মি মাফিয়া পর্ব ৬২ (২)
সুমাইয়া সাবিহা
আফরান এর দরজার চারপাশটা হরেকরকম কাঁচা ফুলের সৌরভ মাতোয়ারা হয়ে আছে যদি এই মুহূর্তে এই ঘ্রান টা বাহিরে কোথাও হতো তবে হয়তো মৌমাছি দের ভীর জমতো নিশ্চিত। সামনেই আরিয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে আফরান । রাগে ফুঁসছে ভিষন ভাবে তখন সকলের জোড়া জোড়ি তে তাল মিলিয়ে বিয়েটা ঠিক ভাবে সম্পন্ন করেই উপরে চলে আসে কারো কথায় পাত্তাও দেয়নি ।সবাই ভেতরে ভেতরে কানাঘুষা করলেও উপরে থেকে একটা শব্দ ও বের করার সাহস পায়নি তবে সকলে গুঞ্জন এর চেয়ে একটু বেশিই অবাক হয়েছে যেখানে আফরান চৌধুরী নামক এই কিলার কখনো কোনো মেয়ের দিকে মুখ তুলে তাকায় নি সেখানে আজ আসার পর থেকেই বউয়ের হাত ছাড়ছেই না ।
আয়শ সামিরা প্রেমা আশরাফ সহ ঠিক আফরানের দরজার সামনে দরজা একসাথে দাঁড়িয়ে মিটমিট হাসছে আফরান এর অবস্থা দেখে ।
আফরান উপরে আসার পর দরজা লক করা পেয়ে মাথা টা আবার ভোট ভোট শুরু করে দিয়েছে চাবি টাও পাঁচ্ছে না ।সব সময় তো নিজের কাছেই থাকে এই চাবি কিন্তু এখন নেই তাই ভেবেছিল হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু মিনিটের মাথায় আফরানের চিন্তা কে ধসে দিয়ে আয়শ পেছন থেকে বলে উঠলো লাভ নেই ভাই ।
আফরান কপাল কুঁচকে পেছনে তাকায় ,
আয়শের পাশে প্রেমা সামিরা সাদেক ও রয়েছে মুখে পরম খুশির ঝলক বইছে ।পাশ কেটে আফরান কে ক্রস করে ঠিক দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে হাতের চাবিটা আফরানের সামনে ধরে বললো ,এটা নিতে চাইলে চট করে পকেট ফাকা কর ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__ননসেন্স দের মতো কথা বলা কবে থেকে স্টার্ট করলি?
আফরান এর গম্ভীর গলা
____সে যাই বল না কেনো ,বউ পেয়েছিস এমনি এমনি সজ্জায় কিভাবে যেতে দেই বল । তাছাড়া এতো গুলো বছর এই এক বাড়ি তে থেকেও তোর ঐ পকেট থেকে এক টাকা নিতে পারিনি আজ তো সুযোগ টা কাজে লাগানোই যায় কি বলিস সাদেক ।
কথা টা বলে আয়শ সাদেকের কাঁদে হাত রেখে দুষ্টু হাসলো ।
এদিকে সাদেকের গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে আছে ,সে আসতে চাইনি আয়শ জোড় করে নিয়ে এসেছে সেই হাত মুচকিয়ে দেওয়া ভিলেন আচরন করা সব জায়গায় সাদেকের মতো নরম মনের মানুষের কাছে অস্বস্তি কর অবস্থা তো হবেই । কিন্তু আপাতত ওসব ভুলে আয়শের সাথে বললো
___একজেক্টলি আয়শ ,দেখো ব্রো সব সময় কিন্তু নিজের এই ডেভিল আচরণের কারনে বেচে যাও আজ যাই বলো বউ কাছে পেতে হলে টাকা দিতে হবে নয়তো আজকের রাত মিস করবে । বাসর রাতে বউয়ের সাথে সময় না কাটাতে পারলে নিশ্চয়ই খারাপ লাগবে , কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই এটাই নিয়ম ।
সাদেকের কথা টা বলার সাথে সাথে প্রেমা আড়চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে একবার সাদেক কে দেখে নেয় । এমন ঠোঁট কাটা কথা শুনতে কখনো দেখেনি সাদেক কে সেটাও এমন এতোজন মানুষের মাঝে ।
উপরে এই দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে তানভীর দ্রুত পায়ে উপরে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো
___সরি স্যার । আফরান এর রাগ মুহূর্তে মুহূর্তে বেড়ে চলেছে কিন্তু এই মুহূর্তে মুড চেন্জ করার ইচ্ছে নেই ।
তানভীর আয়শের দিকে তাকিয়ে বললো
__স্যার এসব পছন্দ করেননা ,স্যার স্বাভাবিক থাকতে জায়গা ছাড়ুন ভেতরে যেতে দিন ।
___এ ভাই তুমি চুপ থাকো সব সময় এসিস্ট্যান্ট গিরি দেখাতে এসো না ওকে আমার ভাই আমরা বুঝবো ঠিক আছে । আজ কোনো ভাবেই আমাদের অধিকার মিস করতে চাইনা ।
___এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে আয়শ ।এসবের মানে কি? তোরা কি বাচ্চা? আমি বাচ্চাদের দেখেছি এমন করতে কতোটা বোরিং তোরা ।চাবি দিয়ে ফার্স্ট সামনে থেকে সর ।
পাশ থেকে আরিয়া নিজের হাত আফরানের থেকে সরাতে চায় কিন্তু পারেনা তখন থেকে একাধারে ছুটার চেষ্টা চালানোর কারনে জায়গা টাও লাল হয়ে আছে কিন্তু এখন আফরানের কথাটা শুনে বিরক্ত নিয়ে বললো
___এমন করছেন কেনো ? আমি তো বলেছিলাম বিয়ে করবো না আপনি তো জোড় করে বিয়ে করেছেন সব কিছু তো নষ্ট হয়ে গিয়েছে বিয়ের কোনো ফিলিংস ই পেলাম না এখন আবার এই সামান্য মজা টাও নষ্ট করতে চাচ্ছেন কেনো ? আপনার তো নাকি হাজার কোটি টাকা রয়েছে তা ওসব কি গুলে গুলে খাবেন পানিতে ?
