মি মাফিয়া পর্ব ৩৪
সুমাইয়া সাবিহা
আরিয়া :এটা ফেলে দিন লাগবেনা আমার ,আপনার মতো এতো পাষান হতে পারবোনা আমি ।
আফরান আবারো হেসে সিগারেট টা নিজেই আঙুলের যে জায়গাটায় রিং পড়িয়ে ছিলো সেই জায়গাটায় জলন্ত সিগারেট টা ধরে ।
আরিয়া হকচকিয়ে উঠে বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে আফরানের হাত থেকে সিগারেট টা এক টানে ফেলে দিয়ে বলতে লাগলো,
__আপনি কি পাগল ? কি করছেন এসব ? কেউ নিজেকে এমন ভাবে আঘাত করতে পারে? আপনার আদৌ অনুভূতি বলতে কিছু আছে নাকি ?
আফরান মৃদু হেসে আরিয়ার ছোট হাত দুটো নিজের তালুতে নিয়ে বললো ,
__ এইটুকু তে এতো সিরিয়াস?
আরিয়া: আপনার কাছে এইটুকু মনে হচ্ছে? দেখুন আপনি যদি আমার সাথে থাকতে চান অবশ্যই এসব হাইকো টাইপ বিষয় গুলো বাদ দিতে হবে নাহলে কিন্তু আমি আপনার সাথে থাকতে পারবোনা ..
আরিয়ার কথা টা শেষ হতেই মাথায় বিষন্নতা কাজ করতে লাগলো ,বারবার এই মেয়ের মুখে এই চলে যাওয়ার কথাটা একদম মৃত্যুর চেয়েও বিষাক্ত আফরানের কাছে মনে হয় ,এটা কি মেয়ে কোনো জনমে বুঝবে? সঙ্গে সঙ্গে আরিয়ার কোমল হাত দুটো চেপে ধরে ।
আরিয়া:আহ কি করছেন কি ? ছাড়ুন বলছি ,এসব কোনধরনের ব্যাবহার? এতোক্ষণ তো ভালোবাসা দেখাচ্ছিলেন হঠাৎ কি হলো আবার ,লাগছে আমার ছেড়ে দিন বলছি।
আফরান দাত কিড়মিড়িয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__কার সাথে থাকার আরো ইচ্ছা আছে তোর? নাম বল । এতো সাহস হলো কি করে তোর এসব বলার? একদম রক্তের বন্যা বইয়ে দেবো, কি ভাবিস নিজেকে? সত্য করে বল ,তোর ভেতরে আর কজন ছেলের নাম গাঁথা আছে ? ঐগুলোকে পিষিয়ে দিতে আমার সময় লাগবেনা ।
আরিয়া:আহ ,ছাড়ুন না আমি কখন বললাম আমার অন্য কাউকে পছন্দ? সত্যি বলছি আপনি ছাড়া আর কেউ নেই আমার জীবনে বিশ্বাস করুন দয়া করে ,আর হাত টা ছাড়ুন বলছি।
আফরান আরো জোড়ে চেপে ধরে বললো,
__ মিথ্যে বলবি না একদম,সত্যি করে বল ,ভালো করে বলছি নয়তো পরে জানতে পারলে অস্তিত্ব থাকবেনা ঐ ছেলের ।
আরিয়া কান্না করতে করতে বললো: বিশ্বাস করছেন না কেনো আমার কথা ,সত্যি বলছি ভাইয়া । দেখুন আপনি কেমন করছেন, এই কারন গুলোই আমাকে আপনার কাছে আসতে বারন করে , বিশ্বাস করুন আপনাকে ভালোবাসি নয়তো ঐ বাড়ি থেকে আসতাম না জেলাস হয়ে । বুঝতে পারছেন না কেনো? ৩ সত্যি করে বলছি এবার ছাড়ুন না ।
আরিয়ার কথা গুলো আফরান কে শান্ত করতে কিছু টা সফল হয়েছে ।হাতের বাঁধন হালকা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরিয়া কে বললো ,
__সত্যি তো? এই জন্যই এসেছিস?
আরিয়া হাত টা ছাড়িয়ে প্রথমে ব্যাথাতুর জায়গার দিকে তাকালো ,লাল হয়ে গেছে দুটো হাত আঙুলের ছাপ পর্যন্ত বসে গেছে ।
আফরান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে একবার দেখে নিলো ।
আরিয়া: আপনাকে আমার কিছু বলার নেই আর ভাইয়া ,আপনার এই কাজ গুলোর জন্যই …. এইটুকু বলে আরিয়া থেমে যায় আবার যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলে ফেলে নিশ্চিত এবার গলা টিপে মেরেই ফেলবে ।
আফরান চুপ করে উঠে দাড়িয়ে দরজার দিকে হাটা ধরলো ।
আরিয়া পেছন ডেকে বললো ,
__কোথায় যাচ্ছেন?
আফরান: একা আসার শাস্তি কিন্তু এখনো দেইনি । যাস্ট একটু মায়া হলো তাই কিছু করবো না চিন্তা করিস না । চাচা চাচী কেউ কিন্তু বাড়ি নেই একাই এখানে থাকবি আর এটাই তোর শাস্তি।
আরিয়া ভয়ে লাফ মেরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো ,আ..আপনি আমায় একাই রেখে যেতে পারবেন ভাইয়া? যদি ভুত এসে আমাকে নিয়ে যায় তখন কি হবে আপনার?
