মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩৬

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩৬
মির্জা সূচনা

মেহরিন দরজা ঠেলে বেরিয়ে এল। ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি, চোখে যেনো কোনও জটিল কল্পনার ছায়া। চারপাশটা নীরব—ঠিক যেমনটা সে চায়। একটু হেঁটে সামনে গিয়ে কাউকে ফোন দিল।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যে এক তরুণ ছেলেটি ছুটে এল।
যা আনতে বলছি, আনছিস? মেহরিন জিজ্ঞেস করল।
ছেলেটি মাথা নেড়ে সায় দিল।
ভালো। এখন যা।
তারপর মেহরিন ফিরে গেল ভিতরে। কিন্তু সোজা ভেতরে নয়—গন্তব্য ছিল পার্কিং এরিয়া। এমন ভাবে ঢুকলো যেনো সিসিটিভিতে তাকে দেখা না যায়। সেখানে গিয়ে ধীরে ধীরে সে তার ব্যাগটা খুলল। এক চিলতে শয়তানি হাসি খেলে গেল মুখে। চারপাশে সতর্ক চোখে তাকিয়ে দেখল, কেউ দেখছে না। তারপর গিয়ে একটা দেয়ালের পেছনে কিছু একটা লাগিয়ে দিল।

সেই মুহূর্তে তার ঠোঁটে ফুটে উঠল রহস্যময় এক হাসি। কাজটা শেষ করে মেহরিন বেরিয়ে এল, যেনো কিছুই হয়নি। সরাসরি চলে গেল পার্লারে। সেখানে পৌঁছে চুমকিকে ফোন দিয়ে বলল,
তুই ওখানে চলে আয়, আমি বসে আছি।
মেহরিন বসে আছে স্টেজে। আজ তার পরনে একটি নীল লেহেঙ্গা, নরম জ্যোৎস্নার মতো উজ্জ্বল। গলায় রাজ উপহার দেওয়া সেই নেকলেস, নাকে সেই রাজের দেওয়া নাকফুল, হাতে সোনার চুড়ি, আর কপালে টিকলি।
বাড়ি ভরে উঠেছে অতিথিতে। কেউ বলছে, নতুন বউ তো একেবারে পরির মতো!
মেহরিন হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছে। সবাই উপহার দিয়ে যাচ্ছে, মেহরিন সেগুলো কুলসুমের হাতে দিচ্ছে। কুলসুম আবার সেগুলো গুছিয়ে রাখছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই সময় এসে পৌঁছালেন আকরাম চৌধুরী, ফাইজা চৌধুরী এবং আরশ।
আফরা এখনো আসেনি, সে আসবে মেহবুবাদের সঙ্গে।
আকরাম চৌধুরী এসে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
কেমন আছিস মা?
মেহরিন হাসিমুখে বলল,
আলহামদুলিল্লাহ ফুপা। তুমি কেমন আছো?
তিনি বললেন,
ভালো আছি, আম্মু?
তার কথার মাঝেই ফাইজা চৌধুরী এসে বললেন,
আমার আম্মাজানটা কেমন আছে?
মেহরিন ফুপি-কে জড়িয়ে ধরে বলল,
তোমার আম্মাজান অনেক অনেক ভালো আছেন!
ফাইজা হেসে উঠলেন।

আরশ দাঁড়িয়ে ছিল একটু দূরে। হঠাৎ হেসে টিপ্পনী কাটল,
এখন তো দেখছি অনেক ভালো আছিস! অথচ দুদিন আগেই তো বলছিলি, তুই কিছুতেই বিয়ে করবি না! আমার ভাইটারে কি মারটাই না মারলি!
তারপর খানিকক্ষণ থেমে বলল,
আচ্ছা তোর এত জোর কোথায় থাকে বলতো? তুই কি সিমেন্ট-বালি খাস নাকি?
মেহরিন মুখ ফুলিয়ে বলল,
“ভাইয়া!”
সবাই হেসে উঠল। আরশের কথায় যেন চারপাশটা আনন্দে ভরে গেল।
আরশের মজার কথার মাঝখানেই হঠাৎ মেহরিন সামনে এগিয়ে এসে এক থাপ্পড় দেয় কাধে।
ভালো করেছি মেরেছি!

