মেহরিনের সপ্নরঙ গল্পের লিংক || মির্জা সূচনা

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ১
মির্জা সূচনা

ঝিরঝিরে নদীর ধারে, যেখানে ফুলেরা হাসছে আর পাখিরা গান গাইছে।
আমার পরনে হালকা গোলাপি রঙের একটা ফ্লোরা ড্রেস,
চুল খোলা, হাতে একটা ছোট্ট ময়ূরপঙ্খি ঘুড়ি।
সেই ঘুড়িটা উড়াতে উড়াতে হঠাৎ আমি পড়ে গেলাম এক নরম ঘাসে—
আর সেখানেই, এক ছায়া এগিয়ে এলো আমার দিকে…
সে আমারর হাতটা তুলে নিলো খুব যত্ন করে।
তার চোখে ছিলো গভীরতা, শান্তি আর ভালোবাসার নিঃশব্দ ভাষা।
আমার রাজকুমার।
সে আস্তে করে বলল—

“তুমি অনেকদিন ধরে আমার স্বপ্নে ছিলে, Mehrin।
আজ আমি তোমায় নিয়ে যাবো আমার রাজ্যে—
যেখানে কষ্ট নেই, অভিমান নেই,
শুধু তুমি আর আমি, আর আমাদের ভালোবাসা।”
সে আমার কপালে একটা মায়া মাখানো চুমু দিলো,
আর বলল—
“তুমি আর হারাবে না, Mehrin।
আমি তোমার জন্যই আছি,
এই জীবন, এই স্বপ্ন, সবই তোমার নামে…”
আর আমি?
আমি তখন চোখ বুঁজে, একটা ছোট্ট হাসি মুখে বললে—
“তাহলে চলো, রাজকুমার…
তোমার রাজ্য হোক আমার ভালোবাসার ঘর।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই স্বপ্নটা যদি সত্যি হয়ে যেত,
আমি কি রাজি থাকতাম সেই ঘরের রানী হয়ে সারাজীবন?
তখন ভোরের আলো ছুঁই ছুঁই করছে,
Mehrin তখনো ঘুমে ভেসে—
তার রাজকুমারের হাত ধরে,
নৌকায় করে স্বপ্নের রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে…
ঠিক তখনই—
Mehbuba এল আর বলল,
“Uth! ফজরের আজান হয়েছে!”
আর ব্যস!
স্বপ্নভাঙা চিৎকারে বিছানা থেকে পড়ে গেল Mehrin!
কোমরে ব্যথা, মুখে রাগ, আর চোখে পানি…

Mehrin: “তুই ডাকলি কেন?! কই আগুন লাগছে?! কোন মহাভারত অশুদ্ধ হইছে?! কার জামাই মরছে হে? এমন কী হইছিলো যে তুই আমার স্বপ্ন ভেঙে দিলি?! আমার রাজকুমার হারাই গেল রে!”
Mehbuba (হেসে কাত): “তোর রাজকুমার ফজরের সময় হাওয়া হয়ে যায় বুঝলি! নামাজের সময় হইল, আর তুই এখনো রাজকুমার নিয়ে নৌকা ভাসাচ্ছিস!”
Mehrin (আহাজারি শুরু):
“মা গো… কোমরটা গেল! এই মেয়ে আমার জীবনটা শেষ কইরা দিলো! আর কখনো স্বপ্নে রাজকুমার আইবো না!”
Mehbuba (ভ্যাবলা গলায়):
“একটা স্বপ্নের পোলা নিয়া এত কিচিরমিচির? আবার আইবো তোর রাজা, বলবি আমি তোকে ডাকি নাই— ঘড়ি ডাকে!”
Mehrin:
“ঘড়ি ডাকে, তুই না ডাকে—তুই মোরে জ্বালাইছিস! আমার মন পোড়ায়া দিলি, স্বপ্ন পোড়ায়া দিলি, কোমর ভাঙাইয়া দিলি!”

