মি মাফিয়া পর্ব ৩৯ (২)

মি মাফিয়া পর্ব ৩৯ (২)
সুমাইয়া সাবিহা

ভোরের পূর্বাকাশে হালকা রোদ্দুর ছড়িয়ে দিয়েছে সূর্য । পৃথিবী তার সৌন্দর্য টা প্রকাশ করেছে । জানালা টপকে মৃদু হাওয়া এসে সামনে পর্দা টা বারবার সরিয়ে দিচ্ছে ,একবার রোদের হালকা তেজ আবার ছায়া এসে ঘুমটা কে উরিয়ে দিলো , বিরক্ত হয়ে চোখে ঘুমঘুম ভাব নিয়েই থাইটা টা টেনে দিলো আরু।
পাশ থেকে কারো মৃদু হাসির শব্দ শুনে আরিয়া পাশ ফিরে বালিশে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো ,আজ লেট হবে । ভালো লাগছেনা নাবিল ভাইয়া ।এখন যাও ।
নাবিল এসে আবার জানালা টা খুলে দিয়ে বললো ,আজ জলদি যেতে হবে তো ,উঠো শ্রাবনী । কয়টা বাজে খেয়াল করেছো ।আট টা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট । দশ টা বাজে আরেকটু কাজ আছে ।
আরিয়া মিনমিন করে বললো ,ওকে ১০ মিনিট।
নাবিল আরিয়ার মাথার নিচ থেকে বালিশ টা সরিয়ে দিয়ে বললো ,এবার কিন্তু সত্যি দেরী হচ্ছে শ্রাবনী । নয়তো পাশেই কিন্তু পানি আছে ।

আরিয়া বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকে চোখ বন্ধ করেই উঠে বসলো ।
অবশ্য নাবিল এই কাজ টা প্রতিদিন এই করতে অভ্যস্ত,গত দুইটা বছর ধরে এটাই করে আসছে আর আরুর মুখে এই একটাই শব্দ শুনছে ,আজ যাবো না ভাইয়া ।
নাবিল হাতে এক কাপ কফি সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো ,এটা নাও ।
আরিয়া চোখ বন্ধ রেখেই কফির কাপ টা হাতে নিলো । খেয়াল না করে রোজকার মতো আজকেও গরম কফি টা মুখে তুলে আ আ শব্দ করলো ।
নাবিল হুহু করে হেসে বললো , বলেছিলাম আগে উঠতে ,আবার জিব টা পুরে দিলে তো ।
আরিয়া এবার পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে টাইম দেখে কফির মগ টা পাশে রেখেই চটজলদি খাট থেকে নেমে ওয়াশ রুমে ঢুকলো। পরমুহূর্তেই আবার বের হয়ে এক সেট জামা নিয়ে গেলো ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নাবিল মুচকি হাসলো। এমন বাচ্চামু দেখেই তো সেই ৭ বছর আগেও মেয়েটার প্রেমে পরেছিলো । প্রথম যখন দেখেছিলো তার শালিন পোষাক ভদ্রতা লজ্জা লজ্জা ভাব টা কি আজও ভুলতে পারে চৌধুরী বাড়িতে । তারপর যখন ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো হালকা চাঁদের আলোতে মুখ খানা কতটা উজ্জ্বল লাগছিলো ,কখন যে এই মনে জায়গা করে নিলো মেয়েটা বুঝতেই পারিনি । সেই মায়া কি কখনো কাটানো সম্ভব ? আচ্ছা এতো দিন ধরে একসাথে আছি একবারও কি ওর মনে আমাকে নিয়ে কিছু ভেবেছে? আচ্ছা আমি আমার এই পাগলী টাকে পাবো তো? নাকি ঐ আফরান কিছু করে দিবে আগেই ।
আফরান এর কথাটা ভাবতেই নাবিলের কপাল কুঁচকে আসে ,এযোটাও সময় দেওয়া যাবেনা ,ঐ সালা আফরান কে যতদিন মাটির নিচে না রেখে আস্তে পারছি ততদিন আমি আমার মায়াবতী কে নিয়ে টেনশনে থাকতে হবে । আর ঐ শবনম কে তো আমি আগেই দেখে নেবো ।

