মি মাফিয়া পর্ব ৪২

মি মাফিয়া পর্ব ৪২
সুমাইয়া সাবিহা

চৌধুরী বাড়ির গেইট থেকে শুরু করে পুরো বাড়ি ফুল আর কালারিং লাইটের আলো আবার আজকে নিউ কিছু কালেকশনের ঝাড় বাতি লাগিয়েছে আগের গুলো খুলে, যদিও মুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে কিন্তু যেই কারনে এসবের আয়োজন সেই কারন টা ভালো কোনো কাজের নয় ,এসকে এর সাথে যেই শেয়ারের আঞ্জাম দেওয়ার কথা দিয়েছিলো আফরান সেটারই দলিল নিয়ে শবনম সকালে আফরানের কাছে গিয়েছিলো ,বিষয় টা বিরক্তিকর হলেও আফরান চুপ করে মেনে নিয়ে বাড়িতে ইনভাইট করে।
যেহেতু প্রস্তাব টা আরিয়া করেছিলো তাই অবশ্যই এখানে আরিয়ার থাকাটা সব চেয়ে জরুরি শবনমের কাছে ,তার কাছে আরিয়া শুধু মাত্র ব্যাবহার এর জিনিস,ডিল টা কম্পলেট হলেই এতো বছরের যে প্রতিশোধের নেশা টা কাজ করছে সেটাই করবে বলে পুষে রেখেছে । কিন্তু ঐ নাবিল টা না আবার মাঝে এসে সব টা ভেস্তে দেয় সেটারই আশঙ্কা।

সময় টা সন্ধ্যার অনেকটা পরে ,আয়শ একটু অফিসে গিয়েছিলো যেহেতু বাবা যায়নি কাজটাও তার উপরেই বর্তায় । এসেই বাহির থেকে এসব দেখে কিছু টা বিস্মিত হয় । ভেতরে এসে সব টা পরখ করে বুঝার চেষ্টা করে আসলে হয়েছে টা কি? তাই প্রথমেই জাফর সাহেবের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কদম ফেলতেই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো ,কিরে ,তোদের বাড়িতে অনুষ্ঠান কিসের? বললি না তো ।
আয়শ পেছন ঘুরে তাকায়,সাদেক কে দেখে মুখে হাসির রেখা টেনে সাদেকের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে ,কখন আসলি ? বললি না যে।
সাদেক আয়শের পিঠে হালকা শব্দে দুটো থাপ্পর মেরে বললো ,এখন কি আমাকে বলে বলে আস্তে হবে তোদের বাড়ি।
আয়শ সাদেক কে ছেড়ে দিয়ে বলে ,সেটা কখন বললাম ? তা বউকে দেখার জন্য বুঝি এতো তারা যে ডিরেক্ট বাড়ি চলে আসলি ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাদেক : বেশি কথা বলিস,বউকে দেখার হলে এখানে কেনো আসলাম? আর তুই তো জানিস ঐ ব্রো বিয়েটার ব্যাপারে তাহলে আবার কেনো বলছিস ?
আয়শ:ঠিক হয়ে ঠিক হে ইয়ার,আমিও দেখে নিবো কতোদিন বউ ছাড়া দুরের থাকতে পারিস।
পেছন থেকে সামিরা বলে উঠলো ,ভাইয়া কখন আসলেন?
সাদেক স্মীত হেসে বললো ,এই তো এলাম । তা বাড়িতে কিসের অনুষ্ঠান চলছে আমাকে না জানিয়ে? আবার তুমিও এসেছো দেখছি , নতুন করে আবার বিয়ে করবে নাকি এই বেটা কে ,বলে আয়শের পেটে ঘুষি মারলো আস্তে।
আয়শ:আহ কি করছিস ,যাহ তো ,ওভার এক্টিং বন্ধ কর আগে ফ্রেস হয়ে আস ।
সামিরা:হা ভাইয়া আপনি যান আমি আর প্রেমা কিছু তৈরি করছি ।
সাদেক:প্রেমা .. আই মিন ও কি এখানে এসেছে?