আরশ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। মেহরিন হেসে বলে,
জামাই পেটানো আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল বুঝছো! আর এখন সেটা পরণ করছি!
চারপাশে হো হো করে হাসি ফেটে পড়ে।
সবসময় তো জামাইরা বউকে মারে, আমার বেলায় উল্টো হবে! আমি মারব জামাইকে! হাহাহা! তোমার ভাই অনেক কষ্ট দিয়েছে আমায়, আবার যদি দেয়, আবার মারব! মেরে হাড়গোড় ভাগে দেব বুজলা।
এই কথা শুনে ফাইজা চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে বললেন,
না মা, এগুলো বলা ঠিক না!
আরশ হতাশ গলায় বলল,

আমার ভাই কি খেয়েছিল রে, যে তোর প্রেমে পড়েছিল! ভাইয়ার জন্য এখন আমার দুঃখ লাগছে শেষমেশ কী না ওর কপাল একেবারে তোর জল্লাদ বউ।
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলে,
ভেরি স্যাড! আমার বেরি বেরি দুঃখ হইতাছে আমার ভাইটার জন্য। তোর থেকেতো রিনা খান তাও ভালোই ছিল, অন্তত জামাই মারে না।
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,

তোমার এত কষ্ট হচ্ছে আমার জামাইয়ের জন্য, তাই না? দোয়া করলাম, তোমার কপালেও যেনো আমার মতো একটা জুটে যায়।যাও এখন আমার জামাইয়ের জন্য দুঃখ না করে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে যাও যাও।
আরশ চিৎকার করে উঠে বলে,
না! এটা হতেই পারে না!
সে কপালে হাত দিয়ে নাটক শুরু করে। তার কান্না দেখে সবাই হেসে ফেলে।
মেহরিন হেসে বলে,
ফুপি, আব্বু-আম্মু কখন আসবে?
আকরাম চৌধুরী বললেন,
ওরা চলে আসবে, ভাইজান তো বললো বের হয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে নামল রূপা বেগম। পরনে সাদা কাজ করা শাড়ি।
তাঁকে দেখে আকরাম চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে বললেন,
কেমন আছিস বোন?

রূপা বেগম মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,
আলহামদুলিল্লাহ ভাইজান, আপনারা কেমন আছেন?
ফাইজা চৌধুরী জড়িয়ে ধরে বললেন,
কেমন আছিস ছোটো?
রূপা বেগমও বুকে জড়িয়ে ধরলেন,
ভালো আছি আপা, তুমি কেমন আছো?
ভালো রে,” বললেন ফাইজা।
ঠিক তখনই সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নামল লামিয়া। পরনে কালো রঙের বার্বি ডল জামা। দেখতে যেনো একেবারে চোখে লেগে থাকা মিষ্টি একটা পুতুল!
নেমেই সে বলে উঠল,

বাহ! সব আদর ওদের জন্যই বুঝি! আমি বুঝি কাউকে না?
সবাই হেসে উঠল।
আকরাম চৌধুরী ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
আমার ছোট ভাইয়ের শেষ চিহ্ন তুই—কেমন আছে আমার আম্মাজান?
লামিয়া তার গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,
আলহামদুলিল্লাহ বড়ো বাবা, তুমি কেমন আছো?
আকরাম চৌধুরী হেসে মাথা নাড়লেন। আরশ হা করে তাকিয়ে আছে লামিয়ার দিকে।
সবার চোখে না পড়লেও, মেহরিনের চোখে পড়ে গেল বিষয়টা।
মেহরিন হাসতে হাসতে লামিয়ার হাত ধরে বলে,
লামু, এসো তো! তোমাকে একটু কালো টিকা পরিয়ে দিই, যাতে কারও নজর না লাগে!
কেন ভাবি-মনি? আমার আবার কার নজর লাগবে?
লামিয়া চোখ গোল করে জিজ্ঞেস করল।
মেহরিন দুষ্টুমি করে হাসল,

