মেঘাচ্ছন্ন আকাশে প্রেমের রংধনু পর্ব ৫

মেঘাচ্ছন্ন আকাশে প্রেমের রংধনু পর্ব ৫
Jannatul ferdosi rimi

নিজের হবু বরের রুমে এসে নিজের বোনকে এবং হবু স্বামীকে কিছুটা কাছাকাছি দেখে বুক ছেদ করে উঠলো মিরার। মিরা এবং অরু রুমে এসেই দেখলো অর্ষা আরফানের শার্টের কলার ধরে রয়েছে। মিরা একপ্রকার চিৎকার করেই বললো, ‘ কি হচ্ছে এখানে?’ অর্ষা দ্রুত আরফানের কলার ছেড়ে দেয়।

কারো পায়ের শব্দ শুনে দ্রুত আরফানের গলা ছেড়ে দিলে, পা হোচট খেয়ে পুনরায় আরফানের গাঁয়ের উপর একপ্রকার পরে গিয়েছিলো অর্ষা, ঠিক সেই মুহুর্তে অরু এবং মিরা প্রবেশ করে আরফানের রুমে। অর্ষা আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে। মিরা এবং অরু কেমন এক সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আরফান এবং অর্ষার দিকে। আরফান ও এক অপ্রস্তুতকর অবস্হায় তাকিয়ে রয়েছে। হাত নাড়িয়ে নিজের শার্টের কলার ঠিক করে নিলো আরফান। যদিও মিরার আগমনে সে মিরার কাছে কৃতজ্ঞ। আজ মিরা সঠিক সময় না এলে হয়তো, অর্ষা আজ তাকে মে/রেই ফেলতো। মিরা অর্ষার কাছে এসে বললো, ‘ তুই এখানে কি করছিস অর্ষা? ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আমি এবং মিস ঝাঁঝওয়ালী আরফান বাবুকে একটু টাইট করতে এসেছিলাম। ‘
কথাটি বলতে বলতে বর্ণ আরফানের কক্ষের বারান্দা থেকে কক্ষে প্রবেশ করে। বর্ণকে দেখে বেশ বড়সরভাবে অবাক হয় আরফান এবং অর্ষা। বর্ণ কি বারান্দায় ছিলো? তাহলে রুমে এতোকিছুর শব্দে রুমে মিরার আসার পূর্বে আসেনি কেন? আরফান এবং অর্ষার ভাবনার মাঝেই, বর্ণ পুনরায় বলে উঠে,
‘ আসলে আরফানকে নিয়ে আমরা দুজনে মিলে একটা প্রাংক করবো ভেবছিলাম, তাই মিস ঝাঁঝওয়ালী এবং আমি দুজনেই আরফানের রুমে আসি। তার মধ্যে হুট করে কল আসায় আমি বারান্দায় চলে যাই, অতঃপর মিস ঝাঁঝওয়ালী হোচট খেয়ে পরে….’

‘ আহ বাকিটুকু বলতে হবেনা বর্ণ ভাইয়া আমি বুঝে গিয়েছি। ‘
অরুর কথা শুনে বর্ণ সামান্য মাথা চুলকে মুচকি হাসলো। মিরা স্বস্হির নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ‘ ওহ আচ্ছা, এই ব্যাপার? আচ্ছা এখন তো অনেক রাত হয়েছে, আমাদের যাওয়া উচিৎ। ‘
অর্ষা অধরের কোণে আলতো হাসি ফুটিয়ে সায় জানায়। মিরা আরফানের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে জানায়, ‘ আমি আসি কেমন? ‘

