মি মাফিয়া পর্ব ৫৮

মি মাফিয়া পর্ব ৫৮
সুমাইয়া সাবিহা

তোকে তো আমি পরে দেখে নেবো নিউজ টা আমার কাছে ঠিক সময় মতো কেনো আসেনি ।ঐ কুত্তার বাচ্চাটার সাহস কি করে হয় একদম দেশে চলে আসার ? আধ মরা পুষ্টিহীন ছেলের পুলে গুলো আজ আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে নিজে সামনে না এসে । কি ভেবেছিলো ঐ কার্তিক ওর দেশে আসার খবর আমার কাছে আসবে না ?? ঐ সালার দম বেড়েছে এটার ব্যাবস্থা কর আগে । প্রতিটা সেকেন্ড এর নিউজ চাই আমার গট ইট।
আজ আমার বউয়ের যদি কিছু হয়ে যেতো তোদের প্রত্যেক টার শরীরের মাংস কেটে কুচি কুচি করে খিচুড়ি পাকাতাম।

কথা গুলো একদমে তানভীর কে বলে কল টা কেটে দিয়ে ফোন টা বিছানার উপর ছুড়ে মারে । মাথা পুরো একশো হয়ে আছে বুঝাই যাচ্ছে।
বিকেল বেলা যদি ফোনটা সময় মতো না আসতো তবে নিশ্চয়ই আরুর ব্যাপারে ক্লিয়ার হয়ে যেতো তারপর টার্গেট হিসেবে নিশ্চিত আমার বউ কে রাখতো ঐ কুত্তার বাচ্চা টা । ঐ বেটার সাহস আমি মিইয়ে দেবো একদম কার পেছনে লেগেছে ওর ধারনা এখনো হয়নি ।
কথা গুলো বলে শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে বারান্দার দরজা টার সামনে থেকে ভেতরে আসে আফরান ।
তার মধ্যেই এসে হাজির হয় আরিয়া । কথা না বলে ডিরেক্ট ভেতরে চলে আসে ।
এতোক্ষণের রাগ টা আরিয়ার সেই অভিমানী কিউটনেস চেহারার দিকে তাকাতেই যেনো উবে গেলো মুহূর্তে ।
আরিয়া আফরানের দিকে না তাকিয়েই ওষুধের ছোট বক্স টা এনে খাটের উপর বসে সেই অভিমানী গলাতেই বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__এখানে বসুন
আফরানের ঠোঁটের কোনে হাসি জমে বউ রাগ করেছে বলে কথা সেটাও এই প্রথম হয়েছে রাগ করেও তার কাছেই এসেছে চলে যায়নি কোথাও । এটাই তো আফরান সব সময় চেয়েছে তাইনা যা কিছু হবে সেটা তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে সেটা যেভাবেই হোক না কেনো যেই কারনে হোক না কেনো ।
কিন্তু এই মুহূর্তে বউ কে তো আর সব টা বলতে পারবেনা কেনো ওভাবে একা ফেলে চলে গিয়েছিলো নিশ্চয়ই খুব রাগ জমিয়েছে নিজের মধ্যে। ঠিক আছে আমিও দেখবো কেমন রাগ করেছে আমার বউ আর কতক্ষন থাকতে পারে ।
আরিয়ার ঠিক মুখোমুখি হয়ে বসলো , বসার পর তো মনে হচ্ছে আরেকটু রাগিয়ে দেই এই মেয়েকে ওটাকে এমন ভাবেই মানায় ।

__আমি তো ভেবেছিলাম আসবি না তা কি ভেবে আসলি? সত্যি করে বলতো ।আফরান চৌধুরীর জন্য দেখছি ইদানিং একটু বেশিই উদ্বিগ্ন হয়ে যাচ্ছিস । ফিরে আসার পর থেকেই দেখছি ছেচরা মেয়েদের মতো পেছনে পরে আছিস কি চাই আফরান চৌধুরীর থেকে?
___ছেচরা ? What do you mean by this word? আর কে ছেচরা হুম?
___কেনো? তোর মনে হচ্ছে না যে একটু বেশিই ছেচরামি করছিস?
এবার একটু উঁচু আওয়াজে বললো
__একদম বাজে কথা বলবেন না বলে দিলাম । আমি কখন আপনার পেছনে ঘুরে ঘুরে সময় নষ্ট করলাম ?
___ফিরে আসার পর থেকেই দেখছি আমার রুমে ঘুরে ফিরে উঁকি মারছিস তারপর রাতে এসে ঘুমোচ্ছিস আর কি কি করেছিস আমার সাথে রাতের বেলা সেটা তো আমি বলতে পারবো না Do you understand what I mean? আই থিংক তুই বুঝেছিস ।

আফরানের কথা গুলো এই মুহূর্তে আরিয়ার গা জ্বালিয়ে দিচ্ছে,এমন ভাবে খুচা মেরে কথা বলছেন কেনো উনি ? আমি উনার পেছনে এসেছি? নাকি বাধ্য করেছে ? এমন ভাবে নিজেই কাছে টেনে আবার নিজেই খুচরা দিচ্ছে ..
ফুঁসতে ফুঁসতে হাত থেকে সাদা টুকরোর তুলো টা ছুড়ে ফেলে বললো
__থাকুন আপনি আসবো না আমি আর আপনার কাছে । আমি আসলে আপনার প্রবলেম তাইতো ? ঠিক আছে আসবো না ।
কথা গুলো বলার সময় আরিয়ার গলায় যেমন রাগের ছোঁয়া ছিলো ঠিক মনে হচ্ছিল এই বুঝি কান্না করে দিবে কিন্তু সেটা বোধহয় প্রকাশ করতে চাচ্ছে না তাই এভাবে খাট থেকে ধপ করে নেমে গেলো ।
সঙ্গে সঙ্গে আফরান আরুর ডান হাত টা ধরে বললো

____কোথায় যাচ্ছিস?
__থাকবোনা আপনার কাছে,যেতে দিন আমায় হাত ছাড়ুন ।
___তোর কথার ধাঁচ তো দেখছি একদম ঠিক নেই ,একবার একেকরকম কথা বলছিস ,কালকেই তো বিয়ে করবি বলেছিলি আজকেই বলছিস থাকবি না । এতো দেখছি বিয়ের আগেই জ্বালিয়ে মারছিস পরে তো মনে হয় মাথাটাই কিনে নিবি ।
___ছাড়ুন আপনার সাথে কথা বলে শুধু শুধু কথা বাড়াতে চাইনা আপনি নিজের টা ছাড়া কিছুই বুঝবেন না কোনো দিন ।
___আচ্ছা?
আরিয়া ছুটার জন্য হাত কচলাতে লাগলো
আফরান এবার কপাল কুঁচকে বললো
__ঠিক আছে যেটা করতে এসেছিস এটা করে যা আমি কথা বাড়াবো না।
__লাগবেনা ,নিজের টা নিজেই করে নিন । ভালো কোনো মেয়ে খুঁজে নিন তাহলেই হবে আমার মতো ছেচড়া লাগবেনা ।

এই মেয়ে কোনোদিন ঠিক হওয়ার নয় কিছু হলেই ঐসব কথা বলবেই । কথাটা আফরানের পছন্দ না হলেও ইচ্ছে করেই নিজের কথায় নিজেকে একটু ফাঁসিয়ে দিলো আরুকে
__ঠিক আছে সুন্দরী কোনো রুপসী মেয়েকে নিয়ে আসিস তাহলেই চলবে ।আর বিশেষ করে ঐ শ্রাবনী কে চিনিস? এসকে এর সিইউ ? ঐ মেয়েটা কে ভিষন রকম পছন্দ হয়েছিলো তুই চলে যাওয়ার পর ওটার উপর আলাদা একটু ফিলিংস এসেছিলো ।

আফরানের মুখ থেকে কথাটা শুনে আরিয়া যেনো সব কিছু ভুলে গেলো এই মুহূর্তে,সব কিছু গুলিয়ে ফেলে । মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন সত্যিই কি উনি তাহলে আমার খবর রাখেনি এতো বছর? এখন তো মনে হচ্ছে রাখেনি, যেখানে একটুর জন্য একা বের হতে দেয়না সেখানে সব জেনেও নিশ্চয়ই চুপ থাকবেন না তাইনা ? তাহলে দুপুরে কি বলতে চেয়েছিলো আমি কি ভুল বুঝেছিলাম? তার মানে উনি সত্যিই সেদিন শ্রাবনী হিসেবেই ….
ওসব নোংরামি করেছিলো শ্রাবনীর সাথে ,বলতে গেলে তো অন্য একজন মেয়ে হয়ে যায় শ্রাবনী।
কথাটা ভেবেই সঙ্গে সঙ্গে আফরান এর দিকে ছলছল দৃষ্টি তে তাকায় ।
এই দৃষ্টির ভাষা বুঝতে আফরানের অসুবিধে হয়নি,এই মেয়ে কি বোকাই রয়ে যাবে সব সময় ? কথাটা ভেবেই আফরান বিরক্তি চোখে তাকিয়ে একটু ধমকিয়ে বললো
একদম ফালতু যতো সব চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরিস সারাক্ষণ ,মার চিনিস ?
কথাটা বলে আরিয়া কে টেনে পাশে বসায় ।
আরিয়া বোবার মতো হয়ে তাকিয়ে আছে এখনো ।