আয়শ:ওহ তাহলে তুই না জেনেই এসেছিস দেখলি হার্ট কানেক্ট এমনি হয় ‌,বলে হু হু করে হাসতে লাগলো ।
পেছন থেকে কড়া গলায় কেউ একজন বলে উঠলো ,এটা মজা করার জায়গা না ,কথা বলার হলে উপরে গিয়ে কথা বল । পার্টি মেম্বারস আসবে ।
সবার দৃষ্টি এখন দরজার কাছে । আফরান কারো দিকে না তাকিয়ে পাশ কেটে সোজা হেঁটে উপরে চলে যায় ।
সাদেক:তার মানে আফরান ব্রোর বিজনেস পার্টি ।
আয়শ:হবে হয়তো । সেটা নিয়ে আমরা মাথা ব্যাথা না করলেও চলবে ।
সামিরা : আপনারা ফ্রেস হয়ে আসুন আমি গেলাম ।
আয়শ:তুই কি আমাকেও বললি?
সামিরা আবার পেছন ফেরে তাকায়
আয়শ: কি হলো উত্তর দে ।

সামিরা: যার ইচ্ছা যাবেন কিন্তু আপাতত সাদেক ভাইয়াকেই মিন করেছি আপনি নিজেকে মনে করলে করতেই পারেন । কথাটা ইচ্ছে করে খোছা দিয়ে বলে দ্রুত পায়ে কিচেনের দিকে চলে যায় ।
আয়শ কপাল কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে থাকে ।
প্রেমা উপর থেকে সব টাই খেয়াল করেছে তবে সে নিচে গিয়ে কি করবে? উল্টো নিজেকে সবার মাঝে ছোট মনে হবে তাইতো যায়নি ।

এতো গুলো বছর পর আবারো পা বাড়াচ্ছে সেই চৌধুরী বাড়ির রাজকীয় সাদা মার্বেল পাথড় দ্বাদা তৈরি চিরচেনা বাড়িতে ।যার প্রতিটি জায়গা তার খুব ভালো করেই চেনা , আচ্ছা কোনো কিছু পরিবর্তন হয়েছে কি ? নাকি আগের মতোই আছে সব টা?
গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আরিয়া এসব ভেবে যাচ্ছে,আরিয়ার নিরবতাই প্রকাশ করছে অতীত নিয়ে ভেবে যাচ্ছে পাশ থেকে নাবিল বললো , শ্রাবনী কি হলো? চলো আমি আছি তো সমস্যা হবেনা ,ঐ শবনমের সাথে পরে বোঝাপড়া করে নিবো আপাতত কিছু করার নেই ,আর ভয় পেয়ো না আমি তোমার পাশ থেকে কোথাও যাবো না ।
আরিয়া কথা না বাড়িয়ে নুজ মাস্ক টা একটু টেনে মাথার কেপ টাও একটু নিচের দিকে টেনে দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গেইট পেড়িয়ে ভেতরে পা রাখলো ।

আরিয়া রুমের ভেতরে ঢুকতেই পাশ থেকে কয়েকজন লোক ওয়েল কাম ম্যাম বলে সম্মাননা জানালো । আরিয়ার হাত পা বারবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ,কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা গিয়ে রুমের মাঝে বরাবর যে ছোট টেবিল টা রাখা হয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আলোচনা টা এখানেই হবে তাই চেয়ার টেনে সেখানে বসে গেলো ।
আরিয়ার পেছনে মায়া দাঁড়িয়ে আছে । পাশেই নাবিল ও বসে গিয়েছে । শবনম অবশ্য এখনো আসেনি ।
আরিয়া বারবার হাত কচলাচ্ছে ,হাতের তালু ঘামছে ।
নাবিল:রিলেক্স শ্রাবনী ,তেমন কিছু নয় শুধু মাত্র কিছু সাইন লাগবে তোমাকে বেশিক্ষণ থাকতে হবেনা কাজ শেষেই চলে যেও ।

