মি মাফিয়া পর্ব ৫৭

মি মাফিয়া পর্ব ৫৭
সুমাইয়া সাবিহা

সময় টা বেশ মোহনীয় মনে হচ্ছে শুধু আরিয়ার এমন লাগছে বিষয় টা কিন্তু এমন নয় আফরানের মুখেও হালকা হাসির রেখা এখনো দৃশ্যমান।
__একটু ব্রেক চাপুন জলদী প্লীজ প্লীজ প্লীজ।
আরিয়া আকস্মিক আফরান কে ছেড়ে দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো কথাটা ।
আকস্মিক এমন কথায় আফরান একটু কপাল কুঁচকে বললো

___হয়েছে কি ?এখানে কেনো ?
__আরে যা বলছি করুন না। কাজ আছে তো ,এমনিতে অনেক টা দুরে এসে পড়েছি ।
__কিসের জন্য আগে বলবে তো নাকি (একটু ধমকিয়ে)
আফরান এর উত্তর না দিয়ে উতলা হয়ে নিজেই আফরানের পা এর উপর নিজের পা চেপে মাঝ পথেই গাড়ি থামালো আরিয়া ।
হঠাৎ এমন করায় আফরানের রাগের মাত্রা ছাড়ায়,
ধমকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো
__প্রবলেম কি তোর ? এমন করছিস কেনো? জিজ্ঞেস করেছি না? নিয়ে এসেছি বলে নিজের মতো করে যাচ্ছিস তখন থেকে দেখছি ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আফরানের কথার পাত্তা না দিয়ে আরিয়া চটজলদি দরজা খুলে ছোট পার্স টা থেকে মাস্ক টা নিয়ে মুখে পরে দৌড়ে গাড়ি থেকে পেছনে প্রায় অনেক টা দূরে বলা যায় সেখানে যেতে লাগলো ।
সব সময় বাড়াবাড়ি করবে এই মেয়ে ,ওটার শিক্ষা হয়নি এখনো । আমি থাকতেও কিছু না বলে এভাবে চলে গেলো ,কথা টা নিজে নিজে বলে বাম হাতে পাশের সিটে মুঠো বদ্ধ হাতটি দিয়ে ঘুসি বসায় ।
এই মেয়ের সাথে ভালো ভাবে কথা বলাই উচিত না আমার ,মাথায় উঠে বসেছে ।
কথা গুলো বলতে বলতে এক বার গ্লাস টা খুলে আরিয়া কে পরখ করার চেষ্টা করলো ।
ছেঁড়া ফাটা একটা শাড়ি দিয়ে পুরো শরীর আবৃত করা একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা একঝাঁক নিল পদ্ম সহ লাল সাদা পদ্ম ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে ,আরিয়া দুর থেকে ডেকে দাঁড় করিয়েছে মহিলা টি কে মহিলাটিও আরিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে ।

মহিলাটির সামনে গিয়ে হাপাতে হাঁপাতে আরিয়া বললো , এগুলো বিক্রি করেন?
মহিলা টি শাড়ির আঁচল টা আরেকটু শরীরে টেনে বললো ,মেডাম আসলে এই ফুল বেইচাই সংসার চালাই কিন্তু আজ তেমন বেচা হয়নি তাই ভাবছিলাম একটু পাশের রাস্তা ডায় হাইটা আহি যদি কেউ কিনে আর কি ,এমন যুগ আসছে পৃথিবী যে মানুষ ফুলেও এখন চোখ রাখেনা ।
আরিয়া একরাশ হাসি টেনে নিল পদ্ম ফুল গুলো যে হাত বুলিয়ে কয়েকটা ফুল হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে স্মেল টা বুঝার চেষ্টা করে ,উফফফ কি সুন্দর মন মাতানো সুঘ্রাণ এগুলো তে ।

