মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ৪

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ৪
লেখিকা Sabihatul Sabha

হসপিটালে চিন্তিত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে মিম ওর পাশেই মহুয়া চুপচাপ বসে আছে, থেমে থেমে শরীর কেঁপে উঠছে মহুয়ার।
আলভি অপারেশন রুমে।
একজন ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই মহুয়া দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো।

ডাক্তার কিছু সময় মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ দেখুন আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি, আপনার ছেলের এখন ইমার্জেন্সি একটা অপারেশন করাতে হবে আমাদের কারো পক্ষে এই অপারেশন করানো সম্ভব নয়।
মহুয়া শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ডাক্তারের দিকে।
মিম পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ তাহলে কি অন্য হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে!.?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ডাক্তারঃ তার প্রয়োজন নেই তিন ঘন্টার ভেতর অপারেশন করাতে হবে একটু পর একজন ডক্টর আসবে আপনারা উনাকে রাজি করাতে পারলে এখানেই অপারেশন হবে। হাতে সময় নেই এখনি ডক্টর চলে আসবে।
ডক্টর চলে যেতে নিলে মিম বলে উঠলো, ‘ ডক্টরের নাম!.?’
ডক্টরঃ ভালো কথা মনে করেছেন ডক্টর আহনাফ চৌধুরী।

নাম শুনতেই বজ্র পাতের মতো তাকালো মহুয়া, ডাক্তার চলে যাচ্ছে মহুয়া কিছু বলতে গিয়েও লক্ষ করলো কথা বের হচ্ছে না। সব কিছু গলায় এসে আটকে গেছে।
মিম বিরবির করে বললো,’ আহনাফ চৌধুরী! মানে আহনাফ ভাই!..? ‘

মহুয়া চুপচাপ সিটে বসে আছে। কি করবে.!? এক তো আলভির চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তার উপর আহনাফের মুখোমুখি কিভাবে হবে.?? আহনাফ কি রাজি হবে আলভিকে অপারেশন করাতে!.? এতো বছর পর সামনে দেখলে আহনাফের রিয়াকশন কেমন হবে.! আহনাফ বলে ছিল সে কখনো মহুয়ার এই মুখ দেখতে চায় না। আর কিছু ভাবতে পারছে না মহুয়া।
মিম মহুয়ার কাঁধে হাত রাখলো।

বিয়ে বাড়ি কয়েক ঘন্টায় একদম মরা বাড়ির মতো হয়ে গেছে। বাড়ি একদম ফাঁকা আত্মীয়স্বজন সবাই চলে গেছে।
নির্জন আঁড়চোখে মা’য়ের দিকে তাকালো। হালিমা বেগম কাঁদছেন।
আজাদ চৌধুরী বিরক্ত হলো ছোট ভাইয়ের বউয়ের বাচ্চামিতে।

নিজেই মেয়ে পছন্দ করলো, নিজেই বিয়ে ঠিক করলো সব কিছু নিজে করে এখন সবাই কে দোষ দিচ্ছে!
হালিমা বেগমঃ আজ যদি বিয়েটা হয়ে যেত আমার ছেলেটার কি হতো.? ও ত আপনাদের কেউ নয় কেনো ওর বউয়ের বিষয় খোঁজ নিবেন।

আমেনা বেগমঃ ছোট কান্না বন্ধ কর বিয়ে ত হয়নি! আর তুই তোর ছেলের জন্য নিশ্চয়ই খারাপ কিছু পছন্দ করবি না সেই জন্য আমরা এতোটা ঘেঁটে দেখিনি।
হালিমা বেগমঃ ঠিক বলেছেন আপা ছেলে ত শুধু আমার আজ ওর আব্বু বেঁচে থাকলে আমার এমন দিন দেখতে হতো না।

আমেনা বেগমঃ তুই এখন ভুল বুঝছিস ছোট আমরা নির্জন কে কখনো পর মনে করিনি। আজকাল ভালো কথায়ও তুই দোষ খুঁজে বেড়াস।
আজাদ চৌধুরীঃ চুপ করো তোমরা যা হয়েছে, হয়েছে এখন সব ভুলে যাও।
নির্জন চুপচাপ ভদ্র বাচ্চার মতো বসে আছে।
দুইতলা থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে মেঘলা।

