মি মাফিয়া পর্ব ৫৩

মি মাফিয়া পর্ব ৫৩
সুমাইয়া সাবিহা

আরিয়া শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে চেন্জ করে একটু হালকা পরিপাটি হলো ,,তবে এই মুহূর্তে তার আগের থেকে হলেও মন টা হালকা হয়েছে কিন্তু উনার সাথে মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ভিষন ,কাল ছেলেপক্ষ আসবে চাচাজান বললো কিন্তু এটা তো থামাতে হবে।
আচ্ছা সত্যি উনার রাগ ভেঙেছে তো ? নাকি কান্না থামানোর জন্য শুধু এমন করছিলো যেমন টা সেদিন শুধু আমার জীবন বাঁচাতে সেখানে গিয়েছিলো অথচ আসার পর কথা বলেনি ।

কথাটা ভাবার মাঝেই আকস্মিক কারো খাটে উঠার শব্দ পেয়ে পেছনে তাকাবো তখনি কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ,আমি অকস্মাৎ ঘাবড়ে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠি ,কে আপনি….. বলেই আবার নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরি । কারন এই স্পর্শ আমার পরিচিত ,খুব পরিচিত ,একবার নয় হাজার বার এই শরীরের ছোঁয়া লেগেছে আমার শরীরে ,এই আরাম প্রিয় উষ্ণতা বক্ষের ঘ্রান কি ভুলা যায় ? শত বার যেখানে লজ্জায় মুখ লুকিয়েছি ।
কিন্তু এগুলো ভাবার মধ্যেই আবার ভয় হলো , নতুন কোনো শাস্তি না আবার দেয় তখন এভাবে বলার পরেও বৃষ্টি তে ভিজার কারনে । খোদা মালুম।
আফরানের শরীরের গরম তাপ আরিয়ার শরীর স্পর্শ করে, এটা জ্বরের কারনে নয় ,বৃষ্টি তে ভেজার পর সাধারণত শরীর হালকা গরম হয় সবারই ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিয়ার পিঠ আফরানের বক্ষ স্পর্শ করে ,মনে হয় শাওয়ার টা মাত্র সেরেই শার্ট টা কোনো রকমে পরে এসেছে ,কারন সব গুলো বোতাম ও এখনো লাগানো হয়নি ।
দুজনের নিরবতায় এভাবেই কিছুক্ষণ কাটে,আরিয়ার কাঁধে আফরান চিবুক রেখে চোখ বন্ধ করে আছে ।আরিয়াও আফরানের বুকে এভাবেই পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপ করে আছে ।হ্যাঁ সত্যিই খুব প্রাশান্তময় এই উপভোগ,এই স্থান বড়ই শান্তি প্রিয় ।
নিরবতা কাটিয়ে আফরান কোমল কন্ঠে বললো ,খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি?
__আরিয়া এবার চোখ খুলে আফরানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে ফিরতে চাইলো , কিন্তু আফরান এভাবেই শক্ত করে ধরে আছে ,আরিয়া কে ফিরতে দিলো না । আরিয়া বুঝলো আফরান এভাবেই থাকতে চাচ্ছে তাই বাড়াবাড়ি করলো না ।

__আফরান শান্ত গলায় বললো: খুব বেশি বকে দিয়েছি? অনেক কষ্ট পেয়েছো ?
আরিয়া কিছু বললো না ।
__আফরান: উত্তর দাও
আরিয়ার চোখে জল ছলছল করে উঠে কিন্তু স্বস্থান পেরোয় না জল ।
আফরান: কথা বলো ।
আরিয়া চোখ মুছে বললো : আপনি খুব বাজে ভাবে সবার সামনে অপমান করেছেন । মিথ্যে বলেছেন ।
আফরান এবার আরিয়া কে ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপাল কুঁচকে আরিয়ার গালে আলতো ভাবে দুহাত রেখে বললো : তুমি আমার থেকে তিন বছর দুরে থেকেছো যার প্রতিটা মুহূর্ত হিসেব করে দেখো তোমার দুদিনের থেকে কতো হাজার গুণ বেশি হয় ।
আরিয়া এবার আফরানের চোখে চোখ রাখে ।

