মি মাফিয়া পর্ব ৫৯ (২)

মি মাফিয়া পর্ব ৫৯ (২)
সুমাইয়া সাবিহা

__এই কন্ঠ দিয়ে বারবার তোকে ডাকতে ইচ্ছে করে তাইনা? এই কন্ঠস্বর আমার চাইনা এই বেহায়া হার্টবিট চাইনা আমার। যেটা আমার হয়েও অবাধ্য হবে ।
কথাটা বলেই নিজের কন্ঠনালীর দিকে কাঁচ টা এগুতেই কানে চিৎকারের শব্দ বেজে উঠে । গুঞ্জনের শব্দ চারদিক থেকে ভেসে আসছে আফরানের কানে ।
এতেই যেনো আফরানের শান্তি মিলেছে সামান্য হলেও তাইতো হাত থেকে ভাঙা কাঁচ টা রেখে দেয় স্বযত্নে টেবিলের উপর ।মুখে বাঁকা হাসি রেখে পাশ থেকে ফোনের স্ক্রিনে একটি ভিডিও চালু করে ।

যেখানে স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে নিচ তলার সকল মানুষ একত্রে জড় হয়ে আছে চেঁচামেচি করে যাচ্ছে সবার মাঝখানে রহিমা বেগম ফ্লোরে পড়ে আছে দুহাত মুখের উপর দিয়ে ঢেকে রেখে গোঙানির আওয়াজ দিচ্ছে।দুহাতের উপর দিয়ে রক্ত প্রবাহ হচ্ছে পরনের কাপড় খানাও ঠিক নেই দু পা ছিটিয়ে জলন্ত ব্যাথা অনুভব করছে । পাশ থেকে আরিয়া দাঁড়িয়ে কি হয়েছে বুঝার চেস্টা করে ভিরের মধ্যে প্রবেশ করছে।
এটুকু দেখতেই আফরান ফোনটা হাত থেকে আবারো টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বুকের কাটা অংশটির উপর হাত রেখে বেপোরোয়া ডেভিল হাসি মুখে জমিয়ে বলতে শুরু করে :-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলেছিলাম ফাইভ মিনিটের মধ্যে আমার রুমে আসবে তুমি তো শুনলে না তাহলে আমি কি করবো? তোমাকে খুব কাছ থেকে একবার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে । এতো মারাত্মক ভাবে আমাকে কেনো ফাসিয়েছো ? যদি কথামত চলে আসতে অন্ততঃ একটু হলেও কষ্ট টা কম হতো শাশুড়ির তোমার জন্যই তো হলো না। তুমি তো আমার কথা না শুনে মায়ের কথায় আমার কাছে আসোনি সেদিন তো বলেছিলাম এমন কিছু নেই যার কারনে আমাদের মাঝে দুরত্ব তৈরি হবে যদি হয় সেটাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবো । আজকেও তুমি অন্যের কথায় আমার কথার মুল্যে দাওনি সো যেই কারনে অবাধ্য হয়েছো সেই কারন টা তো আমাকে স্থির থাকতে দেয়নি আরু
তাছাড়া ঐ মহিলার তো শাস্তি পাওয়ারই ছিলো তাইনা ? তোমার ঐ নরম মসৃণ তুলতুলে শরীরে হাত দিয়েছে সে ঐ হাত অবশ্যই সজল দেখতে চাইনা , যেনো একই ভুল ঐ মহিলা আর না করতে পারে তার জন্য এই সামান্য ব্যাবস্থা । আর ঐ চোখ দিয়ে সেদিন আমাদের অনুভূতি পূর্ণ সুন্দর মুহূর্ত টা দেখে তোমার চরিত্রে আঙুল উঠিয়েছে তার জন্যই তো এই ব্যাবস্থা করে দিলাম যেনো আর দ্বিতীয় বার না দেখতে পারে ।

তারপর আজকে ওসব কথা বলার পর ঐ চেহারা থেকে দেখতে আমার অবশ্যই বিরক্তিকর লাগবে তাইতো একটু এসিড এর ব্যাবস্থা করে দিলাম ঐ হাতে ঐ চোখে কিন্তু বিশ্বাস করো মরে যাবেনা একদম বাঁচিয়ে রাখবো নয়তো তুমি খুব কষ্ট পাবে খুব কাঁদবে তাই জান টুকু বাঁচিয়ে রাখবো ।
কথা গুলো আফরান প্রায় পাগলপান গলায় বলেছে গলার স্বর মুহুর্তে একবার স্বাভাবিক তো অন্যবার ক্রেজি টাইপ হচ্ছে। কিন্তু আফসোসের ছিটে ফোঁটাও নেই এই চেহারায় ভয়ঙ্কর এক রুপ প্রকাশিত ।এই মুহূর্তে আফরান রক্তে রঞ্জিত ভেজা ছুপছুপে শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে রক্ত গুলো তে একবার চোখ রাখে অন্ধকারে চাঁদের আলোয় কালচে দেখা যাচ্ছে সেগুলো দেখা পাওয়া মাত্রই ঠোট কামড়ে নিজে নিজে হালকা হাসছে ।
এতোক্ষণ ধরে সবার মুখে একটাই কথা এটা কি থেকে কি হয়ে গেলো কিভাবে হয়েছে ? হঠাৎ আল্লাহ সব রক্ষা করো এতো মানুষের মাঝেও চোখের সামনে দিয়ে কিভাবে এই কাজ টা করলো নির্দয় মানুষ এই শেষ বয়সী মহিলার সাথে এমন কে করলো ?

আপাতত কারোই বৌধগম্য হয়নি এখনো এখানে কি হয়েছে গুঞ্জন শুনতেই জাফর সাহেব খলিল সাহেব সবার আগে এখানে এসে নিচে এভাবে মুখে হাত রেখে রহিমা বেগম কে কাতরাতে দেখেই দুজোড়া পা থমকে যায় যেনো ।
খলিল সাহেব অজান্তেই চেঁচিয়ে উঠে রহিমার পাশে বসে শাড়ি টা একহাতে ঠিক করে দিয়ে বলতে লাগলো
__কি হয়েছে ? এমন করছে কেনো রহিমা ভাই সাহেব? রহিমার হাতে রক্ত কেনো? কে কি করেছে ? বাবার এমন বিচলিত কন্ঠ কর্নগুচর হতেই আরিয়া মেহেদি পড়া থামিয়ে দ্রুত পায়ে সামনে এগিয়ে এসে সামিরার কাছে বলতে লাগলো ,
__কি হয়েছে যে ওখানে? কোনো সমস্যা? বাবার আওয়াজ টা এমন লাগছে কেনো? ছায়া উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলেছে ?
সামিরাও সেটা জানার জন্যই বিচলিত হয়ে বললো

__আমিও তো ঠিক জানিনা আগে দেখি গিয়ে তারপর তোকে বলছি ।
আরিয়ার হৃদপিন্ড উঠানামা করছে কাঁপছে তার চোখ দুটো অজান্তেই বারবার অদৃশ্য কোনো কিছু কানের কাছে এসে জানান দিচ্ছে বড় কিছু হয়ে গিয়েছে যেটা এখন হওয়া মোটেও ঠিক ছিলো না ।
সামিরার কথা উপেক্ষা করে দ্রুত পায়ে লোকজনের ভেতরে ঢুকে যায় আরিয়া এটাই মনে হয় তার জন্য কাল হয়ে যায় চোখের সামনে মায়ের ঝলছে যাওয়া হাত দিয়ে মুখ খানা ঢেকে রেখে দুই পা একত্র করে ফ্লোরে আওড়াচ্ছে রহিমা বেগম খলিল সাহেবের উরুর পাশটায় রহিমার হাত মুখ থেকে গড়িয়ে আসা রক্ত গুলো দিয়ে সাদা টাইলস লাল হচ্ছে প্রথমে বিষয় টা না বুঝতে পারলেও জাফরের দিকে একবার মাথা তুলে তাকিয়ে আরিয়ার হৃদস্পন্দন যেনো সেখানেই থেমে যায় স্তব্ধ হয় গলা থেকে আওয়াজ মুহূর্তেই ঠিক মায়ের পাশেই হাত পা ছেড়ে দিয়ে ঢলে পড়ে ।

পাশ থেকে দুজন মহিলা বলতে লাগলো ,
__আহারে বেচারি মেয়ে টার ভাগ্য টা কেমন দেখো আজকে এই দিনে এমন ঘটনা ঘটতে হলো ? কিন্তু কে করেছে এমন? দেখে তো মনে হচ্ছে এমন কিছু ছিটিয়েছে যেটা খুব বিষাক্তময় কিছু হবে ।
__মেয়েটাকে নিয়ে যাও এখান থেকে আর জলদি ডাঃ এর ব্যাবস্থা করো ।
পুরো বিয়ে বাড়ি এই মুহূর্তে যেখানে এতোক্ষণ ফুর্তিতে ভরে উঠেছিলো এই মুহূর্তে ঠিক ততটাই নিস্তেজতা পালন করছে ।

পুরো বাড়িতে এই মুহূর্তে একটা মানুষের ও সারা শব্দ নেই থাকবেই বা কি করে ? একটা মানুষ ও তো বাড়ির আশে পাশে দেখা যাচ্ছে না । প্রতিটা সদস্য হসপিটালে গিয়েছে রহিমা বেগমের জন্য,তখন হন্তদন্ত হয়ে কাছের যেই হসপিটাল টা ছিলো সেটাতেই নিয়ে গিয়েছিলো সময়ের সংকোটতার কারনে ।

শুধুমাত্র আরিয়াই রয়ে গেছে বাড়িতে সেটাও অবচেতন অবস্থায়।এখনো হুঁশ ফিরে নি আরিয়ার মনে হয় মারাত্মক ভাবে হার্ট ব্লক খেয়েছে নয়তো রাতের শেষ প্রহর হতে চলেছে জ্ঞেন ফেরার নাম গন্ধ নেই কেনো ? অবশ্য সামিরা কে আয়শ বাড়িতেই থাকতে বলেছিলো বারবার তাই আরিয়ার পাশেই ছিলো অনেক টা সময় কিন্তু ওদিকে কি হচ্ছে সেসব বারবার দোলা দিয়ে সামিরা কে চিন্তায় ফেলছিলো দুমিনিট পরপর কল করেছিলো আয়শ কে এক প্রকার বিরক্তি নিয়েই রাতের মাঝামাঝি সময়ে আয়শ ফিরে এসে সামিরা কে নিয়ে গিয়েছে । ওদিকের সব টা আয়শের উপরেই একপ্রকার চাপ হয়েছে বাড়ির একমাত্র ছেলে বলে দায়িত্ব টা তার দিকেই ফিরে বারবার । একমাত্র বলে উল্লেখ করার করন টা নিশ্চয়ই সবার অজানা নয় বড় ছেলে নাম বসিয়েছে কখনো দায়িত্বের বেড়াজালে নিজেকে বেঁধেছে?কখনো কিছুতেই নিজেকে জড়ায়নি আফরান ।

আর এই পরিস্থিতিতে কারো মাথায় আফরান নামক মানুষ টি হয়তো ছিলোই না তখন কিভাবে রহিমা বেগম কে বিপদমুক্ত করা যায় সেটাই এই মুহূর্ত গুলো যে সবার মাথায় দলা পাকিয়ে আছে ।
এতো নিশংসময় কাজ টা কে করেছে এই বৃদ্ধ বয়স্ক মায়ের বয়সী মহিলাটির সাথে ? এটা কি কখনো কেউ ভেবেছে ? রহিমা বেগমের এই কালে এসে তাও অচেনা এই শহরে কি কদিনেই শত্রু জুটিয়ে ফেলেছে? নাকি অন্য কারো উপর আক্রমণ করতে চেষ্টা চালিয়েছিলো যেটা ঘটনাক্রমে রহিমা বেগম মাঝে এসে ভেস্তে দিয়েছে? তাও এই বিয়ে বাড়িতে আঁচ্ছা আফরানের কোনো শত্রু নয়তো যে বিয়েটা হতে দিতে চাচ্ছে না ।
টেবিলের শেষ অংশটুকু তে বসে বসে প্রশ্ন সাজাচ্ছে আয়শ যদিও সে এখন চাইলেও আবার ডিটেকটিভ এর পদ পাবেনা কিন্তু অবশ্যই সত্য টা জানতে তো বাধা নেই তবে আরো সতর্ক হওয়া যাবে ।

সামিরার মা বাবা পর্যন্ত এসেছে এখানে অবশ্য এই সময় টাতে না চাইতেও সবার চোখের পাতা যেনো বুজে আসছে । আয়শের শরীর টাও যেনো দুর্বল অনেক টা একবার বসছে তো আবার পরমুহূর্তে দাঁড়িয়ে হাটা দিচ্ছে সারারাতে একবারও ডঃ বাহিরে আসেনি যে জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে আসলে তবে তার সন্দেহ এটা অবশ্যই এসিড টাইপ কিছুই হবে নয়তো পুরো চেহারা এমন পুরে যাবে কেনো? তবে চেহারার থেকে হাত টা একটু বেশিই ঝলছে গিয়েছে উপরের উজ্জ্বল শ্যামলা চামড়া টা গলে যাবুথুবু হয়ে ভেতরের মাংশ টুকু ও গলে গিয়েছে ।
রাত প্রায় চারটের উপরে ঘরির কাটা গিয়ে পৌঁছেছে ।নিস্তব্ধ বাড়ি খানা খানা হল রুমের মাঝে দেয়ালে টাঙানো তিন হাতের বিশাল ঘরির কাটার টিপ টিপ আওয়াজ টাও পুরো বাড়িতে আওয়াজ হচ্ছে।

সবাই বের হওয়ার পর আফরান পুরো সময় টাই ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখেছিলো সব টাই তার দৃষ্টি সীমার মাঝে ছিলো । আফরান খুব ভালো করেই জানতো তার হৃদয়ে আরুকে দেখার ব্যাকুলতা সে কিছুতেই দমন করতে পারবেনা আর এটাতে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ বা হাত ঢালবে তাইতো একটা ক্যামেরা মেন ও বাড়িতে আনা নিষেধ ছিলো ।ঠিক ভালো করেই জানতো আগে থেকে এমন কিছুই উল্টো পাল্টা করে বসবে কন্ট্রোল লেস হয়ে ।উহুম এটাকে আফরান কিছুতেই কন্ট্রোল লেস উপাধি দেবে না যে যেটা পাওয়ার যোগ্য তাকে সেই জায়গায় থাকতে হবে এটাই তার রুলস ।
সামিরা বের হওয়ার পর পরই আফরান আরিয়ার রুমে এসে প্রথমেই আরিয়ার দিকে তাকিয়ে একবার মৃদু হেসে আরিয়ার মাথার কাছে এসে বসে মুখের উপর চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো

__আমার কাছে ভালো ভাবেও আসতে পারতে আজ তুমি চাইলে এসব কিছুই হতো না ।
কথা টা বলেই কপালে পরশ একে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে ,
__তুমি জানো আজ কতোটা তীব্র ইচ্ছে হয়েছিলো এই সময় টার জন্য তাইতো একজন মহিলাকে দিয়ে ঐ স্প্রে টা তোমার সামনে বরাবর দেওয়া হয়েছিলো তখন তাইতো জ্ঞেন হারিয়েছো নাহলে তুমিও চলে যেতে আমাকে এভাবে একা ফেলে ।
এতো ট সময় আফরান আরিয়ার পাশেই বসে শুধু মাত্র আরিয়ার মুখপানে তাকিয়ে ছিলো আর নিজেকে হারাচ্ছিলো বিভিন্ন ভাবনায়
__আজ কেনো তোমার প্রতি এতোটা আসক্তি কাজ করছে? অন্য দিন তো এতোটা নেশালো ছিলোনা তোমার প্রতি আমার আসক্তি ?
এটুকু বলতেই আরিয়া আচানক একটু নড়েচড়ে এক সাইড হয়ে আফরানের ড্রেস হীন পেটের উপর ডান হাত টা ফেললো ।

আফরান কপাল কুঁচকে তাকায় বুকের উপর ক্ষত টা দেখতেই বিরক্তির এক শ্বাস ফেলে উপরের দৃশ্য মান রক্ত টুকু পাশ থেকে হাত বাড়িয়ে টিস্যু টা নিয়ে মুছে ফেলে ।
তারপর আবার আরিয়ার হলুদ ফর্সা সেই আকর্ষণীয় হাত খানার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে নিজের নাম টা হাতের মধ্যখানে একটু ফাঁকা জায়গায় ইংরেজী তে লেখা টা লক্ষ্য করে কিন্তু ওটা তো এখন স্পষ্ট নয় পুরো মেহেদী মিশে একাকার হয়ে সব টাই লাল হয়ে আছে । আফরান বুঝতে পারে তখন মেহেদী না মুছেই তো উঠেছিলো তাই সেটা ভালো হয়নি মিক্সড হয়ে গেছে সবটা ।
খাটের পাশ থেকে ছোট বেডসাইডের ড্রয়ার থেকে একটা লাল রঙের পেন নিয়ে ডান হাতটা পেট থেকে উঠিয়ে তালুর একটু নিচে সুন্দর ভাবে টেটুর মতো করে লিখে দিলো ” আদৃত আফরান চৌধুরী ” লেখার পর নিজেই কপাল কুঁচকে বললো প্রথম শব্দ টা কেনো লিখলাম? ওটা আমার বউয়ের অজানা তাই এটা আজ থেকে বাদ , নতুন করে আমি কাগজ পত্র বানাবো যেখান থেকে এই আদৃত নাম টা উঠে যাবে ।

কথা টা বলেই আফরান সেই লিখিত নামের জায়গায় একবার চুমু একে দেয় ।
ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই আরিয়া হঠাৎ করেই মা বলে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে বসে ।
ব্যাকুল হয়ে চারদিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে বলতে লাগলো ,
__মা কোথায় ? আম্মুর কাছে যাবো । কথাটা বলে চটজলদি খাট থেকে নেমে সামনের দিকে হাটা ধরে ।
আফরান ও বিষয় টা বুঝতে পেরে আরিয়ার সাথেই পায়ে পা মিলিয়ে গিয়ে একহাতে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলতে লাগলো

__কি হয়েছে ? কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে ?
আরিয়া চোখের জল ছেড়ে দেয় সঙ্গে সঙ্গে আফরান এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
__আম্মুর কি হয়েছে? খুব কষ্ট পাচ্ছে আম্মু । হসপিটাল গিয়েছে আম্মু তাইনা ? আমাকেও নিয়ে যান না প্লিজ।আমি আম্মুকে দেখবো ।
আফরান স্বাভাবিক গলায় আরিয়ার দু গালে হালকা হাতে নিজের চোখে ফিরিয়ে বলতে লাগলো
__দেখো আরু কিছু হবে না একদম কান্না করবেনা তুমি । তোমার মায়ের কিছু হবে না আমি আছি ।
আরিয়া অসহায় চোখে আফরানের চোখে চোখ মিলিয়ে কান্না জড়িত কাঁপা গলায় ঠোট উল্টে আফরানের শার্টের কলারে চেপে ধরে বলতে লাগলো

___আপনি তো অনেক কিছু করতে পারেন আমার মা কে ঠিক করে দিন না । দেখুন আপনি তো আমায় ভালোবাসেন তাইনা ? আমিও আপনার সব কথা শুনবো কিন্তু আমার মা কে বাচিয়ে দিন না ।কোন নিষ্ঠুর মানুষ এমন করেছে আমার মা কি ক্ষতি করেছিলো বলতে পারেন আমার মা তো কাউকে চেনেনা এখানের তবে কেনো আমার মায়ের সাথে এমন হলো ? আর …আর আপনার সকল গার্ড তো পুরো বাড়ির চারপাশে পাহাড়ায় ছিলো তবুও কিভাবে কে করলো আমার মায়ের সাথে এমন ? ভেতরে কিভাবে আসলো ওসব নরপশু মানুষ নামের জানোয়ার গুলো।

আফরান ভেবেছিলো হয়তো আরো দু থেকে তিন ঘন্টা অজ্ঞেন হয়েই থাকবে এমন শেষ প্রহরে এসে হুট করেই জেগে যাবে তার জন্য আফরান প্রস্তুত ছিলো না ,বাট ঐ স্প্রে টা তো ঠিক ১০ ঘন্টার কথা বলা হয়েছিলো ।
আফরান এর ভাবনার মাঝেই আরিয়া আফরানের বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে আরো শব্দ করে কাঁদতে লাগলো।
আফরান আরুকে আবারো স্বান্তনা দিতে লাগলো , ইদানিং এই মেয়ের কান্না একদম সহ্য হয়না কোনো আবদার না রেখেও পারেনা যতোই দিন এগুচ্ছে ততই এই মেয়ের মাঝে ডুবে যাচ্ছে আফরান এটা কিভাবে আটকাবে তার জানা নেই

__দেখো আরু আমি নিজে ডঃ ঠিক করে দিয়েছি খুব ভালো ডঃ উনার চিকিৎসা করে যাচ্ছে কিছু হবেনা চিন্তা করো না । আর যারা এমন টা করেছে তাদের কেও শাস্তি দিবো কিন্তু তুমি এখন কাঁদবে না ।
___সবাই …সবাই হসপিটালে গিয়েছে তাইনা ? আমাকেও নিয়ে চলুন না প্লীজ দয়া করে ।আবদার করছি আপনার কাছে আমাকে কষ্ট দেখে আপনার নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে দেখুন আমাকে ওখানে নিয়ে যান আমি কাঁদবো না তাহলে আপনারও কষ্ট হবেনা নিয়ে চলুন না ।
আফরান এবার আরিয়া কে শক্ত করে নিজের দুহাতে আবদ্ধ করে নেয় বুকে তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো

___উহুম ,আমার কথা শুনবে না ? কাল দুপুরের মাঝেই তোমার মা বাড়িতে থাকবে আমি কথা বলেছি ডঃ সংজুন এর সাথে ,উনি সব টা ভালোভাবেই দেখে শুনে করবে ভয় পেয়ো না ।আর এমন কাঁদতে থাকলে কিন্তু….
___সত্যি বলছেন কিছু হবে না ?
আফরান স্মীত হাসে আরিয়ার হালকা একটু স্বাভাবিক আওয়াজ শুনে কিন্তু এই হাসি টুকু আরিয়া কে বুঝতে দেয়না
__একদম পাক্কা কাল দুপুরের মধ্যেই চলে আসবে শুধু তুমি আমার কথা শুনো আরু আমি সব টা চেষ্টা করবো ।
___বিশ্বাস করি তো আপনাকে আমি সেই বিশ্বাস নিয়েই তো আপনার কাছে আবদার করলাম আমি জানি আপনি কখনো আমার আবদার ফেলবেন না ।

মি মাফিয়া পর্ব ৫৯ 

____এতোটা বিশ্বাস কখন থেকে হয়েছে এই মি মাফিয়া টার উপর ?
___আরিয়া কোনো কথা বললো না এক হাতের উল্টো পিঠে এক চোখ মুছে আবারো আফরানের বুকে মাথা গুঁজে হালকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে । তারপর…….

মি মাফিয়া পর্ব ৬০