__আসলে অনেক দিন হয় নিল পদ্ম চোখে পরে না এগুলো দেখেই মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে আসলাম ,কতো করে রাখেন এগুলো?
মহিলা নিজেও আরিয়ার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে হেসে বললো ,এই যুগে এসেও যারা ফুল প্রেমী ,ঐ মানুষ গুলা অনেক সহজ সরল মনের মানুষ।মেডাম আপনিও খুব ভালো মনের মানুষ মনে হইতাছে ।
__একটু জলদি বলুন আন্টি আসলে ওয়েট করছে উনি পরে আবার রাগ করবে ।
মহিলা টি হেসে বললো ,জামাইর লাইগা টান আছে বেশ বুজতে পারছি ,আফনে খুশি হইয়া যা দিবেন তাই নিমু ।
__আরিয়া কথা না বাড়িয়ে পার্স থেকে পাঁচশত টাকার চার পাশটা নোট একহাতে যা এসেছে মহিলাটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো

__লাল রঙের গুলোও নিতে পারি ?
আরে মেডাম আমার ফুলের দাম তো এতো টাকা না একটা ফুল ত্রিশ টাকা কইরা খালি ।
___আরিয়া নিল লাল মিলিয়ে ফুল দুহাত ভর্তি করে নিয়ে একবার ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে বললো , এগুলো নিয়ে যাচ্ছি ঠিক আছে ।আপনি ওগুলো রেখে দিন কিছু হবে না । কথাটা বলে আরিয়া সামনে ফিরে ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলো ।
ফুল ওয়ালী মহিলা আরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ,,,

আল্লাহ তোমারে অনেক দিন বাচাইয়া রাখুক ,আমার কতো বড় উপকার করলা জানো না ,বাসায় পোলা ডা কয়দিন ধইরা অসুখে পাইয়া আসিল এহন অষুধ কিনতে পারুম ।
কথা টা বলে একটা ছোট কাপরের ব্যাগ বের করে টাকা গুলো সেখানে রেখে আবারো মহিলাটি নিজ কাজে চললো ।
প্রায় অনেক খানি পথ আসার পর আরিয়া সামনের দিকে তাকায় । সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা ভারী হয়ে আসে , চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নাহ কোথাও নেই উনি ।
সঙ্গে সঙ্গে হাত থেকে ফুল গুলো পরে যায় , অশ্রুরা চোখে এসে ভির জমায় । গড়গড় করে চোখ বেয়ে পানি পরে মাস্ক ভিজে যায় ।

কিভাবে পারলেন উনি এটা করতে ? আমাকে এভাবে মাঝ রাস্তায় ফেলে যেতে একটুও ভাবলেন না উনি ? ভালোবাসার উপরে উনার রাগের প্রায়োরিটি সব সময় থাকে । এটাই উনার ভালোবাসা কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে পারলেন না ? নিজের রাগ টাই বেশি হলো আমার থেকে ?
কথা গুলো ভেবেই জায়গায় উপর হয়ে বসে পরে রাস্তায় চলাচল গাড়ি গুলোতে দৃষ্টি পাত করে কাঁদতে থাকে আরু।
__ম্যাম গাড়িতে উঠে বসুন এভাবে রাস্তায় বসে আছেন কেনো ?
কথা টা শুনে আরিয়া উপরের দিকে চোখ তুলে তাকায় ।সাদা রঙের একটা টেক্সি ড্রাইভার টাই আরিয়াকে কথা টা জিজ্ঞেস করেছিলো ।
দুহাতে চোখ মুছে বললো ,

__যাবো না আমি ।
__ম্যাম এভাবে রাস্তায় কতোক্ষণ বসে থাকবেন? চলুন বাড়ি দিয়ে আসি ।
আরিয়া কালো পাথরের উপর পরে থাকা পার্স টা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো
__যাবো না আমি জোড় করছেন কেনো ?
__আপনার ভালোর জন্য বলছি ম্যাম ,নয়তো আপনার আমার দুজনের জন্যই কপালে দুঃখ আছে ,উঠে পড়ুন ।
__ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন?
__কিছুনা ম্যাম ,জলদি উঠুন বাড়ি পৌঁছে দেই ।
আরিয়া একবার চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে আবারো দেখে নিলো ,আবার আসার হলে নিশ্চয়ই উনি যেতেন‌না । লাগবে না আসা আমি একাই চলে যাবো ।
কথা গুলো গুনগুন করে বলতে বলতে গাড়িতে উঠে বসে আরিয়া।