ভাবনার মাঝেই আরিয়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয় ।
নাবিলের চোখে আটকায় আরিয়ার চুলে ,যদিও আগের লম্বা চুল গুলোই তার কাছে বেশি পছন্দের ছিলো কিন্তু এগুলো যে অপছন্দ এমন কিন্তু নয়। চুল টপকে পানি পরছে । আরিয়া দ্রুত এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে মাথার চুল গুলো শুকাতে ব্যাস্ত হলো ।
নাবিল সেই চিত্র খানা দেখে নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছে অতল গভীরে,
চুল গুলো উরে এদিক সেদিক দুল খাচ্ছে।
আরিয়া নাবিল কে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,ভাইয়া আপনি যান আমি আসছি ।
নাবিল নিজেকে কল
পনা থেকে বের করে আর না দাঁড়িয়ে আরিয়ার কথা মতো চুপচাপ বের হয়ে গেলো ।

সময় টা সন্ধ্যা বিকেল হবে হয়তো ,কাজ শেষে আসার পথেই ঘুরিঘুরি বৃষ্টি নামে ,বিষয় টা আলিয়ার কাছে বেশ ভালো লাগলো ,অনেক দিন হয় বৃষ্টি ভেজা হয়না ,তাই ড্রাইভার কে বললো গাড়ি ঘুরাতে কিন্তু সব সময়ের মতো আজকেও ড্রাইভার দ্বিমত করলো আরিয়া আজকেও সেইম ভাবে ধমক দিয়ে গাড়ি ঘুরাতে বলে ।বাড়ি না ফিরে তার সব চেয়ে প্রিয় জায়গা সমুদ্র তিরে চলে গেলো ,জায়গা টা সব সময় খালি থাকে ,বেশি হলে বিকেল বেলা চার থেকে ছয়জন মানুষ আসে উপভোগ করতে,সবাই কি আর এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে জানে? আরিয়া তো সেই তিন বছর ধরেই মন খারাপ হলে এখানে আসে সময় পেলে। আসতে আসতে প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে বললে বলা যায় । হালকা আলো হয়তো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় একটু বেশিই অন্ধকার লাগছে জায়গা টা । চারদিক টায় বেশ গাছ পালা সমৃদ্ধে ভরা ।আরিয়া গাড়ি থেকে নামার সময় হাতের ঘড়িটা খুলে কোট টাই খুলে রেখে আসে ,,ড্রাই প্রায় অনেক টাই দুরে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির মধ্যে।

আরিয়া দুহাত উজার করে দুদিকে মেলে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয় । হ্যাঁ এটাই তো শান্তি,কোনো উশৃঙ্খলা নেই কারো জোড় নেই ,আছে শুধু ভালোলাগার মুহুর্ত কিছু। আরেকটু সামনে গিয়ে আরিয়া পানিতে হাত দেয় । ইশ যদি জীবন টাও ঠিক সাধারণ ভাবে কাটতো তার আর পাশটা মেয়েদের মতো ।
হঠাৎ করেই একটা বাইক এসে ব্রেক করে ঠিক গাড়িটার পাশে । হেলমেট পড়া । তবে হাত দুটোতে কভার নেই। তবে সাধারণত বাইকার রা লেদার জেকেট পরে কিন্তু লোকটা তো কোট পেন্ট পড়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে কোনো বড়লোক বাপের দুলালী ছেলে । বাইকের হর্নের আওয়াজ পেয়ে আরিয়া তাকিয়ে ছিলো কিন্তু অতটা গুরুত্ব দেয়নি কারন এখানে অনেকেই আসে ।তবে বৃষ্টির সময় কখনো দেখেনি এই তিনটা বছরে একবারো উল্টো বৃষ্টি আসার আগে সবাই দ্রুত বৃষ্টি থেকে বাঁচতে চলে যায় কারন অনেকের ধারনা সমুদ্র কুলে বৃষ্টি মানেই স্রোত প্রবল হবে এতে বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু আরিয়া খুব কমই দেখছে এসব।