নির্জন একবার মেঘলার দিকে তাকালো মেঘলার মুখের হাসি দেখেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো। সে বুঝতে বাকি নেই এই সব কিছুর পেছনে কে! প্রথমেই বুঝতে পেরেছে।
ছোঁয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর পর কিছু লোক এসে ভাংচুর শুরু করে, লোকগুলো এলিনার বয়ফ্রেন্ড, হালিমা বেগম পুলিশ ডাকতে চাইলে এলিনা নিজেই বলতে শুরু করে জোর করে ওকে বিয়ে দিচ্ছে সে এই বিয়েতে রাজি নয় বলেই বিয়ে বাড়ি থেকে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যায়।

হালিমা বেগম নিজের রুমে যেতে যেতে বলে উঠলো, ‘ আমি আমার ছেলের জন্য রাজকন্যা খুঁজে আনবো।”
নির্জন ক্লান্ত চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে সোফায় মাথা রাখে।

অপারেশন রুমের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ থেকে টপটপ করে এখনো পানি পড়ছে। মিম বাড়িতে কথা বলে ফোন রাখলো রাবেয়া বেগম বাড়িতে কান্নাকাটি করছেন৷
একজন নার্স এসে বললো ” স্যার চলে যাবে আপনি কথা বলে দেখুন, আমাদের বড় ডাক্তার বলেছেন কিন্তু স্যার রাজি হচ্ছেন না ”

মিম রেগে বললো,’ উনাদের কাজই হলো মানুষের জীবন বাঁচানো সেখানে উনি রাজি কেনো হচ্ছে না!.?’
~ দেখুন স্যার আগামীকাল দেশে এসেছে আজ প্রয়োজনে হসপিটালে এসেছে কোনো রোগী দেখতে নয়৷
মিমঃ তাই বলে একটা ছোট বাচ্চা উনার সামনে কষ্ট পাচ্ছে।
~ আপনারা কথা বলে দেখুন।
মহুয়া মিম কে চুপ করিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আহনাফের ক্যাবিনের সামনে গিয়ে মহুয়া ঘোমটা টেনে নিল।
আহনাফ ভেতরে আসতে বললো।

মহুয়া হাত দিয়ে ঘোমটা টেনে চেয়ারে বসলো।
আহনাফ একবারও সামনে তাকালো না ল্যাপটপে চোখ রেখে কফিতে হাত দিল।
মহুয়া ভয়ে ভেতর ভেতর জমে গেলেও বাহিরে একদম স্বাভাবিক থাকলো।
আহনাফ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো,’ জ্বি বলুন’
মহুয়া কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আলভির অপারেশনের জন্য বললো।

আহনাফ মহুয়ার এমন কাঁপা কাঁপা এলোমেলো কথা শুনে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো।
ঘোমটা দিয়ে মুখ ডাকা, হাত টেবিলের উপর।
আহনাফ হাতটার দিকে তাকাতেই বুক ধক করে উঠলো। ভীষণ চেনা মনে হলো হাতটা। আহনাফ আবার মহুয়ার দিকে তাকালো।

মহুয়া আবারও আলভির কথা বললো।
আহনাফ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। কন্ঠটা বেশ পরিচিত। মহুয়া যথেষ্ট চেষ্টা করছে কন্ঠ চেঞ্জ করে কথা বলার।
আহনাফ কে দাড়াতে দেখে মহুয়ার আত্না শুকিয়ে গেলো। আহনাফ কি তাহলে চিনে ফেলেছে.!..?
আহনাফ দাঁড়িয়ে অন্য দিকে ফিরে বলে উঠলো, ‘ আপনি এখন আসুন।’
মহুয়াঃ স্যার আমার..

আহনাফঃ আপনাকে যেতে বলেছি….
মহুয়া চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। বাহিরে গিয়েই চোখের পানি বাঁধ মানছে না দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলো।
ওয়াশরুমে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। এতো বছর পর কি পরীক্ষায় ফেললেন আল্লাহ! একদিকে স্বামী অন্য দিকে ছেলে।

মহুয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মিমের কাছে এসে বললো, ‘ আমাদের বসে থাকলে হবে না চল আলভির জন্য শহরের সবচেয়ে বড় ডাক্তারের কাছে যাব৷ আমার ছেলেকে আমি সুস্থ করে তুলবই ওর কিছু হবে না৷ ও ছাড়া আর আছে কে আমার!..।
মিমঃ তুই কোথায় ছিলি.?

