মি মাফিয়া পর্ব ৩৬
সুমাইয়া সাবিহা
আফরান বাসায় ঢুকে সোজা উপরের দিকে যায়,পেছন থেকে জাফর সাহেব বলে উঠলো ,তোমার জন্য আমার বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ।তুমি তোমার আস্তানায় ফিরে যাও ,এই বাড়িতে কোনো পশু জানোয়ার এর ঠাঁই আমি আর একটি প্রহরের জন্য ও দেখতে চাইনা আর না চাই তাদের ছায়া টুকুও দেখতে ।
আফরান বিরক্তিকর দৃষ্টি যে পেছন ফেরে জাফরের দিকে তাকায়।
আয়শ:এখন শান্তি হয়েছিস?গতকাল একবারের জন্যও বলিসনি কি করেছিস আরুর সাথে । মেয়েটার অবস্থা কি হয়েছিলো তুই জানিস? সত্যি করে বলতো কি করেছিস ওর সাথে?
জাফর:কালকের কথা ছাড়ো আয়শ আজ আবার মেয়েটাকে কি করেছে সেটা জানতে চাও আমি ঐ অর্ধপশু ছেলের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না । সোজা ভাবে বলে দিতে বলো মামনি কে কি করেছে নয়তো আজকের পর কেউ আমার সন্তান ছিলো সেটাও ভূলে যাবো আমি।
সামিরা শুধু ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে,তার অজানা নয় আরিয়া নিশ্চিত পালিয়েছে । কিন্তু একথা যদি বলে দেয় তাহলে নিশ্চয়ই ভাইয়া কিছু করে বসবে আর আরুকে খুঁজে পেলে তিব্র থেকে তিব্র হবে ,আমি নিশ্চিত আরু এমন কোথাও যাবে যেখানে গেলে তার বিপদ হবেনা । কিন্তু এভাবে চলে যাওয়াটা খুবই হতাশাজনক। দুপুরে তো বুঝালো অনেক কিন্তু উল্টো কথা শুনিয়ে দিলো ।
আফরান কপাল কুঁচকে বললো , যে যেটার যোগ্য ওটাই করেছি । এতে কারো কিছু বলার থাকলে বলো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা , বউ আমার যা ইচ্ছা আমিই করবো আপাতত কেউ বাড়াবাড়ি না গলাতেই চলবে ।
আয়শ:দেখ আফরান আরিয়ার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল,যা করেছিস সব বাদ দিলাম কিন্তু মেয়েটার কথা একটু তো ভাব ,কোথায় নিয়ে রেখেছিস আজ? বল না ।
আয়শের কথা টা যেনো আফরানের মাথায় বজ্রপাত ফেললো ,আজকের কথা কেনো বলছে?
-কি বলতে চাচ্ছিস?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আয়শ:না বুঝার মতো কিছু বলেছি কি? কখন এসে নিয়ে গেলি? আজ তো সবাই আমরা বাসায় ছিলাম আজ ,কি করেছিস ওর সাথে? দেখ এবার কিন্তু সত্যি বাড়াবাড়ি করছিস।
আফরান এর রাগ টা যেনো গা চড়া দিয়ে উঠলো ,এক মুহূর্তও দেরী না করে সোজা উপরে উঠে গিয়ে আরিয়ার রুমে গেলো , ওয়ারশ বাড়ান্দা সব কিছু দেখলো কিন্তু কোথাও দেখলো না । হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসলো ,সব সময় এই মেয়ের বাড়াবাড়ি একবার পেয়ে নেই তারপর কি হাল করবো বুঝে উঠতে পারবিনা পালানোর চিন্তা সারাজীবন মতো মাথা থেকে বেড়িয়ে যাবে ।
উপর থেকে দ্রুত পায়ে নামে আফরানের অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিশ্চিত রেগে আছে ।
সামিরা ভয়ে কাঁপা কাপি শুরু করে দিয়েছে অলরেডি ।
আয়শ:কোথায় যাচ্ছিস? আরুর কাছে? শুন লাষ্ট বলে দিচ্ছি ওর গায়ে যদি হাত লাগায় আর একবার আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা আফরান । ও এখনো ছোট তুই ওর সাথে….
আয়শের কথা শেষ না করতে দিয়ে আফরান হনহন করে বেরিয়ে যেতে গিয়েও আবার ফিরে এসে সামিরার সামনে গিয়ে বললো ,পালিয়েছে তাইনা ?