আরিয়ার শরীরে আপাতত উড়না জড়ানো নেই , অবশ্য এটা এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখানে ছি ছেলেটাকে দেখে আস্তে পায়ে হেঁটে গাড়ির কাছে যেতে নেয় কিন্তু যাওয়ার পথেই ছেলেটা একটা ছাতা মাথায় কাছে নিয়ে ধরে ।
আরিয়ার এই শান্ত মাথা টা আপাতত গরম করতে চাচ্ছে না তাই বললো ,থেংক ইউ ,এটা আমার লাগবেনা বলে দুকদম বাড়াতে নেয় ছেলেটা আবারো সামনে গিয়ে ছাতাটা ধরে পকেট থেকে ছোট একটা কাগজ আরিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয় ।
আরিয়া কপাল কুঁচকে বললো,মাথায় কি প্রবলেম আছে? আমি আপনাকে চিনি না আপনিও আমাকে চিনেন না সো নিজের কাজে যান অসভ্যতামী বন্ধ করুন । ছেলেটা এবার আরিয়ার হাত হাতটা বাম হাতে ধরে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে অন্য হাতে ছোট কাগজ টা ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করলো এটা পড়তে ।
আরিয়া:আর ইউ ব্রেইনলেস? মাথায় কি প্রবলেম আছে? আমাকে দেখে কি আপনার প্রেম পত্র পড়ার মতো মেয়ে মনে হচ্ছে? আর এসব কোন ধরনের অভদ্রতা? শরীরে এভাবে না বলে কয়ে টাচ করছেন কেনো? do you know who am i? এর জন্য আপনার কি হতে পারে?

ছেলেটা আরিয়ার কথার পাত্তা না দিয়ে আবারো ইশারা করলো এটা পড়ার জন্য। আরিয়া এবার হাতের কাগজ টা ফেলে দিয়ে ছাতা টাও হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো , ডোন্ট ফলো মি। বলে আরিয়া আবারো যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ছেলেটা আরিয়ার ডান হাতটা হেঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে কোমর পেঁচিয়ে ধরে।
আরিয়া :আহ ,, কি করছেন ? মা বাবা সভ্যতা শিখায় নি? বলে নিজেকে ছোটাতে ব্যাস্ত হয় কিন্তু এমন শক্তি শালী ব্যাক্তির সাথে কে পেরে উঠবে ?
ছেলেটা কিছুই বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে এভাবেই খিচে ধরে ।
আরিয়া:আপনার নামে কেইস করবো আমি থানায় । ছাড়ুন বলছি। অসভ্যতামীর পর্যাপ্ত শাস্তি আপনাকে যদি আমি না দিয়েছি তবে আমিও শ্রাবনী নই।

ছেলেটা শুধু তাকিয়ে আছে আরিয়ার দিকে ।
আরিয়া: আশ্চর্য,একটু ভয়ের ছিটেফোঁটাও নাই দেখছি আপনার । নাম কি বলুন তো ? মা বাবা আছে তো? নাকি মেরে গিয়েছে শিক্ষা দিতে পারেনি।
ছেলেটা এবার আরিয়ার যে হাতে ছাতাটা ছিলো ঐ হাত টাও চেপে ধরে যথেষ্ট জোড়ে ।
আরিয়া:ওহ, লাগছে তো আমার । হুয়াট ইউর প্রবলেম? সাহস কি করে হয় এমন করার?
চারদিকে গুমোট অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে এতোক্ষণে।
মিনিট খানেক পর ছেলেটা আকস্মিক আরিয়া কে কোলে তুলে নেয় ।

মি মাফিয়া পর্ব ৩৯

আরিয়া চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে যাচ্ছে,,আ আ আ নামান বলছি ,কে আপনি ? আমার সাথে এমন করছেন কেনো? লিমিট ক্রস করে ফেলছেন বলে দিচ্ছি এর শাস্তি কি হতে পারে আপনি জানেন না মি । আপনারা ছেলেরা এমন কেনো ? মেয়েদের দেখলেই শুধু….এটুকু বলতেই ছেলেটা ঠাস করে গাড়ির ভেতরে আরিয়া কে ফেলে দিয়ে দরজা টা আটকে দিয়ে ড্রাইভার কে কিছু ইশারা করতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা দৃষ্টির সিমার বাইরে চলে যায় । ছেলেটা ও আর দাঁড়িয়ে না থেকে বাইকে উঠে ।

মি মাফিয়া পর্ব ৪০