আরিয়া কিছুই বলছে না , চুপচাপ মাথা ঠান্ডা রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
নাবিল :ওয়েট একটু আমি আসছি ,বলে নাবিল জায়গা ছাড়ে , উদ্দেশ্য ড্রিঙ্ক করবে একটু শ্রাবনী এসব পছন্দ করেনা তাই জায়গা থেকে উঠে ডিরেক্ট অন্য কোথাও চলে গিয়েছে ,
একজন ওয়েটার এসে বললো ,ম্যাম লাগবে কিছু? বলে একটা ড্রিঙ্কস এর গ্লাস এগুতে গেলেই মায়া বললো , ম্যামের জন্য ওয়ার জুস প্লীজ আর এসব ম্যামের সামনে দ্বিতীয় বার নিয়ে আসবেনা ওকে ।
লোকটা সম্মতি জানিয়ে হাতের ট্রে থেকে জুসের একটা গ্লাস টেবিলে রেখে চলে যায় ।
হঠাৎ করেই সামিরা এসে মায়ার কাছে গিয়ে আস্তে কন্ঠে বলতে লাগলো ,একটু কথা বলবো শুনবেন?
মায়া:ইয়েস ? কিছু বলবেন?
সামিরা:আপনার ম্যামের নাম টা জানতে পারি ?

মায়া:এসকে গ্রুপের সিইউ মিস শ্রাবনী… এটুকু বলতে ফিসফিস আওয়াজ শুনে আরিয়া পেছন ঘুরে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তখনি চোখ যায় সামিরার দিকে ।
সামিরাও খেয়াল করে মুখে হাসি দিয়ে ভীত গলায় বললো ,আসলে ম্যাম আমি এই বাড়ির বউ আই মিন আপনার আজ যার সাথে বিজনেস নিয়ে কথা বলবেন তার ছোট ভাইয়ের বউ । বলছিলাম যে একটু কথা বলা যাবে আপনার সাথে?

পাশ থেকে মায়া বলে উঠলো,সরি ম্যাম আসলে ম্যাম যার তার সাথে কথা বলেন না প্রয়োজন ছাড়া ।
আরিয়া ও আর কিছু না বলে আবারো সামনের দিকে দৃষ্টি ফেলে ,কথা বললে নিশ্চিত আবেগে পরে ভুল করে বসবে তাই চুপ করে হজম করে নেয় বিষয় টা ।
সামিরা এবার মন খারাপ করে চলে যেতে নেয় , ইচ্ছে তো করছিলো একটু কথা বলতে ,কেনো যেনো এই মেয়েটাকে আরুর সাথে মিল খোঁজে পাচ্ছে বারবার । তার উপর ডান হাতের দাগ টা কিসের? আরুর হাতেও এখানে একটা দাগ দেখে ছিলো শেষের দিন ,হয়তো আফরান ভাইয়া আঘাত করেছিলো এটাই ভেবেছিলো সেদিন সামিরা ,আবার এই মেয়েটার হাতে যদিও দাগ টা স্পষ্ট নয় তবুও কেনো যেনো মনে মানছে না , কিন্তু আরিয়া কিভাবে হবে? আরু তো সুশীল নম্র ভদ্র ছিলো ,
ভাবনার মাঝেই আরিয়া পেছন ডেকে বলে উঠে,,

__Where is your wash room?
সামিরা পেছন ঘুরে তাকিয়ে বললো ,আমাকে বললে? সরি আমি মিন আমাকে বলেছেন?
আরিয়া :ইয়াহ, ইমার্জেন্সি।
সামিরা কাছে এসে বললো , আচ্ছা আমার সাথে আসুন ।
আরিয়া উঠে দাঁড়ায় ,মায়াও আরিয়ার সাথেই যাওয়ার জন্য সামনে আসতেই আরিয়া ইশারা করে নিষেধ করে ।
দুতলায় গেষ্ট রুম টা দেখিয়ে দেয় সামিরা ,আরিয়া ভেতরে ঢুকে বললো ,থেংকস।
সামিরা: একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে?
আরিয়া:say’what you mean ?
সামিরা : আপনার কন্ঠ টা আমার একজন ফ্রেন্ডের সাথে কেমন যেনো মিল পাই ।ইউ ডোন্ট মাইন্ড প্লীজ আপনার আরো অনেক কিছু মিলে যায় তার সাথে । আচ্ছা আপনার ফেইস টা একটু দেখতে পারি?
আরিয়া দুহাতে নিজের পকেটে পুরে বলতে লাগলো ,