Mehbuba (হাসতে হাসতে):
“তোর কোমর ভাঙে নাই, নাটক করিস! আর তুই যদি এখনি নামাজ না পড়িস, তোর রাজকুমার আর আসবে না, মহারানী ভিক্টোরিয়া !”
তখন ওদের মা মালিহা মির্জা এসে দেখে দুই বোন একজন বিছানার কোণে বসে কোমরে হাত দিয়ে আহাজারি করছে,
আরেকজন বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
মা:
“তোমরা দুইজন একসাথে না থাকলে এমন হইত?
একজন স্বপ্নে রাজকুমার খুঁজে,
আরেকজন ওরে স্বর্গ থেকে নামায়!”
শেষমেশ,
Mehbuba এসে একটু হেসে বলল—

“আচ্ছা, চা বানিয়ে দিচ্ছি, তোর রাজকুমার চা খেয়ে আসুক স্বপ্নে!”
আর Mehrin একটু গোমড়া মুখে বলল—
“তুই চা দিবি, আর আমি তাতে মিষ্টি দিব না!”
হাসি-মায়ায় ভরা দুই বোনের এই মিষ্টি ঝগড়াটা
দিয়েই ওদের সকালের সূচনা হলো…!
একদম যেন সিনেমার মতো সকাল শুরু হলো!
ঝগড়া, কান্না, কোমর ব্যথা—সব শেষে মা এসে বললেন:
“চলো, আগে নামাজ পড়ে ফেলো। আল্লাহর কাছে চাও, তোমার রাজকুমার আবার যেন ফিরে আসে তোমার স্বপ্নে…”
Mehrin তখনো একটু গোমড়া মুখে,
তবু চোখে একটা শান্তি, মনের কোথাও একটা শান্ত অঙ্গীকার—
“আল্লাহকে দোয়া করে নেই, হয়তো তার রাজকুমার আবার আসবে আজ রাতে…”
তখন তিনজনেই নামাজে দাঁড়াল,
সেই নিঃশব্দ প্রার্থনায় ভরে উঠল ঘরটা।
Mehrin মন দিয়ে বলল—
“হে আল্লাহ, আমার আমার মা-বাবা ভাই বোনকে সবসময় ভালো রেখো । আমাদের উপর তোমার রহমত বর্ষিত করো। আর আমার রাজকুমার যেন সব সময় আমার কাছেই থাকে। স্বপ্নে হোক, বাস্তবে হোক—সে যেন আমায় কখনও না হারায়…”

নামাজ শেষে মালিহা মির্জা বললেন:
“আজকে তোমাদের প্রিয় আলু পরোটা আর মুরগির ঝোল বানাচ্ছি, রাজকুমার না হোক, রাজকীয় নাস্তা তো হবেই!”
Mehbuba দৌড়ে রান্নাঘরে—
“মা, আমি তোমাকে সাহায্য করে দিচ্ছি!”
আর Mehrin একটু ধীরে ধীরে হেঁটে এসে বলল—
“মা, আমি চা বানাবো… কিন্তু চিনি কম দিবো Mehbuba র কাপটায়!”
সবাই হেসে উঠল।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে—
মালিহা মির্জা ওদের বাবা ফিরোজ মির্জা , Mehrin, Mehbuba আর ছোট ভাই Mahir সবাই মিলে নাস্তা করে নিল,খাওয়া শেষে সবাই চায়ের আড্ডায় বসলো!
এক চুমুকে গরম চা খেতে খেতে হাসছে, ঠাট্টা করছে,