মহুয়াঃ একটু ওয়াশরুমে গিয়ে ছিলাম।
মিমঃ ডাক্তার আহনাফ চৌধুরী রাজি হয়েছে অপারেশন করাতে পাঁচ মিনিট পর শুরু হবে।
মহুয়া অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে।
মিমঃ মাহিন…
মহুয়াঃ ওর নামও নিবে না৷ ওই সাইকো জেনো হসপিটালের আশেপাশেও না আসে। এখান থেকে বের হয়ে নেই তারপর ওকে দেখে নিচ্ছি। ওর অনেক অপরাধ সহ্য করেছি আর নয়।

মেঘলা রুমে এসে দেখে শ্রাবণ ওর জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে।
মেঘলাঃ আমি এখন খাব না শ্রাবণ।
শ্রাবণঃ আজ সারাদিন কিছু খাওনি, নিজে না খেলে না খাওও কিন্তু আমার আম্মুটাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছ.?
মেঘলাঃ তোমার আম্মু এখন খাবার চাচ্ছে না।
শ্রাবণঃ দেখি..

মেঘলাঃ শ্রাবণ বাচ্চামি বন্ধ করে নিচে যাওও।
শ্রাবণঃ নিচে আমার কোনো কাজ নেই। এখন বলো মিষ্টি কখন খাওয়াচ্ছ।
মেঘলাঃ কিসের মিষ্টি!.?
শ্রাবণঃ কাল রাতে তোমার প্লেন খুব ভালোই কাজ করেছে দিন দিন সিআইডি থেকে ভিলেন হয়ে যাচ্ছ।
মেঘলা অবাক হয়ে বললো, ‘ তুমি সব জানতে!.? ‘
শ্রাবণ ভাব নিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার বউ কি করছে না করছে আমি জানবো না!.
মেঘলাঃ তুমি রাগ করোনি?

শ্রাবণঃ আমার বউ কখনো ভুল কাজ করতে পারে না নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ ছিল।
মেঘলার চোখ চিকচিক করে উঠলো মানুষটা ওকে এতো বেশি কেনো বিশ্বাস করে! একটা সম্পর্ক টিকে থাকতে হলে হয়তো এমন বিশ্বাস প্রয়োজন, ঠিক এতোটাই বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন গলায় ছুরি ধরার পরও বলবে তুমি আমাকে মারতে পারো না! আজ হয়তো এই বিশ্বাস টুকু আহনাফ মহুয়া কে করলে, মহুয়া ওর থাকতো..
মেঘলা চোখ বন্ধ করে কাল রাতের কথা ভাবলো।

ফাহিম কে কল দিয়ে পাঠিয়ে ছিল কিছু গুন্ডা ভাড়া করতে আর নিজে গিয়ে ছিল এলিনার কাছে। ভয় দেখিয়ে ছিল যদি বিয়ে করে তাহলে ওর সব কুকর্মের ভিডিও ভাইরাল করে দিবে, ভিডিও দেখালো ভয়ে চুপসে গিয়ে ছিল এলিনা। মেঘলা ঠিক যেভাবে বলেছে এলিনা ঠিক সেভাবে আজ অভিনয় করেছে।

শ্রাবণের ডাকে ফিরে তাকালো মেঘলা। শ্রাবণ ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে খাবার মুখের সামনে ধরলো।
মেঘলাঃ তুমি অফিসের কাজ সামলে সারাদিন রাত আমার পেছনে পেছনে ঘুরতে বিরক্ত হও না!.?
শ্রাবণঃ বিয়ের পরও তিনটা বছর পিছে পিছে ঘুরিয়ে ছিলে, একি ছাঁদের নিচে থেকেও হাতটা ধরতে দাওনি এখন এইসব আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। এই পিছু ঘুরা মৃত্যুর আগে ছাড়ছি না।

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ৩

মেঘলা হেঁসে শ্রাবণের গালে কিস করলো।
শ্রাবণঃ তুমি এতো কিপ্টে কেনো বউ!?
মেঘলা এসে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরলো।

মেঘের আড়ালে রোদ সিজন ২ পর্ব ৫