__ভেরি ইন্টারেস্টিং; নাম কি তার ?
__আরিয়া, আসলে ও….
এটুকু বলতে আরিয়া বলে উঠে
___এখন তুমি যেতে পারো এখান থেকে ।
সামিরা মুখের উপর কিছু বলতে পারলো না । চুপ করে জায়গা ছাড়ে ।
সামিরা যেতেই আরিয়া রুম টা আটকিয়ে দীয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথার কেপ টা খাটের উপর রেখে মাস্ক টা খুলে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে কিছুটা জোড়ে আওয়াজে নিঃশ্বাস নেয় ।

কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে আবার আগের মতো গেটাপ নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় আরিয়া । কিন্তু নিচে যাওয়ার সময় ঠিক প্রথম দরজা টায় চোখ আটকায় ।দরজা টা একটু খোলা যার দরুন জাফর সাহেবের ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখখানা স্পষ্ট। মুহূর্তেই আরিয়ার ভেতরে তান্ডব শুরু হয় , একটি বার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে চাচা কে ।কতোদিন এই লোকটা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়না ,খুব ইচ্ছে হয় আবারো চাচা জানের স্নেহ ভরা শীতল অনুভূতির ছোঁয়া পেতে যার মধ্যে আছে মমতা ,মায়া , কেয়ার । কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দুকদম এগিয়ে যায় দরজার দিকে । চোখের কোনে জলের বিন্দু আভা প্রকাশিত।
আকস্মিক তখনই কেউ একজন পেছন থেকে হাত খানা ধরে টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে যায় । পুরো বাড়ি যেহেতু শুধু কালার বাতি লাগানু তাই কিছু টা অন্ধকার থাকায় আর বিষয় টা এমন হঠাৎ ভাবে ঘটায় আরিয়া কিছু বলার সুযোগই পায়নি ।

রুমে নিয়ে আরিয়ার হাত খানা কিছু টা ধাক্কা দিয়েই ছেড়ে দেয় তারপর দরজা লাগিয়ে দেয় ।
আরিয়া দু কদম পিছিয়ে,আহ কে আপনি এমন করছেন কেনো? কথা টা বলেই মেজাজ টা যেনো তীব্রতর হয়ে যায় আফরান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ।
প্রথমে চেঁচিয়ে কিছু বলতে যায় তার আগেই খেয়াল আসে সে এখন এই বাড়িতে আছে আর এখানে সে অপরিচিত একজন ছাড়া কেউ না তাই নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করে যেই হাতে আফরান স্পর্শ করেছিলো সেই জায়গা টায় অন্য হাত দিয়ে ঘসতে ঘসতে একটু কঠোর গলায় বললো
__,এভাবে কেন এনেছেন ? কোন ধরনের অসভ্যতা? লিমিট ক্রস করবেন না মি চৌধুরী।
আফরান পা পা করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগুতে লাগলো ।

আরিয়া: হেয় লিসেন! কি করছেন? নিজের সীমার বাহিরে কিছুই ভালো নয় ,এর ফল কি হবে আপনি জানেন?
আফরানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না ,সেই রক্ত বর্ন চোক্ষু দ্বয় নিয়ে আরিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে ।
আরিয়া দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো , সত্যি করে বলুন তো মি চৌধুরী এমন বেহাভিউর করার কারন কি? কোনো প্রবলেম? নাকি শেষ পর্যায় এসে শেয়ার দিচ্ছেন না সেটা জানাবেন ? অবশ্য আমার এতে প্রবলেম নেই আমাদের কম্পানির ঐ খানে স্থাপিত হবেই সেটা যে করেই হোক আমি দাঁড় করাবোই মাইন্ড ইট।
কথা টা বলে আরিয়া পাশ থেকে জগ টা এনে ঠিক আফরানের স্পর্শ কৃত স্থান টায় পানি ঢেলে আবারো ঘসতে ঘসতে বললো ,

