মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ১২

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ১২
মির্জা সূচনা

রিদ ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তার মা, সাবিহা তালুকদার। হাতে দুটো কফির মগ। একটায় ধোঁয়া উঠছে, অন্যটায় কিছুক্ষণ আগেই ঢেলে রাখা কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে।
— মা! তুমি… কখন এলে?
সাবিহা একটু হাসলেন।
— তুই মেহরিনের সাথে যখন কথা বলিস, তখন তোর গলার সুরটাও বদলে যায়, রিদ।
রিদ থতমত খেয়ে গেল।
— তুমি… সব শুনে ফেলেছো?
— কিছু বলার ছিল না, রিদ। শুধু অনুভব করছিলাম… আর আজ শুনেও ফেললাম। মায়ের মন তো এমনই।
সাবিহা কফির কাপটা বাড়িয়ে দিলেন।
— নাও, ভালোবাসা যেমন উষ্ণ, কফিও তেমন উষ্ণ থাকা দরকার।
রিদ কফির কাপ নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সে কিছু না বললেও, তার চোখ দুটো মায়ের চোখে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যায়।

রাত ১২টা পেরিয়ে গেছে।
রিদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে। মায়ের চোখে চোখ রাখার সাহস করছে না। কিন্তু হঠাৎই সে এগিয়ে গিয়ে মায়ের হাতটা ধরে।
— মা… আমি মেহরিনকে বিয়ে করতে চাই।
সাবিহা তালুকদার অবাক হন না, বরং চোখে একরাশ কোমলতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন ছেলের দিকে। তারপর হালকা হেসে বলেন,
— মেহরিন মেয়েটা কে আমিও খুব পছন্দ করি, রিদ। প্রাণবন্ত, মায়া আছে চোখে, আর তোকে বদলে দিতে পারার ক্ষমতাও আছে।
রিদ মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে—প্রথমবার নিজের আবেগটা এত স্পষ্ট করে বলেছে।
সাবিহা আবার বললেন—
— তুই যেহেতু চাস, আমি তো আছি তোদের পাশে। তবে… একটা কথা মনে রাখিস—ভালোবাসা টিকে থাকে দায়িত্বে। তুই আগে নিজে নিজের জায়গায় দাঁড়া, নিজের পরিচয় গড়। তারপর শুধু মেহরিন নয়, এই সংসারও তোর ওপর নির্ভর করবে।
রিদ মাথা নিচু করে বলে—

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “আমি পারবো, মা। আমি নিজেকে প্রমাণ করবো। শুধু তুমি পাশে থেকো।
সাবিহা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
— আমি সবসময় তোর পাশে আছি, বাবা।
কেটে গেছে আরো বেশ কিছুদিন। মেহেরিন এখন পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু কবি সাহেব আর এসএমএস করেনি পাঠাই’নি তার প্রেমময় কাব্য। তবে রিদের সাথে মেহেরিনের সম্পর্কটা এখন সহজ হয়েছে, আগের মত আর জরতা কাজ করে না কথা বলার সময়।

মেহরিন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত। রোগ-শোক কাটিয়ে আবার ইউনিভার্সিটির প্রাণ হয়ে উঠেছে সে।
গরম দুপুরের ক্লান্ত ক্লাসঘর। Economics 1st Year-এর ছেলে মেয়েরা চুপচাপ বসে আছে। স্যারের আসার সময় হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও কেউ জানে না এই ক্লাসটা কতটা অন্যরকম হতে যাচ্ছে।
হঠাৎ দরজায় নরম গলায় কড়া নড়ে।
রফিকুল ইসলাম স্যার, যিনি সবসময় একটু গম্ভীর, আজ একটু হেসে ক্লাসে ঢুকলেন।
তোমাদের জন্য একটা good news আছে।
ক্লাসে হঠাৎ গুঞ্জন শুরু হলো।
স্যার চেয়ার টেনে বসলেন, সবার দিকে তাকিয়ে বললেন—

প্রতি বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়। এবারও সেই সফর হচ্ছে। তবে বিশেষভাবে শুধু 1st Year আর Final Year এর জন্য।
চুপচাপ বসে থাকা মেহরিনের চোখ এক লাফে চমক নিয়ে চুমকির চোখে পড়ে।
চুমকি ফিসফিস করে বলে, মানে… আমরা যাচ্ছি! আর রিদ ভাইয়ারাও!
স্যার সামনে তাকিয়ে বললেন,
তোমাদের গন্তব্য হবে মহাস্থানগড়, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র। তিনদিনের সফর, বিভাগের তত্ত্বাবধানে। যারা যাবে, তারা শুধু দর্শক হয়ে নয়—তোমাদের কাজ থাকবে কিছু বিষয়ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ আর রিপোর্ট তৈরি করা। এটা পড়াশোনারই একটা অংশ, বুঝলে?