আর Mehbuba হঠাৎ বলল:
“আজ রাতের ঘুমে তোর রাজকুমার আবার আইব কিনা জানি না,
তবে যদি আসে—তারে বলিস, আমারে যেন না ভুলে!”
Mehrin হেসে বলল—
“তারে আমি বলব, তুই যেন ডাকিস না আবার!” ওদের খেয়াল ছিল না যে খাবার টেবিলে শুধু ওরা নয় বাবা আর ওদের বিচ্চু ভাই টাও আছে!”
ফিরোজ মির্জা মেয়েদের দুষ্টুমি দেখে মৃদু হাসলেন!
চায়ের ঘ্রাণে মিষ্টি হাসির ভেতর,
হঠাৎই চুপচাপ পরিবেশটা কেঁপে উঠল এক গলায়—
“বড়ো আপু, ছোটো আপু! তোরা কার কথা বলস?”
এটা হচ্ছে ওদের the Great ছোট ভাই Mahir! ওরফে মাহির মির্জা
একটা শয়তান, কিন্তু বোনদের খুব ভালোবাসে , দুই বোনের কলিজার টুকরা মাহির ।
ওর চুলগুলো এলোমেলো, চোখে ঘুম ঝাপসা,
কিন্তু মুখে সেই দুষ্টু হাসি—
যেটা দেখলেই বোঝা যায় কিছু একটা নাড়া দিতে এসেছে।

Mehbuba হেসে বলল:
“তুই আবার উঠলি কখন রে Mahir?”
Mahir কুঁচকে বলল:
“আমি শুনলাম তোরা রাজকুমার, স্বপ্ন এসব বলতেছিস…
আমারে কো তো, এই রাজকুমার টা খোথাকার?”
Mehrin:
“তুই রাজকুমার বুঝবি কই, তোর রাজ্য তো মোবাইল গেমেই শেষ!”
Mahir ( গম্ভীর মুখে):
“আমি রাজকুমার না হলে কী হইছি?
তোরা কি আমাকে স্বপ্ন থেকে বাদ দিয়ে দিলি?”
Mehbuba (মাথায় টোকা দিয়ে):
“তুই তো আমাদের রাজপুত্তুর!
তুই থাকলেই আমাদের রাজ্যে হাসি আসে রে পাগল!”
Mahir তখন গলায় হাত দিয়ে নাটক করে বলল—
“তাহলে আমার জন্য একটা স্বপ্ন বানা,

যেখানে আমি নায়ক,
আর তোরা আমার রাজ্যর দুই রানী!”
তিনজনেই হেসে কুটিকুটি—
আর মা দূর থেকে বললেন:
“তোমরা এখন তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করো, স্বপ্ন পরে দেখা যাবে—
নইলে এই রাজ্যের রান্না ঠান্ডা হয়ে যাবে!”
হাসি, ঠাট্টা আর একরাশ ভালোবাসায় ভরে উঠল সেই সকালটা।
নাস্তা শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যার যার রুটিনে।
বাবা অফিসের জামা পরে এসে ঘড়ি দেখলেন—
“এই যে, দেরি হয়ে যাচ্ছে… আমায় আর কেউ বিদায়ও জানায় না আজকাল!”
Mehrin হাসতে হাসতে বলল:
“আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে… আসেন আমরা তিনজন একসাথে বলি!”
তিন ভাই-বোন মিলে দুহাত উঁচু করে বলে উঠল—
“Bye Baba! ভালো করে যাইয়েন, তাড়াতাড়ি ফিরবেন!”
বাবা (হেসে):

“আচ্ছা, তাড়াতাড়ি ফিরব, আজকে সবাই খুব মিষ্টি লাগতেছে!”
আর তারপরেই শুরু হয় দৌড়ঝাঁপের প্রস্তুতি।
Mehrin ইউনিভার্সিটির ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে চুল গুছায়,
মালিহা মির্জা বলে—
“ভুলে যাস না, তোদের দুপুরের খাবার আমি রেঁধে রাখবো।”
Mehrin (চোখ টিপে):
“Rajkumar আসলে খাওয়ায় নেমে যাবো, না হলে খাই না!”
Mehbuba হাসে, আর Mahir আবার বলে ওঠে—
“তুই রাজকুমার খুঁজ, আমি নাম্বার খুঁজি!”
সবাই শেষ মুহূর্তে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে,
মা-এর গলায় একটা শান্ত ডাক—
“আল্লাহ হাফেজ বাচ্চারা, সাবধানে যেও!”
তিনজনেই একসাথে:

