মি মাফিয়া পর্ব ৭
সুমাইয়া সাবিহা
খাবার টেবিলে সবাই ব্রেকফার্স্ট করছে কারো কোনো শব্দ নেই অবশ্য ব্যাপার টাহ নতুন নয় সেদিনের পর থেকে আরিয়ার চঞ্চলতা কমে গেছে এটা সবার চোখেই পরে না হাসে আর না কাঁদে আরিয়া একদম স্বাভাবিক তবে ভেতরে আকাশ সমান অভিযোগ সেটা দেখেই বুঝা যায় জাফর সাহেব সব কিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী ভাবেন । না মেয়েটাকে এখানে তিনি নিয়ে আসতেন আর না এভাবে থাকতে হতো আরিয়া কে আর না সেদিন আফরান তাকে আঘাত করতো, কেউ না বুঝলেও জাফর সাহেব এটা বুজে গেছিলেন যে,আরিয়া কে সেকেন্ড টাইম আফরানই হয়তো দ্বিতীয় বার আঘাত করেছিলো নয়তো শুস্ক ভালো জায়গা থেকে নিজে নিজে তো রক্ত গড়াবে না তাইনা।সবার নিরবতা ভেঙ্গে দিয়ে জাফর সাহেব বললেন,,আয়শ তোমাকে আমি একটা কথা বলতে চাই। যেহেতু তুমি এখন এই বাড়িতেই থাকছো গত দু’বছর ধরে , তাই তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
আয়শ মুখের খাবার শেষ করে বললো
__,হুম বলো।
___ তুমি কিন্তু আমার কথার বাইরে গিয়ে আমার কম্পানির হাল না ধরে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছো। ডিটেকটিভ হয়েছো।
আয়শ:হুম
___আমি কিন্তু তোমাকে কিছু বলিনি।
আয়শ:হুম
___আফরান এর ও কোনো খবর নেই আদৌ বেঁচে আছে তো নাকি সেটাই জানা নেই
আয়শ:আমার এগুলো শুনতে ভালো লাগছে না যেটা বলার সেটা সোজাসুজি বলো।
__ধরো আমি যদি মারা যাই আমার কোম্পানি কে সামলাবে ?
আয়শ বাবার কথায় এতক্ষণে বাবার দিকে তাকালো ,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__আমি ভূল কিছু বলছি না ।শুনো আমি চাই তুমি এবার বিয়েটা করো এটা তোমার দায়িত্ব হিসেবে করতে হবে।
আয়শ বাবার কথায় কাশতে শুরু করে ।
আরিয়া এবার চাচার দিকে তাকিয়ে বললো , চাচা ভালো সিদ্ধান্ত।
জাফর কিছু টা অবাক হলো মনে হলো অনেক দিন পর মেয়েটা একটু কথা বললো।সেই কবে কথা বলেছে তার জানা নেই ।
আয়শ আরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ,বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা তাছাড়া তোমার বড় ছেলে এখনো..