সামিরার বুক ধুকপুক করছে ।
আফরান আবারো গর্জে উঠে বললো ,আনসার মি,কোথায় গিয়েছে ও? একবার পেলে হাত পা কেটে ওটাকে কবর দিয়ে আসবো।
সামিরা কে জিজ্ঞেস করতে দেখে জাফর আয়শ অবাক হয়ে কিছু বলতে যায় তার আগেই সামিরা গদগদ করে চোখ বন্ধ করে বলে দেয় ,আমাকে বলেছিলো পালাবে কিন্তু আমি নিষেধ করেছিলাম তারপর আর কিছু জানিনা কখন গিয়েছে কোথায় গিয়েছে ।
আফরান গায়ের কোট টা শরীর থেকে খোলে ছুড়ে ফেলে ফ্লোড়ে । মুহূর্তের মধ্যেই আফরান বেড়িয়ে যায় ।
জাফর:মা তুমি আমাদের বলোনি কেনো ? আরিয়া কোথায় গিয়েছে? ও পালাবে কেনো? কি হয়েছে ?
আয়শ সামিরার সামনে এসে বললো ,কেনো বলিস নি আগে? কতো দেরী করে ফেললি,বলে সামিরার ডান হাতের বাহু ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
কি বলেছে আর আরু? সত্যি করে বল কোথায় গিয়েছে , নিশ্চিত তুই জানিস,আরু যেহেতু বলেছে পালাবে কারন টাও নিশ্চয়ই বলে গিয়েছে ।
সামিরা : বিশ্বাস করো ভাইয়া কিছুই বলেনি আর,আমি আরুকে বুঝিয়েছি অনেক কিন্তু আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে ,তবে এইটুকু বুঝেছি ওর যাওয়ার কারনে টা আফরান ভাইয়ার অতিরিক্ত অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে । বলেছিলো অন্তত শান্তি মতো একটু বাঁচতে চায় এসব থেকে ।
আয়শের মাথায় যেনো বাজ পড়েছে । নিশ্চয়ই মেয়েটার সাথে ঐ আফরান অনেক বাজে ব্যবহার করেছে যেটা নিতে পারেনি ।
জাফর সাহেব আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে আয়শ কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন আরুকে খোঁজার উদ্দেশ্যে।
আলিয়ার পরনে একটা সুতির রাউন্ড জামা ,মাথায় ওড়না দিয়ে দিয়ে ঢেকে এক হাতে ফেইসের উপর ওড়না টা ধরে অজানা কোনো গন্তব্যের আশায় দ্রুত দৌড়াচ্ছে , চৌধুরী বাড়ির সিমানা পেড়িয়ে,কয়েক মাইল শুধু দৌড়ে এসছে ,কারন একটাই নিশ্চিত যখন ঐ সাইকো টা জানতে পারবে কোনো কিছু বাকি রাখবেনা খুজার ,সব গাড়ি ট্রাফিক করে আটকে দিয়ে চেটে করবে নিশ্চিত।আর যদি একবার আবার উনার জিবনে ফিরে যেতে হয় তবে জিবনটা যে নরকে পরিনত হবে এক ফোঁটাও সন্দেহ নেই । নিজের মাফিয়াগিড়ি দিয়ে ওকে তিলে তিলে শেষ করবে কিন্তু এতো ক্ষোভ কেনো আমার উপর উনার ? এতোটাই ঘৃণা কেনো উনার চোখে? তবে ভালোবাসার বিকাশ কেনো ঘটিয়েছিলো এইটুকু সাদামাটা মনটায়।আমি তো বলিনি তবে এতোটা করেও কেনো আজ আমি উনার চোখে এতোটা নিচে ?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অচেনা কোনো ঘন আঁধার রাত্রি তে জঙ্গলে এসে পড়েছে খেয়ালই করেনি আরিয়া , কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই জঙ্গলের ভেতরও প্রায় কয়েকটা লাইটার আছে , আচ্ছা ডাকাত নেই তো আবার এই জঙ্গলে।
একটা গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে দুকদম পিছিয়ে গেলো ওহ শব্দ করে তখন আরিয়ার হুস আসে। কপালে ব্যাথার জায়গায় ঘসতে ঘসতে চারদিক টা একবার দেখে নিয়ে ভয়ে কাঁপা গলায় বলতে লাগলো ,চেয়েছিলাম তো এমন জায়গায় আসতে কিন্তু এখন ভয় লাগছে কেনো?
আরিয়া টিপটিপ পায়ে সামনে এগুচ্ছে হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে আরিয়ার হাত ঝাপ্টে ধরে বললো ,আরে আর সামনে যেও না ওদিকে বিশাল নদী আছে ।
আরিয়া ভয়ে আতকে উঠে কিন্তু গলাটা পরিচিত মনে হচ্ছে,আরিয়ার মাথা থেকে বাতাসে উইড়া টা পরে যায় । শুকনো গলা টা ঢোক গিলে ভিজিয়ে পেছনে তাকায় ।
-নাবিল ভাইয়া আ…আপনি । ছেড়ে দিন আমায় আমি যাবো না ঐ বাড়ি । প্লীজ যেতে দিন।
নাবিল স্মীত হেসে বললো , তুমি চাইলেও আর যেতে পারবেনা ঐ বাড়ি।
আরিয়া:ম.. মানে?
নাবিল :যেখানে তোমাকে কষ্ট দেওয়া হয় সেখানে আবার যেতে চাও? তুমি যেতে চাইলেও আমি কিন্তু তোমাকে ঐ মাফিয়ার হাতে আর পরতে দেবো না ।
আরিয়া: সত্যি বলছেন ভাইয়া? আমাকে হেল্প করবেন আপনি?
নাবিল:কেনো করবো না? এতোদুর অব্দি এসে পিছিয়ে যাওয়ার মতো ছেলে আমি নই।
আরিয়া না বুঝার মতো করে দৃষ্টি ফেলে নাবিলের চোখে।
নাবিল :তুমি বুঝবেনা,যদি ঐ বাড়ি না ফিরতে চাও তবে আমার সাথে আসতে পারো হেল্প করবো।
আরিয়া: আপনার সাথে গেলে নিশ্চয়ই আপনাদের বাড়ি নিয়ে যাবেন তখন তো এক মুহূর্তও লাগবেনা ঐ সাইকো টার হাতে পরতে।
নাবিল:আমাদের বাড়ি তে তো আমি নিজেও সেদিনের পরে যাইনি ,তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো নিরাপত্তা নিয়ে।
-সেদিনের কথা মনে আসতেই আরিয়া থমকায়,উনি নিজেও তো এক ধরনের ডেভিলবলতে গেলে , কিন্তু জেল থেকে কিভাবে বের হলো? আচ্ছা সেদিনের প্রতিশোধ নিতে আবার আমাকে নিয়ে যাবে নাতো?
আরিয়া নাবিলের হাত থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে ভীত গলায় বললো , আপনিও আমাকে মারবেন তাইনা প্রতিশোধ নিবেন এই জন্যই হেল্প করার নাম দিচ্ছেন?
নাবিল আবারো হেসে বললো: প্রতিশোধ তোমার থেকে কেনো নেবো? তুমি কিছু করেছো? তুমি তো কিছু করোনি আরু, তুমি ঠিক ফুলের মতোই নিষ্পাপ মায়াবী উজ্জ্বলতায় ঘেরা আরিয়া ।আমি তোমার ক্ষতি করানো চাইবো না । তবে জোড় করবো না আসতে বিশ্বাস না করলে ঠিক আছে আসতে হবেনা আমার সাথে ।
নাবিলের কথা গুলো আরিয়ার বুঝতে অসুবিধে হয়নি , কথা গুলো আরিয়ার পছন্দ হয়েছে তবে কি বিশ্বাস করে নেবো? আর তাছাড়া কোনো উপায় দেখছি না আপাতত । আজকের জন্য যাই পরে নাহয় কিছু হলে ওখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়া যাবে নাহলে এখনএই রাত্রি যে কোথায় যাবো?
নাবিল আরিয়ার উত্তর না পেলে আবার পেছনে হাটা ধরতেই আরিয়া বললো ,ভাইয়া আমি যাবো আপনার সাথে। নাবিল আরিয়ার দিকে না ফিরে ওভাবেই ডেভিল একটু হেসে বিড়বিড় করে বললো , আফরান চৌধুরী তুই এবার কি করবি ভাই জানিস আফসোস হচ্ছে তোর জন্য , আজকের এই দিনে টার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম , এতো কিছু করেছি কি শুধু শুধু? সেদিনের জবাব তুই পাবি কার কালকে রাতে আমার মায়াবতী কে শাস্তি দেয়ার ব্যাপার টা তো পরে দেখে নিবো মি মাফিয়া।
মি মাফিয়া পর্ব ৩৫
আরিয়া আবারো ডাকলো, ভাইয়া কি হলো আমি যাবো তো সত্যি বলছি শুধু আমাকে ঐ সাইকো লোকটার কাছ থেকে দুরে রাখবেন বলুন ,ওমন বিষাদময় ভালোবাসা আমার চাইনা।
সামনে ফিরে আগের অবস্থায় চেহারা স্বাভাবিক করে বললো ,একদম চিন্তা করো না তুমি ,তোমাকে প্রোটেক্ট করার করার সব টা দায়িত্ব আমার । তারপর ……