-আরিয়ার গালে থেকে হাত সরিয়ে, চোখ থেকে চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে বললো : এভাবে তাকাচ্ছো কেনো ? মিথ্যে বলেছি ? দেখো আমার থেকে দুরে গিয়ে তুমি মোটেও ঠিক করোনি। যদি আমি পারতাম এই তিন বছরের প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকেও বাজে ভাবে ফিরিয়ে দিতাম, কিন্তু…
আরিয়া: কিন্তু পারবেন না তাইতো ,জানি আমি । কারন আপনি আমায় ভালোবাসেন।
আফরান এবার কপাল কুঁচকে গলা চেন্জ করে বললো ,তোকে কে বলেছে? আমি বলেছি ভালোবাসি? আর এসব আজগুবি ভালোবাসা বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছিস?
আরিয়া : একদম মিথ্যে কথা বলবেন না আপনি ।তাহলে বিয়ে করেছেন কেনো?

__আফরান এবার আরিয়ার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে মৃদু হাসি ঠোঁটের কোনে লুকিয়ে নিরঠ গলায় বললো,,,ফালতু কথা ছাড়,তোকে আমি কেনো বিয়ে করতে যাবো?
__আফরানের মুখের রিয়েকশনের অবস্থা দেখে আরিয়ার বেশ মজার মনে হলো ,, ঠোঁট কামড়ে হাসি লুকানোর বৃথা চেষ্টা নিয়ে বললো ,তাহলে এমন করে কাছে আমার কাছেই আসেন কেনো বারবার?
__আফরান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো : কাছে আসার জন্য কি বিয়ে করা লাগে নাকি আশ্চর্য ,বলে ঠোঁটের একসাইড একটু বাকালো।

__আরিয়া : তার মানে কি আমি পরপুরুষের সাথে এমন ভাবে মেলামেশা করছি?
__আরিয়ার কথাটা শুনে আফরানের মুড মুহুর্তেই চেন্জ হয়ে গেলো ,সাঙে সঙে চোখ দুটি লাল হয়ে আসলো ,ঘাড় টা একবার দুদিকে ঘুরিয়ে চাপা স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে আরিয়ার কাছে এসে বা গালে একহাতে চেপে শক্ত হাতে ধরে বলতে লাগলো ,মুড টা নষ্ট করিস না । নয়তো তোর জন্য ভালো হবে না ।
__শুন! ।এই সম্পর্কের মাঝে আই মিন- ” ইউ এন্ড মি ” এই দুইটা শব্দের মাঝে মেরেড শব্দ টা কিছুতেই বাধা হতে পারেনা । বিয়ে করলেও তুই আমার না করলেও তোকে আমার কাছেই থাকতে হবে বুঝলি কি বললাম? এই দুইটা শব্দ কোনো কিছুর জন্য আলাদা হতে পারেনা ,সো টু ওয়ার্ড ইজ টু ওয়ার্ড । তৃতীয় কোনো কারনে যদি এটাকে আলাদা হতে হয় তবে ঐ তৃতীয় জিনিস টাকে আমি মানিনা । আর পরপুরুষ শব্দ টা আমি ছাড়া পৃথিবীর সব পুরুষের পাশে বসাবি ওকে ।

কথা গুলো একটানা বলে থামলো আফরান । আরিয়া ভাবতেও পারেনি এই হাসিমাখা সুন্দর মুহূর্ত টা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে একটা কথার কারনে ,সে তো এমনিতেই বলেছে । আফরান কে আবারো ভয়ানক মনে হচ্ছে ,শরীর টা হালকা ঘামছে ।
আফরান আবারো বলতে শুরু করল, পৃথিবী তে যতদিন আমি থাকবো ততদিন তোকেও থাকতে হবে। কিন্তু তুই নেই মানে পৃথিটাই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে আরু । মাথায় ঢুকিয়ে নে ভালোভাবে, নেক্সট টাইম আমার আর তোর মাঝে অন্য কিছু নিয়ে আসলে সেই জিনিস টাই মুছে দেবো । এমন কোনো জিনিস নেই যেটার কারনে আমার আর তোর পথ চলা আটকে থাকবে। মাইন্ড ইট। লাস্ট বার বলে দিলাম ।
কথা গুলো বলে আরিয়ার গাল থেকে হাত সরালো।আরিয়ার শরীরের কাপুনী প্রতি মুহুর্তে বাড়ছে ভয়ের কারনে ।
__ এতোক্ষণ আফরানের হাত আরিয়ার যেই গাল চেপে ধরে ছিলো ,জায়গা টাতে পুরো চারটে আঙুল বসে গেছে ,লাল হয়ে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে ।

