মি মাফিয়া পর্ব ৬৪
সুমাইয়া সাবিহা
সময় টা সন্ধ্যা বিকেল।ঠিক সুর্যাস্তের আগ মুহূর্তে আফরান ভেতরে ঢুকে।পরনে সকালের সেই ডিপ রেড শার্ট টা এখনো শরীরে । তবে পুরো ঠোট জুড়ে রক্ত প্রকাশিত মনে হচ্ছে যেনো দাঁতের কামড় ।এমন ভাবেও ঠোঁটে আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলে জানা ছিলো না । গোলাপী ঠোট জোড়া লালচে হয়ে আছে । এটা কিভাবে সম্ভব সেটা বুঝলো না জাফর সাহেব ।তবে হাত থেকেও হালকা রক্ত প্রকাশ পাচ্ছে।
সোফাতে বসে তিনি নিউজ দেখছিলেন দুর থেকেই স্পষ্ট ভাবে সেটা খেয়াল করে প্রশ্ন ছুড়লেন
__আজকের দিনেও নিজের কাজ টা জরুরি মনে করে গিয়েছো কিছু বলিনি অন্তত এখন আরু মামনির জন্য হলেও নিজেকে একটু চেন্জ করে গুন্ডামি বন্ধ করতে পারো তাইনা ? এখন নিজের জিবন টা নিয়ে আগের মতোই হেঁয়ালি করলে চলবেনা তোমার সাথে জড়িয়ে আছে আরেকজনের ভবিষ্যৎ একটু ভেবে দেখো বুঝেছো ।
আফরান জাফরের দিকে তাকিয়ে ঠোট বাঁকিয়ে হেসে বললো
__তোমাকে ভাবতে হবে না আমি কি করবো আমি জানি ।
কথাটা বলে আফরান আবার নিজের রুমের দিকে যাওয়া ধরে ।
জাফর মাথা দুদিকে দুলিয়ে আফসোসের স্বরে বললো
__কখনোই চেন্জ হবার নয় এই ছেলে । কিন্তু আজ একটু জলদি চলে এসেছে মনে হচ্ছে। কথাটা ভেবে মুচকি হাসে ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রুমে ঢুকে আফরান একবার চারদিকে চোখ বুলায় । একদম ঘুছালো ।যদিও তার রুম সর্বদাই গোছানো থাকে বাট কাল তো হাজার ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে ছিলো । এখন এসব কিছুই নেই ।
আসার সময় আফরান খেয়াল করেছে আরিয়া ওর মায়ের রুমেও ছিলো না তাহলে? তাহলে কোথায় গিয়েছে ? সকালের রাগের তারনায় একবারের জন্যও ফোন টা চেক করেও দেখেনি ।যেই মেয়ে বিয়ের পরে এসেও বলে তার সাথে কথা বলা ছাড়া থাকতে পারবে তাকে কেনো দেখতে চাইবে সে ? এতোটাও বেহায়া হবে কেনো ? সারাদিন একবার কল ও তো দিতে পারতো তাইনা ? নাম্বার তো ওর কাছে আছে কেনো দেয়নি ? চেলেন্জ পূরন করার জন্য? ওকে কথা বলতে হবে না । ঠিক যতক্ষণ আমার বেহায়া হার্টবিট ওর সাথে কথা বলতে ছটফট করবে ততোবার আঘাত করে নিজেকে সংযত করবো ।
কথাটা ভেবে আবারো নিজের দাঁত পিষে নিচের ঠোঁটে স্বজোড়ে কামড় বসায় আফরান ।সাথে সাথে ঠোঁট বেয়ে রক্ত টপকে চিবুক পেরোয়।
প্রায় আধ ঘন্টার মতো শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পরনে বের হয় ।
কবার্ড খুলে একটা ট্রাউজার আর শার্ট নিয়ে চেন্জ করে নেয় ।
তারপর লেপটপ টা হাতে নিয়ে নিয়ে সোজা নিজের বারান্দায় চলে যায় ।
কিন্তু সেখানে যেতেই এক প্রকার বিস্ময় হয় । ছাতার নিচের টেবিলের উপর দুহাতের মাঝে বাম দিকে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে আরিয়া ।
পরনে সকালের সেই লাল রঙের কাপড় খানা । আফরান সকালেই খেয়াল করেছিলো। মেহেদী রাঙা দুই হাত ভরপুর । সেদিনের কলম দিয়ে আঁকা নাম টা এখনো মুছেনি সেটা কালকে রাতেই খেয়াল করেছে আফরান ।
নিশ্চয়ই নিজেই বুঝে নিয়েছে এটা কে করেছে তাইতো এখনো মুছেনি ।
গলাতে আবারো গোল্ডের হার ।তবে আজ কিছু বলেনি কারন আজ তার বউকে একদম সবার কাছ থেকে সার্টিফিকেট সহ একান্ত করে নিয়েছে ,আর সব চেয়ে বড় কথা তার বউ তাকে সব কিছু তেই অধিকার স্বইচ্ছায় দিচ্ছে তাহলে নিষেধ কেনো করবে ? সেদিন তো বারবার ঐ উজ্জল হলুদ ফর্সা গলাতে বারবার চোখ আটকাচ্ছিলো তাই খুলে দিয়েছিলো ।
সকালেই দৃষ্টি আটকিয়ে ছিলো কিন্তু নিজেকে যথেষ্ট আটকিয়েছে নয়তো দেখা যাবে আবারো তার বউকে শাওয়ার নিতে হবে এতে তার বউয়ের শরীরে জ্বর নামবে তারপর তার বউকে তার নিজের কারনে কষ্ট সহ্য করতে হবে ।যেটা মোটেও সে সহ্য করতে পারবে না ।
আর ভেজা চুলে কার চোক্ষু আটকাবে না তার নতুন বউয়ের উপর? তার উপর লাল শাড়ি পড়েছে । এই শাড়ি পড়া অবশ্যই থামাতে হবে সব সময়ের জন্য নয়তো দেখা যাবে প্রতিদিন এই মেয়ের উপর এমন ভাবে আকৃষ্ট হতে হতে কবে যে বিজনেস বাদ দিয়ে বউ নিয়ে পড়ে থাকবে খোদা মালুম।
শেষ কথা টা ভাবতেই আফরানের হুশ ফিরে । এই মেয়ের জন্য নিজের প্রফেশন অফ করে দেবে? ছেহ কি সব ভাবছে ও ।
মুহুর্তেই সকালের বিষয় টা মনে করে ভেতরে আক্রুশ টা চেহারায় ফুটিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে লেপটপ টা আরিয়ার মাথার ঠিক বা পাশটায় শব্দ করে রাখে ,এতে আরিয়ার ঘুম ভেঙে যায় হঠাৎ করে উঠে মাথা উঠিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলো
__ক…কি হয়েছে? কে ..?
নিজের চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে তাকায় ।
আফরান কপাল কুঁচকে পাশ থেকে অন্য চেয়ার টেনে বসে লেপটপ টা নিজের দিকে টেনে সেটা অন করে ।
আফরানের এমন বোবা সুলভ আচরন আরিয়া প্রথমে না বুঝলেও নিজের চেতনা ফিরতেই সব টা মনে পড়ে গেলো ।তাই নিজেও কথা না বাড়িয়ে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে হাঁটা ধরে ।
টেবিলের উপরেই আফরানের ডান হাতের পাঁচ আঙুল একসাথ হয়ে আসে ।
আরিয়া যেতে যেতেই পেছনে ফিরে একবার তাকায় । আফরান লেপটপেই দৃঢ় দৃষ্টি ফেলে আছে ।
__আশ্চর্য বিয়ের পরপরই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে উনি । সামনে থেকেও কথা বলছে না দেখছি অথচ আগে সব সময় সুযোগ খুজতো কথা বলতে না চাইলেও বাধ্য হয়ে বলতে হতো এখন তো কোনো রেসপন্স ই করেনা দেখছি । আমি রাগ করেছি উনি কি বুঝতে পারছেন না ? উনার কি উচিত না আমার সাথে কথা বলা ?
দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভাবছে আরিয়া ।
এদিকে আফরান একবারের জন্যও অন্য দিকে তাকাচ্ছে না ,বাম হাতেই টাইপ করে নিজের ফাইল গুলো মিলাতে ব্যস্ত,অথচ ডান হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে টেবিলে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের ছাপ জমেছে । যেটা লেপটপের কারনে আরিয়ার চোখ অব্দি পৌঁছায়নি।
চার আঙুলের ছোট নক গুলো দিয়ে মুঠো হাতের তালুতে নিজের সব টা শক্তি দিয়ে ধরে আছে অথচ এতে যেনো তার ব্যাথাই হচ্ছে না ,খুব স্বাভাবিক ভাবেই চুয়াল শক্ত করে বসে দৃষ্টি লেপটপে ফেলে রেখেছে ।
নিজ কাজ শেষ করে আফরান আগের মতোই চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে কোনো দিক না তাকিয়ে পাশ থেকে সাদা রঙের তোয়ালে টা নিয়ে রক্ত হাত মুছে আরিয়ার দিকে আড়চোখে তাকায় ।
আরিয়া কবার্ডে নিজের জামা কাপড় গুলো ভালো ভাবে গুছিয়ে রাখছে যা যা বাকি ছিলো সেগুলোও নিয়ে আসছে । আফরান যে ভেতরে ঢুকেছে সেটাও খেয়াল করছে কিন্তু তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনি কথা তো বলবেই না জানা হয়ে গেছে আরুর।
আফরান এর রাগ ক্রমশই বেড়ে চলছে আরিয়াকে এখনো কোনো রেসপন্স না করতে দেখে মাথা পুরো বিগড়ে যায় সহ্যের সীমা পেরোয় হাতের রক্তে রঞ্জিত তোয়ালে টা আরো শক্ত করে চেপে ধরে ।
আরিয়া জামা কাপড় গুছিয়ে মাত্রই এদিকে ফিরেছে । ভেবেছিলো আফরানের দিকে তাকাবে না তবুও না চাইতেও যেনো আঁখি দ্বয় সেদিকেই চলে যায় । দৃষ্টি পড়তেই সাদা তোয়ালেতে লাল ছাপ দেখে প্রথমে না বুঝে ভ্রু কুঁচকায় পরমুহূর্তে আফরানের হাতের রগ ভেসে উঠা দেখেই কলিজা টা ছ্যাত করে উঠে । আফরানের দিকে একবার তাকিয়ে বুঝতে বাকি নেই রাগে ফুঁসতে লোকটা সীমাতিরিক্ত রাগ জমেছে ভেতরে তাই হয়তো কিছু করে বসেছে কিন্তু কি হয়েছে ? এভাবে কিসের জন্য রাগ করবে ?
আর ভাবতে পারছেনা আরিয়া । দৌড়ে আফরানের সামনে এসে তোয়ালে টা ছিটকে ফেলে দিয়ে আফরানের হাত টা ধরে একবার ভালোভাবে পরখ করে নেয় । একটাও ছুড়ি বা ব্লেডের দাগ নয় বুঝা যাচ্ছে। ছোট ছোট গভীর ক্ষত কয়েক জায়গায় ।
বিচলিত হয়ে বলতো লাগলো
___ক..কি করেছেন এটা ? কিভাবে কেটেছে ? কখন হলো ? তখন তো ওখানে ঠিকই ছিলেন তাহলে? আবার কি হলো? অফিসের কোনো কাজে প্রবলেম হয়েছে? তাই বলে এমন করবেন?
আরিয়ার কথা গুলো বিরক্ত লাগছে আফরানের কাছে এই কারনে যে, বউ তাকে এখনো বুঝতে পারেনি । আরিয়ার হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বললো
__ঢং করতে আসবি না একদম ।
আরিয়া অবাক হয় কারন আফরানের কথা একদম স্বাভাবিক অথচ অন্য সময় হলে রাগের কারনে তার উপর সব টা ঝারতো অথচ আজ তেমন কিছুই না ।
নিজেকে সংযত করে আরিয়া বললো
__কি হয়েছে ? আমাকে বলুন না প্লিজ।
আফরান কোনো উত্তর না করে আরিয়ার সামনে থেকে চলে যেতে নিলে আরিয়া চট করে আফরানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
___আমি আপনার ওয়াইফ,সো অবশ্যই উত্তর পাওয়ার অধিকার অবশ্যই আমার আছে । উত্তর দিন ।
আফরান আকস্মিক আরিয়ার কোমরে হাত রেখে হেঁচকা টানে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো
__আফরান চৌধুরীর থেকে উত্তর পাওয়ার ইচ্ছে থাকলে সেই ইচ্ছা মিটিয়ে ফেল বুঝলি । বাট আজ যেটা করলি একদম ঠিক করলি না আরু।এর ফল তোকে দিতে হবে । দিন দিন ডানা গজাচ্ছে, মুখের উপর কথা বলার সাথে সাথে তেরামি করে বেড়াচ্ছিস হয়তো এখানেই সব এনাফ করবি নয়তো সব কিছু মিটানোর ব্যাবস্থা টা কিভাবে করতে হয় আমার জানা আছে।
কথাগুলো আফরান দাঁতে দাঁত পিষে বলেছে ।
একেকটা কথা আরিয়ার রুহ কাঁপিয়ে দিচ্ছে।আবারো ভয় করছে লোকটাকে ।
মনে জোড় নিয়ে বললো
__কি ক..করেছি আমি?
আফরান আরিয়ার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে উত্তর না দিয়ে ।
এই চাহনির পরিবর্তন দেখে সত্যিই আজ দুটি চোখে রাগের বদলে ভিন্নতার ছাপ দেখতে পাচ্ছে আরিয়া । আজ উন্মাদ মনে হচ্ছে না তবে ভেতরের কষ্ট ঢেকে রেখেছে আফরান কে। এইটুকু শুধু চোখ দেখে বুঝতে পেরেছে আরিয়া ।
__আপনার কষ্ট হচ্ছে?
আফরান আরিয়ার কথা শুনে কোমর ছেড়ে দিয়ে বললো
__কষ্ট ? রাবিশ কি বলছিস ? আফরান চৌধুরী কে কখনো কোনো কষ্ট স্পর্শ করতে পারেনা । আর তোর কেনো মনে হলো আফরান চৌধুরী কষ্ট পাচ্ছে?
কথাগুলো আফরান নাক- কপাল উভয় কুঁচকে বললো ।
আরিয়া আফরানের কথার উত্তর না দিয়ে আফরান এর হাতে শক্ত করে চেপে ধরে যেটুকু শক্তি শরীরে জমিয়েছে সেটুকু দিয়ে টানতে টানতে খাটের উপর বসায় ।
_অফরান প্রচন্ড বিরক্ত হয় এবার । উঠে দাঁড়াতে চায় কিন্তু আরিয়া তার আগেই বলে উঠলো
__এক পা এগুবে এখান থেকে একদম পুঁতে দেবো এখানে বুঝলেন?
__এই তুই আমার ডায়….
আফরান এর কথা শেষ করতে না দিয়ে আরিয়া বললো
___আমার কথার উপর কথা বলার সাহস কি করে হয় আপনার হ্যাঁ? আর একটা কথা বললে কিন্তু আপনার জন্য মোটেও ভালো হবে না ।
__বেশি কথা বলে ফেলছিস আরু আজ । দেখলি বলেছিলাম না সত্যিই তোর সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছে । সুযোগ দিয়েছিলাম তোকে শুনলি কই? এখন তো শাস্তি……
এটুকু বলে আফরান উপভোগ করে নিজের হাত কারো হাতে বন্দী হয়ে আছে । কখন ব্যান্ডেজ করে নিলো ? খেয়ালই তো করেনি আফরান । শেষ করে সেখান টায় আরিয়া আলতোভাবে ধরে আছে । বললো
___সত্যি করে বলুন কি হয়েছে ? হাতের এই অবস্থা কেনো করেছেন ?
আফরান কিছু বলবে তার আগেই আরিয়া কি যেনো ভেবে আফরানের বুকের দিকে তাকায় । ব্যাকুল কন্ঠে বললো
__আমি কি একটু দেখতে পারি ?
__কি দেখবি ? আর এভাবে আমার ইয়ে .. মানে… এখানে তাকিয়ে আছিস কেনো?
কথাটা বলার সময় আফরান নিজ বুকের উপর হাত রেখে কপাল কুঁচকে ছিলো ।
__ওখানের ক্ষত দাগে টা সেরেছে?
___তুই কি তোর দেওয়া কামড় গুলোর কথা বলছিস? আমি তো রাতেই বললাম তোর দেওয়া এমন আঘাত আমি স্বইচ্ছায় হারাজিবন গ্রহন করতে…….
এটুকু বলতে আরিয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হয় কিন্তু আফরানের সামনে সেটা এড়িয়ে গিয়ে উচ্চ কন্ঠে বলে উঠলো
___একদম বাজে কথা বলবেন না বলে দিলাম ।যা ইচ্ছা বলে যান কেনো আপনি ? আমি সেদিনের বুকের উপর যে আঘাতের চিহ্ন গুলো ছিলো সেগুলোর কথা বলেছি ।
আফরান ঠোঁট কামড়ে হাসতে গিয়ে “ওওহ”শব্দে আওয়াজ করে উঠে ঠোঁটের ব্যাথায় । যতোবার আজ বাড়িতে এসে আরুর সাথে কথা বলে সময় কাটাতে চেয়েছে ততবার ঠিক ততবার নিজেকে দমিয়ে রেখে ঠোঁটে দাঁত দিয়ে আঘাত করেছে সাথে হাতেও করেছে , ধৈর্য না ধরতে পেরে ।
আরিয়া বললো
__আবার কি হলো ? দেখুন নিজেকে ভালো করে ,পুরো শরীর কতো জায়গায় ক্ষত করে রেখেছেন দেখেছেন ? আমি তো ভাবতাম আমার উপরেই সব রাগ মেটান এখন তো দেখছি আপনি নিজের টুকুও সত্যিই বুঝেন না । শরীরে যে দুর্বলতা এসে যাবে আপনি জানেন এতে কি হতে পারে ? তখন আপনার মহান সাম্রাজ্যের কর্ম কাজ কিভাবে সামলাবেন? কিছুই করতে পারবেন না বুঝেছেন ? শুধু…….
এটুকু বলতে আফরান আরিয়ার দিকে ঝুঁকে ঠিক কানের কাছে ফিসফিস আওয়াজে দুষ্টু গলায় বললো
__বউ তোর কি আমার শক্তি নিয়ে প্রবলেম কিংবা সন্দেহ আছে? না মানে রাতে তো আমি ইচ্ছে করে তুই নিতে পারবি না বলে………..
এটুকু বলতে আরিয়া এক হাতে আফরানের কান টেনে ধরে । আ… আপনি কি বলতে চাচ্ছেন হ্যাঁ? ফালতু লোক একটা , বজ্জাত লোক , অসভ্য একটা। মাইন্ড কতোটা ফালতু আপনার ।লু…..
এটুকু বলতে আফরান শব্দ করে হেসে বলতে লাগলো
__আআরুউউউ আমার কান টা ছাড়ড়ড় । লাগছে তো ।আমি তো এমনি বলেছি ।তাই বলে এই বকা গুলো আমাকে তুই শুনিয়ে যাবি ? ছিঃ হাসব্যান্ড কে এগুলো কি বলিস? রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবি ঠিক আছে ?
আরিয়া এবার আরো শক্ত করে কান মলে দিয়ে বললো
___আপনার এটাই শাস্তি…
__আমার সাথে তুই পারবি না আরু,ছাড়তে বলেছি ভালো ভাবে নয়তো নিজ থেকে ছাড়িয়ে নিলে তোর শাস্তি ডাবল হয়ে যাবে আরু।
___সারাজিবন ডাবল করেই তো দিয়ে এসেছেন শাস্তি কখনো কম দিয়েছেন বুঝি? আমার তো মনে পড়ছে না ।
___আচ্ছা ? ঠিক আছে আজ রাতে মনে করিয়ে….
___আবারও শুরু করলেন আপনি …
এটুকু বলে আরিয়া সত্যিই এবার আফরান কে ছেড়ে দিয়ে উজ্জল মুখখানা অন্ধকার বানিয়ে খাট থেকে দাঁড়িয়ে বললো
__থাকবো না আমি আপনার সাথে ।আপনি একটুও ভালো না ।সব সময় আমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলে যান আমার কথা একটুও ভাবেন না ।
কথাটা বলে আরিয়া ঠোঁট উল্টে দরজার দিকে হাটা ধরে । আফরান মুচকি হেসে বুকে হাত দিয়ে ব্যাথার অভিনয় করে “আহ” বলে চেঁচিয়ে উঠে আকস্মিক।
আফরান এর ব্যাথা যুক্ত চেচানোর আওয়াজ কানে আসতেই আরিয়া তরিত গতিতে পেছন ঘুরে আফরানের দিকে তাকিয়ে আবারও ব্যাকুল হয়ে দৌড়ে এসে আফরান যেখানটায় হাত রেখে ব্যাথার অভিনয় করে যাচ্ছে সেখানে হাত রেখে বললো
__এখানে ব্যাথা হচ্ছে? কিছু করেছেন আবার ? নাকি আগের স্থানেই ব্যাথা হচ্ছে?
__বউ খুব ব্যাথা হচ্ছে এখানে ।
আরিয়া উদ্গ্রিব কন্ঠে বললো
__হ্যা !খুব ব্যাথা হচ্ছে তাইনা ? দেখান আমাকে আমি দেখছি । ডঃ ডাকবো?
আরিয়ার এহেন অবস্থা দেখে আফরান আবারও স্বশব্দে হেসে উঠে । একহাতে আরিয়ার সেই স্থানের উপর রাখা হাতটি ধরে হাসির মাঝেই তালুতে চুমু খেয়ে বলতে লাগলো
__বউ এতো ভালোবেসেও কিভাবে সারাদিন কথা না বলে থাকতে পারলি ?
আফরান এর আবেগময় হৃদয়ের বাক্য টি আরিয়ার মস্তিষ্ক নাড়লো । বাক্য টা সুন্দর ছিলো নাকি আফরানের মুখে শুনতে ভালো লেগেছে সেটা আরিয়া বুঝলো না তবে আফরানের অবস্থা দেখে বুঝলো এতোক্ষণ এই লোকটা নাটক করছিলো ।
কথাটা বুঝে আসতেই আরিয়া কপাল কুঁচকে বললো
__নাটক করেছেন তাইনা? আমার সাথেও মিথ্যে নাটক করেন আপনি !
__আবার রাগ করছো কেনো ? নাটক কোথায় করলাম ?
তোয়ালে টার দিকে ইশারা করে বললো
__ এই ব্লাড গুলো মিথ্যে মনে হয় তোমার কাছে ?
__ওটার কথা বলিনি
__মাঝে মাঝে একটু না করলে বউ দুরে চলে যায় ।এই যে এখন কাছে আছো সেটা তো এর জন্যই তাইনা ?
__মিথ্যে বলে কাছে রেখে লাভ কি ? মিথ্যে বলে রিলেশন ঠিক রাখার চেয়ে সত্য বলে দুরে…..
আরিয়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে নিজের তর্জনী আরিয়ার ঠোঁটে ছুঁইয়ে বললো
__শশশশ । আমার কাছে রিলেশন মেটার করে না । যেটা আমার সেটা যেকোনো মূল্যে আমার । দ্যাট সেট আরু।
আরিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে এতোক্ষণে আফরানের ঠোঁট জোড়া ভালো করে চোখে পড়লো ।গাঢ় লাল হয়ে আছে । ছোট ছোট কেঁটে যাওয়ার কন্চি প্রগাঢ় দাগ খেয়াল করতেই বুঝা যাচ্ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল আফরানের ঠোঁটের উপর আলতো ভাবে ধরে ছোট দাগ গুলো তে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বললো,
__ কি হয়েছে ? এতো গুলো দাগ সেটাও ঠোঁটে কিভাবে লেগেছে ? দাত থেকে এক দুটো কামড় পড়লে এতো এমনভাবে কাটার কথা না । কি হয়েছে ?
আফরান মনে হয় উক্ত প্রশ্ন টার জন্য প্রস্তুত ছিলো না অথবা উত্তর দিতে চায়না তাই হাঁসফাঁস করতে লাগলো ।
__বলুন কি হয়েছে ? সব রক্ত জমাট হয়ে গেছে মনে হচ্ছে “ওহ”
আফরান কথা ঘুরিয়ে দুষ্টু আওয়াজে বলতে চাইলো কিছুটা সফলও হলো
__ আমি কি জানি?সেটা তো তুই ভালো বলতে পারবি তাইনা ? আমার এই কিউট রেড লিপস তুই ছাড়া তো কেউ কামড়ে দেয়নি ।কাল রাতে তো তু……
আরিয়ার কাছে সব টা বিরক্ত লাগছে এই মুহূর্তে। আফরান যে কথা ঘুরাতে চাচ্ছে সে বেশ ভালো করেই বুঝতেছে ।
__যুক্তি দিয়ে কথা না বলতে পারলে একশন নিয়ে কথা বলুন তাও চলবে বাট আপনার মুখে কথা ঘুরানোর পেঁচানো মানায় না । যদি এমনই হয় তবে সকালে কেনো দেখলাম না ? একদম ফালতু কথা বলবেন না বলে দিলাম । সত্যি করে বলুন ।
আরিয়ার কথার গুরুত্ব না দিয়ে আবার কথা ঘুরিয়ে বললো ,
__দুপুরে খেয়েছিস? আর শুন তোর ফোনে আমার নাম্বার টা সেভ করে নিবি বুঝলি । নাহলে তোর জন্য ফোন চালানো বন্ধ হয়ে যাবে একদম ।
__আবারো….
আরিয়ার কথার শেষ করতে না দিয়ে আফরান জায়গা থেকে বললো
__বলবো না । আমি এর উত্তর দিবো না ,হয়েছে? আবার জিজ্ঞেস করলে কর বাট আমি কিছুই বলবো না ।এখন তোর ইচ্ছা।
কথা টা বলে আফরান গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে পরিহিত ঘরিটি খুলতে খুলতে আড়চোখে আরিয়ার দিকে নজর রাখলো আয়নার ভেতরেই ।
আরিয়া অভিমানী দৃষ্টি ফেলে আফরানের দিকেই তাকিয়ে আছে ।
__দেখ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো রাক্ষসের মতো ? যেনো একদম খেয়ে ফেলবি আমায় ।
__সেটাই করতে ইচ্ছে করছে বুঝলেন । কখনো আমি ঠিক মতো উত্তর পাইনা আপনার থেকে ।
__পাবি বলেও মনে হয় না কখনো ।বাট চাইলেই খেতে পারি…
আরিয়া এবার ঠাস শব্দে উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে চলে যাবে মনোভাব নেয় কিন্তু কি যেনো ভেবে আবার জায়গাতে বসে নিজেকে স্থির করে ।
__রাগ করেছিস?
আরিয়ার থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে একহাতে আরিয়ার গালের উপর থেকে কান অবদি গিয়ে চুল ছুয়ে মৃদু শব্দে অপর গালে চুমু একে বললো
__ন্যাকামি করে করে জ্বালিয়ে মারছিস রোজ রোজ এইসব করে এতো মায়ায় ফেলে দিচ্ছিস কেনো? চাইলেও বলতে পারিনা আগের মতো । চাইলেও আগের মতো আঘাত দিতে পারিনা ।
গালে ছোয়া পেতেই আরিয়া বিস্ময়কর ভাবে ডাগর ডাগর চোখে তাকায় আফরানের দিকে । হঠাৎ এমন করবে বুঝতে পারেনি মনে হয় ।
আরিয়ার এমন দৃষ্টি আকর্ষণ দেখেই আফরান মুচকি হেসে আরিয়ার নাকে নিজের নাক ঘসে দিয়ে বলে
__আবারো নিউ লুক দিচ্ছিস কিন্তু ।এমন ঢং করতে থাকলে তোকে কিন্তু রোজ রোজ…
___আরিয়া এবার একটু লজ্জা পেয়ে চোখ নামায় । কিন্তু মনে মনে এতগুলো বকা আফরানের উপর ঝেড়ে দেয় । ঠোঁটকাটা, অসভ্য, নির্লজ্জ,বেহায়া ,বদমাশ বিয়ে হওয়ার পর একদম কোনো কথাই আটকায় না এখন মুখে ।