রাত এখন এগারো টার কাছাকাছি প্রায় ,সারা শহরের মানুষের মাঝে হয়তো আশি পার্সেন্ট মানুষ এখনো সজাগ কারন একটাই এটা ঢাকা শহর যেখানে মানুষ টাকার জন্য সব পারে , যতক্ষণ না কাজ শেষ হবে কোনো কলকারখানা অফিস বন্ধ হবে না ।
সারা দিন লাগিয়ে মার্কেট শেষ করে মাত্র সবাই ফিরেছে । ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভেতরে এসেই সবাই সোফায় পিঠ ঠেকায় ।

একজন কাজের লোক ব্যাগ গুলো এনে এক সাইড করে রেখেছে ।
আচ্ছা বাড়ির মেয়েদের কি অসময়ে রেস্টের টাইম আছে? নিশ্চয়ই নেই তেমনি রহিমা বেগম ও এসেই প্রথমে কিচেনে ঢুকে সাথে সামিরাও চোখে মুখে পানি দিয়ে রহিমা বেগমের কাছে যায় ।
ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে এগিয়ে দেয় রহিমা বেগমের কথা মতো ।
মিনিট পাঁচেক এর মাথায় লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে সবার সামনে এগিয়ে দেয় রহিমা বেগম ।
অবশ্য খলিল সাহেব এখনো রহিমা বেগমের উপর নাখোশ হয়ে রয়েছে ,গতকাল রাতের পর একটি বারের জন্যও কথা বলেনি এতো বড় মেয়ের উপর হাত দিয়েছে ,মেয়েটা এতো গুলো বছর পর ফিরেছে তার মাঝেই গায়ে হাত দিয়েছে বলে অনেক কথা শুধিয়েছে কাল রহিমা বেগম কে ।এরপর রহিমাও আর আগ বাড়িয়ে সাহস পাননি কথা বলতে ।

সারাদিন মার্কেটে একসাথে থাকলেও জরুরি কথা ছাড়া কথা বলতে সাহস পায়নি রহিমা ।
নিরবতা কাটিয়ে জাফর সাহেব বলে উঠলেন ,,সবার সব কিছু ঠিক ঠাকই হয়েছে? কোনো কিছু বাকি আছে ?
আয়শ:একদম নিশ্চিন্তে থাকো বাবা কোনো প্রবলেম হয়নি ।
জাফর কপাল কুঁচকে বললেন
__হয়েছে তোমাকে আর আগ বাড়িয়ে বলতে হবে না । নিজের বিয়ে টা তো সব টা ভেঙে দিচ্ছো তিল তিল করে ,অন্যের টা নিয়ে বেশি এক্সাইটেড না হলেই বোধহয় ভালো ।পারলে নিজের টা ঠিক করার চেষ্টা করো ।
__বাবা সব সময় এটা নিয়ে কথা বলতে পারো না ।
খলিল সাহেব:ভাইজান ঠিক বুঝলাম না কি বললেন ।
জাফর কথা কাটিয়ে বললো

__তেমন কিছু না। আচ্ছা আরিয়া মামনি আসছে? নাকি ওরা এখনো ফিরেনি।
পাশ‌ থেকে সার্ভেন্ট বললো
__বড় সাহেব হয়েছে কি , আফরান স্যার আফামনি রে নিয়ে গিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আফামনি একাই ফিরেছে দেখলাম । সাথে কোনো ব্যাগ ট্যাগ দেখিনি । আপামনির মনে হয় মন ডা খারাপ আমার মনে হয় কিছু হয়েছে ।
সার্ভেন্ট এর কথা শুনে সবাই যেনো একটু অবাক হলো বিশেষ করে প্রেমা ,তখন তো দুজন কে কি‌ সুন্দর দেখেছিলো একসাথে আবার কি হলো এদের ।