আফরান: তুই উটারই যোগ্য। একা আসার সময় মাথায় ছিলোনা যদি রাস্তায় কোনো ঝামেলা হতো ? তখন ?
আরিয়া ঢোক গিলে আফরানের কাছে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই আফরান দ্রুত পায়ে বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে দিয়ে চলে যায়।
আরিয়া দরজা ধাক্কিয়ে বলতে লাগলো : আআআ দরজা খুলুন ভাইয়া ,আমি একা ভয় পাই । খুলুন বলছি ,দেখুন আর হবেনা বললাম তো ।
কিন্তু আফরান এর আওয়াজ না শুনে বুঝলো আফরান সত্যিই চলে গেছে ,আরিয়া এবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো । আপনি খুব বাজে ভাইয়া আমাকে একটুও বুঝেন না ।
বেশ কিছুক্ষণ পর আরিয়া কান্না বন্ধ করে উঠে দাড়িয়ে সারা সাড়ি রাউন্ড দিতে লাগলো । খাবার মতো কিছু পায়নি পানি ছাড়া ,মা বাবা কোথায় ,উনি কিছু করে দেননি তো ? বাড়ির বেহাল অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাঙা চুরা গুলো মালামাল এলোমেলো হয়ে আছে নিশ্চয়ই জোড় করে উঠিয়ে নিয়েছে খারাপ লোকটা । মা বাবা কে খুঁজতে হবে যেভাবেই হোক কিন্তু খুঁজে বের করতে হলে আগে উনার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে হবে আমায় ।
এদিকে জাফর সাহেব অফিস থেকে এসে আরিয়ার নিখোঁজ হওয়ার কথা জানতে পেরে অনেক খুঁজেছে কিন্তু হদিস মেলেনি তাই পুলিশ কমপ্লেন করে । কিন্তু পুলিশ রা এখনো অব্দি কোনো তথ্য দিতে পারেনি । সামিরাও যাদের চেনে সবাইকে প্রায় কল করে করে জিজ্ঞেস করেছে । তাছাড়া আরু কোথাও যাওয়ার হলে তো অন্তত আমাকে বলে যেতে পারতি।হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলি।
কিন্তু আয়শ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এদিকে সেদিকে রাস্তায় সকল জায়গা গিয়ে আরিয়ার ফটো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু বৃথা ,আরিয়ার বাবার কাছেও হাজার বার কল দেওয়ার ট্রাই করছে কিন্তু যতোবার দিয়েছে ততবারই ফোন সুইচ অফ আছে বলছে । আফরান কে পর্যন্ত ফোন দিয়েছে খবর টা জানানোর জন্য কিন্তু আফরান একবারের জন্যও ফোনটা উঠানোর প্রয়োজন মনে করেনি।
হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার শ’ শ’ আওয়াজে আরিয়ার ঘুম ভাঙে ,কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছিল আরু, কিন্তু এতো প্রবল হাওয়ায় জানালার পর্দাগুলো এপাশ ওপাশ উড়ছে ,দরজা থেকে বাতাসের কারনে শ শ শব্দে আরিয়া কেঁপে উঠে,লাইট জালানোই ছিলো ,পাশ থেকে জগ টা নিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে গিললো ,শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে ভয়ে বিকেলে তো আকাশ একদম পরিষ্কার দেখেছিলো হঠাৎ করে বৃষ্টি হচ্ছে কেনো ? আজ বৃষ্টি টা না হলেই কি হতো না ? ভাবার মাঝেই হঠাৎ করেই লাইটের আলো নিভে যায় । দেশে এই একটা সমস্যা একটু বৃষ্টি বা রোদের আনাগোনা দেখলেই লোক গুলো কারেন্ট খেলা শুরু করে ।
আরিয়া এবার ভয়ে একদম দেয়ালের সাথে ঘেসে কম্বল টা সাইড থেকে টেনে শরীরে মুড়ি দিয়ে শুধু মাথাটা বের করে আওয়াজ করেই কাঁদতে লাগলো ,আম্মু কোথায় তোমরা ভয় লাগছে খুব এসো না আমার কাছে । বাবা প্লীজ দেখো তোমার মেয়ে খুব ভয় পাচ্ছে ,
কথাগুলো বলে বলে আরিয়া ডুকরে বুক ভাসায়।এমন একা রেখে কিভাবে চলে যেতে পারলেন ভাইয়া , একটুও মায়া হলোনা ? হবেই বা কিরে আপনার তো মন ই নেই । আরিয়ার জিবনে এমন কালো রাত প্রথম আসলো । এতো ভয় কখনো পায়নি সে । মি, মাফিয়ার থেকেও ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে সময় টা। আচ্ছা অন্য দিন তো ঘুমোলেই কখন সকাল হয়ে যায় বুঝাই যায়না আজ কেনো সময় টা দীর্ঘ হচ্ছে। এসব ভাবনার মধ্যে হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে শিউরে উঠে কলিজা ।
কাঁপা গলায় বললো ,
___ক..কে আপনি ?
অন্ধকারে মানুষ টির প্রতিচ্ছবি ও দেখা গেলো না ,আর আওয়াজ ও করলো না কোনো রকম ।
আরিয়া:ভাইয়া ?
কোনো উত্তর নেই ।
আরিয়া বুঝলো নিশ্চয়ই তার মাফিয়া কিলার তাকে এমন একা এই অবস্থায় রেখে গিয়ে চিন্তায় মরে যাচ্ছিলো আবারো এসেছে । খুশিতে দৌড়ে খাট থেকে নামতেই আরিয়া কে জড়িয়ে ধরলো ।
আরিয়া: আমি জানতাম তুমি আসবে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ফেলে যেই পারোনা আমায়। বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ।
নিস্তব্ধতায় কাটে কিছু মুহূর্ত, কিন্তু হঠাৎ আরিয়া কে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো আফরান পুনরায় আগের মতো দরজা লাগিয়ে।
আরিয়া পেছন থেকে ভাইয়া বলে ডাকলো কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি । কিন্তু এমন করার মানে কি আরিয়ার মাথায় ঢুকলো না।এমন করে কিভাবে আপনি চলে যেতে পারলেন আমায় এভাবে রেখে ?
আবারো এই গুমোট অন্ধকারে আরিয়ার ভয়ে বুক কেঁপে উঠে । ভয়ে আস্তে করে পা পা ফেলে খাটের উপর এক পা রাখতেই আবার দরজার আওয়াজ পেয়ে পেছন ঘুরে,
আফরান দরজার কাছে থাকতেই আরু বলে ডাকলো ,
আরিয়ার চোখ মুহূর্তেই আবার খুশিতে চাকচিক্য হয়ে উঠে ,আফরানের ডাকে সারা দিয়ে বললো ,ভাইয়া কোথায় চলে গিয়েছিলে?
আফরানের শরীর ভিজে ছোপ হয়ে আছে , দৌড়ে এসে আরিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো ,
__বেশি ভয় পেয়েছো? এই যে আমি এসে পড়েছি দেখো । আমার ভূল হয়ে গেছে আজ , কিন্তু বিশ্বাস করো আমি বুজতে পারিনি এমন হবে ।
আরিয়াও ঝাপটি মেরে আফরান কে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো ,
__আপনি খুব বাজে এমন করে শাস্তি দেন কেনো? আমার ভয় করেনা?
আফরান: ভূল হয়ে গেছে আমার কলিজা , আর হবেনা বিশ্বাস করো ।
আরিয়া চুপচাপ চোখ বন্ধ করে জড়িয়ে আছে ,ভয়ের তুলপার যেনো বুক থেকে যাচ্ছেইনা।
হঠাৎ করেই আফরান আরিয়ার শরীরে জড়ানো জামাটা শক্ত হাতে একটানে ছিরে হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে আরিয়া কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো , তোর মতো চরিত্র হিন মেয়ের জন্য এতোক্ষণ আমার প্রান যায় যায় অবস্থা হচ্ছিলো ,ছেহ ।
আরিয়ার মাথায় কিছু ঢুকলো না ,কি থেকে কি হলো? এমন করছে কেনো উনি? আর জামা…জামা কেনো…
যদিও কারেন্ট না আঁকায় অস্বস্তি কর অবস্থায় পড়তে হয়নি ,আরিয়া শরীর ঢাকতে প্রথমে দুহাত ক্রস করে বুকের উপর দেয় তারপর খাট থেকে এক হাতে কম্বল টা নিয়ে শরীরে জড়িয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে গর্জিয়ে উঠলো আরিয়া , প্রবলেম কি আপনার? এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতা? আপনার ধারনা আছে কি করেছেন আপনি ? মাথা টা কি একদম গেছে?
মি মাফিয়া পর্ব ৩৩
আফরান আরিয়ার কাছে গিয়ে বাহু ধরে কম্বল টাও সরিয়ে দিয়ে খামচে ধরে যতোটা জোড়ে ধরা সম্ভব ততটাই জোড়ে ধরেছে,আফরানের হাত মুহূর্তে ভিজে উঠে হয়তো রক্তে :
__সত্যি করে বল কাকে ফোন করে এনেছিলি? আজ হয়তো তোকে মারবো নয়তো একদম পাগল বানিয়ে ছেড়ে দেবো এমন অবস্থা বানাবো যে বেঁচে থাকার মতো ইচ্ছা টুটুও থাকবেনা ।
আরিয়া বাহুর ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে ..…তারপর……….