আফরান সেদিকে তোয়াক্কা না করে খাট থেকে নেমে পাশ থেকে এক গ্লাস পানি মুখে দিয়ে একটু পানি করে আরিয়ার দিকে ধরলো ।
আরিয়া এক সেকেন্ড ও দেরী না করে আফরানের হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে এক শ্বাসে গিললো সব টা পানি । হাতের কম্পনের ফলে গ্লাস টা পর্যন্ত কাঁপছে ,কিভাবে একটা মানুষ এতো টা ওভার রিয়েক্ট করতে পারে সামান্য তে।
আফরান আরিয়ার হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে স্বজায়গাতে রেখে ফাষ্ট এইড বক্সটার থেকে ছোট একটা পানি জাতীয় ওষুধ এনে একটু হাতে নিয়ে আবার আগের জায়গাতে এসে আরিয়ার পাশে বসে সেটা গালের ব্যাথা তুর জায়গাতে স্লাইড করে লাগিয়ে দিতে লাগলো ।

__আরিয়া একবার ঢুকে গিলে এই সাইকো লোকটার কাজ দেখছে শুধু।
__ওষুধ লাগানো শেষ করে আফরান বিরক্ত কন্ঠে নিয়ে আরিয়া কে বললো ,, শুধু শুধু কেনো মাথা গরম করে দিস?
__আরিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে অভিমানী কন্ঠে বললো ,কি এমন বলেছি আমি? এভাবে রিয়েক্ট করার কি ছিলো?
__আফরান কথা না বাড়িয়ে আরিয়ার গলার নিচ থেকে চুলে হাত রেখে আলতো ভাবে ছুঁয়ে কপালে পরশ একে দিয়ে বললো ,আমি জানিনা আমি কি করেছি , শুধু জানি তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে এর মাঝে অন্য কিছু নিয়ে আসবে না । তোমার মুখে আমি পরপুরুষ শব্দ টা আমার ভেতরে হিংস্রতা নিয়ে এসেছিলো । বুঝবেনা তুমি । কথাটা শেষ করে আরিয়া কে কোলে তুলে নিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখে আফরান ।
__আরিয়া : আমি এখন আগের মতো ছোট নেই ভাইয়া

__আফরান আরিয়ার গালে নিজ গাল মিশিয়ে বললো ,শেষের ভাইয়া শব্দ টা বাদ দিবি ? আর তুই ছোট নাকি বড় হয়েছিস সেটা আমি বুঝবো তোকে বলতে হবে?
আরিয়া মুচকি হেসে বললো – কেনো বললে কি হবে ,আর তাছাড়া কি বলে ডাকবো?
আফরান – সেটা তুই ঠিক করবি আমি কি জানি কিন্তু ওটা একদম মুখে নিবি না। মনে নেই সেই প্রথম দিনের থাপ্পরের কথা ? আবার খেতে চাস?
আরিয়া : ঠিক বুঝলাম না ,কিসের কথা বললেন ?
আফরান : এখানে যখন এসেছিলি ভাইয়া ডাকার কারনে মার খেয়েছিলি প্রথম । কথা টা বলেই আফরান একটু হালকা শব্দে হাসবো ।
__আরিয়া একটু অবাক হয়, উনি এমন করে হাসতেও পারেন? কি সুন্দর উনার এই হাসির আওয়াজ । কথা টা ভেবে নিজেও মুচকি হাসলো ।একটু আগের সব টা নিমিষেই যেনো দুজনের দুরত্বতা স্বাভাবিক করে দিলো ।
__একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