জাফর সঙ্গে সঙ্গে তেতে উঠে বললো ,হুয়াট? তার মানে মামনি নিজেই শপিং এ যায়নি? ঐ বজ্জাত বেয়াদব ছেলেটা আমার মামির সাথে আবার কিছু করেছে নিশ্চিয়ই ,ওটাকে যখনই ভালো মনে করবো ঠিক ততখই কিছু একটা করে বসবে। আসলে ও চায়টা কি ? এর শেষ দেখে ছাড়বো ।
খলিল সাহেব জাফর সাহেব কে উত্তেজিত হতে দেখে বললো
__ভাই জান রাগবেন না প্লিজ,আগে কি হয়েছে সেটা জেনে নিন ।
জাফর কথা না বাড়িয়ে আরিয়া কে মামনি ডাকতে লাগলো কিছু টা উঁচু আওয়াজে।
ফেরার পর থেকে একাধারে কয়েক ঘন্টা কেটেকুটে ঘুমিয়েছিলো আরিয়া । হঠাৎ আওয়াজে ঘুম ভাঙে। দুচোখ কচলিয়ে চারদিকে একবার তাকিয়ে নেয় ,তার মধ্যেই সামিরা রুমে আসে ।

__কি হয়েছিলো রে?
আরিয়া কিছুই বুঝলো না শুধু তাকিয়ে রইলো সামিরার দিকে অভ্যাস মতো ।
ফের পরক্ষনেই সব মনে পরতে আবারো চোখ জোড়ায় অশ্রু জমে ।
সামিরা কাছে এসে বললো
__উঠ তো বাবা ডাকছে । কথা টা বলে আরিয়ার হাত ধরে খাট থেকে নামিয়ে দেয় । শরীর টা একটু দুর্বল হয়তো মনোবল না থাকার কারনে ।
__ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে? কিছু উল্টো পাল্টা করেছিস?
__সামান্য তে এমন করা লাগে? উনি কিভাবে পারলো আমায় মাঝ রাস্তায় একা ফেলে চলে আসতে ? যদি আমার কিছু হয়ে যেতো? আমার কাছে যদি টাকা না থাকতো কিভাবে ফিরতাম আমি ?

___কি বলছিস? ভাইয়া তোকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে সেটাও এমন করে ?
__মিথ্যে বলছি? কিছুই তো কেনা হলো না আমার ।কথাটা বলেই আবার ঠোঁট ভাঙে আরিয়া ।
___রিলেক্স আরু, কিন্তু তুই কি করেছিস?
__কিছুই না শুধু পথে ফুল দেখে কিনতে গিয়েছিলাম গাড়ি থামিয়ে এটুকুই ।
___নিশ্চয়ই ভাইয়া নিষেধ করেছিলো তাহলে কেনো গেলি ? এই কারনে তো রাগ করেছে ।
___এটা কোনো বিষয় হলো বল ,নীল পদ্ম কতো বছর পর দেখেছি তাইতো নিজেকে আটকাতে পারিনি তাই বলে এমন করবে এটুকুতে ?

__ভাইয়া যে অল্পতেই রিয়েক্ট করে এটা তো জানিস তারপরেও কেনো…..
নিচ থেকে জাফর সাহেব ডেকে বললেন
বউমা আরুকে নিয়ে এসো , নিশ্চয়ই মেয়েটা রাগ করেছে
সামিরা আর কিছু না বলে আরিয়া কে নিয়ে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয় ।
আরিয়ার চোক্ষু দ্বয় ফোলে আছে ভিষন রকম ,মনে হচ্ছে সার্জারি করিয়ে এমন করেছে কারন চোখ ফোলা তেও আরুকে খারাপ লাগছে না উল্টো আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে আরো । লাল হয়ে আছে উভয় চোখ ,সাথে নাকের ডগাতে যেনো কেউ লাল আবির মেখে দিয়েছে এমন‌ মনে হচ্ছে।

সবাই আরিয়া কে দেখেই বুঝে গেছে মেয়েটা সারা টা দিন নিশ্চয়ই কেঁদে কেঁদে নিজের এই অবস্থা বানিয়েছে।
বিষয় টা জাফর সাহেবের চোখ আওড়াতে পারেনি ,আরুকে এভাবে কখনো দেখেনি কষ্ট পেতে । কাঁদতে দেখেছে চোখের সামনে কিন্তু ভেতরে কতটা কষ্ট পেয়ে কাঁদলে একজন মানুষের এই রকম চোখ মুখ ফুলে ওঠে এটা উনার জানা ।ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে।
দ্রুত পায়ে আরিয়ার সামনে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো

__কি করেছে বেয়াদব ছেলে আজ ? মেরেছে ? নিয়ে যায়নি মলে ?
জাফরের মুখে স্নেহশীল কথা শুনে আরিয়া এবার ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বললো ,
__তোমার ছেলে আমাকে মার্কেট তো দুরের কথা উল্টো আমাকে মাঝ রাস্তায়….
এটুকু বলতেই আরিয়ার চেহারায় হঠাৎ করেই চেন্জ আসে ,ভয়ে জড়সড় হয়ে গুটিয়ে নেয় নিজেকে জাফর সাহেবের একদম কাছে এসে ।
আরিয়া হঠাৎ কথা থামিয়ে দেওয়ার বিষয় টা কারো বোধগম্য হলো না কিন্তু সামিরা আরিয়ার পাশাপাশি ছিলো বিধায় ওর বুঝতে অসুবিধে হয়নি , মাত্র দরজা পেরিয়ে দু পা ভেতরে ফেলেছে আফরান ।
দেখতে খানিক টা বেপোরোয়া লাগছে ।কপালের ডান দিকে ঠিক চুলের একটু নিচে রক্ত রেখা উঁকি দিয়ে দেখা দিচ্ছে চুল গুলো মৃদু বাতাসে দুল খাওয়ার কারনে ।
সঙ্গে সাদা রঙের শার্ট টাতেও রক্তের ছাপ যেনো লাল রঙের ফেব্রিক্স দিয়ে বিন্দু আঁকা হয়েছে ।
আয়শ সামিরার চোখে ভয়ের ছাপ দেখে দৃষ্টি অনুসরণে সেদিকে তাকাতেই আফরান কে দেখে মুখে একটু বিরক্ত নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো

___আরুকে নিয়ে যাসনি কেনো? যদি না নেওয়ারই ছিলো তবে আমাদের সঙ্গেই তো পাঠিয়ে দিতে পারতিস আর বেরিয়েছিলি কেনো? আবার একাই পাঠিয়েছিস এসব কি আফরান ?
আয়শের কথা শুনে সবাই সেদিকেই দৃষ্টি ফেলে ।
জাফর সাহেবের মেজাজ টা আফরান কে দেখেই মনে হয় বেড়ে গিয়েছে
__কাকে খুন করে এসেছো ? কার মায়ের বুক খালি করে এসো আজ আবার? কার ফ্যামিলি থেকে একজন কে উঠিয়ে দিয়েছো ? তোমার মতো নির্লজ্জ ছেলে আর দুটো দেখিনি । দুদিন বাদেই তো বিয়ে এখনো এসব ছাড়ছো না কেনো? খুন খারাবী নেশায় পরিনত হয়েছে দেখছি তোমার । মামনির দিকে তাকাও ততটা স্বচ্ছ ওর মন টা ,আর তুমি তোমার এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে ওকে জড়াতে চাচ্ছো আফরান । আর আজ একা ছেড়েছো কেনো ? নিজে নিয়ে আসলে কি খুব বিপদ হয়ে যেতো ?

একসাথে এতো গুলো প্রশ্ন আফরানের দিকে ।
কিন্তু আফরান কে দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুই শুনেনি চুপচাপ নিজের মতো সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
রহিমা বেগমের যেনো ভেতর টা ভয়ে কাঁপছে ,এই ছেলে মানুষ খুন করেছে নিশ্চিত শার্টের লাল দাগ গুলো অবশ্যই রক্ত
__: এই কারনেই বলেছিলাম যা হয়ে গিয়েছে সেটা হয়ে গিয়েছে ,এমন একজন খুনির সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে আমি চোখের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুতেই দেখতে পারবো না । আর এই বিয়ে হবে না বেস ।ভাইজান যা হয়েছে সব ভুলে যান আমরা কিছু দিনের জন্য অন্ধ হয়ে এই ছেলের স্বভাব ভুলে গিয়েছিলাম।এ ছেলে কোনো দিন পরিবর্তন হবার নয় ।আশা করি আপনি এর উপর কথা বলবেন না আপনিও নিশ্চয়ই আরিয়ার জন্য এমন পাত্র আশা করেননা ।
আফরান স্বাভাবিক গলায় একটু আস্তে করেই বললো

__দাড়িয়ে চোখের সামনে যেনো বিয়ে টা না দেখতে পারেন সেই ব্যাবস্থা করে দেবো ,একদম চিন্তা করবেন না।
রহিমা বেগমের মুখের উপর কথা বলাটা উপস্থিত কারোই পছন্দ হলো না ।
কিন্তু আপাতত তার এসব কথার দাম এখানে নেই ।আর এই কথাটা নিছক অতিরিক্ত কথা ছাড়া কিছুই নয় এটাই সবার ধারনা । তাই এটা নিয়ে কেউ কথা বাড়ায়নি ।
মায়ের মুখে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা টা শুনে আরিয়া কপাল কুঁচকায় ,,যাই হোক সেটা ওর আর তার মাফিয়া হাসব্যান্ড এর বিষয় ,অন্য কেউ কেনো কথা বলবে? মা হয়েছে তো কি হয়েছে বিয়ে ভাঙার কথা কেনো বলবে? উনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো নাকি আজব তো ।

বিয়ে ভাঙার কথা টা মোটেও তার পছন্দ হয়নি আর খুনি কেনো বলছে? উনি খুন করেনি জানি আমি হয়তো হাতাহাতি হয়েছে ,লড়াই হয়েছে কিন্তু উনি মোটেও কাউকে খুন করেননি , বুজতেছে না কেনো কেউ ।
কথাগুলো আরিয়া মনে মনে নিজের সাথেই বকবক করেছে ।
এসব ভাবনার মাঝেই কানের কাছে কথার শব্দ বেজে উঠে
__হয়েছে নালিশ জানানো?
আরিয়া চমকিয়ে একটু পিছু হটে বললো
___আ… আপনি কথা বলবেন না একদম বলে দিলাম ।
কপা গলার আওয়াজ শুনে আফরান স্মীত হাসে ।

জাফর সাহেব: নির্লজ্জ দের মতো হাসছো আবার দেখছি । শুনো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে ক্যান্সেল । অনেক হয়েছে তামাশা এবার একটু শান্তি ময় সকাল চাই তুমি আসতে পারো ।তোমার এসব কে ভালোবাসা বলে না আফরান ,বারবার মেয়েটার মন ভেঙে দিচ্ছো তুমি ।নিজের ব্যাক্তিত্ব নিয়েই থাকো আমার মামনি কে আর জড়াবে না তোমার সাথে নিজের হাতে মামনি কে তোমার হাতে তুলে দিতে পারিনা সব টা জেনেও । আসতে পারো তুমি ।
আফরান কপাল কুঁচকে বললো

___আমি বলেছি আমি এই মেয়েকে ভালোবাসি ?? ইভেন আমি তো আগেই বলেছি বিয়ে করবো না তোমরাই বলেছো । বাট বউয়ের যেহেতু শখ হয়েছে এখন এটা তোমরা চাইলেও থামাতে পারবে না ।
__একদম মামনি কে আর নিজের বউ বলে দাবি করবে না
__তা বউ কে কি শালি বলে দাবি করবো আশ্চর্য !?
___তোমার মাথায় যে কিছুই নেই ভেতর টায় যে অন্ধকারে ছেয়ে আছে কথাবার্তা ধারাই বুঝা যায় ।
আফরান আর কথা বাড়াতে চাচ্ছে না তাই চুপ করে আবারো আরিয়ার কাছে গিয়ে স্মীত হেসে বললো
_____রাগ করেছো?

___আরিয়া আফরানের দিকে একটুও না তাকিয়ে বললো ,কথা বলবেন না আমার সাথে আপনি ।
__ঠিক আছে গেলাম আমি ,কথাটা বলে একটু কানের কাছে গিয়ে আস্তে কন্ঠে বললো
_মাথায় কিন্তু প্রচুর আঘাত পেয়েছি বউ ব্যাথা হচ্ছে খুব । কথা টা বলে আফরান উপরের হাটা ধরে ।
আরিয়া একবার আফরানের দিকে তাকিয়ে আবার উপস্থিত সবার দিকে দৃষ্টি ফেলে তাকায় ।
জাফর সাহেব:- কি বলে গেলো এমন করে আবার ? নিশ্চয়ই হুমকি দিয়েছে তাইনা । চিন্তা করো না মামনি ওর কথায় কিছু হবে না ,,একবার বলে দিয়েছি যখন তখন বিয়েটা কিছুতেই হবে না ।
আরিয়া কাঁপা গলায় বললো
আসলে চাচাজান হয়েছে কি ,উনি মিথ্যে বলছেন না আমি দেখেছি বিয়ের পেপার গুলো ।
জাফর আশ্চর্য হয়ে বললো