আরফানও হাত উঁচু করে মিরাকে বিদায় জানায়। মিরা এবং অরু বেড়িয়ে যেতেই, অর্ষা এবং আরফান একই দৃষ্টিতে বর্ণের দিকে তাকালো। বর্ণ হয়তো অর্ষা এবং আরফানের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রশ্ন অনুভব করলো, তাই বর্ণ তার কানে থাকা এয়ারফোন খুলতে খুলতে বললো, ‘ আমি অনেক আগেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান শুনছিলাম, যখন আমি রুমে ঢুকি তখন মিরার রিয়্যাকশন দেখে আমি আন্দাজ করতে পারি যে, কোন একটা গন্ডগল হয়েছে। তাই নিজ থেকেই কিছু একটা বানিয়ে বলে ফেললাম। ‘

অর্ষা বর্ণের কথা বিশ্বাস না করলেও, আরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক তবে বর্ণ কিছু দেখিনি, দেখবে কি করে? সে বারান্দায় উপস্হিত থাকলেও, কানে এয়ারফোন থাকা বিধায়, কক্ষের কোন আওয়াজ বর্ণের কান অব্ধি আদোও পৌঁছেই নি। আরফান নিশ্চিন্তের সহিত একপ্রকার হাক ছেড়ে মিরাকে বললো, ‘ মিরা দাঁড়াও, আমিও আসছি তোমাদের এগিয়ে দিতে। ‘
মিরা এবং অরু সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো, আরফানের হাক শুনে, মিরা জবাব দেয়, ‘ ঠিক আছে, আসুন তবে। ‘
আরফান দ্রুত মিরা এবং অরুর কাছে যায়। আরফান বেড়িয়ে যেতেই, অর্ষা বর্ণের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে, ‘ মতলব কি আপনার? কি চাইছেন আপনি? ‘

‘ আপনাকে চাইছি মিস ঝাঁঝওয়ালী। ঝাঁঝওয়ালীকে দিবেন আমায়? ‘
অর্ষা বর্ণের অদ্ভুদ কথায় এক প্রকার চুপ হয়ে পরে। পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে বর্ণের দিকে আঙ্গুল তাক করে ঝাঝিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে, ‘ কি বললেন আপনি? ‘
‘ যা আপনি শুনলেন। হুট করে রেগে যাচ্ছেন কেন? ‘
হাতে থাকা ফোনটি টিপতে টিপতে বর্ণ প্রশ্ন করলো। অর্ষা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। অর্ষার রাগ দেখে খানিক্টা হেসেই বর্ণ বললো, ‘ মরিচ আমার খুব ফেভারিট। তাই বললাম ঝাল লাগবে। ‘
‘ এইসব হেয়ালির মানে কি? আপনার কথা আমি সত্যিই বুঝতে পারিনা। ‘
‘ আমাকে বুঝতে হলে, আমার মনের ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। মিস ঝাঁঝওয়ালী। ‘

অর্ষা নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেখে তার বাবা রফিক সাহেব পেপার পরছেন। অর্ষার মাকে তাকে চা দিয়ে কিছু বলছিলেন। অর্ষাকে দেখেই, তিনি অর্ষাকে প্রশ্ন করেন,
‘ মিরার গাঁয়ে হলুদ কেমন কাটলো? আমি তো আমার অসুস্হতার জন্যে কোন অনুষ্টানই এটেন্ড করতে পারছি না। তার মধ্যে তোর বাবাও খানিক্টা অসুস্হ হয়ে পরেছেন। ‘
নিজের মাকে থামিয়ে দিয়ে, অর্ষা নিজের শার্টের হাতা ফ্লোড করে ড্রাইনিং টেবিলে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে বলে, ‘ তোমার কথা বলছো ঠিক আছে, যার তার কথা আমাকে কেন শুনাচ্ছো? দুনিয়ার সকলের অসুখের কথা জেনে কি আমার কিছু হবে?