এই কথা শোনার পরেও সবাই খুশিতে মাতোয়ারা।
রাফি পেছন থেকে বলে উঠল, স্যার, কি মজা! রীতিমতো একটা জম্পেশ অ্যাডভেঞ্চার হবে।
স্যার হেসে বললেন, “হ্যাঁ, তবে মজা করতে হলে দায়িত্বও নিতে হবে। কালকের মধ্যে তোমাদের নাম জমা দেবে—তিনটি বড় টিমে ভাগ করা হবে তোমাদের। প্রত্যেক টিমে ৩০ জন করে সদস্য, এবং ৫ জন করে লিডার থাকবে।
ক্লাস শেষ হতেই মেহরিন ক্যাম্পাসের পুরনো গাছটার নিচে বসে। মাথায় আজও রোদ, কিন্তু মনটা যেন রোদভরা নরম এক মেঘে।
চুপচাপ আস্তে পেছন থেকে চুমকি এসে বলে,

মেহু… তুই জানিস, আমরা কিন্তু তিন দিনের জন্য যাচ্ছি। তিনদিন, বুঝলি?
মেহরিন তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে, তা জানি। তাই বলে এভাবে চোখ কপালে তুলে বলছিস কেন?
চুমকি দম নিয়ে বলে, মানে বুঝিস না! তিনদিন মানে—সঠিক সাজার, ফটো তোলার, আর নতুন জামা পরার সুযোগ! আর মানে—আজই শপিং-এ যেতে হবে!
মেহরিন হেসে বলে, তুই না পুরাই ক্রেজি! সফরে যাচ্ছি বিয়ে তে না পাগল তুই জামাকাপড়, নিয়ে পরলি কেন?
চুমকি মুখ ফুলিয়ে বলে, উফ মেহু, তুই কিছু বুঝিস না! এই ক’দিন পরেই তো তোর প্রিয় জায়গা মেহু-চুমকি জুটির স্বপ্নের সফর, আর তুই শান্ত হয়ে বসে আছিস? আমার যে কী আনন্দ লাগতেছে, বুঝলি? কতদিন পর ট্রিপে যাব, এই ভাবতেই গা শিরশির করছে।
মেহরিন এবার একটু ধীরে হাসে, চোখটা ঘুরিয়ে নেয় দূরে, আমারও ভালো লাগছে চুমকি… অনেকদিন পর কোথাও যাবো।

চুমকি ঝট করে বলে, তাহলে কথা পাক্কা—আজ বিকেলে বের হব! আমি, তুই, আর আমাদের লিস্ট!
লিস্ট? মেহরিন অবাক।
চুমকি বলল, “হ্যাঁ! নতুন ব্যাগ, জামা, চশমা, সানস্ক্রিন, স্ন্যাকস… আর একটা ছোট্ট ‘ভ্রমণ ডায়েরি।
মেহরিন মুখ নিচু করে মুচকি হাসি দেয়,
তুই যেন বেশি বুঝিস আজকাল…
চুমকি কানে কানে বলে, আর হ্যাঁ, ডায়েরিতে ‘কাউকে’ নিয়ে লিখে ফেলিস—আমি কিন্তু দেখে ফেলব!
দুজনেই হেসে উঠে।

আকাশের নিচে আজ ওরা দুজনের বন্ধুত্ব আরও একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ঠিক যেন সেই সূর্যের মতো, যা সামনে তিনদিনের সফরে ওদের পিছু নেবে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই মেহরিন আর চুমকি বের হয়ে পড়ে শহরের পরিচিত এক শপিং মলে।
চুমকির হাতে একটা ছোট্ট নোট—তালিকা সাজানো, যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি।
প্রথমেই ব্যাগ নেব। সফরে গেলে ব্যাগটা সব! Stylish আর টিকাও থাকতে হবে!
চুমকি বলল, চোখ বড় বড় করে।
মেহরিন হেসে বলল, তুই ব্যাগ কিনছিস, না বরং ব্যাগকে বিয়ে করবি?
চুমকি মুখ ফুলিয়ে বলল, তুই বুঝবি না মেহু, ব্যাগও একটা স্টেটমেন্ট!

মেহরিন হেসে হালকা লালচে একটা ক্যানভাস ব্যাগ দেখাল, এইটা কেমন? একেবারে ট্র্যাভেল ফিল!
চুমকি ব্যাগটা নেড়ে দেখে বলল, তোর জন্য পারফেক্ট। রিদ ভাই যদি দেখে, নিশ্চয় বলবে—গুড চয়েস।
মেহরিন কাশির ভান করে মুখ লুকিয়ে নেয়, উফ, তুই থামবি?
চুমকি হেসে দৌড় দেয় চুড়ির স্টলে। রঙিন কাঁচের চুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
এইটা পরলে, জোশ ছবিগুলা আসবে! কল্পনা কর—তিনদিন, গোধূলি বেলা, নদীর ধারে… ঝুমঝুম চুড়ির শব্দ!
মেহরিন পাশে দাঁড়িয়ে সাদা রঙের ছোট্ট এক জার্নাল তুলে নেয়।
চোখে অদ্ভুত এক শান্তি।
চুমকি পেছন থেকে দেখে বলল, জার্নাল! মানে আবার ভ্রমণকাহিনি লিখবি?
মেহরিন হালকা হেসে বলল,

হ্যাঁ, হয়তো কিছু বিশেষ মুহূর্ত… কিছু না বলা কথা… কেউ চাইলে পড়েও ফেলতে পারে।
চুমকি চোখ টিপে বলল, তবে লুকিয়ে রাখিস! আমি কিন্তু সন্ধ্যায় গোপনে ব্যাগ চেক করব!
দুজনের হাসি ছড়িয়ে পড়ে পুরো দোকানে।
শপিং ব্যাগে ব্যাগ, জামা, চুড়ি, চশমা, কিছু দুষ্টুমি—আর অজান্তেই ভরে যায় কিছু রঙিন স্বপ্ন।
পরদিন সকালটা যেন একটু বেশিই রোদের।
চুপচাপ ক্যাম্পাসের অফিস বিল্ডিংয়ের দিকে হাঁটছে মেহরিন আর চুমকি। হাতে খাম—ভেতরে সফরের জন্য নির্ধারিত টাকা।
চুমকি মুখে গম্ভীর ভাব এনে বলল,

তুই টাকা ঠিকমতো গুনে রাখছিস তো? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না এইবার সত্যিই যাচ্ছি।
মেহরিন কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “দু’বার গুনে রাখছি! এখন দয়া করে চুপ করে থাক।
ঠিক তখনই সিঁড়ির মাথায় হঠাৎ দেখা মিলে তিনজন ছেলেকে।
চিনতে একটুও সময় লাগে না—রাকিব, শান্ত, আর… রিদ।
তিনজনই হাতে কিছু কাগজ, মনে হয় টিম-মেম্বারদের তালিকা যাচাই করছে।
চুমকি ফিসফিস করে বলে, ও মা! দেখছিস? রিদ ভাই…
রাকিব চোখ তুলে দেখে বলে, আরে চুমকি যে কোথায় যাচ্ছ? মেহরিন ম্যাডামও তো সঙ্গে!
শান্ত হেসে বলে, চুমকির দিকে তাকিয়ে বলে তোমরা টিম-৩-এর মেম্বার।
চুমকি একটু কৌতূহল নিয়ে বলে, মানে? টিম-৩?

তখন রিদ ধীরে পেছন থেকে এগিয়ে আসে। গলায় স্বাভাবিক, কিন্তু দৃঢ় স্বর—
হ্যাঁ। এই টিমে ৩০ জন থাকবে। লিডার হিসেবে আমরা পাঁচজন দায়িত্বে আছি—আমি, শান্ত, রাকিব, রাফসান আর সুহান।
মেহরিন একটু চমকে তাকায়। চোখে-মুখে কিছু একটা টের পায় সে।
রিদ—সেই চুপচাপ, কম কথা বলা ছেলেটা—এবার তার সফরের অন্যতম লিডার।
রাকিব হেসে বলে, তোমরা দুজন আমাদের টিমেই পড়ছো। সময়মতো প্রস্তুত থেকো, প্লিজ! আমাদের রিদ স্যার কিন্তু সময়ের বাইরে কিছুই মেনে নেয় না।
রিদ কোনো কথা না বলে শুধু তাকায়।

তার দৃষ্টি এক সেকেন্ডের জন্য মেহরিনের চোখ ছুঁয়ে যায়। তারপর সে আবার তালিকার দিকে মুখ ফেরায়।
চুমকি আর মেহরিন মাথা নাড়ে মানে তারা লেট করবে না।
চুমকি মুচকি হেসে ফিসফিস করে, তুই দেখলি? লিডার রিদ ভাই! এখন কী করবি, মেহু?
মেহরিন ধীরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
কিছু না… সময়মতো সবই ঠিকঠাক করব। নিয়ম মেনে চলতে হবে, তাই না?
চুমকি চোয়াল শক্ত করে বলল,
ঠিক আছে, তবে এই সফরে আমি ‘রুলবুক চেকার’ হব। রিদ ভাইর সামনে তুই একবার এলোমেলো হলে—আমি কিন্তু দেখে নেব!
হাওয়ার ঝাপটায় খামের ভেতরের কাগজটাও যেন কাঁপে।
এই সফর শুধু একটি ভ্রমণ নয়—এ যেন এক অদ্ভুত গন্তব্যের শুরু।
ঘড়িতে তখন রাত ১২ টা ছুঁই ছুঁই।
ঘরের মধ্যে হালকা আলো, একপাশে সাজানো ব্যাগ, আর বিছানার ওপরে বসে আছে দুই বোন—মেহবুবা আর মেহরিন।

মেহবুবা ব্যাগের চেইন লাগাতে লাগাতে বলে,
জুতা রাখলি তো ঠিকঠাক? আর হ্যান্ডস্যানিটাইজার?
মেহরিন চুপচাপ ফোন টা রেখে বলে, রাখছি তো! তুই দেখি মা’র চেয়ে কম না!
মেহবুবা হেসে ফেলে, আরে মা হলে এমন হই না, আমি তো তোর ছোট বোন—special version!
হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যায় দুজনে।
তারপর মেহবুবা বিছানায় শুয়ে বলে,
আচ্ছা, তুই কি একটা জিনিস ভেবে দেখছিস… রিদ ভাইয়া তোকে নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবে?
মেহরিন হাত থামিয়ে দেয়। ব্যাগের জিপার খোলা, তবু সে চুপ।
তারপর আস্তে বলে, “হুম… আমরা তো এখন বন্ধু—ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। ও হয়তো সবার মতোই দেখে…
মেহবুবা তাকিয়ে থাকে বোনটার মুখে।
তারপর ধীরে বলে,

আমার কিন্তু মনে হয় না। ওর চোখে, তোর প্রতি অন্য রকম একটা মায়া যেভাবে মনোযোগ থাকে, যেভাবে হালকা করেও কিছু বলে—তা একেবারে সাধারণ না।
মেহরিন মাথা নিচু করে ব্যাগের চেইন লাগায়।
তারপর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
কিন্তু আমার মনে হয়, এটা শুধু বন্ধুত্ব আর সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই না।
মেহবুবা মুচকি হেসে বলে,
হয়তো।
মনে মনে বলে, হায়রে আমার বোকা বোন ও তোকে ভালোবাসে। কিন্তু তুই যে এখনো ওই কবি সাহেব এর মোহে আটকে আছিস। তাই হয়তো রিদ ভাইয়ের নিখুঁত ভালোবাসা তোর চোখে পড়ছে না বোন আমার।সে দিন আমি দেখেছি রিদ ভাই এর লাল চোখ দেখেছি কাউকে হারানোর ভয়। এটা শুধু বন্ধুত্ব না।
মেহরিন হেসে বলে, কি ভাবিস! বিয়ের কথা বুজি। তবে আমি বলি ওইসব ভাবনা ভুলে যা কারন তোর বড় বোনের এখনো হয় নি বিয়ে।
মেহবুবা রাগি চোখে তাকাই মেহরিনের দিকে তারপর —
দুজনে হেসে উঠে।
সকাল ঠিক ৬’টা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে যেন উৎসবের আবহ। বিশাল গেটের নিচে সারি সারি ছাত্রছাত্রী, কেউ গম্ভীর মুখে, কেউ উচ্ছ্বাসে টইটম্বুর।
মেহরিন আর চুমকি হেঁটে এসে দাঁড়ায় টিম-৩ এর পাশে। দুজনের কাঁধে ব্যাগ, চোখে রোদচশমা, আর মুখে সেই চিরচেনা দুষ্টু হাসি।
চুমকি ফিসফিস করে বলে,
আমিই কিন্তু প্রথমে বাসে উঠে জানালার পাশের সিট নিব!
মেহরিন হেসে বলে, তুই একটু পরেই রিদ ভাইয়ের ঝাড়ি খাবি, দেখি তখন কেমন ভাঁজে মুখ।
ঠিক তখনই রাকিব গলা তুলে বলে,
সবাই শুনো! টিম ৩ এর লিডাররা পৌঁছে গেছে। এবার সবাই একটা লাইনে দাঁড়াও!
রিদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে, কাঁধে ছোট ব্যাগ, হাতে টিম মেম্বারদের নামের তালিকা। চোখে চেনা কঠোরতা।
রিদ গম্ভীর স্বরে বলে,

যাত্রা ছোট না। ঠিকঠাকভাবে চলতে হবে। প্রত্যেকটা দায়িত্ব আমরা ভাগ করে নিচ্ছি, কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা—সেটা তোমাদের কাজ।
তার চোখ একবার মেহরিনের দিকে পড়ে। ঠিক তখনই মেহেরিন ও তাকাই রিদের দিকে দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।
কোনো কথা নেই, তবুও সেই এক সেকেন্ডের চাহনি যেন বলে দেয় অনেক কিছু।
চুমকি কানের কাছে ফিসফিস করে,
দেখলি? চোখে চোখ পড়লেই একদম ‘drama film vibe!’
মেহরিন মুখ ফিরিয়ে চোখ ছোট করে বলে,
চুপ কর! এসব এখন বাদ দে—বসে পরিস, বাস ছেড়ে দিলে পড়বি নিচে।
বাসে ওঠার সময় লিডাররা তালিকা মিলিয়ে উঠায়, আর সবাই দলে দলে আসন নিচ্ছে।

বাসের ইঞ্জিন তখন গর্জে উঠছে।
সবার নাম চেক হয়ে গেছে, তালিকা মিলিয়ে বসে পড়েছে সবাই। মেহরিন জানালার পাশে বসে, চুমকি পাশে, হাত গুটিয়ে বলছে,
এইবার তো শুরু হয়ে গেল রে! Let the journey begin!
ঠিক তখনই—
Excuse me! একটু সাইড দিন, আমি কিন্তু চমক আনছি….
তড়াক করে পেছন থেকে কে যেন উঠে আসে—চোখে রোদচশমা, মাথায় ছোট ক্যাপ, আর ঠোঁটে এক ঠাকুরমার মতো হাসি।
মেহরিন আর চুমকি একসাথে চিৎকার করে ওঠে,
রাহি?
রাহি দুই হাতে হাওয়ায় ঘুরিয়ে বলে,
কেমন দিলাম চমকটা? সত্যি বলতে আমার যাওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু দাদাভাইয়ের স্পেশাল রিকোয়েস্টে একদম শেষ রাতে ফাইনাল হলাম!

তুমি মনে মনে বলে : দাদাভাই আমাকে রিকোয়েস্ট করেছে এটা তো ডাহা মিছা কথা। আসল কথা আমি দাদাভাইকে কোনরকম রিকুয়েস্ট করে রাজি করিয়েছি।
চুমকি তো অবাক হয়ে বলে,
তুই… তুই কবে লিস্টে এলি?
রাহি চোখ টিপে বলে,
Secret! But guess what—আমি বাসে উঠলেই সবাইকে ফুর্তি দিতে পারব, বুঝলে?
তখন রিদ সামনে থেকে ধীরে উঠে এসে বলে,
আর এক মিনিট দেরি করলে তোকে রেখে দিয়েই চলে যেতাম।
রাহি মুখ ফুলিয়ে বলে,
উফ দাদাভাই! এত রাগ! আমি তো এসেই গেছি!”
রিদ শান্ত গলায় বলে,
এখন বেশি কথা না বলে সোজা গিয়ে বোস। বাস ছাড়বে।
রাহি এক ঝলক হেসে বলে,

“আজ্ঞে বস!” —আর সিট খুঁজে নিয়ে বসে পড়ে।
চুমকি মেহরিনের কানে কানে বলে,
তুই জানতিস না, বল তো! এটা তো একেবারে প্লট টুইস্ট!
মেহরিন একটু অবাক হয়ে, একটু হেসে শুধু বলে,
না… কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সফরটা আরও মজার হতে চলেছে।
বাস চলতে শুরু করে।
আর সেই মুহূর্তে চারপাশে শব্দ, আলো, দুলুনির মাঝেও যেন মেহরিনের মনের কোণে একটুখানি অন্যরকম কিছু দোলা দিয়ে যায়।

বাস চলতে শুরু করেছে। জানালার বাইরের দৃশ্য হেঁটে যাচ্ছে পেছনে পেছনে। কিন্তু বাসের ভেতরটা যেন একটা ছোট পৃথিবী—যেখানে প্রত্যেকটা চোখে, হাসিতে, চুপচাপ বসে থাকা ছেলেমেয়েদের মনেও কত গল্প, কত উত্তেজনা।
রাহি একটু হাফাতে হাফাতে এসে দাঁড়ায় মেহরিন আর চুমকির পাশে।
আমি কিন্তু মেহু আপুর পাশে বসব! ওই যে আমার প্ল্যানিং পার্টনার!
চুমকি হেসে বলে,
আমি জানতামই তুই বসবি! আমি তোর জন্যই জায়গা ছাড়ছিলাম।
রাহি হেসে বসে পড়ে মেহরিনের পাশে। মেহরিন বলল,
তুই সত্যি আসবি ভাবিনি রে, কিন্তু তোকে দেখে একদম সফরের শুরুটাই জমে গেল!
ওদের হাসির মাঝখানে কেউ একজন পেছন থেকে বলল,
“রাহি!”

সবাই ফিরে তাকাল। শান্ত, তার সেই চিরচেনা নরম হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে।
রাহির চোখ জ্বলে উঠল, “শান্ত ভাইয়া! তুমি এখানে ?
শান্ত হালকা মাথা নেড়ে বলল,
হুম শুনলাম তুই আসেছিস। তাই দেখা করতে এলাম। তোর মতো কাউকে রেখে সফর হয় নাকি?
রাহি আর মেহরিন মুখ টিপে হাসে কারন ওরা জানে শান্ত মূলত চুমকির সাথে বসতে এসেছে।
ওদের ভাবনা মতোই সব হলো….
শান্ত আস্তে পেছনের সিটে চুমকির পাশে গিয়ে বসে।

চুমকি একটু চমকে তাকিয়ে, কিন্তু কিছু বলে না—শুধু সামান্য এক চুল হেসে নেয়।
বাসের ভেতর যেন চারটে হৃদয়ের মাঝেমাঝি একটা ছায়া-ছায়া আবেগ ভেসে বেড়ায়।
রাহি, মেহরিন, চুমকি আর শান্ত—সবাই হয়তো বুঝছে না, কিন্তু তাদের চারজনের বসে থাকা জায়গাটা যেন বলে দেয়, সফরটা ঠিক কতটা ব্যক্তিগত হয়ে উঠতে চলেছে।
মেহরিন হঠাৎ জানালার দিকে তাকিয়ে বলে,
এই মুহূর্তটা… একদম স্বপ্নের মতো, না রে?
রাহি বলে,
আরও কত কী আসছে সামনে, দেখে নিও!
বাসের গতি বাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে গল্পও।
আর একটাই অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে—এই সফর শুধু ইতিহাস শেখাবে না, বরং ইতিহাস গড়বে নিজে থেকেই।

বাস তখন চলতে চলতে একটু থেমেছে একটা ছোট চা-স্টলে। সবাই নেমে চারদিকে ঘুরছে, কেউ চা খাচ্ছে, কেউ ছবি তুলছে, আবার কেউ ঝোপের পাশে বসে হাওয়া নিচ্ছে।
হঠাৎই রাহি এক লাফে উঠে দাঁড়ায় একটা উঁচু পাথরের উপর। মুখে দুষ্টু হাসি, গলায় ছড়ার ছন্দ।
শোনো শোনো, বাসযাত্রীরা!
এই মুহূর্তে আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করতে যাচ্ছি।
সবাই একটু থেমে তাকায় ওর দিকে।
রিদ মাথা নড়ে আর বলে আল্লাই জানে এই পাগল আবার কি বলে ।
রাহি বলে,

আমাদের মধ্যে একটা গান গাইবে। কে জানো? যার গলা শুনলে মন ভালো হয়ে যায়। যার মুখ দেখলে মন হেসে ওঠে।
যে আমার প্রিয়, চুমকির প্রিয়, সবার প্রিয় … সে আর কেউ নয়, আমাদের মেহরিন মির্জা!
চুমকি বিস্ফোরিত চোখে বলে,
রাহি! কি দিলি রে জিও…
মেহরিন তো একেবারে মুখ লাল করে তাকায়,
তোর মাথা খারাপ নাকি?
কিন্তু চারদিক থেকে তখন একটাই আওয়াজ—
মেহরিন! মেহরিন! মেহরিন!
চুমকি হেসে কাঁধে ঠেলা দেয়,
এইবার তোকে গাইতেই হবে সোনা।

মেহরিন অস্বস্তিতে পড়ে যায় ঠিক তখন, পাশে এসে চুপচাপ দাঁড়ায় রিদ।
সে কিছু বলে না, শুধু চোখ দিয়ে ইশারায় গাইতে বলে—একটা নিঃশব্দ অনুপ্রেরণা, একটা অদৃশ্য সাহসের হাতছানি।
মেহেরিনের অস্বস্তি দেখে সবাইকে অবাক করে রিদ গেয়ে ওঠে
বল না কোথায় তুমি
এ বুকে আছ কোন পাশে
বল না কোথায় তুমি
আছ কি মিশে নিঃশ্বাসে
মনের ঘরে, যতন করে,
তোমায় রেখেছি আপন করে,
মেহরিন আনমনে গিয়ে ওঠে,
ভালবাসা দিয়ে তুমি দাও রাঙ্গিয়ে,
এ কোন প্রেমে দিলে জড়িয়ে
ভালবাসা দিয়ে তুমি দাও রাঙ্গিয়ে,
এ কোন প্রেমে দিলে জড়িয়ে

জোছনা নামাও তুমি হৃদয় আঙ্গিনায়
আমার পৃথিবী সাজাও মধু পূর্ণিমায়
রিদ আবার গায়,
ওহহ রাত শেষে ভোর নামাও কত ভালবেসে
সারা দিন জড়িয়ে রাখ সুখেরি আবেশে
মেহরিন গায়,
তুমি আছ বলে, ফাগুন আসে ফুলে
রিদ বলে,
মনের ঘরে, যতন করে,
তোমায় রেখেছি আপন করে,
মেহরিন ও রিদ দুজন এক সাথে গায়,
ভালবাসা দিয়ে তুমি দাও রাঙ্গিয়ে,
এ কোন প্রেমে দিলে জড়িয়ে
ভালবাসা দিয়ে তুমি দাও রাঙ্গিয়ে,
এ কোন প্রেমে দিলে জড়িয়ে
রিদ আবার বলে উঠে,
মনের নৌকা তুমি দোলাও আনমনে,
ছবি হয়ে থাক তুমি এ মনের গহীনে
মেহরিন গায়,
ওহহ কখনও তুমি এসে হৃদয় হারাও,
কক্ষনও তুমি এসে সামনে দাঁড়াও
রিদ বলে,
হাতে হাত রেখে, ছুঁয়ে দাও না আমাকে
মেহরিন গায়,
মনের ঘরে, যতন করে,
তোমায় রেখেছি আপন করে,
রিদ মেহরিন এক সাথে গায়,
ভালবাসা দিয়ে তুমি দাও রাঙ্গিয়ে,
এ কোন প্রেমে দিলে জড়িয়ে
ভালবাসা দিয়ে তুমি দাও রাঙ্গিয়ে,
এ কোন প্রেমে দিলে জড়িয়ে….
মেহরিন ধীরে ধীরে মাথা তোলে।

চোখে একটুখানি অবাক ভাব, কিন্তু ঠোঁটে আসে হালকা হাসি।
রিদের গলার সুরে গলা মিলিয়ে নিয়েছিলো সে।
দুজনে একসাথে গাইলো —একটা মেলডি, যেখানে দুই কণ্ঠে মিশে গিয়েছিলো দুটো ভিন্ন জগত।
একদিকে রিদের গম্ভীর গভীরতা, আরেকদিকে মেহরিনের কোমল কোমল ভরাট কণ্ঠ।
চারপাশে সবাই নিঃশব্দ। কেউ ফোন তুলতে ভুলে গেছে, কেউ তো নিঃশ্বাস নিতেও ভয় পাচ্ছে যেন।
গানটা শেষ হওয়ার পর, কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা—
তারপর হঠাৎ করেই করতালির ঝড়।
কেউ বলে,
“দুইজনেই একেবারে প্রোফেশনাল!”
আর কেউ বলে,
ওফফ! কি গান টা বললো রে একদম মনে গেথে গেলো।
চুমকি আর রাহি তখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে।
রাহি ফিসফিস করে বলে,
এইবার বুঝলে তো! আমি এমনি এমনি মেহুর নাম বলি নাই!
চুমকি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,

আর রিদ ভাইয়ার চেহারা দেখ! গান গাওয়ার সময় শুধু গলা না, চোখও তো এক্সপ্রেস করছিল!
মেহরিন লাজুক মুখে চোখ নামিয়ে নেয়, কিন্তু মুখের কোণে লুকানো একটা বিজয়ী হাসি ঠিকই ফুটে ওঠে। সে রিদ এর সাথে গান গেয়েছে ভাবতেই এখন লজ্জা লাগছে।
রিদ চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে, কাউকে কিছু না বলে শুধু মৃদু মাথা নেড়ে চলে যায় একটু দূরে।
তবুও যেন একটা অদৃশ্য সুতোয় সেই মুহূর্তে ওরা দুজন বেঁধে গেল—একটা গান, একটা দৃষ্টি, আর চারপাশে উল্লাসের মধ্যে এক বিন্দু নিঃশব্দ বোঝাপড়ায়।
গান শেষ হতেই একে একে সবাই আবার বাসে উঠছে। বাসের ভেতর তখনও হালকা গুঞ্জন, কারও মুখে গান, কেউ হাই তুলে জানালার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনই ঘটল ‘রাহির চাল’।
রিদ উঠে গিয়ে নিজের আগের সিটে বসতে যাবে, ঠিক তখনই—
ঝুপ!