কত মানুষ আছে বলো! আমার মিষ্টি ননদিনিকে দেখে যদি কারও হার্টবিট বেড়ে যায়?
আরে, যাও! তুমি যে কী বলো!— বলে লামিয়া দৌড়ে পালাতে গেল, আর তখনই ওর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আরশ পড়ে গেল।
একটুও না লেগতেই গিয়ে সে মাটিতে “ঢপ্” করে পড়ে গেল, মুখে চিৎকার,
ও মা গো! ও বাবা গো! মরেগেলাম গো!
লামিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
সরি! আমি খেয়াল করিনি! আপনার কী লেগেছে?
বলেই হাত বাড়িয়ে দিল উঠতে সাহায্য করতে।
সবাই হাসে, এমন নাটক দেখে।
আর মেহরিন তো হেসে গড়াগড়ি খায়!
আরশ লামিয়ার হাত ধরে উঠে বলল,

লাগবে কেন? আমি হলাম জেন্টলম্যান। এমন ধাক্কায় আমার কিছু হয় না।
লামিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
তাহলে পড়েই ‘মা গো, বাবা গো’ বলে চিৎকার করলে কেন শুনি?
আরশ শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলল,
মন চাইল বলে ডাকলাম। একটু মা-বাবার নাম নেওয়াই কি এমন দোষের?
“এহ!” — বলে আরশ আলতো করে লামিয়ার কপালে একটা টুকা দিয়ে বলে এহ না হে বলেি চলে গেল, হেসে হেসে।
লামিয়া হতবাক হয়ে মাথায় হাত দিয়ে রইল,
এই ছেলেটা কি বলেই গেল।

পাশের সবাই বুঝে গেল আরশ আবার মজা করল, হাসতে লাগল সবাই। নিজেদের গল্পে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
মেহরিন হেসে লামিয়ার পাশে এসে বলল,
ওর কথা কানে নিও না। প্রেমের ভূতে ধরেছে মনে হয়।
কি বলছো তুমি?— লামিয়া অবাক।
মেহরিন চোখ টিপে বলল, ওই যে একটা কথা আছে না….
প্রেমের মরা জলে ডুবে না! ওর হয়েছে এমন অবস্থা।
এই বলে হেসে ওঠে।
লামিয়াও জিজ্ঞেস করে,
সত্যি, প্রেমের মরা জলে ডুবে না!
মেহরিন তখন লামিয়ার গাল টেনে বলে,
এসব কথা তোমার মাথায় ঢুকবে না।আমার বোকা ননদিনি।
গাল ফুলিয়ে লামিয়া বলল,
তুমি আমাকে বোকা বললে ভাবি-মনি?
“না, না! তুমি তো ‘সর্বজ্ঞানী বুদ্ধির ডিম!’
লামিয়া চোখ ছোট করে বলল,
বুদ্ধির ডিম, হয়?

মেহরিন হাসতে হাসতে বলল,
হয় তো একদিন তোমাকে বুদ্ধির ডিম ভেজে খাওয়াব কেমন।
লামিয়া বলে আচ্ছা!— এটা শুনে মেহরিন আরো জোরে হেসে ফেলল যে চোখে জল এসে গেল।
লামিয়া তাকিয়ে থাকে মেহরিনের দিকে, মুগ্ধ হয়ে বলে,
তোমার হাসি খুব সুন্দর, ভাবি-মনি।
তোমার এই সুন্দর হাসিটা দেখার জন্য যদি আমাকে বুদ্ধির ডিম বাজি খেতে হয়, তাহলে আমি রোজ খেতে রাজি।
মেহরিন লামিয়াকে জড়িয়ে ধরে আবারও হেসে উঠে।
ঠিক এমন সময় বাড়িতে প্রবেশ করল ফিরোজ মির্জা, মালিহা মির্জা, মাহির, মেহবুবা, চুমকি আর আরফা।
চুমকি দূর থেকেই বলল,
কি ব্যাপার ভাবি-ননদ, কি নিয়ে এত হাসাহাসি হচ্ছিল শুনি?
মেহরিন আর লামিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো।
মেহরিন বলল,

এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমাদের?
মালিহা মির্জা মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
জানিসই তো! রাস্তায় কি জ্যাম থাকে!
ফিরোজ মির্জা মায়াভরা কণ্ঠে বললেন,
কেমন আসিস মা?
মেহরিন হেসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
আলহামদুলিল্লাহ, বাবা। তোমরা কেমন আছো?
সবাই একসাথে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ!”

