেই বিয়ে হয়ে যায় অথচ এটার দায়িত্ব যে কতটা অনেকেই বুঝেনা।
আরিয়া:কেনো রে?এমন সেড এঙেল দিচ্ছিস কেনো? মনে হলো আহা ভাইয়া স্বামীর দায়িত্ব পালন করেনা । ভালোবেসে বিয়ে করেছিস,আহ কি দৃশ্য ছিলো বিয়ের দিনের ,কতো সাহসী ভাই আমার ,বিয়ের আসর থেকে বউ নিয়ে এসেছেন,বলে মুচকি হাসলো আরিয়া।

সামিরা :না রে আরু,সত্যি বলতে যেমন ভাবিস এমন না ,যদি এমন হতো তোকে তো আগেই বলতাম তাইনা।
আরিয়া : কি বুঝাতে চাইছিস বল তো।
সামিরা: সত্যি বলতে বিয়েটা বাধ্য হয়ে করেছে আয়শ ভাইয়া, দেখলি না সেদিন তো আফরান ভাইয়া বিষয় টা পরিস্কার করলো।নাবিল ভাইয়া আর আয়শ ভাইয়ার মাঝে এমন কিছু লুকানো ছিলো যেটা আমরা জানিনা ,নাবিল ভাইয়া তোকে পাওয়ার জন্য কতটা নিচে নেমেছে দেখলিনা,এই কারনেই ভাইয়া একজন কে ভালোবাসতো বলেও আমাদের কে ছবি দেখাতো না কার ,এখন বুজলাম তোর ছবি ছিলো ।
আরিয়া:সেদিন তো … এটা বুঝলাম কিন্তু এটা বল বাধ্য হয়ে করেছে মানে কি যে আমি এই বিষয় টা কিন্তু বুঝিনি সেদিন ও।

সামিরা :নাবিল ভাইয়া কোনো একটা বিষয় নিয়ে বাধ্য করেছে আমাকে বিয়ে করতে ,তাই উনি করেছে।
আরিয়া:ওহ, কিন্তু তুই তো ভালোবাসিস তাইনা ?
সামিরা:একতরফা ভালোবাসা যায় ,সেটা আদায় করা যায়না ,। কখনো উনি আমায় এমন চোখে দেখেননি ,
আরিয়া:এতো দিন বলিসনি কেন?
সামিরা:ভেবেছি উনি ধীরে ধীরে মানিয়ে নিবেন , কিন্তু কাল বুঝলাম,উনি কখনো আমায় মেনে নিবেন না। ভাবছি আমিও চলে যাবো এই বাড়ি থেকে ,থেকে কি লাভ বল ।
আরিয়ার ভিষন রাগ হচ্ছে আয়শের উপর :পাগলের মতো কি বলছিস হ্যাঁ? শুধু কি আয়শ ভাইয়া আছে আমি কেউ না ?

সামিরা হেসে বললো:তুই আমায় ফ্রেন্ড আগে থেকেই কিন্তু আমার এ বাড়িতে থাকার একমাত্র কারন আমি বউ এ বাড়ির , কিন্তু ভাইয়া আমায় বলেছে ,আমাকে নাকি উনার বিরক্ত লাগে ,এ বাড়ি থেকে চলে যেতাম ,তা এখন কার জন্য থাকবো বল তো ।যদিও আমার ফিলিং টা এতোটাও গভির না উনার প্রতি তবুও এখন তো হাসবেন্ড, হাসবেন্ড থেকে যদি কিছু আশা না করতে পারি কার কাছে আশা করবো ? আর শুন বাবা কে এসব কিছু বলবি না ঠিক আছে ?
আরিয়া:আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আজকেই বাবা কে বলে দিবো ,নাহলে ভাইয়া এমন করতেই থাকবে।
সামিরা : যদি সত্যি কিছু বলিস তাহলে কিন্তু ফ্রেন্ড শিপ ভেঙে দিবো বলে দিলাম ,।
আরিয়া:আহ এমন করছিস কেনো? কেউ কাউকে ইচ্ছে করে বিয়ে করে আবার চলেও যেতে বলে এটা কোন ধরনের ,আমি তো আয়শ ভাইয়া কে ভালো ভেবেছিলাম।
সামিরা:চুপ করবি তুই? আয়শ ভাইয়া আগেও ভালো ছিলো এখনও ভালো , তুই ভুলতে পারিস আমি ভুলিনি ,ভাইয়া তোকে ভালোবাসতো,হয়তো এখনো বাসে কিন্তু আফরান ভাইয়ার ভালোবাসাকে মারতে চায়নার তোকেও খুশি দেখতে চায় তাই ,মানিয়ে চলছে ,ভালোবাসা ভুলে যাওয়া এতোটা সোজা না বুঝলি ।
আরিয়া : আচ্ছা আমি বলবো না এখন এসব শুনতে ভালো লাগছেনা। আমি এখন আবার ঘুমোবো দুপুরে ডেকে দিস।
সামিরা : ঠিক আছে । বলে সামিরা রুম ছাড়ে।

আরিয়া ভাবছে ,আয়শ ভাইয়া এটা কিভাবে করতে পারে ? শুধু শুধু সামিরা কে কষ্ট দিচ্ছে,তার চেয়ে চলে যাওয়াটাই ভালো ,আফরান ভাইয়া যদি আমাকে এসব বলে আমিও তো কষ্ট পাবো তাইনা,
পরক্ষনেই আবার ভাবে,এতো লাগবেনা আমি কেনো কষ্ট পাবো উনার জন্য,তাছাড়া এখন তো ক্লিয়ার যে উনি ঐ মেয়েটার সাথে ভালো আছেন ,কাল তো দেখলাম কিভাবে বেডরুমেও ঢুকতে দিয়েছিলো মেয়েটাকে। আর যাই হোক উনি আমায় ভালোবাসে ভেবে ভূল আর করবো না।

মি মাফিয়া পর্ব ২৮

আর মাফিয়া গ্যাংস্টার রা তো এমন আমার মতো হাজার হাজার মেয়ের সাথেই থাকে তারপর মেয়েটাকে ফেলে চলে যায় ,আর উনি তো সবার উর্ধ্বে আমাকে ভালোবাসতে যাবেন কেনো? আমার বুজতে ভূল হয়েছে ,আমি নিজেই ভেবে নিয়েছিলাম আমায় ভালোবাসে ,নাহলে হঠাৎ করে এসেই কেউ ভালোবাসার দাবী করে নাকি , মানূষ ভালোবাসে আস্তে ধীরে প্রেমে পরে ,সময় কাটায় তারপর দেখতে দেখতে প্রকাশ করে ,আর উনার সাথে তো আমার বড় হওয়ার পর এমন কোনো মুহূর্তই মনে নেই , উল্টো আমাকে মারার প্রতিটা মুহূর্ত আমার শরীরে প্রমান আছে। আর তাছাড়া এতোদিনে একবার হলেও বলতো তাইনা । আর বললেও মিথ্যাই হতো ,ভালোই হয়েছে বলেনি আজ অব্দি । আমার আর লাগবেনা উনার এমন পাষণ্ড সঙ্গ।

মি মাফিয়া পর্ব ৩০