__এই তোর প্রবলেম কি হ্যাঁ ? এইটা কোন ধরণের অভ্যাস? মাঝে মাঝে এমন ব্লক হয়ে যাস কেনো হ্যাঁ ?দেখ আরু মেজাজ খারাপ করিস না মাথা টা ভিষন ধরে আছে মাথা গরম করতে চাচ্ছি না । তোর জামা চাই তাই তো ? এই কারনেই এমন চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস নিজের রুম টাকে সাগর বানিয়েছিস নিশ্চয়ই । ঠিক আছে যা যা লাগবে লিষ্ট দিস নিয়ে আসবো কাল এখন একটু শান্তি দে পারলে নয়তো রুম ছাড় ।
আরিয়া নিজেকে সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো ,পাশ থেকে তুলো টা নিয়ে আফরানের কপালের লেগে থাকা রক্ত গুলো আলতো ভাবে মুছে দিতে চায় কিন্তু প্রবলেম হয় তখন যখন দেখে এমন করে বসে ঠিক ভাবে দেখতে পাচ্ছে না কাটা জায়গা গুলো তাই দুহাঁটুর ভার খাটে দিয়ে নিজেকে একটু লম্বা বানানোর চেষ্টা করে কপাল ছুঁয় এখন একদম স্পষ্ট সব দেখা যাচ্ছে।

আফরান বিষয় টা খেয়াল করে বেশ মজা পায় ,তাই একটু দুষ্টু কন্ঠে বলে
___তুই আর ৫ ইঞ্চি লম্বা হলেই একদম পারফেক্ট মেচ হতো আমার সাথে ।
আরিয়ার মুখে কথা নেই ,কি বা বলবে ? এই লোকটা তো নিজের টাই পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে অগ্রাধিকার দেবে তাইনা । আর তাছাড়াও লাগবেনা কথা বলা ,উনার শ্রাবনী কে চাই তাই তো ঠিক আছে শ্রাবনীর চেহারা তো দেখেনি আমিও সুন্দরী মেয়ের ব্যাবস্থা করে দিবো । কথাটা ভাবার মাঝেই আকস্মিক শরীর টা কেঁপে উঠৈ আরিয়ার। হাত থেকে তুলো টা সাইড দিয়ে ফ্লোরে পরলো ।

এতো কাছ থেকে আরিয়ার সেই আকর্ষণীয় হলুদ ফর্সা গলায় সোনালী রঙের চিকন চেইন টা আফরান কে স্থীর থাকতে নেয়নি।তার উপর ব্ল্যাক রঙের কালো চুল গুলো এমন করে ফর্সা ঘারের উপর ঠাঁই নিয়ে তার মাতাল করা স্মেল টা বারবার আফরান কে দুলা দিয়ে ডাকছে এতে কি নিজকে আটকানো সম্ভব?
এতো স্বাভাবিক হয়েও কেনো এতো অস্বাভাবিক এই মেয়ে? কেনো এতো টানে নিজের দিকে ?
এই মেয়ে কে কি সে ইচ্ছে করে বলেছিলো আজ এতো কাছে আসতে ? এটা কি এই মেয়ে বুঝেনা ? তবুও নিজেকে সামলে আরিয়ার সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত রাখতে চেষ্টা করেছিলো তো এতোক্ষণ কিন্তু নিজেকে শেষ অবদি আটকিয়ে রাখতে না পেরেই তো গলায় মুখ গুজে দিলো একহাতে ঘারের নিচের দিকের চুল গুলো যে হালকা স্পর্শ করে ধরে পরপর চুমু একে দিয়ে নিজেকে মত্ত রেখেছে আরিয়ার মাঝে ।