আয়শের কথা কেড়ে নিয়ে জাফর বললেন
__,সেটা তোমার ভাবতে হবেনা তার টা সে নিজেই ভাববে আর আমার মনে হয়না সে জীবনে বিয়ে নিয়ে কিছু ভাববে তুমি নিজের টা ভাবো।
__ বাবা প্লীজ তুমি আমাকে জোড় করতে পারোনা।
জাফর এতো দিন খেয়াল করেছে আরিয়ার প্রতি তার দুর্বলতা তার অপ্রকাশিত ভালোবাসা,না বলা কবিতা । কিন্তু মূলতো দেখতে চেয়েছিলেন আরিয়া ও আয়েশের প্রতি দুর্বলতা আছে কিনা কিন্তু যা বুজলেন তাতে আর কিছু বলার থাকলো না
তাই কিছু টা হতাশ হয়ে বললো,ঠিক আছে তোমার ইচ্ছে।
প্রতিদিননের মতো আজকেও আয়শ আরিয়ার সাথেই বের হলো ।যদিও কখনো আরিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলেও পারেনা আরিয়া তার আগেই গাড়ি তে বসে চলে যায় কলেজ ।
তবে আজ বাগানের কাছে গিয়ে আরিয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো,
__আজ তোকে আমি নিয়ে যাই? যাবি আমার সাথে? তবে তুই না গেলে আমি কিছু মনে করবো না জোড় করছিনা কিন্তু এমনি বললাম ।
আরিয়া কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো ,আয়শ বুঝলো আরিয়া কারো সাথে যেতে চায়না।
আরিয়া আয়শের ভাবনা মিথ্যে প্রমাণিত করে দিয়ে বললো,
__লেট হচ্ছে আসো।
আয়শের চোখের কোনে হাল্কা পানি আর ঠোটের কোনে মৃদু হাসি মুহূর্তেই কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস পাবার ন্যায় অন্তর টা খুশির সাগরে ভেসে গেলো।
দ্রুত পায়ে ড্রাইভার কে বললো,চাচা আপনার আজ ছুটি আমি নিয়ে যাই বলে হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে গাড়ী স্টার্ট দিলো।
আরিয়া অবাক হলো এমন কি হয়ে গেলো যে ভাইয়ার ঠোঁট থেকে যেনো হাসি সরছেই না।
গাড়ি চলছে ধীর গতিতে,আরিয়া ব্যাকসিটে নিজেকে এলিয়ে দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দুচোখ বন্ধ করে আছে । হ্যাঁ সে সারাদিন কিছু না কিছু ভাবতেই থাকে কিন্তু কি এতো ভাবে সেটা কারো জানা নেই।
আয়শ:একটা কথা বলবো তোকে?
আরিয়া চোখ বন্ধ রেখেই : হুম
আয়শ: এভাবে চেঞ্জ কেনো হয়ে গেলি?
আরিয়া কিছু বললো না
আয়শ: সারাদিন কি ভাবিস?
আরিয়া: জানিনা
আয়শ:সেদিন ভাইয়া তোকে আবার আঘাত করেছিলো তাইনা রে? শরীরেও অনেক আঘাত করেছে ,খুব কষ্ট হয়েছিল তোর ।
আরিয়া এবার চোখ মেলে আয়শের দিকে তাকায় , একটু অবাক হলো আয়শ ভাইয়া এসব কিভাবে জানলো?
আয়শ:এভাবে কি দেখছিস?আমি ঐদিনই দেখেছিলাম তোর ঘারে দু তিন জায়গায় ওয়ান টাইম দেওয়া।আমি বিষয় টা শিউর হওয়ার জন্য ঐদিন হসপিটালে একটা নার্স কে দিয়ে চেক করিয়েছিলাম ।নার্স আমাকে বলেছিল সব টা । তোর সারা শরীরে কেটে যাওয়া দাগ ছিল , তুই তো আর এগুলো নিজে নিজে করবি না তাইনা
আরিয়া কিছু বললো না।
আয়শ : আরিয়া তুই কি স্বাভাবিক হতে পারবিনা দ্বিতীয় বার?
কারো জন্য না হোক অন্তত আমার জন্য।
আরিয়া:আমি স্বাভাবিক আছি।
আয়শ আর কথা বাড়ালো না কারন এটার উত্তর এই ৪ বছরে সে এটাই পেয়েছে ।
তবে তার বেস্ট ফ্রেন্ড ছায়ার কাছে অনেক শুনেছে স্কুলে সে সত্যিই স্বাভাবিক থাকে তাহলে বাড়িতেই কেনো এমন থাকে ?হয়তো সবার সাথে ইচ্ছে করেনা ,,এখানে এসে আঘাত পেয়েছে বহুবার । অল্প বয়সে এসব সহ্য করেছে এটাই তো অনেক তাইনা।
-তোমাকে আর কতোবার বলবো আরিয়া প্লীজ এক্সেপ্ট মি আরিয়া ।
আমি তোমার সিনিয়র হয়ে বারবার ফিরে গিয়ে আবার আসি আমার ভালোবাসা কি চোখে পরে না তোমার?
কথা গুলো বললো ভারসিটি লাস্ট বর্ষের একজন ভাই। কিছু দিন পরপর আরিয়া দের কলেজ আসে আর রিকোয়েস্ট করে,এমন না যে দেখতে খারাপ,তাকে দেখলেও কলেজের মেয়েরা ক্রাশ খেয়ে বসে থাকে এই যে একটু আগে প্রেমা বলছিল,ইশ আরিয়া ফারহান ভাই যদি তোর পিছে না ঘুরে আমার পিছে ঘুরতো কবেই তাকে এক্সেপ্ট করে রোমান্স শুরু করে দিতাম । দুজন দুজনকে খাইয়ে দিতাম আরিয়ার ধমক খেয়ে তো চুপ হয়ে গিয়েছিল নয়তো আরো কতো কি যে বলতো।
ছেলেটার গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা,খুচা খুচা দাড়ি ।সব সময় টিশার্ট এর উপর একটা শার্ট থাকেই আর সেটার বোতাম গুলো ছেড়ে দেওয়া। স্টাইলিস,হাতে ম্যাচ করা ঘড়ি,পায়ে ব্রান্ডের জোতা ম্যাচিং,এটা তার দৈনন্দিনের স্টাইল
আরিয়া:ভাইয়া দেখুন ।আমি সত্যি বলছি আপনি মানুষ টা খুব ভালো কিন্তু আমি এসবে বিশ্বাসী না আর তাছাড়া আমার অজানা ভবিষ্যতে কাউকে জড়াতে চাইনা আপনি যতটা আমাকে নিয়ে ভাবছেন আর ভাববেন না প্লীজ রিকুয়েষ্ট আপনার কাছে।যদি এমন কিছু দিন পরপর ডিস্টার্ব করতে থাকেন তাহলে আমার এখানে আসা বন্ধ হয়ে যাবে আশা করি আপনি আমার ভালো চাইবেন। কথাগুলো বলে ক্লাসের দিকে হাঁটা দিল আরিয়া ।
ফারহান আজকেও হতাশ হয় তবে সে হাল ছাড়ার পাত্র নয় দরকার হলে বাড়ি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসবে এবার তার মা বাবাকে বুজিয়ে বলবে তবুও তার আরিয়া কেই চাই।
সামিরা: ঐ ছেলেটা কে আজকেও দেখলাম ক্যাম্পাসে।
প্রেমা:হুম এসেছিল আরিয়া কে রোজকার মতো সেইম বলছিল আরিয়া ও সেইম ।
সামিরা :আচ্ছা বাদ দে ।তা শুন একটা কথা।
প্রেমা: হ্যাঁ বল
সামিয়া: তোকে নয় আরিয়া কে
আরিয়া: কিছু হয়েছে?
সামিরা:নাহ তোকে বলবো বলবো ভাবছিলাম এতো বছর ধরেও বলতে পারিনি।
আরিয়া প্রেমা একে অপরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো,এমন কি কথা যে এতো বছর ধরে বলবে ভেবেই গেছিল বলতে পারিনি তাও বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে।
সামিরা:আয়শ ভাইয়া তোকে ভালবাসে খুব।
সামিরার কথায় আরিয়ার চোখ দুটো গোলগোল হয়ে গেলো কি বলে এই মেয়ে ।
সামিরা:এভাবে তাকানোর কি আছে সত্যি টা বললাম,ভাইয়া তোকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে শুধুই ১/২ বছর না পুরো ৭/৮ বছর ধরে তোর ছবি বুকে এঁকে রেখেছেন
আরিয়া:পাগল হয়ে গেছিস নাকি আমি তো কখনো এমন কিছু ভাবিনি ভাইয়া কে নিয়ে ।
সামিরা: তুই না ভাবতেই পারিস ।তাই বলে যে ভাইয়াও ভাববে না এমন কিন্তু না,তুই শহরে আসার আগে থেকেই ভাইয়ার মুখে তোর নাম ছিলো।অনেক গল্প করতো ভাইয়া তোর নামের।
প্রেমা: আল্লাহ কি বলিস,ঐ আয়শ ভাইয়া ।অফ্স কতো সুইট ।
আমি তো প্রথম দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম। কিন্তু সত্যি আমিও বুঝিনি ভাইয়া আরিয়া কে ভালোবাসে।এখন বুঝতে পারছি ভাইয়া কেনো তোর খবর আমার থেকে নেয় ,।
প্রেমার কথায় সামিরা আরিয়া দুইজনে শর্ট খেলো বোধয়।
বললো,কিহ?
প্রেমা: সত্যি বলছি, কিছু দিন পরপর তো আমাদের কলেজ আসে আমার থেকে আরিয়ার খোঁজ নেয় কেমন আছে কি করছে ,আরো কতো কি..
আরিয়া:তোরা দুইটা কি মজা নিচ্ছিস আমার সাথে?
সামিরা প্রেমা একসাথে বলে উঠলো , সত্যি বলছি, তোর দিব্যি
আরিয়া কথা কাটিয়ে বললো ,চল ফুচকা খাবো আজকের ট্রিট টা কিন্তু প্রেমা দিবে। সামিরা হো হো করে হেসে উঠলো,প্রেমা দিবে তাও ট্রিট ইটস ভেরি ফানি জোকস ।
প্রেমা ফুসফুসতে বললো,এমন ভাবে হাসার কি আছে মনেহয় জিবনেও দেই নাই হুহ ,বলে ঠোঁট বাকালো।
আরিয়া গান গাইতে গাইতে আজ ভেতরে ঢুকলো।কেনো জানি আজ ভালো লাগছে মানসিকতা,সব কিছু তার ছন্দে ছন্দে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। স্কুল ব্যাগ টা কাধ থেকে ফেলে শাওয়ার না নিয়ে শুধু ফ্রেস হলো তার আজ মুড নষ্ট করতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করছেনা তাইতো গোসলে যাইনি,,এসে খাবার খেয়ে সোজা বাগানে চলে গেলো,আজ ফুলের ঘ্রান গুলো বেশ উথাল পাতাল বইয়ে দিচ্ছে ভেতর টায় । নাহ আর বেশিক্ষণ থাকতে পারছেনা দোলনায় একটু দোল খেয়ে আবার ভেতরে চলে গেলো।
কাজের মহিলা (..লতা….)বললো,আপামনি আসলে আজকে বড় সাহেব … এটুকু বলতে আরিয়া থামিয়ে দিয়ে বলল,জানি আজকে চাচার আসতে দেরি হবে আয়শ ভাইয়ার ও আজ অনেক চাপ তাই আসবেনা।আমি রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে যাবো বলেই মৃদু হেসে উপরে যাওয়া ধরতেই আবার কাজের মহিলা পিছু ডেকে বললো,
–আসলে আপামনি বড় সাহেব না আসলে আ..
আরিয়া:আর কিছু শুনতে চাইনা খালা। আমি বললাম তো চিন্তা করো না আমি চাচাকে বলেই ঘুমাবো।নিজের যত্ন নেবো । কথাগুলো বলেই রুমে চলে গেলো।
অনেক দিন পর আরিয়া কে এমন হাসিমুখে দেখে কিছু বলতেও পারলো না আসলে বাড়িতে কে এসেছে সেটা আরিয়া আফামনির না জানলেই ভালো হবে ।তার এই মায়াভরা উজ্জ্বল মুখটা আর মৌলিন হতে দেখতে চান না।
আরিয়া পড়াশোনা শেষ করে ফোন টা নিয়ে একটু নিউজফিট ঘেঁটে ঘুমিয়ে পড়লো কখন বুঝতেও পারেনি।
ঘুমের মধ্যেই বারবার নড়ে উঠছে, এদিক ওদিক ফিরছে বারবার। বারবার ঘুমে ব্যাঘাত পেয়ে ঘুমটা একটু হালকা হয়ে আসলো , মনে হলো যেনো কেউ তার সারা শরীরে ঠোঁটের পরশ একে দিচ্ছে।কারো স্পর্শ মনে হলো।ডিম লাইট জ্বালানো আছে,,আরিয়া বুঝার চেষ্টা করলো এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন? তার নিশ্বাস ঘনো হয়ে আসছে , দ্রুত উঠে বসতে চায় কিন্তু তখনই কেউ তার দুহাত চেপে ধরে । আরিয়া স্পষ্ট বুজতে পারছে কেউ একজন তার শরীরের উপরে আছে।আরিয়া ছুটার চেষ্টা করছে আরিয়া এবার সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই আরিয়ার ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয় , এমন ভাবে দীর্ঘক্ষন কিস করে যাচ্ছে মনে হচ্ছে যেনো দীর্ঘদিন এর তৃষ্ণা নিবারণ করছে ।