__তুমি কি শিউর ?
আরিয়া মাথা নত করে লজ্জা মুখ করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় ।
জাফর আরিয়ার রিয়েকশন দেখে একটু অবাক হয় ,একটু আগেই তো কান্না করছিলো অভিযোগ দিতে চেয়েছিলো এখন এক মুহুর্তেই মুড চেন্জ..?
__আচ্ছা মামনি তুমি বলো যে, তুমি কি আফারানের সাথে থাকতে চাও ? বিয়েটা কিন্তু ফেলনা জিনিস নয় এখন তুমি বড় হয়েছ ও বুঝার ক্ষমতা আছে নিশ্চয়ই তাই জিজ্ঞেস করছি তোমার যদি মতের উপর ভিত্তি করেই হবে সব ,তবে তুমি যদি না থাকতে চাও সেটাও অবশ্যই আমরা ব্যাবস্থা করে ডিভোর্স এর ব্যাবস্থা…..
এটুকু বলতেই আরিয়া বললো

__চাচাজান উনি মোটেও এতোটা খারাপ নয় তোমরা যেমন টা মনে করো ।
আরিয়ার কথায় সকলেই একটু চমকায় ,এদের দুইজনের কথা কি সব সময় চেন্জ হয়েই যাবে? কখনো কি এক হবে না এদের কথা ? একবার হ্যাঁ তো আরেকবার না ।
রহিমা বেগম সামনে এসে ধমকিয়ে বললো
__তোমার মাথা এই ছেলে একদম ওয়াশ করে দিয়েছে দেখছি । আফরান স্বাভাবিক নয় এটা কি বুঝতেছো না এখনো? অন্য ছেলেদের মতো ওর চাল চলন মোটেও আমার‌ কাছে স্বাভাবিক মনে হয়না আরিয়া ।
আরিয়া চুপচাপ মাথানত করে ফ্লোরে দৃষ্টি রেখে তাকিয়ে থাকে ।

জাফর : আহ কি করছো রহিমা এসব ? মামনি নিজের ভালো টা বুজতে পারে এখন , শুধু শুধু ধমকিয়ে লাভ আছে ?
আরিয়ার ইচ্ছে করছে না মোটেও এখানে থাকতে , নিশ্চয়ই উনার খুব ব্যাথা লেগেছে , রক্তাক্ত হয়ে আছে শরীর ,কোথায় গিয়েছিলো উনি ? এমন করে নিজেকে ওসব লোকদের সাথে জড়িয়ে কি লাভ উনার । কথা গুলো ভেবে আরিয়া আর এক মুহূর্তও এখানে দাঁড়ায় না ,আস্তে পায়ে জায়গা ছেরে উপরে চলে যায় ।
আয়শ : বাবা এখন এটা নিয়ে আর কথা না বাড়ালেই মনে হয় ঠিক হবে ,কারন ভাইয়া যা বলে দিয়েছে মনে হয়না এটার উপরে আর কিছু করা যাবে । তাছাড়া আরু নিজেই তো বলে গেলো তাইনা । ও যদি নিজেকে আফরানের কাছে বিপজ্জনক মনে করতো নিশ্চয়ই এভাবে নিজেকে ইচ্ছে করে আফরানের কাছে তুলে দিতে বলতো না । ভেবে দেখো তিন বছর আগে অফরানের অত্যাচারের জন্যই আরু চলে গিয়েছিলো এখন আবার কেনো নিজেই থাকতে চাচ্ছে?

মি মাফিয়া পর্ব ৫৬

আই থিংক আফরান আর আরুর মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো যেটা এখন নেই ।নয়তো আরু নিশ্চয়ই এভাবে সম্মতি দিতো না তাইনা ? তারপর……..

মি মাফিয়া পর্ব ৫৮