চুমকি পাশে দাঁড়িয়ে রইল।
মেহবুবা আর আরফা এসে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরল।
মেহরিনও ওদের শক্ত করে ধরে বলল,
ভীষণ মিস করছিলাম তোদের।
মাহির গাল ফুলিয়ে বলল,
আমি বরং চলে যাই! কেউ তো আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না।
মেহরিন হেসে গিয়ে আদরে ছোট ভাইটাকে জড়িয়ে ধরল,
এই দুই দিনে তোমাকে অনেক মিস করেছি আপু।
মেহরিন জিজ্ঞেস করল,
কেমন আছিস?
মাহির মুখ গোমড়া করে বলল,

ভালো নেই আপু। তোকে ছাড়া ভালো লাগে না।
মেহরিনের মনটা হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেল ছোট ভাইয়ের কথায়।
তখনই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লামিয়া বলল,
এই যে আমার ছোট বিয়াই সাহেব, মন খারাপ হলেই চলে আসবেন! তাও মন খারাপ করবেন না, কেমন?
মাহির চোখ হেসে বলল,
ঠিক আছে, বিয়ান সাহেবা!
সবাই হেসে ফেলে। একে একে সবাই ভেতরে চলে আসে।
তবে বাড়ির সবাই একসময় খেয়াল করল — রাজ আর লাবিব নেই!
মালিহা মির্জা মেহরিন কে জিজ্ঞেস করলেন,

কি রে, জামাই কই? দেখছি না যে!
মেহরিন একটু হালকা হাসি দিয়ে বলল,
একটু কাজে গিয়েছে, সময় মতো চলে আসবে।
ঠিক তখনই রাজ, লাবিব আর আরশ ঘরে ঢোকে।
রাজ প্রবেশ করেই শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করে।
সবাই তার সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ওদিকে, লাবিব চুপিসারে মেহবুবার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়,
তার কানে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
এই ল্যাদা বাচ্চা, কেমন আছো?
এমন আচমকা ডাক শুনে মেহবুবা চমকে উঠে ঘুরে দাঁড়ায়,
আপনার সমস্যা কী? আর ল্যাদা বাচ্চা মানে কী?
তারপর রাগে বলে,

বাদর! কোথাকার।
লাবিব ভ্রু কুঁচকে বলে,
আমি বাদর?
মেহবুবা উত্তরে বলে,
হ্যাঁ! শুধু বাদর না,গাছে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকা বাদর।
এটা শুনে লাবিব বাঁকা হেসে বলল,
আমি বাদর তাই না,যদি বদরামি শুরু করি, নিতে পারবে?
মেহবুবা ঠাণ্ডা গলায় বলে,
মানে?
লাবিব হাসি দিয়ে বলে,
মানে…. বলেই সামনে এগোতে থাকলো।
মেহবুবা বুঝে যায় পরিস্থিতি ‘অবস্থা খারাপের দিকে’ যাচ্ছে, তাই দ্রুত দূরে সরে যায় এবং চুমকি ও মেহরিনের কাছে চলে আসে।

লাবিব সেটা দেখে হাসতে হাসতে উপরের দিকে চলে যায়।
রাজ এদিকে সবার সঙ্গে কথা শেষ করে বলে,
আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সবাই মাথা নাড়ে।
কিন্তু রাজ মেহরিনের দিকে একবারও তাকায় না, যেনো সে আছে কি নেই কিছুই বোঝে না।
মেহরিন হতবাক হয়ে মনে মনে বলে,
কি ব্যাপার! একবারও তাকালো না এমন ভাব করছে, যেনো আমি এখানে নেই ব্যাপারটা কী?
একটা চিন্তার ছায়া ফুটে ওঠে মেহরিনের।
সবাইকে বলে আমি আসছি বলেই রাজের পিছু পিছু হাঁটা শুরু করে…

ঘরে গিয়ে দেখে রাজ ওয়াশরুমে। মেহরিন কাপবোর্ড খুলে জামাকাপড় বের করে রাখে। তারপর চুপচাপ বসে থাকে।
দশ মিনিট পর রাজ বেরিয়ে আসে—শরীরে শুধু টাওয়াল, মাথা থেকে এখনও পানি পড়ছে। শরীরের প্রতিটি পানির ফোঁটা মুক্তোর মতো ঝলমল করছে। জিম করা শরীর দেখে মেহরিনের শরীর বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নামে। গলা শুকিয়ে যায়।
রাজ বলল, কি ব্যাপার? এমন চোরের মতো তাকাচ্ছো কেন?

মেহরিন আমতা আমতা করে বলল, ক ক কইই, আমি তো কিছু দেখছি না। আর আপনি এত নির্লজ্জ কেন শুধু টাওয়াল পড়ে চলে আসলেন লজ্জা শরম বলতে কিছু নাই তাই না।
রাজ হাসে, “বউয়ের সামনে লজ্জা পায় কাপুরুষ আর আমি অবশ্যই কাপুরুষ নয়।আমি হলাম বীরপুরুষ তাই বউয়ের সামনে লজ্জা পায় না। তুমি চাইলে তো আমি টাওয়ারটা খুলে ফেলতে পারি। কি বলো খুলবো ?
দুই চোখ ঢেকে বলে, ছিঃ।

রাজ হাসে রাজের হাসির শব্দের সঙ্গে মেহজাবিন চোখ থেকে হাত নামিয়ে নেয়।
মেহরিন তাকায় রাজের দিকে অ্যাডামস অ্যাপলের দিকে রাত যখন কথা বলে তখন অ্যাডামস অ্যাপল ওঠানামা করে তা দেখে মেহরিন ঢুক গিলে শরীরে কেমন একটা শক্ট লেগে যায়।
মেহরিন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আ আ আপনার কাপড় বের করে রেখেছি, আপনি রেডি হয়ে আসুন, আমি যাচ্ছি।
রাজ এগিয়ে এসে মেহরিনকে ধরে বলে, কাপড় বের করেছো, তাহলে পরিয়ে দাও।
মেহরিন অবাক, মানে?

রাজ তাকে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল,পরিয়ে দাও।
মেহরিন ঘাবড়ে গিয়ে বলে, আ. আপনার মাথা খারাপ?
রাজ নেশাগ্রস্ত কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ, একদম খারাপ হয়ে গেছে। বিশ্বাস করো, মাথা কাজ করছে না। তোমাকে দেখে এই রকম হচ্ছে…
রাজ মেহরিনের হাত নিয়ে বুকের বাঁ পাশে রাখে, দেখো, আমার হার্টবিট… এটাও আমার কথা শুনছে না দেখো কত জোরে বিট করছে।

মেহরিন অবাক, রাজের শরীর কাঁপছে, হার্টবিট দ্রুত বিট করছে।
মেহরিন চুপ করে তাকায় রাজের চোখে… কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না।
মেহারিন বলে, আ.. আমাকে ডাকছে ওরা আমি যাই। রাজ নেশাগ্রস্থের মত বলে,বপালাতে চাইছো আমার থেকে …
মেহরিন রাজের কানে ফিসফিস করে বলে,সাজেকে কি বলেছিলেন মনে নেই? আমি আপনাকে সাজেকেই ধরা দেব।
বলে দৌড়ে চলে যায়।
রাজ বুক চেপে বলে,

> আমার বউ আমাকে তৃষ্ণার্ত রাখতে ভালোবাসে…”
এটা বলেই বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ে।
মেহরিন চলে যায়নি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, রাজের কথা শুনে তারপর হাসতে হাসতে
মেহরিন নিচে নেমে আসে। মেহরিন কে দেখে লাবিব বলে, “ভাবি, তোমার সাথে একটা কথা আছে।”
মেহরিন বলে, হ্যাঁ, বলো।
লাবিব ইঙ্গিত করে, একটু সাইডে চলো।
দু’জনে সরে আসে।
লাবিব বলল, তুমি আজ রেদওয়ান তালুকদারের অফিসে গিয়েছিলেন?
মেহরিন হেসে বলল,এই খবরও পৌঁছে গেছে!
লাবিব বলে, তুমি তো জানো তোমার জামাই কেমন…
মেহরিন হেসে বলে, হ্যাঁ, গিয়েছিলাম।
লাবিব আবার জিজ্ঞেস করে, খারাপ কিছু বলেনি তো তোমাকে?
মেহরিন দু’হাত ভাজ করে ভুরু কুঁচকে বলে, তোমার কী মনে হয়, কেউ তোমার ভাবিকে কিছু বলবে আর সে ছেড়ে দেবে?

লাবিব হেসে বলে, তাও ঠিক! কিন্তু… কিছু বলেনি তো?
মেহরিন রহস্যময় হেসে বলে, সুযোগই পাইনি!
লাবিব হাসে।
মেহরিন চলে যায় চুমকিদের কাছে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ঠিক তখন রাজ নামে—সাদা শার্ট,তার উপর নীল কোর্ট আর নীল প্যান্ট, বুক পকেটে লাল গোলাপ।
মেহরিন তখন চুমকি, মেহবুবা, লামিয়া আর আফরার সঙ্গে গল্পে মেতে ছিল। হঠাৎ চুমকি চোখের ইশারায় বলল,
— তোয়ার কবি সাহেবরে তো আজ পুরাই ঝাক্কাস লাগতেছে!
মেহরিন মুখ ফিরিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

—হায় মাশাল্লাহ!
এই বলে বুকের পাশ দিয়ে দুই হাত দিয়ে পড়ে যাচ্ছিল প্রায়।
চুমকি, মেহবুবা, লামিয়া আর আরফা মিলে ধরে ফেলে ওকে। সবাই হেসে ওঠে।
লামিয়া বলে,
— আয় হায়, আমার ভাবীমনি তো ভাইজানরে দেখেই কুপোকাত!
রাজ তাদের হাসাহাসি দেখে কপাল চুলকে হেসে ফেলল। তারপর মেহরিনের দিকে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে বলল,
— চলুন, ম্যাডাম।
মেহরিন রাজের হাত ধরে ওর সঙ্গে এগিয়ে যায়। রাজ ওকে নিজের ব্যবসা পার্টনার আর কলিগদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়। ঠিক তখনই লাবিব এসে বলে,

— কি ব্যাপার, সবাই এমন চুপচাপ কেন?
মেহবুবা মুখ ছোট করে বলে,
— আপনি কি একটু গান-বাজনার ব্যবস্থা করলেন না! এটা কি রিসেপশন পার্টি নাকি মরা বাড়ি?
লাবিব চোখ বড় করে বলে,
—ওহ আচ্ছা! এই ব্যাপার!
এই বলে একটা গান ধরে,
একে তো রূপের আগুন,
আর আপনার ফাপড় দিগুন..!
মনের দয়া মায়া সব কী আপনার
ঢঙ্গী ব্যাগে রাখছেন…,,
আপনি দেখতে ঝাক্কাস,
শুনছি নাচেন ভালো….
তবে আজকের দিনে ডান্স ফ্লোর
কেন থাকবে খালি…..
বিয়ান সাব আপনার জন্য
ঢাকা থেকে ডিজে আনছি…..
ডিজে আনছি… ডিজে আনছি…
প্রাণ খুইলা নাচেন আপনি,
হেব্বি বিটে গান ছাড়ছি ….
লাবিব গান শেষে বলে,
— আবার আপনার পালা মিস ল্যাদা বাচ্চা।
মেহবুবা ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
— “চুপ!” তারপর নিজেও একটা গান ধরে,
শুনেন গো রসের বেয়াই….
আপনার তো খবরই নাই…
শুনেন গো রসের বেয়াই..
বোঝেন না কি চাই এখন,
এই মনে……..
প্রেমের তুফান উঠেছে আমার যৌবনে…
প্রেমে তুফান উঠেছে আমার যৌবনে…
গান শেষে লাবিবের দিকে তাকায়।
লাবিব কেমন করে যেনো তাকিয়ে থাকে।

— কি হইলো, মিস্টার বদর? মেহবুবা বলে।
— তোমারে গান গাইতে বললেই তুমি এমন এক একটা গান গাও আমার কিডনি, হার্ট, লিভার, ফুসফুস সব লক হইয়া যায়!
সবাই হেসে ফেলে। তখন লাবিব ঘোষণা দেয়,
— Hello ladies and gentlemen! এখন একটা কাপল ডান্স হবে!
হর্ষধ্বনি ওঠে চারপাশে।
রাজ-মেহরিন, লাবিব-মেহবুবা স্টেজে ওঠে। এক হিন্দি গানে সবাই ডান্স করে। আরশ লামিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
— তাহলে আমাদেরটাও হইয়া যাক!
লামীয়া মুখে লাজুক হাসি দিয়ে বলে,
— অবশ্যই।
তিন জোড়া কাপল একসঙ্গে পারফর্ম করে, হিন্দি গানে নাচে।
তারপর লামিয়া বলে,

— এখন ভাইবোনদের একটা স্পেশাল ডান্স চাই!
তারপর শুরু হয় একটা দুর্দান্ত ভাই বোনের ডান্স।যেখানে রাজ লাবিব লামিয়া তিন ভাইবোনের একটা হিন্দি গানের নাচ।
তারপর তিনজন নিলে একটা ডান্স পারফরম্যান্স করে লাবিব মাহির ও আরশ।
সবাই মেতে ওঠে হাসিতে, নাচে, আড্ডায়।
মেহরিন রাজ পাশাপাশি বসে আছে স্টেজে। হঠাৎ মেহরিন মিষ্টি হেসে বলে,
— কবি সাহেব?
— হুম, বউজান? রাজ বলে।
— বুম!
— এইটা কি হইল?
— সারপ্রাইজ! আপনার জন্য। আপনার বউয়ের তরফ থেইকা একটা ছোট্ট গিফট।
— তো গিফট কই? রাজ বলে।
মেহরিন লাবিবকে ডাক দিয়ে বলে,
— TV অন করো।
লাবিব টিভি অন করতেই,
নিউজ চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ ভেসে ওঠে।
যেখানে একজন মেয়ে নিউজ বলছে,

টপ বিজনেসম্যান রেদওয়ান তালুকদারের অফিসে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ! রাত আটটার দিকে, অফিস ছুটির পরে ঘটে যায় ঘটনাটি। সাত তলা ভবন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, ভাগ্যক্রমে কোনো কর্মচারী মারা যায়নি।কারণ বিস্ফোরণটি হয় অফিস ছুটির পরে তাই ভাগ্যক্রমে কোন কর্মচারী কোন ক্ষতি হয়নি তবে সাততলা ভবনটি আর নেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ভবনটি।
সবাই স্তব্ধ।
লাবিব আর রাজ দুজনেই চমকে মেহরিনের দিকে তাকায়। মেহরিন শুধু একটা রহস্যময় হাসি দেয়।
লাবিব মনে মনে বলে,
যেমন জামাই, তেমন বউ। দুজনেই ভয়ংকর! আল্লাহ গো…কি ভয়ানক মেয়ে ভাবা যায়। দেখতে একদম আলা ভোলা খ্যারের পালা।আর এই মেয়ে নাকি এসব করেছে।
রাজ বলে,

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩৫ (৩)

— বউ… তুমি?
মেহরিন হেসে বলে,
— সারপ্রাইজটা পছন্দ হয় নাই?
রাজ মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে,
— একদম! তুমি তো আমার থেকেও ভয়ংকর বউ!
— গ্যাংস্টার-এর বউ হইছি, ভয়ংকর না হলে চলবে?

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩৭