মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩
মির্জা সূচনা

মেহরিন ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু তার মুখে এক ধরনের শান্তি। যেন কোন এক অন্য জগতে ভেসে আছে।
মেহরিন এক রাজপ্রাসাদের বাগানে দাঁড়িয়ে। তার চারপাশে রঙিন ফুল, পেছনে এক অদ্ভুত সুর বাজছে। দূরে একটা ঘোড়ায় চড়ে কেউ আসছে—সাদা পোশাক, মুখে কি সুন্দর হাসি। মেহরিন বোঝে—এটাই তার রাজকুমার।
ধীরে ধীরে সে সামনে আসে। মেহরিনের মনে কেমন যেন একটা উত্তাপ জেগে ওঠে, বুক ধড়ফড় করতে থাকে।
রাজকুমার যখন একদম সামনে এসে দাঁড়ায়, তার মুখটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়…
রিদ তালুকদার!
মেহরিন চমকে উঠে—

— “না!!”
একটা চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠে সে। হাঁপাচ্ছে, ঘামছে। চোখে বিস্ময় আর ভয়।
ঠিক তখনই ঘরে ঢুকে মেহবুবা, হাতে এক গ্লাস পানি। মেহবুবা মূলত আসছিলো মেহরিনের ঘুম ভাঙ্গাতে।
— “কি হইছে? এমন করে উঠলি কেন?”
— “আমি… আমি রাজকুমার দেখছিলাম…”
— “ওমা, রাজকুমার কে দেখছিস ভালো কথা। সারাক্ষণ তো রাজকুমার, রাজকুমার করতে থাকিস? এখন দেখতে পেয়ে তো খুশি হওয়ার কথা। খুশি তে লুঙ্গি ড্যান্স করার কথা। তা না করে, আমাদের কানের পোকা মে’রে ফেলছিস কেনো বেয়াদব ছে’মরি ”
— “সে ছিল… কিন্তু তারপর… তারপর…. ওর মুখটা রিদ তালুকদারের হয়ে গেল!”
মেহবুবা চোখ গোল করে তাকায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “তাহলে তো ব্যাপারটা সিরিয়াস, মেহু!”
মেহরিন মাথা নিচু করে বসে পড়ে। নিজের বুকের ধুকপুকুনি এখনো থামেনি।
কিন্তু সে জানে না—এই স্বপ্নটা কি কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে? নাকি মনের খেলা?
মেহরিন বেলকনিতে বসে আছে, দুই হাঁটু গুটিয়ে। সন্ধ্যার হাওয়াই তার চুল উড়িয়ে দিচ্ছে। চোখ দুটো অদ্ভুত ভাবে ফাঁকা, যেন ভেতরে কিছু একটার খোঁজ চলছে।
ঠিক তখন মেহবুবা এসে দাঁড়ায় পাশে। হাতে দুটো কফির মগ।
— “লিজেন্ড বলে, মন খারাপ হলে কফি না খেয়ে বসে থাকা পাপ।”
মেহরিন মুখ তুলে তাকায়, হালকা হাসে।
— “তুই সবসময় এমন ডায়লগ কোথা থেকে শিখিস?”
— “আমার দুলা’ভাইয়ের কাছ থেকে। যদিও এখনো তোর জামাই মানে আমার দুলাভাই আবিষ্কার হয়নি, তবুও প্র্যাকটিস করে রাখছি।”
মেহরিন হেসে ফেলে।

— “তোর ওই দুলাভাই যদি তোর কথা শুনে পালায়?”
— “তাহলে আমি তার বাসায় গিয়ে বলব—‘তুমি কি জানো, তুমি একজন কপিরাইট ভাঙা প্রেমিক?’”
মেহরিন কফিতে চুমুক দিয়ে মাথা নেড়ে।
— “তোরে নিয়ে একদিন ডাক্তার দেখাতে হবে।”
— “হ্যাঁ, কিন্তু হ্যান্ডসাম ডাক্তার হলে নিজেই ঠিক হয়ে যাব!”
মেহবুবা পাশেই বসে, মেহরিনের মুখটা খেয়াল করে।
— “আচ্ছা, মনটা এত উদাস কেন রে? রাজকুমার আবার ডুবে গেছে নাকি ফাউন্টেনে?”
মেহরিন চুপ করে। মগটা দুহাতে ধরে রাখে।
— “স্বপ্নটা এত বাস্তব মনে হচ্ছিল, জানিস? মনে হচ্ছিল সে বুঝি আসবেই…”
মেহবুবা হালকা গলায় বলে,