আরিয়ার কথায় আফরান আরিয়ার মুখশ্রী তে না তাকিয়ে দৃষ্টি অন্য দিকে রেখেই বললো ,নয়তো নিশ্চিত সব টা মুড মুহুর্তেই শেষ হয়ে আফরান কে ঠান্ডা বানিয়ে দেবে ।
___তুই কি আমার বিয়ে করা বউ? আমার তো মোটেও বিশ্বাস হচ্ছে না ওদের হয়ে কথা বলছিস কেনো হ্যাঁ ? এখন থেকেই টাকা উড়ানো শুরু করে দিচ্ছিস দেখছি আর কদিন পরে তো মনে হয় আমার …
আফরান এর কথা শেষ না করতে দিয়ে সামিরা বললো
___ভাইয়া ,আরুও তো আমাদের পক্ষেই আছে আরুর কথা শুনে হলেও তো আমাদের কথাটা মানতে পারেন ।
___আমাকে কি বউয়ের চামচা মনে হচ্ছে তোমাদের কাছে ? বউ যা বলবে তাই শুনতে হবে ?
আয়শ হঠাৎ ই হু হু করে হাসতে হাসতে বললো
__ভাই আমার প্রেমে পড়েছে বছর ৫/৭ তো হবেই এখনো নিজের নিয়ন্ত্রণের কারন টাই বুঝতে পারলো না ।সে যাই হোক শুন ফার্স্ট বের কর টাকা নয়তো কিন্তু সত্যি আজ চাবি পাবিনা।এখানেই বউ নিয়ে থাকতে হবে ।
আয়শের সাথে স্বর মিলিয়ে আরিয়া বললো
___একদম রাইট ভাইয়া , কিছু টাকা পকেট থেকে বের করতে পারছেনা এতো দেখছি কিপ্টের উপরের …..
এটুকু বলতে আফরান আরিয়ার হাত টা আরেকটু শক্ত করে ধরলো এটাকে একপ্রকার খামচি বলা যায়
বললো
___কতো চাই ?
আয়শ এক হাত অন্য হাতের তালুতে মেরে বললো
__এইতো লাইনে আসলি ,আমরা আছি চারজন তার মানে তোর পকেট থেকে আমাদের হবে না আই মিন চেক লাগবে ,মোট ৮ লক্ষ্য টাকা চট করে দিয়ে দে ফার্স্ট।
আফরান বিস্মিত গলায় বললো
___হুয়াট ? পাগলামু বন্ধ কর ।সামনে থেকে সর ।
__তুই তো তখন বললি আমরা ছোট নেই সো বড়দের মতোই বললাম দিয়ে দে নয়তো সত্যিই আজ বউয়ের সোহাগ মিস করবি ।
আয়শের কথা টা শুনে আরিয়া নাক মুখ কুঁচকে বললো
__একদম বাজে কথা বলবে না ভাইয়া ,এই লোকটার সাথে কে থাকবে ? আমি ? ইম্পসিবল এটা । উনি উনার টাকা পয়সা আর বিজনেস নিয়েই থাকুক ।
আফরান এবার অসহ্য হয়ে বিরক্ততা নিয়ে তানভীরের দিকে তাকায়
তানভীর সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে আফরানের সামনে ধরে কলম টাও এগিয়ে দিলো ।আফরান চুপচাপ সাইন করে আয়শের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো ।
আয়শ আফরানের হাত থেকে একটানে চেক প্যাপার টা নিয়ে বললো
__মনে হচ্ছে আরেকটু বেশি চাইলেও হতো ।কথা টা বলে আয়শ দুষ্টু হেসে চাবি টা আফরানের দিকে ছুড়ে মেরে বললো
__সামু তোর ভাগের টা কিন্তু আমার ওকে, তোর তো টাকার প্রয়োজন নেই আমাকে প্রয়োজন তাইনা কথাটা বলে এক চোখ টিপে আফরানের পাশ কেটে যেতে যেতে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো
___আমাকে শ্বশুড় বানানোর ব্যাবস্থা টা কিন্তু জলদি করে দিস ভাই । আমি কিন্তু নাতি নাতনি সহ বড় আব্বুর জায়গা টা না নিয়ে এই পৃথিবী ছাড়তে চাইনা একটু বুঝার….
আফরান রাগী চেহারায় দাঁত পিষে বললো
__তোকে তো….
আফরান এর কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়শ দৌড়ে অট্টহাসি তে মত্ত হয়ে জায়গা ছাড়ে ।
পাশ থেকে সাদেক প্রেমা সামিরাও বুঝতে বাকি নেই আয়শ ফিসফিস করে কি বলতে পারে এই মূহুর্তে । মুচকি হেসে সবাই জায়গা ছাড়ে ।
আফরান বিরক্ত হয়ে লক খুলে ভেতরে ঢুকে আরিয়া কে টেনে নিয়ে খাটের উপর ছুড়ে ফেলে ।
আরিয়া খাটের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আফরানের দীর্ঘখনের স্পর্শ কাতর জায়গাতে ঘসতে ঘসতে চেঁচিয়ে বললো
__আপনার কি বুদ্ধি জ্ঞান কিছু নেই ? আমার কি ব্যাথা লাগেনা আশ্চর্য। আর বাড়ির মানুষ দের কি চোখে পড়ে নি ? বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে নতুন বিয়ে করে এভাবে কেউ টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আসে ?কোনো নিয়ম নেই নাকি ? সব সময় নিজের মতো কেনো করেন অন্যের কথা তো একটু ভাবতে পারেন ।
আরিয়ার কথা গুলো পাত্তা না দিয়ে আফরান খাটের পাশের ছোট টুলের উপরে জগ থেকে পানি ঢেলে এক শ্বাসে সব টা শেষ করে স্বাভাবিক হয় এতোক্ষণে। এতোক্ষণ যেনো দম টা বন্ধ হয়ে আসছিলো চারদিকে লোকজনের কাছে কেমন যেনো নিজেকে বন্দি মনে হচ্ছিল।
কিন্তু গ্লাস টা রাখতে যেয়ে কপাল কুচকায় পাশেই এক গ্লাস দুধ রাখা।দেখা মাত্র হলকা শব্দে কেঁপে উঠে মুখের উপর ডান হাত মুঠো করে ধরে সঙ্গে সঙ্গে।
এতোক্ষণে সব টা খেয়াল করলো আফরান চারদিকে সুবাসিত ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রান । ভালোভাবে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুম টার চারদিকে একবার চোখ বুলালো , খাটের চারপাশে কাঁচা ফুল ঝুলে আছে বিভিন্ন প্রকৃতির ফুল । খাটের মাঝে গাঢ় লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বড় করে লাভ তৈরি করা হয়েছে ।আবার বালিশের ঠিক একটু নিচে দুটো মন কাড়া সাদা গোলাপী রঙের শাপলা ফুল রাখা ,কি সুন্দর ভাবে ফুটে আছে একটুও নষ্ট হয়নি । বিছানার চাদর টা আজ নিউ কালেকশন সাদার মাঝে গোলাপী রঙের ফুলের কাজ করা । কাঁচা ফুল আর চাদর যেনো মিশে গিয়েছে কোনটা আসল ফুল কোনটা চাদরে রঙ্গিন করা হয়েছে সেটা বুঝার উপায় নেই ।
এসব কখন করেছে? কে করেছে? সাহস হয় কি করে না বলে আমার রুমে আসার ? আয়শ করেছে তাইনা ওটাকে তো আমি ……
ভাবার মাঝেই আরিয়া চেঁচিয়ে বললো
__কি ভাবছেন তখন থেকে? কি বলছি শুনতে পাচ্ছেন না ? এভাবে কি দেখে যাচ্ছেন ?
আফরান আরিয়ার গলা শুনে ভাবনা থেকে বের হয়ে পরিহিত কোট টা খুলে হাত নিয়ে সামনে হেঁটে গিয়ে কবার্ড খুলে ঝুলিয়ে রেখে সোজা ওয়াশ রুমে যেতে লাগলো
আরিয়া বিরক্ত কন্ঠে বললো
___আমার সাথে ভাব দেখাচ্ছেন? উত্তর দিচ্ছেন না কেনো আশ্চর্য তো ।
আফরান এবারো আরিয়ার কথা না শুনার মতো করেই ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো ।
নিজকে বড্ড অপমানিত মনে হলো আরিয়ার কাছে । একবারও কেনো তাকালো না ? সেই আসার পর থেকে লক্ষ্য করছে কতোবার কথা বলছে একবারও না তাকিয়েই কথা বলেছে ।তাকে কি সুন্দর লাগছে না দেখতে ? খারাপ দেখাচ্ছে এতোটাই যে ,তাকানোর কোনো প্রয়োজনই মনে করছে না । আমাকে বিয়ের সাজে কেমন লাগছে দেখতে এটাও তো একবার বলতে পারতেন ।এমনিতেও তো সারাদিন ছিলেন না বাড়িতে কতোটা সময় দেরী করে এসেছে আমার যে রাগ হচ্ছে উনি কি বুঝতে পারছেন না ? আমি রাগ করলে উনার কিছু যায় আসেনা হয়তো ,হ্যাঁ এটাই হবে । থাকবো না আমি এখানে , কতো কিছু ভেবেছিলাম আজকের জন্য সব সময়ের মতো অন্তত আজকে উনার থেকে কথা শুনতে হবে না । আচ্ছা ওসব নাহয় বাদই দিলাম আমাকে এতোটা সময় অপেক্ষা করিয়েছে বলেও তো সরি বলতে পারতো তাই না ? ওসব কিছুই তো করলো না উল্টো আগের মতোই ধমকাচ্ছে আবার একবারও তাকাচ্ছে ও না ।
টকথা টা ভাবতেই আরিয়ার ভেতর টা কেঁপে উঠে বিষন্নতায় ছেয়ে যায় তার কোমল হ্যদয় খানা। চোখ ভিজে আসে মূহুর্তেই ।
তার মধ্যেই আফরান ফরমাল ড্রেসে (ট্রাউজার + শার্ট )বের হয়ে এসে মুখ মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আয়নার মধ্যে থেকেই আড়চোখে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গেই চোখ সরিয়ে ফেলে বাম হাতে শার্টের উপর দিয়েই বুকের হ্যদপিন্ড বরাবর হাত রাখে ,কতোটা মারাত্মক এই মেয়ে রুপ দিয়েই তাকে গ্রাস করে ফেলে । এই গোলাপী রঙ টাতে কি আছে এমন ? সেই ৪ বছর আগে এই রঙ টাতে পাতলা শাড়ি পড়েছিলো যার রেশ আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি আফরান । সেদিন নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করেছিলো ।আজকেও নিজেকে কন্ট্রোল করবে কিন্তু আজ তো সেদিনের থেকেও ভিন্ন শত গুণ বেশি সুন্দর লাগছে তাইতো ঐ অভীমানী দৃষ্টি তে দৃষ্টি মিলিয়ে অভিমান ভাঙাতেও ইচ্ছে হচ্ছে না । আর আজ ছোট নুজ পাথর টা নিউ লুক দিচ্ছে আরিয়া কে , উজ্জলতা বাড়িয়ে দিয়েছে ঐ হৃদয় হরনী হলুদ ফর্সা মুখশ্রী তে।
তিন বছর আগে সেই রাতে যেই ভয় ঢুকে ছিলো আরুর ভেতর আবারও সেই ভয় টুকু ওর ভেতরে আসতে দেবো না । আমি শুধুমাত্র ওর সাথে কিছু সময় কাটাতে চাই আমার ক্লান্তি গুলো ওকে দেখার মাঝেই বিলুপ্ত হয়ে যায় ।বেস লাগবেনা আগের মতো ওর ভেতরে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া আমিও চাই আরু আমাকে সর্বোপরি সব কিছু নির্দ্বিধায় বলুক আমার মাঝে নিজের শান্তি টুকু খোঁজে পাক । এইটুকু বুঝে গিয়েছি বউ আমাকেই চায় আর এতেই তো চলবে আর কিছু চাইনা আমার ।
কথা গুলো ভাবার মাঝে দরজায় কেউ কড়া নাড়লো ।কপাল কুঁচকে সেদিকে তাকায় আফরান ।
আরিয়া ভেবেছে হয়তো সামিরা বা প্রেমা অথবা আয়শ হবে এটাকে সুযোগ ভেবে চোখ মুছে চট করে উঠে গিয়ে দরজা টা খুলে দিলো ,জাফর সাহেব সামনে হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
___চাচাজান ভেতরে আসো না
আরিয়া কথাটা মুখের উপর জোড় করে হাসি টেনে বলেছে
জাফর সাহেব গম্ভীর আওয়াজে বললেন
__এটা নাও ।
কথামত হাত থেকে আরিয়া সেট নিয়ে আগের কথাটাই পুনরাবৃত্তি করলো
জাফর সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে আফরান কে উদ্দেশ্য করে বললো
___সমস্ত লোকজনের সামনে আজকের ব্যাবহার টা তুমি ঠিক করোনি আফরান । তবুও এসব এখন বলে লাভ নেই যা হয়ে গিয়েছে তা হয়ে গিয়েছে কিন্তু তোমাকে আজ দুটি কথা বলতে চাই ,আমি জানিনা তোমাদের মাঝে কি চলছে তোমরা সত্যিই একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট কিনা তবে আমার ধারনা মতে তোমার মাঝে আমি মামনির প্রতি বিশেষ কিছু দেখেছি কিন্তু শুনো অতিরিক্ত কিছুই ভালো না আফরান তাই সীমার মধ্যে থেকো ।
এমন কিছু করো না যেনো মামনির দ্বিতীয় বারের মতোও বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয় কিংবা এধরনের কিছু।
কথা গুলো বলে জাফর চুপচাপ যেভাবে এসেছে সেভাবে চলে যায় ।
জাফরের কথা গুলো শুনে আফরান কপাল কুচকে পেছন থেকেই আরিয়ার দিকে চোখ রাখে আবারো ।
জাফর যেতেই আরিয়া আবারও আগের মতো ঘুরে হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে খাটের পাশের ছোট সাইটটেবিল টায় রেখে আফরান কে উদ্দেশ্য করে বললো
__আমি সব গুলো খুলে ফেলবো ।
আফরান শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে এবারো আরিয়ার দিকে না তাকিয়ে আয়নার সামনে যেতে যেতে বললো
__আমাকে শুনিয়ে বলার কি আছে ? যা ইচ্ছে কর ।
আরিয়ার গা যেনো ঝলসে যাচ্ছে আফরানের ব্যাবহার গুলো। অতৃপ্ত হয়ে হাত থেকে মুঠো ভর্তি চুরি গুলো খুলতে লাগলো আরিয়া । আর মনে মনে আফরান কে যা তা ইচ্ছা শুনিয়ে যাচ্ছে।উনি নাকি বিয়ে করেছেন অথচ বিয়ের আগে তো পিরিতের শেষ ছিলো না কোথায় উড়ে গেছে সেই লফযার্থ গুলো এখন ? এই কারনেই মনে হয় মানুষ বলে পুরুষ মানুষ বিয়ের পর চেন্জ হয়ে যায় ।
এসব মনে মনে বলতে বলতে চুরি খোলা শেষ করে কানের দুল খুলতে শুরু করে আরিয়া ।প্রথম জিনিস টা ঠিক ভাবে খুললেও অপর কানের বেলায় ধৈর্য হারা হয়ে একটানে হুক না খুলেই টান মেরে অপর কানের দুল টা খুলে সাথে স্মীত আওয়াজে “আহ” শব্দ ও উচ্চারণ করে নিজেই চোখ বন্ধ করে নেয় ।চোখ থেকে অগচরেই পানি বের হয় ।
আয়নাতে আফরান আরিয়া প্রতিটা রিয়েকশন দেখছে আর মুচকি হেসেছে কিন্তু এটা করবে সেটা ভাবেনি ।আরিয়ার অবস্থা থেকে আফরানের সব চেয়ে বিরক্তিকর মুহূর্ত টা এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, দ্রুত পায়ে গিয়ে গিয়ে আরিয়ার ব্যাথা তুর কর্নে হাত রেখে ধমকিয়ে বলতে লাগলো
___প্রবলেম কি তোর ? এমন করছিস কেনো? কি করেছিস এটা দেখতো উফফফ লাল হয়ে গিয়েছে পুরো ,কথাটা বলে আফরান জায়গা টাতে ফুঁক দিতে লাগলো ।
আরিয়া আফরানের থেকে নিজেকে আকস্মিক কিছুটা পেছনে সরিয়ে নিয়ে বললো
__একদম ছুঁবেন না আমায় । থাকুন আপনি নিজের মতো কাছে আসবেন না আমার ।
__বেশি কথা বলছিস ।তখন থেকে বাড়াবাড়ি করে যাচ্ছিস ।
__কি করেছি আমি? কোনটা বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে আপনার কাছে ? আপনি বিয়ের কনে কে একা বসিয়ে দিয়ে চলে গিয়ে লেট করে এসেছেন এটাতে আমি রিয়েক্ট করেছি এই কারনে ? আপনার ভুল টা চোখে পড়ছে না আপনার ? অবশ্য আপনি তো নিজের ভুলটা কখনো দেখেনই না ।
এভাবে সেজেছি কার জন্য? একবারের জন্যও বলেছেন কি কেমন দেখতে লাগছে ? নিজে আয়না তে দেখার জন্য সেজেছি আমি ? অন্তত আজকের জন্যে হলেও নিজেকে একটু …..
এটুকু বলতে আফরান কপাল কুঁচকে বললো
___কি বলতে চাচ্ছিস ? আজকের জন্য বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছিস ?
___দেখুন আমাকে একদম আজ কনফিউজড করার বৃথা চেষ্টা করবেন না আজ । আজকের দিন টা একটা মেয়ের জিবনে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন এটা আপনি বা আমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবো না সো অভিনয় করবেন না একদম ।
কথাটা বলে আরিয়া মাথার হিজাব থেকে পিন ছাড়াতে শুরু করে উল্টা পাল্টা।
এই সব টা আফরানের ভেতর টা কে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, বুক টা খা খা করছে । এই মেয়েকে যে তার এই সাজসজ্জা দিয়ে আফরান কে কিভাবে পুড়িয়ে দিচ্ছে। অসম্ভব কে সম্ভব করতে পারে সব কিছু কিন্তু আজ সেটাও অসম্ভব বলে গন্য হবে আজ ,আরিয়ার এই রুপকে কোনো কিছু পিছিয়ে দিতে সম্ভব হবে না ।
আকস্মিক আফরান আরিয়ার আরেকটু কাছে গিয়ে পিনে হাত রাখা ব্যাস্ত হাতটিতে ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো
___তুই কি চাচ্ছিস বলবি ? এতো তেজ কিসের ? কার সাথে এমন রাগ দেখাচ্ছিস? লেট করেছি বলে ? এইটুকু অপেক্ষা করতে তোর এতো রাগ ? আমি কতটা বছর অপেক্ষা করে গিয়েছি ওসব ? ওসব কে বলবে ? দেখ আরু আমার জরুরি কাজ ছিলো তাই যেতে হয়েছে যদি তুই মনে করিস তোর জন্য নিজের প্রফেশন আমি ছেড়ে দিবো ওসব বাজে কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল বুঝলি ।
আরিয়ার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে হয়তো রাগের কারনে অথবা ভেতরের চাপা কষ্ট গুলো চোখে প্রকাশ পাচ্ছে মুখে প্রকাশ করতে না পেরে
___হাত ছাড়ুন
__আবারো শুরু করেছিস একদম রাগাস না বলে দিচ্ছি ভালো হবে না তোর জন্য।
___লাগবেনা আমার ভালো ।হাত ছাড়ুন
আফরান কপাল কুঁচকে কিছু একটা আরিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে পরখ করে আস্তে করে নেশালো গলায় বলে উঠলো
__একবার গভীর চোখে আমার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখ এই আঁখি দ্বয় কি বলছে ! এভাবেই থাক না প্লীজ এগুলো খোলার কি দরকার ? তোকে খুব মারাত্মক লাগছে আরু,কসম করে বলছি তোকে শান্তনা নয় আমার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছি শুধু। এই ঘায়েল করা চাহনী ফেলেই নির্বাক করে দিয়েছিস আমার জানা নেই কি বলবো আমি কি বলা উচিত শুধু এইটুকু বলি তোকে এই রঙে ভিষন রকম লাগে আমার কাছে ।যদিও তোকে সব সময় নতুন ভাবে দেখি সব সময় একেক রুপে সামনে আসিস নতুন করে বলার কিছু নেই কিন্তু আজ সত্যি তোকে আফরান চৌধুরীর বউ লাগছে । কিন্তু তোকে এই ভাবে দেখতে থাকলে পাগল হয়ে যাবো যার জন্য ভুল কিছু করে ফেলবো।তখন আবারও আমাকে নিয়ে তোর ভেতরে অপ্রকাশিত ভয় কাজ করবে যেটা আমি এখন আর চাইনা ।
আফরান এর কথা গুলো অগুছালো ছিলো ঠিকই কিন্তু প্রতিটা কথায় ছিলো এক রাশ আবেগ । কখনো তো এমন করে কারো সাথে কথা বলেনি প্রথম বার বলেছে সেটাও একটু অমিল আরিয়া বুঝতে পারছে । প্রতিটা কথায় ছিলো আরিয়ার মানুষিক শান্তি প্রবন। যেই উত্তেজনা নিয়ে এতোক্ষণ রাগে শরীর জলে যাচ্ছিলো সব টা এখন নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে ।শান্ত হয়েছে অশান্ত এই মন শুধু কিছু বাক্য শুনে ।
চোখের কোনে বিন্দু জল কনা জমেছে । এমন কেনো হচ্ছে জানেনা আরুর হৃদয় ।
আরু এক দৃষ্টে এখনো আফরানের কথা গুলো ভেবে যাচ্ছে চোখে চোখ রেখে । উষ্ঠাদ্বয় কাঁপছে হালকা যেটা আফরান কে খুব করে টানছে না চাইতেও আফরানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছে আরিয়া ঠোঁট জোড়া ।ঠিক সেখান টায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে।আরিয়ার হৃদপিন্ডের ঘন আওয়াজ আফরান কে আরো আকর্ষন দিয়ে ডাকছে মূহুর্তে চোখ বন্ধ করে আরিয়ার দিকে নিজেকে এগিয়ে নিতে গিয়েও থেমে যায় । আরিয়ার হাত টা ছেড়ে দিয়ে সামনে থেকে স্বরে পেছন ঘুরে নিজের শার্টের বুকের পাশের একটু অংশ হাতে নিয়ে ঝাড়তে শুরু করে অন্য হাতে হাত পাখার মতো বাতাস দেওয়ার চেষ্টা চালায় মুখের উপর ।এসি চলছে তবুও যেনো গরমের কমতি নেই আজ এসি টাকে বৃথা মনে হচ্ছে এই রুমটায় ।
আফরানের আকস্মিক এমন কাজ টা বুঝার হদিস মিললো না আরিয়ার তবে এতো গুলো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে মনের ভেতরে ।
নিজেই তো বললো ভালো লাগছে তবে কাছে এসেও কেনো চলে গেলো ? তখন আবার আগের কথা তুলে দিলো কেনো ? আগের বিষয় টা একরকম ছিলো এখনের টা আরেক রকম তাইনা ?
নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে আফরান বললো
___ঘুমিয়ে পড় আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই ওকে ।
কথাটা বলে আফরান আবারো আরিয়ার পাশ কেটে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে মুখে তুলে ।
পেছন থেকে আরিয়া বলে উঠে
__এগুলো খুলে ফেলবো নাকি এভাবেই থাকবে ?
আফরান প্রশ্ন শুনে খাটের অপর পাশে যেতে যেতে বললো
__সেটা তুই জানিস আমি কি বলবো ?
আরিয়া আবারো জিদ্দি কন্ঠে বললো
___শুনেছি বউদের এসব হাসব্যান্ড রা খুলে দেয় । আপনিও কি আমাকে…
আফরান ধমকিয়ে বললো
___এই সত্যি করে বল তো চাচ্ছিস টা কি ?
আফরান এর প্রশ্ন শুনে পাশ থেকে দুধের গ্লাস টা হাতে নিয়ে আফরানের কাছে এসে গ্লাস টা আফরানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
___এটা মেবি বউ রা স্বামী কে দেয় ।
আফরান কপাল কুঁচকে বললো
___তোর তো দেখছি বউ হওয়ার ভিষন শখ জেগেছে
চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পর বুঝলি ।এসব আজগুবি ন্যাকা বউদের মতো কাজ করিস না ।
__ওকে বাট এটা নিয়ে নিন ,পরে দেখা যাবে সকাল বেলা এটা এভাবেই থেকে গেলো তখন জিনিসটা নষ্ট হবে ।
___তা তুই খেয়ে নে আমাকে কেনো বলছিস?
__এটা হাসব্যান্ড দের খেতে নয় বউদের নয় ।
আরিয়ার কথা শেষ হতেই আকস্মিক আফরান আরিয়ার দুবাহু ধরে হেঁচকা টানে খাটের উপর ফেলে দেয়। বিষয় টা এমন ভাবে হয়েছে যে আরিয়ার কাছে মনে হলো সে ঠাস করে পড়ে কোমর ভেঙেছে ।হাত থেকে দুধের গ্লাস পড়ে নিচে ভেঙে চুর্নবিচুর্ন হয়ে চারদিকে ছিটিয়ে আছে ।
খাটের উপরের গোলাপের পাপড়ির তৈরি লাভ টুকু চারদিকে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে ।
___আআহ….দিলেন তো আবার কোমর টা ভেঙে আবার হঠাৎ কি হয়েছে বলতে পারবেন ?
কথাটা বলে আরিয়া শুয়া থেকে উঠতে লাগলো কিন্তু সেই সুযোগ টা হলোনা আফরানও এক লাফে উপরে উঠে আরিয়ার পাশে বসে দুহাত শক্ত করে ধরে খাটের সাথে মিশিয়ে বলতে লাগলো
___বারবার হাসব্যান্ড শব্দ টা ইউজ করে করে মাথাটা হ্যাং করে দিচ্ছিস দেখছি ভাবলাম তোর রুপ দেখে দেখে সারাজিবন কাটিয়ে দেবো এখন তো দেখছি তুই নিজেই আমাকে ইচ্ছে করে নিজের দিকে টেনে নিচ্ছিস । তারপর যখন সত্যিই স্বামীর অধিকার নিতে চাইবো তখন তো চেঁচিয়ে হাজার টা অভিযোগ বসাবি । নিজেই এসব করবি আর তখন আমি কাছে আসলেই তোর বাহানা শুরু হয়ে যাবে দেখবো ।
___আহ কি করছেন হাত ছাড়ুন বলছি । হাসব্যান্ড কে কি ভাই বলে ডাকবো ? আপনি তো বললেন ভাই না ডাকতে তাহলে কি ডাকবো? মি মাফিয়া? ওটাতেও নিষেধ করেছে তবুও ওটা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে এটাও ছাড়ার চেষ্টা করছি । সব গুলোই যদি বন্ধ করে দেই বলবো টা কি তাহলে ? আজব তো
__নিজের হাসব্যান্ড কে মাফিয়া বলতে তোর লজ্জা করেনা ?আর কিসের ভাই ? ফালতু শব্দ আবার মাথায় আনছিস কেনো?
__আশ্চর্য তো ,আমি কখন বললাম ? আমি তো বুঝিয়ে বলেছি শুধু। হাসব্যান্ড ডাকতে না পারলে আর কি বলবো দয়া করে সেটা আপনি নির্ধারণ করুন প্লিজ এখন ছাড়ুন উঠবো আমি উফফফ কোমর টা শেষ করে দিলেন তো ।
___সেটা তো আমি জানিনা নিজের ভালো চাইলে হাসব্যান্ড বলতে পারবি না ওটা বললে নিজেকে পাক্কা বিবাহিত মনে হয় তখন কিন্তু তোর উপর দিয়ে সব টা যাবে বুঝলি ।
কথাটা বলে আরিয়ার হাত দুটি ছেড়ে দিয়ে এক হাতের তালু শক্ত করে ধরে নিজেই আরিয়া কে উঠিয়ে বললো ,
__সব চেন্জ কর যাহ ।ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে গেলে বসে বসে দেখবো বাট পারবো না মনে হয় নিজেকে… এটুকু বলে থেমে গিয়ে আবারো বললো
__ওহ গড… সব উল্টা পাল্টা কথা বলছি আজ । সামনে থেকে যা আর এসব চেন্জ কর ।
আরিয়া অবাক হয় কিছুটা ,লোকটা কি সব সময় এমনই থাকবে ? এই ভালো তো এই খারাপ এটাকে কি বলা যায় খোদা মালুম।
আরিয়া ডান পাশ হয়ে শুয়ে আছে মনে মনে বজ্জাতি লোক টাকে বকছে ।এমন করে ধমকিয়ে কেউ ঘুমাতে পাঠায় ? কথাই বলবো না ওনার সাথে । কিছুক্ষণ আগেই আহা কি সুলভ সুশীল বাক্য গুলো মুখধ্বনিত করে ছিলেন আর এখন এসে কি সব বলছে । সেকেন্ডে সেকেন্ডে মুড চেন্জ হয় এই লোকটার ।
আফরান এর ধমক খেয়ে তখন কথা না বাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে পা ফেলে সাজগোজ না খুলে একটানে ইনার টা মাথা থেকে ছাড়িয়ে পাশে ছুড়ে মেরে বাম কাত হয়ে হাতের উপর স্বীয় গাল ফেলে ঘুমানোর চেষ্টা চালায় । এদিকে খালি পেটে মনে হয় ইঁদুর ঢুকে গিয়েছে সেই সকালে মনে হয় কিছু খেয়ে ছিলো আর তো খাওয়াই হয়নি কিন্তু কিভাবে খাবে এখন? এই রাগের সময় খাওয়া যায় নাকি যতোসব । আবারো মনে মনে অভিযোগ জানায় আফরানের উপর ।
গভীর ঘুম থেকে শরীরে ঠিক পেটের উপর কিছুর হালকা পরশ পেয়ে ঘুম টা চলে যায় আরিয়া । ল্যাম্প লাইট টা জালানোই আছে ।এখনো ভালো করে ঘুম টা ধরেনি আরিয়া কে ,অনেক টা সময় সজাগ থেকে আফরানের থেকে আরো কিছু শব্দ অথবা কথা বলার আশা করছিলো যখনই কিন্তু সেসব হলোনা ,চোখ টা লেগে এসেছে ঠিক সেই সময় টাতেই কিছুর স্পর্শ নিজের শরীরে অনুভব করতেই চোখ খুলে আরিয়া । বুক টা কেঁপে তার ।লাইটের দিকে একবার তাকিয়ে সেই স্পর্শ কৃত জায়গা তে তাকিয়ে মুহুর্তেই কেঁপে উঠে ।
আফরান তীব্র দৃষ্টি ফেলে মুখে মৃদু হাসি জমিয়ে হাতের শাপলা ফুল টি দিয়ে আরিয়ার জামা টা হালকা উপরে উঠিয়ে নগ্ন পেটে ছুঁয়ে দিচ্ছে।
আরিয়া কে চোখ মেলতে দেখেও স্বাভাবিক ভাবেই আছে আফরান ।
আরিয়া উঠে বসতে চায় কিন্তু সাহস কুলায় না তাই ওভাবে থেকেই বললো
__ক…কি করছেন আপনি ?
আফরান কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ এবার হাতের ফুল টা এবার আরিয়ার চেহারায় বুলিয়ে দিতে লাগলো ,কপাল থেকে গালের শেষ সীমা অব্দি ছুঁয়ে দিচ্ছে আরিয়ার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার । আফরানের কাছে বিষয় টা বেশ ভালো লাগছে চোখের পাপড়ি গুলো ও কাঁপছে ।ঠোট দুটোও মৃদু কম্পনে বেগতীক সীমা ছাড়ায় । হাতের শাপলা টা ফেলে এবার পাশ থেকে গোলাপের কিছু পাপড়ি নিয়ে আরিয়ার মুখের উপর অল্প অল্প করে ফেলতে লাগলো । মনে হচ্ছে যেনো গোলাপের পাপড়ির মতোই উষ্ঠাঁদ্বয় জোড়া।
__ক…কি করছেন আপনি? ঘুমাননি এখনো ?
___পাশে ঘুম হারাম করা জিনিস রেখে কিভাবে ঘুমাই ? একটু ইচ্ছে হচ্ছিলো কিছু পাওয়ার কিংবা দেওয়ার ।
___কি বলছেন ..?
আফরান এবার ফুল ছিটানো বন্ধ করে আরিয়ার মশৃন হাত দুটি মুঠো বদ্ধ হয়ে শক্ত করে রেখেছে দেখে স্মীত হেসে একটু নিচে গিয়ে পা থেকে নুপুর দুটো খুলে দিতে লাগলো ।
আরিয়া সাথে সাথে উঠে বসে বললো
__কি করছেন ? আমি খুলে নিবো ওগুলো ।
আরিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে মিনিটের মাথায় ওগুলো খুলে দিয়ে একবার খাট থেকে উঠে বেড় সাইডের ড্রয়ার থেকে গোল্ডের দুটো নুপুর নিয়ে এসে দু পায়ে পরিয়ে দিয়ে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে আবারো স্মীত হেসে পায়ের কাছ থেকে এসে আরিয়ার পাশে বসে বললো
__এগুলো ছাড়া যেনো কখনও তোমার খালি পা দেখতে না পাই ওকে । কথাটা বলে গলা থেকে ভারী স্বর্নের হার টা খুলে দিতে লাগলো ।
আফরানের মৃদু স্পর্শ আরিয়ার শরিরে শিহরণ বয়ে যায় ।বুকে ধুকপুক আওয়াজ শুরু হয় যেনো ঢুল পিটাচ্ছে কেউ ভেতরে এই মুহূর্ত টা এমন যাচ্ছে আরিয়ার জন্য।
হার টা খুলে হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর রেখে বললো
__এটুকু চেয়েছিলে তাইনা ? দিয়ে দিলাম কিন্তু তুমি তো পরের টুকু জানো না আরু। কথার আওয়াজেই বুঝতে পারলো আরু লোকটা মজা করছে । কিন্তু তুমি কথা টা বড্ড বিমোহিত করেছে আরুকে এই মুহূর্তে।
__জানেন আমি আপনার উপর এতো গুলো রাগ করেছিলাম তবুও আপনি আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেননি তাই তো আরো বেশি রাগ হলো । ভেবেছিলাম সারারাত দুজন গল্প করে কাটাবো আপনার ঐ দীর্ঘাকারের বেলকনিতে গিয়ে চাঁদ দেখবো কিছুই হলো না তাই খুব খারাপ লেগেছিলো কিন্তু এখন আমি ওকে ।
কথাটা বলেই একরাশ হাসি ফুটিয়ে আফরানের দিকে ঘুরে বসে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু বলার সুযোগ হলো কই?গলায় আটকে যায় বাকি কথা
আফরান এর নিখুঁত দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে কতোটা নেশা ধরে আছে স্পস্ট বুঝা যাচ্ছে কিন্তু কিসের এই সুধা? কিসের জন্য এমন লাগছে উনাকে ? এভাবে একদৃষ্টে কেনো তাকিয়ে আছেন ? আমাকে খুব ভালো দেখাচ্ছে নাকি ? তাই বলে এভাবে তাকানোর কি আছে ?
কথাগুলো ভাবার মাঝেই আফরান বিচলিত গলায় বলে উঠলো
__ বউ আমি আমার অধিকার টুকু পেতে চাই দিবি ? আজ নিজেকে কন্ট্রোল করা কষ্ট হয়ে যাবে খুব । ঘুমিয়ে ছিলি ওভাবেই থাকতিস তাহলে তো তোর এই আওয়াজ আমার ভেতরে তুলপার বয়ে আনতো না । কিন্তু এখন তোর সর্বাঙ্গে নিজের পরশ ছুঁয়ে দিতে চাই আরু। এটা মোটেও আমার দোষ নয় তোর দোষ ওকে ।
আফরানের হঠাৎ এমন কথায় আরিয়া ভরকে গেলো । এভাবে কেউ কথা বলে ? হঠাৎ হঠাৎ কি হয় উনার ?মাঝে মাঝেই ঠোঁটকাটা কথা বলে উঠে ?
আফরান এর গলা শুকিয়ে আসছে , এতোটা নেশাময় বিচলিত গলা আরিয়া কখনো শুনেনি সামনে বসা লোকটার থেকে ।কতটা আবেগ জড়িত এই গলা স্বর । কিন্তু এধরনের কথা শুনতে হবে এই মুহূর্তে আরিয়া ভাবেনি হয়তো । তাই অবাক কন্ঠে প্রশ্ন তুললো
_আ..আপনি ঠিক কি বলতে….
এটুকু বলতে আফরান আকস্মিক নিজের শার্টের বোতাম গুলো একহাতে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে । নিঃশ্বাসের আওয়াজ স্পস্ট শুনা যাচ্ছে আফরানের ।অন্য হাতে আরিয়া কে অকস্মাৎ নিজের কাছে এনে আরিয়ার উষ্ঠাদ্বয় নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয় ।
আরিয়ার গলায় কথা আটকে যায় , কেমন অপরিচিত লাগছে এই লোকটাকে।কিসের জন এমন মনে হচ্ছে জানেনা তবে এমন অবস্থা কখনো হয়নি এই লোকটার ।
শার্টের বোতাম ছাড়ানো শেষ হতেই একবার নিজেকে আলিয়ার থেকে ছাড়িয়ে শার্ট টা ছিটকে পাশে ফেলে দেয় ।
আরিয়ার দৃষ্টি তে বিষয় টা পড়তেই বুঝতে বাকি রইলো না ।সুযোগ পেয়েই কিছু বলতে চাইলো
___শ..শুনুন না , আ..আমি ..
আরিয়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে আফরান আবারো আরিয়ার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয় । দুহাতে আরিয়ার শরীরের উড়না টা খুলে নিয়ে পাশে ছুড়ে ফেলে একহাত আরিয়ার গালে অন্যহাত চুলের পেছন পার্শ্বে শক্ত করে ধরে নিজের মতো করে শান্তি অনুভব নিতে থাকে আরিয়ার থেকে ।
আরিয়ার নিশ্বাশেষ আওয়াজ টাও যেনো ঘনত্ব লাভ করছে ।দুহাতে আফরান এর দুকাধে কাঁধে খিচে ধরে আছে ।
আফরান মিনিট কয়েক পর নিজেই ছেড়ে দেয় আরিয়া কে । ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে সেটাও কিছুটা আওয়াজ করেই । আরিয়ার কপালে নিজের কপার ঠেকিয়ে বললো
___সরি…
শব্দ টা আফরানের নিঃশ্বাসের সাথে যেনো মিশে গেলো ।একদম নিম্ন আওয়াজে বললো কথাটা ।
আরিয়া চোখ বন্ধ করেই আছে আফরানের এই প্রতিটা নিঃশ্বাসের প্রবল বেগ এই মুহূর্তে আরিয়া কে সত্যিই স্থীর থাকতে দিচ্ছে না ।
আফরান এবার আরিয়ার কপালে একবার ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে পেছনের চুল গুলো এক সাইড করে সরিয়ে কটির জিপ টা খুলে নিয়ে নগ্ন পিঠে হাত রাখলো ।পরপর চুমু খেলো ঘারে, গলায়, চুলে ,কানের পাশ টায় ।
আরিয়ার শুধু ঝাঁপ্টে ধরে আছে আফরানের পিঠ । আফরান এর অবস্থা দেখে নিজেই ক্ষুদ্র গলায় আওয়াজ করলো
__লাইট ..
এটুকুই বললো শুধু
আরিয়ার কথায় আফরান এর বুঝতে বাকি নেই এতে আরিয়ার সম্মতি আছে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি জমিয়ে দুষ্টু কন্ঠে বললো
__উহুম , দেখবো।
আফরানের এমন কথায় আরিয়া আফরানের ঠিক গলার একটু নিচে যেখানে টায় আরিয়ার চুয়াল ঠেকেছে সেখান টায় স্বজোড়ে কামর বসায় ।
আরিয়া খেয়াল করেনি এতোটা জোড়ে কামর টা বসিয়ে দেবে । পরক্ষনে নিজেই বলতে লাগলো
__সরি সরি ,আমি এতোটা জোড়ে দিতে চাইনি ।
আরিয়ার কামর টা গলায় পড়তেই আফরান নিঃশব্দে চোখ বন্ধ করে ফেলে ।আরিয়া সরি বলা থেকে বললো
___আমি কিছু বলেছি ?
__কিন্তু ব্যাথা পেয়েছেন তাইনা ? স্পস্ট দেখা যাচ্ছে দাগ পরে গেছে ।
__চাইলে এমন আরো চার পাশ টা বসাতে পারিস ।কথাটা বলে আফরান আরিয়া কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে একদম পিষিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ এই মেয়েকে ।
আরিয়াও আর প্রতিক্রিয়া জানায় না চোখ বন্ধ করে আছে ।
মিনিটের মাথায় পুরো রুম অন্ধকারে ডুবে যায় ।
বিবাহিত দুটো মানুষ নিজেদের কে প্রথম বারের মতো সম্মতিতে মিশিয়ে নেয় একে অপর কে । অগনিত প্রহর কাটিয়েছে অপেক্ষায় আজ এই অপেক্ষার প্রহর যেনো সফল ভাবে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে একজন উন্মাদ প্রেমিক । হাজারো উন্মাদনা ছিলো যাকে ঘিরে আজ সেই উন্মাদনা অপর মানুষ টিকেও বানাতে চায় সে ।বুঝাতে চায় সে যেমন করে নিজের সকল আবেগ গুলো এতো দিন ধামাচাপা দিয়েছিলো সেই আবেগে নিজেকে জড়িয়ে আবার পিছিয়ে যাওয়া কতটা কষ্টকর । আবার পরমুহূর্তে ভালোবাসায় জড়িয়ে নেয় তাকে । আজকের রাত শুধু মাত্র দুজন স্বার্থহীন ভালোবাসার মানুষের । না চাইতেও বিচ্ছেদ হতে হয় যাদের শত বার আজকের রাত সব টা কাটিয়ে উঠার রাত যেখানে বিচ্ছেদ নামক শব্দ কখনো তাদের কে আলাদা হতে দেবে না ।
ঘরির কাটায় সময় তখন সাড়ে আট টা ,পাশ ফিরে বিছানায় হাত রাখতেই কাউকে অনুভব করতে না পেরে একটু করে বুঝার চেষ্টা করে আবারো চারদিকে হাত বুলিয়ে নেয় । বিরক্ত হয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠেই বললো
___বউ ..ও বউ
আফরান এর শব্দ টা কানে আসতেই লজ্জায় লাল হয় আরিয়া । মাত্রই গোসল সেরে চুলের পানি মুছতে ব্যাস্ত ছিলো আরিয়া আফরান মুখে বউ ডাকটা বড্ড ভালো লাগে আরিয়ার কাছে ।মনে হয় এই ডাকটা শুধু মাত্র তার মুখেই মানাবে আর সেটাও শুধু মাত্র তার জন্যই।
আফরানের ঘুম ঘুম কন্ঠ আবার ভেসে আসলো
__বউ ! কখন উঠেছো আমাকে ডাকলেনা কেনো ? আমাকে একা ফেলে তুমি উঠতে পারলে ?
আরিয়া এবার একটু অস্বস্তি যে পরে কি উত্তর দেবে ? আজ প্রথম দিন বিয়ের পর ।ওভাবে কিভাবে শুয়ে থাকবে ? অবশ্যই বাড়ির বউদের মতো করে চলবে আজ থেকে । কথাটা ভেবে আফরানের দিকে তাকিয়ে আস্তে গলায় বললো
___কখন উঠবেন?আমি তো ঠিক জানিনা আপনি কখন উঠেন তাই ডাকিনি,তাছাড়া অনেক রাত করে ঘুমিয়েছেন ঘুম টা ঠিক মতো হয়নি বলে …
আরিয়ার কথা গুলো কানে আসতেই ঠোটে হাসি টেনে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে বললো
__এক রাতেই দেখছি সব লজ্জা শরম শেষ তোর ।
ইচ্ছে করে কথাটা বলে সে তার আরুকে আরো লজ্জায় ফেলতে চাইছে ।
হলো ও তাই আরিয়া হাঁসফাঁস শুরু করে দেয় সত্যিই তো এটা সে কি বলে ফেললো ,ছিহ, লজ্জা খেয়ে বসে আছি কিভাবে বললাম কথাটা ?
আফরান এবার চোখ খুলে আরিয়ার দিকে তাকালো একটুও মিস করতে চায়না সে তার বউয়ের লাল টমেটোর মতো গাল দুটো দেখা
আফরানের দিকে তাকাতে চোখ পড়তেই আরিয়া আরো বিধ্বস্ত পরিস্থিতি যে পড়ে যায় কি করবে বুঝতে না পেরে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হতে হতে বললো
মি মাফিয়া পর্ব ৬২
__সবার সাথে আজ ব্রেকফাস্ট করবেন কিন্তু নয়তো খাবো না ।আর জলদি আসবেন আমার কিন্তু খুব ক্ষুদা পেয়েছে কাল সকালে খেয়েছি আ খেতে পারিনি ।
আফরান জায়গা থেকে বললো
___তা রাতে আমাকে খেয়ে পেট ভরেনি তোর ?
আরিয়া আফরানের কথাটা হয়তো শুনেছি তার আগেই দরজা পেরোয় আরিয়া ।
আফরান হাসে ,আজকের সকাল টার মতো এমন শান্তি কখনো সে উপভোগ করেনি হয়তো ।বউ কে দেখে সকালে অফিস যাবে সেই ইচ্ছা টা যেনো পুরন হলো । তারপর……