“আল্লাহ হাফেজ আম্মাজান !”
আর এভাবেই…
একটা রঙিন সকাল, একেকজনের গন্তব্যে রওনা দেয়।
Mehrin ইউনিভার্সিটি,
Mehbuba কলেজে আর Mahir স্কুলে,
বল তো, Varsity যাওয়ার পথে Mehrin কি আবার স্বপ্নের কথা ভাববে?
ঠিক সেই সময়েই,
Mehrin-এর ফোনটা বেজে উঠল—
স্ক্রিনে নামটা জ্বলজ্বল করছে—
“Chumki Calling…”
Mehrin হালকা হেসে ফোনটা রিসিভ করতেই,
ওপাশ থেকে চেনা এক উৎসাহভরা কণ্ঠে—
Chumki:
“কই তুই? আমি তো এখনই পৌঁছে যাচ্ছি ভার্সিটির কাছাকাছি! তুই আসলি না এখনো?”
Mehrin (হেসে):
“আসছি রে, আমি বাস এ!

আজকে একটা দারুণ স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠলাম… আমার রাজকুমার আসছিলো !”
Chumki (চোখ রাঙানোর ভঙ্গিতে):
“স্বপ্ন পরে বলিস, আগে আয়! ক্লাসে বসলে আগে তোর রাজকুমার গল্প শুনব!”
Mehrin:
“হুম ঠিক আছে, ক্লাসে মুখোমুখি হলে বলব—তবে দোষ কিন্তু Mehbuba র!
স্বপ্নটা ভাঙায় দিল ও!”
Chumki (হাসতে হাসতে):
“তোদের দুই বোনের কাহিনি শুনলেই আমার দিন শুরু হয়!
চল আয়, গেটে দাঁড়িয়ে থাকি, একসাথে ঢুকি!”
Mehrin:
“অপেক্ষা কর, আরেকটা কথা… আজকে আমার মন খুব ভালো রে, জানিস?”
Chumki:

“তাই নাকি? তাহলে আজকে একটাও ক্লাস মিস করা যাবে না, মন ভালো মানেই নতুন গল্প!”
বাস থামে, Mehrin নেমে পড়ে, চোখে-মুখে একটা আলাদা ঝিলিক…
চুমকি আর মেহরিন—অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, সাবজেক্ট ইকোনোমিক্স।
তাদের বন্ধুত্ব শুরু স্কুল জীবন থেকে।
স্কুলের বেঞ্চে একসাথে বসা, কলেজের করিডোরে একসাথে হাঁটা—
সব ধাপে ধাপে যেন এক সুরে বাঁধা ওদের গল্প।
ভাগ্য যেন ওদের আলাদা করতেই চায় না।
স্কুল, কলেজ পেরিয়ে এবার ইউনিভার্সিটিতেও তারা একসাথে।
যার সাথে প্রতিটা স্মৃতি যেন রঙিন হয়ে ওঠে।
তাদের বন্ধুত্বটা আজ এত গভীর হলেও শুরুটা ছিল একেবারে উল্টো—
ঝগড়া দিয়ে!