__আফরান আরিয়া কে আরেকটু ভালোভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো : বলো ।
__আরিয়া : আপনি আমাকে কখন থেকে ভালোবাসেন? সত্যি বলবেন একদম মিথ্যা বলা চলবেনা কিন্তু।
_আফরান আরিয়ার গালে ঠোট ছুঁইয়ে বললো , হঠাৎ এটা কেনো মনে হলো?
__কেনোই বা হবেনা? এই বাড়িতে প্রথম আসার পর আমাকে শুধু শুধু মেরেছেন ,এমন কি আমাকে রক্তাক্ত পর্যন্ত করেছেন ,শরীরে ব্লেডের দাগ গুলো এখনো প্রকাশিত। তারপর আপনি বিদেশ চলে গেলেন আবার ৪ বছর পর ফিরে এসে হঠাৎ করেই কাছে আসছেন ,নিজেই বকাঝকা করেছেন নিজেই যত্ন নিয়েছেন । এসব কিছুর ভিত্তিতে কি আমার মনে এই টুকু প্রশ্ন জাগতে পারেনা?
___আফরান আরিয়ার ছোট হাত খানা নিজের হাতে নিয়ে স্লাইড করতে করতে বললেন ,তা তো অবশ্যই হতে পারে কিন্তু উত্তর দেওয়া টা কি খুব জরুরী?
___অবশ্যই জরুরি,, প্লীজ প্লীজ বলুন না ।

__স্মীত হেসে আফরান বললো ,,আমি তোকে ভালোবাসি না ।
আফরান এর মুখে থেকে কথা টা শুনে আরিয়া একটু নাখোশ হয়ে নিজের হাত টা আফরান হাত থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো ,আমি যাবো ,ছেড়ে দিন আমাকে ।
__আফরান এবার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে আবারো আরিয়ার হাত টা নিজের হাতে বদ্ধ করে কাঁধের সাইডের চুল গুলো তে নিজেকে আড়াল করে বললো
__ রাগ করেছো? দেখো আরু ! আমি তোমাকে ভালোবাসি না ,ভালোবাসা চাইলেই পাওয়া যায় না ভালোবাসতে অনেক মহত হতে হয় সেক্রিফাইস করতে হয় আমি এসব কিছুই এখন আর পারবো না তোমার জন্য যেমন টা আরো ১৫ বছর আগে হয়েছে ।

__আপনি কি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলতে পারবেন ? সব সময় আপনার কথার আমার বুজতে অসুবিধা হয় ।
আফরান :- তোমার বয়স যখন ৫/৬ তখন থেকে তুমি আমাকে প্রচন্ড জ্বালাতন করতে ,,তোমার আম্মুর চেয়ে আমার কাছেই তুমি থাকতে ভালোবাসতে । কিন্তু এমন করেই কখন তোমার প্রতি আলাদা ফিলিংস সৃষ্টি হয়েছে আমি জানিনা আরু,তাই তোমার থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করতাম কারন তুমি ছোট হলেও আমার অনুভূতি গুলো মানতে নারাজ ছিলো ।এদিকে বিবেকের কাছে পিছিয়ে ছিলাম ।
,যখন তোমার বয়স ৭/৮ তখন আমার মা – বাবা এখানে এসেছিলো অথচ আমি তোমার জন্য আসতে চাচ্ছিলাম না , কিন্তু আমাকে তুমি একবারের জন্যও সেদিন নিষেধ করোনি অথচ আমি তোমার থেকে আবদারের আশা করছিলাম কিন্তু তুমি সেটাও করোনি তাই আমিও সেদিন বিবেকের কাছেই নত স্বীকার করে নিজেকে বুঝিয়ে ছিলাম ,কাছে থাকলেই ভালোবাসা হয়না দুর থেকেও ভালোবাসা যায়। তখন আমার বয়স হিসেবে যেটুকু বুঝেছিলাম সেটাই করেছিলাম ।