আরিয়া বিষয় টা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি তৎক্ষণাৎ তাই চটজলদি নিজকে সরিয়ে ঠিক ভাবে বসতে চাইলো কিন্তু ব্যার্থ হয় আফরানের একহাতে পিঠ আর অন্য হাতে মাথায় শক্ত করে আকড়ে ধরা হাতের কাছে ।
__ক….কি করছেন আপনি।
কাঁপা গলায় কথা টা বললো আরিয়া ।
আফরান কোনো কথা না বলে তার কাজে সে লিপ্ত থাকে গলার সাইড থেকে শুরু করে গলার নিচ অব্দি যতটুকু দৃশ্যমান ততটুকুতে পরপর নিজের ঠোঁটের ছোঁয়া একে দিচ্ছে।
আরিয়ার কোমল হাত খানা ওভাবেই আফরানের ঘারের নিচ বরাবর শার্ট নিচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিয়ে আবারো বলার চেষ্টা করে

__শ….শুনছেন …?
আরিয়ার শরীরের গরম তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে সাথে কাঁপুনি তো আছেই ,থরথর করে শরীর কাঁপছে আরিয়ার। কিছু বলতে চেয়েও যেনো গলা দিয়ে নামছে না কথা ।
__বউ তুই এতো হট কেনো ? তোর কাছে আসলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে এতো কষ্ট হয় কেনো? তোর প্রতিটা কথা কাজ আমাকে তোকে নিয়ে এতো ভাবতে বাধ্য করে কেনো ? সত্যি করে বল ব্ল্যাক ম্যাজিক করেছিস নাকি আবার ?

আরিয়ার অবস্থা দেখে নিজেকে কিছুটা জোড় পূর্বক থামিয়ে মাথা উঁচিয়ে বুকের উপর চিবুক ফেলে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে কথা গুলো বললো আফরান ।
আরিয়া এখনো এভাবেই খামচে ধরে আছে আফরানের শার্ট ।
এতোক্ষণ তো সরিয়ে দিতে চেয়েছিলি এখন কি হলো ? নাকি আরো …
এটুকু বলতেই আরিয়া চট করে চোখ খুলে প্রথমেই দরজার দিকে একবার তাকিয়ে আফরানের কাছে থেকে সরে খাট থেকে নেমে গেলো ।
বিষয় টা এতো টা জলদি হয়েছে যে আফরানের ও বুঝতে অসুবিধে হয়েছিলো যে ,এভাবে এই মেয়ে তার হাত থেকে সুযোগ পেয়েই চলে যাবে ।

____কি হয়েছে ? এমন করছিস কেনো?
আরিয়া দরজার দিকে যেতে যেতে বললো
___আ…আপনি খুব খারাপ ,খুব বাজে । যখন তখন যা ইচ্ছা করেন টাইম নেই কিছু নেই চুপ থাকুন আপনি কথা বলবেন না ।
আফরান একটু আওয়াজ করেই বললো
__তা টাইম টা বলে দিস চলে আসবো ঠিক আছে ?
আরিয়া আফরানের আর কোনো জবাব না দিয়েই বেড়িয়ে পরলো রুম থেকে ।
__নিজের রুপ নিয়ে সামনে এসে ঘসাঘসি করবি আর আমি কিছু করলেই খারাপ হয়ে গেলাম । সে যাই ইচ্ছা মনে কর তোর কাছে খারাপ কিংবা ভালো সেটা আমি হলেই চলবে আর কিছু দেখার বিষয় না । কথাটা একটু আওয়াজ করে আরিয়া কে শুনাতে চাইলো কিন্তু বুঝার উপায় নেই এটা আরিয়া আদৌ শুনেছে কিনা ।

আফরান অফিসে চেয়ার টায় বসে বসে ফাইল গুলো দেখে যাচ্ছে,বাম হাতের পেন টা বারবার হাওয়াতে ঘুরাচ্ছে মনে হচ্ছে খুব তীক্ষ্ণ ভাবে কাজ গুলো পর্যবেক্ষণ করছে ।
সামনেই আজমল সিকদার বসে আছে বারবার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আবার শরীরের তাপ টাও গরম ,যাকে বলে কথা বলতে ভয়ের তুলপার খাচ্ছে বুকে ।
তার পেছনেই তানভীর দাঁড়িয়ে আছে । সে জানে আজমল কি বলবে কিন্তু আফরান ও কি বলবে তার বিপরীতে সেটাও অজানা নয় ।
আফরান হাত থেকে পেন টা সামনে রেখে আজমল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো

__Time starts now.Say what you want to say .
___দেখো আফরান আমি তোমাকে বাড়িতেই বলতে পারতাম কিন্তু বাড়িতে সবার সামনে আমার দুর্বলতা টা প্রকাশ করতে চাচ্ছি না তাই এখানে আশা । আর আমার আসার কারন টাও মেবি তোমার অজানা নয় ,দেখো আফরান মানছি আমার ছেলে ভুল করেছে ভুল নয় অনেক বড় ভুল সেটাও মানলাম কিন্তু প্লীজ এবার ওকে ছেড়ে দাও । এতো দিন হয়েছে আটকিয়ে রেখেছো কোনো খবর পাইনি ছেলেটার তোমার আন্ডারে যেহেতু আটকে আছে নিশ্চয়ই তুমি এতো দিন এমনি এমনি রাখোনি যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছো এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।দেখো ও আমার ছেলে হয় যতোই ভুল করুক না কেনো সব শেষে একজন মা বাবা কখনো সন্তান হারাতে চায়না । তোমার বাড়িতে এতো বড় আয়োজন হচ্ছে আমরাও আছি এই ক্ষেত্রে আমার ছেলেটা কাছে থেকেও থাকবেনা এটা …..
এটুকু বলতেই আফরান বললো

__দিস ইজ মাই অফিস সো টক এবাউট ওয়ার্ক ।এসব ননসেন্স কথাবার্তা ছাড়ুন ।
___দেখো আফরান আমার কাজ কর্ম সম্পর্কে তোমার জানা আছে ,রিচ ডাউন হওয়ার পর অনেক কষ্ট করে আবারো ঠিক করেছি। এখন আমার এসবের উপরে আমার সন্তান।আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করে বলছি আফরান ছেলেটাকে এবার অন্তত….
___গেট আউট।
পাশ থেকে ছোট নেইলকাঠার টা হাতে নিয়ে ভেতর থেকে ছোট ধারালো জিনিস টা বের করে ওটাতে চোখ বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো কথাটা

__তোমার সন্তান হলেও কি তুমি এসব সহ্য করতে……..
এটুকু বলতে আফরানের রাগ টা শেষ সীমায় পৌঁছায়, সঙ্গে সঙ্গে হাতের ধারালো ছোট ছুড়ির মতো জিনিস টা দিয়ে আজমল সাহেবের ঠিক ঠোঁটের নিচ বরাবর থুতনির একটু উপরে আঘাত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
__আমার ব্যাক্তিগত জিনিস নিয়ে কারো মুখে কথা শুনা আমার কাছে বিষাক্ত লাগে ,ভালো ভাবে বলেছিলাম চলে যেতে কথা কি বুঝিস না?
আফরান এর আঁখি দুটিতে মনে হয় কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে এতোটা প্রখর মনে হচ্ছে তাকে । সন্তান নিয়ে কথা বলা মোটেও পছন্দ হয়নি তার ।
আজমল সাহেব আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় ধরে রক্ত নিয়ন্ত্রণে ব্যাস্ত এখন ।
___কিভাবে এটা করতে পারলে বাবার বয়সী একজনের সাথে এমন করতে তুমি ? তোমার কি মায়া দয়া রুহ বলতে আদৌ কিছু আছে ?

___লাশ হতে না চাইলে জায়গা ছাড় নয়তো…
এটুকু বলতে তানভীর আজমল কে উদ্দেশ্য করে বললো
__আপনি আসতে পারেন স্যার কে এমনিতেই গরম করে দিয়েছেন এখানে থাকা আপনার জন্য ঠিক হবে না ।
আজমল তানভীরের দিকে তাকিয়ে আর একটা কথাও না বাড়িয়ে পাশ থেকে একটা টিস্যু পেপার নিয়ে রক্ত চিহ্নিত জায়গায় সেটা ধরে বেরিয়ে গেলো ।
আফরান চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে টিস্যুর পুরো বক্স টা তানভীরের দিকে ছুড়ে ফেলে বললো

___আমার ফিউচার নিয়ে কথা বলেছে তাইনা লোকটা ,এর পুরো কম্পানি উড়িয়ে রাস্তায় বসিয়ে এর ফিউচার আমি হেল করে দিবো । কথাটা বলেই সামনের ফাইল গুলোও নিচে ছুড়ে ফেলে দিলো ।
___স্যার ! প্লীজ শান্ত হোন ।
আফরান তানভীরের কথা টা মনে হয় শুনলো না গলার টাই টা ঠিক করতে করতে পাশ কেটে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো ,বাড়ির প্রত্যেক টা লোক কে যেনো চ্যাক করে কাজে রাখা হয় ।
তানভীরের বুজতে অসুবিধে হয়নি কিসের কথা বলেছে আফরান ।

পুরো বাড়ি পরিস্কার করা হচ্ছে। অর্ধেক কাজ প্রায় শেষ ।ফুল দিয়ে বাড়ির বাহিরে টা কমপ্লেট করা হয়েছে এখন ভেতরে কাজ চলছে তানভীর লোকগুলোর কাছাকাছি থাকছে সব টা দেখিয়ে দিচ্ছে। তানভীরের কাজ মুলত এটা নয় লোকগুলো কে যাচাই করা চেক করা । সব খবর নিয়েই এদের কে আনিয়েছে ।
অবশ্য এসব কাজ সকালেই শেষ হয়ে যেতো কিন্তু প্রথমে যেই লোক গুলো কে নিয়েছিলো জাফর সাহেব এদের কে আবার পাঠিয়ে দিয়েছে ,যেসব কাজ করেছে তারা সেগুলো উঠিয়ে নিয়ে নতুন লোক গুলোকে দিয়ে নতুন করে আবার শুরু করেছিলো ।
তাই বিকেল গড়ালো ।

অবশ্য এসব আদিখ্যেতা ছাড়া কারো কাছে কিছুই না ,জাফর সাহেব নাক কুঁচকে এসব এড়িয়ে গিয়েছেন সব কাছুতে বাড়াবাড়ি ছাড়া এই ছেলের কিছু হজম হয়না ।
সব যেহেতু নিজেই করবি তা বউকে নিয়ে দেশে কি করিস ? পরিবার রেখেছিস কেনো ? যতো সব ।
আপাতত বাড়ির কারো কোনো কাজ‌নেই এখন শুধু আরিয়ার শপিং করে দেওয়া বাকি । সকালেই বলেছিলো জাফর সাহেব যা যা লাগবে নিয়ে আসতে আরিয়া অসম্মতি জানিয়ে দৃঢ়তা বজায় রেখে একদম বিশ্বাসের সাথে বলেছে
__উনি নিয়ে আসবে বলেছেন।
এই কথাটার মাঝে অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে বুঝার মতো বয়স জাফর সাহেবের হয়েছে তাই কিছু বললেন না এর বাহিরে গিয়ে ।

প্রেমা সামিরা আরিয়া প্রায় অনেক ক্ষন হয়েছে আড্ডা দিচ্ছে ,আসলে আরিয়া আর আফরানের প্রেমের কাহিনি শুনার জন্য একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ছে ।
__আরে এটা তো বল কিভাবে ভাইয়াকে কি দিয়ে ফসিয়েছিস ? এতো বিরক্তিকর মানুষ টা কিভাবে এতোটা পছন্দ হয়ে গেলো হঠাৎ করেই তাও তিন বছর পর ফিরেই একেবারে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলি ।
প্রশ্ন টা প্রেমা আরিয়া কে করেছে কথার মাঝেই ।
সামিরা প্রেমার কথার উত্তরে বললো
__উফ এসব কি জিজ্ঞেস করছিস? আমার তো মনে হচ্ছে আরু নয় উল্টো ভাইয়া ওকে নিজের জন্য আগেই বরাদ্দ করে রেখেছিলো নয়তো আরু এমন একজন উগ্র মেজাজের মানুষ কখনোই চায়নি জানি আমি ,কি বল আরু ঠিক বলিনি ?

__আহ ,তোরা এবার থামবি ?এসব কিছুই নয় বুঝলি । যাকে যার জন্য লিখা আছে সে তার হবে এটাই । এবার চুপ কর একটু বোন তোরা ।
প্রেমা :- এটা কিন্তু ঠিক নয় আরু,,আমরা সব সময় আমাদের কথা বলেছি এখন তুই একদম চিট করতে পারবিনা।
আরিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো
আরিয়া এবার একটু ভাব নিয়ে সামনে থেকে চুল গুলো সরাতে সরাতে বললো
__তোদের কি মনে হয় মিস আরিয়া চৌধুরী কারো পিছে ঘুরে ঘুরে প্রেমের বানী শুনিয়েছে? হুম বয়ে গেছে আমার । শুন ঐ লোকটাই আমার পিছে ঘুরঘুর করে আমাকে বাধ্য করেছে বুঝলি ,আর তোরা হয়তো জানিস না উনি নাকি আমাকে গত আমার ছোট বেলা থেকেই পছন্দ করে ।
সামিরা প্রেমা দুজনে হুঁ হুঁ করে হেসে বললো ,

__হয়েছে চাপা বাজি ছাড় বুঝলি ,বললেই হলো নাকি ? ছোট বেলা থেকে ভালবাসলে এতো বছর কেনো বাসেনি? এই বাড়িতে আসার আগে কি হয়েছিলো? খোঁজ নেয়নি কেনো? তারপর আসার পরেও মার খেয়েছিস বুঝলি আমরা কিছুই ভুলিনি ।হতে পারে ভাইয়া যখন মাঝে নিখোঁজ হয়ে চার বছর পর ফিরে ছিলো তুই তখন এমন কিছু বলেছিস যেটা ভাইয়াকে বাধ্য করেছিলো তোর কাছে আসতে,সবই বুঝি ।
__আরে পিংকি প্রমিস সামু ,উনি আমায় বলেছে এটা সত্যিই বলছি ।
আরিয়ার মুখের রিয়েকশন দেখে প্রেমা সামিরা আবারো হাসলো ।
_____আফরান চৌধুরী তোকে বলেছে এটা শিউর?

দরজার সামনে থেকে শুনে আরিয়া সবার হাসি সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া হয়ে যায় ।এই গলার আওয়াজ কারো অপরিচিত নয় একসাথে ঘার বাকিয়ে সবাই সেদিকেই দৃষ্টি ফেললো ,আফরান কে দেখেই একবার ঢুক গিললো সবাই ।
আফরান দরজায় হালকা হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আরিয়ার দিকে ফেলে ।
সামিরা প্রেমা খাট থেক উঠে দাঁড়িয়ে বললো,আসলে ভাইয়া আমরা তো মজা করছিলাম ।
আফরান কারো দিকেই তাকাচ্ছে না একদৃষ্টি এখনো আরিয়ার দিকেই ।
আরিয়া এই মিনিটের মাথায় কয়েকবার ঢুক গিলে ফেলে ।
সামিরা: ভাইয়া আপনি কি এখানে আসবেন ? আমরা চলে যেতাম?
আফরান কোনো উত্তর করলো না ।
প্রেমা সামিরার বুঝতে বাকি নেই তাই এক মুহূর্তও দেরী না করে পাশ কেটে রুম ছাড়ে ।
আরিয়া ভীত গলায় বললো

__আমি বলতে চাইনি তো ওরা তো আমায় বারবার বলছিলো সত্যি বলছি ।
আফরান কপাল কুঁচকে ভেতরে ঢুকে দরজা টা লক করে আরিয়ার সামনে এসে বললো
___কিছু বলেছি? তাহলে এমন ভয় পাচ্ছিস কেনো?
আরিয়া :- আপনি তো মারবেন মনে হচ্ছে তাইতো আগেই বলে দিলাম ।
__তোর কি মনে হয় তুই না বললে মারবো না?
আরিয়া ভয়ে দুকদম পিছিয়ে গিয়ে বললো ,
__ প্লীজ অন্তত আজ মারবেন না প্লিজ। আর ভুল‌ করবো না সত্যি বলছি ।
আফরান কপাল কুঁচকে ধীর পায়ে আরিয়ার দিকে যায় ।

আরিয়া এবার সত্যিই ঘামছে আজ মোটেও মার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তার । তাছাড়া সে তো ভালো হয়ে গিয়েছে তাইনা আগের মতো মারের কাজ করে নাকি আজ নাহয় একটু সামান্য ভুল করে ফেলেছে বিয়ে উপলক্ষে কি এটা মাফ করা যায়না? নিজের জামা খিচে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়া ।
আফরান আরিয়ার কাছে এসে বললো

__এভাবে ভয় পাচ্ছিস কেনো? খেয়ে ফেলবো নাকি? এতো বছরেও যেহেতু একদম মেরে দেইনি এখনো ও একেবারে মারবোনা নিশ্চিন্তে থাক । কথা টা বলে আরিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল গুলো সরিয়ে এক সাইড করে সামনে রেখে গলা থেকে চিকন চেইন টা খুলে দিতে লাগলো ।
___আআআ এটা খুলছেন কেনো? খুলবেন না এটা । একদম খালি হয়ে যাবো অলংকার ছাড়া মেয়েদের ভালো দেখায় না তো ।
আফরান : আচ্ছা? ঠিক আছে পড়ে থাক এটা তোর যদি আমাকে সারাক্ষন রোমান্স করার সুযোগ দিস তাহলে আমার তো আপত্তি নেই।

__কিসব বলছেন?
__কি বলেছি?বিয়ে বাড়িতে কাকে দেখানোর ইচ্ছে আছে নাকি ?
___আবারো শুরু করে দিলেন ।
খুলা শেষে আরিয়ার হাতে সেট ধরিয়ে দিয়ে বললো
__ঠিক আছে বলবো না এসব ।সত্য টা শুনবি?
___কিসের সত্য?
আফরান আরিয়ার সামনে এসে বললো
__এটা পরলে আমার অবস্থা কি হয় জানিস?
এটুকু বলে আফরান এক আঙ্গুল দিয়ে আরিয়ার গলার সাইডে টাচ করে বললো,, ইচ্ছে করে এই জায়গা গুলো খেয়ে ফেলি সাথে তোকেও পিষিয়ে ফেলি একদম ।

কথা টা বলেই আফরান গালের এক কোনে জিব ঢুকিয়ে দুষ্টু হেসে নিজের হাত সরিয়ে নেয় ।
আরিয়া এই কথাটা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ।লোকটার লাজ লজ্জা কিছু নেই ,সব কিছু মুখের উপর কেনো বলে দিতে হবে হ্যাঁ? আশ্চর্য মানুষ একটা ।
কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও আরিয়ার চেহারা টা এই মুহূর্তে লজ্জায় লাল হয়ে আছে পুরো আফরানের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে কোন দিকে স্থির রাখবে সেটাও বুজতেছে না ।
আফরান আরিয়ার অবস্থা দেখে একটু হালকা শব্দে হেসে বললো

__ একসাথে দুটি পুষ্টিকর জিনিস পাবো সেটা কখনো ভাবিনি ,
বউয়ের সঙ্গে টমেটো ফ্রি ,আই মিন তোর গাল গুলো টমেটোর চেয়েও বেশি লাল হয়ে আছে ।
কথাটা বলেই আরিয়ার বাম সাইডের গালটায় একটু জোড়ে কামর বসায় ।
আরিয়া চেঁচিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে,
__আআহ কি করছেন কি ,আমার শরীর আপানার মতো এতো স্টিলের বডির মতো নয় । ওহ।
এটুকু বলে হাত দিয়ে গাল টা ঘসতে লাগলো আরু।
___তা তুই আমার বডি কিভাবে চ্যাক দিয়েছিস হ্যাঁ ? সত্যই করে বল আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে কখনো আমার ….

এটুকু বলতেই আরিয়া আফরানের অগ্রভাগে পরপর কিল ঘুষি দিতে দিতে বললো ,
__আপনি সত্যিই খুব বাজে হয়ে যাচ্ছেন মি মাফিয়া। কি সব বলেন নিজেও জানেন না ।
___আহ কি করছো মেরে ফেলবে তো এভাবে মারতে মারতে ।
আর শেষের মাফিয়া এটা কোন‌ ধরনের শব্দ ?কখনো কোনো বউদের দেখিনি হাসব্যান্ড কে এ ধরনের কথা বলতে ।
কথা টা বলে আরিয়ার দুহাত নিজের হাতে আবদ্ধ করলো ।

মি মাফিয়া পর্ব ৫৭

আরিয়া : তাহলে কার বলবো ? কারো হাসব্যান্ড আপনার মতো সাইকো মাফিয়া হয় নাকি ?
__রিয়েলি? তার মানে আমি ওয়ান পিস ? তারপর……

মি মাফিয়া পর্ব ৫৯