__আর দ্বিতীয় বার যেনো এমন হুটহাট স্পর্শ না করেন , লাস্ট ওয়ার্নিং আপনার জন্য নয়তো খুব ভালো হবেনা বিষয়টা ।
বলে পাশ কাটিয়ে বের হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেতে নিলে আফরান এক হাতে আরিয়া কে এক টানে সামনে এনে ছেড়ে দেয় , আকস্মিক হেঁচকা টানের কারনে আরিয়ার মাথা থেকে কেপ টা খুলে সাইডে পরে যায় ।
আরিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো ,জাষ্ট ওয়েট ,ওয়ান কল … বলে পকেট থেকে ফোন টা নিয়ে একটা নাম্বার ডায়াল করতে যাবে তার আগে আফরান আরিয়ার হাত থেকে ফোন টা কেরে নেয় ।
আরিয়া : ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট মি চৌধুরী । স্টুপিড ননসেন্স দের মতো আচরন করে নিজের আশালিনতার পরিচয় দেবেন না আশা করি । আমি তো শুনেছি আপনি নাকি মেয়েদের প্রতি খুব উইক । তবে এটা কি আদৌ সত্যি? আই থিংক ইটস এ নট রাইট। নয়তো এমন ব্যাবহার করতে পারতেন না আপনি।
আফরান কিছুটা শান্ত গলায় বললো : কি করবো বলেন বেইবি ,আপনি যে খুব হট । I think you are very sexy ।

আরিয়ার এবার ধৈর্যের সীমা অতিক্রম ছাড়িয়ে যায় ,এসব কথা বলতে লজ্জা লাগছেনা?এতো বড় একজন প্রফেশনাল মানুষ হয়ে এসব বলছেন ,আমি যদি বাহিরে গিয়ে সবাইকে সব টা সত্যি বলে দেই ইউ নো কি হবে আপনার ।কালকের পত্রিকায় হেড লাইন কি থাকবে ।
আফরান স্মীত হেসে বললো ,যা ইচ্ছা করবেন তবে পরের টা পরে এখন এই ড্রেস চেঞ্জ করুন বলে আফরান খাটের উপর একটা গোলাপী রঙের ভারী গাউন এর দিকে ইশারা করলো ।
আরিয়া : আপনি আমায় বলে দেবেন কোন টা পড়বো? কি পরবো? যতসব ফালতু জোকস্ । আমাকে যেতে দিন নয়তো ভালো হবেনা ।
আফরান : আপনাকে আমার ভিষন পছন্দ হয়েছে বেইবি ,এখন আমি যা বলবো সেটাই আপনাকে করতে হবে মিস ।
আরিয়ার মুখের রিয়েকশন টা বেশ মজার মনে হলো আফরানের কাছে ,এই বুঝি সব কিছু পিষিয়ে ফেলবে ,চোখ দুটোই বলে দিচ্ছে।

আফরান হাসি টা একটু আড়াল করে বললো: কি হলো কোনো প্রবলেম? আপনি জানেন আমার জন্য কতো হাজার হাজার মেয়ে পাগল হয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে আমি নিজেই আপনাকে অফার করছি ভালো সুযোগ আর পাবেন না আমার মনে হয় ।
আরিয়া : সব মেয়েদের মতো আমাকে মনে হচ্ছে ? যারা লাইন ধরে আছে তাদের কাছেই যান না কেনো বারবার আসছেন আমার লাইফে ,হুয়াই? আনসার মি ।
একটানা কথা গুলো বললো আরু, কিন্তু কথার মাঝে যে ভুল গুলো করেছে সেটার দিকে একটুও মন নেই আরুর,মাথায় রাগের বিশাল পাহাড় জমে গেছে এতোক্ষণে।

আফরান কিছু টা হেয়ালি ভাবে ইচ্ছে করে বিরক্তি নিয়ে বললো ,আসলে ঠিক কি বললেন বুঝলাম না আমি ,আমি তো আপনার পেছনে কখনো ছুটিনি ,সেদিন মিটিংয়ে দেখেই ভিষন ভালো লেগে গিয়েছে আমি কি করবো বলুন ,এখন আপনাকে আমার লাগবে ,আর এই ছোট ড্রেস যেখানে সেখানে আজ থেকে আপনার পরিধান করা বন্ধ । লং ড্রেস পরতে হবে বুঝেছেন? নয়তো কি করবো আপনাকে কোনো ধারনা নেই আপনার ।
আরিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো: আমার থেকে আপনাকে ভালো করে কেউ চিনবে বলে মনে হয়না । আচ্ছা মেয়ে দেখলেই কি ইচ্ছে মিটাতে মনে হয় ?
আফরান:সেটা ভুল বললেন ,আসলে হয়েছে কি অনেক গুলো মেয়ে নয় আপনার আগে শুধু মাত্র একটা মেয়ের সাথে ইচ্ছে মেটাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওটাকে দিয়ে তো ইচ্ছে মিটাতে পারিনি তার আগেই মেয়েটা উপরে চলে গেছে আমি মিন বেঁচে নেই তাই একজন কে নিয়ে ভেবে গেলে তো হবেনা আপনাকে আমার কাছে ভিষন হট মনে হয়েছে তাই সোজাভাবে বলে দিলাম ।

আফরান এর প্রতিটা কথা আরিয়ার বুকে তীব্র আঘাত করে যাচ্ছে , মানুষ এতোটা নির্দয় কিভাবে হয়? কিভাবে বলতে পারলো আমি মারা গিয়েছি,কিভাবে এতো জলদি আরুকে ভুলে গেলো এই লোকটা , অচেনা একটা মেয়েকে কিভাবে সেক্সি ,হট এসব বলতে পারলো উনি ,আমি তো ভাবতাম উনি সাইকো ,পাগল কিন্তু ভালোবাসা মিথ্যে নয় , ব্যবহার আচরন এসব উল্টো পাল্টা করতে পারে কিন্তু ভালোবাসা মিথ্যে নয় ,সেদিন রাতে যেটা করেছিলো সেটার উপর আমার ঘৃনা থাকতে পারে ,কারন কখনো এসব আশা করিনি বিয়ের আগে কিন্তু আপনাকে তো বিচারের কাঠগড়ায় কখনো দাঁড় করাতে চাইনি ,তবে আজ আমাকে আবারো ভূল প্রমানিত করে দিলেন মি মাফিয়া ।
কথা গুলো ভেবেই চোখের জল বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পরে । নিশ্চুপ হয়ে দৃঢ় দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে থাকে আফরানের চোখ জুড়ায় ,,

আফরান হালকা ধমকিয়ে বললো ,কি বলেছি শুনেননি আপনাকে পছন্দ করি ,আর আমি যাকে পছন্দ করি এমন ভাবে কাঁদতে দেই না । চোখ মুছেন নয়তো আমি কি করতে পারি ….. এটুকু বলে আরেকটু কাছে আসলো আরিয়ার।
আরিয়া নিজেকে আবারো কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে দুহাতে চোখ মুছে নিয়ে কড়া গলায় বলে দিলো , যাদের কে আপনি পছন্দ করেন তাদের কেই বেশি কাদাতে পছন্দ করেন এটাই রিয়েল। বলে আরিয়া আবারো চলে যেতে নেয় কিন্তু ফোনের কথা মনে আসতেই বললো ,আমার ফোন দিন বলছি ,বলে ডান হাতটা বাড়িয়ে দেয়।
আফরান আরিয়ার হাতে ফোনটা না দিয়ে উল্টো হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে একহাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে আরিয়ার কপালে চলে আসা চুল গুলো কানের কাছে গুঁজিয়ে দিতে দিতে বললো ,আরো অনেক টা পুড়তে হবে আপনাকে মিস,যেই আগুনে এতো দিন আমি পুড়েছি।তবে আপনার পদ্ধতি টা ভূল ছিলো ।

মি মাফিয়া পর্ব ৪১

আরিয়া: ছাড়ুন বলছি , আপনার চেয়ে নিচু মনের মানুষ আমি আর দুটো দেখিনি ।
আফরান: সেটাই বলছি ,আমি ছাড়া অন্য কারো মাঝে কিছু খোঁজতে যাবেননা । নয়তো এর তাপমাত্রা সহ্য সিমার বাইরে চলে যাবে তবুও আপনি রেহাই পাবেনা ।
আরিয়া ছোটার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু আফরানের এই শক্তির কাছে পেরে উঠছে না ।
সেকেন্ড কয়েক পর আফরান নিজেই ছেড়ে দিয়ে বললো ,ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে আসো নয়তো দরজা খুলা হবে না এখানেই থাকতে হবে রাত টা ।
কথাটা বলে আফরান দ্রুত পায়ে বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে বেড়িয়ে গেলো । তারপর……..

মি মাফিয়া পর্ব ৪৩