আরিয়ার মুখের অবস্থা দেখেই আফরান বুঝলো নিশ্চিত মনে মনে ঝেড়ে দিচ্ছে তাকে
__ছেহ ,আমার কান টা তো একদম ঝাঝা করে দিচ্ছিস দেখছি ।
আরিয়া অবাক হয়ে বললো
__আমি আবার কি করলাম?
__এতো শব্দ কোথা থেকে শিখলি? যখন তখন আজ কাল দেখছি এসব শব্দ প্রয়োগ করিশ আমার উপর ।
কপাল কুঁচকে আরিয়া বললো
__কি বলতে চাচ্ছেন?
আরিয়ার উত্তর না জানিয়ে আকস্মিক একটু ঝুঁকে আরিয়ার কর্নের কয়েক ইঞ্চি নিচে চোখ বন্ধ করে ঠোট ছুয়ে দেয় ।
আরিয়া কেঁপে উঠে এমন হঠাৎ আচরণে কিছু বুঝে উঠার আগেই আরিয়ার হাত চলে যায় আফরান এর কলারে ।
আফরান সেকেন্ড কয়েক পর ঠোঁট সরিয়ে এভাবে থেকেই সেই স্থানে চোখ রেখে মৃদু হেসে বললো
__তোর এই বিউটি স্পট টাও খুব সুন্দর
আরিয়া অবাক হয় আফরানের কথায় ।উনি এটা কখন খেয়াল করলেন ? এটা তো খেয়াল করার কথা নয় ।
কলার ছেড়ে দিয়ে নিজ জায়গায় আসতে চায় কিন্তু তার মধ্যেই আফরান আবারো একই জায়গায় ঠোঁট বসিয়ে দেয় ।
আরিয়ার অস্বাভাবিক অস্বস্তি কর লাগছে এসব । শরীরের কাঁপুনি শুরু হয় আবারো ।
আফরান জায়গা থেকে একটু ঠোট সরায় কিন্তু এখনো কিছুটা ছুঁই ছুঁই করছে
__এভাবে থাকবি ওকে । ছেড়ে দিলেই তো প্রশ্ন ছুড়বি একহাত দুরে চলে সরে যাবি যেটা আবার আমার বিরক্তিকর। কাজ শেষে আসলে প্রতিদিন এভাবে কাছে থাকবি ওকে ? আমি কাজ করলেও পাশ থেকে এমন করে জড়িয়ে বসে থাকবি ওকে ।আমার ভালো লাগে না দুরে থাকতে । উমমম বলে দিলাম যেনো ভুল নাহয় । নেক্সট ভুলে গেলে শাস্তি কি হতে তুই জানিস? উঁহু..বলবো না নিজেই দেখতে পাবি ।
আফরানের এমন আহ্লাদি গলার স্বর শুনে আরিয়া কোনো কথা বললো না ওভাবেই থাকলো আফরানের প্রতিটা শব্দ উচ্চারণের সময়ের গরম শ্বাস সেখানে উপচে পড়ছে যার দরুন আরিয়ার হাত দৃঢ় থেকে দৃঢ় হতে থাকলো আফরানের কলারে ।
দুটি দেহ এভাবেই থাকলো দীর্ঘক্ষণ । আবার পরমুহূর্তে স্থান চেন্জ করে আফরানের কাঁধে মাথা গুঁজে । আরিয়ার মাথা আফরানের কাঁধে ফেলে দুহাতে গলা জড়িয়ে নির্দ্বিধায় কখন ঘুমিয়ে গেলো জানা নেই তবে আফরান সব টা লক্ষ্য করেছে হাতের ঘরির কাটায় এই পর্যন্ত শত এর উপরে তাকিয়েছে। সেই সন্ধা রাতে এমন করে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে এখন প্রায় নয়টার কি সাড়ে নয়টা বাজবে ।এর মধ্যে আফরানের পা অবশ হয়ে আসছিলো বিধায় আরিয়া কে স্বযত্নে যেনো ঘুম টা না ভেঙে যায় দুহাতে সাবধানে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়ে নিজে আসন করে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে আরিয়ার মাথায় একই ভাবে হাত বুলাতে থাকে ।
আজকের জন্য মনে হয় এই ঘুম ভাঙার নয় ।
মাঝ রাতে আচমকা হঠাৎ করে বিকট এক শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে সামিরা । হকচকিয়ে পাশের ল্যাম্পলাইট টা এক হাতে জ্বালিয়ে অন্য হাতে নিজের বুকের উপর হাত রেখে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো । কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করলো ।মনে হলো যেনো কোনো মানুষ লাফিয়ে উঠলে যেমন আওয়াজ হয় তেমন ছিলো শব্দ টা । নাকি আকাশে বজ্রপাত হলো ? কিন্তু এখন তো বৃষ্টি হওয়ার কথা না শীতের সময় বৃষ্টি কিভাবে হবে ? আগে তো দেখেনি ।
এসব ভাবার মাঝেই খাটের উপর কেউ লাফিয়ে উঠে সামিরা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে সেদিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বসে ।
নূন্যতম মূহুর্তে যেতেই কেউ মুখ চেপে ধরে বললো
___এ..এই কি করছিস কি ? আমাকে দেখছি চোর বলে বাড়ি তে প্রেজেন্ট করবি দেখছি ।
কানে আওয়াজ যেতেই সামিরা চোখ মেলে তাকায়।এই আওয়াজ চিনতে অসুবিধা হয়নি সামিরার ।
সামিরা কে শান্ত হতে দেখে মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিতেই সামিরা আয়শের দিকে ঘুরে বসে বললো
__আপনি ! কিভাবে আসলেন এখানে? আর এতো রাতে কেনো ?
ভেতরে কিভাবে আসলেন ?
আয়শের মুখে উজ্জ্বলার ছড়াছড়ি হাসি একাধারে লেগেই আছে । পাশ থেকে পানি নিয়ে মুখে তুলে আবার স্বস্থানে গ্লাস টা রেখে সামিরার বালিশে মাথা রেখে শুয়ে যায় । তারপর একবার দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে দুহাত মাথার নিচে দিয়ে সামিরার দিকে তাকিয়ে বললো
__ঘুম আসছিলো না তাই চলে আসলাম ।
__হুয়াট? কি বলছেন ? মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে আপনার ? এতো রাতে এতো দুর কিভাবে আসলেন ?
__এইতো রাত সাড়ে এগারোটায় বেড়িয়েছি এখন এসে পৌঁছালাম । ইদানিং দেখছি মন টা খালি বউ বউ করে তাই থাকতে পারিনি । এখন এতো প্রশ্ন ছাড় ঘুমিয়ে পর পারলে আমার চুল গুলো একটু টেনে দে মাথা টা ব্যাথা করছে ।
__কিন্তু আপনি কিভাবে আসলেন এখানে ? দরজা তো আমি খুলিনি ।কথাটা বলে সামিরা একবার দরজার দিকে তাকিয়ে আরেক দফা অবাক হয় কারন দরজা তো লাগানোই আছে ।
বিচলিত গলায় আবার প্রশ্ন করলো
__কিভাবে ভেতরে আসলেন আপনি ?
আয়শের সোজা উত্তর
__তা এতো রাতে বুঝি গেইট দিয়ে আসবো ? তোর মা বাবা আমাকে জুতা পিটুনি দেব বুঝলি ।ঠাসকরৈ বলে বসবে তিন বছর কিভাবে দুরের রেখেছো? এখন একদিন পারছোনা। শুন আমি এদের কিভাবে বুঝাবো যে ,তখন আর এখন সময় টা এক না । এখন আমার যথেষ্ট বউ বাচ্চা নিয়ে চিন্তা করতে হবে নয়তো আমার স্বপ্ন বাচ্চার বাবা হওয়া নাতি নাতনি দেখার ।এগুলো কিছুই দেখতে পারবো না আর দেরী করলে । ওদিকে দেখলি আফরান কে ,ঐ সালা তো আমার চেয়েও ফার্স্ট দেখছি ।দেখতে তো একদম মনে হয় মেয়ে কি জিনিস কিছুই বুঝেনা অথচ বউ কে নিয়ে তো বেশ…..
__ছিহ কি সব বলে যাচ্ছেন তখন থেকে আপনি । চুপ করবেন ? সোজা প্রশ্ন করেছি সো ঠিক ভাবে উত্তর না দিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছেন দেখছি ।
__কেনো তোর লজ্জা হচ্ছে নাকি ?
__চুপ করবেন আপনি ? আমি কি জিজ্ঞেস করেছি আপনি কি বলছেন?
__তঝর বেলকনির পাশ থেকে একটা উঁচু সিমেন্টের কোটা আছে না ? আই মিন পাইপের মতো আর কি যেটাকে ইন্টারনেট লাইনের জন্য তার গুলি টানা হয় । ওটা দিয়েই উঠে পড়লাম ।
সামিরা অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে চলে গেছে বলছে কি এই লোক ? কলা গাছের মতো কুটি ছাড়া আস্ত সোজা পাল বেয়ে উঠে গিয়েছে এই লোকটা ? কিভাবে সম্ভব?
মনের প্রশ্ন টা মুখে নিয়ে বললো
__তা কতোবার কোমর ভেঙেছেন বলতে পারবেন? আমার তো মনে হচ্ছে না যে একবারেই উঠে আসতে পারবেন ।
__তা অবশ্য ঠিক ধরেছিস। দুবার পড়ে গিয়ে অলরেডি কোমর না পা জোড়ায় ব্যাথা পেয়েছি তৃতীয় বার সফল আমি ।
সামিরা এবার আয়শের পায়ের দিকে তাকিয়ে কোমল কন্ঠে বললো
__সত্য বলছেন ? সত্যিই ব্যাথা পেয়েছেন?
আয়শ একটু শব্দ করে হেসে সামিরার একহাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের বক্ষে নিয়ে এসে বললো
__মজা করলাম ।
সামিরার কাছে আজ মনে হয় বিস্ময়ের দিন ।সব কিছু তেই অবাকের পর অবাক করে দিচ্ছে লোকটা । এই গত তিন বছরের সব কিছুই যেনো ধোঁয়াশা ছিলো সব টা ভুলে যাচ্ছে বর্তমানের প্রতি টা জিনিসে নিজেকে উপভোগ করছে সামিরা ।
সামিরা কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়শ অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলে উঠল
__এভাবে তাকানোর কি আছে ? দেখ সামু আমি কিন্তু সত্যিই আর দুরের থাকতে পারবো না । কাল অথবা পরশুর মধ্যেই যেনো তোকে বাড়িতে দেখি ।আর তুই তোর মা বাবাকে কি করে মানাবি সেটা তুই জানিস ।
সামিরা এবার আয়শের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নেয় লজ্জায় । বুকের উপর পরে থাকা বাম হাতে আয়শের টিশার্ট দু আঙুলে খুঁটতে খুঁটতে মশৃন আওয়াজে বললো
__এভাবে আসতে গেলেন কেনো ? ফোনে কথা বললেই তো চলতো ।
সামিরার লজ্জা মিশ্রিত আওয়াজ শুনে আয়শ সামিরার দিকে তাকায় ,মুখে মৃদু হাসির ছড়াছড়ি লজ্জার আভা পুরো মুখে প্রকাশিত যেটা আয়শের আরো বেশি ভালো লাগার সৃষ্টি করছে
____দেখতে ইচ্ছে হয়েছে তাই চলে আসলাম এখন তো দেখা শেষ তুই বললে চলেও যেতে পারি সমস্যা নেই । শুধু রাতের ঘুম টুকু হারাম হবে এই আর কি ।
সামিরা কপাল কুঁচকে টিশার্ট আঁকড়ে ধরে আয়শের দিকে আবারো তাকায় দু জোড়া চোখ এক হয় ।
আয়শ আবারো দুষ্টু হেসে সামিরা কে ডান হাতে আরো শক্ত করে পেচিয়ে ধরে বললো
__যাবো ?
সামিরা কি বলবে জানা নেই তবে এই মুহূর্তে কেনো যেতে দিবে ? তাহলে এসছে কেনো ? তাছাড়া যেতে যেতে নিশ্চয়ই একদম ভোর হয়ে যাবে । সকালে আবার অফিস আছে তাহলে ঘুমোবে কখন ?
__চলে গেলে আসলেন কেনো ?
সামিরার উত্তর শুনে মৃদু হেসে বললো
__তুই বললেও যাচ্ছি না ওকে । বউয়ের সাথে ঘুমোতে এসেছি প্রথম বারের মতো । বলতে গেলে আজ আমাদের বাসর রাত বলতে পারিস কারন বিয়ের পর প্রথম একসাথে ঘুমানোর মানে তো বাসর রাত তাইনা ? বাট আমি কিন্তু এমন কিছু আজকের জন্য ভাবছি না শুধু ঘুমাতেই এসেছি ।সো তোর ভয় পাওয়ার…
এটুকু বলতেই আরিয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পুরো মুখ বুকে লুকোনোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে কামড় বসিয়ে দেয় হঠাৎ করে ।
আয়শ “আহ” শব্দে বলে উঠে
__তুই তো দেখছি এখনি লাভ বাইট বসানো শুরু করেছিস । আমার থেকেও ফাস্ট দেখছি ?
ইচ্ছে করে সামিরা কে বারবার লজ্জায় ফেলছে আয়শ কারন ঐ লজ্জা মিশ্রিত চেহারা খানা দেখতে তার ভিষন ভালো লাগছে । ল্যাম্পের আলোতে যেনো আরো প্রখর তম ভালো লাগার সৃষ্টি করতে এই চেহারা ।
সামিরা কে কথা বলতে না দেখে এবার ভেতরের সব টা দুষ্টু মি ঝেড়ে দিয়ে বললো
__ঠিক আছে আর বলবো না । আমার কিন্তু সত্যিই ঘুম পেয়েছে আর মাথা ব্যাথা করছে ।
সামিরা এবার নিজেকে আয়শের কাছ থেকে ছাড়িয়ে মাথায় হাত রাখতে চায় কিন্তু আয়শ বলে উঠলো
__দরকার নেই একটু ঘুমাতে পারলেই ঠিক হয়ে যাবে । এভাবেই থাক ওকে ।
সামিরা কথা বাড়ায় না । আয়ের যে মাথায় ব্যাথার অসুস্থতা টা একটু বেশি সেটা তার জানা । রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো সত্যিই।তাই এভাবেই থাকলো ।
মিনিট কয়েক পর আয়শ এক কাত হয়ে সামিরার দিকে ফিরে চট করে কপালে একবার ঠোঁট ছুঁয়ে আবার চোখ বন্ধ করে সামিরা কে একদম নিজের বক্ষের সাথে মিশিয়ে নেয় ,সামিরার পুরো চেহারা খানা আয়শের বুকে ।চুল গুলো এলো হয়ে আছে কিছু চুল আয়শের ঘারেও স্পর্শ করছে । কিছুক্ষন পর ঘুম চোখে বললো
__কিস মি
সামিরার তো নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এমন করে চেপে আছে আয়শ । এটা কি উনি বুঝতে পারছে না ? তার উপর কি সব বলছে ?
__বেশি ভাবিস না, শুধু বলেছি যেভাবে আছিস ওখানেই একবার কিস কর ।বেস এতো টুকুই আর কিছু বলবো না ।
সামিরা আয়শের পিঠ টিশার্ট খামচে ধরে আছে কখন থেকে ,আয়শের এই কথা টা শুনে আরো শক্ত করলো নিজের হাত খানা ।
__ফাস্ট ,
সামিরা আর কিছু ভাবলো না কারন তার ঠোঁট এমনিতেও আয়শের বুক ছুঁয়ে আছে টিশার্ট এর উপর ।
সামিরার অবস্থা বুঝে আয়শ নিজের গলার কাছ থেকে টিশার্ট টি একটু টেনে নিচে ধরে বক্ষ পাদর্শ উন্মুক্ত করে বললো
___হুম
সামিরাও ভাবলেশহীন ঠোঁট ছোয়ায় ।
আয়শ মৃদু হেসে টিশার্ট ছেড়ে আবারো জড়িয়ে নেই সামিরা কে ।
সকাল দশ টা কি সাড়ে দশটার দিকে সিকদার বাড়ির গেইট পেরিয়ে একজন ডেলিবাড়ি বয় মাস্ক পড়ে উপস্থিত হয়ে কলিং বেল বাজায় । ঠিক দু থেকে তিন মিনিট পর দরজা খুলে দেয় সামিরা ।
__সামিরা সিকদার নামের কে আছেন বাড়িতে ?
___কেনো ? আপনি ঠিক কাকে চাচ্ছেন? কেউ কিছু অর্ডার করেছে নাকি ?
__জি না তবে একজন অল্প বয়স্ক ছেলে এই পার্সেল টি পাঠিয়েছেন তার নামে আপনি তাকে ডাকুন ।
সামিরা কিছু টা অবাক হয়ে একটু ভাবতেই মৃদু হাসে নিশ্চয়ই উনি কিছু পাঠিয়েছেন ।
__আমি সামিরা
__আচ্ছা
লোকটা পার্সেল টা সামিরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
__আমি আসছি ।
সামিরা কথা না বলে দরজা আটকিয়ে দিয়ে চারদিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হেসে উপরে চলে যায় ।
ভেতরে ছোট একটা বক্স । সামিরা সেটা আস্তে করে খুলতেই দেখতে পায় একদম ছোট একটি কাঁচের বোতলে কাগজ টুকরো সাথে পাশে দুটো লাল গোলাপ ।সামিরা আবারো লজ্জাবনত হয় । পাশ থেকে ছোট একটা গোলাপ হাতে নিয়ে কাঁচের বোতল থেকে চিরকুট টা তুলে পড়তে শুরু করে :—
” আমার প্রানপ্রিয় স্বপ্নচারিনী । এতো গুলো দিন মিস করছিলাম খুব তোমায় । কতো চেষ্টা করেছি কথা বলতে কিন্তু সাহস হয়নি তবে অন্য পুরুষ তোমাকে স্পর্শ করবে এটা মানতে পারছি না । আমি তোমার সাথে মিট করতে চাই প্লীজ জলদি চলে এসো । অপেক্ষায় রইলাম জলদি আসবে ওকে । হুয়াটস আপে লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ইতি
তোমার ব্যক্তিগত মানুষ
সব টাই ঠিক ছিলো কিন্তু মাঝের কথাটা সামিরার একটু বিরক্ত লেগেছে অন্য পুরুষের কথা কেনো বলবে ? এখন কি সে অবিবাহিত কিংবা তাদের সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি হবে এমন কিছু কান তো নেই তাহলে এটা ব্যবহার কেনো করলো ?
আচ্ছা সে যাই হোক কিন্তু ওনার হুয়াটস আপ তো আমার কাছে নেই ।কথাটা ভাবতেই পাশে রাখা ফোনে টিং শব্দে একটি মেসেজ আসলো ।
সামিরা হাতে নিয়ে বুঝলো লোকেশন পাঠিয়েছে । কিন্তু এটা কি উনার অন্য নাম্বার? হবে হয়তো যেটা সামিরার জানা নেই । কিন্তু মা বাবা কে কি বলে বের হবে সে চিন্তা করছে এই মুহূর্তে।
আফরান এর অফিসে আফরানের চেম্বারে ছোট একটা দুই ইঞ্চির ক্যামেরা হাতে নিয়ে আয়শ দাঁড়িয়ে আছে ।
শক্ত গলায় তখন থেকে আফরান কে প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
__আনসার মি আফরান ।এখানে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে তোর এসিস্ট্যান্ট তানভীর ঐ মাস্ক পরিহিত লোকটির দিকে ইশারা করতেই লোকটা ছোটমার দিকে এসিড ছুড়েছে । এসব তোর কাজ তাইনা ? আর এই ক্যামেরা টা খুলতেই মেবি ভুলে গিয়েছিস।আমি থানায় গিয়েছিলাম বাট কোনো রেসপন্স পেলাম না অথচ উপর থেকে দেখা যাচ্ছে তারা কেইস টা সামলাচ্ছে কিন্তু এসব মিথ্যে।তুই সব টা বন্ধ করে দিয়েছিস তাইনা ?
আফরান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে একহাতে হাতে কলম নিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত ।
আয়শ ইচ্ছে করেই আজ দৃঢ় পায়ে দাঁড়িয়ে আছে উত্তর না জানা অব্দি যাবেনা । আর এটা যদি সত্যি হয় তবে এর শেষ দেখে তবে ছাড়বে । আরিয়ার জিবন টা নিয়ে পেছনে পেছনে এতো সব খেলে যাচ্ছে এতো নিকৃষ্ট তার ভাই এটা ভাবতেই শরীরে কাঁটা দিচ্ছে।
আরিয়ার সহজ সরলতার সুযোগ নিচ্ছে তাইনা? এটাকে তো তাই বলা যাবে ।
আয়শ আবারো বলতে লাগলো
__দেখ আফরান আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো তাই চেক দিয়েছি নিজেই ,আজ সকালেই এটা পেয়েছি হাতে । ভালো ভাবে বলছি বলে ফেল । নয়তো ঠিক হবে না তোর জন্য। আমি আরু কে সব টা বলে দেবো আর এই ভিডিও টাও দেখিয়ে দেবো তারপর কি করবি ? যার জন্য এতো কিছু করনীয় তার সাথে বিচ্ছেদ হলে কেমন হবে বল তো ?
শেষে কথা গুলো আফরানের কাছে পছন্দ হয়নি তাই এবার মাথা উঁচিয়ে তাকিয়ে বললো
__হয়েছে নিজের বাজে বকবক করা শেষ হলে আসতে পারিস এখন । আর এটা অফিস সো বাড়ির কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না এখানে । হাতের ওটা এখানেই রাখ আর ফোনে অথবা পেনড্রাইভ এ ভিডিও টা নিয়ে রেখেছিস ওটাও ডিলিট করে ফেল নয়তো তোর জন্য ভালো হবে না । I think you can guess what can i do ।
___যা ইচ্ছে করে নিস তুই ।বাট আমি নিজের জায়গা আর কথা থেকে নড়ছি না । তোর এই পশুত্ব কিংবা সাইকো টাইপ আচরন বোধ যতোদিন তোকে ঘিরে থাকবে ফ্যামিলি কিংবা আরু কারো জন্যই শুভনীয় না । এখনো সময় আছে নিজেকে পাল্টে ফেল। আরু যদি এর কিছু টা জানতে পারে তোর কি মনে হয় রিলেশন রাখতে চাইবে ?