— “স্বপ্নে কেউ এলে তাকে ভয় না পেয়ে কফি খাইয়ে দে। তারপর বল—‘বিয়ে না করিলে বন্ধু সপ্নে এইসো না, বিয়ের কথা আগে ঠিক করে, তারপর প্রেম করতে আসবা ! বুঝলা সোনা’”
দুজনেই হেসে ওঠে।
মেহরিন আকাশে দিকে তাকাই …. আজকের আকাশ টা খুব সুন্দর লাগছে। আজ হয়তো পূর্নিমা।
মেহবুবা মেহরিনকে কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখে শেষে হেসে বলে,
—আচ্ছা বল তো, স্বপ্নে রিদ তালুকদার যদি তোর হাতে গোলাপ দিত, তুই কী করতি?
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বলল,
— “আমি ঐ গোলাপ দিয়ে ওর নাকের নিচে খোঁচা দিতাম। আমার রাজকুমার তাও আবার রিদ তালুকদার অসম্ভব।
মেহবুবা হেসে গড়িয়ে পড়ে—

— “তুই দেখি সপ্নে তোর রাজকুমার কে দেখে তুই নিজেই ভয় পাইছিস!”
মেহরিন একটু ভেবে নিয়ে বলে,
— “ তোর স্বপ্নে কে আসে শুনি?”
— “আমার স্বপ্নে? ফুডপান্ডা আসে। হ্যান্ডসাম একটা delivery boy!”
— “ মেহরিন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে…
তোকে দিয়ে হবে না। তোর প্রেম মানেই খাওয়া।
মেহবুবা ঢাকাই নাটকের মতো কণ্ঠে বলে ওঠে,
— “হ্যাঁ, আমি খাদ্যপ্রেমী নারী! আমার হৃদয়ের চাবি লুকানো আছে বিরিয়ানির হাঁড়িতে!”
দুজনেই হেসে লুটোপুটি খায়।
হঠাৎ মেহরিনের ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে। সে কফির মগটা নামিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।
অচেনা নাম্বার

০১৮******
সময়: ৮:১৯ PM**
মেসেজ খুলে দেখে একটুকরো “ছন্দ”
**”তোমার চোখ—
অদ্ভুত এক রহস্যের দরজা,
যেখানে একবার তাকালে ফেরার রাস্তা মেলে না।
শুধু গভীরতা, কুয়োর মতো টানে,
দেখে মনে হয়—এই চোখে কেউ একদিন ভেসে যাবে।
তোমার রাগ—
আগুন নয়, বরফে লুকানো দাবানল,
যা দেখলে ভয় নয়, শ্রদ্ধা জন্মায়।
কারণ তুমি রাগাও তখনই, যখন সত্যটা থেমে যায়।
তোমার আত্মবিশ্বাস—
চোখের চাউনিতেই বাজে ঝংকার,
তুমি হোঁচট খাও, কিন্তু থেমে যাও না,
তোমার পা চলে নিজের পথে, কারো ছায়ায় নয়।
আর যুক্তি—
তোমার ভাষা শুধু আবেগ নয়,
তুমি ভাবো, বোঝো, তারপর বলো।
তোমার যুক্তিগুলোও যেন কবিতার মতো—
শান্ত, ধারালো, আর অব্যর্থ।
ইতি

তোমার মায়াবি চোখে থমকে যাওয়া কেউ।”
এবার যেন সত্যিই মনে হয়, কেউ মেহরিনের আত্মা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছে।
মেহরিন থমকে যায়। দু’ তিন বার পড়ে। বুকের ভেতর ধুকপুকানি বাড়তে থাকে।
— “কে পাঠালো এটা?”
মেহবুবা পাশ থেকে উঁকি মারে।
— “এই তো! স্বপ্নের রাজকুমার কবিতা লেখে শুরু করছে!”
— “ধুর! সব সময় মজা করবি না। কে এটা?”
— “হয়ত রিদ তালুকদার!” — মেহবুবা চোখ ছোট করে নাটকীয় গলায় বলে।
মেহরিন কিছু বলে না, শুধু ফোনটা শক্ত করে ধরে রাখে। তার চোখে তখন হাজারটা প্রশ্ন। কে এই অচেনা কবি?
মেহরিন ফোনটা হাতে নিয়ে চুপ করে বসে আছে। চোখে কিছুটা অস্থিরতা, কিছুটা বিস্ময়। মেসেজটা যেন কানে কানে কিছু বলে যাচ্ছে বারবার।

মেহবুবা একবার কফিতে চুমুক দিয়ে পাশে এসে দাঁড়ায়,
— “এই যে! প্রেমে পড়লি নাকি রে? কাব্য পড়ে মন গলতে শুরু করছো সোনা। সত্যি করে বল তো কে এই আশিক? কার সাথে প্রেম করছিস তুই?”
মেহরিন বিরক্তি তে ‘চ’ শব্দ করে।
মেহরিন ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেহবুবা ভ্রু নাচিয়ে বলে,
— “এই তো! আগে এত রাগী ছিলি, এখন দেখি কবিতায় হেলেই পড়িস! আবার ‘মায়াবি চোখে থমকে যাওয়া কেউ’— উফফ! আমি হলে এখনই কল করতাম!”
মেহরিন চোখ বড় বড় করে তাকায়,
— “পাগল! অচেনা নাম্বারে কেউ ফোন দেয় নাকি!”
মেহবুবা কাঁধ উঁচিয়ে হেসে বলে,

— “এত ভাবার কী আছে? কল দে না একবার! জানতে পারবি কে এই কবি, যে তোর মায়াবি চোখে থমকে গেলো!”
— “তুই এটা এত হালকাভাবে বলছিস, আর আমার তো বুক ধুকপুক করছে!”
— “তাইলে বুঝাই যাচ্ছে, ব্যাপারটা সিরিয়াস!”
মেহরিন মুখ ঘুরিয়ে ফেলে, যেন লুকাতে চায় ভেতরের লাজটা।
বেলকনির বাতাসে তখন ছড়িয়ে পড়ছে কিছু না বলা অনুভব, কিছু লুকানো উত্তাপ।
মেহরিন ফোনটা শক্ত করে ধরে বসে আছে। তার চোখে দুশ্চিন্তা, কৌতূহল, আর একটু লজ্জাও।
মেহবুবা হঠাৎ বলে,

— “দে তো তোর ফোনটা!”
— “কেন?”
— “আমি একটু কফি ঢেলে দেই ফোনের উপর… মানে, ফোন করব!”
মেহরিন আঁতকে ওঠে,
— “না না না! তুই করবি না!”
কিন্তু ততক্ষণে মেহবুবা ফোনটা টেনে নিয়েছে। স্ক্রিনে নাম্বারটা রেখে কানে নেয়।
টুট… টুট…
কল কানেক্ট হচ্ছে না।
— “হুঁ! কবি সাহেব তো দেখি খুব চালাক! কলও ধরে না!”
মেহরিন একটু জোরে বলে,
— “তুই করলি কেন? যদি অপরিচিত কেউ হয়?”
— “আর যদি পরিচিত হয়? তাহলে তো দারুণ ব্যাপার! ভাব—তোর লাইফে গোপন প্রেমিক, কাব্য লিখে প্রেম করছে!”
মেহরিন কপালে হাত দেয়,

— “তুই আসলে পাগল!”
— “হ্যাঁ, কিন্তু আমি তোকে এমন কারো হাতে তুলে দিতে চাই না, যে শুধু মেসেজ পাঠিয়ে উধাও হয়ে যায়!”
হালকা বাতাসে মেহরিনের চুল উড়ছে, আর তার ঠোঁটে একটুকরো লাজুক হাসি। ভেতরে ভেতরে কি সে একটু আশাও করছে?
মেহবুবা আবার বলে,
— “তুই রেডি থাক! কবি সাহেব আবার হয়তো কবিতা নিয়ে ফিরে আসবে… কিন্তু এবার যদি কল করে?”
— “তাহলে… তুই ধরবি!”
— “না না! এবার তুই ধরবি, আমিই তোকে কনফিডেন্স শিখাচ্ছি।
মেহরিন আর মেহবুবা বেলকনিতে বসে, ফোন নিয়ে হাসাহাসি চলছে তখনই—
“মেহরিন! মেহবুবা! এসো মা গন, ডিনার রেডি!”
নিচতলা থেকে মা’য়ের কণ্ঠ ভেসে আসে।
মেহবুবা বলে,
— “চল, কবি সাহেব পরে আসুক, আগে দেখি মায়ের কবিতার বিরিয়ানি কেমন হয় আজ!”
মেহরিন হেসে বলে,

— “তোর মুখে তো সবই কবিতা!”
— “আর তোর মুখে সব প্রেম! হুঁ, কবিতার রং চেনে যে, তার নাম মেহরিন!”
দু’জনে টুকটুক করে নেমে যায় নিচে। খাবার টেবিলে ভরপুর আয়োজন—ভাজি, ডাল, ডিম, মায়ের হাতে করা স্পেশাল চিকেন কারি।
মেহবুবা প্লেট হাতে বলে,
— “এই চিকেন কারি খেয়ে যদি কবি সাহেবও কবিতা লিখত, তাহলে বুঝতাম মা কত বড় শায়ার!”
— “তুই আর ছাড় নেই আজকে!” মেহরিন একটু হেসেই মা’র চোখের ইশারায় চুপ করে যায়।
ইতি মধ্যে অচেনা মানুষের কথা মা আর মাহির ও জেনে গেছে।
সবাই ডিনার সেরে যার যার রুমে চলে গেছে।
মেহরিন আর মেহবুবা নিজেদের রুমে গিয়ে চুপিচুপি ফোন নিয়ে আলোচনায় মগ্ন—

— “তুই ভাব দে না, আবার কোনো কবিতা আসে।”
— “হুঁ! আর আমি যদি কবি সাহেবের কবিতা পড়তে পড়তে প্রেমে পড়ে যাই?”
ঠিক তখনই—
“ওই! কবিতা প্রেমিকা দুজনই চুপ করো!”
মাহির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। মুখে সয়তানি হাসি, হাতে এক বাটি বাদাম নিয়ে।
মেহরিন এক লাফে বলে,
— “তুই আবার এখানে কী করিস?”
— “মা বলল খেয়ে নিজের রুমে যেতে, কিন্তু আমি তো জানতাম এখানে কিছু হেভি গোপন প্রেমালাপ চলছে!”
মেহবুবা হেসে ফেলে,

— “এই ছেলেটার চোখ তো সিসিটিভির চেয়েও শার্প!”
— “আর মুখ কাটা তো খবরের কাগজের চেয়েও ফাস্ট!”
মাহির হেসে বলে,
— “তাইলে কবি সাহেবের নাম্বারটা আমাকে দে, আমি ডায়াল দিয়ে দুটো ছড়া শুনাই!”
— “আরে না না! ওর ছন্দে একটুকরো যাদু আছে!” মেহরিন মুখটা লাল করে বলে।
মাহির মুচকি হেসে বলে,
— “যাদু কই? আমি তো দেখি তুই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে কেবল লাল হয়ে যাচ্ছিস!”
— “তোর মাথায় সমস্যা আছে, মাহির!” মেহরিন বালিশ ছুঁড়ে মারে।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে শুরু হয় বালিশ যুদ্ধ, হাসি, আর হাজারো খোঁচা!
মাহির আবার বলে,

— “বড় আপু তোর সেই কবি সাহেব যদি ভাই হতো, আমিই তাকে মারতাম—তোর মতন রাগীকে প্রেমের কবিতা লিখে বিভ্রান্ত করার জন্য!”
মেহরিন হেসে বলে,
— “তুই নিজেই বিভ্রান্ত, ভাইসাহেব!”
— “হুঁ, তবে বল—যদি ওই কবি সাহেব আসলে… খুব কাছেই কেউ হয়?”
— “মানে?”
মাহির হাসি থামিয়ে শুধু বলে,
— “ভাব, ভাব! আমি তো শুধু গল্প বানালাম… এখন ঘুমা!”
তিনজনের হাসতে হাসতে রাত গড়িয়ে যায়। আর জানালার ধারে রাখা মেহরিনের ফোন… হয়তো অপেক্ষায়, আবার একটা কবিতা এসে ভেসে উঠবে পর্দায়।

মেহরিনের ডায়েরি লেখার অভ্যাস—আছে সন্ধ্যায় ঘুম থেকে ওঠেই এখন ঘুম আসছে না তাই ডায়েরিটা নিয়ে বসে।
রাত ১:৪৩
রুমের আলো নিভু নিভু, এক কোণে টেবিল ল্যাম্পের হলুদ আলোয় মেহরিন বসে আছে। হাতে ওর পুরোনো চেনা ডায়েরিটা। বাইরে থেকে হালকা বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে। চারদিকে এক রকম নীরবতা, শুধু কলমের খসখস শব্দ আর এক একটা নিঃশ্বাস।
মেহরিন আজকের ডেট লিখে নেয়:
“২৩ এপ্রিল, মঙ্গলবার”
**“আজকের দিনটা অদ্ভুত!
সন্ধ্যায় একটা অদ্ভুত স্বপ্ন, তারপর সেই কবিতা… আমার চোখ, আমার রাগ, আমার আত্মবিশ্বাস—সবকিছু কেউ একজন দেখে ফেলেছে।
কে সে? চেনা কেউ? নাকি অচেনা, কিন্তু আমার অনুভবের কাছের কেউ?
মেহবুবা তো আজ পুরা সার্কাস! ফোনও করে বসলো! মাহিরও আজ দুষ্টামিতে ছাড়েনি।
তবুও মনে হলো… আমি ভালোবাসা বলতে যা বুঝি, তার একটা ছায়া আজ আমার জানালার ধারে এসে দাঁড়িয়েছিল।
আমি জানি না সে কে।
কিন্তু আজ একটা সত্যি কথা—আমি অপেক্ষায় আছি।

– মেহরিন”
ডায়েরিটা বন্ধ করে ও একটুখানি হাসে। তারপর বালিশে মাথা রাখে। চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে।
পরদিন সকাল
সূর্য ঠিক যেন নতুন রঙ নিয়ে এসেছে।প্রতিদিনের মত আজ ওরা ৩ জন নামাজ পড়ে নিলো।এর পর মেহরিন এক কাপ চা নিয়ে রুম এ আসে । জানালার ফাঁক দিয়ে আলো ঢুকছে রুমে। পাখির ডাক, চায়ের গন্ধ, আর নতুন দিনের ছোঁয়া…
মেহরিনের মনে আজ একটা অদ্ভুত প্রশান্তি।
হয়তো কিছু ভালো আসছে ওর দিকে হেঁটে… ধীরে ধীরে… ঠিক কবিতার মতো করে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে, চোখে হালকা কাজল টানছে।
হঠাৎ ফোনটা ভাইব্রেট করে।
মেহরিন চোখ মেলে দেখে—”চুমকি – ৩ মিসড কল”

— “এই মেয়ে তো পুরা হাইড্রা! একটু দেরি হলেই যুদ্ধ লাগায়!”
ও হেসে ফোনটা হাতে নেয়, ব্যাগে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে ঠিক তখনই স্ক্রিনে এক নতুন নোটিফিকেশন—
নতুন মেসেজ (অচেনা নাম্বার)
হৃদয় একটু ধক করে ওঠে। আঙুল কাঁপা কাঁপা হয়ে খুলে মেসেজটা পড়ে—
**“শুভ সকাল “আরিওনা”
“আরিওনা” (Ariona) এটা এসেছে “Ari” (গোপন/আত্মার আহ্বান) + “Ona” (স্বপ্নের সুর) থেকে।
“আরিওনা” মানে দাঁড়ায়:
“যে কেবল হৃদয়ে বাজে, কেবল চোখে খেলে কিন্তু কারো চেনা নয়। সে আমার স্বপ্নের মেয়ে।”
প্রিয় আরিওনা,
আজ জানালার বাইরে তাকিও—তোমার জন্য আকাশটা একটু বেশি নীল হয়েছে।
জানো? আজ খুব দেখতে ইচ্ছা করছে তোমায়…
তোমার চোখ, যেখানে আমি প্রতিদিন হারিয়ে যেতে চাই।”**
মেহরিনের মুখটা লাল হয়ে যায়। চোখে বিস্ময়, ঠোঁটে একরাশ চাপা হাসি।

— “এই লোকটা কে! এত ভালো করে আমার চোখ চিনে গেল কিভাবে?”
চুমকির কল আবার আসে।
— “আসছি রে! মাই গড! আমি তো দেরিই করে ফেলেছি!”
মেহরিন আর চুমকি হাঁটছে ক্যাম্পাসের লাল-সাদা পথ ধরে। চারপাশে গাছের ছায়া, বাতাসে দুপুরের ক্লান্তি আর বিকেলের কোমল রোদ।
চুমকি হাঁটতে হাঁটতে হাসতে হাসতে বলছে,
— “তোরে তো দেখি কবিতার মিউজ বানায় দিছে রে! চোখে প্রেম, কথায় যুক্তি—আরে! তুই কি আসলে মানুষ? না কাব্যের বই?”
মেহরিন একটু লজ্জা পায়, একটু মুচকি হাসে,
— “ধুর! এসব কী বলিস!”
— “আর তোর ওই ‘আরিওনা’ নামটা! আহারে! একদম সিনেমা রে!”
ঠিক তখনই…

একটা ছোট্ট পিচ্চি ছেলে, হয়তো ক্লাস থ্রি বা ফোরের হবে, ছুটে আসে ওদের সামনে। মেহরিন থমকে দাঁড়ায়।
ছেলেটা নিঃশ্বাস নিতে নিতে একটা ছোট্ট গোল কাগজের খাম আর সাথে একটা সাদা কাঠ গোলাপ। মেহরিনের হাতে দিয়ে বলে,
— “আপু, এটা আপনার জন্য।”
তারপর না কোনো উত্তর না অপেক্ষা করে, ছেলেটা এক দৌড়ে চলে যায় ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে।
মেহরিন আর চুমকি দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য একদম স্তব্ধ।
চুমকি চোখ কুঁচকে বলে,
— “আবার কি কবিতা আইলো?”
মেহরিন খামটা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে খুলে দেখে…
ভেতরে ছোট্ট করে ভাঁজ করা কাগজ। তাতে লেখা:

**”তুমি কাঠ গোলাপের মতো।
সাদায় মোড়া, কিন্তু ভিতরে লুকিয়ে আছে একরাশ গোলাপি রঙ…
তোমার চোখের কাজলে কেউ ডুবে যেতে চায়,
আবার ভয় পায়—সেখানে হারিয়ে গেলে ফিরতে পারবে না।
তুমি দাঁড়াও যেখানে,
চারপাশটা কবিতা হয়ে যায়।
— সেই অচেনা কেউ
(যে শুধু তোমার চোখে থমকে যায়)”**

মেহরিন চিরকুটটা পড়ে আশেপাশে তাকায় কিন্তু কাউকে পায় না । কেন জানি তার মন বলছে যে কবি সাহেব আশেপাশেই আছে ।
চুমকি পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
— “এই কবি সাহেব তো দেখি সিরিয়াস লেভেলের প্রেমে পড়ে গেছে!
এত সুন্দর উপমা দিয়ে কেউ কি মানুষ তুলনা করে রে?”
মেহরিন কিছু বলে না।
শুধু কাঠ গোলাপটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে একটুকরো নিশ্বাস নেয়।
আর চিরকুটটা ডায়েরির ভিতরে রেখে দেয়—যেখানে শুধু তারই জায়গা।
চুমকি দাঁতে হাত চেপে হাসি চাপার চেষ্টা করে,
— “বাপরে! এ তো দেখি লাইভ কবিতার পাণ্ডুলিপি শুরু হয়ে গেছে!
কিরে তোর কবি সাহেব ত তো দেখি পুরো সিনেমাটিক!”
মেহরিন একটু লজ্জা পায়, একটু অজানা ভয়, আবার অদ্ভুত একটা হাসি…
আর দূর থেকে কেউ হয়তো দেখছে… গাছের ছায়ার আড়াল থেকে। মেহরিন এর লজ্জা পাওয়ার মুখুস্ত্রী ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে সন্ধ্যার আগে
চুমকি একটু চিন্তিত গলায় বলে,

— “শোন, আমি তোর সঙ্গে দাঁড়াই, তোকে একা রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না।”
মেহরিন হালকা হেসে বলে,
— “আরও পাঁচটা মেয়ে দাঁড়ায় না নাকি রিকশার জন্য? তুই যা, মামনি অনেকক্ষণ ধরেই কল দিচ্ছে ।”
চুমকি না চাইলেও একপ্রকার জোর করেই মেহরিন পাঠিয়ে দেয়।
চুমকি চলে যাওয়ার পর মেহরিন দাঁড়িয়ে থাকে গেটের পাশে, রিকশার খোঁজে।
একটার পর একটা রিকশা আসছে, কিন্তু সব ভাড়া করা… কেউ শুনতেই চায় না।
চারপাশে হালকা অন্ধকার নেমে এসেছে। কাঠ
গোলাপের গন্ধটা যেন এখনো লেগে আছে হাতের কাছে।
চিরকুটের সেই লাইনটা মনের ভিতর ধীরে ধীরে বেজে ওঠে—
“তুমি দাঁড়াও যেখানে, চারপাশটা কবিতা হয়ে যায়…”

মেহরিন একটু ক্লান্ত হয়ে দাঁড়ায়, ব্যাগটা কাঁধে একটু সরিয়ে নেয়।
ঠিক তখনই একটা রিকশা ধীরে ধীরে তার সামনে এসে থামে।
চমকে ওঠে মেহরিন, কারণ সে তো ডাকেনি কাউকে।
রিকশাওয়ালা বলে না কিছু… শুধু মাথা নেড়ে ইশারা করে—যেন জানে এই মেয়েটাই তার যাত্রী।
আর তখন মেহরিনের চোখ পড়ে—রিকশার সামনের হাতলে বাঁধা একটা সাদা কাপড়ের টুকরো, আর তাতে গুঁজে রাখা একটা কাঠ গোলাপ।
মুহূর্তে বুকটা ধক করে ওঠে…
সে ধীরে ধীরে রিকশার দিকে এগিয়ে যায়, চোখে কৌতূহল, একটুকরো ভয়ও।
রিকশায় বসার পর সে খেয়াল করে—সামনের আয়নায় একটা ছোট্ট কাগজ গুঁজে রাখা, তাতে হাতে লেখা:

**”যে শব্দ হারিয়ে যায়,
সে একদিন ঠিক পথ খুঁজে পায়।
আজ তুমি চুপ ছিলে,
তাই তোমার জন্য এই নীরব রিকশা,
— সেই অচেনা কেউ।”**
মেহরিন চুপ করে বসে থাকে।
তার চোখে কাজলের নিচে জমে থাকা বিস্ময়,
আর একটা দুর্বল কিন্তু মায়াবী হাসি।
রিকশাটা ধীরে ধীরে চলছে। মেহরিন ব্যাগে হাত রাখলেও মন পুরোটা অন্য জগতে।
চিরকুটের শব্দ, কাঠ গোলাপের ঘ্রাণ, আর সেই চুপচাপ সাহায্য—সব মিলিয়ে ওর বুকের ভিতর হালকা ধকধক।
তখন হঠাৎ ও সামনের দিকে বলে:

— “মামা, একটা সত্যি কথা বলবেন?”
রিকশাওয়ালা আয়নার দিকে তাকায়, মাথা নাড়ে।
মেহরিন একটু হেসে, একটু গম্ভীর হয়ে বলে:
— “আমি জানি আপনাকে কেউ পাঠিয়েছে।
তাকে আমি চিনিনা, কিন্তু… জানতে চাই।
আপনি কি তাঁর নামটা বলবেন আমায়?”
রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।
তারপর চোখে হালকা একটা হাসি, গলায় মোলায়েম স্বর:
— “নাম জানলে তো মায়া কমে যায়, মামা।
ও কইছিল—‘ও শুধু জানুক, আমি আছি। নাম জানলে গল্প থেমে যাবে।’”
মেহরিন চুপ করে যায়।
এই কথাটা যেন সরাসরি ওর ভেতরে ঢুকে পড়ে।
রিকশাওয়ালা আবার বলে:

— “শুধু এটুকু কই, আপনার চোখের কাজল নাকি এত তীব্র,
যে একবার তাকাইলে, সেই চেহারা কেউ ভোলে না।”
মেহরিনের গাল ফুটা হালকা হাসি এসে পড়ে।
চোখে একটা মৃদু চিকচিকানি।
মেহরিন হঠাৎ ওর বাম দিকে তাকায়। দেখতে পায়, মেহবুবার মতো বয়সী এক মেয়ে পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে। মুখটা ব্যথায় কুঁচকে আছে।
মেহেরিন রিক্সাওয়ালা মামাকে বলেন মামা একটু দাঁড়ান তো । তারপর রিকশা থেকে নেমে যায় মেয়েটির কাছে ।
—” তুমি… ঠিক আছো?”
মেয়েটি কারো কন্ঠ শুনে,তাকাই মেহরিনের দিকে কষ্ট করে হাসে,
_ আর বলো না ঠিকই তো ছিলাম, কিন্তু ঐ যে কথা আছে না লোভে পাপ আর পাবে পঙ্গু ।
—”একটু পা মচকে গেছে মনে হয়… কিন্তু তোমার চোখে আমার চিন্তা এত মিষ্টি লাগছে যে ব্যথা কমে যাচ্ছে!”
মেহরিন হেসে ফেলে। মেয়েটির এমন খোলামেলা কথা শুনে ওর ভালো লাগে।
মেহরিন পাশে দোকান থেকে একটু বড় হচ্ছে আনে আর সেটা বসে মেয়েটির পায়ে লাগিয়ে দেয় । আর মেয়েটি মুগ্ধ হয়ে দেখছি মেহরিন কে।
মেহরিন তাকায় মেয়েটির মায়াবী মুখের দিকে তারপর নরম গলায় বলল,

—”তোমার নাম কী, মিষ্টি মেয়ে?”
মেয়েটি হাসি দিয়ে বলল,
—”আমার নাম রাহি তালুকদার। নাম শুনেই ভয় পেলে কিন্তু চলবে না!”
মেহরিন হেসে ফেলে।
—”আচ্ছা, ভয় পেলাম না… তবে তালুকদার শুনে একটু সিরিয়াস লেগেছে।”
রাহি নাক সিটকে বলল,
—”উফ্! সবাই এমন ভাবে! কিন্তু আমি একেবারেই সিরিয়াস না, আমি তো এক নম্বর বকবকি!”
দুজনের মধ্যে হালকা দুষ্টুমি শুরু হয়—একটা অচেনা রঙ ছুঁয়ে যায় সম্পর্কের ভিতরটা।
কিছুক্ষণ পর রাহির ড্রাইভার এসে পৌঁছায়। ওঠার আগে সে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,

—”তোমার নাম্বারটা দাও তো, আবার দেখা হবে… ইনশাআল্লাহ, খুব শিগগির!”
মেহরিন হেসে নম্বর দেয়, আর রাহি হাত নাড়তে নাড়তে চলে যায়। কিন্তু মেহরিনের মুখে তখনও হাসি লেগে থাকে—মেয়েটা সত্যিই অনেক বকবক করে তবে মনটা অনেক ভালো খুব সহজেই মানুষের সাথে মিশতে পারে ।
মেহরিন বাসায় ফিরে গেল।
আর এদিকে তালুকদার বাড়ির ভেতর এক যুদ্ধ লেগে গেছে।
রাহি গেট দিয়ে ঢুকতেই রিদের কড়া গলা,
—”তুমি একা একা রাস্তা পার হয়ে কোথায় গিয়েছিলে?”
রাহি চোখ গোল করে বলল,
—”উফ দাদাভাই! একটু ফুচকা খেতে গেছিলাম, এতো ড্রামাটিক হচ্ছ কেন!”
রাহির মা হতাশ কণ্ঠে বললেন,
—”তোমার তো কিছুই বলা চলে না! একে তো ব্যথা পেয়েছো, তার উপর আবার মুখে মুখে কথা বলছো। ড্রাইভার না গেলে কী হতো সে খেয়াল আছে ?”
কিন্তু এসব বকা খাওয়ার মধ্যেও রাহি বলে —