রফিক সাহেব তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেয়েটার এইসব কথা নতুন কিছু নয়।এমন ব্যবহার দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত তিনি পেয়ে যাচ্ছেনই। অর্ষার মা কপাট রাগ দেখিয়ে, অর্ষাকে হুকুমের সুরে বলে, ‘ অর্ষা! প্রতিনিয়ত এসব বলে নিজের বাবাকে ছোট করবে না। ‘
অর্ষা কথাটি শুনেই, তার হাতে থাকা গ্লাস নিচে ছু/ড়ে ফেলে। তা মুহুর্তেই গুড়ো/গুড়ো হয়ে যায়। অর্ষার মা মেয়ের রাগ দেখে দমে গেলেন। অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘ কতবার বলবো মা? ওই লোকটাকে আমার বাবার পরিচয় দিবে না। আই জাস্ট হেইট হিম!’

অর্ষা কথাটি বলে উপরে গটগট করে চলে যায়। অর্ষার মা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তার মেয়ের চলে যাওয়ার পানে। অর্ষার বাবা রফিক সাহেব তার স্ত্রীর হাত ধরে, নিজের পাশে বসিয়ে বললেন,
‘ মেয়েকে বকে কি হবে? আমি তো এইসব কথারই যোগ্য। আমি কি কম অন্যায় করেছি বলো? আমি যা করেছি, তার কোন ক্ষমা হয় না সোহা। ‘
অর্ষার মায়ের আখিজোড়া থেকে নিরবে অশ্রুপাত হতে থাকে।

অপরদিকে অর্ষা ঘরে এসেই, নিজের চেয়ারে বসে পরে। মাথায় তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই, একদিকে আরফান! যার নোংরা চেহারাকে নিজ চক্ষে দেখেছে দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে। সেই নোংরা মানুষটা কিনা, মিরার হবু বর? নিজের প্রানের প্রিয় বোনের সাথে এমন নোংরা লোকের বিয়ে কিছুতেই হতে দিবে না সে। কিন্তু অন্যদিকে বর্ণ! যে অচেনা হয়েও কেমন এক চেনা! কিন্তু এমন কেন হয়? আচ্চা লোকটা এতো অদ্ভুদ কেন? অনেক অনেক রহস্য লোকটার মাঝে! যার উত্তর নেই অর্ষার কাছে। অর্ষার ভাবনার মাঝেই, তার ফোন বেজে উঠে। অর্ষা ফোন রিসিভ করে। তাদের এলাকার ছেলেপেলে! বিপদে পরেছে। অর্ষাকে বেড়োতে হবে। এত্তো রাতে বিপরীত দলের ছেলেপেলে তাদের দলের ছেলেদের হামলা করেছে। তৎক্ষনাৎ এর ব্যবস্হা নিতে হবে তাকে।

এদিকে বর্ণ আরফানের কাছে এসে দাঁড়ালো। আরফান বর্ণকে দেখেই প্রশ্ন করলো, ‘ কি হয়েছে বর্ন? সব ঠিক আছে তো? ‘
বর্ণ আরফানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘ একদম। সবই ঠিক আছে, বেঠিক তো শুরু হবে। ‘
কথাটি বলেই বর্ণ নিজের গাড়িতে বসে, আরফানকে বিদায় জানালো। আরফান ভ্রু কুচকালো।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশে প্রেমের রংধনু পর্ব ৪

অর্ষা তার মাকে না জানিয়েই, তৈরি হয়ে নিলো। চুলে লম্বা করে ঝুটি করে,মাথায় ক্যাপ পরে নিলো। অতঃপর বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। অনেকটা স্প্রীডের সাথেই সে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে, তার কোন দিকে খেয়াল নেই, রাতের মধ্যে বাইক চালিয়ে নেওয়াতে বেশ অনেকটাই ঝামেলা পহাতে হচ্ছে তাকে। অর্ষা খেয়াল করলো একটি বড় গাড়ি তার দিকে ছুটে আসছে, সে কিছু বুঝার আগেই গাড়িটা তার বাইকের……

মেঘাচ্ছন্ন আকাশে প্রেমের রংধনু পর্ব ৬