ওর মায়ের এই অবস্থা তুই করেছিস এখন তো আমি শিউর । তুই একবার ভাব তো আরু এটা জানার পর কতো বড় ধাক্কা খাবে তোর কোনো আইডিয়া আছে ?
__সো হুয়াট? আর কিসের রিলেশনের কথা বলছিস ? আমি কি ওর চাওয়া না চাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি তোকে ?
যদি ভালোভাবে থাকে তাহলে থাকবে কিছুর কমতি থাকবে না আর যদি না থাকতে চায় ভালোভাবে ..
এটুকু বলেই আফরান বাঁকা হাসি টানে ঠোঁটের কোনে ।হাতের কলম টা টেবিলে চেপে ধরে শক্ত করে যার দরুন কলমের নিব ভেঙে যায় ।একটু থেমে আবার বললো
__কিভাবে রাখতে হবে সেটাও জানা আছে ।
__Afran are you really crazy ? মানে নিজের কাজ কর্ম গুলো নিয়ে আফসোস হয়না তোর ?
__ Yes, I’m really mad. এটাকে যদি ক্রেজি বলে চালিয়ে দিস সো .. আমার কিছু করার নেই তাইনা । বাট আমি যেভাবে চাইবো সেভাবেই সব টা চলবে ।
কথা গুলো আফরান তার রাগের সময়ের অভ্যাস মতো চাপা গলায় বললো ।
কথার আওয়াজ শুনে আয়শের বুঝতে বাকি নেই আফরান এর উন্মাদনা ক্রমশই বেড়ে চলছে নয়তো আওয়াজ এমন চেন্জ হয়ে যেতো না ।
একবার শুকনো ঢুক গিলে বললো
__তার মানে তুই নিজের কথায় দৃঢ়? বাট লাষ্ট বলে দেই তোর নিজের কারনে আরিয়ার কিছু হয়ে গেলে তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি ?
আফরানের চোখ জোড়া লাল টকটকে হয়ে আছে ,জল চিকচিক করলে অথচ গড়িয়ে পড়ছে না ।
আয়শ অবস্থা বুঝে আর কথা বাড়ানোর সাহস পেলো না হাত থেকে ক্যামেরা টা আফরানের সামনে রেখে চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো ।
আফরান কে খুব মিস করছিলো বলেই জাফর কে বলে ড্রাইভার কে নিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিলো আরিয়া কিছুক্ষণ আগে । বুক ভরা খুশি নিয়ে দৌড়ে ভেতরে গিয়েছিলো ।এমন কি ড্রাইভার কেও বলেছিলো চলে যেতে সে ঘন্টা খানিক সময় এখানেই থাকবে ।
কিন্তু আপাতত এখনো আরিয়া কে আফরানের অফিসের তেমন কেউ চিনে না মাস্ক পড়া কিংবা মাস্ক ছাড়া । তানভীর এর সাথে আরো দু এক জন জেনেছে শুধু যে আফরান বিবাহিত সেটাও তানভীর ছাড়া কেউ দেখেনি আরিয়া কে ।
তাই দারোয়ান প্রথমে না চিনে আটকায় আরিয়া বারবার বলার পরেও বিশ্বাস করেনি কারন হাজারো মেয়ে আফরান কে নিজের হাসব্যান্ড বলেই পরিচয় দেয় । ফেসবুক ,ইনস্টা তে শত এর উপরে আইডি নাম আছে ” আদৃত আফরান চৌধুরীর বউ” নামের । প্রোফাইলে নিউজ থেকে স্ক্রিন শট মারা পিক আপলোড দেওয়া ।কারন আফরানের আদৌ কোনো স্বাভাবিক ছবি নেই । আর সে তো ফেসবুক ইনস্টা এর ধারে কাছেও নেই । স্বাভাবিক ছবি পাবেই বা কোথায় ?
আরিয়া ও বাড়াবাড়ি না করে তানভীর কে কল দিতেই মিনিট ও লাগেনি এখানে আসতে ।এসে দারোয়ান কে ধমকিয়ে বললো নেক্সট টাইম যেনো এমন না হয় ।
আরিয়া ভেতরে যেতেই স্নেহা কে দেখে নাকি সিটকিয়ে বললো
___এই মেয়ে টাকে এখনো এখানে রেখে দেওয়ার মানে কি ? একে কিসের প্রয়োজন এতো ?
তানভীর কিভাবে এখন বলবে যে ,চার বছর আগে স্নেহার বাবার তেরামি করার কারনে তাকে উপরে পাঠিয়ে দিয়ে খান ইন্ড্রাস্ট্রি নিজের নামে করে নিয়েছে। এই মেয়ের কি এখন কেউ আছে নাকি ? তাই তো দয়া করে এখানে ফেলে রেখেছে।
তানভীর কে ভাবনার জগতে ভেসে যেতে দেখে বললো
__কি হলো উত্তর দিন । আমার তো একে দেখতেই গা জ্বালা শুরু হয় । এটাকে বের করে দিতে বলবেন ঠিক আছে ?
তানভীর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় ।
___তা আপনাকে কল দেওয়ার সাথে সাথেই এসে গেলেন এখানেই ছিলেন বুঝি ?
__হ্যা , এখানেই ছিলাম আসলে আয়শ স্যার এসেছেন আমাকে বাহিরে পাঠিয়ে দিলো ।তাই এদিক টায় একটু দেখছিলাম ।
আরিয়া মাস্ক টা খুলতে খুলতে বললো
__আমি এসেছি এটা এখন কল দিয়ে জানাবেন না ওকে ।
__কিন্তু কেউ স্যারের কাছে যাওয়ার হলে আগে স্যার কে না জানালে রেগে….
__আমি আর সবাই কিন্তু এক না এটা ভুলে যাচ্ছেন আপনি ।
আরিয়ার কঠোর গলায় বানী টি শুনে তানভীর স্তব্ধ হয় ।
___আপনি যদি বলে দেন তবে কিন্তু আপনার চাকরি ফিনিস করে দিবো বুঝলেন ।
তানভীর এবার একটু আশ্চর্য হয়ে আরিয়ার দিকে তাকায় ।
__ঠিক আছে ম্যাম বলবো না ।
মি মাফিয়া পর্ব ৬৩
আরিয়া এবার খিলখিলিয়ে হেসে দ্রুত পায়ে উপরে হাঁটা ধরে ।
এদিকে সবাই এতোক্ষণ তানভীর আর আরিয়ার কথা গুলো শুনছিলো ,তারা হালকা গুজব হলেও শুনেছে স্যার বিয়ে করেছে তবে কি এই সেই সুন্দরী রুপবতী তরুণী? প্রকাশ না করে নিজেদের মনের মধ্যেই প্রশ্ন টা বিদ্ধ রাখে । তারপর…….