আমি ভেবেছিলাম আসার পর এসব ভুলে যাবো তাছাড়া এটা তো অসম্ভব তুমি আমার চেয়ে অনেক টা ছোট । কিন্তু আসার পর বুঝলাম আমার জন্য তোমাকে না দেখে থাকা টা মারাত্মক বিচ্ছেদ ময় যন্ত্রণার চেয়েও বেশি ছিলো।
তার কিছুদিন পর মা ও আমাদের ছেড়ে চলে যায় ,যেটা আমরা জন্য কতোটা অসহায়তা ছিলো বুঝাতে পারবোনা তোমাকে আমি ।
অতঃপর বুঝলাম সেক্রিফাইস জিনিস টা আমার সাথে যায়না ,,
তাই নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করলাম,,যেমন ভাবে থাকলে দুর্বলতা নামক কোনো কিছু থাকবেনা আমার জীবনে ততটাই ।
গুছিয়ে নিলাম নিজেকে , কিন্তু হতে দিলে কোথায় ? আবার বেক করলে আমার কাছে , কিন্তু ততদিনে তোমার প্রতি আমার ভেতরে হিংস্রতা সৃষ্টি হয় । প্রচন্ড অরাজকতা সৃষ্টি হয় তোমাকে নিয়ে আমার ভেতরে , তোমাকে দেখার ইচ্ছা ও হতো না কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করা এতোটা সহজ ছিলো না আমার জন্য।
কিন্তু এই তীব্র ঘৃনার মাঝেও তোমার প্রতি বিশালতা কাজ করতো কিভাবে সেটা আমার জানা নেই ,,

__ তোমার শরীরে আমি এমনভাবে আঘাত করতে চাইনি ট্রাস্ট মি ,সেদিন রাতে তোমরা ছাদে বসে কথা বলছিলে মনে আছে? নাবিলের হাত তোমার জামা স্পর্শ করেছে কয়েকবার , এমনকি তোমার হাতও ছুঁয়েছে ঐ ছেলে । আমার কি হয়ে গিয়েছিলো জানিনা নিজেকে আটকাতে পারিনি তোমাকে আঘাত করা থেকে । তারপর আমি বুঝলাম যতোই কাছে থাকবো তোমার প্রতি বিক্ষোভ থাকবেই কখন আবার না চাইতেও আঘাত দিয়ে ফেলবো যেটার জন্য নিজেই আফসোস করবো তার জন্য দেশ ছেড়েছিলাম । বাট সেটাও আমার জন্য বহন করা কষ্টসাধ্য হলো ,আমি বুঝে নিয়েছিলাম তুমি ছাড়া আমার অস্তিত্ব আমি টিকিয়ে রাখতে পারবোনা । তখনি ভেবে নিয়েছিলাম এবার ভালোবাসা নয় যেভাবে রাখলে তুমি থাকতে বাধ্য হবে ঠিক সেভাবেই আমি তোমাকে রাখবো শুধু মাত্র আমার কাছে ।
তারপর আর কি বলবো এই যে এখন তোমার কাছে আছি তুমি আমার কাছে আছো ,,এর চেয়ে বেশি শান্তি ময় প্রহর আমার জিবনে কখনো আসেনি , সত্যি বলছি ।
কথা গুলো একসাথে আস্তে ধীরে শেষ করে আফরান আবারো আরিয়ার চুলের থেকে ঠিক কানের একটু নিচ বরাবর ঘারে চুমু খেলো ।

__আর কিছু জানতে চাও???
_আরিয়ার কোনো নিশ্চুপ।
__কি হলো বলো ।
আরিয়ার নিরবতা কাটলো না।
__আফরান এবার কপাল কুঁচকে পেট থেকে হাত সরিয়ে নিজের দিকে ফিরাতে ফিরাতে বললো কি হয়েছে কথা বলছো না কেনো?
কথা টা বলেই আফরান একটু অবাক হয় ,,আরিয়া কাঁদছে । গাল পেরিয়ে বুকের উপর চোখের জল এক হচ্ছে।
আফরান তরিত কন্ঠে বলতে লাগলো ,,হেয়,এখন আবার কি হয়েছে তোর ? কাদছিস কেনো? আমি কিছু করেছি? কিন্তু এখন তো কিছু….
কথা শেষ করতে দিলো না আরিয়া , হঠাৎই আফরানের বুকের উপর ডান হাতের তালু দিয়ে থাপড়িয়ে বলতে লাগলো ,

___এই ছিলো আপনার মনে?
এটুকু বলে আবারো আরেকবার আফরানের বুকে হাতে আঘাত করে বললো ,,
___এই ছিলো আপনার মনে? আগে কেনো বলেননি আমায়? আমি তো এতোটাও অবুঝ ছিলাম না বুঝিয়ে বললে অবশ্যই বুঝতাম ।
এটুকু বলে আবারো আরেকবার আঘাত করে বললো ,,
___ এতো গুলো বছর ধরে এই তীব্র প্রনয় বুকে এঁকে একাই বয়ে গেছেন আপনি অথচ আমি কিছুই জানিনা ।
আফরান আশ্চর্য হয়ে বললো:-
__ আরে কি হয়েছে কি ? এমন ক…
এটুকু বলতেই আরিয়া আফরান কে ধমকিয়ে বললো ,

__চুপ ,একদম চুপ,একটা কথাও বলবেন না আপনি আজ । আপনাকে আমার আজ খুব করে … কথা শেষ না করে আফরানের বুকে দুহাতে কিল ঘুষি দিতে লাগলো ।
__আপনি খুব বাজে মি মাফিয়া সত্যিই খুব বাজে আপনি । অথচ আমি কিনা এতো বছর ভেবে এসেছি আপনি আমায় ভয় দেখিয়েছিলেন আর আমি চাচা জান কে মিথ্যে বলে আপনাকে মার খাইয়েছি বলে আপনি আমার উপর রাগ করে ছিলেন ।
কথা গুলো বলছে অথচ আরিয়ার চোখ ভিজে জল গড়াচ্ছে আপনার আপনি ।
আফরান আরিয়ার শেষ কথাটা শুনে আকস্মিকভাবে প্রায় অনেক টাই আওয়াজ করে হাসতে লাগলো । আরিয়ার দুহাত নিজের বুকের উপর থেকে শক্ত হাতে ধরে বললো ,,

__কি বললি ? লাইক সিরিয়াসলি? আমি একটা বাচ্চা মেয়ের মিথ্যে কথার উপর রাগ করে তাকে এমন করে মারবো?ইটস এ সো ফানি জোকস আরু…
আফরান কথা গুলো আলাদা আলাদা করে বলে কিছু টা চোখ বন্ধ করেই হাসতে লাগলো ।
আরিয়া এবার ভ্রু কুঁচকে আফরানের হাত থেকে নিজের হাত ছুটিয়ে বলতে লাগলো ,
___একদম মজা নিবেন না বলে দিলাম আমায় নিয়ে ।
আফরানের হাসির মাত্রা যেনো তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে ।
__আরিয়ার কাছে বিষয় টা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না কেউ তাকে নিয়ে এভাবে হেসে যাচ্ছে।তাই আফরানের মুখের উপর নিজের হাত চেপে ধরে বলে

___ চুউউউউউপ করুন না ।
আরিয়ার ছোট হাতখানা দিয়ে কি আর আফরানের এই আশ্চর্য জনক হঠাৎ হাসির রেখা বন্ধ হয়ে যাবে?
উল্টো আরিয়ার হাত মুখের উপর থেকে সরিয়ে হাসির মাঝেই হাতে চুমু বসিয়ে দিয়ে আবারো হাসতে লাগলো ।
__ আরিয়ার কাছে অপমান জনক মনে হচ্ছে বিষয় টা ,এভাবে হাসার কি আছে আজব তো? আমি ছোট ছিলাম তখন আমি কি জানতাম নাকি এতো সব? উনি কি কখনো বলেছে? বলেনি তো তাহলে এভাবে হাসার কি আছে এখানে?
এবার আরু এক হাতে আফরানের মাথার পেছনে হাত রেখে ডান হাতে মুখ চেপে ধরে বললো ,

___আর একটু যদি এমন করে হাসেন তবে কিন্তু ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
আফরান আরিয়ার হাত মুখের উপর থেকে সরাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো ।
আরিয়া আফরানের সাথে পারবেনা এভাবে তাই ভালোভাবে আফরানের কোলে উঠে বসে বাম হাত টা পেছন থেকে এনে আফরানের বুকের উপর রেখে কিছুটা শক্তি খরচ করে আফরান কে বিছানার সাথে মিশিয়ে পেটের উপর বসে এবার দু’হাতে মুখ চেপে ধরে ।
আফরান নিজের হাসির কারনে আরিয়ার এই সামান্য শক্তির কাছে পেরে উঠতে পারেনি ।
যখন কেউ মন খুলে হাসে তখন হাসির কারনে অবশ্যই শরীরের শক্তি মাত্রা তরতর করে কমে আসে ।

__আরিয়া মনে হয় নিজের কাজে সফল হয়েছে । এই মুহূর্তে আফরান আরিয়ার হাত মুখের উপর থেকে সরাতে চাচ্ছে কিন্তু পারছেনা । হাসিও থেমে গিয়েছে তবুও কেনো পারছেনা শক্তির সঞ্চার ঘটতে আর কতোক্ষণ লাগবে কে জানে । শেষ পর্যন্ত আফরান আরুর কাছে মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে।
__আরিয়া যেনো এতোক্ষণ হাফ ছেড়ে বাচে ।
ইশারা বুঝে মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয় ।
আফরান কিছু টা আওয়াজ করেই বড় করে একবার নিঃশ্বাস ছাড়ে ।

___আরিয়া এখনো আফরান এর পেটের উপরেই বসে :-
___শুনুন ! অনেক অপমান দিয়েছেন ওকে । এমন করে আর কখনো অপমান করলে কিন্তু ঠিক হবে না ।দেখলেন তো আমার শক্তি? নিশ্চয়ই জানা হয়ে গিয়েছে এখন ।
__আফরান আবারো হাসতে গিয়ে ইচ্ছে করেই নিজেকে আটকায় । দুহাত নিজের মাথার নিচে রাখে ।
– এবার এই মেয়ে নিশ্চিত কামড়িয়ে আমার চামরা তুলে নিবে ।
কথা টা ভেবে ঠোঁটের কোনে হাসি লুকিয়ে বলে
__রিয়েলি? অনেক শক্তি হয়েছে তোর শরীরে?
__অফকোর্স ! নিজেই তো দেখলেন
__আবার টেষ্ট করে দেখতে পারি ?
আরিয়া কিছু বলতে যায় কিন্তু হঠাৎ করেই দরজায় আওয়াজ পেয়ে দুজনে তাকায় ,,,

__আরিয়া শুনলাম তুই নাকি বৃষ……
রহিমা বেগম এটুকু বলেই থেমে যায় ,থেমে যায় না এক প্রকার থামতে বাধ্য হয় ,,সামিরার থেকে শুনেছিলো আরিয়া বৃষ্টি ভিজেছে ,কথাটা শুনেই আরিয়ার কাছে আসে ,কারন আলিয়ার বৃষ্টি যে ভিজলে অসুস্থতা দেখা দেয় এটা রহিমা বেগমের ও অজানা নয় । কিন্তু এসে দরজা টা খুলেই যে এমন কিছু দেখতে পাবেন সেটা নিশ্চয়ই তিনি আশা করেননি । সঙ্গে সঙ্গে চুপসে গিয়ে পেছন ফিরে দাড়ায় ।
আরিয়া নিজ মায়ের সামনে আরিয়া এমন ভাবে আছে বিষয় টা ভাবতেই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নেয় ।
রহিমা বেগম এক সেকেন্ড ও এখানে না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে রুম ছাড়ে ।

মি মাফিয়া পর্ব ৫২

___অবশ্য আফরানের এসবে কিছু যায় আসেনা কিন্তু বিষয় টা তার বউয়ের জন্য ভালো দেখায় না তাই বিরক্ত হয় কিছু টা ।
মাথার নিচ থেকে হাত দুটো উঠিয়ে আরিয়া কে নিজের উপর থেকে নামিয়ে নিজে শুয়া থেকে উঠে বসে আরিয়া কে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো ,রিলেক্স , কিছু হয়নি এসব কিছুই না ।
__আরিয়া কোনো কথাই বললো না ,হতাশা হয়ে এখনো চোখ বন্ধ করেই আছে । এক হাতে আফরানের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকায় । তারপর….

মি মাফিয়া পর্ব ৫৪