স্কুলে প্রথম দিনই ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু হয়েছিল তুমুল ঝামেলা।
মেহরিনের জলরঙে আঁকা ছবি না বলে নিয়ে গিয়েছিল চুমকি,
আর মেহরিন রাগে কেঁদেই ফেলেছিল ক্লাসে!
কিন্তু সেই ঝগড়াই যেন ধীরে ধীরে জমে উঠল এক মজার বন্ধুত্বে।
একটা চকোলেট, একটা হাসি, আর অনেকগুলো ‘সরি’ মিলিয়ে গড়ে উঠল এমন একটা সম্পর্ক,
যেটা স্কুল পেরিয়ে কলেজ, আর এখন ইউনিভার্সিটিতেও রয়ে গেছে অটুট।
ভাগ্যের আশ্চর্য খেলায় তারা আজও একসাথে—
নতুন ক্যাম্পাস, নতুন স্বপ্ন, কিন্তু পাশে সেই পুরনো, প্রিয় বন্ধু।
চুমকি আর মেহরিন গল্প করতে করতে ইউনিভার্সিটির মূল গেট দিয়ে ঢুকছে।
নতুন ক্যাম্পাস, নতুন রঙ, চারপাশে হাজারো মুখ—
তাদের চোখেমুখে কৌতূহল, বুকের গভীরে একটুখানি ভয়ও লুকিয়ে।
মেহরিন বলছে,

“এই জায়গাটায় প্রতিদিন আসবো ভাবতেই কেমন জানি লাগছে না?”
চুমকি হেসে বলে,
“হ্যাঁ রে! তুই থাকিস তো পাশে, আমি দিব্যি চালিয়ে নেবো সব।”
কথা বলতে বলতেই গেট পেরিয়ে ওরা একটু ভেতরে এগোয়,
ঠিক তখনই পিছন থেকে ভেসে আসে একটা কণ্ঠ—
“এই শুনো! তোমরা দুইজন, দাঁড়াও তো!”
ডাকটা আচমকা, তীক্ষ্ণ।
দুজনেই একসাথে থমকে দাঁড়ায়।
চুমকি এক দৃষ্টিতে মেহরিনের দিকে তাকায়, মেহরিনও গিলে ফেলে কথার বাকিটুকু।
“সিনিয়র!”—এই শব্দটা যেন মাথায় বাজ পড়ে।
ওরা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়।
পেছনে দাঁড়িয়ে চার-পাঁচজন সিনিয়র।
তাদের চোখে-মুখে অদ্ভুত রকমের কঠোরতা আর কৌতুক মিশ্রিত অভিব্যক্তি।
একজন বলল,

“নতুন লাগছো, নাম কী?”
আরেকজন হেসে বলল, কোন ডিপার্টমেন্ট?
চুমকি কি বলল : ইকোনোমিক্স
“ইকোনোমিক্স-এর? তাহলে তো র‍্যাগিং ছাড়া ছাড় নেই!”
চুমকি আর মেহরিন এবার সত্যিই একটু ঘাবড়ে যায়।
মেহরিন আস্তে করে বলে,
“এই যে শুরু হয়ে গেল…”
চুমকি আর মেহরিন থেমে দাঁড়াতেই সামনে থাকা সিনিয়ররা হেসে ওঠে।
একজন বলে,
“নতুন মুখ! ভয় পেয়েছো নাকি?”
আরেকজন চোখ ছোট করে জিজ্ঞেস করে,
“ইকোনোমিক্সের স্টুডেন্ট, তাই তো? তাহলে তো আজকে একটু স্পেশাল ট্রিটমেন্ট হবেই!”
চুমকি একটু পেছনে সরে যায়, মুখে চাপা দুশ্চিন্তা।
কিন্তু মেহরিন হঠাৎ একটু এগিয়ে এসে দৃঢ়ভাবে বলে ওঠে—
“আমরা তো আপনাদের ছোট। আমাদের দেখে’ই আমরা শিখবো তাই না আপনারা হবে’ন আমাদের আইডল। আপনারা