—” ওফফ মা তুমি এত চিন্তা করো না তো আমার কিছু হয়নি তো। জানো, আমি আজ একজন দারুণ মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছি! নাম মেহরিন। একেবারে পরির মতো দেখতে! কি যে সুন্দর হাসি মা তোমাকে কী বলবো। কত সুন্দরভাবে কথা বলে… ওকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। I ma sure.. তুমি দেখলে, তুমি ও বলতে এমন একটা মেয়ে যদি আমার বেটার বউ হতো”
ওর মুখে মেহরিনের কথা শুনে তালুকদার বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
রিদ, তখন কফির কাপ হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো রাহির লাস্ট কথা শুনে, বিষম উঠে যায় … তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে অজান্তেই একবার নামটা মনে মনে আওড়ে নেয়—”মেহরিন…”
তালুকদার ভিলার ছাদে বসে আছে তিনজন—রাহি, নুপুর আর মিলি। মাথার উপর সন্ধ্যার হালকা বাতাস, হাতে কফির মগ, আর মুখে একটাই নাম—মেহরিন।
রাহি উত্তেজনায় কাপটা প্রায় ঝাঁকিয়ে ফেলল,

—”তোরা জানিস না, ওই আপুটা এমন এক মানুষ…! আমি ঠিক করেছি, আমি ওকে একদিন আমাদের বাড়িতে আনব!”
নুপুর চোখ গড়িয়ে বলল,
—”তুই আসার পর থেকে শুধু ওই আপু, ওই আপু করছিস। এতো স্পেশাল কী আছে ওর মধ্যে?”
রাহি গাল ফুলিয়ে বলল,
—”সবকিছু! ওর মতো মেয়ে আমি কখনো দেখিনি পরির মতো দেখতে, সুন্দর হাসি, কোমল ব্যবহার, আর সাহসী মন আমি খুব কম দেখেছি। আমার পায়ে ব্যথা পেয়ে বসে ছিলাম—সবাই এড়িয়ে যাচ্ছিল, আর ও ছিল একমাত্র যে পাশে এসে বসে ছিল।”
মিলি তখন হালকা হেসে বলল,

—”হু… এটা শুনে তো আমারও কৌতূহল হচ্ছে। ঠিক বলছিস, একবার দেখা করা দরকার!”
রাহি তৎক্ষণাৎ চেয়ারে সোজা হয়ে বসল,
—”তাহলে ঠিক আছে, আমি একটা দিন ঠিক করব—ওকে বলব, ‘আমার বাসায় এসো’। তোরা তখন ঠিক করে নিস, কিভাবে ওকে ইমপ্রেস করবি!”
নুপুর হেসে বলল,
—”ধুর পাগলি! আমাদের ইমপ্রেস করতে আসছে কে?”
রাহি চোখ টিপে বলল,
—”তাই তো বলছি—এই আপুটাকে একবার দেখলে, তোরাই ফ্যান হয়ে যাবি। বাজি ধরতে পারিস!”
তিনজন হেসে উঠল।
রাহি হঠাৎ চুপ করে যায়। একটু ভেবে নিয়ে কফির মগটা নামিয়ে বলে,

—”আচ্ছা কয়দিন পর তো আমার জন্মদিন!”
নুপুর ভুরু কুঁচকে বলে,
—”তাই নাকি? হ্যাঁ রে, আমিও ভুলেই গেছিলাম!”
মিলি চোখ গোল করে বলে,
—”তার মানে এবার তো জমবে! কেক, সাজসজ্জা, ফটোসেশন—সব হবে, তাই না?”
রাহি দুষ্টু হেসে বলে,
—”হ্যাঁ, সবই হবে! আর ওই দিন আমি মেহরিন আপুকে ইনভাইট করব।”
নুপুর অবাক হয়ে বলে,
—”তোর জন্মদিনে ওই আপু! ও কি রাজি হবে?”
রাহি চোখ মিটমিট করে বলে,

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ২

—”আমি বললেই হবে। আমি ওর কানে এমন মিষ্টি করে বলব—‘আপু,তুমি না এলে এই বার্থডে হবে না’, ব্যস! মেহরিন আপু আসবেই!”
মিলি হাসতে হাসতে বলে,
—”তুই না একদম নাটকবাজ রে রাহি!”
রাহি গম্ভীর মুখে বলে,
—”নাটক নয় রে পাগলি এটা একদম প্ল্যান।
এদিকে কবি সাহেব……

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৪