রাহি আগেভাগে দৌঁড়ে গিয়ে বসে পড়ল সেই সিটে। আর বসেই এক নিঃশ্বাসে নেয় তার পর ফিস ফিস করে বলে উঠল—
“রাকিব ভাইয়া, একদম আমার কথা শুনবেন, আমার কথাই বা হাত দিবেন না, আর আমার সাথে শুধু হুঁ হুঁ করে মাথা নাড়বেন, ব্যস!”
রাকিব হেসে ফেলে,
আরে আমি তো চেয়ারে বসার আগে হুঁ বলার টাইমই পাই নাই! তুমি বলছো যেহেতো তাহলে না হয় বলবো।
রাহি ভ্রু কুঁচকে বলে,
গুড গুড ! আমি এখানেই বসব!
এদিকে রিদ একটু থেমে, একটু বিরক্ত চোখে রাহির দিকে তাকিয়ে বলল—
এইটা তো আমার সিট ছিল, রাহি।

রাহি এবার অভিনয়ের ভঙ্গিতে মাথা একপাশে হেলিয়ে বলে—
“উফ দাদা ভাই! আমি এখন এখানে বসেছি, আপনি তো আমার শ্রদ্ধেয় বড়, আমার জন্য কী সামান্য এই সিট ছাড়তে পারবেন না ভাইজান! আপনি বরং যান না, মেহুর পাশে গিয়ে বসেন, ওটা আমার সিট। সিট টাও তো ওখানেই খালি।
রিদ তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চোখে মিশ্র অনুভূতি—রাগ, বিরক্তি, আর একটুও যেন চাপা আগ্রহ।
তুই আমার সিটে বসে আছিস, আবার বলছিস আমি মেহুর পাশে গিয়ে বসি?
রাহি মুচকি হেসে বলে—

হুম। তুমি তো জানো, ভাগ্যে যা থাকে, তা ঠেকিয়ে রাখা যায় না! আর খালি জায়গা ও বেশিদিন খালি থাকে না। তাই জায়গা খালি থাকতে থাকতে গিয়ে বসে পড়ে যাও।
বাহিরে এই কথাটা যেন রিদের মনে দাগ কেটে গেলো কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে।
পেছনে চুমকি শান্তকে ফিসফিস করে বলে—
রাহি তো পুরাই আগুন! দেখো, কেমন চাল চালছে!
শান্ত বলে, হুম বদের হাড্ডি একটা। সারাক্ষণ মাথায় একটা না একটা শয়তানের বুদ্ধি চলে।
এটা বলে দুইজনেই হেসে ফেলে।

রিদ চোখ কুঁচকে, ঠোঁট চেপে কিছু না বলে ধীরে ধীরে হাঁটে গিয়ে বসে পড়ে মেহরিনের পাশে।
মেহরিন তখন নিজের ব্যাগের চেইন ঠিক করছে।
চোখ তুলে একবার তাকায়, রিদকে দেখে একটু অবাক হয়। কিন্তু কিছু বলে না। রিদ আশেপাশে থাকলে যেন মেহেরিনের কেমন একটা হয়৷ হয়তো মেহেবুবা ওইগুলো বলার কারণে। মেহরিন মাথা নিচু হয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলে।
তার বুকের ভেতরটা যেন একটু বেশি জোরে ধুকধুক করছে।
রাহি তখন রাকিব ভাইয়ার পাশে বসে কোমর সোজা করে বলে—
আমি ঠিক জায়গায় বসেছি, এখন কার কী বলার আছে বলুন তো?
রাকিব মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে—

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ১১

কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে মিস রাহি তালুকদারকে কিছু বলবে। তোমার মাথার ভেতর কী চলে আমি কল্পনাও করতে পারি না!
বাস তখন আবার গড়াতে শুরু করে।
কিন্তু সবার মাথার ভেতর বাসের চাকা নয়, ঘুরছে অন্য কিছু… কিছু অনুভব, কিছু চোখাচোখি, আর কিছু কথা—যা বলা হয় না, শুধু বোঝা যায়।

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ১৩