আরিয়ার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে ঐ বলিষ্ঠ শক্তির কাছে তার নড়াচড়া করা টাও যেনো বৃথা তাই স্থীর হয়ে আছে চোখে শ্রাবণ দ্বারা ঝরেই চলেছে। সময় তার মতো যাচ্ছে কিন্তু তার যেনো সময়ের দিকে খেয়াল এই নেই ।নিজের মতো করে আরিয়ার ঠোঁট জোড়া দখলে নিয়ে রেখেছে মনে হচ্ছে যেনো সব টা তার অধিকার তার বউ।
বেশ কিছুক্ষণ পর লোকটা তাকে ছেড়ে দিয়ে আরিয়ার পাশের বালিশ টাতে মাথা রাখলো।
আরিয়া যেনো তার রূহ ফিরে পেলো ।সাথে সাথে উঠে বসতে চাইলো , কিন্তু তার আগেই আবারো লোকটা তাকে হেচকা টানে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিল,
আরিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো: প্লীজ ছেড়ে দিন আমাকে ,কে আপনী ? এমন বাজে ব্যাবহার কেনো করছেন আমার সাথে ।বাড়িতে এতো গুলো গার্ডস থাকতে এখানে কিভাবে আসলেন ?
লোকটা কিছুই বললো না ।
বেশ কিছুক্ষণ পরে লোকটা আরিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো
__বেশি ভয় পেয়েছো ?
আরিয়ার ভেতর টা যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো , হ্যাঁ সে এই কন্ঠের সাথে পূর্ব পরিচিত,সে বিন্দু মাত্র ভূল করবেনা এই কন্ঠস্বর চিনতে। আরিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
___ভা.. ভাইয়া আ.. আপনি..
__এভাবে কাঁপছিস কেনো? চুপচাপ শুয়ে থাক এভাবেই নড়বি না একদম।
আরিয়া এবার পুরো পৃথিবী সহ ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে।
আফরান ধমক দিয়ে বললো:কি শুরু করেছিস হ্যাঁ? আমার বুকটা কে তো এবার সাগর বানিয়ে ফেলবি।
ভয়ানক শব্দের ধমক খেয়ে একদম চুপ হয়ে গেলো। কান্না করছে কিন্তু কোনো আওয়াজ নেই শুধু চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।
আফরান এবার আকস্মিক আরিয়া কে বাহু ধরে নিচে ফেলে নিজে উপরে উঠে বললো
__চুপ করবি নাকি শাস্তি দিতে হবে আবার?
___ভাইয়া আমি কিছু করিনি সত্যি বলছি আমাকে আর মারবেননা প্লীজ,
কাঁদো কাঁদো গলায় বললো
__তাহলে চুপ থাক ।একটুও আওয়াজ করবি না নাহলে সেদিনের মত…
আরিয়া আফরান এর কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো,আ..আমি কিছু করবো না এইতো আমি একদম চুপ হয়ে আছি দেখুন ।আমাকে আর মারবেননা প্লীজ বলে নিজের মুখের উপর দুহাত চেপে ধরলো।
আফরান:এইতো গুড গার্ল। বলে আরিয়ার বুকের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো।
আরিয়া:ভ…ভাইয়া কি করছেন ? আ..আমি ..
এটুকু বলতে আফরান গম্ভীর গলায় বললো
__আবার কথা বলছিস দেখছি বলেছি না চুপ থাকতে কথা কি বুঝিস না নাকি আমাকে বুঝাতে হবে?
আরিয়া আর কিছু বললো না।
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতায় কাটে এভাবেই
নিরবতা কাটিয়ে আফরান বলে উঠলো : ফারহান ছেলেটা বারবার কেনো আসবে তোর কাছে?বারবার কেনো কথা বলিস ।
আরিয়া ভয়ে আফরান এর থেকে পালাতে চেয়েও পারলো না।উনি কিভাবে ঐ ছেলেটার কথা জানে?উনি তো এতো দিন দেশেই ছিলোনা
আফরান:তোকে এত কিছু ভাবতে বলিনি , যা বললাম সেটার উত্তর দে।
ছেলেদের সঙ্গ দিতে এখনই এতো ইচ্ছা তোর?কথাটা বলে আরো জোড়ে চেপে জরিয়ে ধরলো আরিয়া কে
আরিয়া কম্পিত গলায় বললো:ভা..ইয়া আসলে আমি কিছু করিনি তো উনি তো নিজে…… আহ ভাইয়া লাগছে আমার
আফরান কর্কশ গলায় বললো :এখনি উনি বলছিস বাহ ভেরি গুড।বলে আরো জোড়ে ধরলো ।
আরিয়া:ভাইয়া প্লীজ ব্যাথা পাচ্ছি খুব।ছেড়ে দাও প্লীজ।
আফরান:কেনো কি হলো এখন? ছেলেদের সাথে তো এসব ইচ্ছা ছিলো তোর তাইনা ।বয়স যেই ১৮ তে পড়েছে এমনি যৌবন টাকে বিলিয়ে দিতে চাচ্ছিস তাইনা।তা এখন তো আমি তোর খুব কাছে আছি আমায় দে । আদর দিবো খুব ।আমার কোনো সমস্যা নেই আর আমি মনে করি তোর ঐ ফারহানের থেকে আমার কাছে বেশি মজা পাবি ।
আরিয়া:ছিহ ভাইয়া কি সব বলছেন , লজ্জা করেনা আপনার? ছিহ;
আফরান:তোর খুব লজ্জা হয়েছে তাইনা রে।ঠিক আছে তোর লজ্জা আমি মিটিয়ে দিচ্ছি।বলে আফরান আরিয়ার গলায় মুখ ডুবালো।
আরিয়া আফরানের শার্টের কলার খামচে ধরে কপা গলায় বলতে লাগলো,আপনি আমায় ইচ্ছে করে কলঙ্কিত করে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবেন তাইনা ভাইয়া।ঠিক আছে আপনার যা ইচ্ছা করুন ।আসলে আমিও এই বাড়িতে থাকতে চাইনা বাধ্য হয়েই থাকতে হচ্ছিল,আমার ভবিষ্যৎ এমনিতেই শেষ করে দিয়েছেন আমার সারা শরীরে দাগ লাগিয়ে দিয়েছেন ,আমি বিয়ে করতে চাইনা আমি মরতে চাই ,অনেক বার চেষ্টা করেছি আত্মহত্যা করতে কিন্তু চাচা কে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে ছিলো না ।এখন আপনি যদি সব টা ক্লিয়ার করে দেন তো ভালোই হয় ।যা ইচ্ছা করুন আমার সাথে আর আমি জানি চাইলেও আমি আপনাকে আটকাতে পারবোনা
আরিয়ার কথায় আফরান মাথা তুলে আরিয়ার দিকে তাকায় ।
শুন,তুই এমনি এমনি চাইলেও মরতে পারবিনা আমার অনুমতি ছাড়া তোর মৃত্যু ও নিষিদ্ধ।বলে আরিয়ার উপর থেকে উঠে বসলো ।
মি মাফিয়া পর্ব ৬
আরিয়া যেনো নিজের প্রান টা ফিরে পেলো।
আফরান:তুই কলঙ্কিনী হ্যাঁ তুই কলঙ্কিনী কিন্তু সেটা শুধুমাত্র আমার জন্য হবি । বলেই রুমে থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আরিয়া এখনো শুয়ে চোখের জল ফেলছে।কেন আমার সাথেই এমন হয় ,কেন কি এমন ভূল করেছি আমি ,আমার সাথেই কেনো উনি এমন করে ।বলে কাঁদতে লাগলো।