ভালো কিছু শিখাবেন সেটা না করে উলটো র‍্যাগ দিচ্ছেন!”
তার কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্য সিনিয়ররা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ।
হঠাৎ সবাই একে একে উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।
মেহরিনের স্পষ্ট আর আত্মবিশ্বাসী কথায় মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল সিনিয়ররা,
কিন্তু পরের মুহূর্তেই ওদের মুখে এক অদ্ভুত দুষ্টু হাসি ফুটে ওঠে।
একজন ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি রেখে বলে,
“বাহ! তুমি তো দেখি বেশ ভালো কথা বলতে পারো।
তাহলে দেখাই যাক, কাজেও ততটাই ভালো কিনা!”
আরেকজন চোখ টিপে বলল,
“এই সাহসিকতার দাম দিতেই হবে, বুঝলে ছোট্ট আপু!”
চুমকি এবার সত্যিই একটু ভয় পেয়ে যায়।
সে আস্তে করে মেহরিনের হাত চেপে ধরে বলে,
“তুই একটু বেশিই বলে ফেললি মনে হচ্ছে!”
কিন্তু মেহরিন মুখ শক্ত করে বলে,

“যা ঠিক, সেটা বলতেই হবে। ভয় পেলে ওরা আরও বাড়াবাড়ি করবে।”
সিনিয়রদের একজন একটু সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“চল, তোমাদের একটা ছোট্ট টাস্ক দিই।
দেখি কতটা সাহস তোমার!”
মেহরিন এবার চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, চোখে একরকমের জেদ।
তার মুখে কোনো ভয় নেই, শুধু অপেক্ষা—
সিনিয়ররা কী চায় তা শোনার।
সিনিয়রদের একজন এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,
“এই যে, ওখানে লাইব্রেরির কর্নারে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখছো?
তাকে গিয়ে একটা কাজ করতে হবে তোমার।”
মেহরিন কৌতূহলী হয়ে তাকায়।
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে—একজন ছেলেও ঠিক ওদের বয়সী নয়,
গম্ভীর মুখে বইয়ের পাতায় চোখ রেখে চুপচাপ বসে আছে।
সেই সিনিয়র এবার মেহরিনের হাতে একটা ছোট্ট লাল গোলাপ দিয়ে বলল,

“এই ফুলটা ওকে দিয়ে আসবে।
তবে শুধু দিয়ে এলেই হবে না,
তাকে ছন্দে ছন্দে প্রপোজ করতে হবে!”
চুমকি একেবারে থতমত খেয়ে গেল,
“কি বলছো? প্রপোজ?”
আর মেহরিন চোখ বড় বড় করে বলে উঠল,
“প্রপোজ তাও আবার ছন্দে ছন্দে ? আমি কবি নাকি!”
সিনিয়ররা হেসে গড়িয়ে পড়ে,
“তোমার মুখে এত বড় বড় কথা শুনেছি, এখন দেখি সাহস কতটুকু!
যাবে তো?”

মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।
তার চোখ ধীরে ধীরে চলে যায় সেই ছেলেটির দিকে।
সে তখনও কিছু টের পায়নি, আপন মনে বইয়ে ডুবে।
সিনিয়ারদের কথা শুনে মেহরিন যখন রাগে আর অস্বস্তিতে মুখটা গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে ছিল,
ঠিক তখন চুমকি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল—
“এইটা তো তুইই পারবি!
ছন্দ তো তোর হাতের খেল।
তোর রাজকুমারকে নিয়ে কত ছন্দ শুনিয়েছিস আমাকে,
একটা সেখান থেকে বলে দে, না করিস না মেরি মা!”
মেহরিন চোখ বড় করে তাকায়, রাগী কন্ঠে বলে
“চুপ কর! ওটা তো ছিল আমার কল্পনার রাজকুমার… এটা তো রিয়েল মানুষ!”
চুমকি হেসে বলে, এমনও তো হতে পারে
“যার জন্য ছন্দ লিখিস সে যদি বাস্তবেই বসে থাকে সামনে, তাহলে কি আর চিন্তা?
তোর তো ভালোই হলো!”
মেহরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড,
তার মুখে একটু বিরক্তি, কিন্তু চোখে অদ্ভুত এক জেদ।
হঠাৎ সে দুষ্টু হেসে বলল,

“আচ্ছা, যেহেতু সাহসের কথা বলেছে,
তাহলে সাহস দেখাতেই হবে।
আর ছন্দ তো আমি তো ছন্দের রানি!”
সে ফুলটা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে লাইব্রেরির কর্নারের দিকে এগোতে থাকে—
এক হাতে চুমকির জোর করা, অন্য হাতে নিজের অদম্য আত্মবিশ্বাস।
আর প্রতিটি ধাপে ধাপে ধীরে ধীরে গাঁথা হতে থাকে—
মেহরিন ধীরে ধীরে পা ফেলে লাইব্রেরির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
হাতের তালুতে ধরা লাল গোলাপটা যেন তার বুকের ধাক্কাধাক্কির ছন্দ বুঝে কাঁপছে।
চুপচাপ লাইব্রেরিতে ঢুকে তার চোখ চলে গেল কোণার টেবিলটার দিকে।
সেই টেবিলে এক ছেলেকে বসে থাকতে দেখল—
গম্ভীর, শান্ত, চোখ দুটো বইয়ের পাতায় ডুবে।
ছেলেটির পরনে হালকা নীল শার্ট, হাতে একটা ঘড়ি,
আর তার চুলগুলো এলোমেলোভাবে চোখের ওপর পড়ে আছে—
যেন বিনা চেষ্টায়ও ছেলেটার মধ্যে একটা ভিন্ন ধরণের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।
মেহরিন এক পা… তারপর আরেক পা এগিয়ে যায়।
তার মনে হচ্ছে আশেপাশের শব্দ যেন থেমে গেছে,
শুধু তার দমবন্ধ করা নিঃশ্বাস আর বুকের শব্দ বাজছে।
চোখের সামনে শুধু একটিই দৃশ্য—

সুদর্শন, শান্ত, চোখ দুটো বইয়ের পাতায় ডুবে, যেন বাইরের জগতের অস্তিত্ব নেই।
তার বুক ধকধক করছে, মেহেরিন যেন কোন অজানায় তলিয়ে গেল আনমনে পা বাড়ায়।
একটা… দুটো… তারপর একটু থামে।
আরও কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ছেলেটি মাথা তুলে তাকায়।
চোখে চোখ পড়তেই মেহরিন থমকে যায়।
তার মুখে অজান্তেই একরাশ কোমলতা, চোখে বিস্ময়, আর ঠোঁটে ধরা পড়ে এক ঝাপসা হাসি।
ঠিক সেই মুহূর্তে, কোনো কিছু না ভেবে,
আনমনেই সে বলে ফেলে ছন্দটা—

“তুমি কি সেই রাজপুত্র, স্বপ্নে যে আসে,
চোখে তাকালেই মনটা হঠাৎ কেঁপে যায় পাশে?
এই গোলাপটা রাখো, মনে রেখো নাম—
মেহরিন, যার গল্পে তুমিই ছিলে প্রণামের মূল নাম!
ছেলেটি——চুপচাপ তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
তার চোখে যেন বিস্ময়ের এক সমুদ্র,
কিন্তু মুখে একটুও বিরক্তি নেই—
বরং ঠোঁটের কোণে একটুকরো প্রশ্রয়ের হাসি।
ঠিক তখনই পেছন থেকে সিনিয়রদের খিলখিল হাসির শব্দ আসে—

“ওফফ! ভাইরে ভাই, ছন্দ শুনে প্রেমে পড়ে যাই যেন!”
আর চুমকি মুখ চেপে হাসি সামলাতে সামলাতে বলে,
“তোর এই রাজপুত্র কিন্তু ভয়াবহ সুদর্শন রে!”
মেহরিন পেছনে ফিরে চুমকির দিকে তাকিয়ে একটু চোখ বড় করে তাকায়,
আর তারপর

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ২